#ভালোবাসার_দূরত্ব (7)
#লেখনীতে_নাফিসা_আনজুম
,,
,,
,,
কেটে যায় আরো কয়েকদিন। কাল রাসেল ভাইয়ার বিয়ের শপিং করতে যাবো সবাই মিলে। পরশু রাসেল ভাইয়ার গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান। সবাই প্লান করেছে এখান থেকে একসাথেই যাবে, শুধু মীরা আপুর বাচ্চা পেটে এছাড়া কারো ছোট বাচ্চা নেই।
তাই সবাই একসাথে যাবো।
রশনি ওর শশুর বাড়িতে আছে,প্রথমে সবাই অনেক রাগ করলেও এখন ওতোটা রাগ নেই,খালামনিকে মামি অনেক কিছু বলেছিলো,রশনি মিশু আপুর সাথে কথা বলেছে,তারপর মিশু আপু সবাইকে বুঝিয়েছে,যে প্রথমে ভেবেছিলাম রশনি ছোট মানুষ অতোটা বুঝবে না,কিন্তু এখন বুঝতেছি যে আসলেই জোর করা উচিত হয় নি। পালিয়ে বিয়ে করে সংসার করতেছে ঐ সুখে আছে থাক।
কিন্তু আমি এই বাড়িতে ওকে কখনোই মেনে নেবো না
কিন্তু কেনো আম্মু
কারন ওর জন্য আমাকে তোর মামির থেকে কথা শুনতে হয়েছে আর ঐ ছেলে বেকার ও জেনে শুনে বেকার ছেলেকে বিয়ে করেছে। আমার কথা শুনে নি। এই বাড়িতে ওর কোনো জায়গা নেই।
ছেলে এখন বেকার আছে পরে কিছু করে নেবে।
যাই করুক না কেনো। আমি মানবো না
তবে আমার বিশ্বাস একদিন নি একদিন সব ঠিক হবে। রশনি যদি পরে এসে মাফ চায় সবার কাছে তখন সবাই বললে খালামনিকেও রাজি করানো যাবে।
,,
এখন আমরা সবাই মামাদের বাড়িতে আছি, হীরা আপু,মীরা আপু, দুলাভাই,রাসেল ভাইয়া, মিশু আপু আমি সবাই একপার্শে গাছের নিচে বসে আছি।
শুধু একজন নেই সেটা হলো সামির ভাইয়া । আজকেও এই মানুষটার কি কাজ বুঝি না। সবাই আসছে কোথায় আড্ডা দিবে তা না।
আমরা সবাই এখানে আছি,হিরো সালাবাবু কোথায়(মীরা আপুর স্বামি)
ভায়রা ভাই আমাদের হিরোর বিয়েটাও কিন্তু এবার দিতে হবে।
তা তো দিতে হবে, ভেবিছিলাম দুইটা বিয়ে একসাথে হবে,কিন্তু তা আর হলো কই।
মিরা অপু বলে উঠলো,হোক আমরা আলাদা আলাদা মজা করতে পারবো। হ্যাঁ রে মিশু ,রশনি আসবে না বিয়েতে
কি যে আপু, মনে হয় আসবে না।এখানে আম্মু আসতেই চায় নি,মামা জোড় করেছে জন্য এসেছে। ওকে দেখলে আবার রাগ করবে।
আসলে রশনিটা যে এমন একটা কাজ করবে ভাবতেই পারি নি(হীরা আপু)
আমি তো বরাবরি ভাবতাম যে রশনি নম্র ভদ্র কিন্তু তলে তলে এতোকিছু,বাব্বাহ(হীরা আপুর স্বামী)
তবে নেহাকে অনেক দুষ্টু আর চঞ্চল ভেবেছিলাম,কিন্তু এই সালিকায় ভালো আছে।
তবে এবার রাসেলের বিয়ের পর,হিরো সাহেবের বিয়ে দিতে হবে দুলাভাই(হীরা আপুর স্বামী )
এমন সময় ওনার আগমন ঘটলো,আবার কার বিয়ে দিতে চাচ্ছেন আপনারা
এইতো হিরো সালাবাবু,এবার তোমার বিয়ে
আপনাদের বাড়িতে খাবার কম পরেছে নাকি ভাই,একটার পর একটা বিয়ে চাপাচ্ছেন।
এভাবে অপমান করতেছো সালাবাবু
ওনার কথা শুনে সবাই হেসে উঠলো
হ্যাঁ রে সামির এবার তুই বিয়েটা করে ফেল, মীরা আপু বললো।
সামির ভাইয়া বড় কিন্তু হীরা আপু আর মীরা আপু তুই করেই বলে।
কেনো রে মিরা, আমাদের বাড়িতে যে আরো দুইটা হাতি আছে, ওদের বিয়ে আগে দিয়ে দিই
হাতি,সামির ভাইয়া হাতি কে(মিশু আপু)
সালাবাবু কার কথা বলতেছো
কেনো মিশু আর নেহা
কিহ আমরা হাতি
হুমম(ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে)
ওনার কথা শুনে সবাই হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে।মিশু আপু আর আমি রাগে ফুলতেছি।
সবাই চাইলে আমি একটা কথা বলতে পারি(মীরা আপুর স্বামি)
হ্যাঁ হ্যাঁ বলেন শুনি
শুনলাম মিশু নাকি বিদেশির বউ হবে।বাকি থাকলো নেহা। ওর ও তো একটা ব্যাবস্থা করতে হবে। আমার একটা ফুপাতো ভাই আছে সবাই চাইলে আমি প্রস্তাব নিয়ে আসতে পারি। যদিও ও নেহার ছবি আমার ফোনে দেখে নেহাকে পছন্দ করেছিলো।
দুলাভাইয়ের কথা শুনে সামির ভাইয়ার দিকে তাকিলাম।চোখঁ দুটো কেমন লাল হয়ে গেলো এক মুহূর্তে।দেখেই ভয় লাগছে।কয়েকবার ঢোক গিললাম।
নেহার বিয়ে আমি ঠিক করবো দুলাভাই, আপনি বরং বিয়েতে খাওয়ানোর দায়িত্ব নিয়েন।বলেই ওখান থেকে উঠে আসলাম,,
এই মেয়েটার সমস্যা কি। সব সময় কি ছবি না উঠলে হয় না। সবার ফোনে কেনো ছবি থাকবে ওর,আজ একবার সামনে পাই খালি।
কি ব্যাপার ও এভাবে চলে গেলো কেনো(রাসেল ভাইয়া)
সেটাই তো
এমন সময় মামা এসে বললো কই রে তোরা রেডি তো, এখনি যা শপিং এ।
হ্যাঁ মামা সবাই এখনি রেডি হচ্ছি(সবাই)
,,
দুইটা গাড়ি, একটাতে হীরা আপু, মীরা আপু আর ওদের স্বামী। অন্য টাতে রাসেল ভাইয়া, আমি আর মিশু। বাড়ির বড়রা পরে যাবে। আর একজনের নাকি কি কাজ পরে গেছে তাই আসলো না।না আসুক তাতে আমার কি,তখন যে রেগে গেছিলো চোখঁ দেখেই বুঝেছি,তারপর থেকে আমার আর ইচ্ছে নেই উনার সামনে যাওয়ার।
এক দোকানে ঢুকেছি সবাই কারন হলুদের জন্য সবার এক ড্রেস, আর বিয়ের দিন আলাদা জামা আর বউভাতে সবাই শাড়ি পরবো। সেই অনুযায়ী
সবাই কাচা হলুদ আর লাল পাড়ের শাড়ি কিনলাম।
কিন্তু এখন কেমন জামা নিবো, আমি তো পছন্দ করতে পারি না, আম্মুর সাথে শপিং এ আসি আম্মুই সবসময় ড্রেস পছন্দ করে দেয়, এখন তো সবাই নিজেদের নিয়ে ব্যাস্ত,আমি কি করবো। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখছি কোনটা পছন্দ হয়, হুট করে একটা জামা দেখে চোখঁ আটকে গেলো,, মেরুন রঙের জামার ওপর সাদা পাথরের কাজ করা নিচে স্কাট আর সাদা ওরনা, বেশ কিছুক্ষণ ভালো করে দেখার পর ঠিক করলাম এটাই নেবো। দোকানদারকে ডাকতে যাবো এমন সময়,
এই নেহা দেছ না আমার জামাটা কেমন
হ্যাঁ মিশু আপু দেখি,ডিব মিষ্টি কালারের সাথে কালো,ওয়াও তোমার জামাটা অনেক সুন্দর আপু।
তোর পছন্দ হয়েছে
হ্যাঁ , সুন্দর আছে
তাহলে এটাই নিবো। তুই তোর টা পছন্দ কর যা
আচ্ছা ঠিক আছে,এই বলে যে দোকানে জামাটা দেখছি সেখানে তাকিয়ে দেখি জামাটা নেই।
আচ্ছা ভাইয়া এখানে একটু আগেই যে একটা মেরুন রঙের জামা দেখলাম ঐটা কোথায়
সরি ম্যাম ঐ জামাটা বিক্রি হয়ে গেছে
ঠিকাছে ঐ জামার মতো আর একটা জামা আমাকে দিন
সরি,ঐটা একপিস ছিলো , আর হবে না। নিতে চাইলে আপনাকে সাতদিন পর আসতে হবে।
ধুর ভাল্লাগেনা, এই জামা আমি রাসেল ভাইয়ার বিয়ের দিন পরতাম।জামা দেখে কিভাবে সাজবো সেটাও ভেবে নিয়েছিলাম। সাতদিন পর নিয়ে আমি কি করবো।
মনটাই খারাপ হয়ে গেলো। যেটাও পছন্দ হলো সেই জামাও আমি পেল না। আর আমার একটা সমস্যা হলো, প্রথমে একটা জামা পছন্দ হলে তারপর ওটার থেকে ভালো জামা দেখলেও আর মনে ধরবে না।
কি আর করার সবাই কেনাকাটা করছে আর আমি সবার কেনাকাটা দেখছি।আর দেখছি মীরা আপুর স্বামীর কেয়ার,একটু পর পর আপু পানি চাচ্ছে জন্য উনি পানির বোতল ধরে আছে, জামা ধরে ধরে দেখাচ্ছে, কি চাচ্ছে সেটাই দিচ্ছে, ওনাদের দেখে ভালো লাগছে।
এখানে আসার কিছুক্ষণ পর নীলা আপু এসেছে, রাসেল ভাইয়া নীলা আপুকে পছন্দ করে দিচ্ছে।
হীরা আপু আর দুলাভাই ও একসাথে এটা ওটা দেখতেছে।
মিশু আপুকেও একবার দেখলাম ভিডিও কলে ভাইয়াকে জামাটা দেখাতে।
সবার ভালোবাসা দেখতেও ভালো লাগছে, তাই মন থেকে চাইছি এনাদের কারো #ভালোবাসার_দূরত্ব না ঘটুক।
কি রে একা একখানে বসে আছিস কেনো তুই
হটাৎ চেনা কন্ঠে ডাক শুনে চমকে উঠলাম।সামির ভাইয়া উনিও এসেছে।
আপনি কখন আসলেন
কেনো আমি তো কালকে এসেছি (পাগলি, তোকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিলো তাই তো সব কাজ ফেলে চলে আসলাম)
মুখ ভেঙচি কেটে বললাম, তেড়া মানুষ,সোজাসুজি বললেই তো হয়
তুই আসার সময় দেখলি আমি বাড়িতে ছিলাম,তারমানে এখনে আসলাম এখানে।এটা জিজ্ঞেস কেনো করিস।
আরে সামির তুই কখন আসলি(রাসেল ভাইয়া)
আসলে তোরা সব এক গোয়ালের গরু
কি রে না দেখে থাকতে পারছিলি না বুঝি(নীলা)
হুমম রে,তাইতো চলে আসলাম(একটু হেসে)
এই মীরা দুলাভাই কোথায়
এইতো হীরো সালাবাবু আমি এখানে
দুলাভাই একটু এই দিকে আসেন তো,তারপর এক সাইডে ডেকে এনে ওনার ফোন থেকে একটা কল করতে চাইলাম।
একটু পর,এই নিন হয়ে গেছে। ধন্যবাদ দুলাভাই।
আরে সালাবাবু ধন্যবাদ দেওয়ার কি আছে,সালা তো দুলাভাই এর ফোন থেকে কথা বলতেই পারে।
আচ্ছা সবার কেনাকাটা কতোদুর,
এই তো আর একটু বাকি আছে(সবাই)
কি রে নেহা তোর কি অবস্থা,কথা বলছিস না কেনো
আমার তো এখনো কিছুই কেনা হলো না
এরকমি বলছিলো শাশুরি মা(ফিসফিস করে)
মানে,,,,
চলবে,,
ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।