#ভালবাসার এক রাত❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ রোজ
#পর্ব- ৭
রাগে, দুঃখে আর ঝালে হাত, পা ছড়িয়ে বসে ভ্যা, ভ্যা করে কেঁদে দিলাম। কাঁদতে, কাঁদতে হাত, পা এদিক, ওদিক ঠাস, ঠুস করে ছুড়ছি। সবাই হাসা বন্ধ করে হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। শুভ্র ভাইও হাসা বন্ধ করে চোখগুলো রসগোল্লার মতো করে তাকিয়ে আছে। এত বড় মেয়ে এভাবে ক্যান্টিনে বসে এভাবে কান্না করলে তো সবাই হা করে থাকবেই। কিন্তুু এখন আমি সে সব না ভেবে কেঁদেই যাচ্ছি। কাঁদছি তো কাঁদছি আর থামার নামই নিচ্ছি না। শুভ্র ভাই ওনার পাশের ছেলেটাকে বললো।”
—-” নিরব সসটা খেয়ে দেখ তো,
বুঝলাম ওই চ্যালার নাম নিরব। নিরব বলে ছেলেটা কপাল কুঁচকে বললো।”
—-” আমি কেন সস খেতে যাবো?”
শুভ্র ভাই এবার আরেকজনকে বললো,
—-” সামির তুই খেয়ে দেখ,
সামির বলে ছেলেটাও বললো।”
—-” ভাই তুই নিজে খেয়ে দেখ,
শুভ্র ভাই রাগ দেখিয়ে নিজেই একটু সস খেলো। আর খেয়েই চোখ বড় করে বললো।”
—-” হোয়াট দ্যা? এটা এত ঝাল কেন?”
আমি বসা থেকে উঠে ওনার সামনে এসে বললাম,
—-” আপনি আগে জানতেন না বুঝি? এত ঝাল আমাকে কেন খাইয়েছেন? ইচ্ছে করে খাইয়ে এখন নাটক করছেন?”
বলে আবার কেঁদে দিলাম। শুভ্র ভাই আমতা, আমতা করে বললো।”
—-” ইয়ে রোজ আমি সত্যিই জানতাম না এটা এত ঝাল। বুঝতে পারছি না এত ঝাল হওয়ার কারণ,
আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম।”
—-” সত্যি জানতেন না?”
শুভ্র ভাই চোখ ডলতে, ডলতে বললো,
—-” না রে সত্যিই জানতাম না।”
কি আর বলবো? উনি নিজেও জানতো না তাই কিছু বললাম না। আর বললেও উনি আবার কিছু না কিছু করবে। তবুও সন্দেহর চোখে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে। সেটা দেখে শুভ্র ভাই কপাল কুঁচকে বললো,
—-” আরে এখনো এভাবে তাকিয়ে থাকবি? আমি বললাম তো আমি জানতাম না। আচ্ছা ঠিক আছে তোকে আমি ঝাল সস খাইয়ে দিয়েছি তো? এখন না হয় এটা আমি খাবো হয়ে গেল আমার শাস্তি।”
________________
আমি কিছু বলার আগেই উনি বোতল থেকে কতখানি সস খেয়ে নিলো। সাথে, সাথে ওনার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে শুরু করেছে। কারণ আমি আর ঝাল কতটা খেতে পারিনা? তার থেকে বেশী শুভ্র ভাই ঝাল একদমই খেতে পারেনা। ওনার চোখমুখ পুরো রক্তের মতো লাল হয়ে যায়। এবারেও হয়েছে তাই চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। আর চোখমুখ লাল হয়ে অলরেডি ফুলে গিয়েছে। ওনাকে একটা কিউট বাচ্চার মতো লাগছে। নাগের ডগাটাও লাল হয়ে গিয়েছে। বারবার হা করছে যার কারণে বাঁকা দাতটা দেখা যাচ্ছে। উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
—-” এবার হয়েছে বিশ্বাস?”
আমি তো ওখন ওনাকে দেখতে ব্যস্ত। তাই ওনার কোন কথাই আমার কানে যাচ্ছে না। ডার্ক রেড ঠোটগুলো আরো রেড হয়ে গিয়েছে। একটু খেয়াল আসতেই শুনলাম নিরব ভাইয়া বলছে।”
—-” শুভ্র এই পানিটা খেয়ে নে,
শুভ্র পানি সরিয়ে দিলো। তখন সামির ভাইয়া বললো।”
—-” আরে এমন করছিস কেন? পানি খাচ্ছিস না কেন তুই?”
শুভ্র ভাই ঝালে হাফিয়ে বললো,
—-” রোজ ও তো পানি খায়নি। আগে ও পানি খেয়ে নিক দ্যান আমি খাবো।”
আমি ওনার দিকে তাকিয়ে পানি খেলাম। আমি পানি খাওয়ার পর উনি পানি খেয়ে বললো,
—-” সরি রোজ আমি জানতাম না।”
আমি মুখ বাঁকিয়ে ক্যান্টিন থেকে চলে এলাম। বাট বুঝতে পেরেছি যে সত্যিই উনি জানতো না। বিকজ নরমালি সসে এত ঝাল হয় না। তাই কারো পক্ষে জানাও সম্ভব না। কিন্তুু এই সসটাতে অতিরিক্ত ঝাল ছিলো। ক্লাসে এসে বসেছি তখনি চৈতি বললো,
—-” শুভ্র ভাইয়া কি তোকে ভালবাসে?”
আমি চোখ বড়, বড় করে তাকালাম ওর দিকে। এই পাগল মেয়েটা বলে কি? আমি চোখ বড়, বড় করে বললাম।”
—-” এসব কি বলিস তুই?”
চৈতি ভাবুক ভাবে বললো,
—-” শুভ্র ভাইয়াকে দেখে মনে হলো।”
আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম,
—-” তুই কি ভালবাসা নিয়ে পিএইচডি করেছিস?”
চৈতি ভেংচি কেটে বললো।”
—-” তোর ওনাকে দেখে মনে হয়েছে আমার। তুই ঝালে কাঁদছিলি যখন তখন শুভ্র ভাইয়ার চোখে স্পষ্ট কষ্ট ফুটে উঠেছিলো। মনে হচ্ছিলো কষ্ট তুই না শুভ্র ভাইয়া পাচ্ছে। আবার তোকে ঝাল খাইয়েছে বলে নিজে ঝাল খেয়ে নিলো। শুভ্র ভাইয়া যে ঝাল সহ্য করতে পারেনা সেটা সে ঝাল খাওয়ার পরই বোঝা গিয়েছে। আবার তুই পানি না খাওয়ার আগে তোর উনি পানি খেলো না। এবার বল এগুলো কি হ্যা?”
আমি চৈতির কথাগুলো নিয়ে ভাবছি। সত্যি কি শুভ্র ভাই আমাকে ভালবাসে? চৈতির বলা কথাগুলোও তো ঠিক। যদিও জানিনা উনি কষ্ট পেয়েছে কি না? কিন্তুু ওর বলা পরের কথাগুলো তো ঠিক। তাহলে কি উনি আমাকে? আবার নিজেই ভাবলাম এসব কি ভাবছি আমি? উনি কেন আমাকে ভালবাসতে যাবে? কোথায় উনি আর কোথায় আমি। উনি দেখতে কত সুন্দর। পুরো ভার্সিটির মেয়েরা শুভ্র বলতে বেহুশ। আর আমি তো আহামরি সুন্দরী ও না। আমার থেকে চৈতি দেখতে আরো বেশী সুন্দরী। চৈতিকে ভালবাসলে না হয় বিশ্বাস করতাম। কিন্তুু উনি আমাকে ভালবাসবে এটা আমার হজম হলো না ঠিক। তাই মুখে বিরক্তি ফুটিয়ে বললাম,
—-” শোন চৈতি তোর এসব ভুল ধারনা। শুভ্র ভাই আমাকে কেন ভালবাসতে যাবে হ্যা? পাগল হলি নাকি তুই? উনি আমাকে কাজিনই ভাবে আর কিছু না।”
চৈতি কিছু বলতে গিয়েও স্যারকে দেখে থেমে গেলো। ক্লাস শেষ করে আমরা বেরিয়ে এলাম। বেরিয়ে আসতেই দেখলাম শুভ্র ভাই বসে আছে। আর ওনার পাশে ভার্সিটির সুন্দরী মেয়ে রাহি বসে আছে। রাহি আপু দেখতে একদম পরীর মতো। তেমন স্মার্ট, স্টাইলিশ। শুভ্র ভাই আর রাহি আপু কি নিয়ে যেন কথা বলছে আর হাসাহাসি করছে। আমি ধাপধুপ পা ফেলে ওনাদের সামনে দিয়ে আসতে গেলেই রাহি আপু ডাক দিলো। আমি দাড়িয়ে ওনাদের দিকে তাকাতেই রাহি আপু বললো,
—-” হেই রোজ কেমন আছো?”
_________________
আমি মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে বললাম।”
—-” আলহামদুলিল্লাহ ভাল আছি আপু। আপনি কেমন আছেন?”
রাহি আপু মুচকি হেসে বললো,
—-” আমিও খুব ভাল আছি। সত্যি বলতে তোমার ভাই কাছে থাকলে ভাল হয়ে যাই।”
আমি কপাল কুঁচকে ফেললাম। আর শুভ্র ভাইও ভ্রু কুঁচকে বললো,
—-” ওর ভাই কোথা থেকে এলো?”
রাহি আপু ভ্রু নাচিয়ে বললো।”
—-” কেন তুমি ওর ভাই না? রোজ তোমার বোন হলে তো তুমি ওর ভাই তাই না?”
কেন জানিনা শুভ্র ভাই মুখ কালো করে ফেললো। এরপর হালকা হেসে বললো,
—-” ও আমার কাজিন।”
আমি আর না দাড়িয়ে থেকে চলে এলাম। রাস্তা দিয়ে আনমনে হেটে চলেছি। মনটা হঠাৎ করেই বিষণ্ণতায় ঘিরে গিয়েছে। কিছুদুর হেটে আসতেই মনে হলো কেউ আমাকে ফলো করছে। তাই চট করে দাড়িয়ে পিছনে তাকালাম। তাকিয়ে দেখলাম কেউই নেই। মনের ভুল ভেবে আবার হাটা ধরলাম। এবারেও তাই মনে হলো কেউ আমাকে ফলো করছে। কিন্তুু এবারেও পিছনে তাকিয়ে কাউকে পেলাম না। রাস্তায় এখন তেমন মানুষও নেই। আর চৈতিও ওর আম্মু ফোন করায় শপিং মলে চলে গিয়েছে। কেমন একটা ভয়, ভয় লাগছে। তাই বড়, বড় পা ফেলে হাটা ধরলাম। আরেকটু পথ আসতেই একটা রিক্সা পেলাম। পরে হাটা বাদ দিয়ে রিক্সা নিয়ে বাড়ি চলে এলাম। বাড়ি এসে আজকে আর কারো সাথে কথা বলিনি। সোজা নিজের রুমে চলে এসেছি। ব্যাগটা বিছানায় রেখে হুমায়ূন স্যারের লেখা শুভ্র উপন্যাসটা নিয়ে বসে পড়লাম। হুমায়ূন স্যারের এতগুলো উপন্যাস পড়েছি এতদিন। কখনোই শুভ্র উপন্যাসটা পড়ার ইচ্ছে জাগেনি। কিন্তুু আজকেই কেন জানি এই উপন্যাসটা পড়ার প্রবল ইচ্ছে জেগে উঠেছে মনে। তাই পড়তে শুরু করলাম। উপন্যাসের শুভ্রর সেই মোটা ফ্রেমের চশমা পড়ার কথা পড়ে ভাবছি। আচ্ছা শুভ্র ভাই যদি মোটা ফ্রেমের চশমা পড়ে তাহলে ওনাকে কেমন লাগবে? নিশ্চয় অনেক কিউট লাগবে। কারণ উনি মানুষটাই তো আস্ত কিউটের বস্তা। এসব ভেবে আনমনে হেসে দিলাম। আবার নিজের ভাবনায় নিজেই চমকে গেলাম। এসব কি ভাবছি আজকে আমি? এ কোন নেশা চেপে ধরেছে আজকে আমাকে? শুভ্র নামক নেশা যেন মাথায় খুব ভাল করেই চড়ে গিয়েছে আজ। অগত্যা উপন্যাসটা রেখে দিতে হলো আমাকে। কারণ উপন্যাসটাই তো শুভ্র নামক কাউকে নিয়ে। পুরো উপন্যাসটা পড়লে না জানি আর কি কি ভেবে বসবো আমি,
রাত ৯টা বিছানায় এপাশ, ওপাশ করছি। অন্যদিন এমন হয় যে রাত ৮টায় ঘুম চলে আসে। আর আজকে কিছুতেই ঘুমাতে পারছি না। আমি কি চাইছি আর আমার মন কি চাইছে? কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। এদিকে অনেকক্ষণ ধরে জানালায় কেউ কিছু ছুড়ে মারছে। এর জন্য আরো বেশী ঘুমাতে পারছি না। সেই দুপুর থেকেই মাথাটা গরম আছে খুব। না পেড়ে ওড়নাটা গায়ে জড়িয়ে কাউকে না বলে বেরিয়ে এলাম। বাইরে এসে এদিক, ওদিক তাকিয়ে বললাম।”
—-” এই কোন বেয়াদব রে?”
হঠাৎ অন্ধকারে কেউ আমার কোমর টেনে গাছের পাশে নিয়ে এলো। ভয়ে আমার কলিজা কাঁপছে। অন্ধকারে বুঝতেও পারছি না লোকটা কে? লোকটা আমার মুখ চেপে ধরে আছে। মুখ ছাড়তেই আমি চেঁচাতে গেলাম। কিন্তুু তার আগেই লোকটা যা করলো আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না তার জন্য। লোকটা আমার ঠোটে নিজের ঠোট ছুঁইয়ে দিলো। আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। কোনদিনও ভাবিনি কেউ আমার সাথে এমন কিছু করবে। অন্ধকারে এসে অন্ধকারেই লোকটা গায়েব হয়ে গেলো। এদিকে আমি স্তব্ধ হয়ে একই জায়গায় দাড়িয়ে আছি। কিছুক্ষণ আগে কি হয়ে গেলো ভাবতেই দৌড়ে রুমে এসে ওয়াসরুমে চলে এলাম। ওয়াসরুমে এসে ইচ্ছেমতো মুখে পানি দিচ্ছি আর ঠোট ঘষছি। কাঁদতে, কাঁদতে আমার চোখমুখ ফুলে গিয়েছে। রাতে আর ডিনার করিনি ডিনার না করেই ঘুমিয়ে পড়েছি,
সকালে ভার্সিটিতে আসতেই শুভ্র ভাই আমাকে দেখে ভ্রু কুঁচকে বললো।”
—-” কি রে ডাবল ব্যাটারি তোর চোখমুখের এই অবস্থা কেন?”
আমি কিছু না বলে চলে এলাম। রাতে কি হয়েছে এটা ওনাকে কি করে বলবো?”
#চলবে…
#ভালবাসার এক রাত❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ রোজ
#পর্ব- ৮
সকালে ভার্সিটিতে চলে এলাম আমি। ভার্সিটিতে ঢুকতেই শুভ্র ভাই আর ওনার গ্যাংদের চোখে পড়লো। ওনাদের পাশ কাটিয়ে আসতে গেলেই শুভ্র বললো।”
—-” কি রে ডাবল ব্যাটারি। তোর চোখমুখের এই অবস্থা কেন?”
আমি ওনার কথার উত্তর না দিয়ে চলে এলাম। ওনাকে এখন কি করে বলবো? রাতে কোন স্টুপিড আমার সাথে অসভ্যতামি করেছে ছিঃ। এটা আমি কাউকেই বলতে পারবো না। কিন্তুু আমার মাথায় আসছে না এটা কে করতে পারে? আর আমার সাথেই বা কেন এমন করলো? উফ কিছুই মাথায় ঢুকছে না। হাটতে, হাটতে ভবনের সামনে চলে এসেছি। এরমাঝে ঝড়ের গতিতে শুভ্র ভাই এসে সামনে দাড়ালো। উনি যে এভাবে সামনে আসবে ভাবিনি তাই ভয় পেয়ে পিছিয়ে গেলাম। উনি আমাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখছে। এভাবে তাকানোতে কেমন অসস্তি লাগছে আমার। আমি আসতে গেলেই উনি ভ্রু কুঁচকে বললো,
—-” এ ডাবল ব্যাটারি দাড়া।”
এই লোকটা আমাকে ডাবল ব্যাটারি কেন বলে? রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছে রীতিমত। আমার সুন্দর একটা নাম আছে আর সেটা হচ্ছে রোজ। যদি নাম ধরে ডাকতে না পারিস তো ডাকিস না। কিন্তুু এভাবে সবার সামনে ডাবল ব্যাটারি বলার কোন মানে হয়? আজব লোক আমার কি সম্মান নেই নাকি? রাতের ঘটনা আর এখন ওনার ডাবল ব্যাটারি বলে ডাকা। সবমিলিয়ে মুহূর্তেই মাথায় ধপ করে আগুন ধরে গেলো। চট করে ওনার দিকে ঘুরে তাকাতেই উনি আবার বললো,
—-” ডাবল ব্যাটারি তোর ব্যাটারির পানি শেষ নাকি? না এভাবে স্ট্যাচু হয়ে দাড়িয়ে আছিস তাই বলছি।”
আমি হনহন করে ওনার সামনে এসে ওনার কলার চেপে ধরলাম। হুট করে যে আমি এমন কিছু করবো হয়তো শুভ্র ভাই ভাবেনি। আশপাশের সবাই হা করে তাকিয়ে আছে। আর শুভ্র ভাইও মার্বেলের মতো চোখ করে তাকিয়ে আছে। আমি দু হাতে ওনার শার্টের কলার আরো শক্ত করে চেপে ধরে বললাম,
—-” আপনার সাহস কি করে হয় আমাকে ডাবল ব্যাটারি বলার? কিছু বলি না বলে মাথায় চড়ে বসেছেন তাই না? শুনুন মিস্টার শুভ্র চৌধুরী নেক্সট টাইম আমাকে।”
তারআগেই শুভ্র ভাই শান্ত গলায় বললো,
—-” কলার ছাড় রোজ।”
আমি তবুও কলার চেপে ধরে রেখেই বললাম,
—-” আপনি আমাকে আর ডাবল ব্যাটারি বললে।”
এরমাঝে শুভ্র ভাই কলার ছাড়িয়ে ঠাটিয়ে আমাকে চর মেরে দিলো। আমি গালে হাত দিয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে আছি। ওনার চোখগুলো রক্তের মতো লাল বর্ন
ধারণ করে আছে। রাগে থরথর কাঁপছে শুভ্র ভাই। আমি শুকনো ঢোক গিলে মাথা নিচু করে আছি। শুভ্র ভাই আমার দু বাহু ঝাঁকিয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠলো,
—-” এত বড় সাহস তোকে কে দিয়েছে? আমার কাজিন বলে তুই যা ইচ্ছে করবি ভেবেছিস? সাহস কি করে হয় ভার্সিটির ভিপির শার্টের কলার ধরার। আগেরদিন আমাকে চর মেরেছিস আমি তেমন কিছুই বলিনি। তোর জায়গায় অন্য কোন মেয়ে হলে ভার্সিটি ছাড়া করতাম। আর কোন ছেলে হলে জ্যান্ত পুতে দিতাম। তোকে আমি সাবধান করছি রোজ। আমার সাথে বেয়াদবি করার চেষ্টা করবি না।”
আমি ভয়ে, ভয়ে বললাম,
—-” তাহলে আপনি আমাকে ডাবল ব্যাটারি বলেন কেন?”
_____________
শুভ্র ভাই ফোস, ফোস করে বললো।”
—-” আজকের পর তোর সামনে আসবো না হ্যাপি?”
বলে হনহন করে চলে গেলো। আমি ফুঁপিয়ে কেঁদে দিলাম। এতগুলো মানুষের সামনে চর না মারলে কি হতো? আর কি জোড়ে চরটা মারলো। মনে হচ্ছে কোন লোহা দিয়ে আঘাত করেছে। আমাকে কাঁদতে দেখে নিরব ভাইয়া এগিয়ে এসে বললো,
—-” গোলাপ ডোন্ট ক্রাই। আসলে শুভ্র একটু রেগে আছে তো তাই। ওর রাগ ভাঙলে সব ঠিক হয়ে যাবে।”
আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,
—-” কি ঠিক হবে?”
নিরব ভাইয়া আমতা, আমতা করে বললো।”
—-” না কিছু না,
আমি চোখ মুছে বললাম।”
—-” গোলাপ কে?”
নিরব ভাইয়া মুচকি হেসে বললো,
—-” তুমি অফকোর্স। তোমার নাম তো রোজ আর রোজ মানেই গোলাপ।”
আমি নিরব ভাইয়ার কথার পরিবর্তে মুচকি হাসলাম। এরপর নিজের ক্লাসে চলে এলাম। চুপচাপ ক্লাসে বসে আছি। আজকে চৈতিও আসেনি অসহ্য লাগছে। শুভ্র ভাইর গুষ্টি উদ্ধার করছি মনে, মনে। ব্যাটা খাটাশ, গন্ডার কোথাকার। সবসময় আমার পিছনে না লাগলে ওই শয়তান রাক্ষসটার পেটের ভাত মনে হয় হজম হয় না। উফ কি চরটাই না মেরেছে মা গো মা। গাল এখনো টনটন করছে। এরমাঝে টাকলা স্যার ক্লাসে এলো। চৈতি আজকে আসেনি। আবার শুভ্র ভাই সবার সামনে চর মারলো। আর কি বললো? আমার জায়গায় কোন ছেলে থাকলে পুতে দিতো? ভাবা যায় কত বড় উজবুক লোক। তারউপর আবার এই টাকলা স্যারের ভাষণ। সবমিলিয়ে এই মুহূর্তে প্রচুর রাগ লাগছে। গালের ব্যথাটা যেন বেড়েই চলেছে। স্যারকে বলে বাইরে চলে এলাম। শুভ্র ভাইকে এখন ভয়ংকর কিছু গালি উপহার দিতে ইচ্ছে করছে। সাতপাঁচ ভাবতে, ভাবতে শিরি দিয়ে নামছি। হঠাৎ পা স্লিপ কেটে পড়ে যেতে গিয়ে ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম। তবে অনুভব করছি যে আমি নিচে পড়িনি। কেউ একজন আমার কোমর ধরে পড়া থেকে বাঁচিয়েছে। পিটপিট করে চোখ খুলতেই কারো কর্কশ গলার আওয়াজ ভেসে এলো কানে,
—-” দেখে চলতে পারিস না ডাফার? চোখ কোথায় থাকে তোর? এক্ষুণি তো পড়ে হাত, পা ভাঙতি।”
আমি ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই দেখলাম শুভ্র ভাই। না পড়লেও পায়ে ব্যথা পেয়েছি। মনে তো হচ্ছে পা মচকে গিয়েছে। শুভ্র ভাই হঠাৎ করেই আমাকে কোলে তুলে নিলো। হঠাৎ উনি এমন কিছু করবে ভাবিনি। আমাকে কোলে নিয়েই উনি হাটা শুরু করলো। আর আমি যে কিছু বলবো সেই হুশও আমার নেই। কেমন একটা শকের মধ্যে ওনার দিকে হা করে তাকিয়ে আছি। আর উনি ভাবলেশহীন ভাবে হেটেই চলেছে। এখন সবাই ক্লাসে থাকায় মাঠে বেশী কেউ নেই। তবুও যারা আছে তারা অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে আছে। এরমাঝে কোথা থেকে রাহি আপু এসে বললো,
—-” শুভ্র তুমি ওকে কোলে নিয়েছো কেন?”
শুভ্র ভাই না দাড়িয়েই বললো।”
—-” ও পায়ে ব্যথা পেয়েছে,
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। উনি কি করে জানলো আমি ব্যথা পেয়েছি? আমি তো ওনাকে একবারও বলিনি। তাছাড়া উনি আমাকে ধরার পরও যে আমি ব্যথা পেতে পারি এটা বোঝার উপায়ও নেই। আমি ওনার মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম।”
—-” আপনি কি করে বুঝলেন আমি ব্যথা পেয়েছি?”
উনিও আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
—-” তোর মুখ দেখেই বুঝেছি তুই ব্যথা পেয়েছিস।”
আমি ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছি। রাহি আপু দুর থেকে তাকিয়ে আছে। জানিনা হঠাৎ আমার কি হলো? আমি হুট করে শুভ্র ভাইর গলা দু হাতে জড়িয়ে ধরলাম। শুভ্র ভাই একবার আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। এরপর আবার সামনে তাকিয়ে হাটতে লাগলো,
#চলবে…