ভালোবাসার বন্ধন পর্ব-১১(শেষ পর্ব)

0
1799

#ভালোবাসার বন্ধন
#পর্ব_১১ (শেষ)
#অধির_রায়

তূর্ণ বলে উঠে, তূর্জয় তোর দিন শেষ৷ তূণ চৌধুরী এসে পড়েছে। আজ থেকে তোকে আর আস্ত রাখবো না৷ তিলে তিলে তোকে মা*রব৷ তুই জানিস না আমি কে?

মিহু তূর্ণের জন্য খাবার নিয়ে রুমে যাচ্ছে৷ তূর্ণের কথা শুনে দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে পড়ে৷ ফোন নিয়ে তূর্ণের কথা রেকর্ড করতে থাকে। কারণ মুখের কথায় বন্ধুকে অবিশ্বাস করবে না৷

তূর্ণ নিজের পকেট থেকে গার্ন বের করে গার্নের ঠোঁটে চুমু দেয়৷ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অভিনয় করে বলে উঠে, “তূর্জয় তোর জন্য আজ আমার খুব মায়া হচ্ছে৷ তোকে আজ আমি মেরে ফেলবো৷ আমার কষ্ট লাগছে এটা ভেবে তুই আমার এক সময় বন্ধু ছিলি৷ বিজ্ঞরা এমনি বলেন নি “বন্ধুই শত্রু হয়৷”

তূর্ণ থেমে আবার বলে উঠে, ” তোকে মেরে ফেলার জন্যই আমি নিজেই নিজেকে আঘাত করেছি৷ হাহা আর তোরা ভেবে নিলি আমি অসুস্থ। বাহ বাহ খুব ভালো। তোদের সালাম দেওয়া দরকার।” ‘চিন্তা করিস না তূর্জয় তোকে মেরে ফেলার পর তোর আদরের বউ মিহুকে আমি আমার নিজের করে নিবো৷”

মিহু তূর্ণের মুখে নিজের নাম শুনে অবাক হয়ে যায়৷ তূর্ণ তাকে পাওয়ার জন্য এসব খারাপ কাজ করছে৷ মিহু তো তূর্ণকে তেমন চিনে না৷ কোনদিন দেখা হয়েছে বলে মনেও পড়ছে না৷

তূর্ণ সোফায় বসতে বসতে বলে উঠে, “মিহু পাখি তোমাকে আমার খাঁচায় বন্ধি করে রাখবো। আমার মনের খাঁচায় তোমাকে সারাজীবন বন্ধি করে রাখবো। তোমাকে কোথাও যেতে দিবো না৷ মিহু পাখি তোমাকে পাওয়ার জন্য তোমার দিদি ছোঁয়াকে মেরে ফেলেছি৷ সো সেড৷ অবশ্য ছোঁয়াকে আমি ভালোবাসতাম। কিন্তু ছোঁয়া তোমার থেকে মোটা+কম সুন্দর ছিল। তুমি অনেক হট৷

মিহু আর নিজের কানে এসব কথা শুনতে পারছে না৷ মিহু রেকর্ডগুলো সেভ করে নেয়৷ সেভ করে দরজায় টুকা দেয়৷ বাহিরের আওয়াজ পেয়ে তূর্ণ তারাতাড়ি করে নিজের গার্ন লুকিয়ে ফেলে। দরজার দিকে তাকিয়ে মিহি কন্ঠে বলে উঠে, ” দরজার বাহিরে কে?”

— আমি মিহু। আপনার জন্য খাবার নিয়ে এসেছি৷ দরজা খোলেন।

— দরজা খেলায় আছে৷ আসতে পারো।

মিহু দরজা খোলে ধীর পায়ে খাবার নিয়ে রুমে যায়৷ খাবার ট্রি টেবিলে রেখে বলে উঠে, “আপনার শরীরের অবস্থা কেমন? এখন ঠিক আছেন তো?”

তূর্ণ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মিহুর কোন কথা তূর্ণের কান অব্ধি যাচ্ছে না৷ মিহু তূর্ণের সামনে তুরি বাজিয়ে বলে উঠে, ‘” কি হলো, কথা বলছেন না কেন!”

— তূর্ণ বাস্তবে ফিরে আসে, ” সরি মিহু। আসলে ভাবছি, কে আমার এত বড় ক্ষতি করতে পারে? আমাকে মেরে তার কি লাভ? আমি কোনদিন কারোর কোন ক্ষতি করিনি৷ সব সময় মানুষের ভালো চেয়ে এসেছি৷ আজ তারাই আমার ভালোবাসা কেঁড়ে নিয়েছে। আমাকেই মা*রতে চাই৷

— মিহু মনে মনে বলে উঠে, ” সা* তোকে আমি একটু পর শ্বশুর বাড়ি পাঠাবো৷ তোর দিন এখন কাটবে পোড়া রুটি খেয়ে৷ তুই আমার দিদিকে মেরে ফেলেছিস৷ আমি ছোট বোন হয়ে তার জন্য কিছু করবো না৷ ”

— “আরে না না আপনি কি কারো ক্ষতি করতে পারেন? আপনার এই গুণটায় আমার খুব পছন্দ। আপনি দেখতেও অনেক স্মার্ট এন্ড হ্যান্ডসাম৷ খাবার খেয়ে নেন। আমি আসছি। যদি কোন কিছুর দরকার পড়লে ডাক দিবেন৷” কথাগুলো আটকে আসছে৷ তবুও মনে পাথর চেপে বলে উঠে।

তর্ণকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই চলে আসে৷ মিহু এসে তার মা বাবাকে পুলিশ নিয়ে চৌধুরী বাড়িতে আসতে বলে৷

মিহু রুমে এসে দেখে তূর্জয় এখনো পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে। মিহু তূর্জয়ের কানের কাছে ছোট একটা কামড় দিয়ে তূর্জয়ের আরামের ঘুম হারাম করে দেয়৷

— “মিহু তুমিও না৷ আমার এত সুন্দর ঘুমটা ভাঙলে কেন? কতোদিন থেকে ঘুমাতে পারি না৷ আজ একটু ঘুমিয়েছি৷ তাও তুমি আমাকে জাগিয়ে দিলে৷ ” ঘুম ঘুম চোখে বলে উঠে।

— আর ঘুমাতে হবে না৷ উঠেন বলছি৷

মিহু চলে আসতে নিলে তূর্জয় মিহুর হাত টান দিয়ে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়৷

— কি করছেন টা কি? আমার অনেক কাজ আছে৷

— হুম দেখতেই পাচ্ছি মহারানীর অনেক কাজ৷ আমার দিকেও একটু নজর দিয়েন মহারানী।

— বাজে কথা না বলে নিচে আসেন৷ আমার খুব ক্ষুধা লাগছে৷

— আমারও খুব ক্ষুধা লাগছে৷ কিন্তু এখন আমার মিষ্টি খেতে মন চাইছে৷

— মিষ্টি খেতে না করেছে কে? ফ্রিজে রাখা আছে। খেয়ে নেন৷ যত ইচ্ছা তত খান৷

— আরে আমি ফ্রিজের মিষ্টি খাবো না৷

— তাহলে..

তূর্জয় নিজের ঠোঁট বাড়িয়ে দিয়ে বলে উঠে, ” আমি এই মিষ্টির কথা বলছি।”

— মিহু তূর্জয়ের কথা শুনে খুব লজ্জা পাই৷ আজ তূর্জয় মিহুকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়েছে৷ ধীরে ধীরে তূর্জয় মিহুকে ঠিক মেনে নিবে৷ মিহু মুচকি হেঁসে বলে উঠে, ” মা আপনি রুমে। ”

“মা” শব্দটা শুনে তূর্জয় মিহুকে ছেড়ে দেয়৷ মিহু এই সুযোগে তূর্জয়ের কাছ থেকে দূরে সরে যায়৷

— মিহু প্রাণ খোলে হাসতে হাসতে বলে , ” বোকা বানালাম৷ আর হ্যাঁ আজ একটা সারপ্রাইজ আছে৷ তাই তারাতাড়ি নিচে আসেন আর খাবার খেয়ে নেন৷”

— মিহু কাজটা কিন্তু একদম ঠিক করো নি৷ এজন্য তোমাকে শাস্তি পেতে হবে৷

— রাখে রাখেন আপনার শাস্তি। আমি আজ ম্যাজিক দেখাবো। তারাতাড়ি চলেন৷

তূর্জয় মিহুর কথামতো তারাতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে আসে৷ সকলের সাথে ব্রেক ফাস্ট করে নেয়৷ তূর্জয়ের চোখ শুধু মিহুর দিকে৷ মিহুর কাজ দেখে তূর্জয় কিছু বুঝতে পারছে না৷ সবাইকে ঢেকে এনেছে ডাইনিং রুমে। সবাই আড্ডা দিচ্ছে ডাইনিং রুমে।

— মিহু এসবের মানে কি? আমি কিছু বুঝতে পারছি না।

— ছোট বাচ্চাদের মতো প্রশ্ন না করে দেখে যান৷ সময় হলে সবই জানতে পারবেন৷

— কি জানতে পারব?

— আরে সারপ্রাইজ কি বলে দিলে হয়?

— প্লিজ একটু বল না!

কলিং বেলের শব্দ আসতেই মিহু এক প্রকার দৌড়ে দরজা খোলে দেয়৷ নিজের মা বাবার কাছ থেকে আশীর্বাদ নিয়ে ভিতরে নিয়ে আসে।

— মিহু তার বাবাকে আলাদা করে নিয়ে বলে উঠে, “বাবা পুলিশ এনেছো তো?”

— হুম মা৷ তোমার কথামতো আমি সব ব্যবস্থা করে রেখেছি৷ আর চারজন ছদ্মবেশ ধারণ করে এসেছে৷

— তাদের ভিতরে নিয়ে আসো৷

— কি হবে এসব করে?

— বাবা তোমাকে অনেক শক্ত হতে হবে। আমাকে কথা দাও তুমি ভেঙে পড়বে না৷

মিহু এই কথাটা বলতেই মিহুর চোখে জল এসে পড়ে। কোন রকম নিজের জলকে লুকিয়ে আবার বলে উঠে, ” তুমি মাকে একটু সামলিয়ে নিও। ”

— কি হয়েছে মা। তুই কান্না করছিস কেন?

— কিছু না বাবা। তোমরা বসো।

আড়াল থেকে তূর্জয় সব শুনে ফেলে৷ বলতে গেলে তূর্জয় মিহুর উপর নজর রাখছে৷ মিহু তার বাবাকে ডাইনিং রুমে রেখে তূর্ণের কাছে আসে৷ তূর্ণ শুয়ে শুয়ে তার পরিকল্পনা সম্পন্ন করে যাচ্ছে।

— হ্যালো (মিহু হাসি মুখে বলে উঠে)

— “হ্যালো” বসতে বসতে বলে উঠে তূর্ণ।

— “একটা কথা বলবো?” তূর্ণের হাত ধরে।

আড়াল থেকে তূর্জয় এই দৃশ্য দেখে ছুঁটে আসতে নিলেও নিজেকে আটকিয়ে রাখে। আজ বাড়ি ভরতি লোক। তাদের সামনে চৌধুরী বাড়ির পরিবার মান সম্মান নিচে ফেলতে চাই না৷

— “একটা কেন? তোমার যা ইচ্ছা তাই বলো।” নেশা জনিত চোখে তাকিয়ে বলে উঠে।

— আমি ভাবছি আমার পরিবারের সাথে আপনাকে পরিচয় করিয়ে দিবো৷ আসলে আপনাকে খুব ভালো লেগেছে৷ আমি চাই ভূর্জয়ের সাথে ডিভোর্সের পর আপনাকে বিয়ে করতে৷ সেজন্য মা বাবাকে ঢেকে এনেছি৷

তূর্জয় আর নিজেকে আটকিয়ে রাখতে পারল না৷ তূর্জয় রুমে ঢুকে তূর্ণের কাছ থেকে মিহুর হাত ছাড়িয়ে মিহুর গালে কষিয়ে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়৷

— ক্ষেপে বলে উঠে, “তোমার এতো বড় সাহস কি করে হয়? তুমি আমাকে ডিভোর্স দিতে চাও৷”

— থাপ্পড়টা হজম করে বলে উঠে, ” মনে নেই সেই প্রথম দিনের কথা৷ আমাকে তো আপনি কোনদিন বউ হিসেবে মানেন না৷ আজ কেন এসেছেন স্বামীর দাবি নিয়ে৷ লজ্জা করে না৷ আপনার মতো লোজারকে আমি কখনোই স্বামী হিসেবে মানি না৷

— মিহু হাতের মুষ্ঠি শক্ত করে৷

মিহু চোখের জল মুছে কিছু না বলে তূর্ণের হাত ধরে ডাইনিং রুমে চলে আসে৷ তূর্জয় দেয়ালে একটা ঘুশি মেরে সেও ডাইনিং রুমে আসে৷ তূর্জয় মনে মনে বলে উঠে, ” মিহু এটাই তোমার সারপ্রাইজ ছিল৷ আমার সারপ্রাইজ বাকি আছে৷ একটু পর দেখতে পাবে আমি কি করি? ”

মিহু তূর্ণকে ডাইনিং রুমে নিয়ে এসে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। তূর্ণ মিহুর বেস্ট ফ্রেন্ড। তারপর ছদ্মবেশে আসা চারজন পুলিশের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়৷ পুলিশদের চোখের ইশারা দিয়ে বলে উঠে, “তূর্ণকে যেন তারা পালাতে না দেয়৷ ”

পুলিশ চোখের ইশারা বুঝতে পেরে তূর্ণকে সেখানে দাঁড় করিয়ে তূর্ণের সাথে পরিচিত হচ্ছে৷

— মিহু সবার সামনে বলে উঠে, ” আমি আপনাদের একটা রেকর্ড শুনাতে চাই৷ প্লিজ সবাই ধৈর্য সহকারে শুনবেন৷ ”

মিহু তার ফোন বের করে তূর্ণের কু কর্মের কথা সবাইকে জানিয়ে দেয়৷ শুধু রেকর্ড করেনি৷ তূর্ণের প্রতিটি বলা কথা ভিডিও করে রেখেছে৷ তূর্ণ এসব কথা শুনে পালাতে চাইলে পুলিশ তাকে ধরে ফেলে৷ মিহুর মা কান্নায় ভেঙে পড়ে৷

— পুলিশ অফিসার এই শয়তানকে নিয়ে যান৷ তার যেন কঠিন শাস্তি হয়। সে ব্যবস্থা আমি করবো।

মিহু তার মা বাবাকে শান্তনা দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়৷ রাতে একা একা বসে কান্না করছে মিহু৷ তূর্জয় রুমে প্রবেশ করতেই মিহু তূর্জয়কে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়৷

— আমি আপনাকে খুব ভালোবাসি। আমি তখন সব নাটক করেছি৷ প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দেন৷ আমি ভুল করেছি৷ আপনাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি৷

— তূর্জয় মিহুকে জড়িয়ে ধরে, ” আমিও তোমাকে খুব ভালোবাসি। প্লিজ আমাকে ছেড়ে চলে যাবে না৷ আমাকে ছেড়ে চলে গেলে আমি বাঁচতে পারবো না৷ আমি ভেবে নিয়েছিলাম তুমি সত্যি সত্যিই আমাকে ডিভোর্স দিবে। আমিও ভুল করেছি৷”

— না আপনি কোন ভুল করেননি৷ এমন সারপ্রাইজ হলে আমিও এমন করতাম৷ আমাদের মাঝে আর কোন ভুল বুঝাবুঝি হবে না৷

— তোমাকে আজ আমি ভালোবাসার বন্ধনে বেঁধে ফেলবো৷ আর তোমাকে ভালোবাসার বন্ধন থেকে বের হতে দিবো না৷

তাদের দুই জনের মাঝে আজ কোন দ্বিধা নেই। তারা একে অপরকে আজ আপন করে পায়৷ তাদের ভালোবাসা দেখে আজ প্রকৃতিও হিংসা করছে৷

______সমাপ্ত______

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে