#ভালোবাসি_বলে(২)
#Jannat_prema
আমি স্তব্ধ হয়ে বোকার মতো এখনো আয়নায় তাকিয়ে আছি। আরহাম ভাই কি আমার কথাগুলো শুনে ফেললো নাতো! উনার ফেস রিয়্যাকশান দেখে তো কিছুই বুঝতে পারছি না আরহাম ভাইও স্তব্দ হয়ে তাকিয় আছেন আমার দিকে। হঠাৎ খেয়াল হলো আমার গায়ে ওড়না নেই। আমি তাড়াতাড়ি করে আয়না থেকে চোখ সরিয়ে খাটের উপর থেকে ওড়না নিয়ে গায়ে জড়িয়ে ফেললাম। আরহাম ভাই একটু কেশে পিছনে তাকিয়ে ধমকে উঠলেন,
” বেক্কলের মতো দরজা এভাবে হা করে রেখেছিস কেনো? কমনসেন্স বলতে কিছু নেই তোর মাথায়? ”
আরহাম ভাইয়ের কথায় অনেকটাই লজ্জা পেলাম। কিন্তু হুট করে মাথাটা গরম হয়ে গেলো। আমি এক কদম সামনে গিয়ে বললাম,
” আমার নাহয় কমনসেন্স নেই। কিন্তু আপনার? আপনার তো ঢেরবেশি কমনসেন্স আছে। তাহলে আপনি কেনো দরজা নক করে আসলেন না? ”
আরহাম ভাই আমার দিকে ঘুরে তাকালেন। উনার তাকানো দেখে খানিকটা ভড়কে গেলাম। কি তীক্ষ্ণ চাহনিতে তাকালেন আমার দিকে। উনার এই চাহনি আমাকে প্রতিবার উনার প্রতি দূর্বল করে দেয়। আমি আর তাকাতে পারলাম না আরহাম ভাইয়ের চোখের দিকে। তাকালে যে নিজের সর্বনাশ ছাড়া কিছুই দেখতে পাই না। নিজেকে হারিয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে। ডুবে যেতে ইচ্ছে করে উনার ওই গভীর দুই নয়নে।
” এভাবে কখোনো আমার কাছে এসে কথা বলবি না, আইরিশ। ”
আরহাম ভাইয়ের কথায় চোখ তুলে তাকালাম। আমি যতটুকু উনার কাছে গিয়ে কথাটা বলেছিলাম, উনি ঠিক ততটা দূরত্ব রেখে কথাটা বললেন। আরহাম ভাইয়ের কথাটায় ভিষন কষ্ট অনুভব করলাম। আমকে কি উনার পছন্দ না? আরহাম ভাই কথাটা বলে চলে যেতে গিয়েও আবার থেমে গেলেন। আমি উৎসুক নজরে তাকালাম। উনি আমার দিকে তাকিয়ে বলে গেলেন,
” খেতে আয়,আন্টি ডাকছে তোকে। ”
আমি স্থীর চোখে তাকিয়ে থাকলাম আরহাম ভাইয়ের যাওয়ার পানে। আরহাম ভাই কি আমার অনুভূতি বুঝেন না! আমার মনের এই আকুলতা, ব্যাকুলতা কি তিনি বুঝেন না, নাকি বুঝতে চাইছেন না?
.
আরহাম আইরিশের রুম থেকে বের হতেই এতক্ষণের আঁটকে রাখা শ্বাসটা আস্তে করে ছাড়লো। পিছনে ফিরে করুন চোখে তাকিয়ে থাকা মেয়েটাকে একটুখানি দেখলো। নিজের বুকের অনুভূতিগুলো দমিয়ে রেখে হাটা ধরলো আশরাফের উদ্দেশ্যে। যেতে যেতে বিরবির করে ব’লে উঠলো,
” তুই যেটা চাইছিস সেটা সম্ভব না, আয়রু। সম্ভব না! ”
.
খাবার টেবিলে বসতে না বসতেই মাথায় ঠা’শ করে একটা থাপ্পড় পড়লো। চোখ মুখ কুচকে তাকিয়ে দেখলাম আশরাফ ভাই দাঁত কেলিয়ে ভাত চিবিয়ে খাচ্ছে। আশরাফ ভাইয়ার কান্ডে আমার মাথা গরম হয়ে উঠলো। আশেপাশে না তাকিয়ে খাবার টেবিলে বসার আগে আশরাফ ভাইয়ার লম্বা চুলোগুলো দুই হাত দিয়ে টেনে দিয়ে তাড়াতাড়ি করে চেয়ারে বসে পড়লাম। আশরাফ ভাইয়া আহ শব্দ করে আমার দিকে কটমট করে তাকালো। আম্মুকে ডেকে বলে উঠলো,
” মা দেখেন আইরিশ আমার সাথে বেয়াদবি করছে।”
আমি মুখে ডিম পুড়ে হাসিমুখে তাকিয়ে ব’লে উঠলাম,
” কি চান্দু ভাইয়া কেছা লাগা? আমাকে যে দিলি তখ__ ”
থেমে গেলাম আমি। আশরাফ ভাইয়ার পাশে বসা মানুষটার দিকে তাকিয়ে থেমে গেলাম। আরহাম ভাই আমার দিকে আবারো তীক্ষ্ণ চাহনিতে তাকিয়ে আছেন। উনাকে আমি ঠিকভাবে খেয়ালও করলাম না, তার আগেই আশরাফ ভাইয়ার সাথে ঝগড়া করতে লেগে গেলাম। মাথা নিচু করে চোখ খি’চে ভাবলাম, আরহাম ভাই এখন নিশ্চয়ই আমায় ঝগড়াটে ভাবছে। এমনিতেই তখন উনার বলা কথা শুনেই বুঝলাম উনি আমাকে তেমন পছন্দ করে না। এখন সেটা ষোলোকলা পূর্ণ করে দিলাম।
” তুই আবার ঝগড়া করছিস, আইরিশ? ”
আম্মুর কথা শুনে তাকালাম আম্মুর দিকে। তাকিয়ে বললাম,
” কোথায় ঝগড়া করছি আম্মু! ”
” আমাকে কি তোর কা’না মনে হয়? ও তোর বড় না? বড় ভাইয়ের গায়ে কেউ হাত তোলে? এই শিক্ষা দিয়েছি তোকে? ”
আম্মুর কথায় ছলছল নয়নে তাকালাম ভাইয়ার দিকে। ভাইয়া আম্মুকে বলে উঠলো,
” আহ আম্মু! আপনি বিষয়টাকে সিরিয়ায় নিচ্ছেন কেনো? ”
আমি আড় চোখে আরহাম ভাইয়ার দিকে তাকালাম। উনি গম্ভীর হয়ে বসে আছেন। আম্মু খেঁকিয়ে উঠলেন,
” তুই চুপ কর! মেয়েটা দিনদিন বেয়াদব হয়ে যাচ্ছে। এখন থাকতে যদি ওকে মা__”
দৌড়ে নিজের রুমে আসলাম। আম্মুর কথাগুলো আর শুনতে ইচ্ছে হলো না। আবারো আরহাম ভাইয়ের সামনে অপমান করলো। সব সময় আমাকে অপমান না করলে কি আম্মুর ভালো লাগে না!
.
” দেখেছিস কি বেয়াদব মেয়ে! খাবার এঁটো করে কিভাবে চলে গেলো। এতো রাগ কেনো ওর। খাবার কি এমনে এমনে আসে। ”
আশরাফ বিরক্ত হয়ে তাকালো মায়ের দিকে। রাগ দেখিয়ে ব’লে উঠলো,
” বনু খেতে বসেছিল, দেখোনি? এখনই তোমার ওকে বকতে হলো। সারাদিন পর একটু খেতে এসেও তোমার জন্য খেতে পারেনি। এখন যদি আর না খায়? ”
” খাবে ও! আন্টি আইরিশে খাবারটা দিন। ”
আশরাফ আর ঈশিতা আফরোজ আইরিশের আম্মু আরহামের দিকে তাকিয়ে আছেন। আশরাফ হাত ধুতে ধুতে বলে,
” নিয়ে লাভ নেই। আইরু এখন আর খাবেনা যত যাই করুক না কেনো। ও একবার খাবো না বললে আর খাবে না। ”
” আন্টি আইরিশের খাবারটা দিন। আমিও দেখি ও কিভাবে না খায়। ”
আশরাফ হাত মুছে ব’লে,
” আচ্ছা আমি দেখি ও খায় নাকি! ”
ঈশিতা ছেলের উপর বিরক্ত হলেন। আইরিশের রাখা ভাতে আরেকটু গরুর মাংস দিয়ে বললেন,
” তোর কথা তোর কাছে রাখ। আরহাম যখন বলেছে আইরিশ খাবে তাহলে তুই এতো কথা বলছিস কেনো? এই নে আরহাম খাবারটা নিয়ে যা। ”
আশরাফ হা করে তাকিয়ে আছে মায়ের দিকে। তাকে তার মা বিশ্বাস করলো না। এই দুঃখে তো তার এখন চোখে গ্লিসারিন লাগিয়ে কান্না করা উচিত। আরহাম আশরাফের দিকে তাকিয়ে ইনোসেন্ট ফেসে হেসে হাটা ধরলো আইরিশের উদ্দেশ্য।
.
” খাবার না খেয়ে চলে এসেছিস কেনো? ”
আরহাম ভাইয়ের কন্ঠ শুনে চমকে তাকালাম দরজার পানে। আরহাম ভাই খাবারের প্লেট নিয়ে চেয়ার টেনে বসলেন আমার মুখোমুখি। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি আরহাম ভাইয়ের দিকে। উনি আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে উঠলেন,
” এভাবে ফ্যাচ’ফ্যাচ করে কাঁদছিস কেনো? যে ভাবে কান্না করছিস মনে হচ্ছে তোর কোনো খেলনা হারিয়ে গেছে। ”
আমি চট করে চোখের পানি মুছে ফেললাম। আরহাম ভাইকে দেখে প্রায় ভুলেই গেছিলাম যে, আমি কাঁদছিলাম। নাক টেনে ব’লে উঠলাম,
” আপনি বলতে চাইছেন আমি কাঁদবো না? ”
” তা না! তবে তোকে কান্না করলে পুরো __”
” পুরো? ”
” খচ্চরের মতো লাগে। ”
” কি! ”
পুরো আহাম্মক হয়ে গেলাম আমি। খচ্চর! শেষ পর্যন্ত আমাকে খচ্চরের উপাধি দেওয়া হলো। আমার চোখ আবারো টলমল করে উঠল। বললাম,
” সত্যি খচ্চরের মতো লাগে? ”
আরহাম ভাই নির্লিপ্ত ভাবে বলে উঠলো,
” হুম সত্যি! এই যে তুই আবার কাঁদছিস না, এখন আমার বুকের ভেতর __”
আমি উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
” বুকের ভিতর কি আরহাম ভাই? ”
উনি কয়েক পলক আমার দিকে অপলক
ভাবে তাকিয়ে বলে উঠলেন,
” আমার বুকের ভিতর ঢিপঢিপ করছে। ”
” কেনো? ”
” ভয়ে! ”
” ভয়ে? ভয়ে মানে? ”
” এই যে তোর কান্না মাখা মুখটা দেখে। একদম পেঁচার মতে লাগছে তোকে।!
সাথে সাথে হিচকি উঠে গেলো আমার। আরহাম ভাই ঝটপট পানি এগিয়ে দিলেন। পানিটা তাড়াতাড়ি খেয়ে উনার দিকে তাকালাম। হঠাৎ করেই আরহাম ভাই উঠে দাড়ালেন। আমি উনার এমন উঠে দাড়ানোর মানে বুঝতে না পেরে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালাম। আরহাম ভাই হঠাৎই বিজয়ের হাসি হেসে বললেন,
” যাক অবশেষে শেষ হলো। ”
উনার কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারলাম না। হুট করে আমার দৃষ্টি গিয়ে স্থীর হলো আরহাম ভাইয়ের হাতে থাকা খাবারের প্লেটের দিকে। ওমনি থমকে গেলাম, থমকে গেলো আমার দৃষ্টি।
চলবে!