ভালোবাসার প্রজাপতি পর্ব – ৩

0
1165

#ভালোবাসার প্রজাপতি
#তাসনিম তামান্না
#পর্ব-৩

গভীর রাত নিজত্বদ্ধ চারিদিক মাঝে মাঝে কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দ ভেসে আসছে। আফরা ঘুমাচ্ছে কিন্তু ঘুমের ভিতর অসত্বি অনুভব করছে শান্তিতে ঘুমাতে পারছে না। আফরা ঘুমের মধ্যেও অনুভব করলো ওকে কেউ গভীর ভাবে দেখছে। ঘুম থেকে উঠে লাইট জ্বালিয়ে দেখেছে কিন্তু কাউকেই দেখতে পাই নি। তাই অসত্বি নিয়েই ঘুমিয়েছে রাতে।

সকালে ঘুম ভাঙতেই ডান হাত নাড়াচাড়া করতে পারছে না দেখে হাতের দিকে তাকাতেই চমকে গেলো আফরা। ইশরাক ফ্লোরে বসে আফরার হাত দু’হাতে ধরে বেডে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। আফরা বিষফরিত চোখে তাকিয়ে আছে ভ্রম নাকি সত্যি সেটাই বুঝতে পারছে না। আফরা হাত টানাই ইতিমধ্যে ইশরাককের ঘুম পাতলা হওয়ায় ঘুম ভেঙে গেছে। আফরার হাত ছেড়ে দুহাত দুদিকে দিয়ে আলসামী ছেড়ে বলল

-‘গুডমর্নিং বউ’ (ইশরাক)

আফরার এবার বিশ্বাস হলো এটা ভ্রমও না স্বপ্নও না এটা সত্যি! গগন ফাটানো চিৎকার দিতে যাবে তার আগেই ইশরাক ব্যাপারটা বুঝতে পেরে আফরার মুখ চেপে ধরে কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল

-‘ইশ বউ এখন চিৎকার করলে কিন্তু সবাই তোমার রুমে চলে আসবে আর তোমাকে আমাকে একসাথে দেখে কি ভাবে বলো তো?’

আফরা শান্ত হলো সত্যি তো কি বলবে সবাই খারাপ ভাবতে দুমিনিট ও লাগবে না। আফরা অসহায় মুখ করে তাকালো ইশরাক আফরার মুখ ছেড়ে দিয়ে দূরে দাড়িয়ে বলল

-‘আমি রুমে যাচ্ছি আমার জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে আসো’

-‘আমি?’

-‘তুমি ছাড়া তো আর কাউকে দেখছি না’

আর কিছু না বলে ইশরাক রুম থেকে প্রস্থান করলো। আফরা কিছুক্ষণ থম মেরে বসে থেকে ঘুমান্ত আরার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে উঠে ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরের দিকে গেলো।

রান্নাঘরে গিয়ে দেখলো শিউলি বেগম চা বানাছে।

-‘চাচি ইশরাক ভাইয়া কফি খেতে চাইছে’

-‘ওমা তাই নাকি ও কি ঘুম থেকে উঠে গেলো? এতো তাড়াতাড়ি! ‘

-‘হ্যাঁ। তাই তো দেখলাম’

-‘আচ্ছা আমি কফি বানাছি। তুই একটু চাগুলা আয়রা, আর আম্মাকে দিয়ে আয় অয়ন তো মনে হয় না ঘুম থেকে উঠছে?’

-‘না ভাইয়াকে তো দেখলাম না’

-‘আচ্ছা যা এগুলা নিয়ে যা আর শোন আরা ঘুম থেকে উঠলে গরম দুধ আছে হাড়িতে ওকে খায়িয়ে দিস’

আফরা ‘আচ্ছা’ বলে চলে গেলো।
.
.
খাবার টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছে সবাই আর টুকটাক কথা বলছে। আফরা আরাকে খায়িয়ে দিয়ে নিজেও খেতে বসলো। হঠাৎ অয়নের ফোন বেজে উঠলো সবাই চুপ হয়ে গেলো।

-‘হ্যালো! আসালামুআলাইকুম কে?’

-‘…….

-‘ওহ আচ্ছা এখানেই আছে দিচ্ছি….আফরা তোর ফেন্ড ফোন দিয়েছে নে কথা বল’

আফরা মুখে খাবার তুলতে গেলেও তুললো না। অয়নের ফোন কানে নিলো। ওপর পাশ থেকে ধমকানোর আওয়াজ আসলো যা সবাই অস্পষ্ট ভাবে শুনতে পেলো।

-‘শয়তান, বিয়াদ্দপ ছেমড়ি তুই ফোন ইউস করিস কি করতে?তোর ফোন কোথায় থাকে?’

কথাগুলা বলে রাণী অাফরার একমাত্র বেষ্টু রাগে ফোঁস ফোঁস করতে লাগলো। আফরা শান্ত কন্ঠে বলল

-‘কেনো কি হইছে এমন করছিস কেনো?’

আফরার কথা যেনো আগুনে ঘি ঢালার মত কাজ করলো রানী দাঁতে দাঁত চেপে বলল

-‘আজ যে রেজাল্ট দিবে সে খেয়াল আছে তোর নাকি গুলে খেয়ে ফেলছিস?’

আফরা অবাকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে খাবার রেখে দাড়িয়ে গিয়ে জোরে বলল

-‘কিহ! কখন? কবে? কি ভাবে?’

-‘ঢং করবি না আজ দিবে দুপুর ১২টার দিকে দোস্ত আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে কি হবে কি করবো কিছু বুঝতেছি না তার মধ্যে তোর কাল রাত থেকে ফোন বন্ধ আচ্ছা যা তোর ফোনটা ওন কর আমি রাখছি’

রানী নিজের মতো বকবক করে রেখে দিলো। আফরা মুখ কালো করে। ফোন টেবিলের ওপরে রেখে কারোর দিকে না তাকিয়ে রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো। উপস্থিত থাকা কেউই কিছু বুঝতে পারলো না আফরার কি হয়েছে। এভাবে চলে যাওয়ায় শিউলি বেগম, অয়ন কয়েক বার ডেকেছিল ঠিকি কিন্তু আফরা কোনো উত্তর দেয় নি।

-‘হঠাৎ মেয়েটার আবার কি হলো?’ (শিউলি বেগম)

-‘ওরে নিয়ে টেনশন করে লাভ নাই পেটে টান পড়লে নিজে এসে খেয়ে নিবে’

রাহেলা বেগমের কথা কারোরই পছন্দ হলো না। রাহেলা বেগমের কথায় কান না দিয়ে ইশরাক বলল

-‘যে ফোন দিয়েছিল তার কাছে ফোন দিয়ে শোন তো কি হইছে?’

শিউলি বেগম ও ইশরাককের কথায় সাই দিলেন। অয়ন ওদের কথা মতো যে নম্বর থেকে ফোন আসছিল ঔ নম্বরে ফোন দিলো কিন্তু বিজি দেখাছে দেখে বলল

-‘ফোন যাচ্ছে না বিজি দেখাছে’

ইশরাক বিরক্তিতে ‘চ’ উচ্চারণ করলো। শিউলি বেগম চিন্তিত হয়ে বললেন

-‘মেয়েটা সকাল থেকে চা’টাও খাই নি’
.
.
সকালে খাওয়া দাওয়া পাট চুকিয়ে ইশরাক,অয়ন বসে আছে। অয়ন আর ইশরাককের ফেন্ডদের কাছে ফোন দিয়ে কনফার্ম হচ্ছে কাল ওরা দেখা করবে কি না। ওরা আনন্দসাথে সাই দিয়ে বলতেছে আসবে। সবার সাথে কথা শেষ করে এটা দীর্ঘ শ্বাস নিলো অয়ন। ইশরাক আর অয়নের মাঝক্ষানে আরা বসে চিপস খাচ্ছে আর সারা হাত মুখে মাখাচ্ছে। অনেকক্ষণ হলো সেই যে আফরা দরজা বন্ধ করছে আর খুলেনি। ইশরাককের আফরার জন্য কেমন অস্থির অস্থির লাগছে। ইশরাক আর অস্থিরতা চেপে রাখতে না পেরে বলল

-‘ভাই আফরা এতোক্ষণ রুমে কি করছে’

আরা আফরার নাম শুনেই বলল

-‘আমি মাম্মামনিল কাছে যাবো’

অয়ন নিউস ফিড স্কোল করছিলো। ওদের কথা শুনে বলল

-‘আরা মা যা দেখে আয় তো আফরা কি করছে’

অয়নের কথা মতো আরাও ছোট গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গেলো আফরার রুমের দিকে। ছোট হাত দিয়ে দু’বার দরজায় থাবা দিয়ে বলল

-‘মাম্মা ও মাম্মামনি কই তুমি দলজা খোলো না আমি তোমাল কাছে যাবো’

আরা ডাকতেই খট করে দরজা খুলে গেলো।আরা রুমে ডুকতেই আবার দরজা বন্ধ করে দিলো আফরা। কেউ আফরার মুখটাও দেখতে পেলো না। ইশরাক বিরক্তি নিয়ে বলল

-‘দূর’

অয়ন ফোন টিপতে টিপতে দাড়িয়ে গিয়ে হাঠাৎ আফরার রুমের দরজার কাছে গিয়ে বলল

-‘আফরা দরজা খোল এডমিট কার্ড দে’

ইশরাক কিছু না বুঝে বলল

-‘তুই ওর এডমিট কার্ড নিয়ে কি করবি?’

-‘হাদা আজ আফরার রেজাল্ট দিবে’

-‘ওয়াট!’

অয়ন আরো কয়েকবার ডাকলো অাফরা বা আরার কোনো শব্দ পাওয়া গেলো না এবার অয়ন রেগে গিয়ে বলল

-‘আফরা তুই দরজা খুলবি না-কি দরজা ভাঙবো?’

ইতিমধ্যে শিউলি বেগম, রাহেলা বেগম, আয়রা এসে ব্যাপারটা বোঝার ট্রাই করছে।

-‘অয়ন কি হইছে এভাবে চেচাচ্ছিস কেনো?'(শিউলি বেগম)

-‘আম্মু আফরার দরজার খুলতে বল আর এডমিট কার্ড দিতে বলো আজ ওর রেজাল্ট দিবে আর ও দরজা বন্ধ করে রুমে বসে আছে’

ওরা অবাক হলো। আরো কয়েক বার জোরে জোরে দরজা ধাক্কা দিতেই আফরা দরজা খুলে বেড়িয়ে এতো। আফরা কে দেখেই বোঝা যাচ্ছে কেঁদে কেটে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে,এলোমেলো চুল। ইশরাক থমকালো অাফরার এমন রূপ দেখে। কিন্তু আর কেউ অবাক হলো না।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে