#ভালোবাসায়_রাঙিয়ে_দাও(২০/শেষ পর্ব)
জেরিন আর জেরিনের বড় বোন এসেছে ইশান আর মুনকে দাওয়াত দিতে। ইশানের সাথে জেরিনের বড় বোন কথা বলছে। সে নাকি ইশানকে আগেও দেখেছে জেরিনের বড় আপু হলো একজন নার্স সেই হিসেবেই হয়তো ইশানকে হসপিটালে দেখেছে জানে। জেরিন মুনের সাথে বসে আছে। মুন জেরিনকে ভালো করে পর্যবেক্ষন করে এ হবে ইমরানের বউ তাই না?জেরিন মুনের বড় তাই মুন ওকে আপু বলেই ডাকছে। মুনের জেরিনকে ভালোই লাগে শ্যামলা গায়ের রঙ তবুও চেহারাতে মায়া মায়া ছাপ রয়েছে। জেরিনের সাথে যে কয়েক বারই দেখা হয়েছে তাতে মনে হয় মেয়েটা খুবই ভালো বন্ধুত্বপূর্ণ।
জেরিন রা ওদের কে দাওয়াত করে যায়। ইশান কে অনেক বলে কিয়ে রাজি করিয়েছে জেরিনের বড় আপু জারিন।ইশান চাইছিলো না মুনকে এই অবস্থায় হৈ, হুল্লোড় পরিবেশে নিয়ে যেতে।
দেখতে দেখতে জারিনের বিয়ের দিন এগিয়ে আসে সুমনদের সাথে ইমরান আর মুন ও আসে। সেই সাথে ইমরান,নাইমরাও আসে। ওদের তিন জন কে এখানে দেখে মুন অবাক হয় বিয়ের আগেই ইমরান শশুড় এর বাসায় দাওয়াত খেতে চলে এসেছে??
মুন ইমরান কে দেখে এগিয়ে আসে পেছন থেকে বলে,
ইমরান ভাইয়া!!
ইমরান ঘুরে দেখে মুনকে তারপর হাসি হাসি মুখ করে মুনকে নিয়ে চেয়ারের দিকে যায় সেখানে বসে বলে,
আসলে জেরিনের সাথে আমার প্রেম হয়েছে মুন!তাই দাওয়াত পেয়েই চলে এসেছি।
মুন অবাক হয় ও ভেবেছিলো ইমরান এ ব্যাপার তাদের কাছে লুকাবে কিন্তু
এ তো আগেই সব বলে দিলো।
তার মানে তুমি প্রেম করছো ইমরান ভাইয়া?
হুম। তুই আর ইশান ভাইয়া এখন আমায় হেল্প করবি ওকে?
আমি না হয় করলাম কিন্তু তোমার ভাইয়া কি করবে?
কেন?আব্বু আম্মুকে বাসায় গিয়ে জানাবে তবেই হবে।
মুন অবাক হয়ে বলে, বাসায় এখুনি জানিয়ে দেবে?
তা নইলে কবে জানাব? বড় বোনের বিয়ে হবে এর পর নিশ্চয়ই ওর ও বিয়ে দিতে চাইবে।
মুন কিছুটা ভেবে বলে, তাও তো ঠিক কথাই।
আচ্ছা এবার বাসায় গিয়েই জানানো হবে সবাইকে আগে রিয়া ভাবীকে জানাতে হবে তাহলেও অর্ধেক কাজ হয়েযাবে।
ভালো আইডিয়া। ভাইয়া কই?
সুমনের বাবার সাথে।
ওহ আচ্ছা।
—–
জেরিনের আপুর বিয়েতে সবাই অনেক মজা করে। এর মাঝে ইশান ইমরানকে নিয়ে এ ব্যাপারে কথাও বলেছে।
ইমরান আর জেরিনের সম্পর্ক এখন খুব ভালো। মুনকে গ্রামে নিয়ে রেখে এসেছে ইশান । সময় নেই খুব একটা মাত্র এক মাসের সময় আছে। এই সময় অবশ্যই একা থাকা রিস্কের হবে।
ইশান এখন সপ্তাহের চার দিনই গ্রামে এসে থাকে। মুনকে সময় দিতে চেষ্টা করে। মুন তো অল্প বয়সী একটা মেয়ে এই সময়ে কতটা পেইন হয় তা বুঝার চেষ্টা করে ইশান। মুনকে সব সময় সব ভাবেও শক্ত রাখার চেষ্টা করে ইশান। ওকে সাহস যুগিয়ে দেয়।
মুনের ভালো লাগে ইশান তাকে নিয়ে কতটা ভাবে?কতটা কেয়ার করে?এই এত এত ভালোবাসা ছেড়ে মুন যাবে কই?
শুধু বয়স এর পার্থক্যতে ভালোবাসা কমে যায় না। উল্টো ও তো হতে পারে তাই না?বয়স বা যোগ্যতা কিছুই না মনের সাথে মনের বন্ধন টাই সবার আগে।
প্রেগন্যান্সিতে মুড সুইমং চলে এই ভালো তো এই খারাপ যেমন মুনের এই ইচ্ছে করবে ওটা খেতে সামনে আনলেই আর খেতে চাইবেনা । এটা পছন্দ তো আবাফ ওটা পছন্দ। এই বসে থাকতে ভালো লাগবে তো এই দাঁড়িয়ে। এই হাসি পাচ্ছে আব্বার কান্নাঁ করতেও ইচ্ছে করবে । মনে হয় আর বেশি দিন ইশানের সাথে মা বাবার সাথে বাচাঁ হবে না। এই বুঝি সে হারিয়ে যাবে আর আবার মনে হবে সবার সাথে চিরকাল বেচেঁ থাকি না কি এমন ক্ষতি হবে?তবুও মুনের ভয় হয় সবাইকে হারিয়ে একা চলে যেতে হবে কি না তাকে কতটা ভয় কাজ করে?
দেখতে দেখতে সেই দিন ও চলে আসে মুনের পেইন উঠে। মুনকে ইশান হস্পিটাল নিতে চাইলেও মুনের দাদী বলেন, কিছুই হবে না আমি আছিতো মুনের অবস্থা ভালো শুধু শুধু এই সময় গাড়ি তুলে ঝাকিঁ তে রাস্তা দিয়ে না গেলেই ভালো হবে। ইশানের মোন মানে না কি যে হবে কে জানে?মুনের কান্নাঁর আওয়াজ আসছে। ইশান বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলো। ভোর রাত হতে চলেছে। ইশান মুনদের বাসাতেই ছিলো। মুনের খবর পেয়ে রিয়া, শাহেদা ও এসেছে। ছেলেকে চিন্তিত দেখে শাহেদা পাশে এসে হাত রাখে কাধেঁ ছেলেকে শান্ত হতে বলে। ইশান ও মাকে পেয়ে মায়ের বুকে মাথা রাখে। এই তো মায়ের বুকে কতটা শান্তি রয়েছে! তার সন্তান ও নিশ্চয় মুনের বুকে শান্ত হবে?ভাবতেই কেমন কেমন লাগছে।
আযান হতেই ইশান বাবা, দাদু,শশুড়দের সাথে মসজিদে চলে যায়। মুনের কান্নাঁ তার বুকে এসে লাগছে কেন?ওর জন্য প্রার্থনা করতে হবে তো নাকি?
ইশান নামাজ শেষ করে আসতেই মিম আর রিয়া ছুটেঁ এসে বলে,
অভিনন্দন! ডাক্তার সাহেব!
ইশানের ঠোঁটে হাসি দেখা মেলে তার সন্তান কি এসে গেছে তবে?
ইশান যেনো ক্কথা বলতেই ভুলে গেছে।
ওকে চুপ করে থাকতে দেখে রিয়া বলে,
কি হলো কথা বলছো না কেন?মুন আর তোমার মেয়ে একদম সুস্থ আছে। তোমাদের বংশে কত বছর পর মেয়ে সন্তান এসেছে তার হিসেব আছে?একশত বছরে মাত্র দুটো কন্যা। মুনের দাদী আর তোমায় মেয়ে। সেই খুশিতে আমাদের ট্রিট দেবে তুমি ওকে?
ইকবাল পেছন থেকে ছুৃঁটে আসে ইশানকে সামনে থেকে সরিয়ে দিতে দিতে বলে, কই ? রিয়া কই?আমার বউ মা কই?নিয়ে আসো দেখি তাকে।
রিয়া হেসে হেসে বলে, আমি নিয়ে আসছি।
——–
ইশান মুনের এক হাত ধরে বসে আছে বিছানার পাশে চেয়ার নিয়ে। মুন এখনো ঘুমিয়ে আছে। মেয়েকে দেখে ইশান তখন আবেগে কান্নাঁ করে ফেলেছে। তার প্রথম সন্তান । মুনের জন্য মোনটা কেমন করছিলো মেয়েকে আদর করেই মুনের কাছে এসেছে ইশান । স্বাভাবিক ভাবে বাচ্চা জন্ম নিলেও ইশান ডাক্টার নিয়ে এসেছে সে চেকআপ করে কিছু মেডিসিন দিয়ে গেছে।
।
সকাল সাতটার দিকে মুন উঠেই বাচ্চাকে দেখেছে। কত আদরের এই সন্তান? ইশানের দিকে তাকিয়ে মুন বলে,
খুশি?বাবুকে নিয়েছিলেন দুই হাতে?
হুম। অনেক খুশি আমি মুন।
মুন ইশানের দিকে তাকিয়েই রয় চোখ ফেরাতে ইচ্ছে করে না।
**
সময় চলে যায় চোখের পলক এর মতো কখন কিভাবে কতটা সময় চলে যায় আমরা বুঝতেই পারিনা। মুন আর ইশানের মেয়ে মেধার আজ ২য় তম জন্মদিন বাসায় সবাই উপস্থিত সেই সাথে ইশান সুমন দের ও ইনভাইট করেছে। ইমরান আর জেরিনের বিয়ের কথা দুই বছর আগেই ইশান বাসায় সবাইকে জানিয়েছে ওরাও অমত করেনি যেখানে ছেলের পছন্দ তারা সেখানেই বিয়ে করাবে ইমরান কে। এই জন্য জারিন কে ও তার জামাই সহ এক সাথেই দাওয়াত করেচগে। জেরিন তার বাবা মায়ের সাথে আসবে । মিম এবং তার শশুড় বাড়ির ও সবাই এসেছে। সবাই বললে ভুল হবে মিমের দেবর ফারিশ সে আসেনি। আসলে ফারিশ চায় না মুনের সামনে আসতে। নৌমির মতো শক্ত মনের মানুষ ফারিশ নয় যে নিজের ভালোবাসার মানুষ কে অন্য কারো সাথে সুখে দেখবে। তাইতো দুরেই থাকতে চায়। প্রতি ক্ষনে ক্ষনে ভালোবাসতে চায় তার মতো সে জানে তার ভালোবাসা কখনো মুনকে রাঙিয়ে দিতে পারবেনা। তাতে কি সে তো ভালোবাসে মুনকে।
যেহেতু মেধা ছোট বাচ্চা তাই জন্ম দিন এর আয়োজন রাতে না করে দুপুরে করেছে ইশান সবাই এসেও গেছে। মেধাকে সাদা রঙ এর পার্টি ড্রেস পরিয়ে দিয়েছে মুন। মেয়েকে সাজাতে সে পারদর্শী না হলেও রিয়া নিজের মতো করে সাজিয়ে দিয়েছে। সেই সাথে মুনকেও সাজিয়েছে। মুন ওত সাজবে কিভাবে সে তো এখনো মেয়ে আর বই নিয়েই বেচেঁ আছে ইশান মাঝে মাঝেই বিরক্ত হয় এত এত পড়াশোনা
নিয়ে ব্যাস্ত থাকে বলে। জবাবে মুন বলেছিলো, ইশানের পাশে দাঁড়িয়ে যেনো চলতে গেলে কেউ তাকে অযোগ্য না বলতে পারে তাই তো জ্ঞান অর্জন করছে।
ইশান আর তারপর থেকে এ নিয়ে কিছুই বলে নি। বিদ্যা অর্জন সকল নারী পুরুষের জন্য প্রয়োজন । এখন ইশানই মেয়েকে অতিরিক্ত সময় দেওয়ার চেষ্টা করে। মুনকে হেল্প করে।।
অনার্স ১ম বর্ষের ছাত্রী মুন প্রথম থেকেই ভালো রেজাল্ট করতে চায় সে।
জন্মদিনের অনুষ্ঠান শেষ করে সকলে মিলে গ্রাম ঘুরে দেখতে বের হয়। গাড়ি নিয়ে বের হওয়ার কথা থাকলেও মিম আর রিয়ার জন্য সেই গাড়ি ও সাথে নিয়ে বের হয়নি ওরা নাকি পায়েঁ ঘুরে দেখবে এতেই তো ভালো করে গ্রামটা ঘুরে দেখা যাবে তাই না?
মুন মেধাকে ইশানের কাছে দিয়ে জেরিন, রিয়া মিমের সাথে হাঁটছে। একটু পরেই মুনকে ইশান ডাকে মুন ইশানের কাছে এসে জানতে চায় কি হয়েছে?
তুমি আমার পাশে থাকো না প্লিজ।
কেন?
পিচ্চি বউ আমার কখন কোন দিকে হারিয়ে যাবে বলা যায় কি?আমি রিস্ক নিতে চাই না। এছাড়াও মেয়ে তার মায়ের সাথে যাবে বলছে।
মেধা মায়ের মুখ টুকু দেখেই ঝাপিয়ে চলে আসে। মুন ওকে কাধেঁর সাথে মিলিয়ে হাটঁতে থাকে। একটু পরেই মেধা ঘুমিয়ে যায় সেভাবেই ইশান মেয়েকে নিজের কাছে নিয়ে নেয়। এরপর মুনের বাম হাত নিজের ডান হাতের মুঠোয় রাখে।
মুনের ঠোঁটের ভাজে হাসির দেখা মেলে। সামনে তাকিয়ে দেখে ইমরান জেরিনের
সাথে মিলিয়ে পথ চলছে। মুন জানে ইশান ভাবে মুনকে কিশোরী মেয়েদের প্রেম এ যেরকম ইচ্ছা অনুভুতি থাকে সব পুর্ন করতে চাইছে যেনো মুনের কখনো মনেই না হয় ইশানের সাথে তার বয়সের গ্যাপ রয়েছে অধিক।
মুন ও ইশানের কাধেঁ নিজেফ মাথা হেলিয়ে দিয়ে পথ চলা শুরু করে।
ইশান খুবই আস্তে করে গানের সুরে বলে,
ভালোবাসি, ভালোবেসে যাবো সারা জনম ধরে।
মুন চমকে ওঠে ইশানের গানের গলা এত সুন্দর?তবুও গায় না কেন?মুন এখন থেকে রোজ রোজ ইশান কে দিয়ে গান বলাবে।
মুনকে অপলক তাকিয়ে থাকতে দেখে ইশান টুপ করে মুনের কপালে চু**মু দেয়। মুন ও আস্তে করে বলে,
অতলে… অতলে…
বুকেরই ভেতরে….
হয়েছো আকাশ…
আমার এই অন্তরে…..
……………………..
………………………
ভালোবাসি, ভালোবেসে….
যাবো সারা জনম ধরে…….
**হিমু মাত্রই কলেজ থেকে ফিরছিলো ক্লাস করে রাস্তা দিয়ে আসার সময় ইমরানদের সবাইকে আসতে দেখে চমকে যায় এত গুলি দিন পর ইমরান কে দেখছে সে। সেদিন ইমরান জবাব না দিয়েই চলে গেছিলো আজকে হিমু শুনবেই। আবার ও বলবে নিজের…… কিন্তু এ কি?ইমরান এর সাথে একটা মেয়ে?হেসে হেসে এগিয়ে আসছে। হাতে হাত রাখা নিশ্চই বিয়ে করছে ওরা?তাহলে কি সে ইমরান কে আর কখনো ভালোবাসি বলতে পারবে না? না বলবে না আর কখনো ইমরানকে সে চাইবে না!ওর ভালোবাসায় নিজেকে রাঙিয়ে নিতে পারবে না।
তবুও ওরা ভালো থাকুক…………..
সমাপ্ত
#মিশকাতুল