“ভালোবাসার প্রান্ত”(পর্ব-৫)

0
1718

“ভালোবাসার প্রান্ত”(পর্ব-৫)

আমাকে সোফায় শোয়ানো? মানি না মানবো না। হরতাল হবে, অন্বেষণ হবে। মিডিয়া ডাকবো, সবাইকে বলে দেবো। এক বোতলের বাকী সবটুকুও আমি ঢকঢক করে খেয়ে ফেললাম। বাহ্ এসব খেতে তো দারুণ দেখছি। আরও এক বোতল খাওয়া উচিত। কিন্তু আর তো নেই। দুঃখ তো শেষ হলো না, তার আগেই বোতল শেষ হয়ে গেল! আমার নিজেকে এতটাই হালকা লাগছে যেন আমি এখনি উড়ে যাব। এই আমি পাখি টাখি হয়ে গেলাম নাকি? আমার শরীর টলছে তো দেখছি। এমা আমি তো মাতাল হয়ে গেছি! আমি মেঝেতে দাঁড়িয়ে টলছি, হেলে দুলে ডান্স করার মতো। মেঝেতে ধাপ পড়ছে নাকি শূন্যে পড়ছে সেটা অনেকক্ষণ ধরে বোঝার চেষ্টা করেও বুঝতে পারলাম না। ধ্যাত্তেরি! যেখানে ইচ্ছে সেখানে ধাপ পড়ুক, আই ডোন্ট কেয়ার। এই রে, আমি সব কিছু দুইটা দেখছি। দুইটা বিছানা, কোনটায় শোবো? দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলাম দুইটা দরজায় চারটা সীমান্ত দাঁড়িয়ে আছে। ওমা এত বর এলো কোথায় থেকে? আসল বর কোনটা তাহলে? বর কী তবে বরযাত্রী নিয়ে এলো নাকি? আমি তার দিকে তাকিয়ে মাতালের স্বরে বললাম-
__এই ডাকাত সুয়ামী তুমি কোনটা আসল গো?
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/



সীমান্ত আমার অবস্থা দেখে হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে রইল। হাত ইশারা করে বললাম-
__আসল সুয়ামী কাছে এসো কুইক। নকল সুয়ামীগুলো দরজার বাইরেই থাকো। তোমরা ভেতরে আসবে না একদম। এলেই পিটাবো।

সীমান্ত রুমে ঢুকে আমার সামনে দাঁড়ালো। আমি হাসির তরঙ্গ ছড়িয়ে দিয়ে তার গলা জড়িয়ে ধরে গান ধরলাম-
“আমার ইচ্ছে করে ময়ূরপঙ্খী নাওয়ে চড়িয়া
আমি তোমায় নিয়া প্রেম যমুনায় যাব ভাসিয়া….”
এই টুকু গাইতেই সে আমার মুখ চেপে ধরে আস্তে করে বলল-
__চুউউউপ।

আমি মুখ থেকে তার হাত সরিয়ে দিয়ে বললাম-
__নো চুপ, কীসের চুপ? কেন চুপ? গান গাইতে দেবে না? ডাকাত ছেলে একটা। গান গাওয়া আমার নাগরিক অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, পারিবারিক অধিকার, বউগত অধিকার। অথচ তুমি গান গাইতে দিচ্ছো না। বাবাকে বলবো তোমায় পুলিশে দিতে। কাল থেকে তুমি জেলে থাকবে। এই বাড়িতে তোমার কোনো জায়গা নেই। জেলে যাবার সময় সোফাটা সাথে নিয়ে যাবে। তুমি ওখানে সোফায় ঘুমাবে। এই ঐতিহাসিক সোফা আমি এই রুমে আর রাখবো না। ছাড়ো আমায়, আমি এখনি সোফাটা ভেঙে ফেলবো।

সে ভীত চোখে তাকিয়ে বলল-
__এই তুমি কী খেয়েছো?

আমি হেচকি তুলে টলতে টলতে বললাম-
__তোমায় কেন বলবো হুম? তুমি কে জিজ্ঞেস করার? কাউকে বলবো না আমি কী খেয়েছি। আমার যা ইচ্ছে তাই খেয়েছি। আরও খাবো। রোজ খাবো। এখন এসো নাচবে তুমি।

সে চোখ কপালে তুলে বলল-
__মানে?

__মানে তুমি এখন নাচবে আর আমি দেখবো।

সে আগুন চোখে আমার দিকে তাকালো। যেন এখনই চোখ দিয়ে আমাকে ভষ্ম করে দেবে আর আমি ছাই হয়ে উড়ে যাব। সে ধমক দিয়ে বলল-
__চুপ একদম। যা মনে আসছে তাই বলছো তাই না? কাকে কী বলছো?

আমি তাকে ছেড়ে দিয়ে একটু সরে দাঁড়িয়ে বললাম-
__একটা নিষ্ঠুর পাষাণ রাগী ডাকাতকে বলছি। যে তার বউকে সোফায় শুইয়ে রাখে। আমার কত দুঃখ জানো?

আমি টলতে টলতে পড়ে যাচ্ছিলাম, সে আমাকে ধরতেই আমি বললাম-
__নৌ একদম ধরবে না। ডোন্ট টাচ, ডোন্ট টাচ! আমি এখন নাচ দেখবো।

__তুমি ড্রিংক করেছো?

__করেছি। বেশ করেছি। আমার কষ্ট লেগেছে তাই করেছি। এখন সুখ লাগছে। তাই গান গাইব।

অনেক খুঁজে খুঁজে তারপর আমার শাড়ির আঁচলটা খুঁজে পেলাম। তারপর আঁচল কোমরে গুজে নিয়ে দু হাত নাড়িয়ে সারা ঘরময় নাচতে শুরু করলাম। গান ধরলাম-
“কাঁটা লাগা…..”

সে আবার আমার মুখ চেপে ধরলো। এই গুন্ডা তো দেখছি আমাকে গান গাইতেই দেবে না।
আমি আমার মুখ থেকে তার হাত সরিয়ে বললাম-
__এই গুন্ডা তুমি আমাকে গান গাইতে দিচ্ছো না কেন? তুমি আসলেই একটা গুন্ডা। তুমি মোটেও ডাক্তার নও। আমি গান গাইবো ব্যাস।

সে নম্রভাবে বলল-
__কোনো গান নয়, এখন ঘুমাবে।

আমি আবার তার গলা জড়িয়ে ধরে তার কানে কানে ফিসফিস করে বললাম-
__আমি তোমাকে ভালোবাসি গুন্ডা ছেলে।

সে আমার দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে রইল। সে এমন করে তাকিয়ে আছে কেন? আমার অবস্থা দেখে কী তার কাঁন্না পাচ্ছে?
আমি কাঁদো কাঁদো স্বরে বললাম-
__ কিন্তু তুমি আমায় একটুও ভালোবাসো না ডাকাত ছেলে। আমার মন ডাকাতি করে এখন তুমি ভালোবাসতেই ভুলে গেছো। এখন আমি কাঁদবো। কিন্তু কাঁন্নাই তো আসছে না।

সে চিন্তিত চোখে তাকিয়ে বলল-
__একটু শান্ত হও। এখন লেবুজল কোথায় পাই আল্লাহ্!

সে আমাকে ধরে বিছানায় শুইয়ে দিলো। আমি উঠে বসে গান ধরলাম-
“টিকাতলীর মোড়ে একটা হল রয়েছে….”

সে আবার আমার মুখ চেপে ধরে বলল-
__কী সব গান গাইছো হু। এসব কোথায় শুনেছো? ভদ্রঘরের বউরা এসব গান গায় কখনও? এতরাতে বাড়ির সবাই শুনলে কী ভাববে?

আমি মুখ থেকে তার হাত সরিয়ে দিয়ে গাইলাম-
“সেই হলে নাকি এয়ারকন্ডিশন রয়েছে…”

সে আবার আমার মুখ চেপে ধরে আমাকে শুইয়ে দিলো। সে শোয়াচ্ছে আর আমি বসছি। সে দিলো একটা বিকট ধমক। আমি চমকে উঠে ধপাস করে নিচে পড়ে গেলাম। চোখ মেলে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম, আমি সোফার পাশে মেঝেতে পড়ে আছি। আমি এখানে কেন? আমি তো মাতাল ছিলাম। মাতাল হয়ে টলতে টলতে পড়ে গেছি নাকি? কিন্তু সে তো আমাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে ছিল, এখানে এলাম কী করে? বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখি সে শুয়ে আছে। আমার হুশ ফিরলো। ওরে আল্লাহ এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলাম? কী সুন্দর স্বপ্নের মধ্যে মাতাল ছিলাম। ভালোই তো লাগছিল। এত সুন্দর স্বপ্নটা ধমকে ভেঙে দিলো? ডাকাতটা স্বপ্নেও ধমক দেয়। কিন্তু ঐ গানগুলো আমি শিখলাম কোথায় থেকে?

__একি ফ্লোরে শুয়ে আছো কেন? ঠান্ডা লাগবে, সোফায় উঠো।
তার কথায় চেতনায় ফিরলাম। সে বিছানায় বসে আমার দিকে তাকিয়ে আছে অবাক চোখে। মনে মনে বললাম, ঢঙের দরদ দেখাচ্ছে। চাই না দরদ। আমি মুখ ভেংচি কেটে বললাম-
__লাগুক ঠান্ডা, আমি ফ্লোরেই শুয়ে থাকবো। যে মেয়ের বিছায় ঠাই হয় না তার তো ফ্লোরেই শোয়া উচিত।

সে বসা থেকে শুতে শুতে বলল-
__বাংলা সিনেমার ডায়ালগ বাদ দাও। এসব বলে আমাকে পটিয়ে বিছানায় আসতে পারবা না। সুতরাং সোফাতে উঠে যাও।

আমি রাগ করে চেঁচিয়ে বললাম-
__চাই না তোমার বিছানায় শুতে। থাকো তুমি একাই তোমার ময়ূরপঙ্খী খাটে। আমি ফ্লোরেই ঘুমাবো। আর একদম আমার সাথে কথা বলবে না।

সে বিকট ধমক দিয়ে বলল-
__উঠো বলছি!

আমি এক লাফে সোফায় উঠলাম। পৃথিবীর কোনো মেয়ের বর এত নিষ্ঠুর নয়। আমার ভেউ ভেউ করে কাঁন্না পাচ্ছে। সে আর আমাকে ভালোবাসে না আল্লাহ গো!


পরের দিন রাতে সে হঠাৎ স্বাভাবিক হয়ে গেল। যেন আগের সেই মানুষটা। আমি ডিনার করে রুমে ঢুকতেই সে আমাকে হঠাৎ জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেলো। আমি হতভম্ব হয়ে চুপ করে রইলাম। বুঝলাম ঘাপলা আছে। সে রাগ করলে এমনি এমনি তার রাগ পড়ে যায় না। আমাকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয় তার রাগ ভাঙানোর জন্য। আর সেই মানুষ হঠাৎই রাগ ভেঙে জড়িয়ে ধরে আছে। আমার ভয় ভয় লাগছে। এবার কী তবে বুকে চেপে ধরে রেখে জোর করে ট্যাবলেট খাওয়াবে নাকি? শালার ৭২ ঘন্টা শেষ হবে কখন?
সে মিষ্টি করে বলল-
__অনেক আদর করবো তোমায়। আর কখনও বকবো না আমার পাগলিটাকে। আমার অনেক ভুল হয়ে গিয়েছে সোনা। এই দেখো আমি কান ধরছি।

আমি বাকরুদ্ধ হয়ে চুপ করে আছি। তার বুক থেকে মাথা সরিয়ে তার মুখের দিকে তাকানোর সাহস পেলাম না। হুট করেই তার মুখে এমন কথা আমি হজম করতে পারছি না। আমার যেন কেমন কেমন লাগছে। ক্ষীণ স্বরে বললাম-
__দুই হাত দিয়ে তো আমাকে চেপে ধরে আছো তাহলে কান ধরেছো কী দিয়ে?

সে একহাত ছেড়ে দিয়ে তার কান ধরলো। তারপর বলল-
__এই তো কান ধরেছি। কী হলো? আদর চাও না?

আমি হ্যাঁ সুচক মাথা নড়ালাম। সে আমাকে হতবাক করে দিয়ে বলল-
__৭২ ঘন্টা হতে আর মাত্র আধা ঘন্টা বাকী আছে। প্লিজ ট্যাবলেটটা খেয়ে নাও সোনা!

যা ভেবেছিলাম তাই হলো। ডাকাত ছেলে এসব বলে আমাকে পটানোর চেষ্টা করছে। আমিও পটবো না কিছুতেই। আমি তার বুকে মাথা রেখে শক্ত করে তাকে জড়িয়ে ধরে মিষ্টি করে বললাম-
__আমি মা হতে চাই এটা কেন বুঝো না তুমি?

সে এক ঝটকায় আমাকে সরিয়ে দিয়ে বলল-
__আমি বাচ্চা চাই না এটা তুমি কেন বুঝো না?

আমি তার চোখের দিকে তাকিয়ে ঝাঁজালো স্বরে বললাম-
__বুঝতেও চাই না। চুলোয় যাক তোমার ট্যাবলেট।

সে চরম রেগে গেল। পারলে এখনই আমাকে গুলি করবে। ধমকের স্বরে বলল-
__এর পরিণাম কিন্তু খুব ভয়ানক হবে বলে দিলাম।

আমি দৃঢ় স্বরে বললাম-
__হোক ভয়ানক। আমি ভয় পাই না। কাকে ভয় দেখাচ্ছো তুমি? আমি যে বরাবরই একটু বেশি সাহসী সেটা তোমার অজানা নয়।

রাগ করে গ্লাস ভেঙে সে নিজের হাত কেটে ফেলল কিন্তু আমাকে ছুঁতেও দিলো না। আমি অঝরে কাঁদছি তার হাত থেকে টপটপ করে রক্ত পড়া দেখে। সে ওষুধ লাগাবে না আর ব্যান্ডেজও করবে না। বাধ্য হয়েই দৌড়ে গিয়ে মামনিকে ডেকে আনলাম। মামনি ব্যান্ডেজ করে দিলেন। তারপর বললেন-
__আমি জানি না তোদের মধ্যে কী চলছে। কেন এমন পাগলামি করছিস তোরা? আমাকে কী একটু শান্তিতে থাকতে দিবি না?

আমরা দুজন কেউ কোনো কথা বললাম না। মামনি আর কিছু না বলে চলে গেলেন। আমি সারারাত সোফায় বসে কেঁদে কাটালাম। আর সে বিছানায় বসে কাটালো।

বিঃদ্রঃ গল্পের কাহিনী এবং চরিত্র সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবতার সাথে গল্প কখনোই মিলবে না। জীবন কখনও গল্পের মতো সাজানো গোছানো হয় না। গল্পটা শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য লেখা হয়েছে তাই বিতর্কিত মন্তব্য প্রত্যাশিত নয়।

পরের পর্ব আসছে…..
Written by- Sazia Afrin Sapna

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে