ভালোবাসার দূরত্ব পর্ব-০৬

0
871

#ভালোবাসার_দূরত্ব(পর্ব 6)
#লেখনীতে_নাফিসা_আনজুম
,,
,,
,,
আম্মু বলবা তো কি হয়েছে

তু তু তুই

বিছানা থেকে ঝট করে নেমে আম্মুকে ধরলাম, আম্মু কি হয়েছে বলো কষ্ট হচ্ছে তোমার আব্বুউউ নাহিইইদ কোথায় তোমরা। আম্মু কেমন যেনো করছে , আম্মুউউ

কি হয়েছে রে মা ,, নেহার আম্মু কি হলো তোমার

নাহিদ দৌড়ে গিয়ে ডাক্তারে কল করে।

আমি আর আব্বু মিলে আম্মুকে ধরে বিছানায় শুয়ে দিলাম।

এমন সময় ফোন বেজে উঠলে,ফোনটা রিসিভ করার সাথে সাথে যেটা শুনলাম,,

নেহা

হ্যাঁ সামির ভাইয়া বলো

নেহা রশনি বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে

কিহহ

হ্যাঁ,আচ্ছা পরে কথা বলবো আম্মু অসুস্থ(কেঁদে)

কি হয়েছে ফুপির

ফোন কেটে দিলাম, আম্মু এমন কেনো হলো। রশনি পালিয়েছে,কিন্তু এমন তো কথা ছিলো না।

কিছুক্ষণ পর ডাক্তার আসে, প্রেসার মাপে,

কি হয়েছে ডাক্তার নেহার আম্মুর

অতিরিক্ত টেনশন করার কারনে,প্রেসার উঠেছলো।আমি ইনজেকশন দিচ্ছি এখনি ঙ্গান ফিরবে। আর ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করে না মনে হয় শরীর দূর্বল।

একটু পর ঙ্গান ফিরলে ,ডাক্তার আম্মুকে স্যালাইন দিয়ে কিছু ঔষধ লিখে দিয়ে চলে যায়।

আম্মু এখন ঠিক আছো,

নেহা তোর ছোট খালামনি ফোন করেছিলো

হ্যাঁ আম্মু, আমি শুনেছি রশনি পালিয়েছে

কিন্তু তোর খালামনি তোর দোষ দিচ্ছে কেনো

আমার দোষ,আমি কি করেছি আমি তো কিছু জানি না।

তুই কালকে কোথায় গেছিলি

আ আমি,আমি তো বান্ধবীদের,,,

কেনো মিথ্যে বলতেছিস তুই, তোর খালামনি বলেছে যে তুই কালকে ওদের বাড়িতে গেছিলি। আর তুই রশনিকে বাড়ি থেকে পালাতে সাহায্য করেছিস।

আম্মু বিশ্বাস করো,আমি ঐ বাড়িতে গেছিলাম ঠিকি কিন্তু রশনির পালানোর ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না।

চুপ, আর একটা কথাও বলবি না তুই

নেহার আম্মু, নেহা যখন বলছে ও জানে না ওকে কেনো বকছো। তোমার বোনের মেয়ে পালিয়েছে সেটাও কি আমার মেয়ের দোষ।

হ্যাঁ তোমার মেয়ের দোষ, ও কেনো ঐ বাড়িতে গেলো, ঐ বাড়িতে এখন না গেলে তো এমন কিছুই হতো না। আমাকে পর্যন্ত মিথ্যে বলে গেছে তোমার মেয়ে।

গেছে জন্যই যে পালাতে সাহায্য করবে এমন কোনো কথা আছে নাকি

এতোদিন পালালো না,কাল ঐ যাওয়ার পর আজকেই পালালো,এতে সবাই তো এটাই ভাববে

আব্বু আম্মুর কখনো এভাবে ঝগরা হয় নি,আজ আমাকে নিয়ে তাদের মাঝে ঝগরা হচ্ছে, আমার চারিদিক অন্ধকার হয়ে আসছে।
আম্মু তুমি প্লিজ শান্ত হও

কি শান্ত হবো, তুই শান্তিতে থাকতে দিচ্ছিস কোথায়, একটার পর একটা টেনশন দিয়েই যাচ্ছিস।

এর মধ্যে সামির ভাইয়া চলে আসে।
ফুপি ঠিক আছো তুমি

কিভাবে ঠিক থাকবো, তোর মেঝো ফুপি বলছে যে,রশনিকে নাকি নেহাই পালাতে সাহায্য করেছে।
আবার কিছুদিন পর যদি শোনে তোদের সম্পর্ক আছে তাহলে তো ভেবে নিবে সে জন্যই নেহা রশনিকে পালিয়ে দিয়েছে।
আর তোর মা, সে কি করবে,আমার মেয়েটাকে তো সারাজীবন খোটা দিবে।

দেখো ফুপি এরকম কিচ্ছু হবে না,নেহাকে কারোর কথার নিচে থাকতে হবে না। যেটা সত্যি সেটা অবশ্যই সবার সামনে আসবে।

এসব কথা আর ভালো লাগছে না এক ছুটে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলাম। পেছন থেকে আব্বু সামির ভাইয়া ডেকেই চলছে।

নেহা দরজা লাগালি কেনো, দেখ তোকে আমি কারোর সামনে মাথা নতো হতে দিবো না।

সামির ভাইয়া আমার ভালো লাগছে না। আমাকে একা থাকতে দাও প্লিজ

আচ্ছা ঠিক আছে, আর আমি যাচ্ছি, ফুপির খেয়াল রাখিস।
আচ্ছা রশনি পালালো কেনো। ওকে তো আমি পালাতে বলি নি। কিন্তু আগে আম্মুর সাথে কথা বলে দেখতে হবে।

বাড়িতে আসার পর,
আম্মু তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো

তার আগে আমার কিছু জিজ্ঞেস করার আছে

হুমম বলো

শুনলাম নেহা নাকি কাল রশনিদের বাড়িতে গেছিলো,আর ঐ রশনিকে পালাতে সাহায্য করেছে

আম্মু মেঝো ফুপি কেমন তা তো তুমি জানই, নেহা গেছিলো জন্যই যদি রশনি পালাতো তাহলে কি নেহা ঐ বাড়িতে যেতো,যাতে ওর দোষ হয়।
আর রশনির আগে থেকে সম্পর্ক ছিলো এই দেখো, এই বলে রশনি আর ওর বয়ফ্রেন্ডের কিছু ছবি দেখালাম।

ঠিকি তো , আগে থেকে সম্পর্ক না থাকলে নেহা বললো আর ও পালাবে নাকি।

আসলে রশনি এই বিয়েতে রাজি ছিলো না,ওকে জোর করা হচ্ছিল আম্মু

কিহ, এতো বড় কথাটা লুকিয়েছে,আমার ছেলে কোন আংশে কম যে জোড় করে মেয়ে নিয়ে আসবো।

হ্যাঁ আম্মু তাই তো

যাক আম্মুকে বোঝানো গেলো।আর কোনো সমস্যা নেই।
,,

বেশ কয়েকদিন পর, বাড়িতে এখন শুধু একটাই বিয়ে সেটা রাসেল আর নীলার। সাবিনা বেগম অন্য মেয়ে দেখতে চেয়েছিলো,কিন্তু সামির এবার রাগ করে বলেছে অমাকে না জানিয়ে তো একবার বিয়ে ঠিক করেছিলে,তারপর কি হলো দেখলেই তো। এবার আবার একি ভূল করতে যাচ্ছো,আমি বলেছি তো এখন বিয়ে করব না আমি। ঐরকম একটা ঘটনা ঘটার পর সামির চাচ্ছে না নেহা আর ওর সম্পর্কের কথাটা এখনি জানাজানি হোক। তাই নিজেদের মতো চুপচাপ আছে।

আর রশনি পালিয়ে বিয়ে করে নিয়েছে। ওর শশুর বাড়ির লোকজন প্রথমে মানতে না চাইলেও ওকে দেখার পর আর না মেনে থাকতে পারে নি।

কাল থেকে অফিসে যাবো। সামির ভাইয়া, মামা বার বার করে যেতে বলেছে। রাসেল ভাইয়ার বিয়ের আগে সব কাজ শেষ করতে হবে,না হলে রাক্ষসটা আমাকে বিয়ের দিন ও অফিসে বসিয়ে রাখবে। এসব মনে মনে ভাবছে আর মুচকি হাসছে নেহা।

পরেরদিন,,
সব দিনের থেকে আজকের সকালটা একটু অন্যরকম মনে হচ্ছে যেটাই করতেছি সেটাই ভালো লাগছে। যাকে এতোদিন মনে মনে চেয়ে এসেছি সে এখন আমার। যদিও হয় নি তবে মানুষটা তো আমাকে চায়। রশনিটা পালিয়ে গিয়ে একদিক থেকে ভালই হয়েছে,ওর ভালোবাসার মানুষকে ও পেয়েছে আর আমার ভালোবাসার মানুষটিকে আমি পেয়েছি।

হালকা কমলা কালার থ্রি-পিস চোখে গাড়ো কাজল, চুল গুলো ছেড়ে দেওয়া আর ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক, যেনো অপ্সরী দাড়িয়ে আছে আমার সামনে। একবার তাকিয়ে চোখঁ সরিয়ে নিলাম। কেনো এতো সুন্দর তুমি পিচ্চি পরি,আমি বার বার নতুন করে তোমার প্রেমে পরি,হারিয়ে যাই তোমার মাঝে।

কি এনাকন্ডা রে এটা, আজ এতো সুন্দর করে সেজে আসলাম ভালো করে দেখলোও না। ধ্যাত ভালো লাগে না।
উনা ল্যাপটপে কিছু একটা করছে,আমি বার বার ওনার দিকে তাকাচ্ছি,না একবারো তাকাচ্ছে না।কি করি ,গ্লাস থেকে পানি নিয়ে গিয়ে ওনাকে বললাম এই নিন পানি,,

ল্যাপটপের দিকে তাকিয়েই উত্তর দিলো খাবো না

কি আর করার আমিই ধপ করে বসে সব পানি খেয়ে ফেললাম।
আবার একটু পর বাহিরে গেলাম, এক মগ কফি নিয়ে এসে বললাম,এই নিন কফি

আবারো মাথা না তুলেই উত্তর দিলো এই সময় কফি খাই না

ঠিকি তো, আজ একটু তারাতারি এনেছি মনে হচ্ছে, না খাক আমার কি, এটাও আমি খেলাম।

আবার একটু পর পা দিয়ে জোরে জোরে ওনার টেবিলে শব্দ করতে লাগলাম,

আবার যদি কিছু করছিস তাহলে এই পাঁচতালার জানালা দিয়ে তোকে আমি পদ্মা সেতুতে ফেলে দিবো বলে দিলাম

ওমা, সেটি কিভাবে সম্ভব এখান থেকে তো পদ্মাসেতু অনেক দূরে, এতোদূর থেকে আপনি আমাকে ফেলবেন কিভাবে।

দেখবি কিভাবে ফেলবো,দেখবি

না না থাক,দেখা লাগবে না। একটা মানুষ এতোগুলো কথা মুখের দিকে না তাকিয়ে কিভাবে বলতে পারে তা এনাকে না দেখলে কেউ বুঝবে না(আস্তে করে বললাম)

বিরবির না করে চুপচাপ বসে থাক( আমি কি আর বুঝি না তুই আমাকে দেখানোর জন্য এমন করছিস।কিন্তু আমি তো তোকেই দেখছি পাগলি,আর তুই আমাকে বিরক্ত করতেছিস,পিচ্চি বড় হবি কবে)

উনি ল্যাপটপে কিছু একটা করছে আর হাঁসছে, আমার একদম সহ্য হচ্ছে না। কি করছে উনি,আমাকে পাত্তা না দিয়ে কার সাথে কথা বলতেছে,সেটাই দেখবো। যেই উঠতে ধরছি অমনি,,

এই একদম উঠাউঠি করবি না। এসেছিস থেকে কিছু না কিছু করেই যাচ্ছিস।

একটা কথা বলবো সামির ভাইয়া

হুমম বল

আপনি কি করতেছেন

কাজ করতেছি

আমি একটু দেখি কি কাজ

না তোর দেখতে হবে না, দেখলে ক্ষয় হয়ে যাবে

কাজ কি ক্ষয় হয়

তুই একটা গা*ধি, কাজ কখনো ক্ষয় হয় নাকি,ক্ষয় হবে এই আমার চোখেঁর সামনে থাকা একটি পরি। একসাথে কাজ করছি তো ভিডিও কল এ আছি সামনাসামনি। তোকে দেখলে রাগ করবে।

আমার থেকেও সুন্দরী ঐ মেয়েটা আপনার কাছে,

এই রে পাগলিটার চোখেঁ পানি চিকচিক করছে,কখন যেনো কেঁদে দিবে। নাকের ডগা লাল হয়ে গেছে।
কোথায় এ আর কোথায় তুই ছিহ

এই রে কেঁদে দিছে এবার।উফফ পরি তোমাকে কাঁদলেও ভালো লাগে।

পরিটা রাগ করে চলে যাবার জন্যে উঠে দাড়াতেই ওপরের দিকে তাকিয়ে চোখঁ বন্ধ করে বলতে লাগলাম,,

এই পরিটাকে কমলা কালার ড্রেসে দেখে ফিদা হয়ে গেছি,

ওনার কথাটা শুনে থমকে দাড়ালাম,দেখি আর কি বলে ওনার পরির কথা।

তার টানা টানা গাড়ো কাজল দেয়া চোখেঁর মায়ায় পরেছি

গাড়ো কাজল তো আমিও দিয়েছি,সেদিকে কি কোনো খেয়াল আছে ওনার

তার ঠোটের নিচের তীলটা খুব আকৃষ্ট করে তার কাছে টানছে

আমারো তো ঠোঁটের নিচে তিল,,,

তার হালকা গোলাপী লিপস্টিক বড্ড বেশি জালাচ্ছে আমাকে

দৌড়ে গিয়ে দেখলাম যে ল্যাপটপে রুমের সিসি ক্যামেরার ভিডিও চলছে। তার মানে উনি আমাকে চুরি করে দেখছিলো। তবেরে,,

চলবে,,

ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে