#ভালোবাসি_বলে(১)
#Jannat_prema
নিজের মান সম্মান ধুলিসাৎ হয়ে ঠা’স করে যে এভাবে উষ্ঠা খেয়ে পড়বো ভাবতেই পারিনি। তাও আবার কার সামনে আমার ক্রাশ আরহাম ভাইয়ের সামনে। চোখ মুখ খিচে হাতের কনুই চেপে বসে আছি। লজ্জায় চোখ খুলতেও অসস্তি হচ্ছে। এমন আচমকা কারো সামনে উষ্ঠা খেয়ে পড়ার মতো লজ্জা আর তিনটা হয় না। আমি বুঝতে পারলাম আরহাম ভাইয়া আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছেন। তাকিয়ে থাকুক। আমি তো সুন্দরী!
” এই ভাবে চ্যাপটা হয়ে আছিস কেনো? ”
আরহাম ভাইয়ের কর্কশ কন্ঠ শুনে কেঁপে উঠলাম। মাথা উঠিয়ে বলদের মতো হেসে বলে উঠলাম,
” হিহি! পড়ে গেছি আরহাম ভাই। চ্যাপটা হয়ে যাইনি। ”
আরহাম ভাইয়া কপাল কুচকে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। উনাকে এমন ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে তাড়াতাড়ি করে উঠতে গিয়ে ধা’ম করে পাশের টেবিলের সাথে কাঁধে ধাক্কা লেগে ঠা’শ করে আবার বসে পড়লাম। মুখ দিয়ে আহ করে শব্দ বের হতেই পিছন থেকে আম্মু চেঁচিয়ে উঠলো,
” কি ফেলে দিলি আবার! তোকে নিয়ে আর পারা যায় না। কলা গাছের মতো লম্বা হইলি খালি, বুদ্ধি সেই হাটুতে তোর। তোরে এমনে এমনে আশরাফ ব’ল’দ বলে না। ”
লজ্জায় এবার সত্যি সত্যি নাক কেটে গেলো আমার। আড় চোখে আরহাম ভাইয়ার দিকে তাকালাম। উনি মুচকি মুচকি হাসছে। আরহাম ভাইয়ার হাসি দেখে এবার সত্যি ইচ্ছে করছে মাটি ফাক করে ঢুকে চুপটি করে বসে থাকতে। আমি মিন মিন করে আম্মুকে বললাম,
” কিছুই তো হয় নাই আম্মু। শুধু শুধু চিল্লাচ্ছেন কেনো? ”
আম্মু এমন ভাবে চোখ রাঙ্গালেন যেনো আমি সবচেয়ে বড় কোনো অপরাধ করে ফেলেছি। আম্মু আমার থেকে চোখ সরিয়ে আরহাম ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বলে উঠলেন,
” আরে আরহাম ! কখোন এলি বাবা! একটুও খেয়াল করিনি।
এবার আমার দিকে তাকালো। আমিও ব্রু কুঁচকে তাকালাম। আম্মু এবার আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
” আমার ঘরে তো এক বেক্কল আছে জানো না! এটার পিছনে আমার যত সময় চলে যায়। বস না, আশরাফ গোসলখানায় ঢুকেছে। ”
” সমস্যা নেই আন্টি। আমি এই কিছুক্ষণ আগেই এসেছি। তুই এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? রুমে যা! ”
আরহাম ভাইয়ার কথা শুনে আম্মুও তাকালো আমার দিকে। আম্মুর তাকানোর অর্থ হলো ‘ যাচ্ছিস না কেনো, বজ্জাত ‘! আমি মনে মনে মুখ ভেঙ্গিয়ে ভাবলাম কিছুক্ষণ আগের কথা।
ভার্সিটি থেকে এসে দেখি সকালে রুমের যেই অবস্থা ছিলো, এখনো তেমনিই আছে। বুঝতে পারলাম এটা আম্মুর কাজ। যতক্ষণ না আমি করবো, ততক্ষণ আম্মু এটার আশেপাশেও আসবে না। কাঁধের ব্যাগটা রেখে ফ্রেশ হয়ে বিছানা গুছিয়ে শরীরটা এলিয়ে দিলাম। আহা! কি শান্তি! কি শান্তি! সারাদিনের ফাজলামোর ক্লান্তিগুলো একটু বিশ্রাম পেলো। হঠাৎ নিচ থেকে প্রাণ প্রিয় আরহাম ভাইয়ের কন্ঠ শুনে লাফ মেরে বিছানা থেকে উঠে বসলাম। আরহাম ভাইয়া আসছে। নিশ্চয় আশরাফ ভাইয়া আজকে বাসায়। আশরাফ ভাইয়া না থাকলে তো আরহাম ভাইকে দেখাও যায় না। দুজন বন্ধু কিনা! যেই আরহাম ভাইকে দৌড়ে দেখতে যাবো ওমনি পা দুটো থেমে গেলো। ভাবলাম এভাবে গরুর মতো দৌড়ে গেলে কি না কি ভাববে। তাই সুন্দর করে যাওয়া উচিত। ঠিক আরহাম ভাইয়ের থেকে পাঁচ হাত দুরে হেটে আসার সময় সালোয়ারের ভিতর পা আঁটকে উ’ষ্ঠা খেয়ে পড়লাম। আমার সুন্দরের তো বারোটা বাজলো সাথে মান সম্মানের ফালুদাও হয়ে গেলো।
রুমে ঢুকেই গলা থেকে ওড়নাটা ছুড়ে ফেলে ধপাস করে বিছানায় বসে পড়লাম। এতো বড় অপমান! এখন আরহাম ভাইয়া নিশ্চয়ই আমাকে ব’ল’দ, গাধা, ছাগল অনেক কিছুই ভাবছেন! আম্মু ঠিকই বলে কেনো যে কানার মতো হাটতে যাই। এখন আরহাম ভাই যদি আমাকে আর কখোনো পছন্দ না করে? ধ্যাৎ! ফোনের রিংটোনে ভাবনার জগত কা’ট করে হাতে নিয়ে দেখি শশি ফোন করেছে। যাক মনের দুঃখ শেয়ার করার মতো কাউকে পেয়ে আনন্দ লাগলো। কল রিসিভ করে যেই হ্যালো বলবো, শশি চিল্লিয়ে বলে উঠলো,
” হ্যালো! আইরিশ শুনছিস?
.
আরহাম আইরিশের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মনে মনে বললো,
” তুই কখোনো শুধরাবি না, আইরু! ”
” দাড়িয়ে আছিস কেনো? বস আমি একটু রান্নাঘর থেকে ঘুরে আসি। আইরিশের জন্যে ডিম একটা ভাজা লাগবে। ডিম ছাড়া নাকি ভাত খাবে না। ”
আইরিশের আম্মুর কথায় আরহাম বললো,
” আন্টি আমি আশরাফের ঘরে যাচ্ছি। একটু কাজ আছে।”
.
শাওয়ার নিয়ে নাচতে নাচতে বের হয়ে বিছানায় চোখ যেতেই থমকে গেলো আশরাফ। নিজের বিছানা পায়ের উপর পা তুলে সুদর্শন লম্বাচওড়া ছেলেটাকে দেখে মৃদু চিৎকার করে উঠলো আশরাফ।
” ছি! ছি! আরহাম তোর লজ্জা শরম কি সব হাঁটুর নিচে নেমে গেল? একটা ছেলের রুমে তার অনুমতি ছাড়া ঢুকতে নেই, জানিস না? ”
আরহাম কটমট করে তাকালো আশরাফের দিকে। আশরাফ তার খালি বুকে দুই হাতদিয়ে আড়াআড়ি ভাবে ঢেকে রেখেছে। কোমড়ে তোয়ালে মুড়ানো বলে বুক খালি। আরহাম নাকের ডগা ফুলিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে ব’লে উঠলো,
” আচ্ছা! তা তোর এমন কি আছে যে, কেউ দেখে ফেললে তোর লজ্জা শেষ হয়ে যাবে? ”
আশরাফ দাঁত কেলালো। বুঝলো তার প্রাণ প্রিয় বন্ধু রেগে গেছে। এখন আর ফাজলামি করা যাবে না, পরে দেখা গেলো আরহাম এসে তাকে এক ঘা লাগিয়ে দিলো। আরহামের মারগুলো বড্ড লাগে গায়ে। আশরাফ ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বলে,
” দোস্ত এভাবে তাকায় আছোস কেনো? ”
আরহাম তপ্তশ্বাস ফেললো। ভাইবোন দুইটাই আ’বা’ল। একটা হাটতে গিয়ে পড়ে আরেকটা মেয়েদের মতো ঢং করে। আরহাম কিছুটা গম্ভীর হয়ে ব’লে উঠলো,
” শ্রেয়া আবারো পাগলামি করছে আশরাফ! ”
ততক্ষণাৎ মাথায় চিরুনি চালানো হাতটা থমকে গেলো। আশরাফ গোল গোল চোখে তাকালো আরহামের দিকে। আরহাম ঠান্ডা চোখে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। আরহাম কিভাবে এমন শান্ত হয়ে আছে বুঝে আসে না আশরাফের। আশরাফ চটপট দেখিয়ে বন্ধুর পাশে বসে উত্তেজিত হয়ে ব’লে,
” ওই ব’দমাশ মেয়েটা চাচ্ছেটা কি? একটা মানুষকে আর কত ভাবে অপমান করা গেলে সে আর পিছু আসবে না। ওই মেয়েটাকে যদি আমার সামনে একবার পাইরে আরহাম। ওর শরীরের সব তেজ আমি চিইপ্পা বাইর কইরা ফেলবো। ”
আরহাম বন্ধুর কাঁধে হাত রেখে আসস্ত করে ব’লে,
” তুই শন্ত হ। বিষয়টা আমাদেরকে ঠান্ডা মাথায় সমাধান করতে হবে। শ্রেয়াকে সহজ ভাবে নেওয়া যাবে না। মেয়েটা খুবই ডেঞ্জারাস! বড়লোক বাবার বিগড়ে যাওয়া মেয়ে। ওই মেয়েটাকে এত সহজে আমাদের পিছু ছাড়াতে পারবো না। আর যদি আমরা বাড়াবাড়ি করতে যাই তাহলে আইরিশের___”
এবার যেনো আশরাফও ভাবনায় পড়ে গেলো। তার মানস্পটে ভেসে উঠলো বোনের সুশ্রী মায়াবী মুখখানা। তার বোনটা বেশ আদুরে। আইরিশ মনের দিক দিয়ে বড়ই নরম। তাদের মতো ওর মনে এত প্যাচগোচ নেই। যদি শ্রেয়া মেয়েটা তার সহজ সরল বোনের কোনো ক্ষতি করে দেই। শ্যামবর্ন চেহারার মেয়েটার মুখের হাসি কেড়ে নেয়। আর ভাবলো না আশরাফ। বুক ফুলিয়ে শ্বাস নিয়ে ফোঁস করে ছেড়ে আরহামের দিকে তাকিয়ে ব’লে উঠলো,
” চল দোস্ত খেতে যাই। প্রচুর খিদে পেয়েছে। ”
.
” কি! সত্যি? কালকে সত্যি রাইহান আরিফাকে প্রপোজ করবে? ”
আমার কথায় ফোনের ওপাশ থেকে শশি খুশিতে ব’লে উঠলো,
” হ্যাঁ রে। রাইহান আমাকে একটু আগে ফোন দিয়ে বলেছে। আমার যে কি আনন্দ হচ্ছে না, আইরিশ তোকে বলে বুঝাতে পারবো না। আচ্ছা এখন রাখ আমার জামাই আসছে কালকে ভার্সিটিতে বাকি কথা হবে। বাই! ”
খট করে কথা শেষ করে শশি লাইন কেটে দিলো। এদিকে আমি আহম্মক হয়ে আছি। রাইহান সত্যি কালকে আরিফাকে ওর ভালোবাসার কথা বলবে! আর এদিকে আমি, আরহাম ভাইয়ের বিরহে দিন কাটাচ্ছি। আয়নার সামনে গিয়ে দাড়িয়ে নিজে নিজেই বলে উঠলাম,
” আপনার বিরহে কতগুলো দিন কেটে যাচ্ছে, আরহাম ভাই। আপনাকে যদি একটু কাছে পেতাম, তাহলে ঝাপটে ধরে একটা চুম্মাআ__”
থেমে গেলাম আমি। আয়নায় নিজের ধ্যানে থাকায় কখোন যে পিছনে আরহাম ভাই আসলেন বুঝতেই পারিনি। আরহাম ভাই কেমন করে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। আমি ঢোক গিলে নিজের দিকে তাকিয়ে চরম অবাক হয়ে গেলাম। আমার ওড়না কোথায়?
চলবে!