ভালোবাসায়_রাঙিয়ে_দাও পর্ব-১৯

0
609

#ভালোবাসায়_রাঙিয়ে_দাও(১৯)

ইমরান আজ বেশ সেঁজে গুজে এসেছে কলেজ মাঠে তাই তো সবাই ওকে নিয়ে নানা রকম কথা বলছে। কেউ কেউ বলছে, আজ কি ক্রিম লাগিয়েছিস?
সব কিছু অন্যরকম লাগছে যেনো। ঘটনা কি?প্রেম এ পরছাও নি মামা!!
আরিফ আর নাইম ওকে নানা রকম ভাবেই টিপ্পনি দিয়ে গাঁইছে আজ যে সুযোগ পেয়েছে ওরা ইমরান কি রোজ এরকম সুযোগ তাদের দিবে?এভাবে চুপ করে সব শুনবে?

আরিফ বলে,
তুই কি আসলেও প্রেমে পরেছিস?তোর হাব ভাব সুবিধার লাগছেনা!

নাইম ও বলে, একদম! আসল কথা বল রে ইমরান!

ইমরান বলে, হ্যাঁ ।

দুজনে এক সাথেই বলে, হ্যাঁ? কি মানে এর?

ইমরান ওদের দিকে দেখে নিয়ে সামনের দিকে চোখ রেখে বলে,
প্রেমে পরেছি।
আমার প্রেম আমি ফিরে পেয়েছি।

মানে?

আসলে আমি কাকে চাই তা ঠিক করে ফেলেছি আজ শুধু বলবো তোরা কয়েকটি সুন্দর সুন্দর প্রেম নিবেদন এর লাইন বলে দে।

নাইম বলে,
সে না হয় বলে দিলাম কিন্তু বলবি কাকে?

ও’কে! ওই যে আসছে!

দুজনে ইমরানের হাতের ইশারার দিকে তাকিয়ে দেখে, জেরিন আসছে।
দুজনে বেশ খুশি হয়। যাক এতদিনে ইমরান মেয়েটাকে বুঝেছে। কত শত বার মেয়েটা অপমানিত হওয়ার পর ও বন্ধুত্ব করেছে ওদের সাথে। কত ভালো বাসে সে ইমরান কে!

জেরিন আসছে ওর দুই জন বান্ধবী কে সাথে নিয়ে। ইমরান ও ওদের দুজনের সাথেই দাঁড়িয়ে থাকে। আজ মেয়েটাকে প্রেম নিবেদন জানিয়ে চমকে দেবে ইমরান!জেরিন নিশ্চিত খুশি হবে ওর প্রস্তাব পেয়ে?

জেরিন এখন ক্লাসেই যেতো কিন্তু ওদের কে দেখে এদিকেই আসে খুশি মুখে দাঁড়িয়ে পরে ইমরানদের সাথে। ওর সাথের মেয়ে দুটো মুখ ভাড় করে রেখেছে কেন?কিছু কি হয়েছে ওদের?সেদিকে আর ইমরান ভাবে না আপাতত জেরিনকে কিভাবে মনের কথা জানাবে সেই ভাবনা তে মশগুল রয়েছে ও।

জেরিন ব্যাগ থেকে একটা খাম বের করে। ওতে কি চিঠি রাখা আছে?কিন্তু খামটা এত সুন্দর করে প্রিন্ট করেছে কেন?ইমরানের একটু চিন্তা হয় এরপর খেয়াল করে ওটা তো বিয়ের কার্ড মনে হচ্ছে।
ফ্যাল ফ্যাল করে জেরিনের দিকে তাকিয়ে থাকে ইমরান।

জেরিন হাসি মুখেই বলে,
কেমন আছেন আপনারা?

ইমরান কিছু বলেনা। আরিফ বলে,
আআলহামদুলিল্লাহ! তুমি?

জ্বি ভালো ।
এই নিন এটা আপনাদের জন্য।আরিফ হাত বাড়িয়ে নেয়।

এটা কি জেরিন?

বিয়ের নেমন্তন্ন করলাম আপনাদের অবশ্যই আসবেন খুশি হবো। বলেই জেরিন ওর বন্ধুদের নিয়ে ক্লাসের দিকে যায়। ইমরান উদাস চোখে জেরিনের চলে যাওয়া দেখে এখন কি হবে?জেরিন তো বিয়ে করতে চলেছে!অবশ্য করবে নাই বা কেন?মেয়েটাকে কত বার যে ফিরিয়ে দিয়েছে ইমরান তার কি হিসেব আছে?হয়তো জেরিন ওকে এখনো ভালোবাসে কিন্তু জেরিনের পরিবার?ওরা যে বিয়ে দিতে চাইছে?

ইমরান থামে না দৌড়েঁ যায় জেরিনের যাওয়ার পথে পিঁছু পিঁছু!
পেছন থেকে আরিফ আর নাইম উচ্চ শব্দে বলে, ভয় শুধু তুই না আমরাও পাইছি!! ভালো করে তুই বদলা নিস দোস্ত ।!

জেরিনের সামান্য পেছন থেকে ইমরান গানের সুর তুলে বলে,
ওওও মেয়ে শুনে যাও……
একটুখানি ফিরে চাওওও!
তোমার সাথে কইবো কথা
এএএএক নজরে!!

জেরিন সহ পাশের দুজনেও চমকে পেছন ফিরে দেখে ইমরান কে। জেরিন এর দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ইশারা করে এরপর বলে, ক্লাস শেষ করে আমার সাথে দেখা করবে জেরিন আমি অপেক্ষায় রইলাম।

————————-

মুন আর ইশান এক সাথে চেকআপ করাতে বের হয়েছিলো দুপুরের পর। গাড়ি নিয়ে আসার সময় মুনের চোখ যায় জানালার বাইরে সেখানে একটা মেয়ের সাথে ইমরান বসে বসে গল্প করছে মুন ইশানকে গাড়ি থামাতে বললেই ইশান থামিয়ে নেয়। মুনের দিকে তাকিয়ে বলে,

কি হয়েছে?খারাপ লাগছে?গাড়ির ঝাকুঁনি লাগছে?

মুন কিছু না বলে ইমরামনের পাশে থাকা মেয়েটাকে সনাক্তকরণ করতে চায় ওটা কে হতে পারে?চেনা চেনা লাগছে!এক পাশ থেকে দেখা যাচ্ছে মেয়েটাকে তার উপর পেছন ফিরে বসে আছে দুজনেই। আচ্ছা ইমরান ভাইয়া কি এই মেয়েকে ভালোবাসে নাকি?এটাই কি ওর প্রেমিকা?সেদিন তো খুব করে মাথা ছাতাঁ বললো আর এখন?মেয়ে নিয়ে পার্কে বসা?

তোমার ভাই আর তার হবু বউ!

ইশান মুনের কথা শুনে ভ্রুঁ কুচকে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখা ইমরান আর একটা মেয়ে। এ কে?

হুম তাইতো দেখছি!

একটা পিক তুলে রাখি বাসায় গিয়ে রিয়া ভাবী আর মিম আপুকে দেব ওদের সাথে ঝগড়া করেছে যে প্রেম করে না।

হু।

এই মেয়েটা কে চেনা চেনা লাগছে আমার।

চেনো।.ওওই মেয়ে সুমনের কাজিন।

মুন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলে, হ্যাঁ হ্যাঁ একদম তাই! চলো এখন যাই! ওদের প্রায়ভেসি দেই।

ইশান হেসেঁ বলে, বাসায় গিয়ে আমাকেও দিও।

মুন লজ্জা পায় তবুও চোখ মুখ শক্ত করে বলে,
তুমি দিন দিন নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছো ইশান।

ইশান অবাক হয়ে বলে,
বাহবা! এখন আমি নির্লজ্জ? আর তুমি যে বিয়ের প্রথম দিনেই আমাকে ব্রাশ না করে চু**মু দিলে?

মুন এবার ল*জ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। ইশান এরকম করে কেন?মাঝে মাঝেই তাকে এই একটা বিষয় নিয়ে নানা রকম ভাবে হেনস্তা করে ফেলে। ইশ্ সেদিন দাদীর কথা রাখা উচিৎ হয় নাই।

—–

ইমরান আর জেরিন বসে নানা রকম গল্প করছে। এর মাঝে ইমরান তাকে তার মনের কথাও বলে দিয়েছে খুশি, আনন্দে জেরিনের চোখে জল এসেছে। ইমরান স্বাভাবিক করতে জেরিনকে সকালের দেওয়া ভয়া*বহ দাওয়াতের কথা বলে,

তুমি জানো সকালে আমি কতটা ভয় পেয়েছিলাম জেরিন?

কেন?

পাবো না?কত গুলো রাত না ঘুমিয়ে আমি প্রেম প্রস্তাব দেব বলে লাইন সাজিয়েছি তুমি জানো?

তো এর সাথে বিয়ের দাওয়াতের সম্পর্ক কই?

আরেএ আবার বলো কি সম্পর্ক?আমি তো এক মুহুর্তের জন্য দম বন্ধ হয়ে ম*রে যাচ্ছিলাম।
ভেবেছিলাম আমার আর তোমাকে পাওয়া হবে না জেরিন।
ভেবেছিলাম বিয়ের কার্ড তুমি নিজের বিয়ের জন্য দিয়েছ।
নাম দেখার আগেই আমার ওই অবস্থা হয়েছিলো!

জেরিন হাসতে হাসতে ইমরানের কাধেঁ মাথা রাখে এর পর বলে,
তার মানে তুমি ভেবেছিলে আমার বিয়ে হবে?

ইমরান হতাশ গলায় বলে, হুম।

আমার বড় আপুর বিয়ে। মুন ভাবী আর ইশান ভাইয়াকেও মামাকে দিয়ে দাওয়াত করা হবে আমিও যাবো।

সত্যই?

হুম সুমন মুন ভাবীকে না নিয়ে আসবে না।

তাই? ভাইয়ার তো আজকাল ছুটি রয়েছে বেশ মনে হয় যাবে। তবে মুনের দাদু আর দাদী ও বাসায় আছে মুন কি যাবে?

হুম। আমি মামীর থেকে শুনেছি ওনারা গত কাল গ্রামে যাবে। মুন কে ইশান ভাইয়াই সময় দিতে পারে ওনাদের নাকি এখানে খাচাঁ বন্দি লাগে।

ওহ আচ্ছা।

চলো উঠি। বাসায় গিয়ে মামার বাসায় যেতে হবে আপুর সাথে।

চলো।

চলবে
#মিশকাতুল

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে