ভালবাসি_শুধু_তোমায়_আমি
#পর্ব:১
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
আজ আরনিয়ার বিয়ে। লাল টুকটুকে বউ সেজে বসে আছে স্টেইজে। তারপাশেই বসে আছে তার হবু বর ইহান। কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করবে এমন মুহূর্তে একটা ছেলে স্টেইজে ওঠে আরনিয়াকে টান দিয়ে দাঁড় করিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। আকস্মিক এমন অদ্ভুত ঘটনায় সবাই বাকরুদ্ধ হয়ে যায়।
ইহান ওদের কাছে আসতে চাইলে কালো ড্রেস পড়া একটা ছেলে ইহানকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়। সম্ভবত ছেলেটি বডিগার্ড। পাশ থেকে আরনিয়ার বাবা চিৎকার করে বলে,
এটা কোন ধরনের অসভ্যতা। এই ছেলে কে তুমি? নিশ্চয়ই আমার শত্রু আমার মেয়ের বিয়ে ভাঙতে এসেছো।
অগ্যাত ছেলেটি আরনিয়ার ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে বরের আসনে বসে পড়ে। হাত দিয়ে নিজের ঠোঁট মুছতে মুছতে বলে,
শ্বশুর মশাই এই বয়সে এতো হাইপার হওয়া ঠিক না। প্রেশার বেড়ে গেলে স্টোক করবেন। আপনার মেয়ের বিয়ে তো হয়ে গেছে একবার। ( অত্যন্ত শান্ত ভঙ্গিতে)
ইহান নিচ থেকে ওঠে রেগে চিৎকার করে বলে,
আরনিয়ার বিয়ে হয়ে গেছে মানে কী? আমি আরনিয়ার হবু বর।
আরনিয়ার নামটা দ্বিতীয় বার উচ্চারণ করবি না। আরেকবার আরনিয়ার নামটা উচ্চারণ করলে তোর মুখটা আর তোর সাথে থাকবে না কথা বলার জন্য । (রেগে)
ইহান ছেলেটির কথা শুনে ভয়ে চুপসে যায়।
এই দিকে ছেলেটার মুখ দেখে বিয়ে বাড়ির উপস্থিত সবাই ভয়ে কাপাকাপি শুরু করে দিয়েছে।
( ছেলেটি আদনান আহম্মেদ স্পর্শক। যার নাম শুনলেই মানুষ ভয়ে কাঁপাকাঁপি শুরু করে দেয়। টপ টেন বিজনেসম্যানদের মাঝে একজন। তার উপর মাফিয়া কিং।)
( স্পর্শিয়া আহম্মেদ আরনিয়া এবার অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান।)
অনেক দৌড়ে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেই আরো বিশ থেকে পঁচিশ জনের মতো লোক ঢুকে। সবাই কালো ড্রেস পড়া আর হাতে রিভলবার। রিভলবার দেখে সবাই ভয়ে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। আরনিয়া এখনো ফ্রিজড হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এখানে কী হচ্ছে কিছুই তার বোধগম্য হচ্ছে না। সে এখনো একটা ঘোরের মাঝে আছে। স্পর্শক আরনিয়ার হাত ধরে টেনে তার কোলে বসিয়ে দেয়। স্পর্শক স্পর্শে আরনিয়ার ঘোর কাটে। স্পর্শকের কাছ থেকে ছাড়া পাবার জন্য আরনিয়া ছটফট করতে থাকে। আরনিয়া যত বেশি ছটফট করছে স্পর্শক তত শক্ত করে চেপে ধরছে আরনিয়াকে নিজের সাথে। আরনিয়া রেগে চিৎকার করে বলে,
এই ছেলে আপনার সাহস হয় কী করে আমাকে কিস করার?
আমার সাহসটা বরাবরই বেশি আর নিজের বউকে কিস করতে সাহস লাগে নাকি।
আপনি কোন অধিকারে আমাকে নিজের বউ বলে দাবি করছেন?
স্বামীর অধিকারে।
আপনার সাথে আমার বিয়ে কখন হলো। আমি তো আমাকে চিনিই না।
শ্বশুর মশাই আপনি এখনো আপনার মেয়েকে আমার কথা আমাদের বিয়ের কথা বলেননি। আচ্ছা যাই হোক আমি তোমাকে বলছি, আমাদের বিয়ে হয়েছে আজ থেকে দুই বছর আগে তাই না শ্বশুর মশাই।
আপনার কথা আমি কেনো বিশ্বাস করবো?আপনার কাছে কী প্রমান আছে যে আমি আপনার ওয়াইফ?
বিশ্বাস করা বা না করা তোমার ব্যাপার। রাকিব ,, রাকিব,,,
রাকিব বলে ডাকার সাথে সাথে একটা রোগাটের টাইপের ছেলে দৌড়ে আসে। দৌড়ে এসে কিছু কাগজ স্পর্শকের দিকে এগিয়ে দেয়। স্পর্শক কাগজগুলো নিয়ে আরনিয়ার দিকে এগিয়ে দেয়।
এখানে সাইন করো।
আমি কিছুতেই সাইন করবো না। বাবা তুমি কিছু বলছো না কেনো?
দাঁড়াও মামুনি আমি এখনি পুলিশকে ফোন করছি।
শ্বশুর মশাই পুলিশকে ফোন করার দরকার নাই পুলিশ বাইরে দাঁড়িয়ে আছে যান গিয়ে কথা বলে আসুন।
হ্যাঁ ,, হ্যাঁ আমি এক্ষুনি যাচ্ছি।
শ্বশুর মশাই তাড়াতাড়ি যান পুলিশের কাছ থেকে জামাই আদর খেয়ে আসেন।
মানে?
শ্বশুর মশাই আপনি অতটা বোকা নন যে আমার সিম্পল কথাটা বুঝতে পারবেন না। আপনি না বুঝলে আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি। আমি আরনিয়ার হাজবেন্ড আমার সাথে আরনিয়ার ডিবোর্স হয়নি। আমি জীবিত থাকতে আপনি আরনিয়ার অন্য একটা ছেলের সাথে বিয়ে দিচ্ছেন এটা নিশ্চয়ই ভালো কাজ না।
আরনিয়ার বাবা হাত দিয়ে কপালের ঘাম মুছে একবার স্পর্শকের দিকে তাকায় আরেকবার গার্ড দিকে তাকায়।
শ্বশুর মশাই ঘামছেন কেনো? আপনার গরম লাগছে বুঝি? এই তোদের আক্কেল বলতে কিছু নাই। আমার শ্বশুর মশাই গরমে কষ্ট করছেন। আর তোরা আহম্মকের মতো দাঁড়িয়ে আছিস। উনার সেবা কর যতই হোক তোদের ম্যামকে এতোদিন দেখে রেখেছে।
একটা গার্ড চেয়ার নিয়ে এসে আরনিয়ার বাবাকে টেনে চেয়ারে বসিয়ে দেয়। স্পর্শক কাজি সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বলে,
বিয়ে পড়ানো শুরু করুন।
কাজি ভয়ে থরথর করে কাঁপছে।
আপনি আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন। বিয়ে পড়ানো শুরু করুন। (দাঁতে দাঁত চেপে)
আমি আপনাকে বিয়ে করবো না।
কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করে।
আপনি বিয়ে পড়ানো বন্ধ করুন। আপনি আমার কথা বুঝতে পারছেন নাহ। আমি আপনাকে বিয়ে করবো না আমি ইহা……….
স্পর্শক আরনিয়ার ঠোঁটে আঙ্গুল রেখে আরনিয়াকে চুপ করিয়ে দেয়।
হুসসসসস। তোমার মুখে আমি অন্য কোনো ছেলের নাম শুনতে চাই না। আজকের পর থেকে আমার নাম ছাড়া আর কারো নাম তুমি নিবা না। আর তুই ( ইহানকে উদ্দেশ্য করে) এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? যদি বেঁচে থাকতে চাস তাহলে তোর সব লোকজন নিয়ে এখনি কেটে পর। ( হুংকার দিয়ে)
ইহান তার লোকজন নিয়ে এক মিনিটের মাঝে হাপিস হয়ে যায়।
নিন কাজি সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করুন।
না আপনি বিয়ে পড়ানো শুরু করবেন না।
কাজি পড়ছে শাখের কড়াতে। একজন বলে বিয়ে পড়ানো শুরু করুন আরেকজন না করছে।
আপনারাই ডিসাইড করে বলুন বিয়ে পড়াবো নাকি পড়াবো না।
আরনিয়া আমি এক কথা বারবার বলতে পছন্দ করি না। তুমি যদি আমাকে বিয়ে না করো তাহলে গুলি করে তোমার বাবার মাথার খুলি উড়িয়ে দিবো। তারপর তোমাকে এখান থেকে তুলে নিয়ে চলে যাব। ভেবে দেখো বিয়ে না করলেও তোমাকে আমার সাথে থাকতে হবে মাঝখান থেকে তোমার বাবার প্রাণটা চলে যাব। নাউ চয়েস ইউর। তোমার কাছে মাত্র ২ মিনিট সময় আছে।
আমি আপনাকে বিয়ে করবো।
অবশেষে আরনিয়া আর স্পর্শকের বিয়ে সম্পূর্ণ হলো।
আরনিয়া চলো শ্বশুর মশাইয়ের দোয়া নিয়ে আসি।
আরনিয়া মুখ ঘুরিয়ে নেই। স্পর্শক আরনিয়ার বাবার কাছে যায় জড়িয়ে ধরে কানে ফিসফিস করে বলে,
আমি জিতে গেলাম শ্বশুর মশাই। ( বাঁকা হেসে)
আরনিয়ার বাবাও স্পর্শকের কানে ফিসফিস করে বলে,
মাত্র তো খেলা শুরু। এই এহসান খানের সামনে তুমি চুন পুঁটি।
এহসান খান মনেমনে বলে,
তুমি তো নিজেও জানো না আমি হেরে গিয়েও জিতে গেছি।
স্পর্শক এহসান খানকে ছেড়ে আরনিয়ার হাত ধরে বলে,
চল।
আমি আপনার সাথে কোথাও যাব না।
আমার আগেই বোঝা উচিত ছিল তুমি সোজা কথার মেয়ে না।
স্পর্শক আরনিয়াকে কোলে তুলে নেয়। আরনিয়া স্পর্শকের বুকে চড় থাপ্পড় দিতে দিতে বলে,
আমি আপনার সাথে কোথাও যাব না। আমাকে নামান।
স্পর্শকের মাঝে কোনো হেলদুল নাই। আরনিয়া রেগে স্পর্শকের হাতে কামড় দিয়ে দেয়। স্পর্শক কামড়ের দাগটা দেখে মুচকি হেসে বলে,
তোমার দেওয়া প্রথম ভালোবাসার চিহ্ন।
চলবে……..