“ভালোবাসার প্রান্ত”(পর্ব-৭)
বেলকোণ বারান্দায় দাঁড়িয়ে ভয়ানক একটা রাত দেখছি আমি। একলা এই রাতটা আমার কাটবে কী করে? তার কী একটিবারও মনে হয়নি যে, একা একা আমি কেমন করে থাকবো? আকাশ পাতাল ভেঙে আমার কাঁন্না আসছে। মুখে কোনো শব্দ করতে না পারলেও চোখ বাঁধ মানছে না কিছুতেই। মনে হচ্ছে পৃথিবীর সব কাঁন্না এসে আজ আমার চোখে বসেছে। আমার রুমে তানির গলার আওয়াজ পেয়ে আমি তাড়াতাড়ি চোখ মুছে নিজেকে সামলে নিলাম। তারপর বারান্দা থেকে রুমে গেলাম। সে বিছানায় বসে আছে। আমি তার পাশে বসতেই সে বলল-
__বান্দর এটা কী করলো? তোমায় রেখে চলে যেতে পারলো?
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে নিজেকে সামলে নিলাম। এমন ভান করলাম যেন কিছুই হয়নি। মুচকি হেসে বললাম-
__ফেলে যাবে কেন? আমাকে সাথে নিয়ে যাবার জন্য কত অনুরোধ করলো জানো? আমার এখন নাটোরে যাবার মুড নেই তাই রাজী হইনি। সেই রাগেই তো সে একাই গেল।
তানি চোখ কপালে তুলে বলল-
__এই প্রথম শুনলাম বাপের বাড়িতে যেতে নাকি মেয়েদের মুড থাকে না। দেখো তো আমি কেমন রোজ আসি। নইলে তো ভালোই লাগে না।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/
আমি যে কী বলে সব ঢাকবো তা আমি নিজেই বুঝতে পারছি না। সব কষ্ট কী ঢেকে রাখা যায়? তবুও চেষ্টা তো করাই যায়। বললাম-
__আমার বাপের বাড়ি ২২৭ কিলোমিটার দূরে। জার্নি করে গিয়ে দু’দিন লাগে শরীর ঠিক হতে। শরীর ঠিকমতো ঠিক না হতেই আবার ফিরে আসতে হয়। এদিকে আমার শরীরটাও তো ঠিক নেই।
__শরীরে কী হয়েছে? নতুন খবর টবর আছে নাকি?
আমি লাজুক মুখ করে বললাম-
__কী যে বলো না!
__অনেক রাত হয়েছে, আর কত বরের বিরহে বসে জেগে থাকবে? এসো ঘুমাবো। আজ তোমার জন্য বাড়ি ফিরে না গিয়ে থেকে গেলাম।
আমি বিষণ্ন মন নিয়ে বললাম-
__আমার ঘুম আসছে না, তুমি ঘুমাও।
কেউ না জানলেও আমি তো জানি যে আমার রাগী ডাকাত বরটা জেগে আছে। আর জেগে থেকে আমার ছবি দেখছে। তার এই গোপন ব্যাপারটা আমি ছাড়া তো আর কেউ জানে না।
