ভালোবাসার বন্ধন পর্ব-০৮

0
1192

#ভালোবাসার বন্ধন
#পর্ব_০৮
#অধির_রায়

মিহু তূর্জয়ের কথা শুনে অবাক হয়ে যায়৷ মিহু ভাবতেও পারেনি তূর্জয় তাকে এতো আপন করে নিবে।

মাটি থেকে উঠে ছোঁয়া বলে উঠে, ” আমি কিছুতেই মিহুকে তোর হতে দিবো না৷ আমি বেঁচে থাকতে মিহু কোনদিন তোর হবে না৷ তুই আমার ছিলি আর আমারই থাকবি সারাজীবন৷ তোর জীবনে শুধু আমার জায়গা তূর্জয় চৌধুরী।

— ব্যাস তোমার কথা শেষ হলে এখান থেকে চলে যাও৷ তোমার বাজে মুখটি আমাদের দেখতে হবে জানা ছিল না৷ আমাদের এই দিনটাও দেখলে হলো তোমার জন্য। (তিহান চৌধুরী)

— তূর্জয়ের মা এগিয়ে এসে ছোঁয়ার গালে চর বসিয়ে, তোমার লজ্জা থাকা দরকার৷ তুমি তোমার নিজের বোনের সংসার নষ্ট করতে এসেছো৷ যে বোন তোমার অবর্তমানে তোমার মা বাবার সম্মান বাঁচিয়েছে।

— ছোঁয়া রেগের মাথায় তূর্জয়ের মাকে ধাক্কা মেরে, “এই বুড়ি! তুই আমাকে জ্ঞান দিতে এসেছিস৷ তোরা যদি কেউ আমার পথে কাটা হয়ে আছিস তাহলে আমি তোদের মেরে ফেলতে দুইবার ভাববো না৷

তূর্জয় আর মিহু দৌড়ে এসে তূর্জয়ের মাকে মাটি থেকে তুলে৷ তূর্জয় তার মাকে তিহান চৌধুরীর কাছে দিয়ে এসে মিহুর হাত ধরে৷ এতে ছোঁয়া আরও রেগে যায়৷ ছোঁয়া রেগে মিহুর দিকে এগিয়ে আসে। তূর্জয় সামনে দাঁড়ায় মিহুকে রক্ষা করার জন্য।

— “তুই সামনে থেকে সরে দাঁড়া তূর্জয়! আমি এই মিহুকে মেরেই ফেলবো।” ছোঁয়া ক্ষেপে বলে উঠে।

— তূর্জয় নম্রতা সহকারে বলে উঠে, “দেখো ছোঁয়া। তুমি এখন থেকে চলে যাও৷ তোমার মাথা ঠিক নেই৷ তোমার মাথায় কোন সমস্যা আছে৷ আমি ভালোই ভালোই বলছি, তুমি এখান থেকে চলে যাও৷”

— ছোঁয়া তূর্জয়ের শার্টের কলার ধরে, ” তুই আগে বল, তুই মিহুকে ডিভোর্স দিয়ে আমাকে বিয়ে করবি৷ যদি তুই মিহুকে ডিভোর্স না দেস তাহলে আমি তোর মিহু পাখিকে মেরে ফেলবো৷ সাথে তোর পরিবারের কাউকে শান্তিতে বাঁচতে দিবো না৷

তূর্জয় এবার আর শান্ত থাকতে পারলো না৷ তূর্জয় নিজের মাঝে জমে থাকা সকল রাগ অভিমানকে বের করে ফেলে। কোন কিছু না ভেবে ছোঁয়ার হাত ধরে বাড়ির পাশের ড্রেনের মাঝে ফেলে দেয়৷ ছোঁয়ার উপর থুথু ফেলে। ঘৃণার সাথে বলে উঠে, “তোকে ভালোভেবে কথাগুলো বলেছিলাম। কিন্তু তুই ভালোর মর্যাদা রাখতে পারলি না৷ তোর মতো লোক আমি কখনো দেখিনি৷ আমার আজ লজ্জা লাগছে তোর মতো লোককে আমি ভালোবাসেছি৷” মিহুকে উদ্দেশ্য করে, “আমি এখন মিহুকে ভালোবাসি৷”

কথাগুলো বলে ভূর্জয় একটু ধম নিয়ে মিহুকে কাছে টেনে নিয়ে আসে। মিহুর হাত বুকে জড়িয়ে বলে উঠে, “আমি যদি প্রথম থেকে মিহুকে ভালোবাসতাম তাহলে আমাক এই দিন দেখতে হতো না৷ তোর মতো বাজে মেয়ের হাত থেকে ভগবান আমাকে বাঁচিয়েছেন।

— প্লিজ! তূর্জয় আমাকে তোল৷ আমি এখান থেকে উঠতে পারছি না৷ প্লিজ তূর্জয়!

— তোকে টার্চ করে আমি আমার হাতকে নোংরা করতে চাই না৷ তোর মতো লোকের জন্য এই জায়গাটাই পারফেক্ট।

তূর্জয় ছোঁয়ার কোন কথা না শুনে মিহুকে কোলে তুলে নেয়৷ মিহু তূর্জয়ের গলা জড়িয়ে ধরে। তূর্জয় মিহুর দিকে একবার তাকিয়ে মিহুকে নিয়ে বাড়ির ভিতরে চলে আসে৷ তূর্জয়ের বাবা তিহান চৌধুরী মিহুর মা বাবাকে ফোন করে দেয়৷ মিহুর মা বাবা এসে ছোঁয়াকে ময়লার ড্রেন থেকে তুলে নিয়ে যায়৷


তূর্জয় মিহুকে রুমে নিয়ে এসে মিহুকে নামিয়ে দেয়৷ মিহুর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে। মাথা নিচু করে হাত জোর করে মিহুর কাছে ক্ষমা চায়। মিহু তূর্জয়ের এমন কাজে খুব অবাক হয়। মিহু ভাবতে পারছে না কেন তূর্জয় এমন করছে? কেনই বা তার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে আছে? বুঝতে পারছে না ভূর্জয়ের উদ্দেশ্য।

— আপনি আমার কাছে কেন ক্ষমা চাচ্ছেন? আপনি তো কোন দোষ করেননি!

— আমি তোমার সাথে অনেক অন্যায় করেছি৷ তোমার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি৷ সত্যি বলছি আমি তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করতে চাইনি৷ তখন আমার মন মানসিকতা ঠিক ছিল না৷ যখন কোন ভালোবাসার মানুষ কাউকে ছেড়ে চলে যায়৷ তখন তার মনের অবস্থা কেমন হতে পারে তা তুমি জানবে না কোনদিন। তুমি কোনদিন তো কাউকে ভালোবাসো নি৷

— আমি আপনার মনের অবস্থা বুঝতে পেরেছি৷ প্লিজ এভাবে আমার কাছে ক্ষমা চাইবেন না৷ আমি আপনাকে ক্ষমা করতে পারি যদি আপনি উঠে বসেন৷

তূর্জয় বসা থেকে দাঁড়িয়ে চোখের জল মুছে বিছানায় ধপাস করে বসে পড়ে৷ মিহু তূর্জয়ের কাঁধে হাত রাখতেই মিহুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে শুরু করে দেয়৷ ছোট বাচ্চাদের মতো তূর্জয় কেঁদে যাচ্ছে৷ মিহু তূর্জয়ের কান্না থামাচ্ছ না৷ মিহু জানে কান্না করলে কষ্টটা হালকা হয়ে যায়৷ দশ মিনিটের মতো মিহুকে জড়িয়ে ধরে তূর্জয় কান্না করে।

— এভাবে কান্না করলে সব সমস্যার সমাধান হবে না৷ আপনি সময়ের সাথে কাছে সব কিছু ছেড়ে দেন৷ দেখবেন সব ঠিক হয়ে যাবে। কোন চিন্তা করবেন না৷

— “তুমি আমার একটা কথা রাখবে!” একদম বাচ্চাদের মতো করে বলে উঠে।

— কি কথা? আমি আপনার কথা রাখার চেষ্টা করবো৷

— আগে কথা দাও৷

— ওঁকে কথা দিলাম। যতই কষ্ট হোক আমি আপনার কথা প্রাণ দিয়ে রাখার চেষ্টা করবো৷

—- কোনদিন আমাকে ছেড়ে যাবে না৷ আমাকে ছেড়ে চলে গেলে আমি আর বাঁচতে পারবো না ৷ আমি আর কাউকে হারাতে পারবো না৷

— মিহু তূর্জয়ের হাত ধরে বলে উঠে, ” আমি আপনাকে কোনদিন ছেড়ে চলে যাবো না৷ আমি সব সময় আপনার পাশে থাকবো৷ আপনিই আমার জীবনে প্রথম ভালোবাসা। আপনাকে ছেড়ে আমি কোনদিন যাবো না৷

— তাহলে আমাকে কিছু দিন সময় দাও৷ আমি তোমাকে এখনই আপন করে নিতে পারবো না৷ প্লিজ তোমার কাছে আমি হাত জোর করে ক্ষমা চাচ্ছি এর জন্য।

— মিহু বড় একটা নিঃশ্বাস নিয়ে বলে উঠে, ” আপনি যেদিন নিজ থেকে আমাকে কাছে টেনে নিবেন, সেদিনই আমি আপনার কাছে আসবো৷” কিন্তু!

— কিন্তু কি?

— কিন্তু আমাকে আপনার বেস্ট ফ্রেন্ড ভাবতে হবে। আমাকে চিনতে হবে আপনাকে। আমিও আপনাকে কাছ থেকে চিনে নিব৷

–ওঁকে,,

— তাহলে আমার কথামতো এখন স্নান করে আসেন৷ এভাবে থাকলে আপনাকে ভালো লাগে না। কেমন জানি মরা মরা লাগছে আপনাকে? চুলগুলো উশকো খুশকো হয়ে রয়েছে।

তূর্জয় মিহুর কথামতো ওয়াসরুমে চলে যায়৷ মিহুও মুচকি হেঁসে নিচে চলে আসে৷ মিহু জানে এখন আর ভূর্জয় ডিপ্রেশনে পড়বে না৷ মিহু নিচে এসে তূর্জয়ের জন্য নিজ হাতে খাবার বানায়৷



ছোঁয়া বাড়িতে এসে বাড়ির সব কিছু ভাঙতে থাকে৷ রেগে বাড়ির সকলের সাথে খারাপ ব্যবহার করছে৷ বাড়িতে যেন ভুমিকম্প চলছে৷ যাকে সামনে পাচ্ছে তাকেই মারছে। ছোঁয়ার এমন অবস্থার কথা শুনে ছোঁয়ার বাবা অফিস থেকে চলে আসে৷ এসে দেখে তার মেয়ে এমন ব্যবহার করতেছে৷ কিছু না ভেবে ছোঁয়ার গালে ঠাস করে দুইটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়৷

— ক্ষেপে বলে উঠে, ” নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখো৷ তোমাকে আমি এই শিক্ষা দেয় নি৷ সব সময় তোমার চাওয়াকে পূর্ণ করতে গিয়ে আজ আমাদের এমন অবস্থা।

ছোঁয়া তার বাবাকে ভীষণ ভয় পায়৷ বাবাকে দেখে ছোঁয়া রুমে চলে যায়৷ রুমে এসে সারারুম পায়েচারী করছে৷ ভাবছে সে কিছুতেই মিহু আর তূর্জয়কে এক হতে দিবে না৷ তাদের যে করেই হোক না কেন তাদের আলাদা করবে?

রেগে মিহুর সমস্ত জামা কাপড়ে আগুন লাগিয়ে দেয় ছোঁয়া। মিহুর কোন অংশ রাখে না মহেশ্বরী পরিবারে৷ ছোঁয়া নিজের মাকেও পরোয়া করে না৷

অচেনা নাম্বার থেকে ছোঁয়ার কাছে ফোন আসে। ফোনে কথা বলে ছোঁয়া গান ছেড়ে নাচতে শুরু করে দেয়৷

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে