#ভালোবাসায়_রাঙিয়ে_দাও(১১)
ইশান সকাল সকাল কাচাঁ বাজার কিনতে বের হয়েছে। মুন কিচেনে এসে দেখে ইশানকে লম্বা একটা লিস্ট করে দিয়েছে যে সকল সামগ্রী তার দরকার। মাসুদ অবশ্য কল করে ইশান আর মুনকে সেখানেই দুই দিন থাকতে বলেছে তবুও ইশান শুনেনি আজ হোক কাল হোক সব তো নিজেদেরকেই গুছিয়ে নিতে হবে। আপাততঃ ইশান ছোটো রকমের ভাত ফুটানোর জন্য কুকার কিনেছে, কড়াই,কুন্তি, দাঁ,থালা,মিনি ফ্রিজ ও মশলা সহ কাচাঁ সবজি কিছু ডিম। ফ্রিজ সেটিং না করে তো আর কোন কিছু বরফ করতে পারবেনা। বাসায় আসতেই এগারোটা বেজে গেছে । মুন কে সকালে বাইরে থেকে খাবার এনে দিয়ে গেছিলো ইশান। ইশানের সাথে আরও একটা ছেলে এসেছে সে সব কিছু বাসার ভেতরে এনে সেটিং করে দিয়ে চলে গেছে। মুন কিচেনে এসে দেখে ইশান সব কিছু গুছানোর চেষ্টা করছে। মুন ও হাতে হাতে সব রাখে।
আপনি কি বিকেলে ফ্রি?
কেন? তোমার একাঁ থাকতে ভয় করবে?
না সেরকম নয়।
আমি তিন ঘন্টা পর আসার চেষ্টা করবো মুন।
না। বাসায় আমি সুস্থই থাকবো শুধু শুধু কেন আপনি ওখানে অসুস্থ মানুষ রেখে দ্রুত ফিরবেন?আমি তাহলে রান্না বসাই?
তুমি আসলেই পারবে মুন?
হুম। দাদী আমায় অনেক রান্নাই শিখিয়েছেন।
এই না হলে আমার বউ?
মুন লজ্জা পায় তবে কিছুই বলেনা। চালের বস্থা থেকে চাউল বের করে নিয়েউ কুকারে বসায় ভাত ফুটাতে। সবজির সাথে ডিম দেখে সেগুলো দিয়েই রান্না করে। সকালে হালকা বাইরের খাবার খেয়েছে ইশান নিশ্চয়ই অনেক ক্ষুদা পেয়েছে?
ইশান গোসল করে নিয়ে একেবারে রেডি হয় আজকে চেম্বারে বসতে হবে। মুন টেবিলে প্লেট সাজিয়ে ইশানকে ডাকতে যায়। পরিপাটি ইশানকে দেখে মুন থমকে যায় এত সুন্দর কেন ইশান?রোজ এভাবেই সেজে গুজে যায় নাকি?মুনের থেকে বছর দশের বড় কে বলেছে ইশান?ইশানকে দেখে এখন দশ বছরের বাচ্চা মেয়েরাও ক্রাশ খাবে। ক্রাশ তো অতিরিক্ত স্বাদের মা’রাত্ত’ক একটা খাবার।
ইশান আয়নার দিকে তাকিয়ে মুনকে বলে,কাজ শেষ?
হ্যাঁ।
তুমি ফ্রেশ হও আমি বসে আছি।
আপনি খাবার খেয়ে যাবেন তারপর আমি একেবারে গোসল করে নেবো।
না না। তুমি আমার সাথেই খাবার খাবে। দুই বছরে এই প্রথম বার স্ত্রীর হাতের রান্না করা খাবার খাবো আবার তাও স্ত্রী কে পাশে না নিয়েই? তা কি করে হয়। চলো আমার সাথে আমি নিজের হাতে তোমায় খাইয়ে দেবো।
মুন অবাক চোখে ইশানকে দেখে ইশান কি সত্যই এরকম করে কথা বলছে তার সাথে?আবার মুনকে নিজের হাতে তুলে খাইয়েও
দিবে বলেছে!! মুন আর অপেক্ষা করবে কেন?
ইশান ওকে ফ্রেশ হতে বলে রুম থেকে বের হয়ে টেবিলের দিকে যায়। মুন হাত মুখ ধুয়ে এসে তোয়ালে দিয়ে মুছেঁ নিয়ে বের হয়। ইশান সত্যই তার জন্য অপেক্ষা করে বসে আছে খাবার টেবিলে। মুন কে দেখেই ইশান পাশের চেয়ারে বসতে বলে, মুন বসতেই ইশান বলে, আমি খাইয়ে দিই?
মুন কিছুই বলতে পারেনা,কি বলবে?তার তো মনের মাঝে লাড্ডু ফুটছে!!
———————-
ইমরান কলেজের সামনের চা স্টলে বসে আছে বন্ধুদের সাথে তাদের সাথে থেকেও যেনো সে এখানে নেই মনটা সেই ইশানেতেই রয়েছে ইশান তার বড় ভাই। ইকবালের থেকেও ইশানের সাথে তার মোহাব্বাত অনেক বেশি।ইকবালের বয়স ইশানের চেয়েও পাচঁ বছর এর বেশি আর ইশান ইমরানের তিন বছরের বড় তাই তো ছোটো দুই ভাইয়ের মাঝে ভালোবাসা ছিলো অনেক বেশি। দুই একটা ভুল হলে ইকবাল বা বাবা মা ইমরানকে শাসন করেছে কিন্তু দাদু আর ইশান ভাই কখনো বকা দেয়নি তারা ভালোবেসে আগলে নিয়েছে।
আর আজকে এসে এসব কি থেকে কি হলো?
ইমরানের মন উদাস হয়ে আছে চোখে মুখে অস্থিরতা ভাইয়ের কাছে মুখ দেখাবে কি করে?আর মুন??মুনকে নিয়ে যে অনুভূতি সৃষ্টি হলো তার কি হবে?
কিরে ইমরান?এভাবে চুপ চাপ বসে আছিস কেন?তুই তো বন্ধুদের মাঝে সব থেকে বেশি চঞ্চল তোকে চুপ থাকা মানায়?
তোরা মজা কর না আরিফ! আমাকে বাদ দে আমি এখানেই রয়েছি।
এটা একটা কথা বললি তুই ইমরান?তোকে মন খারাপ অবস্থা দেখেও আমরা মজা করতে পারব?
আমি জানি তোরা সবাই আমাকে কতটা ভালোবাসিস নাইম!
তাহলে?কি হয়েছে আমাদের খুলে বল! আমরা ও শুনি!
সেরকম কিছু নয় আরিফ। নাইম চাবি দে বাসায় চলে যাই মাসুদ ভাইয়ার সাথে আমাকে বের হতে হবে বিকেলে।
না ভাই আজ আর তুই চাবি সহজে পাচ্ছিস না। বাইক রেখে অটোতে করে চলে যা। না হয়…….
ইমরান এবার যথেষ্ট উত্তেজিত হয় তার এসব ত্যাড়ামো কথা বার্তা শুনতে একদম ভালো লাগছেনা,
ফাইজালামি পাইছস?
আরিফ থতমত খেয়ে যায় -হুট করে ইমরান এত উত্তেজিত হবে কেন?
ইমরান…….
চুপ কর সা’লা তারাতাড়ি চাবি দে…….. কান পরিস্কার নেই তোদের? শুনতে পাস না?
ইমরামের দিকে উপস্থিত সবাই অবাক চোখে তাকায় ছয়জন বন্ধুই অবাক হয়ে গেছে এত দিনেও ইমরান এভাবে হুট করে রে’গে যায়নি। এর মাঝেই নাইমের হাত থেকে চাবি নিয়ে রাস্তার দিকে এগিয়ে যায় কিন্তু সেই সময় জেরিন আসে ইমরানের সামনে মেয়েটা এবার অনার্স এ নতুন ভর্তি হয়েছে এই কয়েক মাসেই ইমরানকে বেশ কয়েক বার সে প্রেমের প্রস্তাব পাঠিয়ে দিয়েছে। জেরিন ওকে দেখেই লজ্জা পেয়ে যায় তবুও সাহসে মাথা তুলে বলে,
আপনি কি আ……….
ব্যাস রা’গের মাথায় থাকা ইমরান আর কিছুই শুনতে চায় না টাস করে একটা চ’ড় বসিয়ে দেয় জেরিনের গালে।
এমন হুট করে যে ইমরান জেরিনের গায়ে হাত তুলবে তা ক্ষুনাক্ষরেও জেরিন ভাবেনি।
টলমল চোখে ইমরানের দিকেই তাকিয়ে রয়েছে। ইমরানের পিছু পিছু আসা সকল বন্ধুরাও হতবাক হয়ে যায় এই ইমরানের আসলে হয়েছেটা কি.?সকাল বেলা আজকে কয়েক দিন পর গ্রামের বাসা থেকে এসেই কলেজ এ এসেছে। শুনেছে গত কাল ফিরেছে এখানে। সকাল থেকেই চুপচাপ ছিলো বলে সবাই মিলে এখামে এসে বসেছে এই বিকেলে কিন্তু কি থেকে কি হয়ে যাচ্ছে এখন আবার জেরিন কেও চ ড় বসিয়েছে!!
ইমরান জ্জেরিনের দিকে না তাকিয়েই বাইকে বসে চলে যায় খালার বাসার দিকে। জেরিন ওর চলে যাওয়া পথের দিকেই তাকিয়ে থাকে। নাইমরা সবাই কাছে এসে বলে,জেরিন…….
জেরিন প্লিজ কিছু মনে করো না। আমাদের বন্ধু সকাল থেকেই একটু অন্যরকম হয়ে ছিলো তাই হুট করে তোমাকে……..
আমি কিছু মনে করি নাই ভাইয়া। আমার হয়তো এটাই উপযুক্ত পাওনা ছিলো তাই পেয়ে গেলাম। আমি…….
আমি আসছি।
—————–
মুন জানালার পাশে বসে রয়েছে ইশান যাওয়ার সময় তাকে একটা মোবাইল দিয়ে গেছে। কোন প্রয়োজন হলে কল করতে বলেছে সকলের নাম্বার রয়েছে সেভ লিস্ট এ। মিমের সাথে ভিডিও কলে কথা বলছে। মিমের জন্য তার মন কেমন করে আপুটার সাথে হুট হাট দেখাও হয় না। দুলাভাইয়ের কাজের জন্য আপুটা অনেক দূরে রয়েছে। তারপর কল করে রিয়ার কাছে রাইফি সহ সকলের সাথেই লথা বলে। এরপর দেখে ইশান কল করছে তাই রিয়াত কল রেখে ওর টা রিসিভ করে।
কি করছিলে?
কিছুনা বসে আছি।
ভয় লাগছে?
না। ঠিক আছি আপনি ফিরবেন কখন?
অনেক গুলো পেশেন্ট রয়েছে তাদের সাথে মিট করেই যাবো রাত হতে পারে
ওহ।
মুন!
হু।
আমাকে তুমি , আপনি করে নয় তুমি বলেই বলো… কেমন?
হু।
আচ্ছা রাখছি এখন। ব্যাস্ত রয়েছি এখন।
হুম দ্রুত আসার চেষ্টা করবে।
ইশানের ভালো লাগে। মুন সহজ ভাবেই সব নিতে শিখছে সব এবার শুধু তাকে পুরোটা ভালোবাসলেই হয়।
চলবে
#মিশকাতুল