ভালোবাসায় রাঙিয়ে দাও পর্ব-০৪

0
619

#ভালোবাসায়_রাঙিয়ে_দাও(৪)

ইশানের চলে যাওয়ার দুই মাস হয়ে গেছে এর মাঝে আর সে ফিরে আসেনি বাসাতে। মুন ও নিজের বাবার বাসাতে এসেছে এখানেই থাকছে সে। ইশানের মা আর ইকবালের স্ত্রী রিয়া এসেছে মুনের সাথে দেখা করতে। ইশা ন চলে যাওয়ার পর আর কারো সাথেই যোগাযোগ করেনি এমনকি মায়ের সাথেও কথা বলেনি। মুন অবশ্য এ নিয়ে কিছু ভাবেওনি। সে তো নিজের মতো করেই রয়েছে । ক্লাস নাইনে ভর্তি হবে সে। তার আগেই সাইন্সের বই নিয়ে এসে পড়াশোনা
শুরু করে দিয়েছে। ইমরান ও চলে গেছে নিজের কলেজ এ । মিম তার স্বামীর সাথেই চলে গেছে। এ বাসাতে রয়েছে শুধু মুন, বাবা, মা, আর দাদা, দাদী।
রিয়া আসার কথা কানে যেতেই মুন বই রেখে বসার রুমে চলে এসেছে। রিয়ার গর্ভে সন্তান এসেছে চার মাস হয়। রিয়া খুব সুন্দরী হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। শাহেদা মুনকে কাছে ডাকলেন। পাশে বসিয়ে কেমন আছে জিজ্ঞেস করে খোজ নিলেন।
ইমরান আসছে আগামী কাল। তাই মুনকেও নিয়ে যাবে আজ। ইশানের ও নাকি আসার কথা। ইমরানই বলেছে তার মাকে। ইকবালের সাথে কথা বললেও আসার খবর জানায়নি বাসার কাউকে । তাই তো মুনকে নিয়ে যেতে এসেছে।

মুন! মা আমার! আমাদের বাসাতে নিয়ে যেতে এসেছি আমি তোমায় যাবেনা?

মুন কিছুটা ভাবলো তারপর বললো, কিভাবে যাবো? আমার তো দুই দিন পর থেকেই ক্লাস শুরু হবে স্কুলে।

ওখান থেকেই ক্লাস করবে।

তুমি আমাকে পড়তেও দিবে?আমি না তোমার ছেলের বউ?

এই জন্যই তো সকল প্রকার সুবিধা পাবে তুমি আমার থেকে কারণ তুমি আমার ছেলের বউ।

মুন আর কিছুই বললো না। নিজের ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে ওদের সাথে চলে আসলো। এক মাস আগে একবার এখানে এসে দুই দিন থেকে চলে গেছিলো ইশান তখন ছিলো না। মুন জানে বিয়ে হলে জামাই এর সাথে রোজ কথা হয় ওর বন্ধু জেমির বিয়ে হয়েছে রোজ জেমিকে কল করে কথা বলে। অথচ তার কার সাথে বিয়ে হলো ওই ইশান ভাইয়ের সাথে যে মনের ভুলেও দুই মাসে মুনের খোজ নেয় নি। এতে করে মুনের খারাপ লাগে। ক্লাসের সবাই বলে, মুন, তোর না বিয়ে হয়েছে? জামাই কে তো দেখালিনা। তখন মুন কিছুই বলতে পারেনা। ইশান ভাইকে তার আগেই থেকেই ভয় লাগে কেমন রাগী টাইপ একটা মানুষ এখন তো আরোও ভয় লাগে।

ইশানের রুমে এসে বসে আছে মুন ইমরান ভাই এলেই তার একজন গল্প করার সাথী পেয়ে যাবে ইমরান ভাইয়া খুব ভালো। মুনের এখন বলতে ইচ্ছে করে সবাইকে কেন ইশানের সাথে তার বিয়ে দিল? ইমরান ভাইকে কি কারো চোখে পরেনি?ইমরান ভাই কত্ত ভালো! শুধু একটু শ্যমলা ইশান ভাইয়ের থেকে। তাতে কি মানুষ হিসেবে ইমরান ভাইকে তার খুব পছন্দ।

ইশানের দাদুর সাথে বাগানে এসেছে মুন। দাদু খুব ভালো গল্প জানেন, সেগুলোই বলছে এক দমে মুনকে। ইমরান চলে আসাতে রিয়া ওকে ডেকে গেলো। বাসার ভিতরে গিয়েই দেখলো শুধু ইমরান নয় পাশেই ইশান বসে আছে। এক দৌড়েঁ ইশানের দিকে চলে এলো। ইশান রিয়ার দেওয়া শরবত মুখে দিয়েছে মাত্র।

ইশান ভাইয়া কখন এলে তুমি?আমাকে বিয়ে করে রেখে পালিয়ে গেছিলে কেন?

ইশান অবাক হয় ওর কথা শুনে। হাতের গ্লাস রেখে ওর দিকে তাকিয়ে বলে, আমার পড়াশোনা আছে মুন ! বিয়ে করে কি বাসাতেই থেকে যেতে হবে?

তা নয় কিন্তু তুমি ত………

আমি তো?

ইশানের ধমকে যা বলতে চেয়েছিলো মুন তা ভুলে গেলো। ভীতু নয়নে একবার শাহেদাকে দেখলো এরপর রিয়ার দিকে এগিয়ে গেলো। থ্রি পিসের ওড়না ধরে এক কোনায় দাঁড়িয়ে থাকলো আর কিছুই বললো না।

মুন চলে যেতেই রিয়া ইশানে দিকে গেলো ওর সামনে দাঁড়িয়ে বললো, ইশান তুমি এভাবে কেন ওর সাথে বিহেভ করছো? তুমি তো বাচ্চা নও ইশান! বিয়ের পর দিন বউ রেখে পালিয়ে গেলে আবার আজ ফিরে এলে ওর সাথে সেই আগের মতো বিহেভ শুরু করলে কেন?এমন করে রিয়েক্ট করছিলে যেনো মুন আসলেই বাচ্চা একটা মেয়ে#ক্লাস সেভেনের মেয়েরাও এখন এক বাচ্চার মা হচ্ছে অহরহ!

তুমি শুধু আমার দিকটাই দেখলে ভাবী?মুনকে দেখেছ?এখনো কেমন ছোট বাচ্চা মেয়েদের মতো বিহেভ ওর।

এভাবে বলোনা ইশান। ও হলো আদরের বাবা মায়ের। কখনো বাইরের পরিবেশের সাথে ওর পরিচয় হয়নি তাই তো সব কিছুতে বাচ্চামো রয়েছে ওকে বুঝতে দাও ইশান। ওর সাথে একটু ভালো করে আচরণ করার চেষ্টা করো।

বড় ভাইয়ের বউকে ইশান যথেষ্ট সন্মান করে। তাই আর রিয়াকে কিছুই বললো না সে। ব্যাগ নিয়ে নিজের রুমে দিকে গেলো। রুমে এসেও আরেক ঝামেলা এই মেয়েটা তার রুমেই অবস্থান নিয়েছে। শুধু কি বাচ্চা একটা মেয়ে বলেই সে মানতে পারছেনা নাকি?আসলে তো ওর মুনকে স্ত্রী হিসেবে পছন্দই না। যে যাই বলুক না কেন?

মুন ইশান কে দেখে বিছানা থেকে নেমে আবার বাইরে চলে গেলো। ধমকিয়ে কথা বলেছেনা ওর সাথে?ও আর কথাই বলবেনা ইশানের সাথে। ইমরানের রুমে গিয়ে বসলো সোফায়। ইমরান ফোনে কারো সাথে কথা বলছিলো মুনকে দেখেই বলল, কি হলো? ভাইয়ার বউ কে কি ভাইয়া আবার কিছু বলেছে নাকি?

মুন স্পষ্ট ভাষী একটা মেয়ে মনে যা আসে তাই বলে দেয় ইমরানে আহ্লাদের সহীত বলাতে সেও মোনের ভেতরে রাখা কথা মুখে আনল, তোমার সাথে কেন আমার বিয়ে দিলো না সবাই?

ইমরান হকচকিয়ে গেলো মুনের কথাতে। নিজেকে স্বাভাবিক করে এনে বললো, এসব কি ধরনের কথা মুন?আমি তোমার বড় ভাইয়া। ইশান আমার নিজের ভাই ওর বউ তুমি মানে আমার ভাবী বুঝলে?

হুম!

ভাইয়ার সাথে আমি নিজে তোমার সম্পর্ক ঠিক করে দেব। সময় দাও প্লিজ মুন।

ওকে।

মুন আবার গেলো শাহেদার কাছে কিচেনে রয়েছে সে । ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ইমরান ভাবলো, ভাইয়া তো তোমাকে ভালোবাসেনা মুন তাই সহজ ভাবে স্ত্রী হিসেবে মানতে পারছেনা । শুধু তোমাকে কেন যার সাথেই আম্মু ভাইয়ার দিতো তাকেই মানতে পারতো না । শুধু মাত্র জেদের বশে তোমায় বিয়ে করেছে ভাইয়া। তাতে কি আমি তোমাকে ভাইয়ার কাছে ভালোবাসায় রুপান্তর করে দেব। ভাইয়া তো ভুল মানুষ কে ভালোবেসে আজ হেরে গেছে মুন।

———-

ইমরান প্রায় ঘন্টা খানেক সময় ধরে একটা নাম্বারে কল করেই যাচ্ছে কিন্তু কেউ রিসিভ করছেনা। বিরক্ত হয়ে ফোন রেখে ডিনার করতে এলো। ইশান, ইমরান আর ইকবাল এক সাথে বসেছে ইকবাল মুনকেও সাথে বসিয়েছে। রিয়া আর শাহেদা সার্ভ করে দিচ্ছে। খাবার শেষ করে মুন রুমে এসে আগেই ঘুমিয়েছে। ইশান পর পর এসে পাশের ফাকাঁ জায়গাতে শুয়ে পরেছে।
পরের দিন ইমরান মুনকে সাথে নিয়ে বের হলো ঘুর‍তে নিয়ে যাবে বলে। ইশান কেও আসতে দেখা গেলো রিয়া ইমরানের দিকে তাকিয়ে কিছু বললো ইমরান চোখের ইশারাতেই কিছু বুঝিয়ে দিলো।
ইমরানের পাশে মুনকে দেখে ইশান বলে,
ওকে কেন নিচ্ছিস আমাদের সাথে?

ও বাসায় একা একা করবে কি? ভাবীর তো এসময় ঘঘোরাফেরা করা রিস্ক। কিন্তু মুনকে নিতে কোন সমস্যা নেই। তাইনা ভাবী?

হ্যাঁ, অবশ্যই মুন সারা সময় বাসাতেই থাকে একটু বাইরের পরিবেশ ও ওর দরকার।

গাড়িতে মুনকে ইশানের পাশে সামনে বসিয়েছে ইমরান। কিছু বলতেও পারছেনা
ইশান। ইমরানের এক বন্ধুর সাথে রাস্তায় দেখা হয়ে যাওয়াতে ইমরান ওকে পেছনে নিজের পাশেই বসিয়ে দিলো। ইশান দেখছে মুন চুপ করে আছে তাই জিজ্ঞেস করলো, রাত থেকে দেখছি চুপ করে আছো তোমার কি সাউন্ড সিস্টেম বন্ধ হয়ে গেলো নাকি?

মুন রে*গে গেলো উচ্চ কন্ঠে বললো, আমার আপনার সাথে আর কোন কথা নেই।
পেছনে ইমরান আর ইমরানের বন্ধু হকচকিয়ে গেলো মুনের কথা শুনে ইশান ওদের দিকে তাকিয়ে আর ততক্ষণে কিছুই বললো না মুনকে তবে কঠিন চোখে দেখে নিলো। তারপর চুপ চাপ গাড়ি ড্রাইভ করে মাঠের দিকের রাস্তা ধরলো। সেখানেই মেলা বসেছে।
আগে এই দুজন আলাদা হোক তারপর এই মুনের একটা ব্যবাস্থা সে করবে এভাবে তার সাথে কথা বলা অন্যর সামনে?বুঝিয়ে দেবে। অসহ্য মেয়ে একটা!!

চলবে
#মিশকাতুল

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে