“ভালোবাসার প্রান্ত”(পর্ব-১৪)

0
1450

“ভালোবাসার প্রান্ত”(পর্ব-১৪)

দিনগুলো বেশ কাটছিল হেসেখেলে। তবুও আমি নিশ্চিন্ত হতে পারলাম না। কারণ আমি তো জানি সামনে ঝড় আসতে চলেছে। অজানা আশঙ্কায় মাঝে মাঝেই আমার বুক কেঁপে উঠে। পাগলটাকে যে সামলে উঠতে আমি বড্ড হিমশিম খেয়ে যাই। মাঝে মাঝে এই হিমশিমে খুব ক্লান্ত লাগে। মনে হয়, যা ইচ্ছে করুক সে, আমি আর সামলাবো না। কিন্তু ভালোবাসার অপার শক্তি নিমেষেই সব ক্লান্তি দূর করে দেয়।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/



ঝড় এলো দেড় মাস পরে….
সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ করতে গিয়ে বমি হয়ে গেল। অবশ্য ছোটবেলা থেকেই এ্যান্টাসিডের মতো স্বাদের এই পেস্টে দাঁত ব্রাশ করতে গিয়ে আমি রোজ বমি করতে গিয়েও বেঁচে যাই। আজ আর বাঁচা হলো না। বমি হয়েই গেল।
সীমান্ত নাস্তা করে বেরিয়ে যাবার পরে কিচেনে ঢুকলাম। কী এক গন্ধ এসে নাকে লাগতেই বমি চলে এলো। দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে বমি করে ফেললাম। তারপর থেকে নিয়মিত বমি চলছে। আমার আর বুঝতে বাকী নেই যে, কোন রোগে আমি আক্রান্ত হয়েছি। এখন ভেতর ভেতর তীব্র ভয় যেন আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে আছে। ভয়টা শুধুই সীমান্তকে নিয়ে। সে যে কী রিয়্যাক্ট করবে তা উপরওয়ালা ছাড়া আর কেউ জানে না। আমি মামনির বিছানাতে শুয়ে থেকে মনে মনে দোয়া ইউনুস পাঠ করছি আর মামনি আমার পাশে বসে অসহায় চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। কোন খাবার খেয়ে আমার পেটে অসুখ হলো সেই আশঙ্কায় তিনি তীব্র অসহায় বোধ করছেন। বললেন-
__আমি এখনই বাবুসোনাকে ফোন করছি। কীসের এত ডিউটি করা? বাড়িতে রোগী আর সে পড়ে আছে হসপিটালের রোগী নিয়ে। কেমন চোখমুখ শুকিয়ে গিয়েছে তোর।

__সেরে যাবে তো মামনি। শুধু শুধু তাকে কেন বিরক্ত করছো?

তাকে বিরক্ত করতে আমি পছন্দ করি এটা সবাই জানে আর সেই আমিই আজ বিরক্ত করতে নিষেধ করছি এটা শুনে মামনি হয়তো একটু অবাক হলেন। তারপর দৃঢ় স্বরে বললেন-
__কীসের বিরক্ত? এটা তার দায়িত্ব।

__জানোই তো আজ তার ভিআইপি ওটি আছে। কল কিছুতেই ধরবে না। শুধু শুধু ফারুককে বকা খাইয়ে নিও না।

__তাহলে কী করবো? তানিকে কল করি।

__লাগবে না তো।

__সকাল থেকে ছয়বার বমি করেছিস তারপরেও বলছিস লাগবে না?

__এমনিই সেরে যাবে।

মামনি আমার কথা না শুনে তানিকে কল করলো। আধা ঘন্টা পর ডাঃ তানিয়া এলেন। পুরাই ডাক্তারনি ভাব নিয়ে আমাকে চেক করলো সে। তারপর বলল-
__ইউরিন টেস্ট করাতে হবে। আর এখনি।

__থাক না তানি!

__থাকাথাকি নেই সোনাভাবী। বেশি কথা বলবে না। যা বলছি করো।

__আমার ইউরিনে কী ইনফেকশন হয়েছে?

__হুম

সত্যিই কন্সিভ হয়েছে কী না সেটা আমিও নিশ্চিত ছিলাম না। আর নিশ্চিত হওয়াটা সত্যিই দরকার। আর ইউরিনে ইনফেকশন তো হতেই পারে। তাই আমি ইউরিন টেস্ট করাতে আপত্তি করলাম না।
সে বাড়িতেই ইউরিন টেস্ট করলো। পাজি মেয়ে ইনফেকশন বলে প্রেগনেন্সী টেস্ট করে ঢাকে ঢোলে বাড়ি দিলো। চিৎকার করে উঠে মামনিকে জড়িয়ে ধরে বলল-
__মামনি তুমি দাদুন হতে চলেছো?

আমি হা করে তাকিয়ে রইলাম। মামনি তো খুশিতে কেঁদেই দিলেন। ভাঙা ভাঙা গলায় বললেন-
__আমার বাবুসোনার সন্তান!

নানুন এসে কিছু না বলে আমাকে জড়িয়ে ধরে বসে রইলেন। বাবা অফিসে আছেন। তানি বাবাকে ফোন করে গম্ভীর স্বরে বলল-
__বাবা সোনাভাবী গুরুতর অসুস্থ। তুমি আমানকে সাথে নিয়ে এখনি চলে এসো।

বাবাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে কল কেটে দিলো সে। তারপর সে নানানকে ফোন করলো। তাকেও গম্ভীর স্বরে বলল-
__আপনার ছোট রাণীর অবস্থা খুব খারাপ। আপনি বাড়িতে এলে তবেই তাকে হাসপাতালে নেয়া হবে।

নানানকেও কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তানি কল কেটে দিলো। আমি ওর কান্ড দেখে হতভম্ব হয়ে গেলাম।

বাবা আর আমান ভাই অফিস ফেলে ছুটে এলেন বাড়িতে। এসে দেখেন মামনির চোখে জল, নানুন আমাকে জড়িয়ে ধরে বসে আছেন। তানির মুখ গম্ভীর। বাবা ভীত স্বরে বললেন-
__কী হয়েছে?

কারও মুখে কোনো কথা নেই। হঠাৎ তানি চিৎকার করে বলল-
__বাবা তুমি দাদান হতে চলেছো।

বাবা হতভম্ব হয়ে আমার দিকে তাকালেন। লজ্জায় মরে যাই, মরে যাই এমন অবস্থা আমার। আমি মুখ তুলে কারও দিকেই তাকাতে পারছি না। বাবা আমার পাশে এসে বসে আমার মাথায় হাত রেখে বললেন-
__এত সুখের একটা খবর শুনে আমি কী বলবো বুঝে পাচ্ছি না। আমার নাতি নাতনি আসছে, এটা ভাবতেই তো…

এরমধ্যে নানানের গলার আওয়াজ পেলাম। তিনি বাড়ির ভেতরে ঢুকে চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় করে ফেলেছেন। তানি দরজায় দাঁড়িয়ে তাকে এই রুমে আসতে বলল। তিনি ছুটতে ছুটতে রুমে ঢুকলেন। মনে হচ্ছে উনি উড়ে টুড়ে এসেছেন। হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন-
__কী হয়েছে আমার ছোট রাণীর? কোথায় আমার ছোট রাণী?

সবাই স্তব্ধ হয়ে আছে। নানানের চোখমুখ আরও ভীত হয়ে গেল। তার দৃষ্টি বলছে, কেন আমাকে ঘিরে নিয়ে সবাই আছে?

নানান উদ্বিগ্ন হয়ে বললেন-
__কেউ কথা বলছো না কেন?

তানি নম্র স্বাভাবিক ভাবে বলল-
__নানান আপনার বান্দর নাতি বাবা হতে চলেছে।

নানান সোফায় বসে পড়লেন। হতবাক সুরে বললেন-
__সে এসব কবে করলো?

সবাই হতভম্ব হয়ে নানানের দিকে তাকালো। তখনও নানান বুঝতে পারেননি যে, সবার সামনে তিনি বেফাঁস কিছু বলে ফেলেছেন। নানান হয়তো ভেবেই অস্থির যে, তার শিশু সুলভ আলাভোলা নাতি কেমন করে আরেকটা শিশুর পিতা হতে চলেছে!


সীমান্ত বাদে সবাই বাড়িতে আছে। যেন আজ ঈদ। অনেক কিছু রান্না করার পরামর্শ চলছে। কিন্তু আমাকে ফেলে কেউ সরবে না। তাহলে রান্না কে করবে?
আমার জীবনের প্রথম এবং সেরা প্রাপ্তি হলো সীমান্ত। আর দ্বিতীয় প্রাপ্তি পেতে চলেছি। এটা পুরোপুরি পাবার জন্য আমাকে নয়টা মাস অপেক্ষা করতে হবে। এই মুহূর্তে আমার সীমান্তকে খুব করে আমার কাছে পেতে ইচ্ছে করছে। সে কখন আসবে কে জানে। এসেই কী রিয়্যাক্ট করবে তা নিয়েও আমি ভীত। না জানি আবার বালিশ দিবস শুরু হয়।

সে এলো রাত আটটায়। তার গাড়ির আওয়াজ শুনে সবাই হৈচৈ থামিয়ে চুপ করে রইল। তানি দরজার পর্দা একটা ফাঁক করে উকি দিয়ে দেখছে সীমান্ত বাড়ির ভেতরে ঢুকে কী করে। হঠাৎ তানি ধারাভাষ্যকার হয়ে গেল। উকি দিয়ে সে দেখছে আর বলছে-
__ সে এখন বাড়ির ভেতরে ঢুকলো। এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। মনে হচ্ছে সোনাভাবীকে খুঁজছে। মুখটা ম্লান হয়ে গেছে তার। কারণ চোখের সামনে তার বউ নাই। এখন একটু দূর থেকে সে কিচেনে উকি দিলো। কিচেনে কেউ নেই দেখে তার চোখমুখ হতাশ হয়ে গেল। এখন সে উপরে যাচ্ছে তার সোনাবউকে খুঁজতে।

সবাই হা করে তানির দিকে তাকিয়ে আছে। মিনিট দুয়েক পরে আমার নম্বরে কল এলো। সবাই বুঝে ফেলেছে যে, কে কল করেছে। কল রিসিভ করলাম-
__সোনাবউ তুমি কোথায়?

ভয়ে আমার গলার স্বর আটকে আছে। অনেক কষ্টে স্বর বাইরে এলো।
__মামনির রুমে।

__আমি সারাদিন পর বাড়ি ফিরেছি আথচ তুমি রুম থেকে বের হলে না? বাড়ির বাকী সবাই কোথায়? কাউকে দেখছি না কেন? বাড়ি এত নিঃস্তব্ধই বা কেন?

__তুমি এখানে এসো।

সে রাগ করে বলল-
__পারব না। আমি চেঞ্জ করছি।

কথাটা বলেই সে ফোন কেটে দিলো। আমার মুখটা মলিন হয়ে গেল। সবাই বেশ উৎসাহ নিয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে। দুই মিনিট না হতেই সে মামনির রুমে এলো। আমি শুয়ে আছি আর সবাইকে চুপচাপ দেখে সেও যেন স্তব্ধ হয়ে গেল। তার চোখমুখ জুড়ে ভয় ছেয়ে গেল নিমেশেই। আমার কী হয়েছে এই প্রশ্নটা করতেও যেন তার গলা ধরে আসছে। তার দৃষ্টি বলছে, না জানি ভয়ানক কী খবর সে শুনতে চলেছে। তবুও কৌতূহল চেপে রাখতে না পেরে সে বলল-
__কী হয়েছে?

সবাই সীমান্তর দিকে তাকিয়ে আছে। কেউ কিছু বলছে না। সে অসহায় চোখে আমাকে দেখছে। সারাটা দিনে আমার পেটে কিছুই রাখতে পারিনি। আয়নায় নিজেকে না দেখলেও বুঝতে পারছি আমার মুখটা শুকিয়ে আছে। আমি যে সুস্থ নেই সেটা যে কেউ দেখলেই বুঝতে পারবে। সীমান্তরও বুঝতে বাকী নেই। সে বেশ উৎকন্ঠা নিয়ে মামনির দিকে তাকিয়ে বলল-
__মামনি কী হয়েছে ওর? তাকে অমন দেখাচ্ছে কেন? ওর মুখটা শুকিয়ে আছে কেন? আর সবাই চুপ করেই বা আছো কেন?

তানি গম্ভীর মুখ করে তার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল-
__নিজেকে শক্ত কর ভাই। ভেঙে পড়া যাবে না।
সে আতঙ্কিত চোখে তাকিয়ে বলল-
__কী হয়েছে?

__তোর বউয়ের ভয়ানক রোগ হয়েছে।

সীমান্তর চোখ দুটো আরও ভীত হয়ে গেল।
__কী হয়েছে বলবি তো?

নানান সোফায় বসে ছিলেন। উনি উঠে দাঁড়িয়ে সীমান্তর কাঁধে হাত রেখে গম্ভীর মুখ করে ফিসফিস করে বললেন-
__কবে এসব হলো?

সীমান্ত অবাক হয়ে বলল-
__কী সব?

__বাহ্ মনে হচ্ছে কিছুই বুঝো না! অবশ্য আমরা এতদিন ভেবে এসেছি যে, তুমি কিছুই বুঝো না। এখন তো দেখছি সবই পারো।

__আমি কী করলাম সেটা বলবেন তো?

__এই যে তুমি আমার ছোট রাণীকে মা বানিয়ে দিয়েছো।

__মানে?

__মানে তুমি বাবা হতে চলেছো।

__মানে?

নানান মুচকি হেসে বললেন-
__বাবা হবার মানে বুঝো না? ভেতরে ভেতরে এতদূর চলে গেছো আর উপরে বুঝাচ্ছো কিছুই বোঝো না।

নানানের কথা শুনে সে হাবলার মতো হা করে দাঁড়িয়ে রইল। সবাই এবার একসাথে হাসতে শুরু করলো। শুধু আমিই লজ্জায় মাথা নিচু করে রইলাম। আর ভেবে অবাক হলাম যে, নানানের এমন সব কথাবার্তায় আমি ব্যতিত কেউ লজ্জা পেলো না। সীমান্ত আমার দিকে তাকালো, তার দৃষ্টিতে বিস্ময় নেই, সহানুভূতি নেই, ভালোবাসাও নেই। আছে শুধু….

বিঃদ্রঃ গল্পের কাহিনী এবং চরিত্র সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবতার সাথে গল্প কখনোই মিলবে না। জীবন কখনও গল্পের মতো সাজানো গোছানো হয় না। গল্পটা শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য লেখা হয়েছে তাই বিতর্কিত মন্তব্য প্রত্যাশিত নয়।

পরের পর্ব আসছে…..
Written by- Sazia Afrin Sapna

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে