“ভালোবাসার প্রান্ত”(পর্ব-১১)

0
1605

“ভালোবাসার প্রান্ত”(পর্ব-১১)

আমি ভয়ে ভয়ে সীমান্তর দিকে তাকালাম। সে এখনো চোখ খোলেনি। আমি তার কথার কোনো জবাব দিলাম না। এখন যে ভয়ানক কিছু শুনতে হবে তা আমি নিশ্চিত। সে চোখ না খুলেই বলল-
__তুমিই চীনের প্রাচীর ভেঙে দিয়ে আমার এলাকায় চলে এসেছিলে। তারপর বলবো?

তার কথা শুনে খুব লজ্জা পেলাম কিন্তু তা বাহিরে প্রকাশ না করে স্বাভাবিক ভাবেই বললাম-
__না, বলতে হবে না। কারণ আমি সব জানি।

__কী জানো?
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/



__চীনের প্রাচীর তুমি ভেঙে দিয়ে আমাকে টেনে তোমার এলাকায় নিয়ে গিয়েছো। আইন ভেঙেছো, ডাকাত একটা। আজ আমি অবলা বলে..

আমি এমন ভাবে কথাগুলো বললাম যেন সে প্রাচীর ভাঙার সময় আমি তা নিজের চোখে দেখেছি। অথচ সত্যিটা হলো, আমি বিভোরে ঘুমিয়ে ছিলাম, এসব কিছুই জানি না। নিজের ভাব দেখে নিজেই হতবাক হলাম। এসব কী করে যে আমি পারি তা আমি নিজেই জানি না।
এবার সে চোখ মেলে তাকালো আমার দিকে। তারপর বিস্ময়ের সুরে বলল-
__কেমন করে এত বানিয়ে বলতে পারো তুমি?

আমি থতমত খেয়ে বললাম-
__বানিয়ে কেন বলবো? যা সত্যি তাই বলছি।

__তুমি অবলা এটাও সত্যি?

__হু

সে অমার হাত ছেড়ে দিয়ে নিজের মাথায় হাত রেখে বলল-
__ওহ মোর খোদা!

আমি মুখ ভেংচি কেটে বললাম-
__ঢং বাদ দাও আমার কাজ আছে।

সে দুষ্টুমির চোখে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল-
__আমার এলাকায় এসে অবলা সুন্দরী কী কী করেছে তা শুনবে না সোনা?

এই মানুষটা সারাক্ষণ আমাকে লজ্জা দেবার ধান্দায় থাকে। হ্যাঁ আমি লাজুক লতা বা লজ্জাবতী নই, তাই বলে কী আমার একটুও লজ্জা নেই? এমন করে লজ্জা দেবার কী আছে? নিষ্ঠুর একটা! কপট রাগ দেখিয়ে বললাম-
__না, শুনবো না।

সে মুচকি হেসে বলল-
__কেন সোনা?

আমি উঠে বসে চুল ঠিক করতে করতে বললাম-
__যা গল্পে লিখতে পারব না, তা শুনতেও পারব না।

সে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে বলল-
__তুমি এসব গল্পে লিখবে নাকি?

__হ্যাঁ লিখবো। সবাইকে বলে দেবো তুমি কত পাষাণ হৃদয়হীন কাঠ তক্তা।

__তুমি যে প্রাচীর ভেঙে আমার এলাকায় চলে এসেছিলে সেটাও লিখবে?

__লিখবো তো। আমার ডাকাত স্বামী রাতে প্রাচীর ভেঙে আমাকে ঘুমন্ত অবস্থায় তার এলাকায় তুলে নিয়ে গিয়েছিল। এসব পড়ে পাঠকরা তোমায় ছিঃ ছিঃ করবে। ছিঃ

সে যেন আমার কথায় হতভম্ব হয়ে গেল। তোতলিয়ে বলল-
__এএএসব মিইইইথ্যা কথা লিইইইখবে?

আমি নেত্রীদের মতো বিশাল ভাব নিয়ে বললাম-
__কেউ না জানলেও তুমি তো জানো যে, প্রাচীরটা তুমিই ভেঙেছো আর আমাকেও টেনে নিয়ে গিয়েছো। বিকজ ঘুমিয়ে গেলে ঝড় তুফান হলেও আমি টের পাই না। তুমি এই সুযোগটা নিছো ডাকুরাজ। এসব আমি লিখে দেশবাসীকে জানিয়ে দেবো। বিচার চাইবো।

সে মুখ কাচুমুচু করে বলল-
__কী মরতে যে লেখিকা বিয়ে করেছি আল্লাহ!

আমি ফিক করে হেসে বললাম-
__যে মরতে আমি ডাক্তার বিয়ে করেছি সেই মরতে তুমিও লেখিকা বিয়ে করেছো।

__ডাক্তার আবার কী করলো?

__ডাকাতি করলো।

__কিহ?

__খুলনার ঘোড়া ডিম পাড়ে।

কথাটা বলেই আমি মুচকি হেসে রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম।


আমি ফ্রেশ হয়ে নাস্তা রেডি করলাম। সীমান্ত নাস্তা করেই বের হবে। সে এসে ডায়নিংএ বসতেই নানান তার মুখোমুখি চেয়ারে বসে বললেন-
__বাহ্ তোমায় তো হেব্বি ফুরফুরে লাগছে হিরো! তা এই রূপের রহস্য কী?

নানানের কথায় আমার খুব হাসি পেলো। কিন্তু অস্থানে হাসলে বিপদ অনিবার্য। এবাড়িতে একজন মানুষ হুটহাট বাঘাকৃতি ধারণ করে। আর সেই বিশিষ্ট জন হলেন আমার স্বামী। তাই হাসি চেপে রাখলাম।
সীমান্ত অবাক হয়ে নানানের দিকে তাকিয়ে বলল-
__মানে?

নানান মুচকি হেসে বললেন-
__শ্বশুরবাড়ি থেকে কাল এলে ক্লান্ত হয়ে, রাত গেল এখন দেখছি তুমি ফুরফুরা হিরো হয়ে গেছো। তাই রহস্য জানতে চাইছি। কারণ আমিও এমন ফুরফুরা হতে চাই।

সীমান্ত কেশে গলা ঠিক করে নিয়ে বলল-
__কাল ক্লান্ত ছিলাম। রাতে ঘুমানোর পরে এখন ফ্রেশ লাগবে এটাই তো স্বাভাবিক।

__তা অবশ্য ঠিকই বলেছো। সুন্দরী বউ পাশে ঘুমালে ক্লান্তির চৌদ্দ গুষ্ঠি তো পালাবেই।

সীমান্ত কিছু না বলে খাওয়ায় মন দিলো। কিন্তু নানান কিছুতেই ছাড়লেন না। তিনি এক ধিয়ানে সীমান্তর দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছেন। সীমান্ত যে ভয়ে নানানের দিকে তাকাচ্ছে না, তা আমি বুঝতেই পারছি। নানান আমার দিকে তাকিয়ে বললেন-
__ছোট রাণী, নাস্তা করে রেডি হয়ে নাও।

আমি অবাক চোখে তাকালাম নানানের দিকে। আমি কিছু বলার আগেই সীমান্ত বলল-
__কেন রেডি হবে?

নানান বললেন-
__আমি তো তাকে নিতে এসেছি।

__আমার বউকে আপনি নিতে আসবেন কেন? আমি কী আপনার বউকে নিতে গেছি? আমার বউ কোথাও যাবে না।

__তুমি আমার বউকে নিতে যাবে কেন? আমার বউ তো নতুন বর চায়নি। আর আমিও তাকে মাঝ রাস্তায় গাড়ি থেকে নামিয়ে দিইনি।

__তার শাস্তি প্রাপ্য ছিল তাই দিয়েছি।

__একটা নতুন বর চেয়েছে বলে তুমি তাকে শাস্তি দেবে? তুমিও তো বলতে পারতে যে, তোমারও নতুন একটা বউ চাই!

__আমার মাথা কী খারাপ হয়ে গেছে? একটা পাগলিকে বিয়ে করে আমার জীবনটা তছনছ হয়ে গেছে। আবার বিয়ের কথা আমি এজীবনে মুখে আনবো না।

নানান বিস্ময়ের চোখে তাকিয়ে বললেন-
__তা কী করে সে তোমার জীবনটা তছনছ করলো? আহারে তোমার কত সুন্দর জীবন ছিল!

__ওসব বলা যাবে না। আর আমার বউ কোথাও যাবে না।

নানান দুষ্টুমির চোখে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন-
__তা বউয়ের মান ভাঙতে পেরেছো তো?

সীমান্ত কিছু না বলে নাস্তায় মন দিলো। নানান বললেন-
__একটু তো বলো হিরো।
তোমরা যদি না বলো হে
কেমন করে পটবে সে?
কেমন করে বউটা আমার
একটু ভালো বাসবে আমায়?
দেখেছো তোমার বউয়ের ছোঁয়াচে রোগ আমাকে ধরেছে! আমিও কবি কবি হয়ে গেছি!

কথাটা বলেই নানান হাহা করে হাসলেন। সাথে আমিও হাসলাম কিন্তু আমার গোমরামুখো সুয়ামী হাসলো না। সে যে পটানোর কথা বলা নিয়ে টেনশনে আছে তা বুঝতে পারছি। আসলে সে তো ধরা পড়ে গিয়েছে। বেশ হয়েছে! ঠিক হয়েছে! এখন ঠ্যালা সামলাও ডাক্তার সাহেব!

নানান বললেন-
__কেমন করে বউ পটাতে হয় সেই টিপসগুলো অন্তত দাও! দেখো না আজও আমি আমার বউকে পটাতে পারলাম না। কবে জানি সেও তোমার বউয়ের মতো বলে, “তুমি পুরোনো হয়ে গেছো, আমার নতুন বর চাই।” তাহলে তো সেরেছে।

কথাটা বলেই নানান হাসলেন। আমি সীমান্তকে খোঁচা মারার জন্য নানানকে বললাম-
__পুরোনোকে তো পুরোনো বলতেই হবে। নানুনেরও বলা উচিত।

নানান দুষ্টু হেসে বললেন-
__এখন আমি যদি বলি তিনিও পুরোনো হয়ে গেছেন তাহলে তো কেস উল্টো হবে। তিনি আমাকে ঘর ছাড়া করবেন। কী দুঃখ!

নানান সীমান্তর দিকে তাকিয়ে বললেন-
__হিরো তুমি তানির থেকে যে পটানোর টিপস গুলো শিখেছিলে সেগুলো অন্তত বলো!

সীমান্ত বিষম খেয়ে খকখক করে কাশতে শুরু করলো। আমি পানির গ্লাস এগিয়ে দিলাম। সে পানি খেয়ে দম নিলো কিন্তু নানানকে কিছু বলল না। নানান মুচকি হেসে বললেন-
__রাত জেগে ফিসফিস করে প্রেম করেছো, আর আমাদের বুঝিয়েছো যে, তুমি ভাজা মাছ উল্টে খাওয়া তো দূরে থাকুক, তুমি মাছই চেনো না। তোমার এই চুরি চুরি প্রেমের কাহিনী আমার এই বয়সেও মনে প্রেম জাগিয়েছে। শুধু প্রেমিকার অভাব বোধ করছি।

সীমান্ত বলল-
__প্রেমিকা চেয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেন।

নানান রোমান্টিক চোখে সীমান্তর দিকে তাকিয়ে বললেন-
__ভাবছি ছোট রাণীর সাথেই প্রেম করে অভিজ্ঞতা অর্জন করবো।

সীমান্ত চোখ কপালে তুলে বলল-
__সে খুব অভিজ্ঞ নাকি?

__সে-ই তো পৃথিবীর সেরা অভিজ্ঞ।

সীমান্ত মুচকি হেসে বলল-
__হ্যাঁ তার বিশাল অভিজ্ঞতা আছে। তার কথা শুনে ছেলেরা আগে দৌড়ে পালাতো। কী দারুণ মিষ্টান্ন বাঁশ দিতো সে। এই তো তার প্রেমের অভিজ্ঞতা।

__সে তুমি বাঁশ টাস যা-ই বলো, তোমার মতো আধা পাগলের সাথে ধৈর্য্য ধরে দীর্ঘদিন প্রেম করেছে সে। এমন ধৈর্যশীলার সাথে প্রেম করেই তো অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়।

সীমান্ত চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলল-
__কিহ আমি আধা পাগল?

__হ্যাঁ তখন আধা পাগলই ছিলে, এখন তুমি ফুল-পাগল।

সীমান্ত ন্যাকা রাগ দেখিয়ে বলল-
__কিহ?

__এতে কোনো সন্দেহ আছে হিরো?

__আমার তো আপনাকেই পাগল মনে হয়। আপনি আর আপনার ছোট রাণী দুজনই পাগল। জানেন সে বিয়ের আগে আমাকে কেমন করে জ্বালিয়েছে?

নানান খুব উৎসাহ নিয়ে উৎসুক চোখে তাকিয়ে বললেন-
__কেমন করে জ্বালিয়েছে? বলো বলো! তাড়াতাড়ি বলো!

সীমান্ত আমার দিকে তাকালো। এবার তার হুশও ফিরলো যে, সে ভুল বাক্য প্রয়োগ করে ফেলেছে। নিজেকে স্বাভাবিক করে সে বলল-
__থাক ওসব কথা।

নানান মুচকি হাসলেন। তার নাতিকে আমি কেমন করে জ্বালিয়েছি তা হয়তো তিনি আন্দাজ করে ফেলেছেন। বললেন-
__হু বুঝলাম। যেহেতু ছোট রাণী আর আমি দু’জনই পাগল তাই আমি ছোট রাণীর সাথেই প্রেম করবো।

সীমান্ত কপট রাগ দেখিয়ে ঝাঁজালো স্বরে বলল-
__আপনার বউ নেই? অন্যের বউয়ের সাথে প্রেম কেন করবেন?

__সেটা তোমার মতো আধা পাগল বুঝবে না।

সীমান্ত আমার দিকে তাকিয়ে বলল-
__এই যে প্রেমের রাণী, যাও তোমার রোমান্টিক লাভারের সাথে প্রেম করো। তোমার মনে তো সারাক্ষণ প্রেমের ফাল্গুন লেগেই থাকে। আমি তো কাঠ তক্তা। আমি তো ভালা না, তাই ভালা লইয়াই থাকো।

আমি নির্দোষ মুখ করে বললাম-
__আমি কখন প্রেম টেম করতে চাইলাম? এসব আমি পারি নাকি? তবে লাভারের সাথে প্রেম করাই যায়। আইসক্রীম ফুচকা খাওয়া, মুভি দেখতে যাওয়া। সাগর তীরে ঘুরে বেড়ানো। উফ্ ভাবতেই….

এইটুকু বলেই সীমান্তর চোখে আমার চোখ পড়তেই আমি থেমে গেলাম। সে বলল-
__ভাবতেই কী?

আমি ফিক করে হেসে বললাম-
__ভাবতেই নিজেকে নায়িকা মনে হচ্ছে। তবে নায়ক হলো নানান আর তুমি একটা ডাক্তারের রোলে আছো। নায়িকা অসুস্থ হয়ে পড়লে তোমাকে ডাকা হবে।

আমার কথা শুনে নানান হাহা করে হেসে উঠলেন। রাগী বাঘটাও হেসে ফেললো। আমি আর বাকী থেকে কী করবো? কাউকে হাসতে দেখলে আমি আবার না হেসে থাকতে পারি না। কী জ্বালা!

বিঃদ্রঃ গল্পের কাহিনী এবং চরিত্র সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবতার সাথে গল্প কখনোই মিলবে না। জীবন কখনও গল্পের মতো সাজানো গোছানো হয় না। গল্পটা শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য লেখা হয়েছে তাই বিতর্কিত মন্তব্য প্রত্যাশিত নয়।

পরের পর্ব আসছে…..
Written by- Sazia Afrin Sapna

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে