ভালোবাসায়_রাঙিয়ে_দাও পর্ব-০৫

0
665

#ভালোবাসায়_রাঙিয়ে_দাও(৫)

মেলার ভেতরে চলে এসেছে মুন ইমরান, ইশান আর ওই ছেলেটা ওর থেকে বেশ কিছুটা আগে আগে যাচ্ছে আর মুন পেছনে পরে গেছে। বৌ মেলা নাম হলেও এখানে ছেলেরাও এসেছে অনেক বেশি বেশির ভাগ মেয়েদের সরঞ্জাম পাওয়া যাচ্ছে বলেই হয়তো বউ মেলা নাম দেওয়া হয়েছে। মুনের যেদিকে চোখ যাচ্ছে সেটাই পছন্দ হয়ে যাচ্ছে। কি রেখে কি নেবে সে?সাথে টাকা রাখার জন্য পার্স ও রয়েছে মানে এখন ইমরান বা ইশানের থেকে ওর টাকা নিতে হবে না ইচ্ছে করলেই সে পছন্দের অনেক কিছুই কিনে ফেলতে পারে তাহলে ওর ওদের পিছুঁ পিছুঁ ঘুর ঘুর করার কোনো মানে হয় কি?না হয়না। তাই তো মুন ওদের পিছুঁ নেওয়া বন্ধ করে দিলো। আশে পাশে যেদিকে চোখ যাচ্ছে সেদিকেই হাটঁছে আর এটা ওটা কিনে ফেলছে। এভাবেই কেনা*কা*টা করতে করতে সময়ের দিকে একদম খেয়াল করলো না মুন। যখন দেখলো সব দোকানে বিদ্যুতিক আলো জ্বালানো হয়েছে তখন খেয়াল করলো অনেক সময় নিয়ে ফেলেছে সে। যখন বাসা থেকে বের হয় তখন ছিলো বিকেল দুটো এখানে আসতে সময় লেগেছে এক ঘন্টার ও কিছু সময় বেশি আর এখন হাতের ঘড়ির কা*টা জানিয়ে দিচ্ছে রাত আটটা বেজে দশ মিনিট। মুন হাতে ধরে রাখা সব গুলি ব্যাগ দেখে নিলো না হলেও দশ থেকে এগারোটা ব্যাগ নেওয়া হয়েছে আর এর মাঝে অসংখ্য মেয়েলী জিনিস পত্র কেনা হয়েছে হাতের চুড়ি থেকে শুরু করে পায়ের নুপুর সব কিনে ফেলেছে মুন। এখন ফিরবে কোন দিকে?কোন দিক থেকে সে এখানে প্রবেশ করেছে বুঝতেই পারছে না। যেদিকেই চোখ যায় সেদিকেই একই রকম প্রবেশ করার গেট করা হয়েছে এই খোলা মাঠে এখন এত বড় একটা মেলার কোন দিকে যাবে সে?ইমরান আর ইশান? ওরা কোন দিকে আছে?কেনা জিনিস কিনতেই সব টাকা শেষ করে ফেলেছে মুন এখন যদি ওদের সাথে দেখা না হয়?তবে ফিরবে কি করে?এক ঘন্টার রাস্তা তো ফিরতে ফিরতে দুই তিন ঘন্টা লেগে যাবে । ভাবতে ভাবতেই মেলার ভেতর থেকে বাইরে এলো এদিকে ওদিকে দুই চোখ মেলে তাকাতেঁই ঝড়ের গতিতে কেউ ওর হাত টেনে সামনের দিকে ফেরালো মুন কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাম গালে সজোড়ে টাস টাস আওয়াজে তিনটা থা প্প ড় পরে গেলো ইমরান আহম্মক বনে গেলো সামনের দিকে তাকিয়ে। ইশান ও কম নয়। মুন কান্নাঁ ভেজাঁ চোখে সামনের দিকে তাকিয়েই বুঝলো ওর মা দাঁড়িয়ে আছে রুদ্রমুর্তি হয়ে। যেখানে চ*ড় গুলি পরেছে সেখানে এখনো যেনো জ্বলছে। মিথিলা আবার ও হাত তুলবে তার আগেই শাহেদা এসে থামালেন ওনাকে।

আহ্ ভাবী ছাড়ুন না সবাই দেখছে আমার বৌমাকে!
যা বলার বাসায় গিয়ে বললেই হয়।
মিথিলা থেমে গেলেন। মেয়ে কি এখন শুধু তার একার আছে? বিয়ে হয়েছে শাহেদাও ওর অবিভাবক ওনার কথার ও দাম দিতে হবে। মিথিলা আর কিছুই বললো না। তবে চোয়াল শক্ত করে রাখলো। মুনের হাতের ব্যাগ গুলি আলগোছে ইমরান নিয়ে নিলো। সেই বিকেল তিনটা থেকেই ওরা হন্য হয়ে খুজেঁছে মুনকে অথচ পুরো মেলাতে ঘুড়েও ওর দেখা পেলো না আসলে হয়েছে এমনটা যে যখন ওরা মুনকে খুঁজতে উত্তর পাশে যায় তখন মুন থাকে দক্ষিন দিকে আবার পুর্ব দিকে খুঁজতে যায় তখন তার পশ্চিম পাশে এভাবে পাবে কি করে বিকেলে থেকে ওর চিন্তায় দুই ভাই কাউকে কিছু জানাতেও পারেনি পাগলের মতো খুজেঁছে কিন্তু আটটা বাজতেই এই খবর রিয়ার মাধ্যমে বাসার সবাই জেনেছে আসলে রিয়া কল করেছিলো ওরা এখনো ফিরছেনা কেন? এই জানতে কিন্তু কল করেই জানলো মুন কে পাচ্ছেনা। তাই তো সবাইকে জানিয়ে দিয়েছে রিয়া। ওরা এসে মাত্রই গাড়ি থেকে নেমেছে আর সামনে দেখে মুন চিন্তিত মুখে এদিক ওদিকে দেখছে।
মিথিলার মাথায় রক্ত উঠে যাচ্ছে তার মেয়ে হয়ে মুন এত বোকা হলো কি করে?এরকম মেয়ে তো সে চায়নাই!একটুও কি আলাদা জ্ঞান থাকবেনা মেয়ের মাঝে?সব সময় বই নিয়ে থাকলে কি এরকম হবে?আলাদা জ্ঞানের কি দরকার নেই

মুনকে নিয়ে ইশানদের বাসাতেই এসেছে সকলে মুনের বাবাও রয়েছে দাদুও এসেছে তবে সে মেলাতে খুজঁতে যায়নি। ইশান এর বাবা মা আর মুনের বাবা মা গিয়েছিলেন। মুন সোফায় বসে রিয়ার সাথে লেপ্টে বসে কান্নাঁ করছে রিয়া ওকে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে শান্তনা দিচ্ছে । কিন্তু থামার নাম নিচ্ছে না মুন।

ইশানের দাদু মুনের থেকে চোখ ফিরিয়ে বাকি সবার দিকে তাকিয়ে বললেন, আচ্ছা ওর অল্প বয়স ভুল করেছে! আর ও কি ইচ্ছে করে হাড়িয়ে যেতে চেয়েছে নাকি?এভাবে ওকে বকা দেওয়ার কি আছে।

সবাই মানলেন তবে মিথিলা বসে রইলেন না মুনের দিকে তাকিয়ে শক্ত গলায় বলেন,তুই কি এখনো ছোটো আছিস মুন?তোর বয়সে আমি মিম কে জন্ম দিয়েছিলাম। আর তুই?মানলাম তুই একটু বাইরে গেছিস কম তাই বলে হারিয়ে যাবি?তুই জানিস?তোকে খুজঁতে কত কষ্ট করেছে ইশান আর ইমরান?ছেলে দুটো কতটা হয়রানি হয়েছে সে হিসেব আছে?ওদের সাথে গিয়ে থাকতে থাকতে তুই হাওয়া যাবি পেছন থেকে? ইমরান?ব্যাগ গুলি এখানে আনো দেখি আগে কি সব কিনেছে যার জন্য এত সময় লেগেছে ওর?ইমরান হাতের ব্যাগ গুলো পেছনে লুকিয়ে ফেললো কিন্তু ইশান সেসব ব্যাগ ওর হাত থেকে ছাড়িয়ে নিলো সামনের দিক্ব ছুড়েঁ ফেলে দিয়ে চলে গেলো রুমের দিকে এইবার! এইবারে তো মুনের কান্নাঁ নতুন উদ্যোগ নিয়ে শুরু হলো।

—————–
চলে গেলো আরও দুটো দিন। এই দুই দিনে মুন ইশান এর রুমেও শুতে যায়নি ফাকাঁ রুমে একা থেকেছে কিন্তু আজকে রিয়া তাকে জোড় করে ইশানের রুমে দিয়েগেছে। সেদিন মুনের কেনা সব জিনিস প্রায় ইশান ফেলে দিয়ে নষ্ট করে দিয়েছে। তাই তো দুঃখ পায় সে ইশানের মুখটা দেখলেই কত সময় নিয়ে বেছেঁ বেছেঁ সে সব সাজুগুজু কিনেছিল?ইশানের রুমে এসে বিছানায় চুপ করে আগেই শুয়ে আছে মুন ওই লোকের সাথে আর কোন কথা নেই। রাত যখন এগারোটা বেজে গেছে তখন ইশান রুমে এসেছে সে এতক্ষন বেলকুনিতে ছিলো বই নিয়ে। রুমে এসে বিছানায় মুনকে দেখে বিরক্ত হলো এই মেয়েটা আবার ধেইঁ ধেইঁ করে থাকতে চলে এলো?

কি ব্যাপার ওই রুমে কি সমস্যা দেখা দিয়েছে?যস দুই রাত না যেতেই চলে এসেছ?

মুন আমতা আমতা করে বলে,আমি মানে আমাকে ভাবী এনে রেখে গেলো।

কেন?

কেন আমার?আমি আর তুমি বর বউ না ইশান ভাইয়া?আমাদের তো এক বিছানাতেই থাকা দরকার।।

তা আর কি দরকার বর বউ এর মাঝে?

কি আবার প্রেম করাটাও দরকার!

শুধু প্রেম?আর কিছু?

আর আবার কি দরকার?প্রেম তো করতেই হবে আমাদের দুজনকে। আচ্ছা তুমি কবে থেকে আমার সাথে প্রেম করবে?

প্রেম করলে আমি কি কি পাব?

তুমি?এই যেমন ধরো সপ্তাহে একবার করে লিপ কিস! তারপর প্রতিদিন হাত ধরতে পারবে শুধু তাই নয় তুমি চাইলে আমাকে হাগও করতে………

ইশান চোয়াল শক্ত করে ধমকের সুরে বললো, থাম!অনেক বলেছিস তুই!!তুই তো আর বাচ্চা নস রে মুন!!তুই তো ইঁচড়ে পাঁকা!!

আমি!!ইচ…….

হ্যাঁ হ্যাঁ যাকে বলে অকাল পঁক্ক!!
মুন ব্যাকরণ খুব ভালো জানে এই বাগধারাও সে বুঝেছে তাকে ইশান অপমান করলো তাহলে?এই মুনকে?মুন অপমানিত হয়েছে?নাহ্ কিভাবে অপমানিত হবে সে?সে তো রুমে একা। আর ইশানের কাছে তো নিজেকে সে অপমানিত মনে করবেই না। তাহলে আর ভাবনার কি আছে?কেউ দেখেনি এই কথা বলতে ইশান কে ভেবেই মনে মনে হাসলো মুন!!
ইশান ওর দিকে ভ্রঁু কুচঁকে দেখে পাশে রাখা জায়গায় শুয়ে পরলো যত্তসব!!

চলবে
#মিশকাতুল

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে