ভালোবাসায়_রাঙিয়ে_দাও পর্ব-১০

0
619

#ভালোবাসায়_রাঙিয়ে_দাও(১০)

ইশান ফ্রেশ হয়ে আসে শার্ট বদলে হোয়াইট চিকন হাতার গেঞ্জি পরে নেয়। বিছানার দিকে গিয়ে মুনের পাশেই শুয়ে পরে। ইমরানের গা’য়ে এই প্রথম সে হাত তুলেছে তাই একটু নয় অনেক বেশিই খারাপ লাগছে। রাত এখন অনেক হয়েছে বাইরে শীতল বাতাস বইছে। জানালার ফাকঁ গলিয়ে ভেতরে প্রবেশ করছে। মুন শীতলতায় নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে বিছানায় রাখা পাতলা কম্বল তুলে দেয় মুনের শরীরে। মুন গরম ভাব অনুভব করে তা ভালো করে জড়িয়ে নেয়। ইশান ওর থেকে সরে আসতে নিতেই মুন ইশানের ডান হাত এক হাত দিয়ে ধরে ফেলে ইশান চমকে ওঠে তবে বুঝতে পারে ঘুমের মাঝেই ধরে নিয়েছে মুন। মুন সেই হাত নিয়ে আলগোছে নিজের পে’টের উপরে রাখে ইশানের সমস্ত শরীর কে’পে ওঠে। পাগোল করে ফেলবে নাকি এই মেয়ে এখন তাকে।
ইশান সে ভাবেই বসে থাকে পাশে একসময় ঘুমিয়েও যায়। সকাল বেলা মুনের আগে ঘুমে ভাংগে পাশে তাকিয়ে দেখে ইশান বিছানার সাথে হেলান দিয়ে ঘুমিয়েছে আর ইশানের এক হাত ওর নিজের হাত দিয়ে বুকের সাথে চেপেঁ ধরে আছে!মুন লজ্জা পায় পর পর বিছানা থেকে নেমে ইশানের মাথা ধরে বালিশে রাখতে চায় কিন্তু ইশান নড়ে চড়ে একেবারে মুনের দিকে তাকিয়ে বলে, ঘুম হলো?

হ্যাঁ।

তোমার প্রয়োজনীয় এখানে যা আছে সব প্যাক করে নাও বাকিটা আমি সপিং করতে নিয়ে যাবো কেমন?

হু।

——-
ইমরান সকাল সকাল ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে বের হয়েছে ওকে দেখে শাহেদা অবাক হয় এত সকালে কোথায় যাবে ইমরান?রিয়াও এসে বলে,
তুমি না কয়েকদিনের ছুটি পেয়েছো কলেজ থেকে!

হ্যাঁ।

তাহলে এত তারাতাড়ি ফিরছো যে?

কাজ আজে আমার ওখানে।

ইশানের বাবা এসে জিজ্ঞেস করে, কি কাজ আছে?যে খাবার না খেয়েই বের হতে হবে।

আব্বু প্লিজ !

কোন সমস্যা হয়েছে?

সেরকম নয় আব্বু।

তাহলে?

তাহলে আর কি কিছুই না আমি ফিরে যাবো এটাই।

কিন্তু সে তো বিকেলেও যাওয়া যায়। আজকে ইশান চলে যাবে সাথে মুন ও যাচ্ছে ওদের বিদায় দিয়ে যেও।

ইমরান উত্তেজিত হয়ে বলে, এত কথা কেন আসছে?
আমি এখন যেতে চাইছি মানে এখনই যাবো।

ইমরানের উচ্চ আওয়াজে কথা শুনে ইশান আর মুন রুম থেকে বের হয়ে আসে।
কি হয়েছে?
ইশানকে দেখে ইমরান মাথা নিচু করে ফেলে মুন ইমরানের দিকে অবাক হয়ে দেখছে ইমরানকে কখনো রা’গতে দেখেনি মুন।কি হলো এমন?
যে এই সকাল সকাল ইমরাম ক্ষে’পে আছে?

মুন ভয়ে চুপসে আছে এতদিন শুধু তিন ভাইয়ের মাঝে ইশানকেই রাগ করতে দেখেছে আজ আবার ইমরান ও শুরু করেছে। বসার রুমে ইশান,রিয়া মা বাবা আর ইমরান ছিলো এতক্ষন এখন ইকবাল ও রাইফিকে নিয়ে বের হয়েছে।

কি হয়েছে ওর রিয়া?

রিয়া আমতা আমতা করে বলে,জানিনা। ইমরান হুট করেই আজকে কেমন যেনো করছে।

ইকবাল ইমরানের দকে এগিয়ে যায় মাথায় হাত রেখে বলে, দাদুর বয়স হয়েছে ইমরান এখন উনি যদি এসে দেখে তুই ও ইশানের মতো রা’গ করে চলে যেতে চাইছিস তিনি কতটা হার্ট হবে তা তুই জানিস। দাদু আমাদের তিন ভাইকেই অনেক ভালোবাসে ইমরান। আস্তে কথা বল। তোর সমস্যার কথা আমাদের সবাইকে খুলে বল।

ইমরান ব্যাগ সোফায় রেখে বলে, আচ্ছা ঠিক আছে আমি নাস্তা করতে বসছি আর বিকেলেও যাবো হয়েছে??

কেউ আর কিছুই বললো না। ইশান মুনের দিকে তাকিয়ে একবার দেখলো। তারপর টেবিলে গিয়ে বসলো।

বিকেল হতেই ইশান আর মুন ল্যাগেজ নিয়ে গাড়ির দিকে এগিয়ে এলো মুনের দাদা দাদু ও বাবা মাও এসেছে দুপুরে মেয়েকে বিদায় দিতে। দাদী অনেক কিছুই শিখিয়ে দিচ্ছে মুনকে এখন তো ওখানে কেউ থাকবেনা দুজন ছাড়া নিজেদেরকেই সব মানিয়ে, বুঝে নিতে হবে।
মুনের এখন খারাপ লাগছে সবাইকে ছেড়ে ইশানের সাথে চলে যেতে তখন যদিও খুশি হয়েছিলো । ইমরান সদর দরজাতেই দাঁড়িয়ে রয়েছে গাড়ি পর্যন্ত আসেনি সে। মুন হাতের ইশারাতে ওকে বিদায় জানিয়ে গাড়ির ভেতরে গিয়ে বসে। রিয়া আর ইকবাল ইশানকে অনেক পরামর্শ দিচ্ছে এই প্রথম বউ নিয়ে যাচ্ছে কি না!মুন তো ছোটো হয়তো দুই একটা কথা কা’টা’কা’টি হবে জীবন গড়তে গিয়ে সংসার সামাল দিতে গিয়ে তবে রে’গে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবেনা।

ইশান ও সবাইকে বিদায় দিয়ে মুনকে নিয়ে বের হয়। গাড়িতে মুন চুপচাপ থেকেছে ইশান যদি কিছু জিজ্ঞেস করেছে তার উত্তর দিয়েছে।
ইশানের গাড়ি থামে একটা ফ্ল্যাটের সামনে। ইশান ওকে জানায় এই বিল্ডিং এর একটা ফ্ল্যাট সে কিনে নিয়েছে। ইশানের সাথেই চারতলা ভবনে আসে মুন। উত্তর দিকে একটা ফ্ল্যাটের
সামনে এসে চাবি দিয়ে দরজা খুলে দেয় ইশান মুন ভেতরে আসে প্রথমেই বসার জন্য জায়গা রয়েছে কছুটা তার ডান পাশে কিচেন ও টেবিল রয়েছে আর বসার রুমের সাথেই দুটো বেডরুম। ইশান একটা তে চলে যায় মুনকেও আসতে বলে মুন ভেতরে আসে রুমের সাথেই ওয়াশরুম রয়েছে। ইশান ওকে ফ্রেশ হয়ে নিতে বলে। মুন ব্যাগ থেকে ফেসওয়াশ বের করে নেয়। বোরকা খুলে ওড়না নিয়ে নেয়। ওয়াশ রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে। মুখে হালকা করে প্রসাধনী ব্যবহার করে নিয়ে বিছানায় বসে। জানালার পাশে বিছানা ছোট একটা বেলকুনি রয়েছে।রুমের ভেতরে স্টিলের আলমারি তার পাশেই ড্রেসিন টেবিল ও কাপড় রাখার ট্রলি। দুটো সিংগেল সোফা ও সামনে ছোটো একটা কাচের টেবিল। মুনের রুম পছন্দ হয়েছে। ইশান ফ্রেশ হয়ে এসে বলে, এখানে তুমি আর আমি ছাড়া কেউ নেই আমাদের নিজেরই সব ব্যাবস্থা করে নিতে হবে এত দিন আমি খালামুনির বাসাতে ছিলাম মানে মাসুদ ভাইয়াদের সাথে। তুমি কি রান্না করতে পারো?

রান্না?

হ্যাঁ। যদি না জানো সমস্যা নেই আমি রান্নার লোক নিয়ে আসবো।

আমি পারি।

আচ্ছা। ওহ হ্যাঁ একটা মেয়ে আসে আমি ওকে বলে দেব তোমার কিছু কিছু কাজ সে প্রতিদিন করে দিয়ে যাবে। এখন তো রাত হয়েছে রান্না করতে অনেক সময় লাগবে। চলো বাইরে থেকে খাবার খেয়ে আসি।

চলুন।

ইশান ওকে নিয়ে বের হয়।
পাশের রুম দেখিয়ে মুন বলে, ওখানে কি আছে?

কিছুই নেই একদম ফাকাঁ আমি মাসুদ ভাইকে বলে দুই দিনের মাঝে এতটুকুই সাজাঁতে পেরেছি। রুমে যা কিছু দেখছো তা গত কাল রাতে মাসুদ ভাই আর তার স্ত্রী এসে গুছিয়ে দিয়ে গেছে।

ওহ আচ্ছা।

এখানে যে কাউকে সহজে বিশ্বাস করবেনা।
সবাই তোমার মতো হবেনা।

আচ্ছা।

আমাকে বিশ্বাস করো তো মুন?

ইশান মুনের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে উত্তর কি বলবে মুন তা শোনার জন্য আগ্রহী চোখ নিয়ে তাকিয়ে দেখে মুনকে।

করি। আপনি আমার স্বামী না?আপনাকে অবিশ্বাস করবো কেন?

আর বিশ্বাস ই বা করবে কেন?আমি তো তোমার সাথে কখনো ভালো ব্যাবহার ও করিনি। তাই না?

সেরকম নয়। আমি জানি আপনি যথেষ্ট দায়িত্ববান নিজের স্ত্রী এর সাথে অমানবিকতা দেখাবেন না।

ইশানের ভালো লাগে। মুন শুধু পড়াশোনাতে ভালো বলেই নয় সব দিক থেকে ভালো আছে। যথেষ্ট বুদ্ধিমতী মেয়ে। ইশানের হয়ে থাকবে তো সব সময়!!

চলবে
#মিশকাতুল

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে