#ভালোবাসার বন্ধন
#পর্ব_১০
#অধির_রায়
রাত একটার দিকে তূণ চৌধুরী বাড়িতে আসে রক্তাক্ত অবস্থায়। রক্তাক্ত এসে তূর্জয় আর মিহুর সামনে লুটে পড়ে যায়। সাথে সাথেই তাদের সামনে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। দেখে বুঝা যাচ্ছে কেউ তাকে মারাত্মকভাবে আঘাত করেছে৷ মে*রে ফেলার সবটুকু চেষ্টা করেছে। কোন রকম জীবন বাজি রেখে পালিয়ে এসেছো৷
ছোঁয়াকে খুন করে ঝিলের জলে ভাসিয়ে দেয়। ছোঁয়ার দেহ গভীর জলে ঢুবে যাওয়ার পর তূর্ণ বাড়িতে ফিরে আসে৷ বাড়িতে এসে সে কিছুতেই নিজকে শান্ত রাখতে পারছে না৷ শুধু ছোঁয়ার মায়াভরা মুখটা তার চোখের সামনে ভেসে উঠেছে। আজ তূর্ণ উপলব্ধি করতে পারছে ছোঁয়ার ভালোবাসা।
ছোঁয়া একদিন তার সমস্ত কিছু ত্যাগ করে ভালোবাসার মানুষ তূর্ণের কাছে চলে এসেছিল৷ আজ সেই তূর্ণ ছোঁয়ার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করলো। নিজ হাতে মেরে ফেলেছে। কি করে করতে পারল? মানুষ কতোটা পাষাণ হলে এমন বাজে কাজ করতে পারে৷ একবারও ভেবে দেখলো না৷ মানুষের রুপটা বড় নয়৷ মানুষের ভালোবাসাটা বড়৷ আজ যদি তূর্ণ ছোঁয়াকে না ফিরিয়ে দিতো তাহলে তাকে আজ এই দিন দেখতে হতো না৷
তূর্ণ দেয়াল থেকে “ছোঁয়া” নামক মেয়েটার পিক নিয়ে কাঁদতে থাকে। তূর্ণ ছোঁয়ার পিক নিয়ে বলে উঠে, “ছোঁয়া আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি। প্লিজ তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও! আমি তোমার প্রতিশোধ পূর্ণ করেই ছাড়বো। মিহু তূর্জয়কে কিছুতেই এক হতে দিবো না৷”
তূর্ণ ছবিটা যত্ন সহকারে এক জায়গায় লুকিয়ে ফেলে৷ ছবিটা লুকিয়ে ঝিলের ধারে যায়৷ এক ধ্যানে ঝিলের জলে তাকিয়ে আছে৷ বুকের মাঝে পাথর চেপে রেখে ছোঁয়ার ভালোবাসার কথা মনে করছে। ছোঁয়া যখম জীবিত ছিল তখন তূর্ণ ছোঁয়ার ভালোবাসা বুঝতে পারলো না৷ বেল্ট দিয়ে নিজেই নিকের গায়ে একের পর এক আঘাত করতে থাকে৷ সমস্ত দেহ থেকে রক্ত ঝরতে থাকে। তবুও থামার কোন নাম গন্ধ নেই। এক পর্যায় ক্লান্ত হয়ে থেমে যায়৷ মুচকি হেঁসে আকাশ প্রাণে তাকিয়ে বলে উঠে, ” তূর্জয় আমি আসছি৷ তোদের জীবনটা শেষ করতে আমি আসছি। তোদের কিছুতেই আমি এক হতে দিবো না৷”
তোদের জীবন নগরে পরিণত করবো৷ ম*রতে চাইনি কিন্তু ম*রতে পারবি না৷
।
।
রাতে ডিনারের শেষে সকলে বসে ডাইনিং রুমে বসে বসে গল্প করছে৷ কখন যে রাত ১ টা বেজে গেছে তাদের খেয়াল নেই৷ তূর্জয়ের মা বাবা তূর্জয়কে ডিপ্রেশন থেকে বেরিয়ে আসার অনেক উপদেশ দেন। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে তূর্জয়ের মা বাবা নিজের রুমে চলে যান৷ মিহু আর তূর্জয় সিঁড়িতে পা দিবে ঠিক তখন কলিং বেল বেজে উঠে।
— “এত রাতে কে আসতে পারে?” (মিহু অবাক চোখে তূর্জয়ের দিকে তাকিয়ে।
— এখন ছোঁয়া আসলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না৷ আমি কোন কিছু করার আগে চলে যেতে বল। তাকে দেখলে আমার মাথা গরম হয়ে যায়৷
মিহু তূর্জয়ের কথা শুনে মাথা নিচু করে ফেলে। মিহু কি বলবে? সে তো জানে তূর্জয়ের মনের অবস্থা। তূর্জয় তেড়ে দ্বার খোলে৷ মিহুও তূর্জয়ের পিছু পিছু আসে৷ ভুল বশত খারাপ কিছু না করে বসে। দ্বার খোলতেই তূর্ণ তাদের সামনে আসে। তূ্ণ তাদের দু’জনকে একসাথে দেখে মুচকি হাসে। দ্বার বন্ধ করে ছোঁয়ার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে।
— “তূর্ণ তুই। তোর এই অবস্থা কি করে হলো?” অবাক হয়ে তূর্জয় বলে উঠে।
— তূর্ণ কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠে, ” তারা আমাকে বাঁচতে দিবে না৷ প্লিজ আমাকে বাঁচা। আমি এখনই মরতে চাই না৷ আমি বাঁচতে চাই। ”
— কে তোর এমন অবস্থা করেছে। (তূর্জয়)
তূর্ণ আর কিছু বলতে পারল না তূর্জয় আর মিহুর সামনে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। মাটিতে লুটে পড়ে।
— তূর্ণকে এখনই হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে৷ তার গা থেকে রক্ত ঝরে যাচ্ছে। অতিরিক্ত রক্ত ঝরলে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেত পারে।
— আপনি কি বুঝতে পারছেন না? তূর্ণ এখানে পালিয়ে এসেছে৷ তাকে এই অবস্থায় হসপিটালে নিয়ে যাওয়া যাবে না৷ বরং আপনি তাকে রুমে নিয়ে যান। আমি উনাকে ওষুধ লাগিয়ে দিচ্ছি।
তূর্জয় একা পারছে না৷ তা দেখে মিহু তূর্জয়কে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়৷ তূর্ণ নিজের গায়ে এতই আঘাত করেছে যে, দেখে কেউ আতংকে চিৎকার করে উঠবে৷
তূর্জয় তূর্ণের শার্ট খোলে দেয়। তূর্জয় আর মিহু মিলে তূর্ণের আঘাত কৃত স্থানে মলম লাগিয়ে দিচ্ছে৷ কে এমন কাজ করতে পারে? দু’জনকেই ভাবিয়ে তুলছে৷
— আপনি বরং আজ তূর্ণের সাথে এখানে থাকেন।(মিহু)
— অসম্ভব। আমি এখানে থাকতে পারবো না৷ আর তূর্ণ এখান ঘুমিয়ে আছে৷ আশা করি আজ রাতে তার আর কোন সমস্যা হবে না৷
— আপনি এখানে থাকলে সমস্যা কি?
— আমি এখানে থাকতে পারবো না৷ চল আমার ঘুম পাচ্ছে। এখানে আর এক মিনিটও আমি লেট করতে চাই না৷
— দেখেন তূর্ণ অসুস্থ। তার কাছে একজন থাকা দরকার৷ আর এতো রাতে নিশ্চয় কোন নার্স আসবে না৷ আপনিই বরং থেকে যান৷ কখন কি দরকার পড়ে?
— যদি তুমি এভাবে জোরে জোরে কথা বলতে থাকো তাহলে সে আর ঘুমিয়ে থাকতে পারবে না৷ সে এখনই ঘুম থেকে উঠে যাবে। প্লিজ কথা বন্ধ করে! দয়া করে এখান থেকে রুমে চল।
— আপনি এমন মানুষ কেন? তূর্ণ তো আপনার বন্ধু৷ তাকে এভাবে রেখে যাওয়া ঠিক হবে আমাদের।
— তার কিছু হবে না৷ আমি তাকে চিনি। সে রাতে ঘুমালে আর জেগে উঠে না৷ তার ঘুম অনেক গভীর৷ সেজন্য বলছি কথা না বলে আমরা বরং চলে যায়।
— কিন্তু!
তূর্জয় মিহুকে আর কিছু বলতে না দিয়ে টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে। নিজের কাছে নিয়ে এসেই মিহুকে কোলে তুলে নেয়৷ ঘটনা এতো জলদি ঘটে যে, “মিহু কিছুই বুঝতে পারেনি তার সাথে কি ঘটেছে !”
— কি করছেন টাকি? আমাকে এভাবে কোলে তুলে নিলেন কেন?
তূর্জয় কোন কথা না বলে হেঁটে যাচ্ছে।
— আরে খবিশ। আপনি আমাকে কোলে তুলে নিয়ে হাঁটছেন কেন? আমি কি হেঁটে যেতে পারবো না৷ প্লিজ আমাকে নামান৷
— কোন কথা না বলে চুপচাপ থাকো৷ কথা বললে তোমাকে ফেলে দিবো৷ অবশ্য ভালোই হবে তোমাকে কোলে তুলে নিয়ে ঘুরতে পারবো৷
মিহু ভয় পেয়ে তূর্জয়কে জড়িয়ে ধরে। তূর্জয় মিহুকে নিয়ে বিছানায় শুয়ে দেয়৷ মিহু কিছু বলতে নিবে তার আগেই মিহুর ঠোঁটে হাত দিয়ে বলে উঠে, ” কোন কথা নয়৷ একদম চুপ করে বসে থাকো৷ ”
তূর্জয় মিহুকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে শুয়ে পড়ে৷
ভোর পাঁচটায় তূর্ণের ঘুম ভেঙে যায়৷ তূর্ণ ঘুম থেকে উঠে একটা মুচকি হাসি দেয়। তার পর ল্যান্ড ফোন থেকে একটা বন্ধুকে ফোন করে কিছু জিনিস পাঠিয়ে দিতে বলে৷
তূর্ণ বলে উঠে, তূর্জয় তোর দিন শেষ৷ তূণ চৌধুরী এসে পড়েছে। আজ থেকে তোকে আর আস্ত রাখবো না৷ তিলে তিলে তোকে মারবো৷ তোর জীবনের সমস্ত সুখ কেঁড়ে নিবো৷ তুই জানিস না আমি কে?
চলবে…..