#ভালবাসি_শুধু_তোমায়_আমি
#পর্ব:১৪
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
ভাবি শব্দটা শুনে স্পর্শকের ভ্রু কুচকে আসে। কিছু একটা ভেবে স্পর্শক মাথা চুলকে মুচকি হাসে। সবাই একসাথে স্পর্শকের বার্থডে সেলিব্রেইট করে। সেলিব্রেশন শেষে ঘুমানোর জন্য সবাই নিজের রুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়। আরনিয়া যেতে নিলে স্পর্শক আরনিয়ার হাত টেনে ধরে। এক টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে। কোমর জড়িয়ে ধরে আরনিয়াকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় স্পর্শক।
আমি আসার পর থেকে তুই আমার সাথে একটা কথাও বলিস নি।
নিশ্চুপ
আমার পিচ্চি বউটা কি আমার উপর খুব বেশি অভিমান করেছে।
মাথা নাড়িয়ে অসম্মতি জানায় যে সে অভিমান করেনি।
তাহলে কথা বলছিস না কেনো?
আরনিয়া নিজেকে স্পর্শকের কাছ থেকে ছাড়িয়ে দুই হাত রেলিং এ রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,
তিনটা বছর আপনার সাথে দেখা হয়নি। কথা হয়েছে তবুও অপরিচিতদের মতো কেমন আছো? এইটুকু জিঙ্গেস করতেন। আমার উত্তর শোনার পর পরই ফোন কেটে দিতেন। আপনি কেমন আছেন? এটা জিঙ্গেস করার সময় পর্যন্ত দিতেন নাহ। হয়তো এটা আমার ভালোর জন্যই করেছেন। এতোদিন কথা না বলার কারণে আপনার সাথে কথা বলতে অস্বস্তি হচ্ছে। হওয়াটা কি স্বাভাবিক নয়। সবাই বলে দূরত্ব নাকি ভালোবাসা বাড়ায়। আমার মতে অনেক সময় দূরত্বের জন্য ভালোবাসা হারিয়ে যায়। একটা মানুষ যখন অপর পাশের ব্যক্তিটার কাছ থেকে অবহেলা পায় তখন অন্য কারো কাছ থেকে একটুখানি গুরুত্ব পেলে তার কাছে চলে যায়।
আরনিয়া এটুকু বলে থামে। স্পর্শক ভাবছে তার আরনিয়া কি অন্য কাউকে ভালোবেসে ফেলেছে। আরনিয়ার ভালো করতে গিয়ে কি আরনিয়াকে সারাজীবনের জন্য হারিয়ে ফেললো? কারণ সেতো আরনিয়াকে কম ইগনোর করেনি। স্পর্শকের মনে এখন নানা প্রশ্ন উকি দিচ্ছে। তিন বছর আগে সে যে আরনিয়াকে রেখে গিয়েছিল সে কখনো তাকে আপনি করে বলতো না। আরনিয়া একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে আবার বলতে শুরু করে,
আপনার মনে এখন নানা প্রশ্ন উকি দিচ্ছে। এই তিন বছরে আমি কাউকে ভালোবেসে ফেলেছি নাকি। উহু আমি কাউকে ভালোবাসিনি। হয়তো ভালোবেসে ফেলতাম আমার নামের সাথে মিসেস নামক সিলমোহর যদি না লাগিয়ে দিতেন। এই তিনটা বছর প্রত্যেক মুহূর্তে সবাই আমাকে মনে করিয়ে দিয়েছে আমি কারো আমানত। আপনি হয়তো ভাবছেন আমি আপনাকে হুট করে আপনি কেনো ডাকছি? আপনাকে কি বলে সম্বোধন করবো ভেবে পাচ্ছিলাম। হুট করেই মনে হলো ‘আপনি’ সম্বোধনটাই বেস্ট।
স্পর্শক আরনিয়াকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে আরনিয়া চুলের ভাজে আলতো করে হাত ঢুকিয়ে দেয়। আরনিয়ার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয়।
তোমার মুখে আপনি শুনতে ভালো লাগে না। তুমি যখন আমাকে তুমি বলে ডাকো তখন সেই ডাকটা আমার বুকে গিয়ে লাগে। এতদিন তোমাকে যত অবহেলা করেছি সব ভালোবাসা দিয়ে পুষিয়ে দিবো। তোমাকে আমি এতো ভালোবাসবো যে কোনো অভিযোগ করার সুযোগই দিবো না।
আরনিয়া স্পর্শককে জড়িয়ে ধরে। স্পর্শকও দুই হাত দিয়ে আগলে নেয় তার প্রেয়সীকে।
__________________
চলে যায় একটা বছর । আরনিয়া আর স্পর্শক সুখে শান্তিতে সংসার করছে। আরনিয়া ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। স্পর্শক অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে আর আরনিয়া স্পর্শককে সবকিছু এগিয়ে দিচ্ছে। স্পর্শক আরনিয়াকে কড়া গলায় বলে,
সিঁড়ি দিয়ে একদম নামবে না। একা একা ওয়াশরুমে যাবে না মা অথবা মিষ্টি মা কাউকে ডাক দিবে। টাইমলি খাবার খাবে। ঠিক মতো খাবার না খেলে আমি বাড়ি ফিরে তোমার ক্লাস নিবো। আমি আসছি সাবধানে থাকবে।
স্পর্শক যাওয়ার আগে আরনিয়ার কপালে একটা চুমু এঁকে দেয়। আরনিয়া আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেলে। স্পর্শক অফিসে চলে যায়।
সিঁড়ি দিয়ে একদম নামবে না। একা একা ওয়াশরুমে যাবে না মা অথবা মিষ্টি মা কাউকে ডাক দিবে। টাইমলি খাবার খাবে। ঠিক মতো খাবার না খেলে আমি বাড়ি ফিরে তোমার ক্লাস নিবো। আমি আসছি সাবধানে থাকবে।
আরনিয়া স্পর্শকের কথাগুলো রিপিট করে একটা ভেংচি কাটে।
আমার সাথে কড়া গলায় কথা বলে। নেহাত তোকে ভয় পাই তাই তোর সামনে কিছু বলতে পারি না। আমার বয়েই গেছে তোর কথা শুনতে। হুহ। বেটা অসভ্য।
__________________
স্পর্শক কোম্পানির পুরোনো ফাইল চেক করে দেখে এহসান খান কোম্পানির টাকা নিজের একাউন্টে টান্সফার করে। স্পর্শকের ফোন বেজে ওঠে। স্পর্শক ফোনটা রিসিভ করে।
হ্যালো স্যার
হুম বলো
স্যার এহসান খান আপনাদের কোম্পানির খবর টাকার বিনিময়ে বাইরে লিক করে। আপনাদের কোম্পানিতে তৈরি করা প্রজেক্ট অন্য কোম্পানিতে বিক্রি করে দেয়। এছাড়াও অনেক বাজে কাজের সাথে জড়িত। বাকি ইনফরমেশন রাতের মাঝে পেয়ে যাবেন।
থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ সো মাচ।
মাই প্লেইজার স্যার।
বাই।
স্পর্শক তার বাবার কাছে যায় এবং সবকিছু খোলে বলে। স্পর্শক আর তার বাবা এহসান খানকে অপমান করে অফিস থেকে বের করে দেয়। এহসান খান যাওয়ার আগে শুধু বলে যায়।
এই অপমানের বদলা আমি নিবোই।
__________________
স্পর্শক বাড়ি ফিরে পলা আহম্মেদকে তার ভাইয়ের কুকর্মের কথা সব বলে। সবকিছু শোনে পলা আহম্মেদ স্তব্ধ হয়ে যায়। তিনি বিশ্বাসই করতে পারছেন না এতবছর ধরে তার ভাই তার সাথে প্রতারণা করে আসছে। স্পর্শকের ফোন বেজে ওঠে স্পর্শক ফোনটা রিসিভ করে।
হ্যালো স্যার এহসান খান অনেক অন্যায় করেছে। ১৮ বছর আগে নিজের বাবাকে মারার প্লেন করেছিলেন। কিন্তু কোনো একটা কারণে নিজের প্লেনে সফল হতে পারেননি। কয়েক বছর আগে নিজের হাতে নিজের ভাইকে খুন করেছেন। আর এসব তিনি করেছেন সম্পত্তির জন্য।
সবকিছু শোনে স্পর্শক স্তব্ধ হয়ে যায়। হাত থেকে ফোনটা পড়ে যায়। পলা আহম্মেদ স্পর্শককে জিঙ্গেস করে কী হয়ছে? স্পর্শক সব বলে। সব শুনে পলা আহম্মেদ হাউ মাউ করে কেঁদে দেয়।
চলবে……..