“ভালোবাসার প্রান্ত”(পর্ব-১৩)
রুমে ঢুকে দেখি সে শুয়ে আছে। ঢং করে ঘুরতে নিয়ে যাবার কথা বলে এখন শুয়ে থাকা হচ্ছে! সব ছলনা। সবাই বলে মেয়েরাই নাকি শুধু ছলনা করে। এখন তো দেখছি ছেলেরাও কম যায় না! বরং এরা তো কয়েক ধাপ এগিয়ে। মুখ ভেংচিয়ে বললাম-
__ঘুরতে নিয়ে যেতে চেয়ে এখন শুয়ে আছো কেন?
__আমি ঐ বুড়োটাকে সাথে নিয়ে কোথাও যাব না।
__তাহলে অফিসে যাও। আমি নানানের সাথে ঘুরতে যাব।
__অফিসেও যাব না। ঘুমাবো আজ।
আমি আর কিছু না বলে সেজে গুজে রেডি হলাম। সে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলো, কিচ্ছু বলল না। আমি রেডি হয়ে রুম থেকে বের হতেই দেখি নানান গোল্ডেন কালারের পাঞ্জাবি পরে দাঁড়িয়ে আছেন। তাকে নতুন বরের মতো লাগছে। আমিও লাল শাড়ি পরেছি। বয়সের বিস্তর ব্যবধান থাকলেও দু’জনকে মনে হয় দারুণ মানাবে। সীমান্ত যদি ফটোগ্রাফারের কাজটা করতো তাহলে দারুণ হতো। কাঠ তক্তা তো তা করবে না। সে এসব পারে নাকি? পারে তো শুধুই হুংকার করতে হুহ।
ভাবলাম কফি খেয়েই বের হই। কফি বানিয়ে কিচেন থেকে বের হতেই দেখি সীমান্ত রেডি হয়ে বের হয়েছে। হলুদ রঙের গেঞ্জি পরেছে সে। এই গেঞ্জিটা আমার দেয়া প্রথম উপহার। এই ছেলেটা যে রঙের গেঞ্জিই পরুক না কেন তাকে চমৎকার লাগে। তার বাবরি চুল, মায়াবী চোখ, হাসি হাসি ঠোঁট সব মিলেই আমি ক্ষণে ক্ষণে নিজেকে হারিয়ে ফেলি। মাঝে মাঝে মনে হয় নিজেই নিজের বরকে নজর দিয়ে ফেলছি। কত শাকচুন্নি যে আমার বরকে হা করে চেয়ে দেখে তা আল্লাহই জানে। ওদের কারও ভালো হবে না (অভিশাপ)
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/
গাড়িতে তিনজন বসলাম। ডান পাশে সীমান্ত আর বাম পাশে নানান বসলেন। অনেকগুলো দিন পরে ঘুরতে বের হয়েছি। সত্যিই আমার খুব ভালো লাগছে। কিন্তু পাশের দু’জন বেজার মুখে জানালা দিয়ে বাহিরের দৃশ্য দেখছে। মনে হচ্ছে দুই রাজ্যের দুই রাজা। যুদ্ধ অনিবার্য এক রাজকন্যার জন্য। আর সেই হতভাগী রাজকন্যা সয়ং আমি। কখন যেন যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে। আমি মনে মনে আল্লাহ আল্লাহ করছি। সবকিছু ঠিকই ছিল। একটা কথায় নানা নাতির যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। নানান আমাকে জিজ্ঞেস করলেন আমার কী খেতে ইচ্ছে করছে? শুধু বলেছি আচার খেতে ইচ্ছে করছে। এটা শুনে নানান ড্রাইভারকে বললেন আচারের দোকানে যেতে কিন্তু সীমান্ত যেতে দেবে না। দু’জন চেঁচামেচি শুরু করে দিলো। আমি দুই কানে হাত চেপে ধরে বসে আছি। নানান ধমকে উঠে বললেন-
__বউ আচার খেতে চেয়েছে আর তুমি তাকে আচার খেতে দেবে না? কী এমন চেয়েছে সে?
সীমান্ত গম্ভীর স্বরে বলল-
__আচার খেলে তার পেটব্যাথা করবে। আমি কিছুতেই তাকে আচার খেতে দেবো না।
নানান হংকার ছেড়ে বললেন-
__ডাক্তারি করছো? যাকে তাকেই রোগী মনে হয়? সবাইকেই ট্রিটমেন্ট করতে ইচ্ছে করে? শেষমেশ ঘরের বউকেও ছাড়লে না? ঘরের বউকেও রোগী বানিয়ে ফেললে? তাহলে এখানে ঘুরতে কেন এসেছো? চলো তোমার হসপিটালে যাই। তোমার অপারেশন থিয়েটারে আমরা ঘুরে বেড়াবো।
নানানের একদমে বলা কথা শুনে সীমান্ত কিছুটা চুপসে গেল। তার চোখমুখ দেখে মনে হচ্ছে বেচারা ডাক্তার হয়ে ফাঁসি হবার মতো অপরাধ করেছে। সে আসামির মতো তাকিয়ে ক্ষীণ স্বরে বলল-
__বাহিরের আচার অস্বাস্থ্যকর তাই।
__এখন তার আচার খেতে ইচ্ছে করছে, তাহলে কী বাড়ি গিয়ে তাকে স্বাস্থকর আচার খাইয়ে আনবো?
__যখন বাড়িতে ফিরবে তখন আচার খাবে। তবে এক চামচ।
__নিকুচি করেছি তোমার চামচের! আজকাল কী চামচ দিয়ে মেপে রোগীর ট্রিটমেন্ট করো?
সীমান্ত অভিমানী সুরে বলল-
__আপনার ছোট রাণীকে ট্রিটমেন্ট করার সুযোগ কী সে আমাকে দিয়েছে? যেটা করতে বারণ করি সেটাই তো বেশি করে। সে আমাকে ডাক্তার মনে করে নাকি?
__তাহলে কী মনে করে?
__চোর ডাকাত নাইটগার্ড এসব মনে করে।
নানান চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললেন-
__কিহ?
__জিজ্ঞেস করে দেখেন তাকে।
আমি আসামির মতো তাকিয়ে রইলাম। নানান আমার দিকে বললেন-
__সে তোমার মন চুরি ডাকাতি করেছে সেই সূত্রে না হয় তুমি তাকে চোর ডাকাত মনে করতেই পারো কিন্তু নাইটগার্ড কেন মনে করো ছোট রাণী?
আমি আসামির মতো মাথা নিচু করে বললাম-
__যখন তার সাথে আমার প্রথম পরিচয় হয় তখন আমি তাকে নাইটগার্ড মনে করে ছিলাম। তাই এখনও তাকে নাইটগার্ড বলে ডাকি।
__নাইটগার্ড মনে করার কারণ?
__সে ঈদের দিনে অনেক রাতে মেসেজে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছিল আর সেখানে লেখা ছিল সে ডিউটিতে আছে। ঈদের দিন রাতে নাইটগার্ড ছাড়া আর কে ডিউটি করবে?
নানান হাহা করে হেসে উঠে বললেন-
__তখন সে নাইটগার্ড না হলেও এখন সে তার বউয়ের নাইটগার্ড তা আমি জানি। যাই হোক, এখন চলো আচার খাবে।
সীমান্ত বলল-
__বাহিরের কোনো আচার সে খাবে না। বাড়ি গিয়ে এক চামচ আচার খাবে।
আমি ঢোক গিলে করুণ সুরে বললাম-
__আমার আর আচার খেতে ইচ্ছে করছে না।
নানান সীমান্তর দিকে তাকিয়ে ধমকে বললেন-
__এই তোমার কারণে আমার ছোট রাণীর আচার খাওয়ার ইচ্ছেটাই মরে গেল।
এবার নানান আমার দিকে তাকিয়ে বললেন-
__কার সাথে প্রেম করে বিয়ে করেছো দেখো ছোট রাণী। এ তো দেখছি তুমি প্রেগনেন্ট হলেও আচার খেতে দেবে না।
নানানের কথায় আমি বিষম খেলাম। নানান বললেন-
__টেনশন করো না, আমি তোমাকে আচার খাওয়াবো।
⭐
আমরা একটা আইসক্রীমের দোকানে গেলাম। খুশিতে আত্মহারা হয়ে আইসক্রীমের বড় একটা বক্স হাতে নিতেই সীমান্ত বলল-
__এই সব আইসক্রীম তুমি এখন খাবে নাকি?
আমি আইসক্রীম পেয়ে এতটাই খুশি যে, হুজুকেই বলে দিলাম-
__হ্যাঁ সব খাবো।
সে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে বলল-
__কিহ?
আমি ভীত চোখে তাকিয়ে ক্ষীণ স্বরে বললাম-
__না, একটু খাবো।
__ছোট বক্স নাও।
__আচ্ছা।
নানান রেগে উঠে বললেন-
__ছোট বক্স নেবে কেন? কিপ্টামি শুরু করেছো? তুমি তো এমন ছিলে না। আর এসবের বিল আমি দেবো, তোমার এসব নিয়ে ভাবতে হবে না।
__আসলে এই বক্সের সব আইসক্রীম খেলে ওর ঠান্ডা লেগে যাবে। সর্দি লাগবে।
নানান আবার হুংকার ছেড়ে বললেন-
__আবার ডাক্তারি শুরু করেছো? রাস্তা ঘাট কিছুই মানছো না? এই চলো তো আগে হাসপাতালে বেড়িয়ে আসি। আমরা তো কোনো কালেও হাসপাতাল দেখিনি, আজ দেখবো।
