#ভালবাসার এক রাত❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ রোজ
#পর্ব- ৩১
সকাল ৮টা বেজে ৪০মিনিট। ড্রয়িংরুমে রেডি হয়ে দাড়িয়ে আছে রোজ-শুভ্র। কারণ ১০টায় ওদের ফ্লাইট। রোজ একটা কালো শার্ট পড়া কালো জিন্স প্যান্ট। গলায় কালো একটা স্কার্ফ ঝোলানো। ঠোটে হালকা লাল লিপস্টিক নিয়েছে চোখে সাইন গ্লাস। চুলগুলো উচু করে একটা ঝুটি করা। রোজের সাথে ম্যাচ করে শুভ্রও ফুল ব্ল্যাক ড্রেস পড়েছে। সবাইকে বলে ওরা বেরিয়ে এলো। ওদের সাথে রোদ আর সামির এসেছে। এয়ারপোর্ট পৌছে সব ফর্মালিটি শেষ করে প্লেনে গিয়ে উঠলো। প্লেনে উঠে রোজ বললো।”
—-” এখন মাস্ক খুলতে পারেন,
শুভ্র মাস্ক খুলে বললো।”
—-” দেখলে তোমার হাসবেন্ডের কত ফ্যানস?”
রোজ মুচকি হেসে বললো,
—-” সে তো আগে থেকেই জানি।”
প্লেন ছাড়ার পর রোজ শুভ্রর কাঁধে মাথা দিয়ে বসে রইলো। রোজের একটা হাত শুভ্রর হাতের মাঝে। রোজ এভাবে থাকতে, থাকতে ঘুমিয়ে পড়লো। ঘুম ভাঙলো শুভ্রর ডাকে। রোজ ঘুম, ঘুম কন্ঠে বললো,
—-” এসে গিয়েছি বাড়িতে?”
শুভ্র রোজের চুল ঠিক করে বললো।”
—-” লন্ডন এসে গিয়েছি দেখো তাকিয়ে,
রোজ তাকিয়ে অবাক হয়ে বললো।”
—-” আমি এতক্ষণ ঘুমিয়েছি? আপনি আমাকে ডাকেননি কেন?”
ওরা প্লেন থেকে নেমে এলো। রোজ এদিক, ওদিক দেখছে। এয়ারপোর্ট থেকে বের হতেই অনেকে এলো সেলফি তুলতে। শুভ্র হাসি মুখে সেলফি তুললো। এরপর একটা গাড়িতে উঠে বসলো। রোজ গাড়িতে বসে বললো,
—-” এটা কার গাড়ি?”
শুভ্র জানালা লাগিয়ে বললো।”
—-” আমার কেন?”
রোজ বড়, বড় চোখ করে বললো,
—-” লন্ডনেও আপনার গাড়ি আছে?”
শুভ্র রোজের গাল টেনে বললো।”
—-” বাড়িও আছে বাট এখন আমরা হোটেলে যাবো,
রোজ চুপ করে বসে রইলো। গাড়ি চলছে আপন গতিতে। রোজ বাইরেটা মুগ্ধ হয়ে দেখছে। গাড়ি এসে থামলো কিং সোলোমন হোটেলে। ওরা হোটেলে আসতেই ম্যানেজার ওয়েলকাম করলো। ম্যানেজার বাংলাতেই বললো।”
—-” আপনাদের স্বাগতম স্যার এবং ম্যাডাম,
রোজ চমকে বললো।”
—-” আপনি বাংলা জানেন?”
—-” ওর মা বাংলাদেশী,
শুভ্রর কথা শুনে রোজ ওহ বলে চুপ থাকলো। শুভ্র আবার ম্যানেজারকে বললো।”
—-” যা বলেছিলাম মনে আছে?”
ম্যানেজার মুচকি হেসে বললো,
—-” জ্বি স্যার আপনি যা বলেছিলেন সব মনে আছে।”
রোজ ভ্রু কুঁচকে বললো,
—-” কি বলেছেন?”
—-” কিছু না তুমি চলো।”
বলে শুভ্র রোজকে নিয়ে এলো। চাবি দিয়ে রুম খুলতেই রোজের উপর গোলাপের পাপড়ি পড়তে শুরু করলো। রোজ অবাক হয়ে দেখছে সাথে খুশীও হয়েছে। রুম দেখে আরো চমকে গেলো। পুরো রুমটা খুব সুন্দর করে সাজানো। রোজ রুম দেখতে, দেখতে বললো,
—-” এসব?”
শুভ্র মুচকি হেসে বললো।”
—-” তোমার জন্য আরো সারপ্রাইজ আছে। আর তার জন্য তোমার রাত পর্যন্ত ওয়েট করতে হবে,
ওরা ফ্রেশ হয়ে রেস্ট করছে। এদিকে বাংলাদেশে তনয়ার বাবা ২দিন পরই ফিরে আসবে। তাই খুব তাড়াতাড়ি ওদের বিয়ে হবে। রাইসা, জারা, তিথি আর চৈতি গাল ফুলিয়ে আছে। সেটা দেখে তিথির মা বললো।”
—-” তোমরা গাল ফুলিয়ে আছো কেন?”
তিথি কাঁদো, কাঁদো ফেস করে বললো,
—-” আমরা সবাই একসাথে বিয়ে করবো। আমাদের বিয়ের ডেট ফিক্সড করো।”
তিথির মা বড়, বড় চোখ করে বললো,
—-” কি বেহায়া মেয়ে ভাবা যায়?”
সব মেয়েরা একসাথে বললো।”
—-” তিথি ঠিকই বলছে। এটা আমাদের ইচ্ছে আমরা একসাথে বিয়ে করবো,
নিরবের মা কিছু একটা ভেবে বললো।”
—-” তাহলে আমাদের উচিত ওদের ইচ্ছে পূরণ করা,
সবাই খুশিতে গদগদ হয়ে বললো।”
—-” থ্যাংক ইউ আন্টি,
ওনারা ঠিক করলো সবাই একসাথে বসে কথা বলবে। তাই আজকে এখানে রয়ে গেলো। শুভ্রর মা সবার জন্য চা করে নিয়ে এলো। সবাই ওদের ৫জনের বিয়ে নিয়ে কথা বলছে। মেয়েরা লজ্জা তো থাক দুরে হা করে কথা গিলছে। আর ছেলেরা হা করে ওদের দেখছে। শারাফ হা করে থেকে বললো।”
—-” ভাই আমার বউয়ের লজ্জা নেই কেন?”
সামিরও গোল, গোল চোখ করে বললো,
—-” আমার বউয়েরও নেই।”
সবাই একসাথে বললো,
—-” আমাদের বউদের লজ্জা কোথায় গেলো?”
মেয়েরা কোমরে হাত দিয়ে দাড়ালো। ছেলেরা শুকনো ঢোক গিলছে।”
____________
লন্ডনে রাত ৮টা বাজে এখন। শুভ্র রোজের চোখ বেধে দিলো। রোজ চেঁচিয়ে বললো,
—-” আরে শুভ্র কি করছেন?”
শুভ্র রোজের হাত ধরে বললো।”
—-” আমার সাথে চলো,
শুভ্র রোজকে কোলে তুলে নিলো। রোজ চুপ করে আছে। বেশ কিছুক্ষণ পর শুভ্র রোজকে নামিয়ে দিলো। একটা শুনশান রোডে দাড়িয়ে আছে ওরা। এখনো রোজের চোখ বাধা। শুভ্র রোজের চোখ থেকে কাপড় খুলে দিলো। চোখ খুলতেই রোজ শকড হয়ে গেলো। পুরো রোড সাজানো। নানান রকম লাইটিং করা সম্পূর্ণ রোডের দু পাশে। শুভ্র একজনকে ফোন করতেই সে একটা সাইকেল নিয়ে এলো। রোজ অবাক হয়ে বললো।”
—-” সাইকেল?”
