#ভালোবাসার-রাত
#রোকসানা রাহমান
পর্ব (১০)
তিল কথা শেষ করার আগেই ওর ঠোটে নিজের ঠোট ডুবিয়ে দিলো রিদ! তিলের কোমড়টা ডানহাতে পেচিয়ে নিজের খোলা বুকের সাথে মিশিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে নিলো।
“”বিয়ে করবি আমায়,তিল?””
রিদের ঠোটের ছোয়ায় সে যে চোখ বন্ধ করেছিলো এখনো খুলেনি। রিদের বুকের মাঝে চুপটি করে মুখটা ঢেকে রেখেছে। রিদও যেন নিজের হাত দুটো দিয়ে ওকে ঢেকে রাখার চেষ্টায় করে যাচ্ছে। তিল এখনো বুঝে উঠতে পারছেনা তার সাথে কি হচ্ছে। তার রিদ ভইয়া তো এমন ভালোবাসতে পারেনা। তাহলে এটা কে? এটাই কি তার সেই রাগে গজগজ করা রিদ ভাইয়া? যার স্পর্শে শুধু রাগ ছাড়া আর কিছু খুজে পাইনি??
“” বলনা,বিয়ে করবি আমায়?””
রিদেয় কথায় তিল নড়ে উঠতেই ওকে আরো শক্ত করে চেপে ধরে বললো,
“” নড়িস না,প্লিজ! তোকে এভাবে জড়িয়ে নিতে আমার ১৭ টা বছর ওয়েট করতে হয়েছে। মনের ক্ষুধা আমাকে ঘুমুতে দেইনি। মনের জ্বালা যে পেটের জ্বালা থেকেও জাহারগুন বেশিরে,তিল! তাহলে তুই বল এই এতটুকুন জড়িয়ে ধরায় কি আমার মন ভরবে? আমার তো ইচ্ছে করছে এভাবেই আমি বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেই!
১৭ বছর মানে? আমাকে জড়িয়ে ধরার জন্য উনার কেন ১৭ বছর ওয়েট করতে হবে? আমাকে যে এতো এতো শাস্তি দিলো,কষ্ট দিলো তাতে তো উনার ১ সেকেন্ডও ওয়েট করতে হয়নি। আর সামান্য জড়িয়ে নিতে ১৭ বছর ওয়েট?
রিদ তিলকে নিজের বুক থেকে সরিয়ে সোজা করে দাড় করালো। ওর গাল দুটো নিজের হাতের তালু দিয়ে ছুয়ে বললো,
“” আমার উপর খুব বেশি রেগে আছিস?””
“”……””
“” এখনো চোখ বুঝে আছিস কেন? তাকাবি না আমার দিকে?””
তিল পিটপিট করে রিদের দিকে তাকিয়েই আবার সাথে সাথে চোখ বুঝে ফেলে। ইশ! কি লজ্জাটাইনা লাগছে। উনি এভাবে কেন তাকিয়ে আছেন আমার দিকে? উনার এই চাহনি যে আমাকে গিলে খেয়ে ফেলছে। উনি কি বুঝতে পারছেননা আমি কত লজ্জা পাচ্ছি?? আর এতো আদুরী গলায় কেন কথা বলছেন?? শরমে আমার মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। যে মাটিতে রিদ ভাইয়া ছাড়া আর কোনো উপাদান নাই!
“” তুই লজ্জাও পাস? ওকে তুই যখন তাকাবিইনা,তাহলে আর কি করার? যা,আমার রুম থেকে বেরিয়ে যা। আমার কথা বলা শেষ!””
“” আমি কথা শুনবো লিদ ভাইয়া!””
তিলের বড় বড় চাহনি আর কথা শুনে রিদ শব্দ করে হেসে দেই। রিদের মনে হলো তার তিল এখনও ছোট আছে।
“” বউ হবি আমার?””
রিদের কথায় তিল উত্তর দিতে গেলেই ওর ঠোট চেপে ধরে রিদের শাহাদাৎ আংগুল।
“” না,তিল। এখননা। তুই এখন কোনো কথা বলবিনা। আমি যা বলছি তাই শোন। পরশু আমি ইউকে বেক করবো। তোর হাতে আজ নিয়ে দুইদিন সময় আছে। এই দুইদিন তুই আমাকে নিয়ে ভাববি,খুব গভীরে গিয়ে ভাববি। যেমনটা পরীক্ষার হলে তোর আর্থিক বিবরনীর সম্পদের সাথে দায় না মিললে তুই প্রথম থেকে খুটে খুটে ভুল বের করিস,তেমন করে ভাববি! ছোটবেলা থেকে আজ পর্যন্ত তোর সাথে আমার ঘটানো প্রত্যেকটা ঘটনাকে সাজিয়ে নিয়ে ভাববি। তোর এই রাগী,বদমেজাজী,স্বার্থপর লিদ ভাইয়াকে তুই চাস নাকি। শুধু চাইলে হবেনা,মন থেকে চাইতে হবে। যদি তোর মন বলে যে আমাকে বিয়ে করে আমার সাথে সারাজীবন কাটাতে পারবি,আমার দেওয়া অত্যাচারগুলোকে সহ্য করতে পারবি তাহলেই তুই আমাকে বিয়ে করতে পারবি। একটা কথা সবসময় মনে রাখবি,আমার ভালোবাসা আর অন্য কারো ভালোবাসা এক রকম হবেনা। হয়তো আমাকে বিয়ে করলে তুই অনেক বেশি কষ্ট পাবি,আদরের থেকে কষ্টটাকেই বেশি নিতে হবে। আর তুই যদি অন্য কাউকে বিয়ে করিস,সে তোকে ভালোবাসার সাগরে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। যেটা আমি পারবোনা। কেন পারবোনা সেটা জিজ্ঞেস করবিনা। আমি বলতে পারবোনা।””
তিল কিছু বলার জন্য ঠোট নাড়াতেই রিদ ওকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
“” পরশুদিন আমি কখন যাবো তোকে বলবোনা। তুই এই দুইদিন যদি নিজের মনে আমাকে খুজে পাস তাহলে এয়ারপোর্টে গিয়ে আমাকে নিয়ে আসবি। আমি তোর জন্য ওয়েট করবো। আর যদি তোর মনে আমাকে না পাস তাহলে যাবিনা। তোর অনুপস্থিতেই আমি বুঝে নিবো তোর কি ডিসিশন,বুঝলি?””
রিদের কথায় তিলের চোখ পানিতে ভরে গেলো। করুন চাহনি দিতেই রিদ বলে উঠলো,
“” আমি জানি,তুই এয়ারপোর্টে কখনো যাসনি,চিনিসও না। কিন্তু এটা তোর ভালোবাসার পরীক্ষা হবে। এটা হবে আমার ভালেবাসায় তোর এন্ট্রির প্রথম শাস্তি। বুঝতে পারছিস এন্ট্রী নিতেই তোর এতো বড় শাস্তি পেতে হচ্ছে তাহলে সারাজীবন তোর উপর দিয়ে কি কি ঝড় যাবে? এগুলোও ও ভাবিস! আর হ্যা,আরেকটা কথা,এই দুইদিন তোকে যেন আমার আশেপাশে ঘুরঘুর করতে না দেখি।””
“” কেন?””
“” তাহলে তুই মাথা দিয়ে না আবেগ দিয়ে ডিসিশন নিয়ে ফেলবি। আর আমি সেটা চাইনা। এখন আমার রুম থেকে বেড়িয়ে যা,আমার অনেক গুছগাছ করতে হবে!””
তিল তখনো ঠাই দাড়িয়ে রইলো। চোখদুটো ঠেকে আছে,রিদের লোমশ বুকে। একটু আগেও সে এই বুকেরই উষ্ণ ছোয়া পেয়েছিলি এটা কি ভাবা যায়?! আমি কি সত্যিই ঐ বুকেই মাথা রেখেছিলাম? আর রিদ ভাইয়া কি তার এই হাতগুলো দিয়েই আমাকে ভালোবাসার চাদরে জড়িয়ে নিয়েছিলো?? আর ঐ ঠোট…
“” কি হলো? তোকে না আমি বেড়িয়ে যেতে বললাম? এখনো এখানে দাড়িয়ে আছিস কেন?””
রিদের তির্যক কন্ঠে তিলের সব গোলমেল লেগে গেলো। মাথাটা নিচু করে রুম থেকে বের হতেই আম্মুর সাথে দেখা,
“” ছেলের ডায়রীয়া ভালো হয়ে গেছে। তুই বললে ওরা এখনি গাড়ী নিয়ে বের হবে। আমি কি বলবো আসতে?””
“” আম্মু,আমাকে চিমটি দাও তো!””
“” মানে?””
“” উফ! মানে মানে করো নাতো,চিমটি দিতে বলছি,চিমটি দাও।””
তাসমিয়া বেগম চিমটি কাটতেই তিল চিৎকার করে উঠলো,
“” তারমানে আমি কোনো স্বপ্ন দেখছি না?””
তিল ওর মাকে ধরে লাফাতে লাফাতে কয়েক দফা চুমু খেয়ে নাচতে শুরু করে দিলো। গানের সাথে তাল মিলিয়ে হাত পা নাচাতে নাচাতে নিজের রুমের দিকে যাচ্ছে,
****I love u love u love u
My love***
তাসমিয়া বেগম হা করে মেয়ের নাচ দেখতে থাকলেন। এদিকে হ্যাংলা কুমারের মায়ের কল বেজেই যাচ্ছে তো বেজেই যাচ্ছে! সে দিকে উনার কোনো হুশ নেই!
~~
তিল আয়নার সামনে দাড়িয়ে ঠোট দুটোকে বাকিয়ে বাকিয়ে দেখছে৷ হাত দিয়ে টেনে বড় করেও যখন কোনো চিহ্ন পেলো না ইচ্ছে হলো ছুড়ি দিয়ে কেটে ফেলতে। সেদিন যখন উনি রেগে চুমু খেলেন তখন তো ঠোট ফুলে কেলেংকারী হয়ে গিয়েছিলো। আর আজ যখন ভালোবেসে চুমু খেলো তখন একটু লাল ও হলোনা? এ কেমন চুমু হলো? কিন্তু আমার বান্ধুবী যে বলতো চুৃমু খেলে নাকি ঠোট লাল হয়ে যায়? তাহলে কি উনি ঠিক মতো চুমুও খাননি? এতো বড় দামড়া ছেলে হয়েছে অথচ এখনো চুমু খাওয়া শিখলোনা? সামান্য লালই যদি করতে না পারলো তাহলে কিসের চুমু হলো? ধ্যাত!
তিল রাগ আর অভিমান নিয়ে বিছানায় ধপাস করে বসে পড়লো। এটা কোনো কথা? আমি এমন একজনকে বিয়ে করবো যে কিনা চুমুই খেতে পারেনা? তাহলে কি আমার আর ঠোট লাল হওয়া চুমু খাওয়া হবেনা??
তিল বিছানায় শুয়ে আছে,আজ দরজাটা খুলাই রেখেছে। একটু পরপর দরজার দিকে তাকাচ্ছে,এই বুঝি তার রিদ ভাইয়া আসলো। কিন্তু দেখতে দেখতে যখন চারটা বেজে গেলো তবুও তার রিদ ভাইয়ার দেখা মিললোনা তখন মনে পড়লো তাকে যে ভাবনায় ডুব দিতে হবে!
তিল তখন থেকে চোখ বন্ধ করে ছোটবেলার ঘটনার কথা মনে করার চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুতেই কিছু মনে পড়ছেনা। বারবার শুধু রিদের সেই ভেজা বুকের উষ্ণ ছোয়ার কথা মনে পড়ছে।
“” তিল,মা! তুই এখনো ঘুমাচ্ছিস? কলেজে যাবিনা?””
আব্বুর পরম স্নেহের হাতটা কপালে ঠেকতেই তিল নড়ে ওঠে।
“” আজকে যেতে ইচ্ছে করছেনা,আব্বু!””
রহমত আলী মেয়ের গলায় আর কপালে হাত দিয়ে পরীক্ষা করে বললেন,
“” জ্বর তো আসেনি,মা। তাহলে যাবিনা কেন? পেট ব্যথা?””
তিল নিজের মাথাটা বাবার কোলের উপর রেখে বললো,
“” না,বাবা,মনে অসুখ করেছে। কলেজে না গেলেই ভালো হয়ে যাবে।””
“” এটা আবার কেমন অসুখ রে,মা? যেটা কলেজে না গেলে ভালো হয়ে যায়?””
“” তুমি বুঝবেনা। আচ্ছা আব্বু,তুমি আম্মুকে কেন বিয়ে করলে?””
“” কেন বিয়ে করলাম মানে?””
তিল এবার শুয়া থেকে উঠে বাবার মুখোমুখি হয়ে বললো,
“” আমি বলতে চাইছি,তুমি আম্মুকেই কেন বিয়ে করলে? আম্মুর জায়গায় অন্য আম্মুকে কেন নয়?””
মেয়ের কথা রহমত আলী বুঝার চেষ্টা করলো। কিন্তু অনেক ভেবেও কিছু বুঝে উঠতে না পারায় বললো,
“” আম্মুর জায়গায় অন্য আম্মু মানে?””
“” ধুর,তুৃমি কিছু বুঝোনা।””
তিল আবার কাথাটা জড়িয়ে শুয়ে পড়লো।
~~
সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে এলো। কিন্তু রিদ ভাইয়ার বাইরে বের হওয়ার কোনো নাম গন্ধই নেই। এদিকে ঘন্টার পর ঘন্টা সোফায় বসে থাকতে থাকতে তিলের কোমড় ধরে আসলো। আর কতক্ষন সে টিভি দেখবে? কেউ কি বুঝছেনা আমি টিভি না তাকে দেখার জন্য বসে আছি। আমাকে তো তার কাছে যেতে মানা করেছে তাই বলে সে কি একটু দেখা দিয়ে যেতো পারেনা? তাকে দেখার জন্য আমার রিদয়টা যে শুকিয়ে যাচ্ছে।
আকাশে সূর্য ডুকে চাঁদ উকি দিচ্ছে কিন্তু রিদের কোনো দেখা মেলেনি তিলের। সারাটা দিন রাত উনি রুমে করছেটা কি? রাতে তো খেতেও আসলোনা। উনি কি না খেয়েই রয়েছেন? উনি কি জানেন উনার জন্য আমার ও খাওয়া হলোনা? উনি ভালোবাসার নামে এ কোন শাস্তি দিচ্ছেন?
তিল আর সহ্য করতে পারলোনা। নিজের রুম ছেড়ে গুটিগুটি পায়ে রিদের রুমের কাছে যেতেই দরজাটা ঠাস করে লাগানোর শব্দ হলো। সেই শব্দটা যেন তিলের কানে না বুকের ভেতরে ছিদ্র করে অন্য পাশে ঢুকে গেলো। ছিদ্রটা এতো বড়ই হয়েছে যে রিদ ভাইয়া চাইলে সেখানটা গুহা বানিয়ে থাকতে পারে।
সারাটা রাত তিলের নির্ঘুমে কাটল সকালে ঘুমিয়ে পড়লো। হঠাৎ গাড়ীর হর্নে তিল লাফিয়ে উঠে। আজই তো রিদ ভাইয়া চলে যাবে বলেছে। তিল দৌড়ে রিদের রুমের কাছে যেতেই দরজা খুলা পেলো। ভেতরটাও ফাকা। তাহলে কি উনি সত্যি সত্যি???? তিল আর কিছু ভাবতে পারলোনা,মাথাটা ঝিম ধরে যাচ্ছে। চোখে ঝাপসা দেখছে। কিন্তু তাকে তো দুর্বল হলে চলবেনা। তার যে রিদ ভাইয়াকে চাই। একদম নিজের করে!
তিল পুরো এয়ারপোর্ট তন্ন তন্ন করে খুজছে। কিন্তু কোথাও নিজের রিদ ভাইয়াকে দেখতে পারছেনা। এদিকে তাড়াতাড়ি আসতে গিয়ে রাস্তার মধ্যে ছোটখাটো এক্সিডেন্টও হয়ে গেছে। পা থেকে রক্ত বের হচ্ছে। সেদিকে তাকালে যে তাকে চলবে না যে করেই হোক তার রিদ ভাইয়াকে খুজে পেতেই হবে।
চলবে