ভালোবাসায়_রাঙিয়ে_দাও পর্ব-০৩

0
680

#ভালোবাসায়_রাঙিয়ে_দাও(৩)

মুন নিজের বাসায় এসে বেশ খুশি। একদিনের জন্য হলেও ওই বাসাতে থাকতেই কেমন দম বন্ধ হয়ে আসছিলো। এখানে এসেই শাড়ি ছেড়ে থ্রি পিস পরে নিয়েছে। মিমের সাথে ঘুরছে সে এখন। ইশান আর ইমরান বসার ঘরে আছে এখন। ইমরান কে সাথে নিয়ে এসেছে ইশান এখানে তো মিমের জামাই ছাড়া আর কোন ছেলে নেই তেমন একটা কার সাথে বসে গল্প করবে সে?
মুনের হাতে নাস্তা দিয়ে মিম বললো, যা ইশান দেরকে দিয়ে আয়।

আমি কেন?

তুই না তো কে যাবে?বিয়ে হয়েছে তোর না?যা গিয়ে দিয়ে আয় আমি তোর ভাইয়াকে খুজে নিয়ে আসি।

আচ্ছা।

মুন নাস্তার প্লেট নিয়ে টেবিলে দিয়ে এলো। ইমরান ভাইয়া তার কাছে বেশ ভালো ওর সাথে মিলে বেশি মুনের। আর ইশান?আগে থেকেই রাগ*চটা জানে তা মুন।
মুন আবার উঠে এলো ওর রুমের দিকে। ঘুম পাচ্ছে তার সকাল থেকেই সকলের হৈ চৈ এ মাথা ব্যাথা শুরু করে দিয়েছে।

রাতের খাবার টাও খায়নি মুন ওভাবেই ঘুমিয়েছে সে। ইশান কে এখানে এনে দিয়ে গেছে মুনের দাদী। ইশান রুমে এসে দরজা বন্ধ করে পেছন ঘুরতেই দেখে, এত এত টেডি দিয়ে বিছানা সাজিয়েছে মুন যে ও ছাড়া আরেকজন থাকবে তার জন্যও জায়গা রাখা নাই ইশানের রা*গ হলো সে এখন কোথায় ঘুমাবে তা হলে?বিছানার দিকে এগিয়ে গিয়ে সব ফেলে দিয়ে নিজে শুয়ে পরলো।

সকাল হতেই মুনের সে কি কান্নাঁ শুরু ওর আওয়াজেই ঘুম ভেংগেছে। মুন কান্নাঁ করছে আর নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। ইশান ওর দিকে বিরক্ত হয়ে দেখে বলে,
সমস্যা কি?

আমার পুতুল গুলি ফেলে দিয়েছো কেন তুমি?

না ফেললে আমি ঘুমাতাম কোথায়?

কোথায় মানে?আমায় ডাকবে না তুমি ইশান ভাইয়া এভাবে ফেলে দিয়েছ?

আচ্ছা! এখন কাদঁছিস কেন? তুলে রেখে দে পাশে তাই তো হয়।

না #তা হয় না!ওরা সারা রাত ব্যাথা পেয়েছে না?

না।

কিহ?

ওরা কি মানুষ যে ব্যাথা পাবে?

মানুষ ছাড়া আর বুঝি কেউ ব্যাথা পায় না?

না পায় না।

তাই নাকি অনেক প্রানীরাও ব্যাথা পায়, গরু,ছাগল,……..

ওরা আর এই পুতুল কি এক হলো নাকি?

না কি আবার?আমার কাছে এক।ওদের ও ব্যাথা আছে ।

আচ্ছা নে এবার ধর। যত্তসব!!

বলেই ইশান ফ্রেশ হতে চলে গেলো। সে আর এখানে থাকবেনা। এই সকালে নাস্তা করেই চলে যাবে। বউ পেয়েছে নাকি ছাগোল পেয়েছে সে?
ইশান নিজের ভাবনা মতোই কাজ করলো ইমরানকে ঘুম থেকে তুলে দিয়ে ওকে নিয়ে নাস্তা করেই চলে যেতে চাইলো মিলন হক ও শামছুরনাহার কিছুক্ষন বুঝালেন দুপুরের পর যেতে কিন্তু ইশান জানিয়ে দিলো সে এখনই চলে যেতে চায়। তাই ইশানের সাথেই মুনকে নিয়ে যেতে বললেন সবাই। মুন ও নাস্তা করে চলে এলো ইশানদের সাথে। ইশানের মা শাহেদা
এই সকাল সকাল ছেলে বউকে ফিরতে দেখে এগিয়ে গেলেন জিজ্ঞেস করলেন এত দ্রুত ফেরার কারন?
ইশান সে প্রশ্নের উওর না দিয়েই নিজের রুমের দিকে চলে গেলো শাহেদা সেদিকে আর না তাকিয়ে মুনের কাছে গিয়ে বললো রুমে গিয়ে ইশানের পাশে থাকতে। ছেলে মেয়ে দুটো পাশাপাশি থাকলেই না দুজনকে বুঝতে পারবে!! সম্পর্ক সঠিক হবে।

———-
ইশান রুমে এসে নিজের একটা বই নিয়ে বেলকুনির দিকে গেলো চেয়ারে বসে বই খুলে মনোযোগ দিলো। একটু পরেই মুন এসে পাশের চেয়ারে বসলো ইশান তা দেখেও সেরকম খেয়াল করলো না । মুন কিছুক্ষন থেকে সেভাবেই চেয়ারে ঘুমিয়ে গেলো। ইশান দুপুরের দিকে বই রেখে পাশের চেয়ারে খেয়াল করলো মুন তখন এসেই ঘুমিয়ে গেছে ওর দিকে তাকিয়ে দেখে আবার রুমে এলো। নিজের ব্যাগ গুছিয়ে রেখে নিচে গেলোখাবার খেতে। ওর দাদু ওকে একা দেখে জিজ্ঞেস করলো, নাতবউ কই?

ঘুমিয়েছে।
রিয়া প্লেট দিতে দিতে ইশানকে বললো,
ডেকে আনবেনা?দুপুর হয়ে এসেছে খাবার খাবে না?

ইমরান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বুঝলো রিয়ার কথায় সে বিরক্ত হয়েছে। সামান্য বছর তিনেক এর ছোটো সে ইশানের থেকে সে জানে ভাই বিয়েটা নিজের পছন্দতে করেনি। দাদুর জন্য আর পরবারের সম্পর্ক ঠিক রাখার জন্যই শুধু বিয়েটা করেছে।
রিয়ার দিকে তাকিয়ে ইমরান বললো, ভাবী যাও মুনকে নিয়ে এসো। খাবার টা খেয়ে আবার না হয় ঘুমাবে।
শাহেদা রিয়াকে পাঠালো মুনকে নিয়ে আসতে। রিয়া রুমে গিয়ে দেখলো মুন বেলকুনিতে চেয়ারে বসেই ঘুমিয়েছে। ওকে তুলে দিলো সে। তারপর মুনকে নিয়ে নিচে এলো। এতক্ষনে ইশানের খাবার খাওয়া হয়ে গেছে। মুন গিয়ে ইমরানের পাশে বসলো।
ইকবাল ওকে দেখে হাসি বিনিময় করলো, খাবার খেতে শুরু করতেও জানালো।
মুন নিজের মতো খাবারটা শেষ করে রুমে চলে আসে।
ইশান ওকে আসতে দেখেই বলে,

তুমি এখানে কত দিন থাকবে?

কতদিন আবার? আমার আপনার সাথে বিয়ে হয়েছে না?যতদিন আপনার বউ ততদিন থাকতে হবে।

না। তুমি এখানে কেন থাকবে?তুমি না পড়াশোনা করবে?

এখানে আর ওখানে কি আছে?আমাদের বাসা তো একদম পাশাপাশি। এক জায়গা থেকে হলেই হবে।

ওহ আচ্ছা। আসলে আমার একটা কথা ছিলো।

জ্বি বলুন না!

আসলে, আমি তোমাকে স্ত্রী হিসেবে চাইনি কখনো। আমি বিয়েটা করতেও চাইছিলাম না। কিন্তু বাবা আমাকে না জানিয়ে আগেই তোমার বাবা আর দাদুর সাথে বিয়ের কথা বলে চলে এসেছিলেন। আমি তখন আর মানা করে দিতে পারিনি। আর এখন আমি তোমাকে স্ত্রী হিসেবেও মানতে পারছিনা। যেহেতু তুমি নিতান্তই একটা বাচ্চা মেয়ে তাই আমি চাই এই বিয়ে নামক নাম মাত্র সম্পর্ক তুমি মনে রেখো না। নিজের মতো করে পড়াশোনা চালিয়ে যাও। যখন আমাদের সময় সুযোগ হবে আমরা আলাদা হয়ে যাবো কেমন??

কিন্তু আমার তো আপনার সাথেই বিয়ে হয়েছে।

মুনের কথায় ইশানের রা*গ হয় কিন্তু তা চেপেঁ বুঝানোর সুরে বলে, বিয়ে হয় মোন থেকে সম্পর্ক করতে চাইলে যা আমি চাইনি তাই এই বিয়ে কোনো বিয়ের মাঝেই পরে না!

কিন্তু আমি তো চেয়েছিলাম আমার আপনার সাথে বিয়ে হোক।

ইশান এবার ধম*কের সুরে বলে, মোন থেকে কি চাইলে কি তুমি?ভালোবাসা বুঝ?দাদী আর বাবা মা যা বলেছে তাই করলে। তোমাকে বিয়ে করতে বলেছে বলেই তুমি নিজে রাজি হয়েছে। কিন্তু নিজের ইচ্ছেতে তো আর চাওনি আমাদের বিয়ে হোক। আমি অতশত কথা বলতে চাইনা ,
তুমি আমার আমি স্রেফ নাম মাত্র স্বামী স্ত্রী। আমাদের মাঝে কখনো কোন সম্পর্ক হবেনা। তোমাকে আমার কোনো ভাবেই পছন্দ নয়। তাই আমার থেকে দূরে থাকবে। আর হ্যাঁ আমি এখন আসছি। আমাকে ফিরতে হবে।

কথা শেষ করেই ইশান নিজের ব্যাগ নিয়ে বের হলো। ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুন ভাবলো, দাদী কেন এই লোকের সাথে তাকে বিয়ে দিল? কেমন ধমকিয়ে চলে গেলো? আবার বলে কি না!বিয়ে হয়নি?তখন কি তাহলে খেলা হয়েছে?যত্তসব!#

চলবে
#মিশকাতুল

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে