#ভালোবাসার_দূরত্ব (পর্ব 10)
#লেখনীতে_নাফিসা_আনজুম
,,
,,
,,
সময় গতিশীল,,দেখতে দেখতে একটা মাস চলে গেলো, কিন্তু সেদিনের মতো করে ওনাকে আর পাওয়া হয় না।এখন চাইলেও আর খুব সহজে ওনার সাথে দেখা হয় না। উনি ওনার কাজ নিয়ে ব্যাস্ত, আর আমারো সামনে পরীক্ষা। সব মিলিয়ে আমাদের দেখা খুব কম হচ্ছে।
মাঝে মাঝে খুব ভয় করে, কখনো আমাদের #ভালোবাসার_দুরত্ব যেনো না হয়।
চারিদিকে সন্ধ্যার নেমে এসেছে,পাখিরা সব নিজ নিজ নীড়ে ফিরছে। ওদের সঙ্গীদের অপেক্ষার অবশান ঘটলেও আমার অপেক্ষার অবসান ঘটে না। কেনো এমন করে বদলে গেলো উনি। একবারো কি মনে পরে না আমার কথা। কিন্তু আমার যে খুব কষ্ট হয়, আমি কিভাবে বোঝাবো ওনাকে।
আমাদের বিয়ের তিনদিন পরেই ওনার অফিসে বড় কোনো প্রজেক্ট এর জন্য ওনাকে আমেরিকা যেতে হয়। যদিও যাওয়ার আগে বলে গেছে,
-আমি চলে যাচ্ছি জন্য মন খারাপ করোনা, আমি খুব তারাতারি ফিরে আসবো। ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করবে আর নিজের যত্ন নেবে।
সেদিন শুধু মাথা নিচু করে ছিলাম, কেনো জানি এবার বিদায় দিতে মন চাচ্ছিলো না। মনটা বার বার কেঁপে উঠছিলো। মনে হচ্ছিল বুকটা ফেটে যাচ্ছে।
তবুও ওনার কথা রাখতেই হাসিঁ মুখে ওনাকে বিদায় জানিয়েছি। কিন্তু তারপর তিনদিন যাবত শুধু কান্নায় করে গেছি।ওনার সাথে কথা বলার পর একটু ভালো লেগেছিলো, কিন্তু কয়েকদিন থেকে ঠিকভাবে কথাও হচ্ছে না।
রাত নেমে এসেছে, ঘরে এসে দরজা লাগিয়ে দিয়ে ভাবতে লাগলাম আগের দিনগুলো। এভাবে কত রাত যে না ঘুমিয়ে পার করে দিচ্ছি গুনা নেই। সারারাত জেগে ভোরের আগে আগে চোখঁ লেগে আসে।
ঘুম ভাঙলো পাখির কিচিরমিচির শব্দে,, আবারো একটা রাত চলে গেলো কিন্তু আমার অপেক্ষার শেষ নেই।
পরেরদিন মামার বাড়িতে ডাক পরলো, আম্মু আব্বু সহ গেলাম। দেখি যে মামা মামি কেমন থমথমে মুখে বসে আছে। আমাকে দেখেই মামি রেগে গিয়ে বললো,,
এই মেয়েটার জন্যই আমার সবকিছু শেষ হয়ে গেলো, ভেবেছিলাম পরির মতো একটা মেয়েকে ছেলের বউ বানাবো। শেষে কি না এই মেয়ে আমার ছেলের কপালে ঝুলে গেলো। কি করছিস আমার ছেলেকে,যার জন্য ও তোকে বিয়ে করলো।
যে মামি অপছন্দ করলেও কখনো বড় কথা বলে নি আজ তিনি আমাকে এতো বড় বড় কথা বলতেছে। আব্বু আম্মু মাথা নিচু করে আছে।
মামা : আআহহ সাবিনা, কি হচ্ছে কি এসব, নেহার
কি একার দোষ তোমার ছেলেই তো ওকে বিয়ে
করেছে
মামি : হ্যাঁ অবশ্যই এই মেয়েটা আমার ছেলেকে
ফাঁসিয়েছে, না হলে ও কখনই এই মেয়েকে
বিয়ে করতো না
আম্মু: ছিহ এসব কি বলছেন ভাবি, আমার মেয়ে
ওকে ফাঁসাবে কেনো,
মামি : তুমি চুপ করো, তুমিও তো জানতে তাই না,
চুরি করে বিয়ে করিয়েছো যাতে সব সম্পত্তি
তোমার মেয়ের হয়ে যায়, আমি কি বুঝি না
আম্মু মাথা নিচু করে ডুকরে কেঁদে উঠলো।আমরা তো সম্পত্তির লোভ করি নি ভাবি, ছেলে মেয়ে দুটো দুজনকে ভালোবেসেছিলো শুধু।
আর তোমরা সেটারি সুযোগ নিলে, খুব তো তোমার মেয়েকে লেলিয়ে দিয়েছিলে আমার ছেলের পি.এ হতে। তখনি বোঝা উচিত ছিলো আমার।
দেখো ভাবি, সামিরের কথায় আমি নেহাকে আফিসে পাঠিয়েছি, না হলে আমি কখনই পাঠাতাম না।
হ্যাঁ হ্যাঁ এখন তো সব আমার ছেলের দোষ, তোমরা যে সবাই প্লান করে এসব করেছো সব বুঝেছি আমি।
সাবিনা, এবার কিন্তু বেশি বেশি ভলে ফেলছো তুমি,,
আমি কিচ্ছু বেশি বলতেছি না,সবাইকে আসতে বলেছি আসুক আজকে সবাই।
,,
আসলে সামির চাচ্ছিলো এখন তো ও বাড়িতে নেই, উর আম্মুর সাথেও বেশ কিছুদিন ধরে কথা বলতেছে না। সাবিনা বেগম আবার একমাত্র ছেলেকে বেশিদিন দূরে রেখে থাকতে পারে না। তাই বাবার সাথে কথা বলে সামির ওর আম্মুকে সব জানায়, সামির ভেবেছিলো ওর কথা ভেবে সাবিনা বেগম নেহাকে আর কিছু বলবে না।
কিন্তু সাবিনা বেগম ছেলের বিয়ে নিয়ে খুব আশায় ছিলেন, হুট করে নেহাকে মানতে পারছে না উনি।
,,
আমি একপাশে চুপচাপ বসে আছি, আম্মু কান্না করেই যাচ্ছে,মামা আম্মুকে বোঝাচ্ছে। আব্বুও চুপচাপ মাথা নিচূ করে আছে।
আমার জন্য আব্বু আম্মুকে এতো অপমান সহ্য করতে হচ্ছে।
এর মধ্যে বড় খালামনি ছোট খালামনি চলে আসে।
ছোট খালামনি: দেখো আমি আগেই ভেবেছিলাম রশনিকে পালাতে সাহায্য করেছে এই নেহা। আসলে নিজে সামিরের সাথে ইটিশ পিটিশ করেছে এ জন্যই নেহাকে ভাগিয়ে দিয়েছে
আম্মু : ছোট আপা,তুই এসব কি বলছিস
আমি ভূল কি বললাম। এখন তো বুঝলাম কেনো পালিয়ে দিয়েছে।
সবাই নানারকম কথা বলতেছে সবার কথা শুনে নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে। আর সামির উনি কিভাবে পারলো এইভাবে আমাকে একা এসবের মধ্যে রাখতে।
আম্মু, আম্মু আবারো কেমন যেনো করছে,
আব্বু : আহিরা এই আহিরা কি হয়েছে তোমার
মামা : আহিরা চোখঁ খোল
বড় খালামনি: ভাইজান হাসপাতালে নিয়ে যেতে
হবে।
প্রায় একঘন্টা ধরে হসপিটালে বসে আছি, আমি আব্বু মামা আর বড় খালামনি। ডাক্তার এখনো একবারো বের হয় নি।
মামা বললো সামির ভাইয়া নাকে দেশে আসবে আজকেই। তাই মামিকে আজকে ওসব বলেছে। ভেবেছিলো বুঝে নিবে কিন্তু উল্টোটা হয়ে গেলো। মামা বলেছে আমরা হাসপাতালে, এখন হয়তো হাসপাতালেই আসছে।
প্রায় একঘন্টা বিশ মিনিট পর ডাক্তার বের হয়ে আসলো মাথা নিচু করে।
ডাক্তার ,, আংকেল আমার আম্মু এখন কেমন আছে, আম্মু ঠিক আছে তো
মামা: হ্যাঁ এখন কি সুস্থ
সবাই অধীর আগ্রহে ডাক্তারের মুখপানে চেয়ে আছে,,
কিন্তু ডাক্তার যে এমন কথা বলবে সেটা সবার ভাভনার বাহিরে ছিলো,,
ডাক্তার: আপনাদেরকে শান্তনা দেওয়ার মতো ভাষা আমার নেই। কষ্টের হলেও সত্যিটা আপনাদের মানতে হবে। she is de*ad। স্টক করেছেন উনি। আমরা আমাদের দিক থেকে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি।But i’m sorry.
নাআআআআআ, ডাক্তারের কথা শুনে মনে হচ্ছে আমার পায়ের তলাম মাটি সরে যাচ্ছে। আসতে আসতে ঢুলে পরে গেলাম,মনে হলো দুটো হাত এসে আগলে নিলো আমাকে। তারপর আর কিছু মনে নেই।
,,
আমি এখানে আসতেই দেখলাম পাগলিটা পরে যাচ্ছে তাই ওকে দু হাতে আগলে নিলাম। কিন্তু ফুপির মি*ত্যু*র কারন হিসেবে কোনো কারনে নিজেকেই দোষি মনে হতে লাগলো। আমার জন্যই সবকিছু হয়েছে। যদিও কার কখন ওপরে যেতে হবে জানা নেই কিন্তু কারন হিসেবে দোষটা আমারি।
আব্বু ফুপা, বড় ফুপি ,নাহিদ সবাই ভেঙ্গে পরেছে। বাড়িতে আসতেই চোখঁ গেলো আম্মু আর ছোট ফুপির দিকে। আমি কখনই কারো মুখের ওপর কথা বলি নি কিন্তু আজ এনাদের দেখে খুব রাগ হচ্ছে, আর আম্মু সে কিভাবে পারলো এতোটা নিচে নামতে।
হীরা, মীরা সহ সকল আত্মীয় স্বজন আসছে, নেহার এখনো ঙ্গান ফেরেনি, ডাক্তার বলেছে নিজে থেকে ঙ্গান না ফিরলে ঙ্গান ফেরানোর চেষ্টা করা যাবে না।না হলে সমস্যা হতে পারে।
সবাই এসেছে,কিন্তু আমি অপেক্ষা করে আছি,আরো একজনের আসার। যে আসলে সবকিছুর প্রমাণ হয়ে যাবে।
কিন্তু নেহা জেগে গেলে ওকে কি বোঝাবো। ওকে বোঝানোর ভাষা তো নেই আমার কাছে। নেহাকে রুমে রেখে বাহিরে এসেছিলাম, ফুপিকে আমাদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
এমন সময় কাঁদতে কাঁদতে নেহা বাহিরে আসে,,
আম্মু,আম্মু গো, প্লিজ ফিরে আসো আম্মু আমি তোমার সব কথা শুনবো, প্লিজ একবার আসো, আমি খুব ভালো করে পড়াশুনা করবো, আমি আর একদম তোমাকে জ্বালাতন করবো না আম্মু, তোমার কাজে সাহায্য করবো একবার আসো আম্মু।
এই দেখো আম্মু, আমি নতুন জামা পরেছি, তুমি না বলতে তোকে এই জামা পরলে একদম পরির মতো লাগে দেখো আমি এই জামাই পরেছি আম্মু একবার ওঠো। আমি একবার কথা বলবো তোমার সাথে।একবার ওঠো আম্মু।
আপু , আপুরে আমরা যে এতিম হয়ে গেলাম আপু, এখন কাকে আম্মু বলে ডাকবো আপু। আম্মু একবার ওঠো তুমি। এখন থেকে তোমার সব কথা শুনবো আমি,
ওদের দুই ভাইবোনের কথা শুনে উপস্থিত সবার চোখেঁ পানি।
আসলে বাবা মা হলো সন্তানদের মাথার ওপরের ছাঁদের মতো। যত কিছু হোক না কেনো বাবা মা একবার বকলেও আরেকবার আদর করতে ভোলে না। আর মায়ের কথা কি আর বলবো। সেই মা চলে গেলে কোন সন্তান ঠিক থাকতে পারে না। আমরা যত দুষ্টুমি করি মায়ের সাথে, মা জন্যই সব সহ্য করে, অন্যকেউ কখনই এমনভাবে সহ্য করবে না।
আব্বু : নেহা মা চল এখান থেকে
নেহা : নাআ, আমি কোথাও যাবো না আব্বু , আমি
আম্মুকে রেখে যাবো না, যাবো না আম্মুকে
রেখে,আম্মু আম্মু বলতে বলতে নেহা আবারো
সেন্সলেস হয়ে পরে।
চলবে,,
ভূল ত্রুটি ক্ষমা সাপেক্ষ।