#ভালবাসি_শুধু_তোমায়_আমি
#পর্ব:১৫
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
সবকিছু শোনে স্পর্শক স্তব্ধ হয়ে যায়। হাত থেকে ফোনটা পড়ে যায়। পলা আহম্মেদ স্পর্শককে জিঙ্গেস করে কী হয়ছে? স্পর্শক সব বলে। সব শুনে পলা আহম্মেদ হাউ মাউ করে কেঁদে দেয়। তিনি ভাবতে পারছেন না উনার ভাই একজন খুনি। তিনি এখন বুঝতে পারছেন এতদিন তিনি দুধ কলা দিয়ে কাল সাপ পুষেছেন।
মিষ্টি মা তুমি এভাবে কেঁদো না। তোমার কান্নার শব্দ শুনলে আরু এখানে চলে আসবে। আর এসব কিছু আরু জানতে পারলে কিছুতেই মেনে নিতে পারবে না। ও ভেঙে পরবে।
পলা আহম্মেদ নিজেকে সামলে বলে,
স্পর্শক তুমি আরুর কাছে যাও।
কিন্তু মিষ্টি মা।
আমি ঠিক আছি। তুমি আরুর কাছে যাও। আমি এখন একলা থাকতে চাই। আর হ্যা আরুকে তুমি কিছু বলো না। কারণ আরু এহসান ভাইকে খুব ভালোবাসে। আরু এটা মানতে পারবে না। এখন তুমি প্লিজ যাও।
আচ্ছা।
স্পর্শক নিজের রুমে আসে। রুমে এসে স্পর্শক হতভম্ব হয়ে যায়। রুমের জিনিসপত্র সব উলট পালট। কাবাডের সব কাপড় নিচে পড়ে আছে। বেডে ওপরে চিপসের প্যাকেট, চকলেটের প্যাকেট খালি পড়ে আছে। আরনিয়ার পড়নে একটা কালো শাড়ি। বেডের মাঝখানে এলোমেলো ভাবে শুয়ে আছে আরনিয়া। তার পাশেই পড়ে আছে আধ খাওয়া চকলেট। চকলেট চকলেট খেতে খেতেই আরনিয়া ঘুমিয়ে পড়ছে। স্পর্শক নিঃশব্দে হাসে।
স্পর্শক সম্পূর্ণ রুমের পরিষ্কার করে জিনিস ঘুছিয়ে রাখে। আরনিয়াকে বেডে ঠিক ভাবে শুইয়ে দিয়ে শাড়িটা ঠিক করে দিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় স্পর্শক। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে আরনিয়া বেডের মাঝখানে বসে আছে মন খারাপ করে। স্পর্শক এগিয়ে গিয়ে আরনিয়ার গালে হাত দিয়ে বলে,
আমার আরু বেবিটার কী হয়ছে?
মন খারাপ।
কেনো?
পাপাকে এতোদিনের জন্য কেনো বিদেশ যেতে হলো। যাবে তো ঠিক আছে আমার সাথে একবার দেখা করলো না।
এর জন্য মন খারাপ করে থেকো না। কাকাই খুব তাড়াতাড়ি চলে আসবে। ইউ নো না এই সময় মন খারাপ করে থাকা ঠিক না।
আমাকে কেমন লাগছে দেখতে?
আরনিয়া বেড থেকে নেমে স্পর্শকের সামনে দাঁড়িয়ে কথাটা বলে।
তোমাকে কিউট গুলোমুলো বেবি লাগছে।
আগে শাড়ি পড়লে তুমি বলতে হট লাগছে আর আজকে। ( মন খারাপ করে )
আগে তো তোমার পেট ফুলা ছিল না। আমাদের বেবি আসার পড়ে তোমার পেট ফুলে গেছে, আগের থেকে অনেক বেশি সুন্দর হয়ে গেছো। গুলোমুলো হয়ে গেছে। তোমার মাঝে একটা কিউট কিউট ভাব চলে আসছে।
তার মানে আমাকে আগে কিউট লাগতো না?
লাগতো কিন্তু এখন একটু বেশিই কিউট লাগে। ( পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে কথাটা বলে স্পর্শক। )
আগের থেকে অনেক বেশি মোটা হয়ে গেছি। তার মানে আমার ওজন অনেকটা বেড়ে গেছে তুমি এখন আর কথাই কথাই আমাকে কোলে তুলে নিতে পারবে না। হি হি হি
স্পর্শক আরনিয়াকে কোলে তুলে নেয়।
তোমার কী আমাকে এতোটাই দুর্বল মনে হয় যে নিজের বউ আর বাচ্চাকে একসাথে কোলে নিতে পারবো না। তোমার মতো তিনটা আরনিয়াকে একসাথে কোলে নিতে পারবো।
__________________
এভাবে কেটে গেলো ১৫ টা দিন। এই ১৫ টা দিন স্পর্শক এক সেকেন্ডের জন্য আরনিয়ার পাশ থেকে নড়েনি। আজকে বাধ্য হয়েই তাকে অফিসে যেতে হলো। কারণ আজকে নিলয় আহম্মেদ অসুস্থ আর আজকে অফিসে একটা ইমপর্টেন্ট মিটিং ছিল। যদি এটেন্ট না করে তাদের অনেক লস হয়ে যাবে তাই বাধ্য হয়েই স্পর্শক অফিস গেলো।
সকাল ১০ টা
আরনিয়া সোফায় বসে আচার খাচ্ছে আর টিভি দেখছে। তখনি কলিংবেল বেজে ওঠে ।আরনিয়া ভাবে স্পর্শক এসেছে। কারণ স্পর্শক যাওয়ার আগে বলে গিয়েছিল যত দ্রুত সম্ভব মিটিং শেষ করে চলে আসবে। দরজা খুলতেই দেখে এহসান খান দাঁড়িয়ে আছে। এতোদিন পরে নিজের পাপাকে দেখে খুশিতে গদগদ হয়ে জড়িয়ে ধরে।
পাপা তুমি কেমন আছো? জানো তোমাকে কত মি……..
এহসান খান আরনিয়ার কথাটা শেষ করতে দেয় না তার আগেই ধাক্কা দিয়ে আরনিয়াকে নিজের থেকে সরিয়ে দেয়। ধাক্কাটা জুরে হওয়ায় আরনিয়ার মাথা দেয়ালে লাগে। কপাল কেটে চুইয়ে চুইয়ে রক্ত পড়তে থাকে। আরনিয়ার মাথা ঝিম মেরে আসছে। স্পর্শকের বাবা চিৎকার করে বলে,
এটা তুমি কি করলে এহসান?
আরনিয়ার মা আরনিয়ার কাছে আসতে চাইলে এহসান খান তাকে ধাক্কা দিয়ে সোফায় ফেলে দেয়।
এই তোরা ভিতরে আয়।
এহসান খানের ডাক শুনে প্রায় সাথে সাথেই ৫ জন লোক আসে। দেখতে একদম গুন্ডা গুন্ডা টাইপ। তারা ভিতরে প্রবেশ করেই আরনিয়ার মার, স্পর্শকের বাবা-মার হাত পা বেধে ফেলে। এহসান খান একটা নাইফ হাতে নিয়ে স্পর্শকের বাবার ঠোঁট স্লাইড করতে করতে বলে,
এই মুখ দিয়ে তুই অপমান করেছিলি না আমাকে? এই মুখই যদি তোর কাছে না থাকে তাহলে অপমান করবি কি করে?
আরনিয়ার মা চিৎকার করে বলছে,
আরু মা তুই এখান থেকে চলে যা। নাহলে এই লোকটা তোকে মেরে ফেলবে। তুই স্পর্শকের কাছে চলে যা। স্পর্শক তোর কোনো ক্ষতি হতে দিবে না।
এহসান খান স্পর্শকের বাবার মুখে এসিড ছুড়ে মারে। গলা কাটা মুরগির মতো ছটফট করতে থাকে নিলয় আহম্মেদ। আরনিয়া এগিয়ে আসতে নিলে স্পর্শকের মা চিৎকার করে বলে,
আরু তুই এখান থেকে চলে যা। তোর সন্তানের দিব্বি।
আরনিয়া অশ্রু সিক্ত নয়নে তিনজনের দিকে একবার তাকিয়ে দৌড়ে দরজা দিয়ে বেরিয়ে আসে। নিলয় আহম্মেদ যন্ত্রনায় ছটফট করতে করতে অঙ্গান হয়ে যায়। এহসান খান এতক্ষণ খেয়াল করেনি যে আরনিয়া এখান থেকে চলে গেছে। উনি যখনি বুঝতে পারলেন আরনিয়া এখানে নেই তখনি একজন ডেকে বলে,
রনি দেখতো মেয়েটা কই গেলো। এই অবস্থায় বেশি দূর যেতে পারবে না।
এহসান খান বলার সাথে সাথেই দুটো লোক বেরিয়ে গেলো আরনিয়াকে খোঁজতে। এহসান খান স্পর্শকের বাবার কাছ থেকে সম্পত্তির দলিলে টিপ সই নিতে গেলে তাচ্ছিল্য সরে স্পর্শকের মা বলে,
যত যাই করো কোনো প্রোপাটি তুমি পাবে না। কারণ নিলয়ের নামে কোনো প্রোপাটি নাই।
এহসান খান বেশ রেগে যায় এতবছর ধরে এই প্রোপাটির জন্য এতো অভিনয় করলো এখন বলে সেই প্রোপাটি পাবে না। এহসান খান রেগে পর পর ছয়টা গুলি করে শেষ করে দেয় তিনটি মানুষের জিবন।
__________________
আরনিয়া আর দৌড়াতে পারছে না তার পেটে তীব্র যন্ত্রনা হচ্ছে। আরনিয়া পিছনে তাকিয়ে দেখে ছেলে দুটো তার কাছেই চলে এসেছে। আরনিয়া পিছনের বিপদকে খেয়াল করতে গিয়ে সামনের বিপদই খেয়াল করেনি। একটা গাড়ি এসে আরনিয়াকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় রাস্তার পাশে। আরনিয়ার মাথা গিয়ে পড়ে পাথরের ওপর।
বর্তমানে
স্পর্শকের বুকে মাথা রেখে ফুফিয়ে কাঁদছে আরনিয়া।
স্পর্শক আমাদের সন্তান।
চলবে……..