#ভালোবাসার_পরিনতি
#লেখা_ইভানা
#পার্ট_১০
রাত ১০টা সময় প্রচন্ড প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করছি। মাকে ডাক দেওয়ার শক্তিটুকু পাচ্ছি না, রাফিসা ফোনে গেম খেলছে ওকে কোনো মতে বললাম,
-তোমার নানুকে ডেকে নিয়ে আসো
-আচ্ছা।
রাফিসা মাকে ডাক দেওয়ার আগে মা গরম দুধ নিয়ে আসে। আমাকে এই অবস্থায় দেখে তাড়াতাড়ি হাত থেকে দুধের গ্লাস টেবিলের উপর রেখে ভাইয়া, ভাবিদের ডেকে আমাকে হসপিটালে নিয়ে গেলো।
জ্ঞান ফিরে দেখি সবাই বাচ্চাটাকে আদর করছে। কে কোলে নিবে সেটা নিয়ে তর্ক, এ বলছে এখন কোলে নিবো আবার ও বলছে আমি কোলে নিবো। সবাই খুব খুশি।
তিহান ভাইয়া আমার পাশে বসে আছে। আমার জ্ঞান ফিরেছে দেখে তিহান সবাইকে বললো,
-ইভার জ্ঞান ফিরেছে বেবিটা ওর কাছে দেও।
মা এসে আমার কাছে বেবি দিলো।ছেলেটার মুখ দেখে সব কষ্ট এক নিমিশে ভুলে গেলাম। অনেক রাত হয়েছে তাই সবাই কিছুক্ষণ থেকে বাসায় চলে গেলো। রাতে তিহান একা থেকেছে।
খুব সকালে ঘুম ভেঙ্গে গেছে। চোখ গেলো তিহানের দিকে ও চেয়ারের সাথে হেলান দিয়ে ঘুমাচ্ছে। মানুষটা সত্যি আমার জন্য অনেক করেছে পরিবারের সাপোর্টর সাথে ও আমার শক্তি ছিলো। ছায়ার মতো তিহান আমার সাথে ছিলো, অনেক বার মনে করেছি ও আমাকে দয়া করছে কিন্তু না আমার ভুল ভেঙ্গেছে। তিহান যা করছে সব মন থেকে ভালোবেসে করেছে।
আমি এক ধ্যানে তিহানের দিকে তাকিয়ে আছি ওর ঘুম ভেঙ্গে গেছে আমাকে বললো,
-তোর কি অসুস্থ লাগছে?
-না, আমি ঠিক আছি।
বাবুটাও ঘুম থেকে উঠে গেছে। তিহান কোলে নিয়ে হাটছে আর কতো কথা বলছে। মনে হচ্ছে বাবা -ছেলে কথা বলছে।
-দেখ ইভা তোর ছেলের হাসি কি মিষ্টি, উম্মাহ আমার সোনা বাবা।
-হাহাহাহ্ ভাইয়া তুমি তো ওর মতো বাচ্চা হয়ে গেছো।
-একদম ভাইয়া বলবি না, ছেলের বাবা হয়ে গেলাম আর এখনও ভাই ভাই করে।
-কি বলছো এসব ভেবে বলো।
-আমি ঠিকই বলছি, ওর বাবা আমি হবো। এবার তোর আর কোনো কথা শুনবো না
-এটা হয় না।
-হয় কি না তা আমি বুঝে নিবো।
-একটা কথা ছিলো বলবো?
-তোর হাজারটা কথা শুনতে রাজি আছি, তুই বল?
-একটা স্কুলে জবের জন্য এ্যাপলাই করেছিলাম, ওনারা ইন্টারভিউ দিতে ডেকেছে।
-খুব ভালো কথা, তুই জব করলে আমার কোনো আপত্তি নেই। তোকে আমি নিজে ইন্টারভিউ দিতে নিয়ে যাবো।
-তুমি খুব ভালো ভাইয়া।
-আবার ভাইয়া বললে মাইর দিবো
-হাহাহাহ্
রাফিসা এসে ভাইকে কোলে নিয়ে কতো আদর করছে। তিন্নি, তিয়াসও কম না ওরাও ছোট ভাইকে নিয়ে খুব আদর করছে। একটা বাচ্চা আসায় সবার মুখে হাসি। কিন্তু যে বাচ্চার বাবা ছিলো সে খুশি হতে পারি নি। আজও তার কথা ভাবলে চোখে পানি আসে। মা আমার পাশে বসে বললো,
-মা রে এই খুশির দিনে চোখে পানি আনতে নেই। ওরা তো তোর সব এখন আর কষ্ট পাওয়ার সময় না।
-হ্যাঁ মা আমি আর কষ্ট পাবো না।
-আমার সোনা মেয়ে
চার দিন হসপিটালে সারাক্ষণ তিহান সাথে ছিলো, অনেক করে বলেছি বাসায় যেতে কিন্তু না তার এক কথা আমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে তার ছুটি হবে তার আগে না।মা,বাবা,ভাইয়া বাবুকে নিয়ে আগে গাড়িতে গিয়ে বসেছে। আমি আর তিহান হসপিটাল থেকে বের হতে চোখ গেলো রোহানের দিকে সাথে নিশিতাও ছিলো।
একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে ওদের এরিয়ে যেতে লাগলাম তখন নিশিতার আমার কাছে এসে বললো,
-কেমন আছো?
-আলহামদুলিল্লাহ, আপনি?
-ভালো। সামান্য একটা কাজের মেয়ে হয়ে এতো নামি-দামি হসপিটালে কি করছো?
-সেটা আপনার না জানলেও চলবে।
রোহান এসে বললো,
-যার তার সাথে পাবলিক প্লেসে কথা বলটা আমার একদম পছন্দ না, এখান থেকে চলো।
-না দাঁড়াও শুনি ওর দিনকাল কেমন যাচ্ছে আর আমাদের বাসায় কাজের লোকের দরকার আছে ওকে রাখলে ভালো হয়।
তিহান এবার রেগে বললো,
-আপনি কাকে কাজের লোক বলছেন হ্যাঁ? জানেন আপনার স্বামীর আসল কুকীর্তি কি? এই মেয়েটা আপনার স্বামীর প্রাক্তন স্ত্রী।
-মানে কি?
-মানে খুব সহজ আপনার স্বামীর প্রাক্তন স্ত্রী যাকে কাজের লোক বলছেন সে ছিলো তাকে ঠকিয়ে আপনাকে বিয়ে করেছে এবং আপনাকেও ঠকিয়েছে মিথ্যা কথা বলে। ইভা চার মাসের প্রেগনেন্ট ছিলো তখন ডিভোর্স দিয়েছে ভাবতে পারছেন কতোটা নিচু মনের মানুষ। আপনার টাকার লোভে পরে বিয়ে করেছে এখন আপনার থেকে বেশি টাকা আওলা মেয়েকে পেলে আবার যেনো বিয়ে না করে সেদিকে নজর রাখবেন।
-তিহান চুপ করে, চলো এখন। (ইভা)
-কাজটা ঠিক করিস নি (রোহান)
-কাজটা ঠিক করেছি কি না তা আপনার থেকে জানার কোনো ইচ্ছে নেই (তিহান)
-তোমার মতো খারাপ লোকের বেবি আমি রাখাবো না, আজ-ই এবোয়শন করবো। (নিশিতা)
নিশিতা রেগে চলে যাচ্ছে, পিছনে রোহানও যাচ্ছে।
-তোমার এতোটা রাগ হওয়া দরকার ছিলো না, ওদের মতো করে তো ওরা ভালো ছিলো।
-ও তোকে কষ্ট দিবে আর আমি চোখের সামনে এসব সহ্য করতে পারবো না।
-উপর আল্লাহ একদিন ঠিক শাস্তি দিবে তো।
-আমিও চাই ওর কঠিন শাস্তি হোক
-শাস্তির আগুন তো তুমি শুরু করিয়ে দিলে
-হাহাহাহ্, এটা ওর প্রাপ্য ছিলো।
বাসায় সারাক্ষণ বাচ্চাদের হৈ-হুল্লোড় লেগে আছে। তিহান বাসায় এসে কিছু সময় ঘুমিয়ে আবার লেগে পড়েছে বাচ্চাদের সাথে খেলতে।
ফুপি এসে বললো,
-জানিস ইভা গত ছয় বছরে তিহানকে এরকম খুশি দেখি নি। তোর বাচ্চাদের নিয়ে আমার ঘর খুশিতে ভরে দে মা।
-ফুপি তুমি আবার শুরু করলে
-মরার আগে তোদের সুখী দেখতে চাই, আমার কথাটা শোন
-আচ্ছা তোমার কথা শুনবো, এখন আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেও তো আমি ঘুমাবো।
-হুম দিচ্ছি
তিন দিন পরে রোহানের মা বাবা দেখতে এসেছে। তারাও খুব খুশি হয়েছে। রোহানের সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই।
রাতে বাবা আর ফুপি আমার রুমে এসে বললো,
-দশ দিন পরে তোর আর তিহানের বিয়ে হবে, আমার কথার নড়চড় হবে না (বাবা)
-না বাবা আমার একটু সময় চাই।
-তোকে অনেক সময় দেওয়া হয়েছে, আর সময় দিতে পারবো না (ফুপি)
তিহান এসে বললো,
-ওকে বিয়ের জন্য জোর করতে হবে না আমি আমেরিকা চলে যাচ্ছি খুব তাড়াতাড়ি।
চলবে,,,,,