#ভালবাসার এক রাত❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ রোজ
#পর্ব- ৩৩
সকাল ১০টায় রোজ-শুভ্র প্লেনে উঠলো। আজকে আর রোজ প্লেনে ঘুমায়নি। বাইরেটা দেখেছে নয়তো গান শুনেছে। রোজ শুভ্রর সাথে কথা বলছিলো। তখন এক বৃদ্ধা এসে বললো।”
—-” তোমরা কি হাসবেন্ড-ওয়াইফ?”
ওরা দুজন একসাথে হ্যা বললো। বৃদ্ধা মহিলা চোখে চশমা লাগিয়ে বললো,
—-” আমি ভবিষ্যৎ দেখতে পাই।”
রোজ মুচকি হেসে বললো,
—-” ওমা তাই নাকি দিদা? তা কি দেখতে পাচ্ছেন?”
হঠাৎ মহিলাটি সংশয় নিয়ে বলে উঠলো।”
—-” বিপদ ঘোর বিপদ আসতে চলেছে তোমাদের জীবনে। তোমাদের জীবন পাল্টে যাবে,
রোজ ভয় পেয়ে বললো।”
—-” এ্ এসব কি্ কি বলছেন আপনি?”
মহিলাটি হাত নাড়িয়ে বললো,
—-” আমি ঠিকই বলছি মা। আমার গণনা কখনো মিথ্যে হয় না। এটাই হতে চলেছে তোমাদের সাথে। আজ হোক বা কাল বা ২বছর পর বিপদ হবেই।”
রোজ ভয়ে কেঁদে ফেলেছে। রোজকে কাঁদতে দেখে শুভ্র একটু রেগে বললো,
—-” শুনুন এসব বিশ্বাস করি না আমরা। আপনি এসব কথা বাদ দিন তো।”
মহিলাটি মুচকি হেসে বললো,
—-” আমি ঠিকই বলছি বাছা।”
—-” উইল ইউ জাস্ট সাট আপ প্লিজ?”
চিৎকার করে বললো শুভ্র। শুভ্রর চিৎকারে মহিলা চুপ হয়ে গেলো। সবাই অদ্ভুতভাবে তাকালো শুভ্রর দিকে। শুভ্র সে সব পাত্তা না দিয়ে রোজকে বুকে জড়িয়ে শান্ত করলো।”
বিকেলে শুভ্রর মা ফোনে কথা বলছে তখন কলিং বেল বেজে উঠলো। উনি গিয়ে দরজা খুলে রোজ-শুভ্রকে দেখে খুশি হয়ে বললো,
—-” ওমা তোরা চলে এসেছিস?”
রোজ শুভ্রর মা কে জড়িয়ে ধরে বললো।”
—-” হ্যা মামনি, কেমন আছো তুমি?”
—-” আমি ভাল আছি, তোরা গিয়ে রেস্ট কর যা,
শুভ্র ওর মা কে হাগ করে উপরে গেলো। দুজনে ফ্রেশ হয়ে রেস্ট করে নিলো। শুভ্রর মা সামিরদের ফোন করে জানিয়ে দিলো রোজ-শুভ্র এসেছে। সন্ধ্যায় সবাই চলে এলো ওদের সাথে দেখা করতে। শারাফ এখনো কাউকে বলেনি আসলাম খাঁনের পালানোর কথা। তাহলে সবাই টেনশন করবে এটা ভেবে চেপে গিয়েছে। পুলিশ খুজছে ওনাকে বাট পাচ্ছে না। দেখতে, দেখতে ৪দিন চলে গিয়েছে। সবার শপিং করা হয়ে গিয়েছে। কমিউনিটি সেন্টারেও চলে এসেছে। আজকে ওদের মেহেন্দি ৫জনকে সাজিয়ে স্টেজে এনেছে। একেবারে চোখ ধাধানো সুন্দর লাগছে সবাইকে। দেখার মতো ব্যাপার ৫টা বিয়ে একসাথে। সবাই তো অবাক হয়ে দেখে যাচ্ছে। সবাইকে সবুজ লেহেঙ্গা পড়িয়েছে। আর ছেলেরা সবুজ পাঞ্জাবী। রোজ যেহেতু কনে না তাই রোজ লাল লেহেঙ্গা পড়েছে আর শুভ্র লাল পাঞ্জাবী পড়েছে। দুজন একসাথে অনেকগুলো সেলফি তুললো,
___________
তনয়া, জারা, রাইসা, তিথি আর চৈতিকে পাশাপাশি বসিয়েছে। মেহেন্দি দিতে শুরু করতেই ছেলেরা এসে বললো।”
—-” আমরাও আমাদের বউদের মেহেন্দি লাগাবো,
মেয়েরা তো সেই খুশী হয়েছে। রোজকে শুভ্র মেহেন্দি দিয়েছিলো তখনি সবাই ভেবেছিলো। যে তারাও তাদের বরকে দিয়ে মেহেন্দি লাগাবে। তো সবাই বসলো মেহেন্দি দিতে। বাকীরা খুব উৎসাহ নিয়ে দেখছে। বিপত্তি বাধলো তখন যখন সবাই মেহেন্দি নষ্ট করে ফেললো। মেয়েরা তো রাগে ফায়ার হয়ে আছে। ছেলেরা কানে হাত দিয়ে বললো।”
—-” সরি আর জীবনেও মেহেন্দি দিতে আসবো না,
মেয়েরা কিছু করতে পারছে না। কারণ তাদের হাতে মেহেন্দি। রোজ আর শুভ্র হাসতে, হাসতে বললো।”
—-” ওকে, ওকে এখন শান্ত হও সবাই। যা হবার হয়ে গিয়েছে তাই না? এখন চলো সবাই আনন্দ করি?”
মেয়েরা গাল ফুলিয়ে এলো। নাচ, গানের মধ্য দিয়ে মেহেন্দি অনুষ্ঠান শেষ হলো,
আজকে ওদের গায়ে হলুদ। সবাইকে হলুদ লেহেঙ্গা পড়িয়েছে। গায়ে কাচা ফুলের গয়না। মনে হচ্ছে একেকটা পরী নেমে এসেছে। রোজও আজ হলুদ লেহেঙ্গা পড়েছে। তবে ওর লেহেঙ্গার মধ্যে লাল স্টোন বসানো। সবাইকে নিয়ে স্টেজে বসালো। ছেলেরা হা করে তাকিয়ে আছে। নিরব হা করে থেকে বললো।”
—-” আমার বউ এত সুন্দর কেন?”
শারাফ হা বন্ধ করে বললো,
—-” আমার বউ বেশী সুন্দর।”
রোদ মুখ বাঁকিয়ে বললো,
—-” না আমার বউ।”
সামির রোদকে গাট্টা মেরে বললো,
—-” আমার বউ বেশী সুন্দর।”
রিক সবাইকে গাট্টা মেরে বললো,
—-” আমার বউ বেশী কিউট।”
শুভ্র ওদের কাছে এসে বললো,
—-” সবার কাছেই তার ভালবাসার মানুষটাকে পৃথিবীতে সবথেকে বেশী সুন্দর লাগে। সো নিজেরা ঝগড়া না করে স্টেজে চল।”
শুভ্রর কথায় মাথা চুলকে সবাই স্টেজে গেলো। শুভ্র আর রোজ সবাইকে হলুদ দিয়ে ভুত বানিয়ে দিয়েছে। যেভাবে ওদের ভুত বানিয়েছিলো। হলুদের অনুষ্ঠানও আনন্দ করেই কাটালো সবাই,
_____________
লাল লেহেঙ্গা, গা ভর্তি ভারী গহনা, লাইট মেকআপ করে বউ সেজে স্টেজে বসে আছে ৫জন পরী। তাদের পাশেই বসে আছে তাদের স্বপ্নের রাজকুমাররা। চারদিকে বেশ হৈ, চৈ পড়ে গিয়েছে। সবাই ফটো তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। টিভি চ্যানেলে সবাই এই বিয়ে দেখে অবাক হয়ে গিয়েছে। ৫জন কাপলকেই চোখ ধাধানো সুন্দর লাগছে। মেয়েরা সবাই এক সাজে ছেলেরা সবাইও এক সাজে। রোজ আর শুভ্র কালার মিলিয়ে ড্রেস পড়েছে। রোজ খয়েরী লেহেঙ্গা পড়েছে। শুভ্র পড়েছে খয়েরী পাঞ্জাবী সাদা প্যান্ট। দুজনকে মেড ফর এচ ওদার লাগছে। রোজ-শুভ্র নিজেদের বিয়ের কথা ভাবছে। ভালমতোই সবার বিয়ে সম্পন্ন হয়ে গেলো। এবার বিদায়ের পালা দরজায় কড়া নাড়ছে। এই মুহূর্তটাই মনে হয় একটা মেয়ের জন্য সবচেয়ে কষ্টের মুহূর্ত। সব আপনজনদের ছেড়ে একটা নতুন সংসারে যেতে হয়। সেখানে নতুন করে সবাইকে আপন করে নিতে হয়। সবার বুক ফেটে কান্না আসছে। কান্নার রোল পড়ে গিয়েছে ইতিমধ্যে। চিৎকার করে কাঁদছে সবাই। সবাইকে গাড়িতে নিয়ে বসানো হয়েছে। জারা সামিরকে জড়িয়ে ধরে অনেক কেঁদেছে। এই কয়দিনেই বন্ডিংটা স্ট্রং হয়ে গিয়েছে। রক্তের টান বলে তো কথা আছে একটা। শুভ্রর মা, বাবা, শুভ্র, রোজ রোজদের বাড়িতে গিয়েছে। কারণ নতুন বউ ঘরে তুলতে হবে। রোদের সব রিলেটিভ ওদের বাড়িতে গিয়েছে। বড়রা আগেই চলে গিয়েছে বউ বরনের কাজ আছে তাই। সবাইকে সবার বাড়ি থেকে ভালবাসার সাথে বাড়ি তুলেছে। আজকে সবার ভালবাসাই স্বার্থকতা লাভ করেছে। কেউ কাউকে হারানোর ভয় থেকে দুরে সরে এসেছে। সবার আত্মার সাথে দুটো শরীরেরও মিল হয়েছে। ওদের জীবন থেকে সব আধার দুর হয়ে আলো নেমে আসুক।”
সকালে রোজ আগে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে এলো। শুভ্র এখনো ঘুমাচ্ছে রোজও ডাকেনি। এই কয়দিন বেশ ধকল গিয়েছে বিয়ের ঝামেলায়। রোজ নিচে আসতেই শুভ্রর মা বললো,
—-” শুভ্র ওঠেনি এখনো?”
রোজ চুলে খোপা করে বললো।”
—-” না মামনি উনি ঘুমাচ্ছে,
শুভ্রর মা কিচেন থেকে চা এনে বললো।”
—-” যা তো মা এই চা রোদের রুমে নিয়ে যা,
রোজ চা নিয়ে উপরে এসে ওদের ডাকলো। তনয়া এসে দরজা খুলে বললো।”
—-” এত তাড়াতাড়ি উঠে গিয়েছো?”
রোজ দাত কেলিয়ে বললো,
—-” বাসর তোমার ছিলো আমার না।”
তনয়া লজ্জা পেয়ে বললো,
—-” কি যে বলো তুমি।”
—-” ফ্রেশ হয়ে ভাইয়াকে নিয়ে নিচে এসো,
বলে রোজ চলে গেলো। রুমে এসে শুভ্রকে উঠিয়ে নিচে গেলো আবার। বাড়িতে অনেক মেহমান। একটুপর রোদ, তনয়া আর শুভ্রও চলে এলো।”
আজ আবার সবাই কমিউনিটি সেন্টারে এসেছে। কারণ আজ সবার রিসেপশন। রোজ-শুভ্র লন্ডনে চলে যাওয়ার কারণে ওদের রিসেপশন হয়নি। তাই আজ ওদের রিসেপশনও রেখেছে। সবাই সবার সাথে কথা বলছে। এরমাঝে গুলির আওয়াজ পেয়ে সবাই ভয় পেয়ে গেলো। তাকিয়ে যাকে দেখলো শারাফ বাদে সবাই চমকে গেলো। কারণ এটা আসলাম খাঁন। শুভ্র শারাফের দিকে তাকিয়ে বললো,
—-” শারাফ উনি?”
শারাফ মুখ ছোট করে বললো।”
—-” উনি পালিয়েছে আরো আগে। সবাই টেনশন করবে তাই এটা আমি পাবলিক করিনি। বাট আজ এই লোকটা বাঁচবে না,
আসলাম খাঁন হাতে থাকা গান তাক করে বললো।”
—-” আজ তোরা কেউ বাঁচবি না। আমি এখানে তোদের মারতেই এসেছি। কেউ বাঁচার সুযোগ পাবি না,
বলে শুভ্রর দিকে গান তাক করলো। শুভ্রকে এক ধাক্কা মেরে রোজ সরিয়ে দিলো। শুভ্র গিয়ে নিচে পড়লো। এরপরই গুলির একটা আওয়াজ হলো। সেই সাথে শুভ্রর একটা বিকট চিৎকার। মুহূর্তেই সবকিছু স্তব্ধ হয়ে গেলো। পরিবেশ থমথমে বিরাজ করছে। সবকিছু যেন ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে থেমে গিয়েছে। সবাই রোবটের মতো দাড়িয়ে আছে। আসলাম খাঁনের মুখে বিজয়ের হাসি।”
২বছর পর,
একটা কবরের সামনে দাড়িয়ে আছে সবাই। সবার মুখ, চোখ কালো হয়ে আছে,
#চলবে…
#ভালবাসার এক রাত❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ রোজ
#পর্ব- ৩৪
২বছর পর।”
একটা কবরের সামনে দাড়িয়ে আছে সবাই। সবার মুখ কালো হয়ে আছে। সামির আর জারার চোখের কোনে বিন্দু পানি জমেছে। কিন্তুু ওরা দুজনেই সেই পানি মুছে ফেললো। জারা চোখ মুছে বলে উঠলো,
—-” তুমি কেন এমন করেছিলে ড্যাড? তুমি যদি ভাল হতে তাহলে আমরা সবাই হ্যাপি থাকতাম। তোমাকেও এভাবে চলে যেতে হতো না।”
সামির জারার দিকে তাকিয়ে বললো,
—-” উনি আমাদের কথা কোনদিনই ভাবেনি। ভাবলে এমন খারাপ কাজ করতে পারতো না। কারণ উনি তো জানতো এর শাস্তি উনি পাবে। এটাও জানতো ওনাকে শুট করার অর্ডার হয়েছিলো। তবুও উনি ইচ্ছে করেই সেদিন ওখানে এসেছিলো।”
কি ভাবছেন সবাই? কবরটা কার? আর ওরা সবাই এসব কি বলছে? তাহলে চলুন ২বছর আগে ফিরে যাই,
আসলাম খাঁন শুভ্রর দিকে গান তাক করতেই রোজ শুভ্রকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেয়। আর তখনি গুলির আওয়াজ আর শুভ্রর বিকট চিৎকারে সবাই স্তব্ধ হয়ে যায়। রোবটের মতো দাড়িয়ে আছে সবাই। আর শুভ্র এখনো চোখ বন্ধ করে আছে। কারণ শুভ্রর ধারণা গুলিটা রোজকে আসলাম খাঁন করেছে। শুভ্রর শ্বাস যেন আটকে যেতে চাইছে। শুভ্র সাহস নিয়ে চোখ খুলে দেখে রোজ দাড়িয়ে আছে আর ঠিক আছে। শুভ্র উঠে গিয়ে রোজকে জড়িয়ে ধরে। এরপর রোজের শরীর চেক করতে, করতে বললো।”
—-” রেড রোজ তুমি ঠিক আছো? তোমার কিছু হয়নি তো? বলো না ঠিক আছো তুমি?”
রোজ শুভ্রর গালে হাত রেখে বললো,
—-” শুভ্র আমি ঠিক আছি। সামনে তাকিয়ে দেখুন।”
রোজের কথামতো সামনে তাকিয়ে শুভ্র অবাক হয়। রক্তাক্ত অবস্থায় আসলাম খাঁন দাড়িয়ে আছে। মুখে তার বিজয়ের হাসি। যেন সে বিশ্ব জয় করে ফেলেছে। আসলাম খাঁন হেসেই বললো,
—-” আজ থেকে আমি মুক্ত। ওখানে খুব কষ্ট হয় তোমাদের ছাড়া থাকতে। আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। আমি যা করেছি অন্যায় করেছি। আমি জানতাম তোমরা কেউ ক্ষমা করতে না। কারণ আমি যে এক নিকৃষ্ট মানুষ। যাকে ক্ষমা করা যায় না। আবার আমাকে জেলে যেতে হতো। আমি আর জেলে যেতে চাই না। আমি জানতাম পুলিশ এখানে আসবে। আর তোমরাও আমাকে ক্ষমা করে দিও পারলে।”
আসলাম খাঁনকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে পুলিশ আবার গুলি করে। এবার আসলাম খাঁন নিচে পড়ে যায়। জারা, সামির দৌড়ে ওনার কাছে আসে। ওদের মা ও ধীর পায়ে আসলাম খাঁনের পাশে এসে বলে,
—-” দেখলে আসলাম? পাপ তার বাপকেও ছাড়ে না। তুমি যেটা করেছো তার শাস্তি তোমাকে পেতে হলো। মনে আছে আমি কি বলেছিলাম? যে তুমি যা করেছো তার শাস্তি তোমাকে এই পৃথিবীতেই পেতে হবে।”
জারার মা ওনার পাশে বসে বললো,
—-” তোমার ভুলে তোমার ছেলে-মেয়ে এতিম হয়ে গেলো। একবারও আমাদের কারো কথা ভাবোনি তাই না? ভাবলে এমন করতে পারতে না।”
আসলাম খাঁন অস্ফুট আওয়াজে বললো,
—-” ক্ষমা করে দিও তোমরা সবাই।”
বলে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো। সামির আর জারার চোখ থেকে পানি পড়ছে। কিন্তুু ওরা আওয়াজ করছে না। বিকেলের দিকে আসলাম খাঁনকে কবর দেয়া হয়। এর কিছুদিন পর থেকেই সবাই তাদের নতুন জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। শুভ্র তার মিউজিক লাইফ নিয়ে আর রোজকে নিয়ে ব্যস্ত। রোদও নিজের বাবার বিজনেস দেখছে। সামিরও এখন অফিসে যায়। ওর বাবা তো আর নেই অফিসের এমডি এখন সামির। নিরব, রিক ও অফিসে যায়। আর শারাফও থানা নিয়ে ব্যস্ত আর তার বউ নিয়ে। সবাই তাদের প্রিয় মানুষের সাথে হ্যাপি আছে,
“বর্তমান”
কবর জিয়ারত করে ওরা চলে আসে। ২বছর হলো আসলাম খাঁন মারা গিয়েছে। ২বছরই ওরা এখানে আজকের দিনে আসে। কারণ ২বছর আগে আজকের দিনেই উনি মারা গিয়েছিলো। গাড়ির কাছে এসে দেখে তনয়ার ছেলে মেঘ কাঁদছে। মেঘরাজ আহমেদ মেঘ তনয়া আর রোদের ৮মাসের ছেলে। রোদ গিয়ে মেঘকে কোলে নিয়ে বললো।”
—-” ও কাঁদছে কেন?”
তনয়া গাল ফুলিয়ে বললো,
—-” আমি কি জানি? সারাদিনই তো কাঁদে।”
রোজ গিয়ে কোলে নিতেই মেঘ থেমে গেলো। সবাই অবাক হয়ে বললো,
—-” এটা কি হলো? নিজের বাবা, মায়ের কোলে থামলো না। আর পিপির কোলে গিয়ে থেমে গেলো?”
রোজ ভাব নিয়ে বললো।”
—-” এটাকেই বলে ম্যাজিক,
তনয়া দাঁত কেলিয়ে বললো।”
—-” তাহলে তোমরা বেবি নিয়ে নাও,
শুভ্র কপালে ভাজ ফেলে বললো।”
—-” না রেড রোজ এখনো ছোট,
নিরব হু হা করে হেসে বললো।”
—-” তাহলে তোর রেড রোজকে ফিডার খাওয়া,
শুভ্র কনুই দিয়ে নিরবকে গুতো মেরে বললো।”
—-” তুই চুপ কর ফাজিল। তোরা বেবি নিস না কেন? তোরা বেবি নিয়ে আমাকে মামা ডাক শোনা,
তিথি চোখ বড়, বড় করে বললো।”
—-” এই ভাইয়া কি বলছো?”
শুভ্র ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,
—-” ঠিকই তো বলেছি।”
তিথি শুভ্রর চুল টেনে বললো,
—-” বোন হই তোর বেয়াদব।”
শুভ্র দাঁত বের করে বললো,
—-” ওহ বোন নাকি তুই আমার? ভুলে গিয়েছিলাম।”
______________
রিক চৈতিকে ধরে বললো,
—-” ওকে এবার চল যাওয়া যাক।”
চৈতি ৫মাসের প্রেগন্যান্ট। ওরা সবাই যে যার গাড়িতে উঠলো। সবাই যেহেতু আলাদা বাড়িতে যাবে তাই আলাদা গাড়ি নিয়ে এসেছে। গাড়ি নিয়ে যে যার বাড়ি চলে গেলো। রোজ আর শুভ্র বাড়ি আসতেই শুভ্রর মা বললো,
—-” ওদের নিয়ে আসতি তোরা।”
শুভ্র সোফায় বসে বললো,
—-” ওরা আসেনি আম্মু।”
রোজ সোফায় শুভ্রর পাশে বসে বললো,
—-” ওরা অনেকদিন হলো আসে না। আবার একটা পিকনিকের আয়োজন করুন। সেখানে ওদের আসতে বলুন না শুভ্র।”
শুভ্র কপাল কুঁচকে বললো,
—-” যাতে করে আবার ঝগড়া করতে পারো?”
রোজ উঠে দাড়িয়ে কোমরে হাত রেখে বললো।”
—-” কি আমি ঝগড়া করি?”
শুভ্র মুখ বাঁকিয়ে বললো,
—-” এই দেখলে কিভাবে কোমরে হাত রেখেছো? ঝগড়া করলে মানুষ যেভাবে কোমরে হাত রাখে সেভাবে।”
রোজ ভেংচি কেটে বললো,
—-” আপনি কি কম নাকি? ঝগড়ার কথা তো আগে আপনি বললেন হু। আপনি ছেলে হয়ে ঝগড়া করলে আমি করবো না কেন?”
—-” তুমি ঝগড়া করো যত ইচ্ছে ততো। আমি কি বারণ করেছি নাকি?”
শুভ্রর কথায় রোজ আবার ভেংচি কেটে বললো।”
—-” আপনি বারণ করলেই আমি শুনবো নাকি?”
—-” শুনবে কেন? তুমি তো ঝগড়ুটে বুড়ি,
বলে শুভ্র উপরে চলে গেলো। রোজ রাগে ফোস, ফোস করছে। শুভ্রর মা রোজকে নিয়ে একটা সিদ্ধ ডিম দিলো। কারণ সিদ্ধ ডিম রোজের ফেবারিট। রোজ এক কামড় দিয়েই রেখে দিলো। কেমন গন্ধ, গন্ধ লাগছে ওর কাছে। রোজ ডিম রেখে আসতে গেলেই শুভ্রর মা বললো।”
—-” কি রে খেলি না?”
রোজ মুখে হাত দিয়ে বললো,
—-” না মামনি ভাল লাগছে না।”
রোজ উপরে এসে ওয়াসরুমে গেলো। ওয়াসরুমে গিয়েই বমি করে দিলো। রোজ হঠাৎ এমন হওয়ায় বেশ অবাক হলো। কিন্তুু শুভ্রকে কিছু বললো না অযথা টেনশন করবে ভেবে। মুখে পানি মেরে মুখ মুছে চলে এলো। রুমে আসতেই শুভ্র বললো,
—-” তোমার চোখমুখ এমন লাগছে কেন?”
রোজ থতমত খেয়ে বললো।”
—-” কেমন?”
শুভ্র ভ্রু কুঁচকে বললো,
—-” কিছু লুকোচ্ছো নাকি?”
—-” কি লুকোবো? চোখেমুখে পানি দিয়েছি গরম লাগছিলো তাই।”
শুভ্র রোজকে বিছানায় বসিয়ে বললো,
—-” ওদের আমি বলে দিয়েছি পিকনিক করার কথা। ওরা আগামীকাল সবাই চলে আসবে।”
রোজ খুশি হয়ে বললো,
—-” সত্যি?”
শুভ্র রোজের গাল টেনে বললো।”
—-” ইয়েস ম্যাডাম সত্যি,
রোজ শুভ্রকে জড়িয়ে ধরলো। শুভ্রও রোজকে জড়িয়ে ধরে মুচকি হেসে বললো।”
—-” পাগলি একটা,
রোজ বুক থেকে মুখ বের করে বললো।”
—-” আপনার পাগলি,
—-” হুম শুধুই আমার পাগলি।”
পরেরদিন সকালে শুভ্র স্টুডিওতে গেলো। যাওয়ার আগে রোজের কপালে চুমু দিয়ে গিয়েছে। এটা প্রতিদিনকার রুটিন। শুভ্র অবশ্য যেতো না গিয়েছে ওর রেকর্ড আছে গানের। আর মুভির জন্য গান গাইছে ভাল হতেই হবে। আর সবার বিশ্বাস যে এই গান হিট হবে। রোজ রুম থেকে বের হতেই মাথা চক্কর দিলো। রোজ কোনরকম নিজেকে সামলে রুমে ফেরত এলো। বিছানায় বসে ভাবতে লাগলো,
—-” এমন কেন হচ্ছে আমার? কেমন গা গুলাচ্ছে। বমি আসছে আর মাথাটাও ঘুরছে। শুভ্রকে কি বলবো? নাকি নিজে একবার ডক্টরের কাছে যাবো। আমি বরং আগামীকাল ডক্টরের কাছে চলে যাবো।”
____________
রোজ নিজেকে সামলে নিচে এলো। ডাইনিং টেবিলে গিয়ে অল্প খাবার নিয়ে খেতে শুরু করলো। কিন্তুু মুখে দিতেই আবার গা গুলিয়ে বমি চলে এলো। রোজ খাবার রেখে বেসিনে গিয়ে বমি করে দিলো। আর খেতে পারলো না ড্রয়িংরুমে চলে এলো। ড্রয়িংরুমে এসে টিভি দেখছে। শুভ্রর মা এসে বললো,
—-” কি রে খেলি না তুই?”
রোজ চোখমুখ কুঁচকে বললো।”
—-” না মামনি ভাল লাগছে না,
শুভ্রর মা রোজের পাশে বসে বললো।”
—-” কি হয়েছে রে তোর? শরীর খারাপ নাকি?”
রোজ মাথা নেড়ে না বললো। টিভিও দেখলো না রুমে চলে এলো। দুপুরে শুভ্র বাড়ি এলো। এসে দেখলো রোজ ঘুমিয়ে আছে। শুভ্র মুচকি হেসে ঘুমন্ত রোজের কপালে চুমু একে ফ্রেশ হতে গেলো,
সন্ধ্যায় সবাই আড্ডা দিচ্ছে। ওরা সবাই কিছুক্ষণ আগেই এসেছে। সবাই ছাদে বসে আড্ডা দিচ্ছে বড়রা রান্না করছে। রোদের কোলে মেঘ বসে রোদের চুল টানছে। রোদ চুল ছাড়িয়ে বললো।”
—-” আরে বাপ একটু শান্ত থাক না,
তনয়া ভ্রু কুঁচকে বললো।”
—-” তুমি ওকে বকছো কেন?”
রোদ হা করে থেকে বললো,
—-” আমি কখন বকলাম?”
রিক মিনমিন করে বললো।”
—-” আমার বাচ্চাও এমন করবে?”
চৈতি হেসে বললো,
—-” তা তো করবেই।”
নিরব, শারাফ আর সামির বললো,
—-” আমাদের বাচ্চারাও?”
রোদ কপালে ভাজ ফেলে বললো।”
—-” তোদের বউরা কি প্রেগন্যান্ট?”
ওরা দাত কেলিয়ে বললো,
—-” হতে কতক্ষণ?”
তিথি, জারা আর রাইসা রেগে বললো।”
—-” এসব কি কথা বলছো?”
ওরা ভয়ে চুপ হয়ে গেলো। রোজ চুপচাপ আছে দেখে শুভ্র বললো,
—-” রেড রোজ শরীর খারাপ লাগছে তোমার?”
রোজ মাথা ধরে বললো।”
—-” আমি একটু আসছি,
বলে হাটা দিলো রোজ। একটু এগোতেই মাথা ঘুরে পড়ে যেতে গেলো। শুভ্র দৌড়ে গিয়ে ধরে ফেললো।”
—-” আর ইউ ওকে? ঠি্ ঠিক আছো তুমি?”
রোজ শুভ্রকে ধরে বললো,
—-” হ্যা ঠিক আছি আমি।”
সবাই উত্তেজিত হয়ে বললো,
—-” কি হয়েছে?”
—-” ১মিনিট।”
বলে শুভ্র রোজকে দুরে এনে বললো,
—-” বমি হয়েছে তোমার?”
রোজ মাথা নেড়ে হ্যা বললো। হুট করে শুভ্র বলে উঠলো।”
—-” তোমার্ তোমার পিরিয়ড লাস্ট কবে হয়েছে?”
রোজ চোখ বড়, বড় করে বললো,
—-” কেন?”
—-” বলো।”
রোজ ইতস্তত করছে। যদিও শুভ্র ওর স্বামী তবুও বেচারী অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছে। আমতা, আমতা করে বললো,
—-” আড়াই মাস আগে।”
শুভ্র অবাক হয়ে বললো,
—-” তুমি আমাকে বলোনি কেন? আর তোমার কি মনে হয়নি?”
রোজ বোকার মতো বললো।”
—-” কি মনে হবে?”
শুভ্র কাঁপা, কাঁপা গলায় বললো,
—-” রোজ আই থিংক ইউআর পে্ প্রেগন্যান্ট।”
রোজের আবার মাথা চক্কর দিলো। সাথে, সাথে শুভ্রর বুকে ঢলে পড়লো। সবাই হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। শুভ্র রোজকে কোলে নিয়ে নিচে চলে এলো। নিরব ডক্টরকে কল করে দিলো। রুমে এনে রোজকে অনেক ডাকার পরও সেন্স আসছে না,
—-” রে্ রেড রোজ কি হলো তোমার? প্লিজ চোখ খোলো রোজ। আম্মু ও কথা বলছে না কেন? আমার রোজ কথা বলছে না কেন?”
শুভ্র বিলাপ করছে। একটুপর ডক্টর চলে এলো। শুভ্র উঠে ডক্টরের কাছে গিয়ে বললো।”
—-” ডক্টর দেখুন না ওর কি হয়েছে?”
ডক্টর রোজকে চেকআপ করে হেসে দিলো। শুভ্র রেগে বললো,
—-” এখানে আমার ওয়াইফ সেন্সলেস। আর আপনি ডক্টর হয়ে হাসছেন?”
ডক্টর মুচকি হেসে বললো।”
—-” মিস্টার শুভ্র মিষ্টি কিনে আনুন। আপনি বাবা হতে চলেছেন। আপনার ওয়াইফ প্রেগন্যান্ট,
শুভ্রর মুখে কোন কথা নেই। চোখে পানি অতিরিক্ত খুশীতে শুভ্র থম মেরে আছে।”
#চলবে…