ভালোবাসায়_রাঙিয়ে_দাও পর্ব-১৮

0
620

#ভালোবাসায়_রাঙিয়ে_দাও(১৮)

ইশান চলে গেছে সকালে রিয়ার ছেলে রাইফি এখন অনেক বড় হয়েছে প্রায় আড়াই বছর হবে তার। মুন ওকে সাথে নিয়ে নিজের বাবার বাসাতে যায় যেহেতু একদম পাশাপাশিই দুটো বাসা। মিমকে থাকতে বললেও মিম দুই দিন থেকেই এখানে এসেছে তাই মিমের সাথে গল্প করতে মুন নিজেই এসেছে ভাতিজাকে নিয়ে। মুনের দাদীও খুশি হন মুন আসাতে তিন জন মিলে সোফায় বসে বসে মুনকে জ্ঞান বিতরণ করছে। রাইফি নিজের মতো খেলছে। মিথিলা ছোটো মেয়ে আসাতে দ্রুত হাতে নাস্তা বানানো শুরু করে দিয়েছে।
মুনের কল আসাতে মুন মোবাইল নিয়ে সোফা থেকে উঠে রুমে যায়। ইশানের কল।

মুন রিসিভ করে সালাম দেয়। ইশান ও উত্তর দিয়ে বলে,

কি করো?

আপুর সাথে দেখা করতে এসেছি।

ওহ। একা গিয়েছ?

না। রাইফিকে নিয়ে এসেছি।

ওহ আচ্ছা আজ মিমের সাথেই থাকবে?

কেন?

না এমনি জিজ্ঞেস করলাম।

আজকে চলে যাব সন্ধ্যার সময় আগামীকাল রিয়া ভাবী বাবার বাসায় যাবে আমিও এখানে আসবো।

আচ্ছা। তার পর গিয়ে আমি নিয়ে আসবো।

এখন না গেলে হয় না?

না।

কেন?
আমার সব পড়া হয়ে যাবে তো এখানেও ।

আর আমার কি হবে?ছয় মাস পর থেকে আমি আরেকটু ফ্রি থাকবো সপ্তাহে তিনদিন বন্ধ পাব।

এই জন্য?এখন নিয়ে যাবে?

হ্যাঁ। আমি যার তার হাতের রান্না খেতে পারবো না আর। জানি তোমার অসুবিধা হবে আমি সাহায্য করবো প্রমিস । এখন রাখছি গল্প করো । আর সন্ধ্যার একটু আগেই চলে যেও। মিম কে সাথে নিয়ে যেও । কাল ওর সাথেই আবার চলে আসবে।

তুমি একটু আপুকে বলে দাওনা প্লিজ!

আচ্ছা ওকে ফোন টা দাও আমি বলে দেই।

———————

ইমরান বাসার সামনে বাগানে বসে আছে। মিমের সাথে মুনকে এই সন্ধ্যা বেলায় শাহেদা বাগানে আসতে দেয়নি। রিয়ার সাথে কিচেনে দাঁড়িয়ে রয়েছে মুখ ফুলিয়ে। শাহেদা যেতে দিবে কিভাবে এই সন্ধ্যা বেলা? কার না কার নজর লেগে যায়! গ্রামের বাড়ি বলে কথা।

ইমরান আর মিম চেয়ার নিয়ে বসেছে মিম মজার ছলে ইমরানকে নানা রকম ভাবে হেনস্তা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

তা তুই প্রেম ট্রেম করছিস নাকি?আজকাল?

কেন?

না আমার মনে হলো তাই! আজকাল তোকে অন্যরকম দেখায়!

ইমরান ও হেঁসে বলে, শুনেছিলাম বিয়ের পর মেয়েরা সুন্দরী হয় তাই অন্যরকম দেখায় আর তুমি আমায় বলছো?

হ্যাঁ বলছি! সত্যই তোকে কেমন যেনো দেখাচ্ছে! শহরে প্রেমিকা রেখে এসেছিস বুঝি?

সেরকম না।

তাহলে?

কিছুনা।

আমায় বল, শুনি।

আমি প্রেম করছিনা!

কাউকে পছন্দ করিস না?

করতাম।

মানে?

এখন করিনা!

ওহ্ বাবা!বিষয় টা কেমন?

সেই লেভেলের।

বুঝলাম না।

তোমায় বুঝতেও হবে না।

আচ্ছা চল ভেতরে যাই। মুন হয়তো একা একা।

ভাবী আছে।

তুই এখানে আর ও সময় থাকতে চাস?

হুম।

কেন চল ভেতরে যাই।

একটু একা থাকি!

প্রায়ভেট টাইম চাচ্ছিস?

হু।

বুঝেছি এখন ফোন কল চলবে?ওকে আসি!

মিম ইমরানের দিকে চোখ নাচিঁয়ে ভেতরে যায়।

ইমরান ভাবতে বসে একাঁ একাঁ। হিমুকে সে অনেক আগেই ভুলতে পেরেছে। তবে হিমু ছিলো প্রথম ভালো লাগা। সে যদি ফিরে এসে তার কাছে ধরা দেয় তাহলে ইমরান কি করবে?তাকে কি মেনে নিবে?তার ভালোবাসা কি গ্রহণ
করব? তখন হিমুকে কিছু না বলেই বাইক নিয়ে চলে এসেছে কিন্তু এখন ভাবতে হচ্ছে কি করবে? এত এত চিন্তা সে নিতে পারছেনা।

চলবে
#মিশকাতুল

#ভালোবাসায়_রাঙিয়ে_দাও(বোনাস পর্ব)

ইমরান ভাবতে বসে একাঁ একাঁ। হিমুকে সে অনেক আগেই ভুলতে পেরেছে। তবে হিমু ছিলো প্রথম ভালো লাগা। সে যদি ফিরে এসে তার কাছে ধরা দেয় তাহলে ইমরান কি করবে?তাকে কি মেনে নিবে?তার ভালোবাসা কি গ্রহণ
করব? তখন হিমুকে কিছু না বলেই বাইক নিয়ে চলে এসেছে কিন্তু এখন ভাবতে হচ্ছে কি করবে? এত এত চিন্তা সে নিতে পারছেনা।
হিমু তাকে আঘা*ত দিয়েছিলো শুধু মুনের সাথে দেখে ফেলার কারণে একবার ও ভাবেনি?যে ছেলেটা তিনটা বছর ধরে ওর পিছু্ঁ নিয়েছে ওকে প্রস্তাব দিয়েছে। শহর থেকে এসে প্রথমে ওর সাথে দেখা করতে সকাল সকাল রাস্তা দিয়ে হেঁটপ এসে আরেগ গ্রামের রাস্তার সামনে দাঁড়িয়ে থেকেছে সে কি না!অন্য একটা মেয়েকে নিয়েও ভাববে??এখন যেই বুঝেছে মুন ওর বড় ভাইয়ের বউ সেই তখনই সে ফিরে আসতে চেয়েছে।
ইমরান আর ওসব নিয়ে ভাবতে ইচ্ছে করছে না । বাসার ভেতরে চলে আসে। মুন , রিয়া আর মিম বসে টিভি দেখছে। শাহেদা পাশেই বসে কাঁথা সেলাই করছে। রাইফি হয়তো ইকবালের সাথে রুমে আছে। আর ইমরানের বাবা রুমে শুয়ে আছে।
তাই সোফার এক পাশে বসে।
ওকে আসতে দেখেই রিয়া বলে,
কিরে! তোর কথা বলা শেষ?

ইমরান সন্দেহী গলায় বলে,
কিসের কথা?

রিয়া আবার বলে, ওওই!যার জন্য মিম হতে প্রায়ভেট টাইম চেয়ে নিলে?

সেরকম নয়!

মিম তেতেঁ উঠে বলে,আবার বলছিস সেরকম নয়??

ইমরান আহত গলায় বলে,
তোমরা যেমন ভাবছ সেরকম আসলেই নয়।

ওহ্ তাই না?তাহলে বল কি রকম!!

আমার মা**থা!
রেগে বলেই ইমরান নিজের রুমের দিকে চলে যায়।
কিচ্ছু ভালো লাগছেনা ওর।

—-পরের দিন রিয়া চলে যায়। ইমরান ও কলেজ খোলা বলে চলে যায়। বিকেলে মুনকে নিয়ে মিম চলে আসে বাবার বাসায়। মুন কে ইশান নিয়ে গেলেই মিম আবার চলে যাবে।

মুন যে কয়টা দিন গ্রামে থেকেছে সবাই তাকে অনেক অনেক টিপস বলে দয়েছে এই সময় কি করতে হবে? কেমন করে থাকতে হবে?কিসব খাবাদ খেতে হবে?এছাড়া দাদী তো যাবেই মুনের সাথে। একটু খেয়াল রাখবে। মুনের দাদুকেও নিয়ে যাবে বলেছে।

দেখতে দেখতে মুন আর দাদু -দাদীকে ইশান গিয়ে নিয়ে আসে। এখন মুনের পাচঁ মাস চলে। তাই ইশান ও মুনের সাথে বেশি সময় দেওয়ার চেষ্টা করে এই যে মুন মা হবে কত যন্ত্রনা সহ্য করে তবুও বই পড়ে। আসলে পড়াশোনাটা হয় নিজেকে দিয়ে। নিজের ইচ্ছা কাজ করে সম্পুর্ন অন্য কেউ বলে কয়েও শেখাতে পারবেনা তোমাকে। ইশান জানে মুন তার থেকেও ভালো একজন ডাক্টার হতে পারবে।
কিন্তু মুন তা চায়না সে চায় শিক্ষকতা করতে যেনো সবাইকে শেখাতে পারে সে। চিকিৎসা তো ইশান করছেই।

ইশান মুনকে নিয়ে বের হবে তাই দাদী আর দাদুকে বলে বেরিয়ে পরে। ইশানের সাথে মুন নৌমির বাসাতে এসেছে। আজকে নাকি নৌমির বিয়ে হবে নৌমির কাজিনের সাথে হুট করে ছোট আয়োজন করেছে বিয়েতে। নৌমি ইশান আর মুনকে আসতে বলেছে। তাই তো ইশান নৌমির কথা রাখতে বিয়েতে এসেছে । এখানে এসে মুন নৌমির বাসার অনেকের সাথেই পরিচয় হয়ে নেয়। এরপর ফারিশ কে দেখে একসময় এই সময় ফারিশকে দেখে মুন অবাক হয়। মিম আপুর দেবর এই বিয়েতে কেন এসেছে?ওদিকে ফারিশ মুনকে দেখে মুনের সাথে কথা বলতে এগিয়ে আসে।

মুন ভয় পায়। আশে পাশে দেখে ইশান কই কি করছে?মুন অন্যদিকে ফিরে যেতে নেয় কিন্তু ফারিশ দ্রুত পাঁ চালিয়ে আসে সামনে।

ফারিশ এসেই বলে, ভয় পেলে নাকি?

মুন কিছুই বলেনা চুপ করে শুধু ফারিশকে দেখে।

কি হলো কথা বলছ না কেন?

কি বলবো?

ভয় পেওনা মুন!আমি তোমায় ভালোবাসি সেই ভালোবাসাতেই তোমাকে ভালো রাখতে চাই। আমি ভেবেছিলাম তুমি আমার ভালো বাসা পেয়ে ভালো থাকবে কিন্তু তা নয় তুমি ইশানের সাথে ভালো আছো আমি জানি। আর আমি চাই তুমি যেখানে যার সাথেই থাকো না কেনো শুধু ভালো থাকো।

মুন এবারেও কিছুই বলে না ফ্যাঁল ফ্যাঁল করে ফারিশকে দেখেই যায়।

ভয় পেওনা মুন। আমি তোমার আর ইশানের ক্ষতি করবো না। এটুকু বিশ্বাস রাখো প্লিজ।

জ্বি। মুন ভয়ে ভয়ে বলে।

ভালো থেকো মুন। আমার ভালোবাসা নিয়ে হলেও আমি তোমার সামনে আসবো না। এরপর থেকে মিম আপুকে ও কেউ কথা শুনাবেনা। আমি আব্বু আম্মুকে সব বলবো। সব ঠিক হয়ে যাবে মুন।

হুম।

ভালো থেকো মুন। আসছি!!

ফারিশ মুনের সামনে থেকে চলে যায় মুন স্পষ্ট দেখেছে ফারিশের চোখের জল কিন্তু এখানে মুনই বা কি করবে?চাইলেও কি ফারিশের ভালোবাসা ফিরিয়ে দিতে পারবে যেখানে মুন সম্পুর্ন ইশানের ভালোবাসার রাঙা হয়ে আছে।

নৌমি দূর থেকে ফারিশ আর মুনকে দেখছিলো তার মতো করেই আর ও একজন নিজের ভালোবাসার কাছে জিতে গেলো! শুধু ভালোবাসাকে পেলেই মানুষ জিতে যায় না। কিছু কিছু ভালোবাসা দূরে রাখিলেও জিতে যাওয়া যায় সে তো বুঝবে শুধু তারাই যারা নিঃস্বার্থ ভাবে ভালো বেসেছে। চলে যাচ্ছে ফারিশ!!

মুন ফারিশ যেতেই ইশানের দিকে এগিয়ে যায় সবার মাঝে থেকে ইশান কে তুলে নিয়ে অন্য দিকে যায় একটু নির্জন হতেই ইশান কে দাঁড়িয়ে রাখে সামনে ওই ইশানকে ভালো ভাবে দেখে এত দেখেও দেখার শেষ হয় না যে ইশানকে ঘিরে তাই তো ঝাঁপিয়ে পরে ইশানের বুকের ওপর।

চলবে
#মিশকাতুল

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে