“ভালোবাসার প্রান্ত”(পর্ব-৪)

0
1732

“ভালোবাসার প্রান্ত”(পর্ব-৪)

কোন মেয়ে আমার বরের দিকে তাকিয়ে থাকে তাকে অঙ্কুর খুঁজে না পেয়ে আমাকেই প্রশ্ন করছে কোন মেয়ে? নিশ্চয়ই সে কিছু লুকানোর চেষ্টা করছে। আমার বরের দিকে তাকিয়ে থাকে এত বড় সাহস কোন মেয়ের? আমি আজ তাকে মরিচ থেরাপি দেবো এবং তার সব চুল ছিড়ে নিয়ে বাড়ি যাব। বুকের ভেতরে কেমন যেন করে উঠছে, হায় আল্লাহ এমন করে আমার বরের দিকে কুনারীর নজর পড়লে আমার বর তো শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাবে। এমনিতেই তো তার হৃদয় কাঠ দিয়েই বানানো, এখন শরীরও কাঠ হবে নাকি?
আমি চোখ পাকিয়ে অঙ্কুরকে বললাম-
__বলো বলছি কোন মেয়ে তাকিয়ে থাকে?

সে আসামি মতো আমার দিকে তাকালো। যেন সে ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে আছে, এখনই আমি তাকে ফাঁসি দিয়ে দেবো। তার জীবনের ইতি এখানেই। জীবনে তার বিয়ে করা আর হলো না। সে করুণ সুরে বলল-
__আমাদের হসপিটালের কোনো ডাক্তার বা অন্য স্টাফ কোনো মেয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকে না বিশ্বাস করো! কারণ ওরা সবাই তো তোমাকে চেনে। ওদের ঘাড়ে কয়টা মাথা আছে যে, তোমার বরের দিকে তাকাবে?
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/



হাঁসের মতো ফ্যাসফ্যাসে কন্ঠে সে কথাগুলো বলল। তার গলা দিয়ে যে স্বর বের হতে চাইছে না তা বুঝতেই পারছি। বেচারা অনেক কষ্টে স্বর টেনে বের করেছে। তার কন্ঠস্বর, কথা বলার ভঙ্গিমা আর আসামি টাইপের চাহনি দেখে আমার হাসি পাচ্ছে। হাসি চেপে রেখে গম্ভীর ভাব ঠিক রাখতেই আমি যেন শেষ হয়ে যাচ্ছি। কখন যেন আমার পেট ফেটে হাসি বেরিয়ে আসে।
আমি চোখ পাকিয়ে রেখেই বললাম-
__তাহলে কোন মেয়ে তাকিয়ে থাকে?

সে বিষম খেয়ে বলল-
__পথে ঘাটে চলার সময় পথিক মেয়েরা তাকিয়ে থাকে। মেয়েগুলো আসলেই খুব অসভ্য আর বেশরম। আরেহ বাবা বিবাহিত ছেলের দিকে তোরা কেন তাকাবি? আমরা ব্যাচেলাররা কী মরে গেছি? আমাদের দিকে দিনরাত তাকিয়ে থাক না বাপু, কেউ মাইন্ড করবে না। আমাদের তো আর বউ নেই যে, কোমরে আঁচল গুজে তেড়ে আসবে।

কথাটা বলেই সে নির্দোষ মুখভঙ্গিমায় তাকালো। যেন কথাটা বলে সে খুব বাঁচা বেঁচে গেছে। কারণ পথিক মেয়েদের তো আর আমি ধরতে যাব না।
আমি সন্দেহজনক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম-
__তোমার বন্ধু পথে ঘাটে চলাফেরা কবে করলো? সে তো বাড়ি আর হসপিটাল ছাড়া একা কোথাও যায় না। তাও আবার গাড়িতে যায়। এর বাহিরে যেখানেই যায় সাথে আমি থাকি। তাহলে কোন মেয়ে তাকালো?

ফেঁসে গিয়েছি এই টাইপের মুখভঙ্গি করে সে আহত স্বরে বলল-
__কোনো মেয়ে তাকায়নি। বিশ্বাস করো আমরা বন্ধুরাই শুধু ওর দিকে তাকিয়ে থাকি। কী যে ভালো লাগে তাকিয়ে থাকতে! চোখ সরাতেই মন চায় না জানো! এত হ্যান্ডসাম তোমার বর যে, আমরা নিজেদেরকে নিয়ে খুব হতাশ আছি।

আল্লাহ হাসি আর চেপে রাখতেই পারছি না। খুব কষ্টে নিজেকে স্বাভাবিক করে হালকা হেসে বললাম-
__এত ভালোলাগে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে? এজন্যই বুঝি তোমরা বন্ধুরা যখন ডান্স করো তখন তুমি তার সাথে মেয়ে চরিত্রে নাচো? মাঝে মাঝে তো তার কোলেও উঠে যাও শুনেছি।

সে লাজুক হাসি দিয়ে বলল-
__ঠিকই ধরেছো। আই লাভ হিম।

__একদিন তোমারও প্রেম হবে, বিয়ে হবে। আর আমার বরের দিকে এত তাকিয়ে থেকো না দেবররাজ। কারণ হতাশায় মরে টরে যেতে পারো। বিয়ের স্বাদ না নিয়ে মরে গেলে তোমার অতৃপ্ত আত্মা কষ্ট পাবে।

সে হাহা করে হাসলো। এবার বোধহয় তার জানে পানি এসেছে। একটু আগে তো আমার প্রশ্নের তীরে মরেই যাচ্ছিল। বললাম-
__যাই হোক, বাসায় এসো চুটিয়ে আড্ডা দেবো। এখন আমার একটু তাড়া আছে।

সে আমার হাতের দিকে তাকিয়ে অভিমানের সুরে বলল-
__তোমার হাতে খাবারের হটপট দেখছি। সব বরকে খাইয়ে ফিনিশ করে দিয়েছো? দেবরের কথা একটুও মনে পড়েনি? এত নিষ্ঠুর তুমি?

আমার মন খারাপ হয়ে গেল। মানুষটা না খেয়ে ওটিতে দাঁড়িয়ে আছে। আজ তো আমার উপরে রাগ করে একফোঁটা পানিও খাবে না। একটা দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে বললাম-
__তার খাওয়ার সময় আছে নাকি? এটা তুমি রেখে দাও। খেয়ে নিও।

সে আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল-
__তোমার মন খারাপ বৌরাণী?

আমি নিজেকে স্বাভাবিক করে বললাম-
__না তো।

__শালা এত সুন্দরী বউকে খাবারসহ ফিরিয়ে দিচ্ছে, কবে বুদ্ধি হবে গাধাটার? আরেহ বউ সুন্দরী হলে তার হাতের বিষ ফলও অমৃত লাগবে। গাধা একটা!

আমি অঙ্কুরের এমন পাম মার্কা কথা শুনে হা করে তাকিয়ে রইলাম। সে বেশ ভাব নিয়ে বলল-
__আচ্ছা তোমার আফসোস হয় না এই ভেবে যে, তোমার দেবরের মতো তোমার বরটা রোমান্টিক নয় কেন?

__উহু, আফসোস হয় না।

সে অবাক হয়ে বলল-
__কেন?

__তাকে আনরোমান্টিক দেখেই প্রেম করেছি এবং বিয়েও করেছি।

হঠাৎ তার চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে গেল। বলল-
__তোমার ভালোবাসা দেখলে মন ভরে যায়। তবে এখনও ভেবে অবাক হই, হাদারামটা তোমায় পটালো কেমন করে!

আমি কিছু না বলে ম্লান হেসে বললাম-
__এ রহস্য তুমি বুঝবে না।

__বলো প্লিজ! আমিও পটাতে চাই।

__ডাকুরাজের থেকে শিখে নিও।

__ঐ আলাভোলা হাদারামটা ডাকুরাজ? ওহ মাই গড!

__ডাকুরাজ না হলে এই ডাকুরানীর মন ডাকাতি করা এত সহজ নয়।

সে আমার কথা শুনে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে বলল-
__তুমি ডাকুরানী ঠিক আছে কিন্তু সে কোন এ্যাঙ্গেলে ডাকুরাজ?

আমি শুধু মুচকি হাসলাম।

বিষণ্ন মন নিয়ে বাড়ি ফিরছি। মানুষটার রাগ কেমন করে যে ভাঙাই সেটা ভেবেই কূলকিনারা পাচ্ছি না। মরার ট্যাবলেট যে কোন বজ্জাত আবিষ্কার করেছে তাকে পেলে আচ্ছা মতো ধোলাই করে ট্যাবলেট বানানোর সাধ মিটিয়ে দিতাম। তার বানানো সব ট্যাবলেট তাকে আর তার বউকে খাওয়াতাম। না খেতে চাইলে আবার ধোলাই দিতাম। অসভ্য বেয়াদব লোক হাবিজাবি ওষুধ বানিয়ে আমার জীবনটা শেষ করে দিলো। এখন ট্যাবলেট না খেলে যদি আবার বর খাবার খাওয়া বাদ দেয় তাহলে তো খুব বিপদ। জানি না আজ রাতে আমার কপালে কী আছে! আবার সেই সোফাতে ঘুমানো। তা না হয় ঘুমালাম। কিন্তু চেপে ধরে যদি জোর করে ট্যাবলেট খাইয়ে দেয় তাহলে কী হবে? কী পাষাণকে বিয়ে করেছি আল্লাহ! তার মন গলিয়ে দাও প্লিজ!


লাঞ্চ এর সময় পেরিয়ে গেলেও সে বাসায় এলো না। অথচ শুধু আমার সাথে লাঞ্চ করবে বলে শত ব্যস্ততার মাঝেও সে আধা ঘন্টার জন্য হলেও বাড়িতে আসে। লাঞ্চ শেষে আমাকে শপথ করায় আমি যেন তার আবেশ নিয়ে এখন ঘুমিয়ে যাই। সেই মানুষটা আজ বাড়িতে এলো না। সকালেও খায়নি সে। বুকে অনেক কষ্ট চেপে রেখে কল করলাম। সে ওটিতে আছে তাই কল ধরলো না। আধা ঘন্টা পরে কল ব্যাক করে বলল-
__যদি ট্যাবলেট খাও তবেই লাঞ্চ করতে বাড়িতে যাব।

আমি কাঁন্না আটকে রেখে বললাম-
__তুমি কী কোনো কালেও আমার মন বুঝবে না?

সে কঠিন ভাবে বলল-
__তুমি তো আমার মন খুব ভালো বোঝো তাহলে এটা কেন করলে?

আমি কাঁন্না জড়ানো গলায় বললাম-
__আমি বেবি চাই তাই করেছি। মা হতে চাওয়া কোনো অপরাধ নয়।

ভারি গলায় সে বলল-
__স্বামীকে নেশার ওষুধ খাইয়ে পৃথিবীর কোনো মেয়ে এমন কাজ কখনও করেনি এটা আমি নিশ্চিত। তুমি আসলেই একটা ডাকুরানী।

মনে মনে বললাম, সোজা আঙ্গুলে ঘি উঠলে কী আর তোমাকে নেশার ওষুধ খাইয়ে মাতাল করতাম?
একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম। পৃথিবীর কোনো পুরুষ এসব নিয়ে এমন রিয়্যাক্ট করে না। কী আজব মানুষের বউ আমি আল্লাহ!
বললাম-
__আমি ডাকুরানী এটা জেনেই প্রেম করেছো এবং বিয়েও করেছো। এখন এসব বলে কী লাভ? এসব বললেই তো আর আমি ডাকুরানী থেকে সরলারাণী হয়ে যাব না।

__তাই বলে স্বামীর ইচ্ছেটাকে তুচ্ছ করে দেখে ডাকাতি করবে?

আমি প্রসঙ্গ এড়িয়ে বললাম-
__প্লিজ খেতে এসো! আমার কষ্ট হচ্ছে। সবাই না খেয়ে আছে। সকাল থেকে আমরা কেউ খাইনি।

সে কিছু না বলে ফোন কেটে দিয়ে বন্ধ করে দিলো ফোন। আমি রুমে গিয়ে কাঁদতে শুরু করলাম। একটা বেবির জন্য আমাকে এত কিছু সইতে হচ্ছে। মনে হচ্ছে এই বেঁচে থাকার কোনো মানেই নেই। কেন যে সে এত পাষাণ!


রাত এগারোটায় বাবা তাকে জোর করে ধরে বাড়িতে আনলেন। তারপর জোর করে খাইয়েও দিলেন। আমার বুকে যেন প্রাণ এলো।
ডিনার করে সে রুমে চলে গিয়েছে। কিছুক্ষণ পর দুরুদুরু বুকে আমিও রুমে ঢুকলাম। আমি রুমে ঢুকেছি সেটা টের পেয়েও সে আমার দিকে তাকালো না। কষ্টে বুকটা চেপে এলো। আমি মনে হয় পুরোনো হয়ে গেছি। আমাকে তার আর ভালোলাগে না। আবেগে চোখ ভিজে এলো জলে। এত আবেগ যে কোথা থেকে আসে বুঝি না!
অভিমানের সুরে বললাম-
__তুমি যখন চাও না তখন আমি অন্য রুমে থাকবো। আমার সব কাপড় চোপড় বের করে নিয়ে যাচ্ছি।

কথাটা বলেই আমি আমার কাপড় বের করার জন্য আলমারির দিকে এগিয়ে যেতেই সে ধমক দিয়ে বলল-
__একদম ঠ্যাং ভেঙে দেবো যদি রুমের বাইরে যাও। অপরাধ করে আবার ঢং দেখানো হচ্ছে। এসব বলে আমার মন গলাতে পারবে না।

এমন মানুষ জীবনে দেখা তো দূরে থাকুক, আমি কখনও শুনিনিও। কোনো নাটক সিনেমাতেও দেখিনি। সিনেমা নাটকেও বউকে মেঝেতে শোয়াতে দেখেছি কিন্তু ওদের তো বউ পছন্দ না তাই বউকে বিছানায় শুতে দেয়নি। কিন্তু আমি তো তার পছন্দের বউ। খাঁটি প্রেমের বিয়ে আমাদের। বিয়ের আগে আমরা ফিসফিস করে চুরি করে ফোনে কথা বলেছি। দুই পরিবারকে মানিয়ে তারপর বিয়ে করতে আমাদের অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। আর সেই প্রেমের স্বামী আমাকে সোফায় শোয়াচ্ছে। বউ অভিমান করেছে, কোথায় আদর টাদর করে মান ভাঙাবে। তা নয় ঠ্যাং ভাঙতে চাইছে। কতটা হৃদয়হীন হলে মানুষ এমন কথা বলতে পারে! আসলে আমার বেঁচে থাকার কোনোই অধিকার নেই।
অসহায় চোখে তাকিয়ে বললাম-
__তাহলে কী চাও তুমি?

সে নির্লিপ্তভাবে বলল-
__আমি যন্ত্রণা দেবো আর তুমি তা সহ্য করবে।

আমি কিছু না বলে অসহায়ের মতো তাকিয়ে রইলাম তারপর সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম। আজব মানুষ একটা! নিজেও শান্তি পাচ্ছে না আর আমাকেও শান্তি দিচ্ছে না। কোথায় স্বামীর বুকে মাথা রেখে শুয়ে থাকবো, তা নয় সোফা নামক জাহান্নামে শুতে হলো। এই সোফা আবিষ্কার করেছিল কোন বজ্জাত? তাকেও তো ধোলাই করা উচিত। খুব ভালো হতো যদি সোফাটা এখন ভেঙে যেত। ভাঙবো নাকি? না থাক, এতে আরও রেগে যাবে। শেষে দেখা গেল সোফা ভাঙার দায়ে আমাকে ট্যাবলেট খেতে হলো। ওহ নো! সব শোধ নেবো আমি ডাকাতটার।

বিঃদ্রঃ গল্পের কাহিনী এবং চরিত্র সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবতার সাথে গল্প কখনোই মিলবে না। জীবন কখনও গল্পের মতো সাজানো গোছানো হয় না। গল্পটা শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য লেখা হয়েছে তাই বিতর্কিত মন্তব্য প্রত্যাশিত নয়।

পরের পর্ব আসছে…..
Written by- Sazia Afrin Sapna

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে