#ভালোবাসার_দূরত্ব(পর্ব 8)
#লেখনীতে_নাফিসা_আনজুম
,,
,,
,,
,,
কিছুনা , তুই আমার সাথে চল, তোরা সবাই কেনাকাটা কর,আমি নেহাকে নিয়ে এইদিকে আছি
একসাথে হাটছি,আর পাগলি এদিক ওদিক দেখতেছে। আসলে বাড়িতে থাকার সময় শুনলাম নেহার আম্মু গল্প করতেছে,নেহা তো গেলো সবার সাথে।সবাই সবার কেনাকাটা নিয়ে ব্যাস্ত থাকবে।নেহাকে তো পছন্দ করে না দিলে কিনতেও পারে না।
তাই নিজেই আসলাম বউকে পছন্দ করে দিতে।যে দোকানে আমি সবসময় কিনি সেখানেই নিয়ে আসলাম।
আসসালামুআলাইকুম চাচা
অআলাইকুমুস বাবা কেমন আছো(দোকানের মালিক)
জ্বি ভালো ,আপনি কেমন আছেন
ভালো আছি বাবা, এটা কে বউমা নাকি
জ্বি চাচা
মাশআল্লাহ খুব সুন্দর
এএএএইই কি মিথ্যুক,(ফিসফিস করে বললাম)
চুপ থাক পুচকি,,
আরে সামির ভাইয়া যে কেমন আছেন(দোকানের কর্মচারী)
হ্যাঁ ভালো তুই
হ্যাঁ ভালো আছি,ভাবি আপনি কেমন আছিন
জ্বি ভালো আছি
আচ্ছা শোন,তোর ভাবি শাড়ি,জামা নিবে দেখা তো
সবার সামনে বারবার বউ বলাতে লজ্জা লাগছে,এই মানুষটা কি। ধ্যাত
আচ্ছা ভাবি আমি সব বের করে দিচ্ছি,আপনি শুধু পছন্দ করেন
অনেক জামা বের করে দিছে,কিন্তু আমার মন শুধু ঐ জামাটার মতোই খুজতেছে। জামা বাদ দিয়ে শাড়ি দেখা শুরু করলাম, সব ভালো লাগতেছে আবার একটাও মনের মতো হচ্ছে না। কি করি,
সামির : আচ্ছা ঐ কচুরপাতা রঙের শাড়িটা দেখা
তো
এই যে ভাই দেখেন,এটা ভাবিকে অনেক মানাবে
ওমা আসলেই তো শাড়িটা সুন্দর,আমি হাতে নিলাম কচুর পাতা শাড়িটার পাড় গাড়ো খয়েরি, আচলটাও খয়েরি আর জমিনটাতে হালকা মশৃন কাজ করা।ইশ এটা ওনেক সুন্দর।
সামির:আচ্ছা এইটা দে আর ঐ সুভ্র সাদা রঙের
শাড়িটা
আমার একটা শাড়িই শুধু লাগবে,আর লাগবে না
চুপ থাকতে বলছি তোকে
এতোক্ষন বার বার সাদা রঙের শাড়িটা দেখছিলাম,প্রথম থেকে চোখঁ পরেছিলো, উনি ওটাও নিলেন। তবে এই শাড়িটা আগেরটার তুলনায় পাতলা।
এর পর আরো কয়েকটা জামা নিলেন। এরপর দাম মিটিয়ে চলে আসলেন।
এখানে এসে দেখি সবার কেনাকাটা শেষ।তারপর সবাই মিলে বাড়িতে চলে আসলাম। আসার সাথেই আম্মু এসে,
এই নেহা দেখি তুই কি কি কিনলি
আম্মুকে সব বের করে দিলাম
এই এসব কি তুই পছন্দ করেছিস,আমার কেনো জানি বিশ্বাস হচ্ছে না,
এতোক্ষনে আমার ড্রেস দেখতে সবাই চলে এসেছে,
মিশু: এই নেহা এই কচুরপাতা শাড়িটা কই থেকে
কিনলি রে কি সুন্দর শাড়ি
মীরা: সাদাটাও অনেক সুন্দর
হীরা: সব সুন্দর ড্রেসগুলো তো তুই কিনছিস রে,
আগে জানলে তো আমিও সামিরের সাথেই
যেতাম
হীরা আপুর কথা শুনে সবাই হেসে উঠলো।
আম্মু আমাকে টেনে এক সাইডে নিয়ে গেলো,
– এই তুই জানিস ঐ কচুরপাতা রঙের শাড়ি টার
দাম কতো।
– আম্মু তুমি আমায় দামের কথা কেনো জিজ্ঞেস
করতেছো
– কারন ঐ শাড়ির একপার্শে দেওয়া আছে ওটার
দাম ষাট হাজার টাকা
– কিইইহহ
-হ্যাঁ , এখন এটা যদি তোর মামি দেখে তাহলে কি
হবে ভেবেছিস
– আম্মু আমি জানতাম নাকি এতো দাম, তোমার
ভাতিজা তো আমাকে কিছু বলতেই দিচ্ছিলো না
পরেরদিন বিকেলে,,
সবাই ছাঁদে বসে আছি, আজ সবাই মেহেদি দিবে, রাসেল ভাইয়ার চাচাতো ভাই বোনেরা সবাই এসেছে, চারটা মেয়ে, তিনটা ছেলে আর কিছু পিচ্চি,
সবগুলার হাতে মেহেদী দিতে দিতে আমি শেষ।আর একজনের দিকে মেয়েগুলা কেমন চিপকে আছে।অসহ্য।
হীরা আপুর স্বামী বলে উঠলো, হীরো সালাবাবু তোমির কি গার্লেফ্রন্ড আছে
সামির: হুমম
মীরা : সে কি রে, আমাদের বলিস নি তো। আমরা
তো জানতাম তুই কোনো মেয়েকে পাত্তা দিস
না, তাহলে কে সেই ভাগ্যবতি
হীরা : নিশ্চয়ই সে খুব সুন্দরী
সামির : সবার চোখেঁ সে কেমন হবে জানি
না,আমার চোখে সে চাঁদের চেয়েও বেশি
সুন্দর
মিশু : ওয়আআওও,,এই আমার না তাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে
মীরা আপু তুমি তো বলতে যে,তোমার মামাতো ভাই কোনো মেয়েকে পাত্তা দেয় না(মীরা আপুর কাজিন)
আমি এতোক্ষন চুপচাপ ওদের কথা শুনছিলাম, মেয়েটার কথা শুনে ওদের দিকে তাকালাম, বেশ লম্বা আর ফর্সা ধরনের মেয়েটা,মুখটা কেমন বাংলার প্যাচের মতো করে আছে,মনে হচ্ছে হালকা করে ছ্যাকা খেয়েছে।
সামির : সেই একজনকে ছাড়া আর কাউকে পাত্তা
দেই না
এই কথা বলে নিচে চলে আসলাম, কিন্তু নেহাকে ওখানে রেখে আসা যাবে না,ছেলেগুলা ভালো না,,
সামির: নেহা তোকে ফুপি এখনি ডাকতেছে নিচে যা
নেহা : আম্মু ডাকছে,কই শুনতে পাই নি তো
সামির: আমাকে বললো তাই বলে গেলাম, যাবি কি
না তোর ব্যাপার
মিশু : ঐ আমাকে মেহেদি দিয়ে দিবি না
নিহা : তোমাকে রাতে দিয়ে দেবো, বলে চলে
আসলাম
সিরি দিয়ে নিচে নামতেই হাতে টান পরলো, সামির ভাইয়া এক টানে সিরির পাশের রুম এ নিয়ে এসে দরজা লাগিয়ে দিলেন।
এই কি করছেন কি সবাই আছে,কেউ দেখলে কি ভাববে
কেউ দেখেনি, আর দেখলেই বা কি, সত্যিটা বলে দেবো, আর আমাদের বিয়েটাও হয়ে যাবে
ধ্যাত, আমাকে না আম্মু ডেকেছে আমি যাই
এই কোথায় যাও, তোমাকে একটা কথা বলার আছে, মন দিয়ে শুনবা
হুমম আচ্ছা বলুন
পরশুদিন আমরা বিয়ে করছি
কিইইহহ , মজা করছেন
না মজা না সত্যি, কাল আব্বু আমায় ডেকে,,
কাল,,
সামির বাবা তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে
-হ্যাঁ আব্বু বলো কি বলবে
-তুই কি কাউকে ভালোবাসিস
-হটাৎ এমন কথা কেনো
-আমি জানি তুই রশনিকে বিয়ে করতে রাজি ছিলি
না, আর এটাও বুঝেছি তুই আর নেহা দুজন
দুজনকে ভালোবাসিস।
আব্বুর কথা শুনে মাথা নিচু করে নিলাম। যত ফ্রি হই না কেনো এভাবে ধরা খাওয়াতে লজ্জা লাগছে।
-তবে আমার ধারনা সত্যি হলো যখন নেহার আম্মু
আমাকে সব বললো, তবে আমি খুব খুশি হয়েছি,
আমি তো চাইতাম নেহা মা আমার ছেলের বউ
হবে।
আব্বু একটু থেমে আবার বলতে লাগলেন,,তোর মা হয়তো খুব সহজে রাজি হবে না, তবে তোরা যদি আগেই বিয়েটা করে রাখিস তাহলে পরে চাইলেও আর কিছু করতে পারবে না।
কিন্তু আব্বু এটা খুব বেশি রিস্কি হয়ে যাবে, পরে আম্মু অনেক কষ্ট পাবে।
দেখ তোর আম্মুকে আমি চিনি,প্রথমে কষ্ট পেলেও তোকে খুশি দেখলে পরে ঠিক হয়ে যাবে। না হলে রাসেলের বিয়ের পর ও তোর বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পরে লাগবে।
এতে কি নেহার আব্বু আম্মু রাজি হবে
সে তুই আমার ওপর ছেড়ে দে,ওদেরকে রাজি করানোর দায়িত্ব আমার।
বর্তমান,,
এটা কি ঠিক হবে
ঠিক না হলেও এটা করতে হবে, তোমাকে আমি হারাতে চাই না।
আচ্ছা এখন তো যেতে দিন
যেতেই হবে
হু ম , এই আপনি এগোচ্ছেন কেনো
মুখে কোনো মেকাপ নেই, মাথায় খোপা করা এলোমেলো চুল,দুই কানের সামনে আসছে আর সে বার বার সেগুলো কানের পিঠে গুজে দিচ্ছে। এতোটা মায়াবিনী তাকে না লাগলেও পারতো। তার কাঁপা কাঁপা ঠোঁট দুটি খুব আকৃষ্ট করেছে তার দিকে।
দে দেখুন , আমাকে কিছু বলতে না দিয়ে ঠোটের ওপর আঙুল দিয়ে চুপ করিয়ে দিলো। তারপর আলতো হাতে দুই গাল ধরে কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে চলে গেলো। আর আমি স্ট্যাচু হয়ে দাড়িয়ে রইলাম।
কি হলো একটু আগে, উফফ কি লজ্জা
,,
পরেরদিন সবাই হলুদ দিতে যাবো, উনি বার বার বলে দিছে যেনো ঐ ছেলেদের আশেপাশেও না দেখে। রাক্ষস একটা,এক বিয়ের হলুদে যাচ্ছি আমি কতোদূরে থাকবো। তবে আজ যে রাসেল ভাইয়ার সাথে সাথে আমারো গায়ে হলুদ,ভাবতেই অবাক লাগছে। আমার বিয়ে নিয়ে কতো প্লান করছিলাম কিছুই হবে না। চুরি করে বিয়ে করতে হচ্ছে।
সবাই গাড়িতে উঠবো, এমন সময় ফোন এ এসএমএস আসলো,
নেহা একবার সিরি ঘরে আয়,তারাতারি
এই গাড়িতে উঠার সময় এমন কথা ভালোলাগে না, একদিকে শাড়ি পরে হাঁটতে পারি না,তার ওপর তারাতারি যেতে হবে। এই মানুষটা তো খুব জ্বালাতন করছে। কিন্তু রুমে যেতেই চোখঁটা আটকে গেলো,,
হলুদ কালার পাঞ্জাবি, কালো কোট কালো প্যান্ট, কালো ঘরি পরা সুদর্শন এক যুবক হাতে একটা হলুদের বাটি নিয়ে দাড়িয়ে আছে। আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে দেখছি, এই মানুষটা কাল সত্যি সত্যি সারাজীবনের জন্য আমার হয়ে যাবে।
এই হলুদ পরি,তোকে আজ খুব সুন্দর লাগছে। চোখেঁ গাড়ো কাজল,হালকা মেকাপ,ডিব লিপস্টিক,
ওর চোখেঁর দিকে তাকিয়ে বললাম,
এই কাজল চোখেঁর মেয়ে
আমার দিবস কাটে,মুগ্ধ হয়ে
তোমার চোখে চেয়ে (cl)
ওনার কথা শুনে লজ্জা পেলাম,মাথা নিচু করে বললাম, আপনাকেও অনেক সুন্দর লাগছে,
তারপর উনি হুট করে এমন একটা কাজ করলো,,
চলবে,,