তানি আমার গায়ে ঠ্যালা দিয়ে বলল-
__কী ব্যাপার সোনাভাবী, বর ছাড়া ঘুম আসছে না? নাকি বরের আদর ছাড়া ঘুম আসছে না?
আমি হুট করেই না বুঝে বলে ফেললাম-
__দুটোই।
তানি হতবাক হয়ে বলল-
__হাবলুটা জাদু টাদু করেছে নাকি তোমায়? সে এসব কবে শিখলো?
__বিয়ের আগে থেকেই জাদু করে রেখেছিল আমাকে। নইলে এমন পাষাণকে আমি বিয়ে করি?
__পাষাণ?
__হু
তানি দুষ্টুমির চোখে তাকিয়ে বলল-
__ওহ মাই গড! এতো গভীর অভিমান দেখছি!
আমার খুব রাগ হচ্ছে সীমান্তর উপর। রাগ করেই বললাম-
__আই হেট হিম!
সে আমার কথায় পাত্তা না দিয়ে বলল-
__হয়েছে আর বলতে হবে না। এখন বলতো কী নিয়ে এই অভিমান চলছে?
আমি যেন আর লুকিয়ে রাখতেই পারছি না। শেষমেশ বলেই ফেললাম-
__সে নাটোরে যাবে শুনে আমিও যাব ভেবে কাপড় গুছিয়ে নিলাম। তারপর সাজতে বসেছি। সে এসব সব দেখেছে। অথচ সে আমাকে রেখেই চলে গিয়েছে। কেমন পাজি তোমার ভাই দেখো।
কথাগুলো বলে আমি আর কাঁন্না আটকে রাখতে পারলাম না।
তানি চোখ কপালে তুলে বলল-
__তুমি তো একটু আগে বললে সে তোমাকে সাথে নিয়ে যাবার জন্য অনুরোধ করেছিল। তোমার মুড ছিল না তাই যাওনি। তাই সে রাগ করে একাই চলে গেছে।
আমি মাথা নিচু করে কাঁদো কাঁদো স্বরে বললাম-
__ওসব তো বানিয়ে বলেছি।
তানি হাহা করে হেসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। হঠাৎ রুমে নানুন ঢুকে বললেন-
__আমার ঘুম পেয়েছে আমাকে জায়গা দে তোরা।
তানি নানুনকে বলল-
__বড় রাণীসাহেবা আপনি কী এখানে ঘুমাবেন?
__হ্যাঁ। দুটো কম বয়সী মেয়েকে একা একটা রুমে রাখা যায় নাকি? আমি তোদের পাহারা দেবো।
__আপনি এই রুমে ঘুমালে তো কিছুক্ষণ পর আপনার বরও এখানেই ঘুমাতে চলে আসবেন।
__এই বুড়ো বয়সে সে বউয়ের পিছু নেবে না।
__প্রেম করার জন্য পিছু না নিলেও ঝগড়া করার জন্য ঠিকই পিছু নেবে।
তানির কথা শেষ হবার আগেই মামনি তূর্য্যকে কোলে নিয়ে রুমে ঢুকে বললেন-
__সবাই সর তূর্য্যকে শোয়াবো।
আমি আর তানি হা করে তাকিয়ে রইলাম।
মামনি তূর্য্যকে কোলে ঢুকিয়ে নিয়ে শুলেন। তার পাশে নানুন শুয়ে পড়লেন। বিছানাতে যেটুকু যায়গা আছে তাতে আমি আর তানি বসে আছি।
তানি বলল-
__আমরা দুজন তাহলে কোথায় ঘুমাবো?
নানুন বললেন-
__ফ্লোরে ফোম পেতে ঘুমা।
আমি আর তানি একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
ফ্লোরে ফোম পেতে সুন্দর বিছানা করলাম। হঠাৎ আমান ভাই এসে ফ্লোরের বিছানায় শুয়ে বললেন-
__বাহ দারুণ আরাম। ঘুম চলে আসছে।
তানি চোখ পাঁকিয়ে বলল-
__তুমি এই রুমে কেন? যাও আমাদের রুমে গিয়ে ঘুমাও।
__আমি একা ঘুমাবো নাকি? আমি এখানেই ঘুমাবো।
আমি ফিসফিস করে তানিকে বললাম-
__তানি তুমি বললে নানুনের পিছু নিয়ে নানান আসবেন। এখন দেখি তোমার বর তোমার পিছু নিয়ে চলে এসেছে।
আমান ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বলল-
__একটা কোলবালিশ দিও তো নানানের ছোট রাণী।
আমি অন্যরুম থেকে কোলবালিশ আনতে গেলাম। এসে দেখি আমান ভাইয়ের পাশে বাবা শুয়ে আছেন। কিছু বলার আগেই নানান রুমে ঢুকে আমার হাত থেকে কোলবালিশ নিয়ে আমান ভাইকে বললেন-
__নাতনি জামাই সরে শোও। আমি মাঝখানে শোবো।
আমান ভাই সরে শুয়ে বললেন-
__কোলবালিশটা আমাকে দেন নানান!
__উহু, এটা আমার।
আমান ভাই আর নানান কোলবালিশ ধরে টানাটানি করছেন। বাবা উঠে বসে বললেন-
__এটা বালিশ খেলা নাকি?
আমান ভাই আর নানান বাবার দিকে হতবাক হয়ে তাকালেন। তানি আর আমি তো সেই কখন থেকেই হতবাক হয়ে আছি। আমি আর তানি হা করে তাকিয়ে রইলাম। আমাদের শোবার জায়গা নেই। এতবড় বাড়িতে এতগুলো রুম থাকতে সবাই এসে আমার রুমে শুয়েছে। এটা কোনো কথা হলো? আনন্দে আমার চোখে জল এলো। এটাকেই বোধহয় চাঁদের হাট বলে। অথচ আমার জীবন আকাশের চাঁদটাই এখানে নেই। বুকের ভেতরে হুহু করে উঠলো।
আমি আর তানি সোফায় বসে আছি। বসে থেকেই আজ আমাদের ঘুমাতে হবে। অবশ্য আমার আজ ঘুম কিছুতেই আসবে না। কিছুক্ষণ পর মামনি উঠে বসে আমাকে আর তানিকে বললেন-
__কী রে তোরা বসে আছিস কেন?
তানি বলল-
__আমাদের শোবার জায়গা নেই, আমরা এখন রহিঙ্গা।
নানান শোয়া থেকে উঠে বসে বললেন-
__সবাই উঠে বসো। আজ ঘুমানো হবে না। আমরা গল্প করে রাত শেষ করবো।
তিনি বাবাকেও টেনে বসালেন। সবাই বসে আছে শুধু নানুন শুয়ে। নানান বললেন-
__বুড়ি ভদ্রমহিলা কাকে বলে তা নিজের চোখে দেখো। একটা রাত জেগে থাকার শক্তি নেই এই ভদ্রবুড়ির।
নানুন লাফ দিয়ে বসে বললেন-
__আমার তো ভিমরতিতে ধরেনি। তোমার ধরেছে তুমি বসে থাকো।
নানান মুচকি হেসে বললেন-
__বললাম কথা সবার মাঝে, যার কথা তার গায়ে বাজে। এই তোমাকে কখন কী বললাম আমি? আমি তো একটা ভদ্রবুড়িকে বলেছি।
নানুন বললেন-
__সবাই জানে কাকে বলছো।
নানান আদেশের ভঙ্গিতে বললেন-
__এখন তোমার কাজ হলো মুড়ি মেখে আনবে। যাও উঠো!
__পারবো না এই রাত একটায় মুড়ি মাখতে।
নানান আমার দিকে তাকিয়ে বললেন-
__দেখেছো ছোট রাণী কেমন অবাধ্য বউ উনি।
বললাম-
__আমি মুড়ি মেখে আনছি।
নানান রোমান্টিক চোখে তাকিয়ে বললেন-
__এজন্যই তো তোমাকে পাট রাণী করতে চাই। বান্দরটা শ্বশুরবাড়ি থেকে ফিরুক। তাকে দেখিয়ে দেখিয়ে আমি তার বউকে তুলে নিয়ে যাব।
মনে মনে বললাম, সেই যুগে আমি জন্ম নিলে ঐ ডাকাতকে নয় আপনাকেই বিয়ে করতাম। আর ডাকাতটা সম্পর্কে আমার নাতি হতো, ভাবা যায়! যায় যায়। সে আমাকে নানুন বলে ডাকতো? ওহ নো!
⭐
মুড়ি মেখে আনলাম। নানান বললেন-
__ছোট রাণী এবার তোমাদের প্রেম কাহিনীটা সবাইকে বলো শুনি।
আমি উদাসীন সুরে বললাম-
__গত এক বছরে অনেকবার বলা হয়ে গিয়েছে তো নানান। আর বলতে ইচ্ছে করে না।
নানান ভুলে যাবার ভান করে বললেন-
__আমার তো কিছুই মনে পড়ছে না, কী কী যেন বলেছিলে?
আমি নির্লিপ্ত ভাবে বললাম-
__আপনার বান্দর নাতি পাঠক ছিল আর আমি লেখিকা ছিলাম। বাকী আর কিছু আমারও মনে নেই।
নানান ভাষণের মতো করে বললেন-
__এখানে উপস্থিত আমি ব্যতিত সবারই বিয়ে প্রেম করে হয়েছে। আমার একমাত্র মেয়ে রুবা তো কঠিন অন্বেষণ করেছিল। পাভেলকে ছাড়া সে অন্যকাউকে বিয়েই করবে না। আমিও কঠোর, আমার মেয়েও কঠোর। কী মজবুত ভালোবাসা!
নানানের কথা শুনে মামনি ব্যস্ততার ভঙ্গিতে অন্যদিকে মুখ ঘুরালেন। বাবা কী যেন খোঁজার জন্য বালিশ আর বিছানা উল্টিয়ে তোলপাড় শুরু করলেন। নানান কী যেন ভেবে কথা আর এগুলেন না। তিনি তানির দিকে তাকিয়ে বললেন-
__তুমিও তো কম যাও না প্রেয়সী! প্রেমে তো ডুবে গিয়েছিলে। তোমার প্রেমের ইতিহাসটা বলো সবাইকে।
তানি অবাক হবার ভান করে বলল-
__আমি আবার কবে প্রেম করলাম? আমান একাই আমাকে ভালোবেসে মরে যাচ্ছিল তাই মায়া হলো আর বিয়ে করলাম।
তানির কথা শুনে আমান ভাই নড়েচড়ে বসে হা করে তানির দিকে তাকিয়ে রইল। তানি এমন ভাব করলো যেন সে সব সত্যি বলছে।
নানান বললেন-
__তুমি তো কিছুই করো নাই, নাতনি জামাইয়ের সাথে তাহলে প্রেমটা বোধহয় আমিই করেছি। কী বলো নাতনি জামাই?
কথাটা বলেই নানান আমান ভাইয়ের দিকে তাকালেন। সবাই হাসতে শুরু করলো। আমিও হাসলাম কিন্তু আমার পাগলটা কী করছে এখন?
তানি ফিক করে হেসে বলল-
__আমি কিন্তু একটা সিক্রেট জানি।
সবাই উৎসুক চোখে তানির দিকে তাকালো। নানান বললেন-
__কী সিক্রেট?
__জনৈক এক লেখিকার প্রেমে জনৈক এক ডাক্তার কেমন হুড়মুড় করে পড়েছিল তার শুরুটা একমাত্র আমিই জানি। যেটা সয়ং লেখিকাও জানে না।
নানান উৎসাহ নিয়ে বললেন-
__তাড়াতাড়ি বলো।
তানি বেশ ভাব নিয়ে বলল-
__শপিং করে দিলে বলবো।
__ঠিক আছে করে দেবো। এখন তো বলো প্রেয়সী।
তানি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। আমি হতভম্ব হয়ে তানির দিকে তাকিয়ে রইলাম।
বিঃদ্রঃ গল্পের কাহিনী এবং চরিত্র সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবতার সাথে গল্প কখনোই মিলবে না। জীবন কখনও গল্পের মতো সাজানো গোছানো হয় না। গল্পটা শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য লেখা হয়েছে তাই বিতর্কিত মন্তব্য প্রত্যাশিত নয়।
পরের পর্ব আসছে…..
Written by- Sazia Afrin Sapna
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/