ভালোবাসায়_রাঙিয়ে_দাও পর্ব-১৬

0
664

#ভালোবাসায়_রাঙিয়ে_দাও(১৬)

ইমরান আসবে বলে মুন আজ অনেক রকমের রান্না তে হাত দিয়েছে ইশান নিজেও হেল্প করছে মুনকে। সব রান্না শেষ করে রুমে এসে বিছানায় বসেছে আজ কয়েকদিন হয় মুনের শরীর ভালো লাগছেনা না কেমন একটা যেনো লাগে। মুন নিজেও বুঝতে পারেনা। ইমরান এসেছে মনে হয় ইশান দরজা খুলে কার সাথে যেনো কথা বলছে মুন ওদের রুমের দরজা খুলে বের হয়ে বসার রুমে আসে সোফায় বসে দুই ভাই কথা বলছে। কিছু মাস আগেও দুই ভাইয়ের মাঝে কিছু একটা চলছিলো হয়তো মন কষা*কষি টাইপ কিছুই। এখন সব ঠিক হয়েছে। মুন এসে ইশানের পাশে বসে বলে,

কেমন আছো ইমরান ভাইয়া?

এইতো তুই কেমন আছিস?চেহারা এরকম লাগছে কেন?

মুন একটু অপ্রস্তুত হয়ে নিজের মুখে হাত দিয়ে বলে,
কেমন লাগছে ইমরান ভাইয়া?

শুকনো!

ইশান একটু গলার স্বর কঠিন করে বলে, শুকনো লাগবে না?সারা দিন বই নিয়ে বসে থাকে খাবার কি মুখে দেয়?আমার কথা কি শুনে?

মুন মন খারাপ করে বলে,
আচ্ছা ইমরান ভাইয়া তুমিই বলো! এস এস সি এর পর দুটো বছর ভালো করে কি প্রস্তুত নিয়ে এইস এস সি দিতে হবে না?হাতে সময় কই?

সে তো ঠিক! সাইন্স নিলে আর ও সময় থাকেনা । তবুও খেতে তো হবে।

কেন যেম খেতে ইচ্ছে করেনা ইমরান ভাইয়া! বাদ দাও ওসব!

না না কিছুতেই বাদ দেব না আমি। ইশান ভাই! তুই রোজ ওকে জোড় করবি। ওদের কথার মাঝেই আবার কেউ দরজাতে নক করে মুন গিয়ে দরজা খুলতেই সুমনকে চোখে পরে সাথে আর ও একটা মেয়ে শ্যামারঙা মেয়েটা হাসি আর বিব্রত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সুমনের সাথে। মুন সুমনে দেখে বলে,

এসো সুমন…. তোমার সাথে কাকে এনেছ?

সুমন হাসি হাসি মুখ বানিয়ে বলে, আমার আপু! তোমায় দেখাতে এনেছি।

মুন সুন্দর করে সালাম জানায় তার বড় হবে মেয়েটা। মুন ওকে দেখে বলে,
আসুন আপু আমি খুব খুশি হয়েছি আপনাকে দেখে। সুমনের অর্ধেক বেলা আমার রুমেই চপে যায় তাই হয়তো আমাকে দেখাতে এনেছে আপনাকে।

মেয়েটা আর কেউ না জেরিন। তখন দেখেছে ইমরান এই বাসাতেই এসেছে। এখন আবার মামার এক মাত্র ছেলেটা এখানে নিয়ে এসেছে।
জ্বি। আমার নাম জেরিন।

মুন ও নিজের নাম বলে ওদেরকে ভেতরে আসতে বলে। জেরিনকে দেখে ইশান সুমনকে বলে,
কে হয় ভাইয়ার?

আপু।

ওহ আচ্ছা এসো বসো।

জেরিন একটু লজ্জায় পরে যায় এভাবে সুমন তাকে এখানে নিয়ে এলো ইমরান কি ভাবছে না ভাবছে তাকে নিয়ে!!
জেরিন বিব্রত হয়েই ইশানের সাথে ও মুনের সাথে পরিচিত হয়ে নেয়। আসার পর জেরিন চেঞ্জ ও করতে পারেনি মামা আর মামীর সাথে দেখা হওয়ার পরেই সুমন তাকে এখানে এনেছে।
মুন সুমন আর জেরিনকেও ডিনারের দাওয়াত করে কিন্তু ওরা বলে বুঝায় সুমনের আব্বু আম্মু মানে জেরিনের মামা মামী ওদের জন্য অপেক্ষা করবে। তাই আর এখন জোড় করেনা বলে সকালে আবার যেনো আসে সুমনের সাথে।

————————
আজকে সকাল হতেই মুন কিচেনে রান্না শুরু করে দিয়েছে ইশান কে আবার নাস্তা করে ক্লিনিকে যেতে হবে।
মুন একা হাতেই সব করে ইশান গত রাতে অনেক্ষন ভাইয়ের সাথে গল্প করেছে তাই এত সকাল সকাল উঠে পরলে সারা দিন অসুবিধা হতে পারে। নাস্তা বানিয়ে ইশান কে তুলে দেয় মুন ইমরান ও ততক্ষনে ফ্রেশ হয়ে চলে আসে কোচিং এ না গেলেও কলেক এ গিয়ে ক্লাস করে আসবে। মুন ও সাথে বসে নাস্তা করে । দুর্বল লাগছে কেমন শরীরে ভেতর। ইশান কিছুটা অন্যরকম চিন্তা করে ফেলে। তা প্রমান করতেই মুনকে সাথে করে ক্লিনিকে নিয়ে এসে একজন মহিলা ডাক্টার এর সাথে কথা বলে কিছু টেস্ট করে নেয়। এরপর সবটা জেনে ইশান রিয়েক্ট করবে কেমন তা ও গুলিয়ে ফেলে! মুন তো চার মাসের গর্ভবতী অথচ সে কিছুই বুঝেনি?নাকি খেয়াল করেনি?এমনকি ইশান ও ব্যাপারটা নিয়ে একটুও ভাবেনি।

আজ আর ইশান চেম্বারে বসে না। মুনকে নিয়ে বাসায় ফিরে আসে। মুনের সাথে এখনো ইশান একটা কথাও বলেনি। কিন্তু তার বাচ্চা আসার কথা শুনে মিনিটের পর মিনিট ছোট মুনের পেটের দিকে অপলক তাকিয়ে দেখেছে সে বাবা হবে??আর মুন?মুন তার সন্তানের মা হবে। এই খুশির বার্তা স্ত্রী তার স্বামী কে জানায় অথচ এখানে ইশান জানলেও মুন এখনো কিছুই জানেনা। ভয়ে ভয়ে ইশান কে
দেখছে শুধু।

বিছানায় বসে মুন ইশান দরজা লাগিয়ে মুনের কাছে এসে মুনকে জড়িয়ে ধরে।

কি হয়েছে?

অনেক কিছু হয়েছে মুন! আমার জীবনে আমি এত সুখের দিন পাইনি! আমার মেডিকেল রেজাল্ট পাওয়ার থেকেও আজ আমি অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা অর্জন পেয়েছি মুন!

কি?

ইশান মুনের পেট এর উপর হাত রেখে বলে,
ও আসছে!!

মুন স্তম্ভিত হয় ইশানের মুখের দিকে তাকিয়ে অনুভূতি প্রকাশ করতেই ভুলে যায়!সে মা হবে??ইশান বাবা হবে?এত আনন্দ কেন লাগছে মুনের?

—-মুন মা হবে এই খবর মা বাবা জানতেই মুনকে নিয়ে বাড়ি ফিরতে বলছে! চার মাস হয়েছে! এই সময় ওখানে বাসায় একদম একা কিভাবে মেয়েটা কি করবে?ইশান কি সময় দিতে পারবে দিনের বেলাতে?ইমরান ও ছেলে মানুষ এসময় মায়ের পাশে থাকা জরুরী। ইমরান ও অনেক খুসবি সে চাচ্চু হবে?নৌমি এসেছিলো মুনকে দেখতে! ইশান তাকে ভালো না বাসুক সে তো ইশানকে ভালো বাসে! সে চায়না মুনকে ইশানেদ থেকে আলাদা করতে যদিও এখনো মুনকে হিংসে হয় তার লাছে তবুও চায় ইশান ভালো থাকুক। ইশান বাবা হবে মুনকে নিয়ে সে সামনের সপ্তাহে নিজের বাসায় দিয়ে আসবে মেয়েটার সাথে আরেকবার দেখা করবে আসে তাই মুনের বাসায়। রিক্সা নিয়ে বের হতেই ওর বাবা অফিসের একটা কর্মকর্তার সাথে দেখা হয় ছেলেটার নাম ফারিশ। নৌমির ওকে খুব ভালো লাগে শুনেছে ছেলেটা কিছুটা সাইকো টাইপের। একটা মেয়েকে ভালো বাসে তার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর মাথায় অনেক সমস্যা দেখা দিয়েছে। যে কোন সময় যে কোন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে।
ফারিশ নৌমিকে দেখে এগিয়ে আসে ।

কোথায় যাচ্ছেন?

আমার এক বন্ধুর বাসাতে।

ওহ আচ্ছা।
আসলে আমার ও এদিকেই বাসা আমি কি আপনার পাশে যায়গা পেতে পারি?

ওহ। নিশ্চয়ই।

ফারিশ উঠে বসে। নৌমির ফোনের ওয়াল পেপারে আলো জ্বলছে সেখানে একটা ছেলে হাসি মিখে দাঁড়িয়ে আছে। ফারিশের চোখ সেদিকে যেতেই মেজাজ গরম হয়। নোমিকে বলে,

এই ছেলেটা কে?

আমার বন্ধু। ওর বাসাতেই যাচ্ছি।

ফারিশ কিছুটা চিন্তিত হয়ে বলে, বন্ধুর ছবি ফোনের ওয়ালপেপারে স্থান নিয়েছে?

ও আমার প্রথম ভালোবাসা।

মানে?

আমি ওকে কলেজ লাইফে ভালোবাসতাম। বলতে পারো এখনো ।

কিন্তু ইশান তো বিয়ে করে নিয়েছে।

নৌমি আশ্চর্য হয়ে বলে,
তুমি ইশান কে চেন?

হ্যাঁ। আমার ভাইয়ার শালিকার জামাই।

ওহ! মুনের বোনের সাথে তোমার ভাইয়ার বিয়ে হয়েছে?

হ্যাঁ।
তা তুমি ওর বাসাতে যাচ্ছ কেন?

মুন মা হতে চলেছে ওকে অভিনন্দন জানাতে যাচ্ছি।

ওর সুখ দেখে আসতে পারবে?

নৌমি শান্ত উদাস গলায় বলে, কেন পারবো না?আমি মুনের সুখ দেখতে যাবো না ফারিশ। আমি আমার ভালোবাসার সুখ দেখতে যাবো ইশা ওর সাথে ভালো আছে। আর যাকে ভালোবাসই আমি চাই সে যেখানেই থাকুক ভালো থাকুক।

নৌমির কথায় ফারিশকে চিন্তিত হতে দেখা যায়!ফারিশ কি নিজের ভুল বুঝতে পারবে এবার?

চলুক না কি বলেন?
#মিশকাতুল

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে