18.8 C
New York
Sunday, October 5, 2025

Buy now

spot_img







ভালবাসার এক রাত পর্ব-৯+১০

#ভালবাসার এক রাত❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ রোজ
#পর্ব- ৯

আমি ড্যাবড্যাব করে শুভ্র ভাইর দিকে তাকিয়ে আছি। রাহি আপু দুর থেকে আমাদের দেখছে। জানিনা হঠাৎ করে আমার কি হলো? আমি দু হাতে শুভ্র ভাইর গলা জড়িয়ে ধরলাম। শুভ্র ভাই একবার আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। এরপর আবার সামনে তাকিয়ে হাটতে লাগলো। ওনার মুচকি হাসিতে আমি বেশ অবাক হলাম। আমি ভেবেছিলাম হয়তো উনি আমাকে ধমক দেবে। যে কেন আমি ওনার গলা জড়িয়ে ধরেছি? কিন্তুু উনি তেমন কিছুই করলো না। গাড়ির সামনে এসে শুভ্র ভাই আমাকে কোলে রেখেই গাড়ির ডোর খুললো। ডোর খুলে আমাকে বসাতে গেলেই পায়ে নড়া লেগে ব্যথা পেয়ে আহহ করে শব্দ করলাম। শুভ্র ভাই তাড়াহুড়ো করে ড্রাইভিং সিটে বসলো। আমার পা টেনে নিয়ে দেখে আতকে উঠলো। আমি নিজেও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। এইটুকু সময়ের মধ্যেই পা ফুলে ডোল হয়ে গিয়েছে। শুভ্র ভাই আমার দিকে তাকালো। ওনার চোখ দেখে আমি ভীষণ অবাক হলাম। ওনার চোখে পানি টলটল করছে। আমি অবাক হয়ে বললাম।”

—-” শুভ্র ভাই কি হয়েছে?”

উনি পা আস্তে রেখে বললো,

—-” তোর খুব ব্যথা করছে তাই না?”

আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না। আমি ওনার দিকে তাকিয়ে আছি। আমার পায়ে ব্যথা করছে বলে ওনার চোখে পানি? এটা ভাবতেই একটা অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। ওনার চোখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। আসলে ওনার চোখের গভীরতা মাপার চেষ্টা করছি। অনেক চেষ্টা করেও পারলাম না। কেন যেন মনে হচ্ছে এই চোখের গভীরতা মাপতে গেলে আমি নিজেই এই চোখের গভীরে হারিয়ে যাবো। ভাবনার মাঝেই শুভ্র ভাই আমার ডান হাত ওনার বাম হাত দিয়ে চেপে ধরলো। হালকা কেঁপে উঠে ওনার দিকে পূণরায় তাকাতেই বললো।”

—-” আমি তোকে এক্ষুণি হসপিটালে নিয়ে যাবো। দেখবি তোর পায়ের ব্যথা ঠিক হয়ে যাবো,

আমি হা করে তাকিয়ে আছি। এই লোকটার আজ কি হলো? আজকে এমন কেন করছে উনি? এইটুকু পায়ের ব্যথার জন্য হসপিটালে যাবো? আমি নিজের হাতটা সরিয়ে বললাম।”

—-” শুভ্র ভাই এইটুকু ব্যথার জন্য আমি হসপিটালে যাবো না। আপনি বরং আমাকে বাড়ি নিয়ে চলুন। ব্যথার মেডিসিন বাড়ি আছে,

শুভ্র ভাই চোখ রাঙিয়ে বললো।”

—-” তোর পারমিশন চাইনি ওকে?”

বলে গাড়ি স্টার্ট দিলো। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে হসপিটালের দিকে ঘোরালো। আমি সমানে চেঁচিয়ে যাচ্ছি উনি শুনছে না। আমিও চেঁচানো বন্ধ করছি না। উনি এবার রাম ধমক দিয়ে বললো,

—-” চুপ করবি নাকি ফেলে দেবো?”

ওনার ধমকে চুপ করে রইলাম। কি খারাপ লোক ভাবা যায়? ওনার কোন রূপটা সত্যি বুঝি না। এই কেয়ার করে হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছে। আবার ধমক দিয়ে ফেলে দিতে চাইছে। ভয় পেয়ে চুপ করে বসে রইলাম। বলা তো যায় না যদি ফেলে দেয়। হসপিটালের সামনে এসে গাড়ি থামালো। আগে নিজে বের হয়ে আবার আমাকে কোলে তুলে নিলো। হসপিটালের সবাই তাকিয়ে আছে। লজ্জায় ইচ্ছে করছে মাটি ফাকা করে ঢুকে যেতে। উনি আমাকে নিয়ে একজন ডক্টরের চেম্বারে ঢুকলো। ডক্টর শুভ্রকে দেখে বললো।”

—-” আরে মিস্টার শুভ্র আপনি?”

_____________

আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছি। এই ডক্টর ওনাকে কি করে চেনে? ভ্রু কুঁচকে রেখেই বললাম,

—-” আপনি ওনাকে চেনেন?”

ডক্টর চেয়ার থেকে উঠে বললো।”

—-” ওনাকে কে না চেনে? এতগুলো শো করেছে উনি,

আমি মুখ বাঁকিয়ে চুপ করে রইলাম। ডক্টর এবার কাছে এসে বললো।”

—-” ওনার কি হয়েছে?”

শুভ্র ভাই আমাকে বসিয়ে বললো,

—-” ডক্টর ও পায়ে ব্যথা পেয়েছে। আর দেখুন ওর পা ফুলে গিয়েছে। প্লিজ দেখুন কি করে ব্যথা কমানো যায়।”

ডক্টর আমার পা দেখে বললো,

—-” ব্যথার ইনজেকশন দিলে ব্যথা কমে যাবে।”

আমি চোখ বড়, বড় করে বললাম,

—-” হোয়াট? ইনজেকশন দিলে তো ব্যথা পাবো।”

আমার সাথে শুভ্র ভাইও বললো,

—-” হোয়াট? ইনজেকশন দিলে তো ও ব্যথা পাবে।”

আমি আর ডক্টর দুজনেই শুভ্র ভাইর দিকে তাকালাম। শুভ্র ভাই সেদিকে পাত্তা না দিয়ে বললো,

—-” ডক্টর মেডিসিন দিন আপনি। পেইন কিলার মেডিসিনে তো ব্যথা কমবে।”

ডক্টর সামান্য হেসে বললো,

—-” ব্যথা কমবে তা ঠিক। কিন্তুু ওনার পা দেখে যা বুঝলাম ওনার পা টা মচকে গিয়েছে। আর তার জন্য ইনজেকশন নেয়াটা জরুরী। আদারওয়াইস পরে প্রবলেম হতে পারে।”

আমি কাঁচুমাচু করে বললাম,

—-” প্লিজ আমি ইনজেকশন নেবো না।”

শুভ্র ভাই আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরে বললো,

—-” ডোন্ট ওয়ারী রোজ কিছু হবে না। তুই ব্যথা পাবি না আমি আছি না? আমার সাথে কথা বল দেখবি একটুও ব্যথা পাবি না। আর তুই কি ভীতু নাকি হ্যা? তুই তো অনেক সাহসী তাই না? ইনফ্যাক্ট আমার থেকেও বেশী সাহসী।”

এরমাঝে মনে হলো পিপড়া কামড়ালো। আর শুভ্র ভাইও চোখ বন্ধ করে ফেললো। চোখমুখ খিচে চোখ বন্ধ করে আছে। আমি ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম,

—-” শুভ্র ভাই কি হলো?”

শুভ্র ভাই চোখ বন্ধ রেখেই বললো।”

—-” ডক্টর হয়েছে?”

ডক্টর মুচকি হেসে বললো,

—-” তা হয়েছে কিন্তুু ব্যথা মনে হচ্ছে আপনি পেয়েছেন।”

আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,

—-” কি হয়েছে?”

শুভ্র ভাই চোখ খুলে আমার ডান হাত নিয়ে বললো।”

—-” বেশী ব্যথা পেয়েছিস রোজ?”

আমি কপাল কুঁচকে বললাম,

—-” ব্যথা পাবো কেন?”

শুভ্র ভাই একটু চুপ থেকে বললো।”

—-” তোকে ইনজেকশন দেয়া হয়ে গিয়েছে,

আমি হা করে তাকিয়ে আছি। ডক্টর প্রেসক্রিপশন লেখতে, লেখতে বললো।”

—-” আপনার সাথে মিস্টার শুভ্র যখন কথা বললো তখনই ইনজেকশন দিয়েছি,

আমি এবার বুঝলাম। এর জন মনে হলো পিপড়া কামড়ালো আমাকে। শুভ্র ভাই ডক্টরের ফিস দিয়ে আমাকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে এলো। আমাকে কোলে রেখেই উনি মেডিসিন কিনেছে। আমি শুধু ওনার দিকে তাকিয়ে আছি। ডক্টর ইনজেকশন আমাকে দিয়েছে ঠিক। কিন্তুু ওনাকে দেখে মনে হয়েছে ওনাকে দিয়েছে। আর ব্যথাটাও উনি পেয়েছে সেটা ডক্টরও বললো। সব মেডিসিন কিনে উনি সাবধানে আমাকে গাড়িতে বসিয়ে দিলো। এরপর ড্রাইভ করে আমাকে বাড়ি নিয়ে এলো।”

_____________

বাড়ির সামনে এসে শুভ্র ভাই আমাকে কোলে নিতে গেলে আমি থামিয়ে দিলাম। শুভ্র ভাই ভ্রু কুঁচকে বললো,

—-” কি হয়েছে?”

আমি ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম।”

—-” বাড়ির সবাই কি ভাববে?”

উনি গা ছাড়া ভাব নিয়ে আমাকে টেনে কোলে তুলে বললো,

—-” কিছুই ভাববে না তুই চল।”

শুভ্র ভাই আমাকে নিয়ে কলিং বেল চাপলো। বুয়া এসে দরজা খুলে আমাকে এভাবে দেখে বললো,

—-” একি রোজ আপা কি হইছে আপনার?”

শুভ্র ভাই ভেতরে এসে বললো।”

—-” ওর পা মচকে গিয়েছে,

আম্মু আমাকে দেখে তাড়াতাড়ি এসে বললো।”

—-” একি শুভ্র রোজের কি হয়েছে?”

শুভ্র ভাই আমাকে সোফায় বসিয়ে বললো,

—-” মামনি ওর পা মচকে গিয়েছে।”

আম্মু আমার পাশে বসে চোখ রাঙিয়ে বললো,

—-” পা মচকালো কি করে?”

আমি আমতা, আমতা করে বললাম।”

—-” ইয়ে আম্মু পড়ে যেতে গিয়েছিলাম,

আম্মু কিছু বলতে গেলে শুভ্র ভাই বললো।”

—-” মামনি ওসব ছাড়ো এখন পানি নিয়ে এসো,

আম্মু গিয়ে পানি নিয়ে এলো। শুভ্র ভাই মেডিসিন খুলে আমার সামনে দিয়ে বললো।”

—-” এই নে মেডিসিন খা,

আমি ঢোক গিলে বললাম।”

—-” আমি মেডিসিন খাবো না,

শুভ্র ভাই আম্মুর দিকে তাকিয়ে বললো।”

—-” মামনি ক্ষিদে পেয়েছে,

আম্মু চললো তার আদরের ভাগ্নের জন্য খাবার আনতে। এদিকে গন্ডারটা শান্ত গলায় বললো।”

—-” চুপচাপ মেডিসিন খা,

আমি তবুও না বললাম। উনি এবার আমার মুখ চেপে মুখে মেডিসিন দিয়ে মুখ বন্ধ করে আছে। আমি গোল, গোল চোখ করে তাকিয়ে আছি। কি খারাপ লোক ভাবা যায়? তবে আজকে একটু বেশীই কেয়ার করছে উনি আমার।”

#চলবে…

#ভালবাসার এক রাত❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ রোজ
#পর্ব- ১০

শুভ্র ভাই মেডিসিন খুলে আমার মুখ চেপে মুখে ঢুকিয়ে দিয়েছে। সেই সাথে মুখ চেপে ধরে বসে আছে। বাধ্য হয়ে মেডিসিন গিলতে হলো আমার। ভাবা যায় কত বড় খারাপ লোক? তবে আজকে একটু বেশীই কেয়ার করছে উনি আমার। এসির বাতাসে শরীর ঠান্ডা হয়ে আসছে। এখন অক্টোবর মাস শীত অলরেডি পড়তে শুরু করেছে। কিন্তুুু আমার আম্মু যে তবুও কেন এসি অন করে রেখেছে কে জানে? শুভ্র ভাই শার্টের দুটো বোতাম খুলে আমার পাশে বসলো। জানালা দিয়ে বাতাস এসে ওনার সিল্কি চুলগুলো উড়ছে। ওনাকে দেখে বোঝা যাচ্ছে ব্যাপারটাতে উনি বেশ বিরক্ত। বিরক্তি হয়ে শুভ্র ভাই আরেক পাশে বসে বললো।”

—-” উফ,

আমি ওনাকে পর্যবেক্ষণ করছি। উনি বিরক্তি নিয়ে এই উফ নামক শব্দটাও কি সুন্দর করে বলে। আরেকপাশে বসেও মেবি উনি শান্তি পাচ্ছে না। চুলগুলো বারবার কপালে এসে পড়ছে। উনি এবার এক হাত দিয়ে চুলগুলো সরিয়ে বললো।”

—-” বিরক্তিকর,

আমি এক দৃষ্টিতে ওনার দিকে তাকিয়ে আছি। ডার্ক রেড ঠোটগুলো বিরক্তি নিয়ে কামড়ে ধরছে বারবার। ওনাকে একটা কিউটের বস্তা লাগছে। আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে শুভ্র ভাই ভ্রু কুঁচকে বললো।”

—-” কি রে এভাবে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছিস কেন আমাকে? আজকে কি আমাকে একটু বেশীই হট লাগছে?”

বলে চোখ টিপ দিলো। আমি চোখ বড়, বড় করে তাকিয়ে আছি। কি খারুশ লোক রে বাবা। কটমট চোখে ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম,

—-” আপনি এত অসভ্য কেন?”

উনি কুঁচকানো ভ্রু যুগল আরো কুঁচকে বললো।”

—-” আমি অসভ্য নাকি তুই অসভ্য?”

আমি কপাল কুঁচকে বললাম,

—-” কেন? আমি কেন অসভ্য হতে যাবো?”

উনি সোফায় আরাম করে বসে বললো।”

—-” তুই অসভ্য না হলে আমার মতো কিউট, ইনোসেন্ট একটা ছেলের দিকে নজর দিতি নাকি?”

আমি চোখগুলো রসগোল্লার মতো করে বললাম,

—-” এই এসব কি বলছেন আপনি? আমি আপনার দিকে নজর কেন দিতে যাবো?”

শুভ্র ভাই দাত কেলিয়ে বললো,

—-” নজর দিলি না তো কি করলি? যেভাবে আমাকে দেখছিলি এতক্ষণ যাবত।”

আমি মিনমিন করে বললাম,

—-” আমি মোটেও আপনাকে দেখছিলাম না।”

শুভ্র ভাই হু হা করে হেসে দিলো। আমি আহম্মকের মতো তাকিয়ে আছি। এখানে আমি এত হাসির মতো কি বললাম? উনি হাসি থামিয়ে বললো,

—-” তুই তাকিয়ে ছিলি না তাই তো?”

আমি মাথা নাড়লাম। যার মানে হলো না আমি তাকিয়ে ছিলাম না। উনি এবার চোখগুলো ছোট, ছোট করে বললো।”

—-” তাহলে তুই মিনমিন করছিস কেন?”

আমি কথা কাটাতে শুকনো ঢোক গিলে বললাম,

—-” আমি রুমে যাবো।”

শুভ্র ভাই মুচকি হেসে বললো,

—-” তো যা কে বারণ করেছে?”

মেজাজ গরম হয়ে গেলো। এই পা নিয়ে আমি কি করে যাবো? রাগে নিজেই সোফা থেকে পা ফেলে হাটা ধরলাম। ওমনি ধপাস করে পড়তে গেলেই শুভ্র ভাই কোলে তুলে নিলো। আমি রাগী সুরে বললাম।”

—-” আমাকে নামান,

উনি হেসে দিলো। এবার আমি খেয়াল করলাম হাসলে ওনার গালে টোল পড়ে। এতটা সামনে থেকে ওনার হাসি কখনো দেখিনি আমি। ভার্সিটিতে এডমিশনের আগে শুভ্র ভাইর সাথে ততটা দেখা হয়নি। দেখা হয়নি বললেই চলে। উনি বেশীরভাগ টাইম বিদেশে থেকে কাটিয়েছে। দুর থেকেই ওনার হাসি দেখেছি সবসময়। আজকে প্রথম দেখলাম ওনার গালের টোল পড়াটা। এই লোকটা মেয়েদের ঘায়েল করার সব ক্ষমতা নিয়েই পৃথিবীতে ল্যান্ড করেছে। আমার ভাবনার মাঝেই উনি বললো।”

—-” এভাবে নজর দিস না রোজ। আর তোর আমার কোলে উঠতে ইচ্ছে করে সেটা বললেই পারতি। যে শুভ্র আমি তোমার কোলে উঠবো,

আমি ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই উনি বললো।”

—-” ওহহ তুই তো আমাকে ভাই আর আপনি বলিস। সো বললেই পারতি শুভ্র ভাই আমি আপনার কোলে উঠবো,

_____________

আমি রেগে আবার ছুটাছুটি শুরু করলাম। উনি শিরি দিয়ে উপরে যেতে, যেতে বললো।”

—-” নামতে পারবি না অযথা চেষ্টা করছিস,

আসলেই ঠিক নামতে পারবো না। তাই ঘাপটি মেরে চুপ হয়ে রইলাম। রুমে এসে উনি আমাকে বিছানায় বসিয়ে বললো।”

—-” থাক রে ডাবল ব্যাটারি আমি যাই,

আমি রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম।”

—-” আপনি আবার আমাকে ডাবল ব্যাটারি বলছেন?”

উনি আমার সামনে এসে আমার দিকে ঝুকে বললো,

—-” হ্যা বলছি তো?”

আমি খাটের সাথে মিশে চেঁচিয়ে বললাম।”

—-” আরে, আরে কি করছেন?”

উনি আমার মুখ চেপে ধরে বললো,

—-” চুপ কর আমাকে বিয়ে করার এত শখ তোর?”

আমি ওনার হাত সরিয়ে বললাম।”

—-” মানে?”

শুভ্র ভাই একটা সেই ভাব নিয়ে বললো,

—-” এই যে তুই চেঁচাবি আমি এখন তোর রুমে আছি। তোর চেঁচানো শুনে সবাই এখানে চলে আসবে। দ্যান সবাই ভাববে আমি তোর সাথে কিছু করেছি। তারপর তোর সাথে ধরে আমাকে বিয়ে দিয়ে দেবে।”

আমি হা করে তাকিয়ে আছি। এই লোকটার মাথায় এসব উদ্ভট ভাবনা কি করে আসতে পারে? উনি আলসেমি ঝেড়ে বললো,

—-” আচ্ছা যাই কাল তোকে দেখতে আসবো।”

বলে উনি হাটা দিলেই আমি বলে উঠলাম,

—-” আপনি যে বললেন আপনার ক্ষিদে পেয়েছে।”

উনি দাত সবগুলো বের করে বললো,

—-” তোকে মেডিসিন খাওয়াবো বলে মামনিকে এটা বলে সরিয়েছি।”

বলে মুখ দিয়ে সিটি বাজাতে, বাজাতে চলে গেলো। আমি এখনো ঘোরের মধ্যে আছি। ওনার মাথায় এসব চিন্তাধারা কোথা থেকে আসে সেটাই ভাবছি। অতঃপর কোনকিছু খুজে না পেয়ে চুপচাপ বসে রইলাম। কিন্তুু এভাবে এক জায়গায় বসে থাকা যায় নাকি? হাতরে রিমোটটা এনে টিভি অন করলাম। এরপর একটা বালিশে হেলান দিয়ে বসলাম। টিভি দেখতে, দেখতেই ওভাবেই ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম ভাঙলো ভাইয়ার ডাকে। দেয়াল ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখি দুপুর তিনটে বাজে। আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসতেই ভাইয়া বললো,

—-” ব্লাক রোজ পা মচকালো কি করে?”

ঘুমঘুম কন্ঠে সত্যিটা বলে ফেললাম।”

—-” শুভ্র ভাইকে নিয়ে ভাবতে, ভাবতে পিছলে,

এতটুকু বলে মুখে হাত দিলাম। ভাইয়া সন্দেহর চোখে তাকিয়ে আছে। আমি আমতা, আমতা করে বললাম।”

—-” শুভ্র ভাইকে বকতে গিয়ে পড়ে যেতে গিয়েছিলাম,

ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে বললো।”

—-” শুভ্রকে বকছিলি কেন?”

আমি কপালে বিরক্তির ভাজ ফেলে বললাম,

—-” উনি আমাকে ডাবল ব্যাটারি বলে তাই।”

আমার কথা শুনে ভাইয়া রুম কাঁপিয়ে হাসতে শুরু করলো। রাগী লুক নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছি আমি। ইচ্ছে করছে ওর মাথাটা দেয়ালে ঠুৃকে দিতে। ভাইয়াকে কিছু বলতে গেলেই বাবাই ডেকে বললো,

—-” রোদ রোজকে নিয়ে নিচে আয়।”

কথাটা শুনতেই আমি বাচ্চাদের মতো হাত ছড়িয়ে দিলাম। ভাইয়া আমার গাল টেনে কোলে তুলে নিলো। নিচে এসে আমাকে চেয়ার টেনে বসিয়ে ভাইয়া বসলো। বাবাই খেতে, খেতে বললো,

—-” রোজ এরকম কি করে হয় হ্যা? একটু দেখে চলবে তো মামনি।”

আমি মাথা নিচু করে বললাম,

—-” সরি বাবাই।”

লাঞ্চ শেষ করে ভাইয়া আবার আমাকে রুমে দিয়ে গেলো। একটা বই নিয়ে পড়তে লাগলাম। এভাবে এই দিনটা কেটে গেলো,

_____________

সকালে ফ্রেশ হয়ে বসে আছি। এরমাঝে রুমে হুড়মুর করে শুভ্র ভাই ঢুকলো। ওনার সাথে ওনার গ্যাংও আছে। মানে নিরব ভাইয়া আর সামির ভাইয়া। বাকী গুলোকে মনে হয় আনেনি। তাহলে এদের কেন এনেছে? কপাল কুঁচকে বললাম।”

—-” একি আপনারা?”

শুভ্র ভাই বিছানায় বসে বললো,

—-” কি রে লেংরি কেমন আছিস?”

আমি ঠিকমতো বসে বললাম।”

—-” শুনুন আমি মোটেও লেংরি না,

নিরব ভাইয়া আমার সুরে সুর মিলিয়ে বললো।”

—-” আসলেই শুভ্র তুই গোলাপকে লেংরি বলছিস কেন? ওর পা মচকে গিয়েছে ঠিক হয়ে যাবে। এনিওয়ে গোলাপ কেমন আছো তুমি?”

আমি মুচকি হেসে বললাম,

—-” আলহামদুলিল্লাহ ভাল ভাইয়া, আপনি?”

নিরব ভাইয়া হেসে বললো।”

—-” আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভাল আছি,

সামির ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম।”

—-” আরে ভাইয়া বসুন না,

সামির ভাইয়া মুচকি হেসে বসলো। শুভ্র ভাই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। কেন গেলো বুঝতে পারলাম না। আমি ওনাদের সাথে কথা বলছি। এরমাঝে শুভ্র ভাই পানি নিয়ে রুমে এলো। বুঝলাম আমাকে মেডিসিন গেলাতে পানি এনেছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ৮টা বাজে। বেশ অবাক হলাম যে ছেলে ৯টার আগে নাকি ঘুম থেকে ওঠে না। আর সে কি না ৮টার সময় আমাদের বাড়ি হাজির হয়েছে। মেডিসিন খুলে আমার হাতে দিয়ে বললো।”

—-” এই নে মেডিসিন খা। আর একদম না, না করবি না। ডক্টর তোকে ৮টায় মেডিসিন খেতে বলেছে। মামনি বললে বা তুই একা খেতি না। তাই আমাকেই আসতে হলো তোকে মেডিসিন খাওয়াতে,

আমি চুপচাপ মেডিসিন খেয়ে নিলাম। অবাকের উপর অবাক হচ্ছি ওনার বিহেভিয়ারে। আমার জন্য এত সকালে চলে এলো উনি? এদিকে নিরব ভাইয়া আর সামির ভাইয়া মিটিমিটি হাসছে। ওনাদের হাসতে দেখে আমি বললাম।”

—-” আপনারা হাসছেন কেন?”

ওমনি ওনারা চুপ হয়ে গেলো। শুভ্র ভাই আমতা, আমতা করে বললো,

—-” আমার কাজ শেষ এবার আমরা যাই।”

বলে আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেলো। এদিকে আমি ক্যাবলা কান্ত হয়ে বসে আছি। এভাবে আরো কিছুদিন কেটে গেলো। এখন আমার পা আল্লাহর রহমাতে ঠিক হয়েছে। এই কদিন প্রতিদিন শুভ্র ভাই এসেছে। টাইম টু টাইম আমাকে মেডিসিন খাইয়েছে। শুধু রাতে আসতে পারেনি তবে ওনার কড়া আদেশে রাতে নিজেই খেয়েছি। সত্যি বলতে ওনাকে নিয়ে মনের মাঝে এক অন্যরকম অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছে। জানিনা এই অনুভূতির নাম কি? শুধু জানি ওনাকে নিয়ে ভাবতেই আজকাল বেশী ভাল লাগে। কেন জানি মনে হয় উনি সারাক্ষণ আমার পাশে থাকতো। আরো কিছুদিন কেটে গিয়েছে। ওনাকে নিয়ে ভাবনাগুলোও তীব্র হয়েছে,

ভার্সিটির ক্যাম্পাসে বসে আছি। এরমাঝে দেখলাম চৈতি আর শুভ্র ভাই হাসতে, হাসতে ক্যাম্পাসের দিকে আসছে। আজকাল প্রায়ই ওনার সাথে চৈতিকে দেখা যায়। বুঝিনা চৈতির সাথে এতো কি কথা ওনার? চৈতি আর উনি আমার কাছে এসে চৈতি বললো।”

—-” রোজ শুভ্র ভাই যে এত মজার মানুষ তুই বুঝবি না,

আমি হালকা হেসে বললাম।”

—-” আসলেই হয়তো বুঝবো না,

শুভ্র ভাই নিজের জ্যাকেট টানতে, টানতে বললো।”

—-” ওকে চৈতি তোমরা থাকো আমি যাই,

চৈতি মুচকি হেসে বললো।”

—-” ওকে সাবধানে থাকবেন,

চৈতির মুখে ওনাকে সাবধানে থাকবেন শুনে ভাল লাগলো না। ও কেন ওনার কেয়ার করবে? আমি উঠে একাই ক্লাসে চলে এলাম।”

২দিন পর, আমি শুভ্র ভাইকে খুজছি। ওনার কাছে জানতে চাইবো আজ আমি। আসলে আমাকে নিয়ে উনি কি ভাবে? যেই অনুভূতিগুলো আমার মনে সৃষ্টি হয়েছে ওনাকে নিয়ে। সেই একই অনুভূতি কি ওনার মনেও সৃষ্টি হয়েছে আমাকে নিয়ে? ওনাকে না পেয়ে নিরব ভাইয়াকে জিগ্যেস করলাম উনি কোথায়? নিরব ভাইয়া বললো ছাদে যেতে দেখেছে। দেরী না করে ছাদে চলে এলাম। কিন্তুু ছাদের দরজার কাছে এসে আমার পা অটোমেটিক দাড়িয়ে গেলো। স্তব্ধ হয়ে একই জায়গায় দাড়িয়ে আছি। তাহলে উনি চৈতিকে ভালবাসে? অবশ্য ভালবাসবে নাই বা কেন? ওনার পাশে চৈতিকেই মানায় আমাকে না। আর সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস হলো না। দৌড়ে ছাদ থেকে নেমে চলে এলাম। রাস্তা দিয়ে আনমনে হেটে চলেছি আমি। চোখের সামনে ওনার আর চৈতির দৃশ্যগুলো ভাসছে। উনি চৈতির সামনে হাটু গেড়ে বসে গোলাপ ফুলের তোরা দিয়ে আই লাভ ইউ বলছে। চৈতিও খুশি হয়ে ওনার হাত থেকে ফুলগুলো নিচ্ছে। চোখের পানি মুছে বাড়ি চলে এলাম। আর ওনাকে নিয়ে ভাববো না আমি। উনি যে আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের ভালবাসা। আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের বয়ফ্রেন্ড। আর আমি কিছুতেই আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের ভালবাসা কেড়ে নিতে পারবো না। আমার মনের মাঝে ওনাকে নিয়ে যেই অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছিলো। তা মনের মাঝেই লুকিয়ে রাখবো। কাউকে কোনদিন জানতে দেবো না,

#চলবে…

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......

Related Articles

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

Stay Connected

20,625ভক্তমত
3,633অনুগামিবৃন্দঅনুসরণ করা
0গ্রাহকদেরসাবস্ক্রাইব
- Advertisement -spot_img

Latest Articles