#ভালোবাসার-রাত
#রোকসানা রাহমান
পর্ব (১৪)
তিলের কথার উত্তর না দিয়েই ওর চোখটা বেধে ফেললো রিদ। তাও ওরি লাল ওড়না দিয়ে।
“” আলে, কি কলছেন? আমাল দম বন্ধ হয়ে আসছে।””
“” চোখ বাদলে দম বন্ধ হয়? আমি কি তোর গলা চেপে ধরে আছি?””
বলতে বলতে তিলকে কোলে তুলে নিলো রিদ। পায়ে পায়ে কদম ফেলে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে যাচ্ছে।
“” আমাকে কোলে নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন? আমি কি আবাল কিছু ভুল কলছি? আপনি কি ছাদে উঠছেন? আমাকে ছাদ থেকে ফেলবেননা প্লিজ,লিদ ভাইয়া! এতো উপল থেকে পললে আমাল ভয় লাগবে।””
“” এই জন্যই তো চোখ বেধে নিয়েছি। কতটা উপর থেকে পড়বি,তুই দেখতেও পারবিনা।””
ভয়ে তিল রিদের গলাটা হাত দিয়ে আকড়ে ধরে। কাপা কাপা কন্ঠে বললো,
“” লিদ ভাইয়া!””
রিদ তিলের দিকে তাকিয়ে শুধু মুচকি মুচকি হেসেই যাচ্ছে। মাঝে মাঝে তিলের অমন ভয়কাতুরে চেহারাটা দেখার জন্য হলেও সে অমন ভয়ংকর কাজগুলো করতে পারে। তিলের স্বাভাবিক চেহারার চেয়ে এমন ভয়কাতুরে চেহারাটা তাকে খুব বেশি টানে,খুব বেশি ভালোবাসতে বলে। কিন্তু ভালোবাসলে যে এই চেহারাটা নিমিষেই হাওয়াই মিলিয়ে যাবে,তিল যে তার ভালোবাসার চাওয়াতেই আটকে আছে। আর যার যেটা চাওয়া সেটা দিয়ে দিলে তো চাওয়া শেষ হয়ে যাবে। রিদ কখনোই চাইনা তিলের তার কাছ থেকে চাওয়া শেষ করে ফেলুক। তাই তো ভালোবাসা দেওয়ার জন্য আসলেও দিতে হয় ভয়ংকর কোনো কিছু। এই যে এতোটা জোর করে আমার কলারটা চেপে ধরে আছে কেন ধরেছে? ভালোবাসছি তাই নাকি ভয় দেখাচ্ছি তাই? এই যে ভয়ে নাকটা লাল হয়ে আসছে ভালোবাসলে কি এমন লাল হতো কখনোই না,ওই লালের থেকে এই লালের গভীরতা বেশি। এই যে ভয়ে কপালটায় ভাজ বসিয়ে নিয়েছে,ভালোবাসলে কি এখানে ভাজ পড়তো? পড়লেও এতোগুলো কখনোই পড়তোনা। এই ভাজের গভীরতাও বেশি,যেটা কেবল একজন ভয়ংকর ভালোবাসার মানুষগুলোই বুঝবে।
তিলের অমন ভয়কাতুরে চেহারায় ডুবতেই রিদ ছাদে চলে এসেছে। তিলকে কোলে নিয়েই ছাদের একপাশে ছোট্ট করে চিলেকোঠার খুপড়িটার কাছে এগিয়ে গেলো। নিজের কাধ দিয়ে দরজাটা মেলে নিয়ে তিলকে মেঝেতে বসিয়ে দিয়ে চোখের ওড়নায় হাত দিয়েছে।
“” আগেই তাকাসনা,তিল! তাহলে কিন্তু তুই বেশি ভয় পাবি তখন আবার আমার দোষ দিতে পারবিনা।””
তিলের চোখ থেকে ওড়ানাটা সরতেই তিল ঝট করে চোখ মেলে ফেলে। ভয়ে রিদের ছোট উপদেশটাও ভুলে গিয়েছে। আর সাথে সাথে চিল্লিয়ে উঠে,
“” ওমাগো,কালা ভুত আমাকে খেয়ে ফেললো। লিদ ভাইয়া আমাকে দোযখে ফেলে দিছে।””
তিলের এমন চিৎকারে রিদ অট্টস্বরে হাসতে হাসতে বললো,
“” বলেছিলাম তো তাকাসনা,তাও তাকালি কেন? এখন আমার দোষ?? আর তোর কি মনে হয় তোকে না মেরেই আমি দোযখে ফেলে দিবো?? দোযখে যাওয়া এতো সহজ?? তার জন্য কত পাপ করতে হয় জানিস? আজ কি কিছু পাপ করবি??””
এতো অন্ধকারে রিদের কন্ঠটাকেও তিলের কাছে ভুতুরে লাগছে। কেমন কাঁপা কাঁপা লাগছে। আচ্ছা এমন নয় তো রিদ ভাইয়ার ভেতরে কালাভুতরা জায়গা করে নিয়েছে? তিলের ভাবতেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো। শেষমেষ কিনা তার রিদ ভাইয়াটাও কালা ভুতের স্বীকার হলো? ইশশশ! আমার অতো সুন্দর রিদ ভাইয়া! কালা ভুত প্রবেশ করার ফলে উনিও কি দেখতে কালা ভুতের মতো কালো হয়ে গিয়েছে? তিলের ইচ্ছে হলো নিজেই একটা এনার্জি বাল্ব হয়ে রিদের মাঝে আলো ছড়িয়ে দিতে আর সে আলোয় জ্বলজ্বল করা তার কালো হয়ে যাওয়া রিদ ভাইয়াকে দেখতে।
রিদ তিলের দিকে একটু ঘেষে আসলো। তিলের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লেই তিল আবার চিৎকার করে উঠে। কিন্তু এবার মন ভরে চিৎকার করতে পারেনি তার আগেই রিদ বলে উঠলো,
“” উফ! আমার কানটাকে একটু বাঁচতে দেনা,তিল। এতো চিল্লাসনা তো। আমার খুব মাথা ব্যথা করছে,আমার চুলগুলো টেনে দেতো। যদি একটু শান্তি পাই!””
রিদ কথার তালে তালে তিলের হাতগুলো নিজের চুলের উপরও এনে দিয়েছে। তিলকে আর কষ্ট করে অন্ধকারে কালা রিদ ভাইয়ের কালা চুল খুজতে হয়নি।
“” কি হলো,চুল টেনে দিচ্ছিস না কেন? তুই কি চাচ্ছিস আমি তোর চুল টেনে ছিড়ে ফেলি?””
নিজের চুলের কথা উঠতেই তিল সাথে সাথে রিদের চুলগুলো আলতো করে টেনে দিচ্ছে। সে আর যাই সহ্য করুকনা কেন,চুল টানা সহ্য করতে পারেনা। অন্যের চুলটানা দেখলেও নিজের মাথা ব্যথা উঠে যায়।
“” তোহ! চিল্লানিরানী,এমন অন্ধকারে আমার চুল টেনে আপনার কেমন অনুভূতি হচ্ছে? আপনি চাইলে আমার সাথে শেয়ার করতে পারেন।””
এতোরাতে আমার ঘুম ভাঙ্গিয়ে এমন অন্ধকারে নিয়ে এসে ফেলেছেন তাও কিনা নিজের চুল টেনে দেওয়ার জন্য? আপনি জানেননা আমি অন্ধকারকে কত ভয় পাই তাও কেন করলেন এমন? আপনি বললে আমি আপনার রুমে গিয়ে নাহয় সারারাত চুল টেনে দিতাম,একরাত নাহয় নির্ঘুমে কাটাতাম! আপনার জন্য আমি শতশত রাত নির্ঘুমে কাটাতে পারি তা কি আপনি জানেননা? শুধু শুধু কেন আমার সামনে এমন ভয়ংকর সিচুয়েশন সৃষ্টি করেন? তিলের ইচ্ছে হলো রিদের সবচুল ছিড়ে ফালা ফালা করে দিতে। তারপর একটা আয়না সামনে বাড়িয়ে দিয়ে বলতে,
“” দেখেন তো,এমন টাকরুপে আপনাকে কেমন লাগছে? আপনি চাইলে আপনার অনুভূতি আমার সাথে শেয়ার করতে পারেন!””
“” কিরে,তোরে কি বোবায় ধরেছে? এমন বুবি হয়ে গেলি কেন?””
“” বুবি মানে?””
“” লিঙ্গান্তর করলাম আরকি,এটাও বুঝিস না? তুই তো বাংলা ব্যাকরনে ফেল করবি। তোর স্যারকে বলে দিস,কত বড় লাড্ডু দিতে হবে সেটা যেন আমাকে জিজ্ঞেস করে। উনি হয়তো পরিমানটা বুঝতে পারবেননা।””
রিদের কথার পিঠে তিলের একটা কঠিন কথা শুনিয়ে দিতে ইচ্ছে হলো। কিন্তু এমন ভয়ংকর অন্ধকারে নিজের কন্ঠটাকেও ভয়ংকর লাগছে।
রিদ হঠাৎই ডানপাশে কাত হয়ে তিলের পেটে নাকটা ছুয়ে নিলো। তিলের কোলে শুয়া অবস্থায় নিজের একটা হাত দিয়ে তিলকে পেছন থেকে জড়িয়ে একটু নিজের দিকে টেনে নিলো। যাতে নাকের ছোয়াটা আরেকটু ঘন হয়।
রিদের এমন কান্ডে তিল অবাক হলেও তা বেশিক্ষন স্থায়ী হলোনা। অনুভূতিরা জানিয়ে দিলো তার সুড়সুড়ি লাগছে। নিজেকে হালকা সড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টার তালে খিলখিলিয়ে হেসে উঠে তিল।
তাতে রিদের হাত আরো গাঢ় হয়ে আসে,আরো গাঢ়ভাবে জড়িয়ে নিয়ে নাকের ছোয়াটাও গাঢ় করে বললো,
“” আমার বাবুর গন্ধটা কি মিস্টিরে,তিল। ইচ্ছে করছে একটু চেটে খেয়ে দেখি। কিন্তু গন্ধটা মেয়ে বাবু নাকি ছেলে বাবু বুঝতে পারছিনা। তোর হাসিটা আমার মনোযোগকে ক্ষুন্ন করছে। তুই কি একটু থামবি? ভালো করে না শুকলে আমি বুঝবো কিভাবে আমার মা হবে নাকি বাবা?””
রিদের কথার আগামাথা তিল কিছুই বুঝলোনা। তবুও নিজের হাসিটা থামিয়ে দিয়েছে। তবে সেটা রিদের কথায় নয়,রিদ কি সব অদ্ভুত কথা বলছে তার মানে খুজার জন্য। চিন্তায় ডুবে গেলো।
“” দেখি তোর হাতটা দেতো।””
“” কেন?””
“” কেটে নিয়ে গবেষনা করবো। তোর এমন সরু সরু আর লম্বা হাত কেন হলো তাই। তারপর তার বিপরীতে ঔষুধ বানাবো যাতে সেটা খেলে আর কারো তোর মতো কুৎসিত হাত কারো না হয়!””
“” আপনি কি ডক্টর যে ঔষুধ বানাবেন?””
“” তোকে কে বললো ডক্টটরা ঔষধ বানায়?””
“” তাহলে?””
“” আমি। কই হাত কই? তোর কালা ভুতরা খেয়ে ফেলেছে নাকি?””
তিল অন্ধকারেই রিদের দিকে হাতটা বাড়িয়ে দিলো। অন্ধকারেও তিলের হাতে এনগেজমেন্টে পড়ানো হীরের আংটিটা জ্বলজ্বল করছে। তার সাথেই রিদ একটা সোনার আংটি পড়িয়ে দিতে দিতে বললো,
“” এটা হলো আমার বাবুর শরীরের গন্ধ সুকে দেওয়ার জন্য বুঝলি? মানুষতো বাবুর মুখ দেখে সোনা দেই আমি নাহয় গন্ধ শুকে দিলাম। আমরা বাবা আর সন্তান সবসময় একসাথে গেথে থাকবো তোর মাঝে। আমাদেরকে একসাথে থাকার সুযোগ দিবিতো,তিল? কখনো আমাদের আলাদা করবিনা,সবসময় তোর মাঝে গেথে রাখবি। কথা দে আমাকে! এই অন্ধকারকে সাক্ষী রেখে আমার চুল ছুয়ে, আমার নিশ্বাস ছুয়ে প্রমিস কর!””
রিদের এমন কঠিন ভাষায় তিল কখনোই পড়েনি। এমন কঠিনভাবে কেউ প্রমিস করিয়ে নেয় তিল কখনো দেখেনি। হয়তো তার রিদ ভাইয়ার দ্বারা এসব সম্ভব। তবুও তিল এতোটুকু বুঝলো তার রিদ ভাইয়ার এই কঠিন কথার মাঝে রয়েছে অফুরন্ত ভালোবাসা যার কানাকড়িও তিল অন্য ভালোবাসার মানুষদের মধ্যে দেখেনি। কি বুঝলো না বুঝলো না জেনেই তিলের চোখ ভিজে এলো। সেই ভেজা ভেজা চোখেই বললো,
“” আমি আপনাল জন্য হাজালটা অন্ধকাল লাত দিয়ে নিজেকে সাজাতে পালবো,লিদ ভাইয়া। আপনি আমাকে কথা দিন আমাল সেই সাজ দেখার জন্য এভাবেই আমাকে ছুয়ে থাকবেন! সবসময়!””
“” আমাকে একটু পানি খাওয়াবি? খুব তৃষ্ণা পাচ্ছে,মাথাটা কেমন ঝিম ধরে আসছে, নিশ্বাসটাও কেমন ভাড়ী হয়ে আসছে। তিল,আই নিড অক্সিজেন।
দরজাটা মেলে দে!””
রিদ এমন কাকুতি কন্ঠে তিলের আবার কাপুনি উঠে গেলো। রিদ ভাইয়ার হঠাৎ করে কি হলো? হঠাৎই বুঝতে পারলো, যে গরম হাত দিয়ে তিলকে জড়িয়ে নিয়েছিলো সেটা ক্রমশ ঠান্ডা হয়ে আসছে। নিজের সব থেকে দুর্বল সমস্যাটাকে আজ নিজের শত্রু মনে হচ্ছে। এমন হাজারও মেয়ে আছে যারা অন্ধকারকে ভয় পায়না তাহলে সে কেন তাদের একজন হলোনা??? এই যে রিদ ভাইয়ার এতো কষ্ট হচ্ছে আমি কি কিছু করতে পারবো? আমার তো উনার ছোয়া থেকে নড়তেই ভয় লাগছে তাহলে আমি কিভাবে দরজাটা মেলবো? আর পানিই বা কিভাবে আনবো???
রিদের হুশ ফিরলো মায়ের বকুনিমেশানো ভালোবাসার কান্নাতে।
“” ঠিক মতো না খেলেতো এমন হবেই? আসছে পর থেকে দেখছি যত অবহেলা সব খাবারের উপর। একটা দিনও ঠিকমতো পাতের ভাতগুলো খেয়ে উঠেনি। কেন এমন করিস বলতো? আমার রান্নায় কি তুই সেই আগের মতো স্বাদ পাসনা,বাবা? ছোটবেলায় তোর খাওয়া দেখে কত মানুষ কত কথা বলতো জানিস? তোর পেটে নাকি হাঁসের বাচ্চা ছিলো তাই অমন গাবুসগুবুস করে খেয়ে যেতি।””
~~
রিদ চোখমেলে চারপাশে চোখ বুলালো। সবার উপর দিয়েই যে মোটামুটি ঝড় বয়ে গেছে তাদের চেহারাতে তা স্পষ্ট। একটু নড়াচড়া করতেই বুঝতে পারলো সে হসপিটালে।
“” একটু বেহুশ হয়েছি বলে আমাকে হসপিটালে ভর্তি করে দিলে? চোখে ঠান্ডা পানির ছোয়া দিলেই তো হতো,মা। আর কে বললো তোমার রান্নার স্বাদ পাল্টে গেছে?? আমি যেখানে থাকতাম ওখানের সবাই এমনি খাবার খাই। বাংলাদেশের মতো তো খেয়ে খেয়ে ভুড়ি টানার সময় তাদের নেই। সবাই পরিমান মতো খায়!””
“” তোর পরিমানে আমি ছাই ফেলি। আসছে আমার পরিমান দেখাতে! শুধু বাসায় যেয়ে নে না। তোকে প্রত্যেকদিন যদি দুকেজি চালের ভাত না খায়িছি তো আমিও তোর মা না। হুহ!””
“” তিল,কই আম্মু? ওকে দেখতে পাচ্ছি না যে?””
“” দেখবি কিভাবে ওতো অন্য কেবিনে আছে। ডাক্তার দেখছে ওকে!””
রিদ শোয়া থেকে উঠে পড়লো। শুধু উঠেই ক্ষান্ত হয়নি রীতিমতো নিজের বেড ছেড়ে সোজা হয়ে দাড়িয়ে স্যালাইনের সুইটা খুলতে শুরু করলো,
“” কি হয়েছে ওর? ডক্টর কেন দেখবে ওকে?””
“” আরে তুই কি করছিস? তেমন কিছু হয়নি,তুই দুর্বলতায় বেহুশ হলি আর তিল ভয়ে বেহুশ হলো!””
রিদ স্যালাইনটা খুলেই তিলকে খুজতে চলে গেলো। এতক্ষনে তিলেরও জ্ঞান ফিরেছে। ওর কেবিনে ডাক্টারকে না পেলেও নার্সদের পাওয়া গেলো। তাদের কে বের করে দিয়ে তিলকে টেনে শুয়া থেকে বসিয়ে দিলো,রিদ।
তিলের গলা চেপে ধরে বললো,
“” আমাকে হসপিটালে ভর্তি করে দিয়ে নিজেও ভর্তি হয়ে বসে আছিস? সামান্য অন্ধকারকে তুই মেনেজ করতে পারলিনা? তোর হার্ট এতো দুর্বল? এতো দুর্বল হার্টওয়ালা মেয়েকে আমি কখনোই বিয়ে করবোনা। বিয়ে ক্যানসেল!””
রিদের কথাই তিল হা করে তাকিয়ে রইলো। হসপিটালে ভর্তি হলাম বলে বিয়ে ক্যানসেল হয়ে যাবে? এটা আবার কেমন বিয়ে যে বিয়েতে হসপিটালে ভর্তি হলে বিয়ে ক্যানসেল হয়ে যায়? আর আমি কি ইচ্ছে করে ভর্তি হয়েছি উনি যদি আমাকে অন্ধকারে না নিয়ে যেতো,উনি নিজে বেহুশ না হতো তাহলে তো এমন হতোনা। এখন সব দোষ আমার?
“” তোরই তো,তুই কেন বেহুশ হবি? তুই তো দেখছি আমাকে নিয়ে মরবি। দুজনেই বেহুশ হলে হসপিটালে কে আনবে?””
“” দুজন বেহুশ হবো মানে?””
রিদ তিলের পাশে একটু শান্ত হয়ে বসে বললো,
ধর, তোর আর আমার যখন বিয়ে হবে। বাসররাতে তুই আর আমি তখন তো আর কেউ থাকবেনা। লাইটের আলোও থাকবেনা তাইনা? আমি তো আর তোর জন্য লাইটের আলো জ্বালিয়ে রেখে পাপ কাজ করতে পারবোনা। ইসলামে তো ঢেকেঢুকেই করতে হবে বলা হয়েছে! এখন ঢাকতে না পারলেও লাইটটা তো নিভাতে পারবো। আর ঠিক কঠিন সময়ে আমি বেহুশ হয়ে গেলাম।
“” কঠিন সময় মানে? আর আপনি বেহুশ হবেন কেন?””
“” বেহুশ হবোনা কেন? সারাদিন বিয়ের ঝামালায় তো আমার অনাহারেই থাকতে হবে। সেই অনাহারেই যদি কঠিন কাজ করতে যায় তাহলে তো বেহুশ হতেই পারি তাইনা? এখন তুই যদি অন্ধকার দেখে আমার পাশেই বেহুশ হয়ে পড়ে থাকিস তাহলে আমাদের হুশ ফিরাবে কে? আর হসপিটালে আনবে কে? যেহুতো ওটা বাসর রাত কেউ তো দেখতেও আসবেনা যে আমরা বেহুশ হয়েছে নাকি! তখন তো দুজনেই বেহুশে বেহুশে পরকাল চলে যাবো। তাহলে ভাব এতোকিছু জেনেও আমি তোর মতো দুর্বল মেয়েকে বিয়ে করতে পারি? আমার তো একটা শক্তিশালী বউ লাগবে যে কিনা আমার পাশে বেহুশ হয়ে পড়বেনা। সো বিয়ে ক্যানসেল! আমি এখনি সবাইকে জানিয়ে দিচ্ছি!””
রিদ মহাআশংকার হস্তিনস্তি করার জন্য উঠতে নিলেই তিল টেনে ধরে রিদের হাত। রিদ থমকে দাড়াতেই রিদকে টেনে নিজের বেডের উপর ফেলে দিলো। পেটের উপর চেপে বসে নিজের হাত থেকে স্যালাইনের সুইটা খুলে রিদের গলায় ধরে বললো,
“” বিয়ে ক্যানসেলের কথা আরেকবার মুখে আনলে এটা ঢুকিয়ে আপনার গলার কন্ঠ বন্ধ করে দিবো! খুব শক্ত মানুষি দেখানো হচ্ছে?””
চলবে