“ভালোবাসার প্রান্ত”(পর্ব-৩)
ব্যালেন্স হারিয়ে এমন করে যে পড়ে যাব তা আমি ভাবতেই পারিনি। আমি পড়ে গিয়েছি দেখে সে দরজায় দাঁড়িয়ে হতভম্ব হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। শরীর এতটাই কাঁপছে যে, আমি উঠে দাঁড়াতেও পারছি না। তাকে কী বলে দিতে হবে যে আমাকে টেনে তুলো? কবে এসব বুঝবে সে? লজ্জার মাথা খেয়ে বললাম-
__আমি উঠতে পারছি না, আমায় টেনে তুলো।
সে আমার হাত ধরে টেনে তুলতে তুলতে বলল-
__পড়ে গেলে কী করে? নাকি এটাও অভিনয় সিমপ্যাথী নেবার জন্য?
মনে মনে খুব কাঁন্না পেলো। মানুষটা কখনই আমাকে বোঝার চেষ্টা করে না। সবসময় উল্টাই বুঝে। অভিনয় যখন মনে করেই নিয়েছে তখন অভিনয়ই হোক। সে আমাকে টেনে তুলে দাঁড় করাতেই আমি তার গায়ের উপর পড়ে গেলাম। এমন ভাবে পড়লাম যে, আমাকে তার বুকের উপর নিয়ে সে চিৎ হয়ে মেঝেতে পড়লো। কেমন সিনেমার সীন ঘটিয়ে ফেললাম ভেবে খুব আনন্দিত হলাম। মনে মনে নিজেকে সিনেমার নায়িকা মনে হলো। কিন্তু তার চোখের দিকে তাকিয়ে নায়িকা ভাব ভ্যানিস হয়ে গেল। কারণ সিনেমার সাথে একটু পার্থক্য আছে এখানে। সিনেমায় নায়করা রোমান্টিক চোখে নায়িকার দিকে তাকিয়ে থাকে। নায়িকাও নায়কের বুকে শুয়ে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে। আর এখানে আমার বর এ্যানাগন্ডা চোখে তাকিয়ে আছে আর আমি ভীত চোখে তাকিয়ে আছি। আমার হঠাৎ খুব লজ্জা লাগছে। ভয় আর লজ্জা মিলেমিশে আমি তাকে জড়িয়ে ধরলাম। মানুষ ভয় পেলে তো জড়িয়েই ধরে। এমা জড়িয়ে ধরতে না ধরতেই সে আমাকে তার বুকের উপর থেকে ঠেলে ফেলে দিলো। পাষাণ কাঠ তক্তা একটা হুহ!
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উঠে বিছানায় গিয়ে বসলাম। তাকে যে চুমু খাওয়ার প্ল্যান ছিল সেটা তো ভুলেই গিয়েছি। এখন তাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেলে কেমন হবে? আমি তার দিকে তাকালাম। তার চোখ রাগে লাল হয়ে আছে। থাক বাবাহ কাজ নেই আমার চুমু টুমু খেয়ে। আমি বরং ঘুমাই। আমি বিছানায় শুতেই সে বালিশ ঠিক করতে করতে বলল-
__বিছানায় শুতে চাইলে ট্যাবলেট খেতে হবে। এখন ভেবে দেখো কোথায় শোবে।
আমি অসহায় চোখে তার দিকে তাকালাম। আহত স্বরে বললাম-
__আচ্ছা আমি মামনির কাছে যাচ্ছি।
সে নম্র স্বরে বলল-
__রুমের বাহিরে গেলে ঠ্যাং ভেঙে দেবো।
আমি কিছু না বলে একটা বালিশ নিয়ে সোফায় গিয়ে শুলাম। ভাবলাম একটু পরে মনে হয় সে আমাকে ডেকে বিছানায় নিয়ে যাবে কিন্তু রাত শেষ হতে চললো তবু সে ডাকলো না। নিষ্ঠুর একটা হুহ।
সারারাতে একটুও ঘুম এলো না। কষ্টে আমার চোখে জল এলো। আমার বিবাহিত জীবনে তাকে ছাড়া যতগুলো রাত পার করেছি সবগুলো রাতই নির্ঘুম অশ্রু মাখা ছিল। আমি চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভান করে শুয়ে থাকলাম। সে বিছানায় সারারাত ছটফট করলো। আমি চোখ একটু ফাঁক করে ওর ছটফটানি দেখলাম। ভোররাতের দিকে সে কাঁথা দিয়ে আমার শরীর ঢেকে দিলো। তারপর আমার মাথায় হাত বুলিয়ে কপাল বারাবর ঝুঁকে সরে গেল। বুঝলাম একটা চুমু খেতে চেয়েও খেলো না। মনে মনে রাগ হলো। আরেহ বাবাহ আমি তো ঘুমিয়েই আছি, একটা চুমু খেলে আমি তো আর টের পাবো না। চুরি করে বউকে কী একটা চুমু খাওয়া যায় না? নিষ্ঠুর একটা!
✴️
আমি সকালে উঠে নাস্তা বানিয়ে টেবিল রেডি করলাম। সে আটটার মধ্যেই বের হবে। আমাকে তার প্লেট সাজাতে দেখে সে বলল-
__আমি নাস্তা করবো না আজ।
__কেন?
__জবাব তোমার কাছে।
আমি করুণ চোখে তার দিকে তাকিয়ে বললাম-
__প্লিজ না খেয়ে বের হইয়ো না! কিছু একটা মুখে দিয়ে যাও!
সে দৃঢ় স্বরে বলল-
__না
__অনুরোধ করছি প্লিজ!
সে কিছু না বলেই বেরিয়ে গেল। আমারও খাওয়া হলো না। যে যুদ্ধে নেমেছি তাতে দূর্বল হলে হার নিশ্চিত। আমাকে শক্ত থাকতে হবে। সে বেরিয়ে যেতেই মামনি এসে বললেন-
__বাবুসোনা নাস্তা না করেই বেরিয়ে গেল। তোদের মধ্যে কী ঝগড়া টগড়া কিছু হয়েছে নাকি?
আমি নিজেকে স্বাভাবিক করে বললাম-
__কই না তো।
মামনি মন খারাপ করে বললেন-
__ছেলেটা না খেয়ে থাকবে দুপুর পর্যন্ত। আমি খাই কী করে বল তো? তোদের মধ্যে কিছু হলে মিটিয়ে নে। জানিসই তো যে, সে একটু পাগল পাগল।
✴️
আমি হটপটে নাস্তা নিয়ে হাসপাতালে চলে গেলাম। আমি যেতেই আমাকে দেখে ফারুক খুশিতে ঝলমল করে উঠলো। বললাম-
__ভাই তোমার মহারাজকে গিয়ে বলো আমি এসেছি।
সে মাথা নিচু করে অসহায় সুরে বলল-
__ওটিতে ঢুকলে মহারাজ রাগ করেন। আজ ওটিতে ঢুকার আগে বলেছেন, কেউ যেন তাকে একদম বিরক্ত না করে।
আমি যে আসব সেটা সে আগে থেকেই বুঝে ফেলেছে। তাই আগেই ফারুককে এসব বলে রেখেছে। কেমন ডাকাত হলে এমনটা করতে পারে আল্লাহ! আমি স্বাভাবিক ভাবে ফারুককে বললাম-
__আমি তোমাকে ঢুকতে বলেছি শুনলে সে রাগ করবে না। যাও।
কয়েক মিনিট পর ফারুক এসে মুখ গোমরা করে দাঁড়িয়ে বলল-
__বৌরাণী স্যার এখন আসতে পারবেন না। আপনাকে বাড়ি ফিরে যেতে বলেছেন।
__আমি অপেক্ষা করছি, সে যখন আসে আসুক।
ফারুক অসহায় চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। আমার জমিদার বের হলেন পাক্কা দেড় ঘন্টা পর। বেরিয়ে আমাকে বসে থাকতে দেখে বলল-
__কেন এসেছো?
অভিমানে তার চোখমুখ অন্য রকম দেখাচ্ছে। এত অভিমানী হলে কী চলে? কবে যে পাগলটা সব বুঝবে?
আমি ক্ষীণ স্বরে বললাম-
__নাস্তা করাতে এসেছি।
আমার কথায় যেন তার অভিমানের মাত্রা আরও বেড়ে গেল। সে তমসাচ্ছন্ন মুখে তাকিয়ে বলল-
__আমি খাই এটা তো তুমি চাও না। যদি চাইতে তাহলে ট্যাবলেট খেতে।
আমি সব বুঝেও প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেলাম। মাঝে মাঝে দূর্বলতাকে সামনে নিয়ে আসতে হয়। আসলে আমি তার দূর্বলতার সুযোগ নিতে চাই না। কিন্তু আমি বড্ড নিরুপায়। আমি খাইনি এটা তার হৃদয় পোড়াবে। পুড়ুক না একটু, তবুও সে যেন অভুক্ত না থাকে এটাই আমার প্রচেষ্টা। আমি আহত চোখে তাকিয়ে বললাম-
__আমি সকাল থেকে কিচ্ছু খাইনি, ভীষণ ক্ষুধা লেগেছে।
সে কপট রাগ দেখিয়ে বলল-
__তোমার হাত পা কে বেঁধে রেখেছে? খাওনি কেন?
__তুমি না খেলে আমি খেয়েছি কখনও?
__এখন থেকে ওসব আদিখ্যেতা বাদ দিবে।
__দেবো না
__তর্ক করবে না একদম।
__করবো।
__ধুর। আমি ওটিতে যাচ্ছি।
আমি তার হাত টেনে ধরে বললাম-
__প্লিজ না খেয়ে যেও না!
সে আমাকে উপেক্ষা করে ওটিতে চলে গেল। আমার ভেতরটা যেন ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। আমার হাউমাউ করে কাঁন্না এলো কিন্তু কাঁন্না আটকে রাখলাম অনেক কষ্টে। কাঁন্না আটকে রাখার মতো নিদারুণ যন্ত্রণা আর নেই। এখন যদি কাঁদি তবে সবাই ভাববে আমার বর আমাকে পিটিয়ে রেখে ওটিতে ঢুকেছে। যদিও সে খুবই ভদ্রলোক তাই সবাই এটা বিশ্বাসও করবে না। কিন্তু বকতে পারে এটা তো বিশ্বাস করবে। স্বামীর বদনাম হোক সেটা আমি চাই না। এ কেমন বর আল্লাহ!
✴️
বাড়ি ফেরার জন্য পা বাড়াতেই দেখি অঙ্কুর এগিয়ে আসছে। আমাকে দেখে বিজয়ে হাসি দিয়ে বলল-
__আরেহ রাজার বউ যে দেখছি! সূর্য আজ কোন দিকে উঠেছে তা তো খেয়াল করিনি। তা কী মনে করে এত সকাল সকাল? বরের নাইট ডিউটি ছিল নাকি? সারারাত এপাশ ওপাশ করে কাটিয়ে সকাল হতেই বুঝি ছুটে এসেছো থাকতে না পেরে? বিশ্বাস করো তোমার মতোই একটা বর পাগলি বউ চাই আমার। কোথায় পাই বলো তো? তোমার তো আবার বোনও নাই! সব আমার কপাল!
এত দুঃখের মাঝেও অঙ্কুরের কথা শুনে হাসি পেলো। অন্যদিন হলে হয়তো খুব হাসতাম। আমি মুচকি হেসে বললাম-
__পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দাও।
__ধুর ওসবে কিচ্ছু হয় না। তুমি বরং আমার জন্য একটা বর পাগলি ঠিক করো। বোন নেই তো কী হয়েছে? বান্ধবী তো আছে।
__বিয়ের আগেই মেয়ে বর পাগলি হবে কী করে? এরচেয়ে বরং তুমি একটা প্রেম করো। সেই মেয়ে বর পাগলি কি না সেটা বিয়ের আগেই বুঝতে পারবে। ফ্রীতে কী দারুণ এডভাইজ দিলাম তোমায় দেখো!
সে মুখটাকে শুকনো করে বলল-
__তোমার বরের জন্য অমাদের প্রেম হবার উপায় আছে নাকি? সব মেয়ে তো ওর দিকেই তাকিয়ে থাকে।
আমি বড় বড় চোখ করে অঙ্কুরের দিকে তাকালাম। হায় আল্লাহ কোন মেয়ে আমার বরের দিকে তাকিয়ে থাকে? কতগুলো মেয়ে তাকিয়ে থাকে? ইন্টার্নীর সব হারামী বেশরম মেয়েগুলোই নিশ্চয়ই ! শয়তান মেয়ে তোদের কপালে বিয়ে জুটবে না দেখিস। অন্যের স্বামীর দিকে তাকিয়ে থাকার ফল তোরা নিশ্চয়ই পাবি। চিরকাল রোগী দেখেই তোদের জীবন পার হবে, বর জুটবে না। এই সোনাইয়ের অভিশাপ বিফলে যাবে না।
আমি সিরিয়াস মুখ করে ঝাঁজালো স্বরে অঙ্কুরকে বললাম-
__কোন মেয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে বলো?
সে আমার সিরিয়াস চোখমুখ দেখে ঘাবড়ে গেল। তার যে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে তা আমি নিশ্চিত। মনে মনে আমার হাসি পেলো। সে আমতা আমতা করে বলল-
__কোন মেয়ে, কোন মেয়ে! তাই তো কোন মেয়ে?
বিঃদ্রঃ গল্পের কাহিনী এবং চরিত্র সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবতার সাথে গল্প কখনোই মিলবে না। জীবন কখনও গল্পের মতো সাজানো গোছানো হয় না। গল্পটা শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য লেখা হয়েছে তাই বিতর্কিত মন্তব্য প্রত্যাশিত নয়।
পরের পর্ব আসছে…..
Written by- Sazia Afrin Sapna
পর্ব-২
https://m.facebook.com/groups/884724498624937?view=permalink&id=892049894559064
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/