#ভালোবাসি_তোমায়
#A_mysterious_love_story
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_০৬
ফারানের সাথে হুরের পরিচয় প্রায় ছয় মাসের। এই ছয় মাসে হুরের পাগ’লামির শেষ ছিলো না। সেইদিন এর ঘটনার পর হুর খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারে ফারানের পুরো নাম ফারান আহমেদ। সে পেশায় একজন ইঞ্জিনিয়ার। তাদের ভার্সিটির নতুন দালান তৈরির কাজে সে প্রায় প্রায় ভার্সিটি তে আসে। ফারান কে কেউ কখনো মাস্ক ছাড়া দেখে নি। সে সবসময় নিজের মুখ ঢেকে রাখে। তবে এসব নিয়ে অন্যদের মাথা ব্যা’থা না থাকলেও হুরের ছিলো। সে অনেকবার চেষ্টা করেছিল ফারান কে দেখার। কিন্ত সেই ভাগ্য তার হয়ে উঠে নি।
ফারান সপ্তাহে দুই কি তিনদিন হুরদের ভার্সিটি তে আসতো কাজ দেখার জন্য। এক দেড় ঘন্টা সবাইকে ইন্সট্রাকশন দিয়ে চলে যেতো। যেই দিন যেই সময়ে ফারান আসতো তা মুখস্ত ছিলো হুরের। সেই সময়টা তে ক্লাস করতো না হুর। শত ইম্পরট্যান্ট ক্লাস ফাঁ’কি দিয়ে মাঠে অথবা লাইব্রেরি তে বসে থাকতো সে। যতক্ষণ ফারান থাকতো ততক্ষন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতো তার দিকে। হুর মাঝে মাঝে নিজেই অবাক হয়ে যেতো এই ভেবে যে এই ছেলের মধ্যে সে পেয়েছে টা কি! এমন পাগ’ল কেনো হলো সে এই ছেলের জন্য! কি আছে এর মাঝে!
হুরের সকল পাগ’লামির সাক্ষী ছিলো লিয়া। হুর ক্লাস ফাঁ’কি দিলেও লিয়া সব ক্লাস ঠিক ভাবে করতো। এরপর বাড়ি গিয়ে সেই পড়া হুরকে বুঝিয়ে দিতো। লিয়া অনেকবার হুর কে বোঝাতে চেয়েছে যে ফারান তার জন্য পারফেক্ট নয়। কেউই হুরের সাথে ফারান কে মেনে নিবে না। পুরো ভার্সিটি হুরকে নিয়ে হাসা-হাসি করে এটাও বলেছে লিয়া। কিন্তু হুরের এতে কোনো হেলদোল নেই। তার এক কথা গায়ের রং দিয়ে কিছু যায় আসে না তার। আর কে কি বললো এটাও সে জানতে চায় না।
হুরের পা’গলামির কাছে লিয়াও একসময় হার মেনে নেয়। সে শুধু মনে মনে প্রার্থনা করে তার বান্ধুবী যেনো কোনোরকম ক’ষ্ট না পায়।
যেদিন গুলোতে ফারান আসতো না, সেই দিনগুলো চর’ম অ’স্থিরতা তে কাটতো হুরের। ফারান কে এক পলক দেখার জন্য ব্যা’কুল হয়ে উঠতো। এর মধ্যে হুরের দিকে নজর পড়ে মুহিবের। হুরকে যেকোনো রূপে নিজের করার জন্য ম’রিয়া হয়ে উঠে সে। কিন্ত হুর তাকে কোনোরূপ পাত্তা দিতো না। সে তো ফারানের মাঝে বিভোর থাকতো। হুর ফারান কে ভালোবাসে জানতে পেরে মুহিব অনেক বার ই ফারানের ক্ষ’তি করার চেষ্টা করেছে। কিন্ত কোনো এক বিশেষ কারণে সে কখনো ফারানের ক্ষ’তি করতে পারতো না।
মুহিব নিয়মিত হুরকে বি’রক্ত করতে থাকায় লিয়া অনেকবারই চেয়েছিলো নিজেদের বাবাদের এই বিষয়ে জানাতে। কিন্ত হুর লিয়া কে তা করতে দেয় নি। হু’রের ভ’য় ছিলো যদি তাদের বাবারা এই বিষয়ে জানতে পারে তাহলে তাদের অন্য ভার্সিটি তে এডমিশন করিয়ে দিবে! তাহলে হুর আর ফারানের দেখা পাবে না।
হুর মনে মনে ঠিক করে নিয়েছিল, একবার ফারানের অফিস বা বাড়ির ঠিকানা জানতে পারলে তাদের বাবাইকে মুহিবের বি’রক্ত করার বিষয়টা জানাবে। কিন্ত কোনোভাবেই ফারানের বাড়ি বা অফিসের কোনো হদিস পাচ্ছিলো না হুর।
এর মাঝে যে হুর ফারানের সামনে পড়ে নি তা নয়। সে বহুবার ফারানের সামনে গিয়েছে। সে নিয়মিত কোনো না কোনোভাবে ফারান কে বির’ক্ত করেছে। অসংখ্য বার প্রেম নিবেদন করেছে। নিজের ভালোবাসার কথা ফারানের কাছে ব্যক্ত করেছে। কিন্তু ফারান তা মানতে নারা’জ। ফারান এর এক কথা, সে হুরকে ভালোবাসতে পারবে না।
শুরু শুরুতে ফারানের কাছে মনে হতো হুর তার সাথে দুষ্ট’মী করে অথবা কেউ da’re দিয়েছে। কিন্তু সময়ের সাথে ফারান ও বুঝে যায় হুর তাকে সত্যিই ভালোবাসে। ফারান হুরের থেকে আরও দূরত্ব বাড়িয়ে দেয়। আগে হুরের সাথে কথা বললেও ধীরে ধীরে কথা বলা বন্ধ করে দেয়।
ফারানের কাছ থেকে বারবার এমন ব্যবহার হুরের ছোট্ট হৃদয় টাকে চু’র্ণ-বি’চুর্ণ করে দিচ্ছিলো। কিন্ত সে হার মানে নি। চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলো। ফারান যখন হুরের সাথে একেবারেই কথা বলা বন্ধ করে দেয়, হুর তখন ভে’ঙে পড়েছিল।সেই সময়ে লিয়া তাকে সামলিয়েছে।
হুর এবার সিদ্ধান্ত নেয় ফারান কে শেষ বারের মতো নিজের ভালোবাসার কথা বলবে। আর ফারান কেনো তাকে ভালোবাসতে পারবে না তা জানতে চাইবে।
শেষ যেদিন হুরের সাথে ফারানের দেখা হয়, সেদিন হুর অনেক কা’ন্নাকা’টি করে ফারানকে তার সাথে ক্যান্টিন এ যাওয়ার জন্য রাজি করিয়েছিলো। হুরের বি’দ্ধস্ত অবস্থা দেখে ফারান হুরের সাথে কথা বলতে রাজি হয়।
বাকিটুকু তো আপনারা জানেন ই।
————————————————————————
এতক্ষন টেবিলে মাথা রেখে কেঁ’দে যাচ্ছিলো হুর। মনে করছিলো গত ছ’ মাসের সকল স্মৃতি। হুট করে কাঁধে হাত পড়ায় কেঁ’পে উঠলো হুর। পিছনে তাকিয়ে দেখলো লিয়া। লিয়া কে দেখে আর নিজেকে সামলাতে পারলো না হুর। লিয়া কে জড়িয়ে ধরে ডুক’রে কেঁ’দে উঠলো।লিয়া হুরের কা’ন্না দেখে অস্থি’র হয়ে উঠলো। বুঝতে বাকি রইলো না সি’রিয়াস কিছু হয়েছে। কিন্তু লাইব্রেরি তে কথা বললে সমস্যা হবে তাই হুরকে শান্ত করতে লাগলো। প্রিয় বান্ধুবীর কা’ন্না দেখে চোঁখ ভরে উঠলো লিয়ার। নিজেকে কোনোমতে সামলে হুর কে নিচু আওয়াজে বললো,
-“চল হুর আমরা বাইরে যাই। আজকে আমরা ক্লাস ফাঁ’কি দিয়ে অনেক ঘুরবো কেমন! চল চল। ”
কথা শেষ করে হুর কে টে’নে তুললো লিয়া। হুর কে নিয়ে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে গেলো।
এতক্ষন আড়াল থেকে সবটাই দেখছিলো অচেনা ব্যক্তি টা। তার চোঁখ লাল হয়ে আছে। রা’গে না ক’ষ্টে বুঝার উপায় নেই। সে বিড়বিড় করে বললো
-“খুব ক’ষ্ট পেয়েছো তাইনা হুরপরী! ঐ ফারানের জন্য তোমার এতো ক’ষ্ট হচ্ছে তাইনা! এর শা’স্তি তো ফারান কে পেতেই হবে। তোমার চোঁখের প্রতি ফোঁটা অ’শ্রুর মূল্য তাকে দিতে হবে। ”
লোকটা বাঁকা হেসে বলে উঠলো,
-“খুব জলদি তোমার সামনে আসবো আমার পরী টা। সব অপেক্ষা শেষ হবে। তোমাকে আমার করে নিবো চিরদিনের জন্য। তোমার সকল দুঃ’খ ক’ষ্ট মুছে দিবো। তোমার দেহ, মন সব কিছুতেই শুধু আমার বিচরণ থাকবে। শুধুই আমার। শীঘ্রই আমার এতদিনের অপেক্ষার পালা শেষ হতে যাচ্ছে। ”
————————————————————————–
হুর কে নিয়ে একটা রিকশা তে উঠলো লিয়া। গন্তব্য তাদের প্রিয় পার্ক। তাদের দুইজনের মধ্যে কারোর মন খা’রা’প হলেই তারা সেই পার্কে চলে যায়। চমৎকার একটা জায়গা। এক নিমিষেই তাদের মন ভালো হয়ে যায় সেখানে গেলে। আজকেও সেই আশায় হুর কে নিয়ে সেই পার্কে যাচ্ছে লিয়া। উদ্দেশ্য একটাই। হুরের মন ভালো করা।
গন্তব্যে পৌঁছে গেছে হুর আর লিয়া। রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে সামনে হাঁটা দিলো লিয়া। এক হাত দিয়ে হুরের হাত শ’ক্ত করে চে’পে ধরে আছে। পার্কে প্রবেশ করে দেখলো তেমন একটা মানুষ জন নেই। এই ভোরদুপুরে মানুষজন কম থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে একদিক দিয়ে ভালোই হয়েছে। তারা কিছুটা সময় নিরিবিলি তে কাটাতে পারবে। হুরের এই সময় এমনি একটা পরিবেশ দরকার ছিলো।
একটা গাছের নিচে গিয়ে বসলো দুই বান্ধুবী। সামনে একটা লেক আছে। লেক এর পানি এতটা স্বচ্ছ যে পানির মাছগুলো দেখা যায়। হুর একদৃষ্টিতে সেই লেক এর দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবছে। লিয়া হুর কে ধা’ক্কা দিয়ে বললো,
-“কি হয়েছে দোস্ত! আমাকে তো এটলিস্ট বল! ”
হুর লেক এর দিকে দৃষ্টি রেখেই উত্তর দিলো,
-“সে চলে গেছে লিয়া। হারি’য়ে গেছে সে। আমি হয়তো আর কোনোদিন তার দেখা পাবো না। আমার প্রথম অনুভূতি আমায় এতো কেনো ক’ষ্ট দিলো রে লিয়া!”
আবার মুখ চে’পে কেঁ’দে ফেললো হুর। লিয়া হুরকে পাশ থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,
-“সৃষ্টিকর্তা যা করেন ভালোর জন্য করেন হুর। মিস্টার ফারান যদি তোর ভাগ্যে লেখা থাকে তাহলে সে তোর হবেই সেটা যেভাবেই হোক না কেনো। আর যদি তোর ভাগ্যে অন্য কিছু থাকে তাহলে যতোই কাঁ’দিস না কেন কোনো লাভ নেই। তাই নিজেকে শ’ক্ত কর হুর। নিজের ভাগ্যের উপর,সৃষ্টিকর্তার উপর বিশ্বাস রাখ। ইনশাআল্লাহ ভালো কিছু পাবি। ”
হুর নিজের চোঁখ মুছে বলে উঠলো,
-“হ্যা, আমি নিজেকে শ’ক্ত করবো। সে যদি আমার ভাগ্যে থেকে থাকে তাহলে সে যেভাবেই হোক আমার হবেই। আমার আল্লাহ জানেন আমি তাকে কতোটা ভালোবাসি। আমি তাকে সারাজীবনের জন্য নিজের করে চাই। এরপর বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা। তিনি যেটা ভালো মনে করবেন সেটাই হবে। ”
চলবে?