শুভ্র রোজকে সামনে বসিয়ে বললো,
—-” দেখতে থাকো।”
শুভ্র সাইকেল চালাচ্ছে রোজ সামনে। চারদিক থেকে ঝিড়িঝিড়ি বাতাস এসে দুজনের চুলই উড়ছে। রোজ অবাকের উপর অবাক হচ্ছে। কারণ ওরা যতদুর যাচ্ছে ততই সাজানো দেখতে পাচ্ছে। মোটকথা ওরা যেই রোডে যাচ্ছে সেই রোডই সাজানো। সাইকেল চালিয়েই শুভ্র লন্ডনের ব্রাইটন বিচে চলে এলো। রাত হওয়ায় এখন তেমন কেউ নেই। সাইকেল থেকে নেমে ওরা হাটতে শুরু করলো। বিচের পাড় দিয়ে হাজারো প্রদীপ জ্বলছে। কতক্ষণ পর, পর এক, একজন এসে রোজের হাতে একেকটা গোলাপ ধরিয়ে দিচ্ছে। রোজ ভাবতেও পারছে না শুভ্র এতকিছু করেছে। শুভ্র রোজকে ধরে দাড় করিয়ে বললো,
—-” উপড়ে তাকাও।”
উপড়ে তাকাতেই রোজ হা হয়ে গেলো। শত, শত ফানুস জ্বলছে সব ফানুসের ভিতর রোজের ছবি। রোজ বিস্ময় নিয়ে বললো,
—-” ফানুসে ছবি কি করে এলো?”
শুভ্র পিছন থেকে রোজকে জড়িয়ে ধরে বললো।”
—-” এটা এমন সিস্টেম করে বানানো। যতক্ষণ এই ফানুস জ্বলবে ততক্ষণ তোমার ছবি থাকবে। নিভে গেলেই আর তোমাকে দেখা যাবে না। এখনো আরো অনেককিছু বাকী চলো,
শুভ্র রোজের হাত ধরে সামনে নিয়ে গেলো। সামনেই আইসক্রিম ওয়ালা বসা। রোজ অবাক হয়ে বললো।”
—-” এখানে আইসক্রিম ওয়ালা?”
শুভ্র হাসলো শুভ্রর হাসিতেই রোজ বুঝলো এটাও শুভ্রর কাজ। আইসক্রিম ওয়ালার কাছে আইসক্রিম আনতে গেলো রোজ। আইসক্রিম হাতে নিয়েই চমকে গেলো। আইসক্রিমে আই লাভ ইউ রেড রোজ লেখা। রোজ খুশী হয়ে শুভ্রকে জড়িয়ে ধরলো। শুভ্র রোজের কপালে চুমু দিয়ে বললো,
—-” আরো সামনে চলো।”
আরেকটু সামনে এসে রোজ আবার অবাক হলো। এবারও আকাশে ফানুস জ্বলছে। আর এবার সব ফানুসে আই লাভ ইউ রেড রোজ লেখা। রোজ খুশীতে কেঁদে ফেলেছে। ও ভাবতে পারেনি শুভ্র ওকে এত সারপ্রাইজ দেবে। শুভ্র রোজের চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,
—-” তোমার চোখে আমি পানি দেখতে চাই না। জানি তোমাকে অজান্তে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি। আমার জন্য ২বছর তুমি অনেক কষ্ট সহ্য করেছো। চাইলেই সেই কষ্টের ভাগ আমি হয়তো নিতে পারবো না। এটাও জানি চাইলেই আমি তোমার ২বছরে পাওয়া কষ্ট ভুলিয়ে দিতে পারবো না। তবে আমি চেষ্টা করবো রেড রোজ। চেষ্টা করবো আমার আজকের #ভালবাসার_এক_রাত দিয়ে তোমার সব কষ্ট ভুলিয়ে দিতে। আমি তোমাকে প্রমিস করছি। আজকের পর তোমার চোখে আমি কোনদিন পানি আসতে দেবো না। তোমার শুভ্র তোমাকে কথা দিচ্ছে রেড রোজ। তোমার জীবনে আজকের পর শুধু ভালবাসা থাকবে। কষ্ট তো থাক দুরে কষ্টের ছোঁয়াও আমি তোমার জীবনে আসতে দেবো না আই প্রমিস ইউ দ্যাট।”
রোজ কি বলবে বুঝতে পারছে না। কারণ ওর মুখে কোন ভাষা নেই। কেউ কারো জন্য এতটা করতে পারে? এমন মানুষও আছে পৃথিবীতে? রোজ থমকে গিয়েছে। হুট করেই শুভ্রকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
—-” শুভ্র আপনি এত ভাল কেন? কেন আমাকে এত ভালবাসেন? আমি কি পারবো আপনার ভালবাসার মর্যাদা দিতে? ভয় হয় যদি আপনাকে ছেড়ে যেতে হয় তখন কি করবো আমি? যেতে চাই না আপনাকে ছেড়ে কোথাও। আপনার ভালবাসায় আটকে থাকতে চাই। শুভ্র বন্ধনে বন্দিনী হয়ে থাকতে চাই।”
—-” আমি তোমাকে কোথাও যেতে দেবো না। এবার চলো হোটেলে ফিরে যাই,
ওরা আবার হোটেলের দিকে রওনা হলো। আবার গিয়ে সেই সাইকেলে উঠলো। রোজ আবারো অবাক হলো। কারণ সবকিছুর কালার এখন চেঞ্জ হয়ে গিয়েছে। রোজ শুভ্রর বুকে পিঠ ঠেকিয়ে সব দেখছে। সত্যিই রোজ সেই অতীত যেন ভুলে গিয়েছে। রোজের মনে হচ্ছে এর থেকে সুন্দর মুহূর্ত আর হতেই পারেনা। সময়টা যদি এখানেই থেমে যেতো।”
____________
হোটেলের সামনে এসে রোজ স্তব্ধ হয়ে গেলো। সম্পূর্ণ হোটেল লাল গোলাপের লাইটিং করা। গেটে বড়, বড় অক্ষরে জ্বল, জ্বল করছে ওয়েলকাম রেড রোজ। রোজ যত ভিতরে যাচ্ছে তত বেশী শকড হচ্ছে। সব কাপলরা রোজের হাতে লাল গোলাপ তুলে দিচ্ছে। আর পুরো হোটেল সাজানো। আর প্রায় জায়গাতে ওয়েলকাম রেড রোজ লেখা। সব কাপল ওর হাতে গোলাপ দিচ্ছে আর ওয়েলকাম রেড রোজ বলছে। হাটতে, হাটতে ওরা রুমে চলে এলো। রোজের হাত গোলাপ দিয়ে ভর্তি। রুমে এসে রোজ আরেক দফা শকড হলো। সম্পূর্ণ রুম লাল গোলাপ দিয়ে সাজানো। সেই সাথে দেয়ালে রোজ আর শুভ্রর ছবি। রুমে অসংখ্য ছোট, ছোট মোমবাতি জ্বলছে। এক সাইড দিয়ে শুধু প্রদীপ আর প্রদীপ। বড় লাভ সেপ মোমবাতিও জ্বলছে। বিছানায় গোলাপের পাপড়ি দিয়ে লাভ আর্ট করা। তার মাঝে পাপড়ি দিয়েই রোজ-শুভ্র লেখা। ব্যালকনিতে ফ্যান্সি লাইট জ্বলছে। রোজ হাসতে, হাসতে সব দেখছে। শুভ্র একটা দড়ি ধরে টান দিতেই গোলাপের পাপড়ি পড়তে শুরু করলো। রোজ খিলখিল করে হাসছে আর ঘুরছে। শুভ্র আজ অনেক খুশী সে পেরেছে তার রেড রোজের সেই খিলখিল করে হাসি ফিরিয়ে দিতে। শুভ্র গিটার এনে টুং, টাং করে সুর তুললো,
🎶সাথিয়া হুম, সাথিয়া হুম🎶
🎶মাধাম, মাধাম তেরী গিলি হাসি🎶
🎶সাথিয়া হুম, সাথিয়া হুম🎶
🎶সুনকে হামনে সারি পিলি হাসি ওহহ🎶
রোজ ঘুরছে আর হাসছে। শুভ্র মুগ্ধ হয়ে তার রোড রোজের হাসি দেখছে। রোজ শুভ্রর গান শুনে থেমে গেলো। শুভ্র হাত দিয়ে ইশারা করে স্মাইল বললো। রোজ আবার হেসে দিলো।”
🎶হাসতি রাহে তু হাসতি রাহে🎶
🎶হায়া কি লালি খিলতি রাহে🎶
🎶জুলফে কে নিচে গার্দান পে🎶
🎶সুবহা ও শাম মিলতি রাহে🎶
🎶সদেসী হাসি তেরী, খিলতি রাহে মিলতি রাহে🎶
শুভ্র রোজের হাত ধরে ঘুরাচ্ছে। রোজও শুভ্রর গানে সুর দিলো,
🎶ওহহহহ, ওহহহহ, ওহহহহ🎶
🎶হেএএএএএ, হেএএএএএ🎶
শুভ্র মুচকি হেসে এক হাত রোজের কোমরে রেখে গাইলো।”
🎶পিলি ধুপ পেহেনকে তুম🎶
🎶দেখো ভাগ মে মাত জানা🎶
🎶ভাওরে তুমকো সাব সেরেঙে🎶
🎶ফুলো মে মাত জানা🎶
“বাকীটা শুনে নেবেন”
পুরো গানটা গেয়ে শুভ্র রোজকে জড়িয়ে ধরলো। রোজ মুচকি হেসে শুভ্রর বুকে মুখ লুকালো। শুভ্র নেশা ভরা কন্ঠে বললো,
—-” রেড রোজ আজ কি আমরা এক হতে পারি?”
রোজ শুভ্রর আওয়াজে কেঁপে উঠলো। শুভ্র রোজের চোখ চোখ রাখলো। শুভ্রর চোখে রোজ এখন শুধুই নেশা দেখতে পারছে। রোজ লজ্জায় লাল হয়ে বললো।”
—-” হ্যা,
শুভ্র রোজকে কোলে তুলে নিলো। জানালা দিয়ে চাঁদের আলো আসছে। শুভ্র রোজকে বিছানায় নিয়ে রোজের ঠোটে ঠোট ছুঁইয়ে দিলো। রোজ শুভ্রর শার্ট খামচে ধরে আছে। আজকের রাতে ওরা দুজন, দুজনের সাথে মিশে গেলো পুরোপুরি। দুটো আত্নার সাথে দুটো শরীরও মিলেমিশে একাকার হয়ে গেলো। আজকের রাতেই দুজনের ভালবাসা পূর্ণতা পেয়ে গেলো। ওদের এই #ভালবাসার_এক_রাত ওদের জীবন থেকে সব কষ্ট দুরে সরিয়ে ওদের করে তুলবে পৃথিবীর সব থেকে সুখী মানুষ। রোজের জীবন থেকে সেই কালো অতীত চিরকালের জন্য মুছে যাবে। শুভ্র ওর ভালবাসা দিয়ে সেই সব কষ্ট ভুলিয়ে দেবে।”
#চলবে…
#ভালবাসার এক রাত❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ রোজ
#পর্ব- ৩২
সকালে ঘুম ভেঙে রোজ নিজেকে শুভ্রর বুকে আবিষ্কার করলো। রাতের কথা মনে পড়তেই লজ্জায় লাল হয়ে গেলো রোজ। নিজেকে ঠিক করে উঠতে গিয়েও থেমে গেলো। ঘুমন্ত শুভ্রর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মুখটা কি মায়াবী লাগছে। হুমায়ুন আহমেদ স্যার বলে গিয়েছেন। ঘুমালে নাকি মেয়েদের বেশী মায়াবী লাগে। রোজের এখন মনে হচ্ছে তার সাথে এটাও বলা চলে। ঘুমালে ছেলেদেরও বেশী মায়াবী লাগে। বিধাতা যেন সব মায়া এই মুহূর্তে শুভ্রর মুখে ঢেলে দিয়েছে। সিল্কি চুলগুলো কপালে পড়ে আছে। রোজ শুভ্রর থুতনির তিলটাতে হাত বুলিয়ে দিলো। শুভ্রর মুখে খোচা, খোচা দাড়ি। হঠাৎ করেই রোজ তিলটাতে টুপ করে চুমু একে দিলো। এরপর নিজেই হেসে দিলো।”
—-” এভাবে একটা নিরীহ ছেলের ঘুমের সুযোগ নিচ্ছো রেড রোজ? দিস ইজ ভেরী ব্যাড,
চোখ বন্ধ রেখেই বললো শুভ্র। রোজ চোখ বড়, বড় করে বললো।”
—-” আপনি না ঘুমিয়ে ছিলেন?”
—-” ঘুম তো আগেই ভেঙে গিয়েছে। তোমার ঘুম ভাঙার পর আমি চোখ বন্ধ করে ছিলাম। দেখছিলাম তুমি কি করো? আমাকে লুকিয়ে আদর করো কি না,
চোখ খুলে দাত কেলিয়ে বললো শুভ্র। রোজ রাগী লুক নিয়ে বললো।”
—-” আপনি তো ভারী ফাজিল লোক,
শুভ্র একটানে রোজকে নিজের বুকে ফেলে বললো।”
—-” তোমার জন্য সব হতে পারি,
রোজ নিজেকে ছাড়াতে, ছাড়াতে বললো।”
—-” ছাড়ুন শাওয়ার নেবো,
শুভ্র রোজের কপালের চুল সরিয়ে বললো।”
—-” চলো একসাথে শাওয়ার নেই,
—-” নাহহহহহ।”
গোল, গোল চোখ করে বললো রোজ। শুভ্র বুঝতে পারছে রোজ এখন লজ্জা পাচ্ছে। ও চায় না লজ্জা পেয়ে রোজ ওর চোখে, চোখ না মেলাক। তাই রোজের কপালে চুমু দিয়ে বললো,
—-” যাও গিয়ে শাওয়ার নিয়ে নাও।”
রোজ একটা লাল টপস আর জিন্স নিয়ে ওয়াসরুমে গেলো। শুভ্র উঠে ব্যালকনিতে গেলো। এদিকে বাংলাদেশে সবাই বিয়ের তারিখ ফিক্সড করেছে। ডিসেম্বরের ৩০তারিখে ওদের বিয়ে। অর্থাৎ হাতে আর ১৪দিন সময় আছে। শুভ্রর মা চা খেতে, খেতে বললো,
—-” তাহলে মেয়েরা নিজেদের বিয়ে ঠিক করেই ফেললো।”
জারা লজ্জা ভাব নিয়ে বললো,
—-” এভাবে বলো না আন্টি লজ্জা লাগে তো।”
সামির ভ্রু কুঁচকে বললো,
—-” তোদের আবার লজ্জাও আছে?”
রাইসা কোমরে হাত রেখে বললো।”
—-” ওই কি বলতে চাও হ্যা? আমাদের লজ্জা নেই?”
নিরব মুখ বাঁকিয়ে বললো,
—-” বলতে চাইবে কেন? বলছি আছে নাকি লজ্জা?”
তিথি রাগী লুকে বললো।”
—-” এই দেখো একদম রাগাবে না ওকে?”
—-” তোমাদের রাগ আছে আমাদের নেই?”
রিকের কথা শুনে চৈতি কপাল কুঁচকে বললো,
—-” তো কি করবে শুনি?”
রোদ একটা শ্বাস ছেড়ে বললো।”
—-” মেয়েরা এত ঝগড়াটে কেন?”
তনয়া তেড়ে এসে বললো,
—-” এই, এই কি বললে তুমি?”
শারাফ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো।”
—-” ঠিকই বলেছে,
বড়রা হা করে ওদের ঝগড়া দেখছে। সামিরের মা এক ধমক দিয়ে বললো।”
—-” এমন ঝগড়া করিস তোরা? বিয়ের পর না জানি চুল ছেড়াছিড়ি করে আল্লাহ। না আমার মনে হয় এদের বিয়ে ক্যান্সেল করা উচিৎ,
—-” নাহহহ আমরা আর ঝগড়া করবো না।”
সবাই একসাথে বলে উঠলো। শুভ্রর মা শুভ্রকে ফোন দিলো। ফোনের শব্দ শুনে শুভ্র রুমে এসে ফোন রিসিভ করলো,
—-” হ্যা আম্মু কেমন আছো?”
—-” আমি ভাল আছি, তোরা কেমন আছিস?”
তখনি রোজ বেরিয়ে এলো। শুভ্র রোজের দিকে তাকিয়ে বললো।”
—-” আমরাও ভাল আছি,
শুভ্রর মা কাপ রেখে বললো।”
—-” শোন তোরা তাড়াতাড়ি চলে আসিস। ওদের বিয়ে ঠিক হয়েছে ১৪দিন পর,
শুভ্র ভ্রু কুঁচকে বললো।”
—-” ওদের মানে?”
—-” আরে ওদের মানে আর কাদের হবে? বাদরগুলোর বিয়ে একসাথে এক স্টেজে হবে। আগে রোদের বিয়ে ঠিক করেছিলাম। পরে ওনারা বলছে ওনাদের নাকি ইচ্ছে একসাথে বিয়ে করার। তাই সবার সাথে কথা বলে ওদের বিয়ে একসাথে ঠিক করেছি। ৫জোড়া কাপলের বিয়ে ঝামেলা আছে। তোরা তাড়াতাড়ি চলে আসিস,
শুভ্র হা করে থেকে বললো।”
—-” ৫টা বিয়ে একসাথে?”
রোজ চমকে গিয়ে কাছে এসে বললো,
—-” ওদের সবার বিয়ে? ওহ মাই গড শুভ্র বাংলাদেশে যাবো। চলুন না আজই আমরা চলে যাই।”
শুভ্রর মা রোজকে চাইলো। শুভ্র রোজের কাছে ফোন দিলো। শুভ্রর মা হেসে বললো,
—-” আরে পাগলী কিছুদিন থেকে আয়। ওদের বিয়ে ১৪দিন পর। গিয়েছিস কিছুদিন থাক এরপর আসিস।”
রোজ মুচকি হেসে বললো,
—-” ওকে মামনি।”
______________
ব্রেকফাস্ট করে ওরা ঘুরতে বের হলো। ওরা লন্ডনের স্কাই গার্ডেনে গেলো। এখানে এসে রোজ হা করে সব দেখছে। জায়গাটা অনেক বেশী সুন্দর। চারদিকে সব বিদেশী মানুষ। রোডে এক লাইনে সব মাইক্রো গাড়ি সারি বেধে আছে। শুভ্র রোজের হাত ধরে ভিতরে যেতে গেলেই সবাই ছুটে এলো সেলফি নিতে। শুভ্র কয়েকজনের সাথে সেলফি তুলে মুখে মাস্ক পড়ে নিলো। এরপর ওরা শিরি বেয়ে ভেতরে ঢুকলো। ওরা উপরে এসে রেলিং ধরে দাড়ালো। এখান থেকে নিচে তাকালেই শুধু বিল্ডিং দেখা যায়। আর জায়গাটা সম্পূর্ণ স্কাই কালার ধারণ করে আছে। তার জন্যই হয়তো নাম দিয়েছে স্কাই গার্ডেন। ওরা কয়েকটা সেলফি নিয়ে চলে এলো। আরেক শিরি বেয়ে উপরে গেলো। এখানে ছোট, ছোট নানান ধরনের গাছ লাগানো। যার পাতা খুবই চিকন আর লম্বা। গাছগুলো ছড়িয়ে গিয়েছে একেবারে।
এরপর আবার আরেক শিরিতে গেলো। এই শিরির লেফট সাইডে অনেক ধরনের গাছ লাগানো। আর রাইট সাইডে কাচ। রোজ কতক্ষণ হেটে বললো,
—-” শুভ্র পা ব্যথা হয়ে গিয়েছে। চলুন ফিরে যাই।”
শুভ্র রোজকে কোলে নিয়ে উপরে গেলো। রোজ হা করে তাকিয়ে আছে। রোজকে তাকিয়ে থাকতে দেখে শুভ্র বললো,
—-” তোমাকে তো সব দেখাতে নিয়ে এসেছি। এখন না দেখিয়ে চলে যাবো? পরে হয়তো তোমার মনে একটা আফসোস থাকতে পারে। যে ইশশ ওই লাস্ট ফ্লোরে কি ছিলো যদি দেখতে পারতাম। আর আমি চাই না তোমার মনে কোনকিছু নিয়ে আফসোস থাকুক। তাই এটা দেখেই আমরা যাবো।”
রোজ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। শুভ্র রোজকে কোলে নিয়ে এলো। এখান থেকে নিচে তাকালে মানুষগুলো খুব ছোট লাগে। সবটা ঘুরিয়ে দেখিয়ে শুভ্র রোজকে নিয়ে এলো। গাড়ির কাছে এসে রোজকে নামালো। এরপর ওরা হোটেলে ফিরে এলো। হোটেলে ফিরে এসে দুজনে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো,
এদিকে বাংলাদেশে সবাই বাড়ি চলে গিয়েছে। তিথি আর রিকও গ্রামে গিয়েছে। যদিও ওরা এখন শহরে থাকে। কিন্তুু ভেবেছে সবাইকে নিয়ে একসাথে আসবে। যেহেতু ৫টা বিয়ে আর সবাই হাই ক্লাস থেকে বিলং করে। তাই ওদের বিয়ে কমিউনিটি সেন্টারেই হবে। শারাফ থানায় জয়েন করেছে। কারণ এরপর তো আবার ছুটি নিতে হবে। শারাফ একটা কেস ফাইল দেখছিলো। এরমাঝে একজন এসে বললো।”
—-” স্যার আসলাম খাঁন পালিয়েছে,
শারাফ চমকে বসা থেকে উঠে বললো।”
—-” হোয়াট?”
—-” জ্বি স্যার কোর্টে নেওয়ার সময় ও অফিসার রনিতের মাথায় গান ঠেকিয়ে পালিয়েছে। স্যার অনেক চালাক ওই লোকটা। কাঁদছিলো আর বলছিলো অনেক ভুল করেছে। যার জন্য সবার পা ধরে ক্ষমা চাইতে হবে। হঠাৎ সেন্ট্রি পিয়াসের কোমর থেকে গান বের করে রনিত স্যারের মাথায় ধরে পালিয়ে যায়। আমরা খোজ চালাচ্ছি আই হোপ পেয়ে যাবো,
শারাফ একটা বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো। শারাফ রেগে দাতে দাত চেপে বললো।”
—-” শুট হিম, যেখানে পাবে শুট করে দেবে,
—-” ওকে স্যার।”
____________
শারাফ চেয়ারে বসে পড়ে ভাবলো,
—-” আমি কি ঠিক করলাম? হ্যা একদম ঠিক করেছি আমি। ওই লোকটা পালিয়েছে মানে সবার ক্ষতি করতে চায় আবার। আর আমি সেটা হতে দিতে পারিনা। এমন লোকের বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই।”
—-” হু আপনি আমাকে ভালবাসেন না,
রোজের কথা শুনে শুভ্র ভ্রু কুঁচকে বললো।”
—-” কি বললে? আমি তোমাকে ভালবাসি না?”
রোজ ভেংচি কেটে বললো,
—-” না বাসেন না তো। বাসলে কপালে চুমু দিতেন।”
শুভ্র রোজের কাছে গিয়ে বললো,
—-” আসো একটা উম্মাহ দিয়ে ট্রাই করি।”
বলে শুভ্র রোজের কপালে চুমু দিতে গিয়ে ঠোটে দিলো। রোজ রাগী ভাবে বললো,
—-” হারামজাদা এটা কপাল রে?”
শুভ্র দাত কেলিয়ে বললো।”
—-” উপস সরি আসো কপালে দিই,
রোজ মুখ বাঁকিয়ে বললো।”
—-” হুহু, আচ্ছা দেন,
শুভ্র ধপ করে উঠে বসলো। রোজ পাশেই ঘুমাচ্ছে। শুভ্র চোখ ডলে বললো।”
—-” এমন স্বপ্ন আমি দেখলাম? রোজ আমাকে হারামজাদা বলছিলো স্বপ্নে। ইশ এমন উদ্ভট স্বপ্ন আমি দেখলাম কেনো? রোজ কি সত্যি আমাকে বকবে?”
শুভ্র ভাবতে, ভাবতে আবার শুয়ে পড়লো। পরেরদিন ওরা শুভ্রর বাড়ি গেলো। রোজ বাড়ি দেখে হা করে থেকে বললো,
—-” এত বড় বাড়ি আপনার?”
শুভ্র সোফায় বসে বললো।”
—-” খুবই ছোট বাড়ি,
রোজ ঘুরে দেখতে, দেখতে বললো।”
—-” মোটেও না অনেক বড় বাড়ি,
শুভ্র রোজের কাছে এসে বললো।”
—-” চলো রেস্ট করে নাও,
রোজ কপাল কুঁচকে বললো।”
—-” আগে আমি দেখবো,
—-” আগে রেস্ট পরে সব।”
বলে শুভ্র রোজকে নিয়ে গেলো। রেস্ট করে এসে রোজ সবটা ঘুরে দেখলো। এখানে কেয়ারটেকার আছে সার্ভেন্টও আছে। মাঝে একদিন শুভ্রর শো ছিলো। শুভ্র রোজকে এক মুহূর্ত একা রাখেনি। সবসময় সাথে, সাথে ছিলো। এখানে এসেছে ওরা ৭দিন হয়ে গিয়েছে। এই ৭দিন ওরা অনেক জায়গায় ঘুরেছে। আগামীকাল বাংলাদেশে চলে যাবে। কজ আর ৭দিন পরই বিয়ে। রোজ সব প্যাক করছে। শুভ্র ওর পাশে বসে বললো,
—-” এত খুশি কেন?”
রোজ হেসে বললো।”
—-” কাল ব্যাক করছি তাই,
শুভ্র মুচকি হাসলো। সব প্যাক করে শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে বসে রইলো রোজ।”
#চলবে…