#ভালোবাসার বন্ধন
#পর্ব_০৯
#অধির_রায়
অচেনা নাম্বার থেকে ছোঁয়ার কাছে ফোন আসে। ফোনে কথা বলে ছোঁয়া গান ছেড়ে নাচতে শুরু করে ৷
ছোঁয়া রুমে এসে কিছুতেই নিজেকে ঠিক রাখতে পারছে না। শুধু তার চোখের সামনে তূর্জয় মিহুর ভালোবাসার চিত্র ফুটে উঠছে৷ কিছুতেই নিজেকে শান্ত রাখতে পারছে না৷ রুমের ভিতরে পায়েচারী করে যাচ্ছে৷ টেবিলের উপরে রাখা একুরিয়াম ভাঙার জন্য হাত বাড়াবে ঠিক তখনই নিজের ফোন বেজে উঠে।
বিরক্তি নিয়ে নিজের ফোনের ওয়ালপেপারের দিকে তাকায়৷ দেখতে পায় অচেনা নাম্বার৷ অচেনা নাম্বার দেখে ছোঁয়ার রাগ আর বেড়ে যায়৷ ফোন রিসিভ করতেই যা, না তাই বলে যাচ্ছে৷ ফোন রেখে দিবে ঠিক তখনই অপর পাশ থেকে কোমল গলায় আওয়াজ আসে৷
— ফোন রাখলে তোমারই লস৷ ফোন রাখা মানে মিহুর কাছে জীবন যুদ্ধে হেরে যাওয়া৷
মিহুর কথা শুনে ছোঁয়ার কন্ঠ চেঞ্জ হয়ে যায়৷ ছোঁয়া নিজেকে শান্ত করে বলে উঠে, “কে আপনি? আপনি কি বলতে চান?”
— আমার পরিচয় না জানলেও হবে। আমার আর তোমার উদ্দেশ্য এক। তুমি ভূর্জয়কে নিজের করে পেতে চাও। আর আমি মিহুকে নিজের করে পেতে চাই৷ মিহুকে আমি খুব ভালোবেসে ফেলেছি৷ আমার একার পক্ষে সম্ভব নয় মিহুকে নিজের করে নেওয়ার। সেজন্য তোমার সাহায্য লাগবে৷ এতে তুমিও তোমার ভালোবাসার মানুষ তূর্জয়কে পেয়ে যাবে৷
— তার মানে আপনি মিহুকে ভালোবাসেন৷ মিহু কি জানে, আপনি তাকে ভালোবাসেন?
— আমি মিহুকে ভালোবাসি৷ মিহু আমাকে ভালোবাসে কিনা সেটা আমার দেখার বিষয় নয়৷ মিহুকে আমি না পেলে কাউকে পেতে দিবো না৷ যদি মিহুকে না পায় তাহলে তোমার ভালোবাসা তূর্জয় শেষ৷
— প্লিজ তূর্জয়ের কোন ক্ষতি করবেন না! তূর্জয়ের সাথে আপনার কোন শত্রু নেই৷ আর কে আপনি? কারণ আপনার পরিচয় জানা থাকলে কাজটা খুব সহজ হয়৷
— আমি তূর্ণ। তূর্জয়ের বন্ধু। আমি জানি মিহু আর তূর্জয় এখনও কাছাকাছি আসেনি৷ তাই আমাদের যা করার তারাতাড়ি করতে হবে৷
— ওকে যা করার আমি তারাতাড়িই করবো৷ বলেন আমাকে কি করতে হবে?
— আজ সন্ধ্যায় ঝিলের ধারে আমার সাথে দেখা করো৷
— ওকে।
ছোঁয়া ফোন রেখে দিল ওয়ালী গানে নাচতে শুরু করে৷
।
।
।
মিহু নিজ হাতে আজ তূর্জয়ের সকল পছন্দের খাবার রান্না করে৷ সে আজ খুব ভালোবেসে তূর্জয়ের জন্য রান্না করেছে৷ মিহু খুব খুশি যে আজ সে তূর্জয়কে নিজ হাতে খাওয়াবে৷
তূর্জয় স্নান শেষ করে বেলকনিতে বসে আছে। না চাওয়া সত্ত্বেও অতীতের কথাগুলো বার বার নাড়া দিয়ে যাছে। চোখ বন্ধ করে সব কিছু ভুলার চেষ্টা করছে৷ কি করবে এখন, তার মন তো কাঁচের ঘরের মতো ভেঙে গেছে। তূর্জয় নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখতে চাই৷ সেজন্য অফিসের ফাইল নিয়ে বসে।
মিহু রান্না শেষ করে নিজ হাতে সবগুলো খাবার টেবিলে সাজিয়ে রাখে৷ কোথাও কোন ঘাটতি রাখেনি৷ মিহু তূর্জয়ের কাছে এসে দেখে তূর্জয় মন দিয়ে অফিসের কাজ দেখছে। এটা দেখে মিহু খুব খুশি হয়৷ কারণ এতে করে তূর্জয় ছোঁয়াকে ভুলে যাবে। মিহু তূর্জয়ের পাশে বসে।
— মিহুর দিকে ছোট করে তাকিয়ে, ” কিছু বলতে চাও নাকি?” কি বলবে? কোন সংকোচ না করে বলে ফেলো৷
— আমি কোন সংকোচ করি না, কথার বলার মাঝে। আমার মুখে যা আসে আমি তাই বলে দেয়।
— তাহলে বলো, কি করতে হবে আমায়? তোমাকে দেখে আমি এই কয়েক দিন ভালোই ভালোই চিনে নিয়েছি৷
— তাহলে ভালো। এখন আর কাজ করতে হবে না৷
— “কি বলছো? অনেকগুলো কাজ জমা পড়ে রয়েছে৷ এসব কাজ এখন না করলে কখন করবো?” প্রশ্নসূচকভাবে মিহুর দিকে তাকিয়ে।
— আগে নিজের খেয়াল রাখতে হবে৷ আপনি একটুও নিজের খেয়াল রাখেন না৷ আপনি কি জানেন না, এখন খাবারের সময়?
— আমার খেতে ইচ্ছা করছে না৷ তুমি খেয়ে নাও৷
— খেতে ইচ্ছে করছে না মানে কি?
— আমার খেতে ইচ্ছা করছে না৷ আমার পেট এখনও ভরপুর রয়েছে।
— হু আপনার পেট এখনো ভরপুর। আপনি যে পেটুক মশাই সেটা আমি হারে হারে জানি৷
— প্লিজ মিহু জোর করো না৷ সত্যি বলছি আমার খেতে একদম ইচ্ছা করছে না৷
— “এভাবে মন খারাপ করে না খেয়ে থাকলে কি আমার ভালো লাগে? ওকে আপনাকে খেতে হবে না৷ আমিও না খেয়েই থাকবো। আমি না খেয়ে থাকলে তাতে আপনার কি? আমি তো আপনার কেউ না৷” মাথা নিচু করে চোখ বন্ধ রেখে এক টানা বলে যায় মিহু৷
মিহু চোখ মেলে দেখে তূর্জয় তার দিকে বোকার মতোন তাকিয়ে আছে৷ মিহু কি বলেছে সে নিজেই জানে না৷ মিহু কিছু বুঝতে পারছে না, কেন এভাবে তাকিয়ে আছে? মিহু চলে যেতে নিলেই তূর্জয় মিহুকে টান দিয়ে নিজের হাঁটুর উপর বসায়।
এতে মিহু খুব ভয় পেয়ে যায়৷ মিহু তূর্জয়ের শার্ট খামচে ধরে রেখেছে৷ তূর্জয় মিহুর গলায় মুখ লুকিয়ে, “আজ বুঝি তুমি রান্না করেছো। কে বলেছে আমি খাবো না? সত্যি বলছি আমারও খুব ক্ষুধা পেয়েছে৷
মিহুর গলার কাছে কথা বলায় মিহু কোন কথা বলতে পারছে না৷ যতবার তূর্জয় কথা বলেছে ততবারই তূর্জয়ের ঠোঁট মিহুর গলায় লাগছে৷ এতে মিহু কেঁপে উঠে৷ এখনও মিহু চোখ বন্ধ করে রেখেছে৷
–মিহু চোখ মেলে মিহি কন্ঠে বলে উঠে, ” আপনি কিন্তু খুব পঁচা। আমার কেমন জানি লাগতেছে৷
তূর্জয় মিহুর কাঁপা কাঁপা ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে নিজেকে আর সামলিয়ে রাখতে পারছে না৷ মিহুর ঠোঁট যেন তূর্জয়কে কাছে টেনে নিয়ে যাচ্ছে৷ মিহুর ঠোঁটের দিকে এগিয়ে যাবে পরক্ষণেই ফিরে আসে৷
— মিহুকে দাঁড়া করিয়ে বলে উঠে, “সরি৷ আসলে আমি বুঝতে পারিনি৷ ” তুমি খাবার সার্ভ করো আমি আসছি৷
মিহু মুচকি হেঁসে চলে যায়৷ তূর্জয় চোখ বন্ধ করে ভাবতে থাকে। মিহু তার কাছে আসলে কেন নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না? কেন মিহুর প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে? কেন মিহুকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারে না? কেনই বা কাছে টেনে নিতে পারছে না? তূর্জয় ভাবতে পারছে না৷ আর কিছু না ভেবে নিচে চলে যায় খাবার খেতে৷
নিচে নেমে দেখে মিহু তার জন্য খুব সুন্দর করে খাবার তৈরি করে রেখেছে। সাথে মা বাবাও বসে আছেন খাওয়ার জন্য৷ তূর্জয় চেয়ার টেনে বসে পড়ে। ক্ষুধা বেশি লাগার কারণে খেয়াল নেই যে মিহু খেয়েছে কিনা৷ এক লোকমা খাবার মুখে দিয়ে দেখে মিহু দাঁড়িয়ে আছে৷
— মিহু তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেন? এখানে বসো।(তূর্জয়)
— তুমি কি তাকে খাবার খেতে বলেছো ? তুমি তো নিজের খাবার খেয়ে যাচ্ছো। চারিদিকে একটু তাকাতে হয়৷ (তিহান চৌধুরী)
— সরি বাবা! সত্যি বলছি আমার খেয়াল ছিল না৷ এর পর থেকে আর ভুল হবে৷ মিহু দাঁড়িয়ে আছো কেন? বসছো না কেন?
— না সমস্যা নেই। আপনি খান আমি পরে খেয়ে নিবো৷
তূর্জয় কোন কথা না শুনে মিহুর হাত টেনে নিজের পাশের চেয়ারে বসাই৷ মিহু তূর্জয়ের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে নিবে তার আগেই তূর্জয় বলে উঠে, ” কোন কথা না বলে চুপচাপ খেয়ে নাও।”
মিহু আর কোন কথা না বলে ভালো মেয়ের মতো খাবার খেয়ে নেয়৷ খাবার শেষে তূর্জয় মিহুর হাত ধরে রুমে নিয়ে যায়৷ মিহু অভিমান করে বসে বসে৷ কারণ খাবারের সময় তূর্জয় মিহুর পায়ে শুরশুরি দিয়েছে। অভিমান করে বিছানায় বসে আছে৷
তূর্জয় অফিসের কাজ করছে আর মিহুর দিকে তাকিয়ে রয়েছে। মিহুর বাচ্চা মেয়ের মতো গাল ফুলিয়ে বসে আছে৷ তূর্জয়কে সাথে হাজারটা গালি ফ্রী দিয়ে যাচ্ছে। তূর্জয় কাজ শেষ করে মিহুকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। মিহুর ঘাড়ে ছোট করে একটা কামড় বসিয়ে দেয়৷
— “আপনি সত্যিই একটা খবিশ৷” তূর্জয়ের দিকে ঘুরে বলে উঠে।
— হ্যাঁ আমি সেটা জানি৷ আমি তোমার চোখে সেই প্রথম দিন থেকেই খবিশ৷
— ছাড়েন আমাকে। আমি নিচে যাবো৷
— না। তোমাকে এখন ছাড়বো না৷ আমি এখন ঘুমাবো। তুমিও আমার সাথে ঘুমাবে৷
— আমি এই ভর দুপুর বেলা ঘুমাতে পারবো না৷ আপনি ঘুমান৷ আমি চলে যাচ্ছি৷
মিহুকে বুকের সাথে আরও মিশিয়ে নেয়৷ মিহুর গলায় মুখ লুকিয়ে নেশা জনিত কন্ঠে বলে উঠে, ” একটুও নড়াচড়া করার চেষ্টা করবে না৷ আমি এখন ঘুমাবো৷ সাথে তুমিও ঘুমাবে। ”
মিহুও তূর্জয়কে জড়িয়ে ধরে। মিহু জানে সে এখান থেকে আর এক পাও নড়তে পারবে না৷ তাই তূর্জয় যা বলছে তাই মেনে নেয়৷ মিহুর তো আর খারাপ লাগেনি৷ বরং মিহুর অনেক ভালো লাগছে।
_______________
ছোঁয়া সন্ধ্যার দিকে তূর্ণের দেওয়া ঠিকানায় চলে যায়৷ তূণ ছোঁয়াকে জঙ্গলের পাশের ঝিলের ধারে দেখা করতে বলে৷ এই রাস্তা দিয়ে সচরাচর তেমন কেউ আসে না৷ ছোঁয়া ভয়ে ভয়ে ব্রিজের উপর বসে আসে। পাঁচ ছয় মিনিট পর তূ্ণ গাড়ি করে ছোঁয়ার সামনে নামে৷ কিন্তু তূর্ণের মুখ মুখোশের আড়ালে৷ তূর্ণকে দেখা যাচ্ছে না। তবুও ছোঁয়া একটু দেখার চেষ্টা করে।
— কি করতে হবে আমায়? (ছোঁয়া)
— তূর্জয়কে পাওয়ার জন্য কি কি করতে পারবে?
— আমি সব করতে পারি। আমি যে করেই হোক তূর্জয়কে নিজের করে নিবো৷
— সেজন্য তোমাকে তোমার পরিবারের বিরুদ্ধে যেতে হবে৷ পারবে কি তোমার পরিবারের বিরুদ্ধে যেতে?
— হুম। আমি পারবো আমার পরিবারের বিরুদ্ধে যেতে৷ যে পরিবার আমার দিকে আঙ্গুল তুলে প্রশ্ন করে সেই পরিবারে আমি থাকতে চাই না৷
— কেন তোমার পরিবারের লোকজন তো অনেক ভালো? তোমায় অনেক ভালোবাসে।
— সে নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না৷ আজ আমার পরিবার ভুলবশত আমার জন্যই এমন হয়েছে। আমি ঠকেছি অনেক।
— ওকে যা করতে হবে আমি তোমাকে ফোনে জানিয়ে দিবো৷
তূর্ণ পিছনে ফিরে চলে যেতে নিলেই কারের সাথে ধাক্কা খায়। আর নিজের মুখে পড়ে থাকা মুখোশ নিচে পড়ে যায়। ছোঁয়ার তূর্ণের মুখ দেখে তূর্ণের শার্টের কলার ধরে।
— স্বার্থ তুই আমার জীবন নষ্ট করেছিস৷ তোর জন্য আজ আমার এই অবস্থা৷ ( তূর্ণই স্বার্থ,,, যার সাথে ছোঁয়া পালিয়ে যায় বিয়ের রাতে)
— ও তুই তাহলে আমার পরিচয় জেনে ফেলেছিস তাহলে তোকে আর এখানে রাখা যাবে না৷
— তুই এখন আর কিছুই করতে পারবি না৷ আমিই তোকে মেরে ফেলবো। (ছোঁয়া)
ছোঁয়া নিজের ব্যাগ থেকে ছুরি বের করার আগেই তূণ ছোঁয়াকে গুলি করে দেয়৷ পর পর তিনটা গুলি করে। ছোঁয়াকে ঝিলের জলে ফেলে দেয়। ছোঁয়ার চিৎকার কারোর কর্ণধার হলো না৷
।
।
রাত একটায় তূণ চৌধুরী বাড়িতে আসে রক্তাক্ত অবস্থায়। রক্তাক্ত অবস্থায় তূর্জয় আর মিহুর সামনে লুটিয়ে পড়ে ৷
চলবে…