“ভালোবাসার প্রান্ত”(পর্ব-৮)

0
1602

“ভালোবাসার প্রান্ত”(পর্ব-৮)

তানি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে নিলো। আমার বুকের ভেতরে হঠাৎ ধুকপুক শুরু হয়ে গিয়েছে। তানি কী এমন জানে যেটা আমি জানি না? অবশ্য বাকী সবার মতো আমিও মনে মনে খুব উৎসুক হয়ে কৌতূহলী চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছি।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/



সে বলতে শুরু করলো-
__সেই জনৈক ডাক্তার একদিন তার ফোনে আমাকে দেখালো এই মেয়েটা খুব ভালো লেখে। সেই লেখা সমেত লেখিকাকে তার খুব পছন্দ। তার লেখা পড়ে নাকি জনৈক ডাক্তারের মন ভালো হয়ে যায়। আমি খুব অবাক হয়েছিলাম তার কথা শুনে। যে ছেলে মেয়েদের ধারে কাছেও যায় না। ছোটবেলা থেকেই বলে আসছে সে জীবনে বিয়েই করবে না। অথচ সেই ছেলে একটা মেয়েকে না দেখেই পছন্দ করে ফেললো শুধু তার লেখা পড়ে। আমি যেন বিশ্বাস করতেই পারছিলাম না। আমি তাকে বললাম, “প্রেম ভালোবাসা মানেই কষ্ট। মেয়েটা তোকে রিফিউজ করতে পারে তাই মানুষিক ভাবে তোকে শক্ত থাকতে হবে। এসব সহ্য করার মানুষিকতা থাকতে হবে। ভেঙে পড়া যাবে না।”
সে বলল, “আমি তাকে ভালোবেসে কষ্ট নিতে রাজী।”
আমি যেন অবাকের উপর অবাক হয়েই চলেছি। এ আমি কাকে দেখছি! নিজের চোখ আর কানকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছি না। বললাম, “সে রাজী হলেই যে কষ্ট আর জীবনে আসবে না তা কিন্তু নয়। ভালোবাসা মানেই কষ্ট। ভালোবাসায় কিন্তু কষ্ট থাকবেই।”
সে বলল, “নেবো সেই কষ্ট।”
বললাম, “তাহলে প্রোপজ করে ফেল।”
সে বলল, “আমার ভয় লাগে। মেয়েটা সাংঘাতিক রকমের, তার মুখে কিছুই আটকায় না। প্রোপজ করলে নির্ঘাত আমাকে অপমান করবে। অনেক ছেলেকেই সে অপমান করে দেখেছি। তারচেয়ে বরং আমি একাই দূর থেকে ভালোবাসে যাব। এটাই নিরাপদ।”
রাগ করে বললাম, “তোর দ্বারা আসলেই কিচ্ছু হবে না গাধা।”

এইটুকু বলেই তানি দম নিলো। আমিসহ সবাই তার দিকে উৎসুক চোখে তাকিয়ে আছেন। আমার তো বিস্ময়ের সীমা নেই। পাগলটা এমন করে আমাকে আড়াল থেকে ভালোবেসেছে? আর আমাকে এতটা ভয়ও পেয়েছে? আর এখন উল্টা আমিই তাকে ভয় পাই। ছেলেরা আসলেই এমন, বিয়ের আগে একরূপ আর বিয়ের পরে আরেক রূপ, হুহ। একা একাই মুখ ভেংচি কাটলাম।

নানান উৎকন্ঠা নিয়ে তানিকে বললেন-
__থামলে কেন? তারপর? বলো তারপর কী হলো?

তানি কাশি দিয়ে গলা ঠিক করে নিয়ে বলল-
__তারপর বেশ কিছুদিন পরে জিজ্ঞেস করলাম, “কী রে তোর লেখিকার খবর কী?”
সে বিরস মুখে বলল, “সে লিখছে আর আমি পড়ছি।”
বললাম, “তাকে মনের কথা জানাসনি এখনও?”
সে বিবর্ণ মুখে বলল, “না।”
আমি হতাশ হলাম। এই অপদার্থকে দিয়ে আর যাই হোক প্রেম হবে না এটা আমি নিশ্চিত। তারপর কয়েক মাস এমন করেই কেটে গেল। যখনি লেখিকার কথা জিজ্ঞেস করি, তার উত্তর একই। আর আমিও একই ভাবে নিয়মিত হতাশ হই।

তানি আবার থামলো। নানান রেগে উঠে ধমক দিয়ে বললেন-
__ঘটনা বলছিস নাকি দৌড়াচ্ছিস যে একটু পর পর থেমে রেস্ট নিচ্ছিস?

তানি বলল-
__আরেহ থেমে থেমেই তো বলতে হয়। তবেই না আকর্ষণ থাকবে। একদমে সব বলে দিলে তো সব গেল।

নানান বললেন-
__এমনিতেই আমরা আকর্ষিত, তোকে আর আকর্ষণ বাড়াতে হবে না। এখন তুই বাকীটুকু বল।

তানি আবার বলা শুরু করলো-
__তারপর যেদিন মেয়েটার সাথে তার প্রথম ম্যাসেজিং এ কথা হলো সেদিন আমি তার পাশে বসে দেখছিলাম। মেয়েটা সীমান্তকে আপু ডেকে স্যরি টরি বলছিল। আমার বেজায় রাগী ভাইটা সেদিন কেমন করে যে আপু ডাকটা হজম করেছিল, তা ভেবে আমার হাসি পেলো। সীমান্ত আমাকে বলল, “দেখছিস সে কেমন? আমাকে আপু ডেকে অপমান করছে। তাকে প্রোপজ করলে আমি শিওর সে চাচী জেঠি খালা সব ডেকে ফেলবে। আমার মান সম্মান সব শেষ করে দেবে।”
আমি হাসতে হাসতে বললাম, “তাও তো তার প্রেমেই পড়ে আছিস। চাচী জেঠি খালা ডাক গুলো না হয় ভালোবেসেই হজম করে নিবি।”
সে গম্ভীর মুখে বলল, “ইম্পসিবল।”
বললাম, “তাহলে বাদ দে। ঐ ফাজিল মেয়েকে ভালোবাসতে হবে না।”
সে অসহায় চোখে তাকিয়ে বলল, “সেটাও ইম্পসিবল।”
আমি আর কিছু না বলে সীমান্তর ফোনে মেয়েটার মেসেজ দেখতে শুরু করলাম। মেয়ে যা চটপটে তাতে আমার আলাভোলা ভাইটাকে পাত্তা দেবে না ভেবে আমার মন খারাপ হয়ে গেল। সীমান্তর প্রতিটা প্রশ্নের সে ঝটপট উত্তর দিচ্ছে। যেন সব আগেই মুখস্ত করা ছিল। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, প্রথম দিন কথা হচ্ছে তবুও মেয়েটার ভেতরে কোনো ভয় ভীতি নেই। বলতেই হবে মেয়েটা নিঃসন্দেহে সাহসী। এদিকে আমার ভাইটা নার্ভাস হয়ে ঘেমেঘুমে অস্থির। মেয়েটা সীমান্তর আকার ইঙ্গিতের ভাষা বুঝে ফেলে বলল, “আপনি আমাকে ভালোবাসেন এটা আমি জানি।”
সীমান্ত পুরাই নার্ভাস হয়ে আমার দিকে তাকালো। তারপর লিখলো, “আমি কী আপনাকে বলেছি যে, আমি আপনাকে ভালোবাসি?”
সীমান্তর কথায় মেয়েটা তাকে কথার কৌশলে আটকে ফেলল। সে যেমন ভালোবাসা স্বীকার করলো না তেমনি মেয়েটাও বলল, বিয়ে নিয়ে তার কোনো আগ্রহ নেই। তার এই কথায় আমি হতাশ হলাম আর সীমান্ত বিবর্ণ হয়ে গেল। সীমান্তকে বললাম, কষ্ট পাবার ভয়ে তাকে এতদিন ভালোবাসার কথা বলতে সাহস পাসনি। সেই কষ্টই তো পেলিই অথচ তাকে ভালোবাসি বলার আগেই। আমার কথা শুনে সীমান্ত নির্বাক তাকিয়ে রইল। আমি কোনো সান্ত্বনার ভাষা খুঁজে পেলাম না।

এইটুকু বলেই তানি থামলো। নানান এবার আমার দিকে তাকিয়ে বললেন-
__তুমি এটা কেমন করে পারলে ছোট রাণী? আমার আদরের নাতিটার মন ভাঙতে তোমার বুক কাঁপেনি? এত পাষাণ তুমি?

রুমের সবাই মন খারাপ করে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। যেন আমি খুন টুন করে এসে দাঁড়িয়ে আছি, আমার সারা গায়ে রক্তে মাখামাখি। আমিও আসামির মতো তাকিয়ে রইলাম। এরপর কী বলবো ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না।
নানান দুঃখভরা চোখে তাকিয়ে বললেন-
__না জানি কত কষ্ট পেয়েছি আমার নাতিটা! কেমন অমন করেছিলে ছোট রাণী?

আমি নিরুত্তর রইলাম। মনে মনে বললাম, প্রথম পরিচয়েই না জেনে না শুনেই বলবো যে, আমি আপনাকে ভালোবাসি? তার ভেতর ভেতর যে মন ভাঙছে তা আমি জানবো কী করে? কিন্তু এসব কিছুই বললাম না।
নানান তানির দিকে তাকিয়ে বললেন-
__রিফিউজ ফিউজ হলো কী করে?

তানি আমার দিকে একবার তাকিয়ে আবার কেশে নিয়ে বলল-
__সপ্তাহখানেক পরে একদিন সীমান্তকে জিজ্ঞেস করলাম, কী খবর?
সে মুচকি হেসে বলল, “কথা হচ্ছে নিয়মিত।”
অবাক হয়ে বললাম, “পটাতে পেরেছিস?”
সে বলল, “কী জনি!”
বললাম, “শোন তাকে অনেক সময় দিবি, আর জান সোনা ময়না এসব বলবি। মেয়েরা এসব ডাক খুব পছন্দ করে।”
সে অবাক হয়ে বলল, “এসব বললেই সে পটে যাবে।”
বললাম,” হ্যাঁ।”
সে অবাক হয়ে বলল, “বলিস কী?”
বললাম, “তুই যা বিজি থাকিস, তাতে সময় দিতে না পারলে কিন্তু প্রেম টিকবে না বলে দিলাম।”
তার কিছুদিন পর সে মেয়েটার ছবি দেখালো। চুলগুলো এমন এলোমেলো হয়ে সামনে ছিল যে, দেখে পাগলি পাগলি লাগছিল। মনে মনে বললাম, শেষকালে আমার ভাই একটা পাগলির প্রেমে পড়লো? তারপর একটা হলুদ রঙের শাড়ি পরা তার একটা ছবি দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। বললাম, “তোর কপাল ভালো, মেয়েটা সুন্দরী।”
সীমান্ত লাজুক হাসি দিলো। এরপর আর জানি না আমি। বাকী সব ওরা দু’জন চুরি করে করেছে। আমাকে আর বলেনি। পটানোর টিপস আমিই দিলাম অথচ প্রেমে হাবুডুবু খাওয়ার পরের ঘটনা সীমান্ত আমাকেই বলল না।
কথাগুলো বলে তানি মুখভার করে রইল।
নানান বললেন-
__ছোট রাণী এবার তুমি বলো কেমন করে হাবুডুবু খেলে আর সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে আমার বান্দর নাতি কেমন করে প্রেম করলো?

আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললাম-
__সব ভুলে গেছি নানান। আমার কিচ্ছু মনে নেই।

নানান হতবাক চোখে তাকিয়ে বললেন-
__আমার নাতিকে তোমার পেছনে দৌড় করিয়ে এখন বলছো সব ভুলে গেছো?

আমি মাথা নিচু করে বললাম-
__হু।

মুড়ি মাখা খেয়ে হাসি ঠাট্টা গল্প আড্ডায় রাত ফুরিয়ে গেল। আমি জানি সবাই কেন আজ এই ঘরে জেগে থেকে কাটালো। কারণ সবাই জানে সীমান্তকে ছাড়া আমার রাতটা নির্ঘুম কাটবে। আমি মন খারাপ করে থাকবো এবং কাঁন্নাও করবো। তারা আমার কষ্টের ভাগ নিয়ে আমার মন ভালো রাখার জন্য এমন করে আমাকে সঙ্গ দিলেন। অথচ সকালবেলা সবাইকেই নিজেদের কাজে বের হতে হবে। নির্ঘুম শরীরটা সারাদিন খারাপ করবে তবুও তারা আমাকে ভালোবেসে সব সয়ে নেবেন। কতটা ভাগ্য নিয়ে জন্মালে একসাথে এতগুলো ভালো মানুষদের প্রিয়জন হিসেবে পাশে পাওয়া যায়!


ভেবে ছিলাম আজ লাটসাহেব ফিরে আসবে। আমাকে ছাড়া অতি কষ্টে একটা রাত পার করলেও দুইটা রাত পার করতে পারবে না। কিন্তু খবর পেলাম সে আমার কাজিন বোনদের ডেকে এনে নাটোর রাজবাড়ীতে গিয়েছে পিকনিক করতে। তার শালিরা দুলাভাইয়ের সাথে ছবি উঠিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করছে আমাকে ট্যাগ করে। আমি ওদের ট্যাগ হাইড করে রাখলাম। কমেন্ট করলাম-
“অন্যের বরের সাথে ছবি উঠা পাপ শুধু নয়, মহাপাপ। বিনা হিসাবে জাহান্নামে যাবি তোরা।
তোদের পিকনিকের সব খাবার পুড়ে কয়লা হয়ে যাবে দেখিস। তোদের ভালো হবে না।”

রাগে আমার সারা শরীর জ্বলছে। সব যে আমাকে রাগানোর জন্য করছে তা আমি জানি। তবুও আমি রাগ কন্ট্রোল করতে পারছি না। রাগে আমার কাঁন্নাও পাচ্ছে। মনে মনে বললাম, বাড়িতে আসতে হবে না। তুমি নাটোরেই থাকো। ঘরজামাই থাকো।

নানান রুমে এসে বললেন-
__ঘুরতে তো গেলে না ছোট রাণী। স্বামী শ্বশুরবাড়ি গিয়েছে সেই শোক পালন করছো। তোমার স্বামী তো দিব্যি আছে। বোকা মেয়ে তুমি।

__দেখেন আপনার নাতি কত আনন্দে আছে।

বলেই আমি কেঁদে ফেললাম। নানান বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে ফেসবুকে সীমান্তর ছবি দেখলেন। তারপর বললেন-
__কালকেই আমরা সবাই পিকনিকে যাব। এক হাজার ছবি তুলে ফেসবুক ভরে ফেলবো। ঐ শালাকে জ্বালিয়ে শেষ করবো। তুমি চোখ মুছো ছোট রাণী।

আমি যতই চোখ মুচ্ছি ততই জল গড়াচ্ছে। মনে হচ্ছে কী না জানি ভয়ানক কিছু ঘটেছে। সে এমন মানুষ কেন এটাই যেন আমি কিছুতেই মানতেই পারছি না। নানান করুণ চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। মনে মনে নিজেকে বললাম, না হয় শালিদের সাথে কয়টা ছবিই উঠিয়েছে, তাই বলে এমন করে কাঁদতে হবে? আমার তো নিজেকে রীতিমতো বাচ্চা মনে হচ্ছে। ধুর কাঁন্না থামাতে পারছি না কেন?

বিঃদ্রঃ গল্পের কাহিনী এবং চরিত্র সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবতার সাথে গল্প কখনোই মিলবে না। জীবন কখনও গল্পের মতো সাজানো গোছানো হয় না। গল্পটা শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য লেখা হয়েছে তাই বিতর্কিত মন্তব্য প্রত্যাশিত নয়।

পরের পর্ব আসছে…..
Written by- Sazia Afrin Sapna

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে