#ভালবাসার এক রাত❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ রোজ
#পর্ব- ৫
আমি চোখ মুছে ব্যালকনিতে এসে বসলাম। মনে পড়ে গেলো শুভ্রর মাথায় থাকা লাল কাপড়ের টুকরোর কথা। তাই ভাবতে লাগলাম এটা কেন বাঁধে উনি? তাহলে কি এটা সেই টুকরো। যেটা আমি আড়াই বছর আগে ওনার মাথায় বেঁধে দিয়েছিলাম। এমনি, এমনি অবশ্য বাঁধিনি। মারামারি করতে গিয়ে ওনার কপাল কেটে গিয়েছিলো। আর মারামারিটা হয়েছিলোও আমাকে নিয়ে। ভাবতে, ভাবতে ডুব দিলাম সেই অতীতে।”
ভার্সিটির ১০০বছর পূর্তি অনুষ্ঠান আজ। বিরাট বড় অনুষ্ঠান করবে বলে ঠিক করেছে। অনেক গন্য, মান্য ব্যক্তিরাও থাকবে। সবার ড্রেস কোড দিয়েছে। ছেলেদের লাল পাঞ্জাবী মেয়েদের লাল শাড়ী। যদিও এই লাল কালার শুভ্রই দিতে বলেছে। শুভ্র ভার্সিটির টপ স্টুডেন্ট আর ভিপি হওয়ায় সবাই ওনার কথা শোনে। যাইহোক অনুষ্ঠানের আগেরদিন রাতে শুভ্র আমাকে ফোন দিলো। মাত্র ওয়াসরুম থেকে বের হয়েছি এরমাঝে দেখি ওনার ফোন। দৌড়ে এসে ফোনটা রিসিভ করলাম। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে শুভ্র রাম ধমক দিয়ে বললো,
—-” এত লেট হলো কেন ফোন রিসিভ করতে?”
আমি আমতা, আমতা করে বললাম।”
—-” ইয়ে মানে আমি ওয়াসরুমে ছিলাম,
শুভ্র একটু চুপ থেকে বললো।”
—-” আচ্ছা এখন নিচে এসো,
আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম।”
—-” নিচে আসবো মানে? এতরাতে আমি নিচে এসে কি করবো?”
শুভ্র হালকা ভয়েসে বললো,
—-” আমি নিচে ওয়েট করছি। সো ২মিনিটে নিচে এসো। নাহলে আমি উপরে চলে আসবো।”
বলে ফোন কেটে দিলো। এদিকে আমি পড়লাম মহা মুশকিলে। অবশ্য শুভ্র উপরে এলে প্রবলেম নেই। কিন্তুু উনি যে লোক না জানি আম্মুর সামনে কি বলে বসে। আমি ওড়নাটা গায়ে জড়িয়ে চলে এলাম। নিচে এসে দেখলাম ওনার হাতে শপিং ব্যাগ। ওনার সামনে এসে বললাম,
—-” আসতে বললেন কেন?”
শুভ্র ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তাকিয়ে থাকারই কথা আমার পড়নে একটা টি শার্ট আর থ্রি কোয়াটার প্যান্ট। যদিও ওড়না আছে সাথে। এই গরমের ভেতর রুমে এগুলো পড়েই ঘুমাই রাতে। শুভ্র নিজের দৃষ্টি সরিয়ে বললো।”
—-” এসব কি পড়ে আছো তুমি?”
আমি মিনমিন করে বললাম,
—-” আমি রাতে এগুলোই পড়ি। আপনি নিচে আসতে বললেন কেন?”
উনি শপিং ব্যাগটা আমার দিকে দিয়ে বললো।”
—-” এটা রাখো। এর মধ্যে তোমার কালকে ভার্সিটিতে যা লাগবে সব আছে,
আমি হা করে থেকে বললাম।”
—-” মানে?”
উনি চোখ রাঙিয়ে বললো,
—-” নিজে ধরে নিয়ে দেখো।”
ধমক খেয়ে শপিং ব্যাগ নিলাম। ইয়া বড় ব্যাগের মধ্যে লাল শাড়ী থেকে শুরু করে সব আছে। লাল শাড়ী তার সাথে ম্যাচিং করে লাল জুয়েলারি। উনি আমার দিকে আরেকটা ব্যাগ দিয়ে বললো,
—-” এটার মাঝে লাল গোলাপ আছে। এগুলো ব্যালকনিতে রেখে দিয়ো সতেজ থাকবে। আগামীকাল চুলে গোলাপ লাগাবে ওকে?”
আমি ওনার দিকে তাকিয়ে আছি। আমার পছন্দ, অপছন্দ সবকিছু জানে উনি। উনি মুচকি হেসে বললো।”
—-” এখন যাই রেড রোজ। আগামীকাল দেখা হবে,
উনি চলে যাচ্ছে। কেন জানিনা চেয়েও কিছু বলতে পারলাম না। শুধু এক টুকরো মুচকি হাসি উপহার দিলাম ওনাকে। এই মুহূর্তে তো ওনাকে দেয়ার মতো আর কিছুই নেই ওনাকে। এর আগেও একদিন উনি আমাকে চেইন দিয়েছিলো। যেটাতে একটা লাভ শেইপ ছিলো। সেদিন আমি মুখ কালো করে বলেছিলাম। যে এখন আপনাকে আমি কি দেবো? আমার কাছে তো আপনাকে দেয়ার মতো কিছু নেই। উনি মুচকি হেসে সেদিন বলেছিলো।”
—-” কিছু নেই কে বললো? আছে তো অনেক অমূল্য কিছু আছে,
আমি ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই উনি বললো।”
—-” তোমার মুখের এক টুকরো হাসি। যদি তোমার মনে হয় তোমার আমাকে দেয়ার মতো কিছু নেই। তাহলে একবার হেসে দিও এরচেয়ে মূল্যবান আমার কাছে আর কিছু হতে পারে না,
কথাটা আজ মনে পড়লো। তাই তো শুভ্রকে এক টুকরো হাসি উপহার দিলাম। শুভ্র আমাকে ভেতরে পাঠিয়ে নিজেও চলে গেলো। রুমে এসে আমি ব্যাগগুলো পাশে রেখে শুয়ে পড়লাম। শুভ্রকে নিয়ে ভাবতে, ভাবতেই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম।”
_______________
পরেরদিন শাড়ী নিয়ে বিছানায় বসে আছি। কারণ আমি যে শাড়ী পড়তে পারিনা। অনেক চেষ্টা করেও না পেরে আম্মুকে ডাক দিলাম। আম্মু খুন্তি হাতে নিয়েই এসে বললো,
—-” কি হয়েছে রে?”
আমি অসহায় ফেস করে বললাম।”
—-” আম্মু শাড়ীটা পড়িয়ে দাও,
আম্মু নিচে গিয়ে খুন্তি রেখে এসে সুন্দর করে শাড়ী পড়িয়ে দিলো। এরপর আমি নিজেই শুভ্রর দেয়া জিনিষ গুলো দিয়ে সাজতে লাগলাম। কানে বড় লাল এক জোড়া ঝুমকো পড়েছি। গলায় লালের মধ্যে স্টোনের নেকলেস। ঠোটে লাল লিপস্টিক, চোখে মোটা করে কাজল। চুলগুলো খোপা করে কয়েকটা গোলাপ কানের কাছে গুজে নিলাম। ব্যাস আমি রেডি সাইড ব্যাগটা নিয়ে নিচে চলে এলাম। ব্যাগের ভেতর লাল ওড়না আছে থাক। আমাকে দেখে আম্মু এগিয়ে এসে বললো।”
—-” বাহ আমার মেয়েটাকে মাশাআল্লাহ সুন্দর লাগছে,
ভাইয়া সোফায় বসে দাত কেলিয়ে বললো।”
—-” বাহ আমার বোনকে মাশাআল্লাহ পেত্নী লাগছে,
ভাইয়ার মাথায় গাট্টা মেরে চলে এলাম। আম্মুকে বলে এলাম লেট হতে পারে। ভার্সিটিতে আসতেই শুভ্র হনহন করে সামনে এলো। ওনাকে দেখে কয়েকদফা ক্রাশ খেলাম। লাল পাঞ্জাবীর সাথে কালো জিন্স প্যান্ট পড়েছে। পাঞ্জাবীর হাতা ওঠানো হাতে কালো ব্রান্ডের ঘড়ি। ডার্ক রেড ঠোটগুলো জিভ দিয়ে ভিজাচ্ছে হয়তো কিছু বলবে। সিল্কি চুলগুলো কপালে এসে পড়েছে। হা করে তাকিয়ে দেখছি ওনাকে। ছেলেরা এত সুন্দরী কি করে হতে পারে? না, না সুন্দরী না সুন্দর প্রযোজ্য হবে। কিন্তুু একটা ছেলে এত সুন্দর কি করে হতে পারে? মাঝে, মাঝে খুব হিংসে হয় ওনার সৌন্দর্য্য দেখে। আরেকটু কম সুন্দর হতে পারলো না উনি? আরেকটু কম সুন্দর হলে কি হতো? বিধাতা কি নিখুত ভাবে সৃষ্টি করেছে ওনাকে। নাক, চোখ, মুখ, ঠোট সব সুন্দর ওনার। বিধাতা খুব মন দিয়ে তৈরি করেছে ওনাকে। আমার এসব উদ্ভট ভাবনার মাঝে শুভ্র বললো।”
—-” এই তোমাকে এতবার কল দিলাম তুমি কল ধরোনি কেন?”
আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,
—-” কখন কল দিয়েছেন?”
শুভ্র দাত কিড়মিড় করে বললো।”
—-” ফোন হাতে নিয়ে দেখো। তুমি জানো? এতক্ষণ তোমাকে দেখার জন্য আমি ছটফট করছিলাম,
ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখলাম সত্যি। কিন্তুু ফোন সাইলেন্ট থাকায় শুনতে পাইনি। জিভ কামড় দিয়ে বললাম।”
—-” সরি, সরি ফোন সাইলেন্ট ছিলো,
উনি গোমড়া মুখ করে বললো।”
—-” এখন চলো,
আমি গাল ফুলিয়ে বললাম।”
—-” বললেন না আমাকে কেমন লাগছে?”
শুভ্র মুচকি হেসে আমার একদম কাছে এলো। আমি হালকা পিছিয়ে যেতেই উনি বললো,
—-” তোমার সৌন্দর্য্যর বর্ননা দেয়ার ক্ষমতা আমার নেই। কারণ তোমার রুপের বর্ননা যতই দেই না কেন ততই কম হবে। মাঝে, মাঝে ভাবি তুমি এত সুন্দর কেন? উপরওয়ালা তোমাকে নিখুত করে বানিয়েছে রেড রোজ। যার সৌন্দর্য্য আমি বলে শেষ করতে পারবো না। তুমিই সেই মেয়ে বাসে, ট্রেনে, ট্রামে রাস্তায় যাকে রোজ দেখি। একচুয়ালি তুমি এত সুন্দর যে সব জায়গায় তোমাকে কল্পনা করি। তোমাকে এত ভালবাসি তাই কল্পনা করি। তোমার শাড়ী, কপালের টিপ, কানের দুল আর পায়ের নুপুর আমি রোজ দেখি। আরো অনেককিছু দেখতে পাবার স্বপ্ন দেখি। স্বপ্নে এবং বাস্তবে যাকে ইচ্ছেমতো দেখি। যার সৌন্দর্য্য আমাকে প্রতিনিয়ত ঘায়েল করে মুগ্ধ করে তুমিই সেই মেয়ে। তাই তোমার সৌন্দর্য্যর বর্ননা দিতে শুরু করলে শেষ হবে না রেড রোজ। তবে তুমি চাইলে আমি সারাদিন তোমার রুপের বর্ননা দিতে পারবো। আমার চোখে দেখা সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে তুমি শুধুই তুমি।”
এরমাঝে নিরব ভাইয়া শুভ্রকে ডাক দিলো। প্রিন্সিপাল স্যার নাকি ওনাকে ডাকছেন। শুভ্র আমাকে ভেতরে যেতে বলে চলে গেলো। এদিকে আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। কারণ আমি জানি আমি আহামরি সুন্দরী না। কিন্তুু ওনার কথায় আজ নিজেকে সুন্দরী ভাবতে ইচ্ছে করছে। খুব করে ইচ্ছে করছে নিজেকে সবচেয়ে সুন্দরী ভাবতে। আচ্ছা সেটা ভাবলে কি খুব ক্ষতি হয়ে যাবে? কেউ কারো রুপের বর্ননা এভাবে দিতে পারে জানা ছিলো না। হাটতে, হাটতে ওনাকে নিয়ে ভাবছি। কি করে পারে এত সুন্দর করে কথা বলতে উনি? মোবাইলের স্কিনে নিজেকে দেখছি আর ভাবছি। সত্যিই কি আমি অতটা সুন্দরী? যতটা শুভ্র আমাকে বলে গেলো। আবার নিজেই ভাবলাম না আমি অতটা সুন্দরী নই। ওনার চোখে আমি এত সুন্দরী কারণ উনি আমাকে ভালবাসে তাই। আমরা যাকে ভালবাসি তার সবকিছুই আমাদের চোখে সুন্দর লাগে। এরমাঝে আমার বেস্টু চৈতি এসে বললো,
—-” ওয়াও রোজ তোকে কি সুন্দর লাগছে রে।”
_______________
আমি বিরক্তি নিয়ে ওর দিকে তাকালাম। আমার থেকে ওকে বেশী সুন্দর লাগছে। আর এই কথাটা ও নিজেও ভাল করে জানে। আমি চৈতির দিকে তাকিয়ে মুখ বাঁকিয়ে বললো,
—-” মিথ্যে কথা বলায় পিএইচডি করেছিস নাকি?”
আমার কথায় চৈতি ভ্রু কুঁচকে বললো।”
—-” মানে?”
চৈতিকে কিছু বলার আগে শুভ্র এসে বললো,
—-” আরে তোমরা এখানে দাড়িয়ে আছো কেন? তোমাদের জন্য চেয়ার রেখেছি ভিতরে চলো।”
আমি আর চৈতি ভেতরে চলে এলাম। সামনেই দুটো চেয়ারে আমি আর চৈতি বসলাম। চারদিকটা অসম্ভব সুন্দর করে সাজিয়েছে। তার উপর সবাই লাল কালার ড্রেস পড়া। এ এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। সবাই কোন না কোন প্রতিযোগিতায় নাম দিয়েছে। কেউ গান গাইছে কেউ নৃত্য করছে। এরমাঝে স্টেজে শুভ্রর নাম নিলো। আমি এক্সাইটেড হয়ে ওনার গান শোনায় মনোযোগ দিলাম। শুভ্র স্টেজে উঠে মুচকি হেসে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
—-” এটা কাউকে ডেডিকেটেড করে গাওয়া।”
🎶দুধে আলতা বদন তোমার, চন্দনে সুবাস ভরা🎶
🎶দুটি দীঘল কাজল আখি, যেন মেঘে কাজল পড়া🎶২
🎶তোমার নরম দুটি ঠোটে ফোটে লাল পদ্ম ফুল🎶
🎶যেন রেশমি সুতোয় গোজা তোমার মাথার ওই না চুল🎶
🎶দুধে আলতা বদন তোমার, চন্দনে সুবাস ভরা🎶
🎶দুটি দীঘল কাজল আখি, যেন মেঘে কাজল পড়া🎶
আমি মুগ্ধ নয়নে ওনাকে দেখছি। আর মুগ্ধ হয়ে ওনার গান শুনছি। আমি জানি আমি ওনাকে তখন বলেছিলাম আমাকে দেখতে কেমন লাগছে? তখন উনি ওভাবে সৌন্দর্য্যর বর্ননা দিয়েছিলো। আর তার জন্যই এখন এই গান গাইছে। কি করে পারে উনি?”
🎶তুমি ফেলবে যেথায় চরণ সেই মাটি হবে ধন্য🎶
🎶ধুলো হয়ে আসবে উড়ে, তোমার চরণ ছোঁয়ার জন্য🎶
🎶তোমার হাসি দেখে ফুলের খুব ইর্ষা হবে মন🎶
🎶লজ্জাতে পড়বে ঝড়ে যেও নাকো ফুলো বন🎶
🎶তুমি নারী নাকি পরী বিধি নিজেই করবে ভুল🎶
🎶আমি তো হায় একটি মানুষ খুজে পাইনা কোন কুল🎶
উনি আমার দিকে তাকিয়েই গান গাইছে। কেমন যেন খুব লজ্জা লাগছে আমার। স্টেজের সামনে থেকে উঠে পিছনে চলে এলাম। এখানে দাড়িয়েই ওনার গান শুনবো ভাবলাম। কিন্তুু স্টেজের পিছনে আমার জন্য বিপদ লুকিয়ে আছে কে জানতো? কয়েকটা বখাটে ছেলে দাড়িয়ে আছে। ছেলেগুলো আমার কাছে চলে এলো। শুভ্র ওদের একদিন খুব মেরেছিলো আমার জন্য। হয়তো তার শোধ তুলতেই আজকে এসেছে। শুভ্রকে ডাক দেয়ার আগেই ছেলেগুলো আমার মুখ চেপে ধরলো। এরপর আমাকে টেনে কমনরুমে নিয়ে এলো। ভয়ে হাত, পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে আমার। সবাই এখন স্টেজের সামনে আছে। এখন আমি কি করবো? কমনরুমে এনে ছেলেগুলো আমাকে নিচে ফেলে দিলো। আমি উঠে আবার দৌড় দিতে গেলেই একটা ছেলে আমার হাত ধরে বললো,
—-” ওইদিন তোর প্রেমিক আমাদের মেরেছিলো না? আজকে তোর এমন অবস্থা করবো তুই কাউকে মুখ দেখাতে পারবি না। আর এটাই হবে ভিপি শুভ্র চৌধুরীর উপর আমাদের প্রতিশোধ।”
বলে আমার শাড়ীতে হাত দিতে গেলো। এমন সময় কেউ ছেলেটাকে লাথি মারলো। লাথি খেয়ে ছেলেটা দুম করে নিচে পড়ে গেলো। তাকিয়ে দেখি শুভ্র ওনাকে দেখে আমিই ভয় পেয়ে গেলাম। ওনার চোখগুলো রাগে রক্তের মতো লাল হয়ে আছে। দরজা খোলাই ছিলো যার কারণে তাড়াতাড়ি আসতে পেরেছে। শুভ্র বাম হাত দিয়ে আমার ডান হাতটা ধরলো। এরপর লাথি মারতে, মারতে সবগুলোকে বের করলো। মারতে, মারতেই বের করে আনলো। আমার হাত ছেড়ে ইচ্ছেমতো ওদের মারতে লাগলো। মারতে, মারতে দাতে দাত চেপে চেঁচিয়ে বললো,
—-” সাহস কি করে হলো টাচ করার? আমি তোদের আজ মেরেই ফেলবো।”
শুভ্রকে আমি আটকানোর চেষ্টা করেও পারলাম না। ছেলেগুলো মরে গেলে ঝামেলা হবে। তাই দৌড়ে নিরব ভাইয়া আর সামির ভাইয়াকে ডেকে নিয়ে এলাম। এসে দেখি শুভ্রর কপাল কাটা। তবুও ছেলেগুলোকে মারছে উনি। নিরব ভাইয়া আর সামির ভাইয়া ওনাকে আটকালো। আমি তাড়াতাড়ি ব্যাগ থেকে লাল ওড়নাটা বের করলাম। দাত দিয়ে কামড়ে ছিড়ে ওনার কপালে বেধে কাঁদতে, কাঁদতে বললাম,
—-” আপনাকে এত মারামারি করতে করতে কে বলেছে? কতটা কেটে গেলো আপনার। নিশ্চয় খুব ব্যথা হচ্ছে তাই না?”
নিরব ভাইয়া মুচকি হেসে বললো।”
—-” আরে গোলাপ তোমার শুভ্র ঠিক আছে,
নিরব ভাইয়া আমাকে গোলাপ বলে। ওনার সাথে পরিচয় হওয়ার পর থেকে গোলাপ বলেই ডাকে। সামির ভাইয়া নিরব ভাইয়াকে ধাক্কা মেরে বললো।”
—-” খুব ভালবাসে,
শুভ্র আমাকে নিয়ে চলে এলো। আমাকে বাড়ি পৌছে এরপর উনি বাড়ি গেলো।”
—-” রোজ,
কারো ডাকে অতীত থেকে ফিরে এলাম। তাকিয়ে দেখলাম সামিরের মা। এগুলো ভাবতে, ভাবতে চোখ দিয়ে আপনাআপনি পানি পড়ছে। চোখ মুছে ওনাকে বললাম।”
—-” কিছু বলবেন আন্টি?”
সামিরের মা আমাকে বিছানায় বসিয়ে বললো,
—-” আমি জানি সামিরের সাথে তোমার বিয়ে হয়নি। তবুও ও তোমাকে নিজের বউ বলে। আচ্ছা তুমি কেন ওর টর্চার সহ্য করো? ২বছর আগে কি হয়েছিলো? আমাকে প্লিজ বলো মা।”
আমি মলিন হেসে বললাম,
—-” আজ আমি আপনাকে সব বলবো। একদম শুরু থেকেই বলবো আন্টি শুনুন তাহলে।”
___অতীত___
#চলবে…
#ভালবাসার এক রাত❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ রোজ
#পর্ব- ৬
___অতীত___
ভার্সিটির প্রথমদিন আজকে আমার। সকাল থেকেই খুব এক্সাইটেড লাগছে। রাতে এক্সাইটমেন্টের চক্করে ঘুমও হয়নি। সকাল ৮টা বাজতেই শাওয়ার নিয়ে রেডি হলাম। চুলগুলো হেয়ার ড্রয়ার দিয়ে শুকিয়ে নিচে আসতেই ভাইয়া বললো।”
—-” প্রথম ভার্সিটিতে উঠলে যা হয় আর কি? তুই মনে হয় পারলে ফজরের আযানের সময় চলে যেতি,
বলে হো হো করে হেসে দিলো। আমি একটা ব্রেড হাতে নিয়ে বললাম।”
—-” তাতে তোর কি রে? তোর কি আমার পিছনে লাগা ছাড়া আর কোন কাজ নেই?”
ভাইয়া নুডুলস খেতে, খেতে বললো,
—-” না আর কোন কাজ নেই।”
আম্মু এক ধমক দিয়ে বললো,
—-” আহ কি হচ্ছেটা কি? চুপচাপ খা।”
ভাইয়াকে ভেংচি কেটে খেতে শুরু করলাম। খাওয়া শেষ করে রুমে এসে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে এলাম। বের হতেই দেখি চৈতি হাজির। একটা রিক্সা নিয়ে দুজনে ভার্সিটিতে চলে এলাম। চৈতি ভার্সিটি দেখেই বললো,
—-” ওয়াও রোজ কি দারুণ দেখতে আমাদের ভার্সিটি। পুরো সাদা কালার দেখ ওদিকে বাগানও আছে।”
চৈতির সাথে আমিও বললাম,
—-” আসলেই অনেক সুন্দর।”
এমন সময় কে যেন বলে উঠলো,
—-” জীবনেও এত ভাল ভার্সিটি না দেখলে যা হয় আর কি।”
রাগী লুক নিয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখলাম শুভ্র ভাই। আমি ওনার দিকে তেড়ে গিয়ে বললাম,
—-” এই আপনি কি বললেন?”
শুভ্র ভাই দু হাত পকেটে গুজে বললো।”
—-” ঠিকই তো বলেছি। এরআগে কি তুই এত ভাল ভার্সিটি দেখেছিস। মোট কথা তুই তোর বাপের জন্মেও এত ভাল ভার্সিটি দেখিসনি। ইনফ্যাক্ট কলেজও দেখিসনি রাইট? তোর কলেজটাও তো ততটা ভাল ছিলো না,
মেজাজ গরম না লাগে কার? উনি যে আমাকে ইনডাইরেক্টলি অপমান করছে বেশ বুঝতে পারছি। রেগে আঙুল তুলে বললাম।”
—-” আপনি কিন্তুুু আমাকে অপমান করছেন?”
শুভ্র ভাই ভ্রু কুঁচকে বললো,
—-” তোর সাহস তো কম না। ভার্সিটির ভিপির দিকে আঙুল তুলিস।”
ওনার কথায় চোখ বড়, বড় করে বললাম,
—-” ভিপি মানে?”
এরমাঝে আরেকজন সেখানে এসে বললো।”
—-” ভিপি মানে জানো না খুকি মনি? ভিপি মানে হচ্ছে তার কথায় সব স্টুডেন্ট ওঠে, বসে। ভিপি যা বলে তা শুনতে হয়। ইনফ্যাক্ট স্যাররাও তার কথা শোনে,
আমি ঢোক গিলে বললাম।”
—-” সেটা তো জানি আমি। কিন্তুু এই লোকটা ভিপি?”
তখনি আরো একজন এসে বললো,
—-” ইয়াপ আমাদের বেস্ট ফ্রেন্ড ভিপি।”
মনে, মনে ভাবতে শুরু করলাম,
—-” আল্লাহ গো এবার আমার কি হবে? শুভ্র ভাই নির্ঘাত এখন প্রতিশোধ নেবে। কিছুদিন আগে ওনাকে যে চর মারলাম তার প্রতিশোধ। ইয়া আল্লাহ তোমার এই নাদান শিশুকে রক্ষা করো আমিন।”
ভেতরে ভয় পেলেও ওনাকে বুঝতে না দিয়ে বললাম,
—-” হ্যা ভিপি তো কি হয়েছে? উনি ভিপি হলে আমি কি করতে পারি?”
পাশ থেকে চৈতি আমাকে চিমটি কেটে বললো।”
—-” কি করছিস তুই? ওনারা চাইলে সব করতে পারে। এখন মানে, মানে কেটে পড়,
চৈতির কথা শোনাটাই উত্তম কাজ মনে হচ্ছে। তাই চৈতির হাত ধরে হাটা দিলাম। পেছন থেকে শুভ্র ভাই চেঁচিয়ে বললো।”
—-” এহ ডাবল ব্যাটারি কোথায় যাচ্ছিস?”
_________________
মেজাজটা এবার খুব বেশীই গরম হয়ে গেলো। কি আর করার? ভেবেছিলাম এখন আর ঝগড়া করবো না। কিন্তুু ওনার যে ঝগড়া করতে গলা চুলকাচ্ছে সেটা বেশ বুঝতে পারছি। আটগাট বেধে চললাম ঝগড়া করতে। কিন্তুু পেছনে তাকাতেই আমি বেলুনের মতো চুপসে গেলাম। শুভ্র ভাই অগ্নিদৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে। উনি খুব ভাল মতোই জানে ওনার এই অগ্নিদৃষ্টিকে আমি জমের মতো ভয় পাই। তাই এই মুহূর্তে ওনার সামনে পুনরায় যাওয়ার সাহস হলো না। ধাপধুপ পা ফেলে চৈতিকে নিয়ে ক্লাসে চলে এলাম। ক্লাসে আসতেই কয়েকজন এসে কথা বললো। বেশ ভালই লাগলো ওদের সাথে কথা বলে। আমি আর চৈতি কথা বলছিলাম এরমাঝে একটা মেয়ে এসে বললো,
—-” হাই আমি জিনিয়া।”
আমি মুচকি হেসে বললাম,
—-” হ্যালো আমি রোজ।”
মেয়েটা ধপ করে আমার পাশে বসে বললো,
—-” ওয়াও নাইস নেম আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হবে?”
বলে হাত বাড়িয়ে দিলো। আমিও এক গাল হেসে হাত বাড়িয়ে দিতে যাবো এমন সময় চৈতির দিকে চোখ গেলো। চৈতি রাগী লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে। ওর ফেস বলে দিচ্ছে ও আমাকে বলছে কাচা চিবিয়ে খাবো। আমি মেকি হাসি দিয়ে মেয়েটাকে বললাম।”
—-” এই যে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড চৈতি,
মেয়েটা ভেংচি কেটে চলে গেলো। আমি চৈতির দিকে তাকিয়ে জোড়পূর্বক হাসি দিয়ে বসে রইলাম। একটুপর ক্লাসে টিচার এলো। ক্লাস শেষ করে আমরা বেরিয়ে এলাম। ভার্সিটিটা একটু ঘুরে দেখে বাড়ি চলে এলাম। বাড়ি আসতেই ভাইয়া বললো।”
—-” কি রে ভার্সিটি কেমন লাগলো?”
আমি ব্যাগটা রেখে সোফায় বসতে, বসতে বললাম,
—-” এক কথায় দারুণ ভাইয়া।”
ভাইয়ার সাথে টুকটাক কথা বলে রুমে চলে এলাম। এই মুহূর্তে এক কাপ কফি খেতে ইচ্ছে করছে। বুয়াকে ডেকে কফি দিয়ে যেতে বললাম। একটুপর বুয়া এসে কফি দিয়ে গেলো। কফি নিয়ে সোজা ব্যালকনিতে চলে এলাম। চারপাশ থেকে হালকা বাতাস আসছে। বাতাসে আমার খোলা চুলগুলো উড়ছে। নিজেকে কেমন ফিল্মি নায়িকা লাগছে হিহি। নিজের ভাবনায় নিজেই শব্দ করে হেসে দিলাম। কফি খেয়ে রুমে এসে ল্যাপটপ নিয়ে গান দেখতে শুরু করলাম। গান দেখতে, দেখতে ঘুমরানী চোখে এসে ভর করলো। কখন ঘুমিয়ে পড়েছি নিজেও জানিনা। যখন ঘুম ভাঙলো তখন বিকেল তিনটে বাজে। ওয়াসরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িংরুমে এসে চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো। ড্রয়িংরুমের সোফায় শুভ্র ভাই আরাম করে বসে আছে। আমি শিরি দিয়ে দৌড়ে নেমে ওনার সামনে দাড়িয়ে বললাম,
—-” আপনি এখানে কি করছেন?”
আমার কথা শুনে আম্মু ভ্রু কুঁচকে বললো।”
—-” এই তুই এভাবে বলছিস কেন? ও এখানে কেন মানে কি হ্যা? ও এখানে বেরাতে এসেছে,
আমি মুখ ফসকে বলে ফেললাম।”
—-” উনি আমাদের বাড়িতে কেন বেরাবে?”
আম্মু তেড়ে আমার দিকে এসে বললো,
—-” এই বেয়াদব মেয়ে এগুলো কেমন কথা? আমার ভাগ্নে আমার বাড়িতে এসেছে তোর কি? এখানে কি শুধু তোর চৌদ্দ গুষ্টি বেরাতে আসবে?”
আজব আমি এটা কখন বললাম? আমি কপাল কুঁচকে বললাম।”
—-” আম্মু আমি এটা কখন বললাম?”
এরমাঝে শুভ্র ভাই কাঁদো, কাঁদো ফেস করে বললো,
—-” মামনি থাক কিছু বলো না। জানো রোজ আমাকে বলেছিলো আপনি আর আমাদের বাড়ি আসবেন না। আমাদের বাড়ি শুধু আমার চৌদ্দ গুষ্টি আসবে। আমি তবুও যে কেন এলাম?”
________________
আমি হা করে ওনার দিকে তাকিয়ে আছি। আল্লাহ এই ছেলে কত বড় মিথ্যুক? আমি এটা ওনাকে কখন বললাম? আমি রেগে ওনাকে বললাম।”
—-” এই আমি এটা কখন বললাম? আমাদের বাড়ি এসে আমার নামে মিথ্যে বলছেন কেন?”
শুভ্র ভাই এবার আম্মুর দিকে তাকিয়ে বললো,
—-” থাক মামনি আমি চলে যাই। রোজ বরং ওর গুষ্টি নিয়ে থাকুক।”
আম্মু আমার কান টেনে বললো,
—-” তোর এত সাহস? আমার ভাগ্নেকে এসব বলিস?”
আমি চেঁচিয়ে এবার শুভ্র ভাইকে বললাম।”
—-” মিথ্যুক যান এখান থেকে,
শুভ্র ভাই আম্মুর কাছে এসে বললো।”
—-” মামনি ওর কান ছাড়ো। বাচ্চা মেয়ে আর বলবে না এসব তাই না রোজ?”
আম্মু আমার কান ছেড়ে চলে গেলো। আম্মু যেতেই শুভ্র ভাই বাঁকা হেসে বললো,
—-” কেমন লাগলো?”
আমি মুখ বাঁকিয়ে বললাম।”
—-” অসভ্য লোক,
বলে রুমে চলে এলাম। সন্ধ্যার সময় শুভ্র ভাই চলে গেলো। আমি রাত ১১টা পর্যন্ত পড়ে ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে উঠে আবার শাওয়ার নিয়ে ভার্সিটিতে এলাম। গেইট দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই ধপাস করে কারো পায়ে বেজে পড়ে গেলাম। কোনকিছু না ভেবে লোকটাকে না দেখেই চর মেরে দিলাম। পরে যখন তাকে দেখলাম আমার কলিজা কেঁপে উঠলো। হায় আল্লাহ এটা আমি কি করে ফেললাম? এটা তো শুভ্র ভাই রাগে উনি রীতিমত কাঁপছে। চোখদুটো রক্তের মতো লাল হয়ে আছে ওনার। আমি কয়েকটা শুকনো ঢোক গিলে বললাম।”
—-” ইয়ে আসলে শুভ্র ভাই আমি খে্ খেয়াল করিনি,
উনি দাত কিড়মিড় করে বললো।”
—-” কেন তুই কি কানি নাকি? তোর সাহস হলো কি করে আমাকে চর মারার?”
এদিকে চৈতি আমার হাতে চিমটি কাটতে, কাটতে চামরা মনে হয় এক পাল্লা তুলে ফেলেছে। আমি ওর থেকে হাত ছাড়িয়ে বললাম,
—-” কি করছিস তুই?”
চৈতি আমার কানে ফিসফিস করে বললো।”
—-” তুই এটা কি করলি? ভার্সিটির ভিপিকে চর মারলি? এবার তো তোকে উনি কাচা চিবিয়ে খাবে,
চৈতির কথা শুনে ভয়ে, ভয়ে সামনে তাকালাম। তাকিয়ে বড়, সর ঝটকা খেলাম। শুভ্র ভাই আশেপাশে কোথাও নেই। চৈতি আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে। সেটা দেখে আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম।”
—-” তোর কি হলো?”
চৈতি ভ্রু নাচিয়ে বললো,
—-” শুভ্র ভাইয়া তোকে কিছু না বলে চলে গেলো কেন?”
আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম।”
—-” সেটা আমি কি জানি? এখন চল ক্যান্টিনে যাই,
চৈতির হাত টেনে নিয়ে ক্যান্টিনে এলাম। দুজনে দুটো বার্গার নিয়ে একটা টেবিলে বসলাম। বার্গারে এক কামড় দিতেই শুভ্র ভাই আর ওনার চ্যালারা ক্যান্টিনে এলো। শুভ্র ভাই আমার পাশের একটা টেবিলে বসে গলা ছেড়ে গান গাইছে।”
🎶কথা হবে দেখা হবে প্রেমে প্রেমে মেলা হবে🎶
🎶কাছে আসাআসি আর হবে না🎶
🎶চোখে চোখে কথা হবে ঠোটে ঠোটে নাড়া দেবে🎶
🎶ভালবাসা বাসি আর হবে না🎶
উনি চেয়ার থেকে উঠে এসে আমার সামনে দাড়ালো। আমি ভয়ে ঢোক গিলছি। উনি টেডি স্মাইল দিয়ে আবার গাইলো,
🎶শত রাত জাগা হবে থালে ভাত জমা হবে🎶
🎶খাওয়া, দাওয়া কিছু মজা হবে না🎶
🎶হুট করে ফিরে এসে লুট করে নিয়ে যাবে🎶
🎶এই মন ভেঙে যাবে যান না🎶
এবার আমার চারপাশ দিয়ে ঘুরছে। আমি তো আল্লাহ, আল্লাহ করছি ভয়ে। তখন কিছু বলেনি এখন না জানি কি করে আল্লাহ বাঁচাও।”
🎶আমার এই বাজে স্বভাব কোনদিন যাবে না🎶
🎶আমার এই বাজে স্বভাব কোনদিন যাবে না🎶
এতটুকু গেয়ে শুভ্র ভাই থামলো। সবাই হাততালি দিচ্ছে। আর দেয়ারই কথা ওনার গানের গলা বরাবরই অসাধারণ। অনেকগুলো শো করেছে উনি। এসব ভাবনার মাঝেই উনি আমার সামনে এসে দাত কেলিয়ে বললো,
—-” কি রে ডাবল ব্যাটারি? বার্গার গিলছিস? খুব মজা না গিলতে?”
ওনার কথায় হাত, পা কাঁপছে। আমি শিওর আমার কপালে দুঃখ আছে। এদিকে উনি যে বার্গারে বোতলের সব সস ঢালছে আমার খেয়াল নেই। খেয়াল হলো তখন যখন উনি আমার মুখে ওই সসওয়ালা বার্গার ঢুকিয়ে দিলো। মনে হচ্ছে মুখের ভেতর কেউ আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। পানি সুদ্ধ বোতলও শুভ্র ভাই নিয়ে গিয়েছে। এদিকে পানি না পেয়ে আমি এদিক থেকে ওদিন বানরের মতো লাফালাফি করছি। আমার অবস্থা দেখে সবাই হাসছে। ইচ্ছে করছে সবগুলোর মাথা দারুম, দুরুম করে ফাটিয়ে দেই। আর সবার আগে এই শুভ্রর বাচ্চা শুভ্রর মাথা ফাটাই। শুভ্র ভাই নিজেও হাসতে, হাসতে গান ধরলো।”
🎶আমার এই বাজে স্বভাব কোনদিন যাবে না🎶
রাগে, দুঃখে আর ঝালে হাত, পা ছড়িয়ে বসে ভ্যা, ভ্যা করে কেঁদে দিলাম। কাঁদতে, কাঁদতে হাত, পা এদিক, ওদিক ঠাস, ঠুস করে ছুড়ছি। সবাই হাসা বন্ধ করে হা করে তাকিয়ে আছে। আর শুভ্র ভাই রসগোল্লার মতো চোখ করে তাকিয়ে আছে,
#চলবে…