#ভালোবাসার_দূরত্ব(পর্ব 9)
#লেখনীতে_নাফিসা_আনজুম
,,
,,
,,
(বোনার্স পার্ট)
সামির ভাইয়া ওনার হাতে থাকা বাটিটা থেকে কিছু হলুদ নিয়ে আমার গালে লাগিয়ে দেয়,যেই কিছু বলতে যাবো তখনি মাথার পেছনে হাত দিয়ে ওনার গাল আমার গালের সাথে লাগিয়ে হলুদ নিজের গালে নেয়।
-এটা কি হলো
– কি আবার হবে,আমি আম্র বউকে হলুদ লাগালাম
-এখনে কেনো
-যদি বিয়ে বাড়িতে তোমাকে আমার আগে কেউ
হলুদ লাগিয়ে দিতো এজন্য, আমি চাইছিলাম
তোমাকে সবার আগে আমি হলুদ লাগিয়ে দেবো
কি রে নেহা কোথায় তুই , সবাই গাড়িতে উঠে পরেছে(হীরা আপু)
আচ্ছা আমি গেলাম,বলে যেই আসতে যাবো,অমনি পেছন থেকে হাত টেনে ধরলেন,
-এই পাগলি
-হুমম
-ভালোবাসি(কানের কাছে ফিসফিস করে বললাম)
এভাবে ফিসফিস করে বলাতে ওনার গরম নিশ্বাস আমার ঘারে পরছে আর শরীরে যেনো অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করছে।
আসতে আসতে আরো কিছুটা এগিয়ে গেলাম ওর দিকে,এখন আমাদের মাঝে দূরত্ব নেই বললেই চলে।পকেট থেকে বক্সটা বের করে,চেইন টা পরিয়ে দিলাম।
গলাতে ওনার স্পর্শ পেতেই দুই হাত দিয়ে শাড়ি চেপে ধরলাম, একটু পর কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে চোখঁ খুলে দেখলাম উনি মিটিমিটি হাসছে।
ইশশ আমি কি না কি ভেবেছিলাম,ধ্যাত। আর থাকবোই না এখানে। এক ছুটে গাড়িতে এসে বসলাম।
পাগলির কর্মকাণ্ড দেখে প্রচুর হাসি পাচ্ছে।
সবাই মিলে নীলা আপুকে হলুদ দিয়ে চলে আসলাম, এখন অনেক ক্লান্ত লাগছে,ঘুমাতে হবে না হলে মাথাটা ঘুরতেই থাকবে। বাড়িতে অনেক আত্মীয় স্বজন এসেছে,কোথাও জায়গা পাচ্ছি না যে একা একটু শান্তিতে ঘুমাবো। চিল্লাচিল্লিতে মাথা ব্যথা আরো বেশি হবে তাই একসাইডে একটা রুমে গিয়ে ভেতর থেকে দরজা লাগিয়ে দিয়ে ঘুমিয়ে পরলাম।
ঘুম ভাঙলো বাহিরে সাউন্ড বক্স এর শব্দে, উফফ সকাল সকাল বিরক্তিকর। বিছানা থেকে নামতেই চোখঁ গেলো বিছানার একপার্শে থাকা একটা বাক্সের দিকে। যতদূর মনে পরছে ঘুমানোর সময় এটা এখানে ছিলো না,তাহলে এখন কিভাবে আসলো,আর আমি তো দরজা লক করেই এসেছিলাম। যাই দেখি এতে কি আছে, বাক্স খুলতেই চোখঁ ছানাবড়া ,, এটা তো ঐ জামাটা যেটা আমি শপিংমলে দেখেছি। সাথে ম্যাচিং কানের দূল।
কানের দুলটা দেখে কালকের কথা মনে পরলো, আয়নার সামনে গিয়ে দাড়াতেই গলার চেনটা চোখেঁ পরলো, উফফ কি সুন্দর একটা চেন।
আবারো বক্সে চোখঁ পরলে একটা ভাজ করা কাগজে দেখতে পেলাম,,
এই যে মহারানি,আমি সেই কখন থেকে আপনার জন্য অপেক্ষা করে ছিলাম। আপনি এসেই ঘুমিয়ে পরলেন, এগুলো কাকে দেই এখন। আমার একটামাত্র বউ এই জামা পছন্দ করেছে সেটা কি আমি না দিয়ে পারি।শুধু জামা দিলে তো বলতো জুয়েলারি কই আমি শুধু জামা দিয়ে কি করবো।কাল সকাল থেকে হয়তো অনেক ব্যাস্ত থাকবো নিজের বিয়ে নিয়ে তাই আজকেই দিয়ে দিলাম। অনেক কষ্টে ,সবার চোখঁ ফাঁকি দিয়ে ঐ রুমে গেছি।আজ রাতে সবকিছুর শোধ তুলবো।
ইতি-তোমার জামাই
চিঠি দেখে হাসবো না কাদবো বুঝতে পারছি না, শেষে আবার লজ্জাও লাগতেছে।আজ আমার বিয়ে, এমন সময় দরজায় টোকা পরে।
নেহা
হ্যাঁ আম্মু আসতেছি, দরজা খুলে দিতেই আম্মু রুমে ঢুকে পরলো।
দেখ মা তোর মামার থেকে সব শুনেছি আমি,কিন্তু ভয় হচ্ছে পরে কোনো সমস্যা না হয়।
কোনো সমস্যা হবে না ফুপি,,
সামির ভাইয়ার কন্ঠ শুনে দরজার দিকে তাকালাম। কেমন হাসিঁখুশী লাগতেছে আজ।
কোনো ঝামেলা না হলেই ভালো, আচ্ছা যাচ্ছি আমি। নেহা তুই ফ্রেশ হয়ে নিচে আয় আমি খাবার দিচ্ছি।
-আচ্ছা আম্মু,তুমি যাও আমি আসছি
-পাগলি মন খারাপ কেনো
-আমার না খুব ভয় লাগছে
-আমার ওপর ভরসা রাখ,সব ঠিক হয়ে যাবে
,,,
বিয়ে বাড়িতে অনেক আত্মীয় স্বজন, সবাই রেডি হয়ে গেছে, আমিও হচ্ছি, তবে শাড়ি না জামা। অদ্ভুত না,আমার বিয়ে হবে জামা পরে। খুব সাধারন সাজ, আইলাইনার, আর ঠোঁটে গাড়ো লিপস্টিক, আজ কাজল দিতে ইচ্ছে করলো না সবাই গাড়িতে উঠে গেলেও, আব্বু আম্মু আর মামা আলাদা গাড়িতে উঠলো।আমি সামির ভাইয়ার বাইকে, যদিও একবার মিশু আপু জিজ্ঞেস করেছিলো,
-কি রে নেহা,আজকাল দেখছি সামির ভাইয়া সবসময় তোর খেয়াল রাখে। কিছু চলছে নাকি।
-উনি তো আগে থেকেই এমন মিশু আপু
তারপর কিছু একটা ভেবে মিশু আপু আর কিছু বলে নি।
সবাই চলে গেলে আমরা পিছে পিছে যাই, কিছুদুর গিয়ে মামাদের গাড়ি আর আমরা অন্য রাস্তায় উঠি, কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে হয় আমাদের। ওখান থেকে সোজা বিয়ে বাড়িতে গিয়ে উঠি। সবাই জিজ্ঞেস করছে এতো দেরি কেনো হলো, মামা বলতেছে কিছু কেনাকাটার জন্যে দেরী হয়ে গেলো।
,,
একা একপার্শে বসে বসে ভাবছি, এই আমি এখন বিবাহিতো। যে মানুষটাকে এতোদিন থেকে চেয়ে এসেছি, যাকে নিয়ে হাজার কল্পনা তৈরি করেছি,সবকিছু আসতে আসতে পূরন হয়ে যাচ্ছে।
বাড়িতে আসার সাথে সাথে আম্মু আমাকে বললো তোকে সামির ডাকছে বাহিরে গাড়িতে অপেক্ষা করতেছে ।
-কেনো আম্মু
-যা দেখ কেনো ডাকে
বাহিরে গিয়ে দেখি উনি গাড়িতে বসে আছে,,
-এতোক্ষন লাগে তোর আসতে
-কোথায় এতোক্ষন
-কেউ দেখে নি তো
-না
আচ্ছা তারাতারি উঠে পর, গাড়ি চলতে শুরু করছে,রাতে গাড়িতে ঘুরতে ভালই লাগে,গাড়ি এসে থামলো একটা লেকের পারে।
আকাশে থালার মতো বিশাল বড় চাঁদ উঠেছে, মনে হচ্ছে চাঁদটাও আজ খুশি হয়েছে।
এখানে নিয়ে আসলেন যে,,
-কোনো অসুবিধা
-না,আমার কেনো অসুবিধা হবে
এমন সময় কিছু ছেলে মেয়ে এসে আমাদের ঘিরে ধরলো।
ভাবি কেমন আছেন,
জ্বি ভালো আছি,আপনারা কেমন আছেন, এনারা সবাই আমার থেকে বয়সে বড় হবে।সবার মুখে ভাবি ডাক শুনে কেমন যেনো লজ্জা লাগছে।
সামির :সব ব্যাবস্থা হয়ে গেছে
হ্যাঁ সবকিছু রেডি,শুধু তোদের অপেক্ষায় ছিলাম।
আমি এনাদের কথা কিছুই বুঝতে পারলাম না, এমন সময় একটা মেয়ে আমাকে ডেকে নিয়ে গেলো একটা রুম এ।
-ভাবি আপনি সত্যি অনেক ভাগ্যবতি
-কেনো
-সামির আপনাকে সেই অনেক আগে থেকেই ভালোবাসে। আমরা একসাথেই পরাশুনা করেছি। সামির অনেকের ক্রাশ ছিলো ও কাউকে পাত্তা দেয় নি।শুধু বলতো আমার একটা পিচ্চি আছে।
মেয়েটা আমাকে এসব বলছে আর সাজাচ্ছে, লাল বেনারসি সাথে গর্জিয়াস মেকাপ। প্রায় দেড়ঘন্টাধরে সাজানোর পর বললো ,,
-এবার আয়নায় দেখোতো কেমন লাগছে
-আয়নায় তাকিয়ে নিজেই নিজেকে চিনতে পারছি না,,পেছন থেকে দুটো চোখ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,ঐ চোখেঁ চোখ পরতেই চোখঁ নামিয়ে নিলাম।
ওখানে খাওয়া দাওয়া করে সবাইকে বিদায় জানিয়ে
চলে আসলাম আমাদের বাড়িতে। উনি আমাকে ভেতরে যেতে বলে কোথায় যেনো চলে গেলেন। ভেতরে ঢুকে দেখি একদম অন্ধকার,লাইট জ্বালিয়ে আর এক দফা অবাক,পুরো ঘর ফুল দিয়ে সাজানো, বিছানা বালিশ এমনকি মেঝেতেও অসংখ্য ফুলের পাপরি। মনে হচ্ছে আমি কোনো ফুলের রাজ্য চলে এসেছি।
পেছন থেকে একজোড়া হাত কোমর চেপে ধরে কানে কানে বলে উঠলো, বউ, পছন্দ হয়েছে তোমার,,
অনেক অনেক,আমি সত্যি ভাবতে পারি নি এভাবে বিয়ে করেও এতোসব কিছু হবে। আমি সত্যি খুব খুশি আপনার মতো কাউকে পেয়ে ।
এবার আমাকে খুশি করো,
কেনো,আমাকে বিয়ে করে আপনি খুশি হন নি
তা হয়েছি, কিন্তু এখন আরো খুশি চাই
ধ্যাত…
শুরু হয়ে গেলো নতুন স্বপ্নের সুচনা। দুটো ভালোবাসার মানুষ যখন পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয় তখন থেকেই দূজনার লক্ষ্য এক হয়ে যায়।
চলবে,,,
ভূল ত্রুটি থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।