এবার নানানের কথায় সীমান্ত ঘাবড়ে না গিয়ে দৃঢ় স্বরে বলল-
__আপনি যত যা-ই বলেন, আমি তাকে বেশি আইসক্রীম খেতে দেবো না। বড় বক্স নিক আপত্তি নেই তবে খাবে অল্প।
নানান ঝাঁজালো স্বরে বললেন-
__সে সবটুকু খাবে।
সীমান্ত বোঝানোর ভঙ্গিতে বেশ শান্ত স্বরে বলল-
__বোঝার চেষ্টা করেন! ওর কোল্ড এলার্জী আছে। ঠান্ডা খাবার বেশি খাওয়া যাবে না। বেশি খেলেই হাচি শুরু হবে।
নানান চোখ রাঙিয়ে বললেন-
__আবার ডাক্তারি?
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম-
__বাড়ি যাব, শরীর ভালো লাগছে না।
নানান বললেন-
__গাড়িতে বসে আইসক্রীম খাও। আমরা এরপর ফুচকা খেতে যাব।
ফুচকার দোকানে গিয়ে সীমান্ত দোকানদারকে বলল-
__কম ঝাল দেবেন।
সবাই জানে আমি ঝাল পছন্দ করি। নানান বললেন-
__কম ঝাল দেবে কেন? তুমি ঝাল খাও না, তোমারটায় ঝাল না দিক। কিন্তু ছোট রাণীরটায় কম দেবে কেন?
__বেশি ঝাল খেলে ওর পেটব্যাথা করবে। এমনিতেই এসব বাইরের খাবার অস্বাস্থ্যকর।
নানান এবার বিশাল হুংকার ছেড়ে বললেন-
__আবার ডাক্তারি? এই চলো তো আগে হসপিটালে যাই! একটা ক্যাবিন নিয়ে বসে থেকে খোশগল্প করবো। পৃথিবীতে কত রকমের রোগ আছে সব গল্প আজ ওখানে বসে করা হবে, চলো। আর ফুচকা না খেয়ে ওখানে বসে স্বাস্থ্যকর স্যুপ খাবো সবাই। আগে বললে তো আসার সময় বাড়ি থেকে স্যুপ বানিয়ে নিয়ে আসতাম।
সীমান্ত নানানের কথার জবাব না দিয়ে ফুচকা ওয়ালাকে বলল-
__কম ঝাল দেবেন।
নানান বললেন-
__তুমি পেট বিশেষজ্ঞ কবে থেকে হলে? তুমি তো সার্জারীর ডাক্তার।
__আমার কাজই তো পেট কাটাকুটি করা।
__তা ঝাল খেয়ে পেট ব্যাথা করলেও কী তুমি পেট কেটে ফেলো?
সীমান্ত হতভম্ব হয়ে নানানের দিকে তাকিয়ে রইল। নানান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন-
__ছোট রাণী বাংলা সিনেমা দেখতে চেয়েছে। এখন আমরা সিনেমা দেখতে যাব।
সীমান্ত বলল-
__বাংলা সিনেমা? এসব দেখার পরিবেশ আছে এখন? হলে গিয়ে কেউ মুভি দেখে নাকি? যত্তোসব পাগলামি কথাবার্তা!
__কীসের পাগলামি? তুমি কী বলতে চাইছো আমি আর ছোট রাণী পাগল? আর তুমি সুস্থ?
__আমি এসব বলছি না। আমি বলছি, হলে গিয়ে মুভি দেখাটা অস্বাস্থ্যকর। কতটা নোংরা পরিবেশ! আর বাংলা সিনেমা গুলোও তো দেখার মতো নয়। দেখলেই হাসি পায়। কোনো কাহিনী আছে এসব সিনেমাতে?
নানান রেগে উঠে বললেন-
__এই তুমি কী এখন হলের ট্রিটমেন্ট করাও শুরু করবে নাকি? সাথে তো বাংলা সিনেমার ট্রিটমেন্টও করবে বলে মনে হচ্ছে। ঠিক করে বলো তো কী বিষয় তুমি নিয়ে ডাক্তারি পড়েছো?
নানানের কথা শুনে সীমান্ত হাবার মতো তাকিয়ে রইল। নানান বললেন-
__আমার বিশিষ্ট ডাক্তার নাতি দেশের সব কিছু ট্রিটমেন্ট করে শেষ করে ফেলবে। আমি তো রাতারাতি ফেমাস হতে চলেছি। কী আনন্দ!
আমি বললাম-
__আমার মাথা ঘুরছে। বাড়ি চলো প্লিজ!
কথাটা বলেই আমি নিচে বসে পড়লাম। ওরা দুজনই আমার দিকে হতবিহ্বল চোখে তাকিয়ে রইল।
বিঃদ্রঃ গল্পের কাহিনী এবং চরিত্র সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবতার সাথে গল্প কখনোই মিলবে না। জীবন কখনও গল্পের মতো সাজানো গোছানো হয় না। গল্পটা শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য লেখা হয়েছে তাই বিতর্কিত মন্তব্য প্রত্যাশিত নয়।
পরের পর্ব আসছে…..
Written by- Sazia Afrin Sapna
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/