#ভালবাসার এক রাত❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ রোজ
#পর্ব- ২৭
১৫দিন পর, এখন সবকিছু ঠিক হয়ে গিয়েছে। সবাই ঠিক করেছে আজকে পিকনিক করবে। সবাই শুভ্রদের বাড়িতে হাজির হয়েছে। ডিসেম্বর মাস চলছে আর এই মাসে তো শীতে অবস্থা খারাপ। সবাই মোটা জ্যাকেট, টুপি পড়ে বসে আছে। রান্নার দায়িত্ব বড়দের দিয়েছে। আর ওরা সবাই ছাদে আগুন জ্বালিয়ে পাশ দিয়ে বসে আছে। জারা বারবার শারাফের দিকে তাকাচ্ছে। ব্যাপারটা শারাফ খেয়াল করে বললো।”
—-” সামির তোর বোনের কি চোখে প্রবলেম?”
সামির কিছু বলার আগে জারাই বললো,
—-” কেন কি করেছে আমার চোখ?”
শারাফ কপাল কুঁচকে বললো।”
—-” এভাবে তাকাচ্ছো কেন আমার দিকে?”
—-” আপনার কি জিএফ আছে?”
জারার প্রশ্নে সবাই হা করে তাকালো। শারাফ চোখ বড়, বড় করে বললো,
—-” সেটা জেনে কি করবে তুমি?”
জারা মুখে লজ্জা ফুটিয়ে বললো।”
—-” বলুন না শারাফ,
—-” এই মেয়ে আমি তোমার বড়। আর তোমার এত পাকামো করতে হবে না। তুমি বাচ্চা আছো বাচ্চাই থাকো।”
শারাফের কথা শুনে জারা ভ্রু কুঁচকে বললো,
—-” আমি কিন্তুু বাচ্চা না। আমাকে আর কখনো বাচ্চা বলবেন না। আপনি জানেন? লন্ডনে আমার বয়সী আমার ফ্রেন্ডদের বিয়ে হয়ে বাচ্চাও আছে। আর আপনি আমাকে বাচ্চা বলছেন? আমার ১৮বছর বুঝেছেন? আজ বিয়ে হলে কালই বাচ্চার মা হয়ে যাবো আমি। বিশ্বাস না হলে আমাকে বিয়ে করে দেখুন।”
জারার কথায় সবার কাশি উঠে গিয়েছে। শারাফ নিজেকে সামলে বললো,
—-” সামির ও এসব কি বলছে?”
রোজ দাত কেলিয়ে বললো।”
—-” ট্রাই করবেন শারাফ ভাইয়া?”
শারাফ যেন এবার কাশতে, কাশতে যক্ষা রোগী পদবি ছিনিয়ে নেবে। কাশি থামিয়ে মিনমিন করে বললো,
—-” রোদ, সামির তোদের বোনদের থামা প্লিজ।”
জারা আর রোজ হেসে দিলো। এরমাঝে রাইসা বলে উঠলো,
—-” আরে বাহ ননদিনী পুরো তার ভাবীর মতো।”
সামির ভ্রু কুঁচকে বললো,
—-” তুমি এসব শিখিয়েছো ওকে?”
রাইসা দাত বের করে বললো।”
—-” হ্যা ননদ তো তার ভাবীর মতোই হবে,
মেয়েরা সব বকবক করছে ছেলেরা চান্স পাচ্ছে না। রাইসা, তিথি, রোজ, জারা, তনয়া, চৈতি কথা বলছে আর হো, হো করে হাসছে। শুভ্র রাগী লুক নিয়ে বললো।”
—-” এই তোমরা থামবে?”
রোজ মুখ বাঁকিয়ে বললো,
—-” আমরা থামবো কেন? আপনাদের ভাল না লাগলে আউট হন হু।”
___________
নিরব কিছু একটা ভেবে বললো,
—-” ওকে তোমরা থাকো আমরা নিচে যাচ্ছি।”
বলে সবাইকে নিয়ে নিচে চলে এলো। রিক কপালে ভাজ ফেলে বললো।”
—-” নিচে নিয়ে এলি কেন?”
—-” এবার আমরা নিচেই মজা করবো। ওই লেডিস বাহিনী আফসোস করবে,
নিরবের কথা শুনে রোদ বললো।”
—-” কিন্তুু আমরা কি করবো?”
নিরব ভাব নিয়ে বললো,
—-” আগুন জ্বালা।”
নিরবের কথামত আগুন জ্বালিয়ে বসলো ওরা। নিরব দাত ৩২টা বের করে বললো,
—-” এবার শুভ্র গান গাইবে।”
শুভ্র হা করে থেকে বললো,
—-” এখন আমি গান গাইবো?”
সবাই একসাথে বললো।”
—-” ইয়েস,
শুভ্র অসহায় ফেস করে বললো।”
—-” এখন না প্লিজ,
নিরব রাগ দেখিয়ে বললো।”
—-” না এখনি মেয়েদের জ্বালাতে হবে,
শুভ্র মুখ বাঁকিয়ে বললো।”
—-” ওকে যা গিটার নিয়ে আয়,
সামির গিয়ে গিটার নিয়ে আসলো। এদিকে মেয়েরা আড্ডা দিচ্ছে রোজ তনয়াকে বললো।”
—-” ভাবী তুমি কিন্তুু আজ থেকে যাবে,
তনয়া আমতা, আমতা করে বললো।”
—-” বাবা চলে যেতে বলেছে,
জারা হেসে বললো।”
—-” নো প্রবলেম ভাবী আমি আর রাইসা ভাবী আছি তো,
চৈতি মুচকি হেসে বললো।”
—-” হ্যা এরাই সামলে নেবে,
তনয়া খুশি হয়ে বললো।”
—-” তাহলে আমার প্রবলেম নেই,
—-” হ্যা হবু বরের সাথে টাইম কাটাতে পারবে।”
তনয়া লজ্জা পেয়ে গেলো তিথির কথায়। সবাই কথা বলার মাঝে শুনলো,
🎶জীবনে কি আছে আর তুমি ছাড়া🎶
🎶যাও যদি দুরে হয়ে যাই দিশেহারা🎶
🎶যাবো না কথা দিলাম তোমায় ছুঁয়ে🎶
🎶সারাদিন সারাক্ষণ পাশে রবো ছায়া হয়ে🎶
রোজ উঠে ছাদের রেলিংয়ের কাছে গেলো। ৪তলা ফ্লাট শুভ্রদের। ৪তলা থেকে নিচে ওদের খুব ছোট দেখাচ্ছে। রোজ দেখলো শুভ্রর হাতে গিটার। গিটার বাজাচ্ছে আর সিল্কি চুলগুলো নড়ছে। ওরা সবাই মিলে নিচে চলে এলো। কারণ ভাল মতো শুনতে পারছে না।”
_____________
🎶হো মানে না মন ভাবে অকারণ🎶
🎶দুরে গেলে বাড়ে জ্বালা🎶
🎶লাগে যে ভয় যদি কিছু হয়🎶
🎶থেমে যায় পথ চলা🎶২
শুভ্র রোজকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে মুচকি হাসলো। আর পুরো গানটা রোজের দিকে তাকিয়ে গাইলো। গান শেষে সবাই হাত তালি দিলো। শারাফ শুভ্রর কাঁধে হাত রেখে বললো,
—-” রিয়েলি রকস্টার তুই। ইসস কি গানের গলা। তোর গান শুনেই মেয়েরা পাগল হয় এবং হবে। আর চেহারা দেখলে তো কথাই নেই।”
রিকের চোখ গেলো মেয়েদের দিকে। রিক নিরবকে ডেকে বললো,
—-” ওই দেখ লেডিস বাহিনী।”
চৈতি নাক ফুলিয়ে হনহন করে সামনে এসে বললো,
—-” তো কি হয়েছে হ্যা? কি করবে তুমি?”
জারা এগিয়ে এসে বললো।”
—-” তুমি না ভাবী বলো তোমরা। তা কি করবে তোমরা?”
শারাফ ভ্রু কুঁচকে বললো,
—-” তোমরা এখানে কি করছো?”
তিথি কোমরে হাত রেখে বললো।”
—-” আপনাদের পা দিয়ে এসেছি আমরা?”
শুভ্র গিটার রেখে বললো,
—-” তোরা ঝগড়া করছিস কেন?”
—-” কি বলতে চাইছেন আপনি? আমরা মেয়েরা ঝগড়া করি হ্যা?”
আঙুল ঝুলিয়ে বললো রোজ। রোদ কপালে হাত দিয়ে বললো।”
—-” কি শুরু করেছিস তোরা?”
—-” এই, এই আমরা কি করলাম? আমাদের মতো ইনোসেন্ট আর পাবে তোমরা?”
তনয়া কপাল কুঁচকে বললো। এবার সব মেয়েরা একসাথে বললো,
—-” ঠ্যাং ভেঙে দেবো।”
ছেলেরা আর না পেরে বললো,
—-” চুপপপপপপপ।”
চোখ বন্ধ করে বললো। চোখ খুলে দেখলো মেয়েরা নেই। ছেলেরা ঠাস করে নিচে বসে পড়লো। রান্না শেষে খাওয়ার সময়ও যুদ্ধ করতে, করতে খেয়েছে। রাতটা গল্প করেই কাটালো সবাই। সকালে সবাই চলে গেলো। তিথি, রিক, রোদ, রোজ শুভ্রদের বাড়িতেই থেকে গেলো। এভাবে আরো কিছুদিন কেটে গেলো। রোজের মাঝে ৩দিন এক টানা পেটে ব্যথা করেছে কিন্তুু রোজ কাউকে বলেনি। শুভ্র একটা শো শেষ করে বাড়ি এলো। রোজের জন্য রোজের ফেবারিট খাবার নিয়ে এসেছে। এসেই রোজের রুমে গেলো। আর গিয়েই থমকে গেলো। হাত থেকে সব খাবার পড়ে গেলো। ধীর পায়ে রোজের সামনে গিয়ে দাড়ালো। রোজ বিছানার মধ্যে পড়ে আছে। একটা হাত বিছানা থেকে নিচে ঝুলছে। আরেক হাতে বিষের বোতল। মুখ দিয়ে রক্ত পড়ছে। শুভ্র হাটু গেড়ে নিচে বসে পড়লো। শুভ্রর গলা যেন কেউ চেপে ধরেছে শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। শুভ্রর মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে ওর মৃত্যু হলে বেশী ভাল হতো। কারণ ওর রেড রোজকে এভাবে দেখার থেকে ওর জন্য মৃত্যু শ্রেয়। শুভ্র কাঁপা হাতে রোজের মুখে হাত রাখলো। অস্ফুট আওয়াজে কোনরকম বললো,
—-” হোয়াই রেড রোজ? কেন করলে এমন?”
#চলবে…
#ভালবাসার এক রাত❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ রোজ
#পর্ব- ২৮
শুভ্র কাঁপা, কাঁপা হাতে রোজের গালে হাত রাখলো। এরপর অস্ফুট আওয়াজে বললো।”
—-” হোয়াই রেড রোজ? কেন করলে এমন? আ্ আমার কথাটা ভাবলে না? সব তো ঠিক ছিলো তাহলে কেন? নাকি আমি তোমার ভালবাসার যোগ্য ছিলাম না? আমি কি নিয়ে থাকবো রেড রোজ? আমি পারবো না থাকতে। তোমার অধিকার নেই এভাবে চলে যাওয়ার। নিজের ক্ষতি করার রোজ। কারণ তোমার জীবন শুধু তোমার না ওকে? ওঠো বলছি রেড রোজ প্লিজ ওঠো। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। বুকে খুব ব্যথা করছে ওঠো প্লিজ। এভাবে কষ্ট দিয়ো না আমাকে আহহহ,
বলতে, বলতে শুভ্র বুক চেপে ধরলো। এখনো এক হাত দিয়ে রোজের হাত ধরে আছে। আরেক হাত বুকে চেপে ধরে আছে। জোড়ে, জোড়ে শ্বাস টানছে শুভ্র। শুভ্রর মুখে আহহ শুনে রোজ উঠে বসলো। উত্তেজিত হয়ে শুভ্রকে ধরে বললো।”
—-” শুভ্র কি হয়েছে আপনার?”
শুভ্র হেসে বুকের ব্যথা নিয়েই রোজকে জড়িয়ে ধরে বললো,
—-” তুমি ঠিক আছো রোজ? আমি জানতাম তুমি আমাকে ছেড়ে যেতে পারো না।”
রোজ ভ্রু কুঁচকে বললো,
—-” ওহহহ তারমানে আপনি আগে থেকেই জানতেন আমি ফান করছি তাই না? তার জন্য আপনিও ফান করছেন।”
শুভ্র বুঝতে না পেরে বললো,
—-” ফান মানে?”
—-” ফান মানে ফান। এটা এমনি মেডিসিনের বোতল। আর বিষ লেখা কাগজ লাগিয়েছি হি হি। দেখছিলাম আপনি কি করেন সরি হ্যা। কি শুভ্র? হয়েছে আমি বললাম তো মজা করছিলাম আমি।”
শুভ্র মুচকি হেসে রোজের বুকেই ঢলে পড়লো। এবার রোজ ভয় পেয়ে গেলো। শুভ্রকে ঝাঁকতে লাগলো,
—-” শু্ শুভ্র কি হয়েছে আপনার? এই শুভ্র প্লিজ এমন মজা করবেন না। আইম সরি আমি আর কখনো এমন করবো না। শুভ্র দেখুন আমি কানে ধরছি প্লিজ উঠে যান। শুভ্র আমি বলছি তো আর এমন করবো না।”
বলতে, বলতে রোজ কেঁদে দিলো,
—-” এই শুভ্র কি হলো আপনার? শুভ্র উঠুন না প্লিজ।”
রোজের কান্না শুনে সবাই চলে এলো। শুভ্রকে এভাবে দেখে সবাই ভয় পেয়ে গেলো। শুভ্রর মা তাড়াতাড়ি গিয়ে শুভ্রকে ধরে বললো,
—-” রোজ কি হয়েছে ওর?”
রোজ কাঁদতে, কাঁদতে বললো।”
—-” আমি জানিনা আমিতো মজা করছিলাম। এরমাঝে উনি আহ করে উঠলো। আমি ভাবলাম হয়তো উনিও মজা করছে। কিন্তুু একটুপরই উনি ঢলে পড়লো। মামনি ওনাকে উঠতে বলো প্লিজ,
রোদ শুভ্রর মা কে বললো।”
—-” মামনি ওর তো সেন্স আসছে না। আমাদের ওকে হসপিটালে নেয়া উচিত। আর ব্ল্যাক রোজ শুভ্রর কিছু হবে না ওকে?”
ওরা সবাই শুভ্রকে হসপিটালে নিয়ে এলো। ডক্টর শুভ্রকে ভেতরে নিয়ে গেলো। এদিকে এটা জার্নালিস্টদের কানে চলে গিয়েছে। টিভিতে ব্রেকিং নিউজ দেখাচ্ছে। রোজ আই সি ইউর বাইরে বসে হাউ, মাউ করে কাঁদছে,
—-” আমার জন্য এটা হলো। আমি কেন ওমন মজা করতে গেলাম? আমি তো জানি শুভ্র আমাকে কতটা ভালবাসে। উনি এটা সহ্য করতে পারবে না কেন ভাবলাম না? আল্লাহ প্লিজ আমার শুভ্রকে সুস্থ করে দাও। আমি আর কখনো এমন করবো না।”
শুভ্রর মা রোজকে ধরে বললো,
—-” এসব কি বলছিস তুই?”
—-” মামনি আমি আসলে।”
এরমাঝে ডক্টর বেরিয়ে এলো। রোজ ডক্টরকে দেখে দৌড়ে গিয়ে বললো,
—-” ডক্টর শুভ্র কেমন আছে? আমি কি ওকে দেখতে পারি?”
ডক্টর একটু চুপ থেকে বললো।”
—-” কি হয়েছিলো বলুন তো? আমি তো ওনাকে চিনি ইনফ্যাক্ট সবাই চেনে রকস্টার। কিন্তুু এটা কি করে হলো? ওনার বয়স তো বেশী না,
রোজ ভয়ে, ভয়ে বললো।”
—-” কি হয়েছে ডক্টর? শুভ্র ঠি্ ঠিক আ্ আছে তো?”
—-” পেশেন্ট মেবি কোন গভীর শকড পেয়েছে। যেটা উনি মানতে পারেনি। হার্ট এ্যাটাক করতে, করতে বেঁচেছে। আপনারা ঠিক সময়ে ওনাকে এনেছেন। নাহলে বড় কোন ক্ষতি হয়ে যেতো। দেখবেন উনি যেন কোন গভীর শকড না পায়। ওনাকে আমরা কেবিনে শিফট করে দিয়েছি। আপনারা চাইলে দেখা করতে পারেন,
রোজ ধপ করে নিচে বসে পড়লো। ওর কানে ডক্টরের বলা কথাগুলো বাজছে। রোজ ভাবতেও পারেনি এমন কিছু হয়ে যাবে। ফুঁপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে। শুভ্রর মা এসে রোজকে উঠিয়ে বললো।”
—-” তুই তোর শুভ্রর কাছে যাবি না?”
—-” কোন মুখে যাবো আমি মামনি?”
শুভ্রর মা অবাক হয়ে বললো,
—-” এসব কি বলছিস তুই?”
রোজ কেঁদে বললো।”
—-” আমার জন্যই তো ওনার এই অবস্থা,
ডক্টর পাশ থেকে বললো।”
—-” রোজ কে? শুভ্র তাকে ডাকছে,
____________
রোজ দৌড়ে কেবিনে চলে গেলো। শুভ্র বেডে শুয়ে আছে। হাতে ক্যানেলা পড়ানো স্যালাইন চলছে। মুখটা শুকিয়ে গিয়েছে এইটুকু টাইমে। রোজ মুখ চেপে ধরে কেঁদে দিলো।”
—-” কাঁদতে বারণ করেছি না?”
রোজ হ্যাং হয়ে দাড়িয়ে আছে। আজকে ওর জন্য শুভ্রর এই অবস্থা। আর সেই শুভ্র এখনো ওর কান্না নিয়ে ভাবছে? এই ব্যাপারটা ভাবতেই রোজের শরীরের লোম দাড়িয়ে গেলো। কেউ কাউকে এতটা ভালবাসতে পারে কি করে? রোজ গিয়ে শুভ্রর বুকে আচরে পড়ে বললো,
—-” শুভ্র আপনি এত ভাল কেন? কি করে পারেন এত ভালবাসতে? এই সব কি স্বপ্ন শুভ্র? আমি সত্যিই এতটা লাকি? আমার জন্য আপনার এরকম অবস্থা হলো। আর আপনি এখনো আমার সামান্য কান্না নিয়ে ভাবছেন?”
—-” তোমাকে নিয়ে ভাববো না তো কাকে নিয়ে ভাববো? আর তোমার কান্না তোমার কাছে সামান্য হতে পারে আমার কাছে না। ঠিক যত ফোটা কান্নার পানি তোমার চোখ থেকে ঝড়ে পড়ে। ঠিক তত ফোটা রক্তক্ষরণ আমার বুকে হয়। তোমার কান্না আমি সহ্য করতে পারিনা। আমার বুকটা মনে হয় ভেঙে চুরে যাচ্ছে।”
রোজ স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। কোনভাবেই নিজের কান্না আটকাতে পারলো না। কেঁদে দিয়েই বললো,
—-” শুভ্র আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমি বুঝতে পারিনি এমন হবে। আমি তো মজা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তুু আমার মজাকে সিরিয়াসলি নিয়ে যে আপনার এমন হবে ভাবতেও পারিনি। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দিন।”
শুভ্র কিছু বলবে তখন ডক্টর এসে বললো,
—-” কি মিস্টার এখন কেমন লাগছে?”
শুভ্র মুচকি হেসে বললো।”
—-” ভাল ডক্টর,
ডক্টর রোজের দিকে তাকিয়ে বললো।”
—-” মিস্টার শুভ্র এই নাকি সেই রোজ? যার কথা আপনি সবার সামনে বলেছিলেন,
রোজ মাথা নিচু করে রইলো। শুভ্র ব্লাশিং হয়ে বললো।”
—-” ইয়েস ডক্টর এই আমার রেড রোজ। আমার জীবনের অংশ না আমার পুরো জীবন,
ডক্টর হেসে দিয়ে বললো।”
—-” আই উইশ আপনারা অনেক সুখী হোন,
পরেরদিন শুভ্রকে বাড়ি নিয়ে এলো। তার কতক্ষণ পরই সবাই এলো শুভ্রকে দেখতে। সবার হাত ফল, ফ্রুট দিয়ে ভর্তি। শুভ্র সবাইকে এভাবে দেখে ভ্রু কুঁচকে বললো।”
—-” তোরা এসব নিয়ে এভাবে?”
শারাফ শুভ্রর পাশে বসে বললো,
—-” আরে আমরা শুনলাম তুই সিক।”
শুভ্র কপাল চাপড়ে বললো,
—-” হায় রে ছিলাম এখন ঠিক আছি। পেশেন্টদের খাবার নিয়ে এসেছিস কেন?”
নিরব মিনমিন করে বললো।”
—-” তুই তো পেশেন্টই,
শুভ্র নিরবকে গাট্টা মেরে বললো।”
—-” শালা তোর আমাকে কোনদিক দিয়ে পেশেন্ট লাগছে?”
নিরব দাত কেলিয়ে বললো,
—-” আমি না তুই আমার শালা তোর শালা রোদ। আর সবদিক দিয়েই তোকে পেশেন্ট লাগছে।”
তিথি রাগী লুক নিয়ে বললো,
—-” এই তুমি আমার জিজুকে পেশেন্ট বলছো কেন?”
শুভ্র ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললো।”
—-” ওই কে তোর জিজু?”
তিথি দাত বের করে বললো,
—-” তুমি আমার জিজু। রোজ আমার বোন আর তুমি রোজকে বিয়ে করছো। সো সেই হিসেবে তুমি জিজু।”
—-” তাহলে তো রোজ তোর ভাবী। কজ আমিও তো তোর ভাই,
শুভ্রর কথা শুনে সবাই হেসে দিলো। সবাই গল্প জুড়ে দিয়েছে। সামিরের মা এসে সামিরকে বললো।”
—-” তোরা ওকে দেখতে এসেছিস নাকি গল্প করতে?”
জারা হেসে বললো,
—-” মা তোমরাও চাইলে গল্প করতে পারো।”
জারার মা ভ্রু কুঁচকে বললো,
—-” আমরা গল্প করবো তোদের সাথে?”
সামির মুখ কাঁচুমাচু করে বললো।”
—-” কামঅন মা আমাদের সাথে গল্প করা যায় না?”
শুভ্রর মা এসেছিলো কিছু বলতে। সবার গল্প করার স্টাইল দেখে উনি চলে গেলো। ওনার পিছনে সামির আর জারার মা ও চলে গেলো। গল্প করতে, করতে দুপুর হয়ে গিয়েছে। কিন্তুু এদের গল্প এখনো শেষ হয়নি। এতকিছুর মাঝে শুভ্র রোজের সাথে কথা বলছে না। রোজ বুঝতে পারছে শুভ্র রেগে আছে। তাই রোজ এখন কিছু বলছে না। ভাবলো সবাই যাক তারপর শুভ্রর রাগ ভাঙাবে। ওরা সবাই বিকেলে চলে গেলো,
_____________
শুভ্র রুমে বসে আছে তখন রোজ এলো। শুভ্র রোজকে দেখে কম্বল মুরি দিয়ে শুয়ে পড়লো। রোজ গিয়ে শুভ্রর পাশে বসে বললো।”
—-” কথা বলবেন না আমার সাথে?”
শুভ্র কম্বলের ভিতর থেকে বললো,
—-” আমি এখন কারো সাথে কথা বলবো না।”
—-” কিন্তুু আমি তো আপনার সাথে কথা বলতে এসেছি,
শুভ্র উঠে বসে বললো।”
—-” কি কথা?”
রোজ কানে ধরে বললো,
—-” সরি শুভ্র।”
শুভ্র একটা বড় শ্বাস ছেড়ে বললো,
—-” একটু একা থাকতে চাই। তবে হ্যা যদি তুমি চাও।”
রোজ মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো। রোজ যেতেই শুভ্র বললো,
—-” আমি পারবো না রেড রোজ। কারণ আমার সেই ক্ষমতাই নেই। আমার ক্ষমতা নেই তোমার সাথে কথা না বলে থাকার। তুমি এখানে থাকলে ঠিকই আমি তোমার সাথে কথা বলে ফেলতাম। তারমানে এই না যে আমি তোমার সাথে কথা বলবো না। কথা তো আমার বলতেই হবে। তবে সেটা একটু দেরীতে। তোমার বুঝতে হবে ওরকম মজা আর করা যাবে না। আমি কষ্ট পেয়েছি বা আমার হার্ট এ্যাটাক হতে গিয়েছিলো সেটা নিয়ে আমার কষ্ট নেই। আমি শুধু চাই তুমি আর এমন না করো কখনো।”
রোজ রুমে এসে বসে আছে। রোজ জানে শুভ্র ওর সাথে কথা না বলে থাকতে পারবে না। তাই রোজ এটা নিয়ে আপাতত ভাবছে না,
পরেরদিন সকালে চেঁচামেচি শুনে রোজ-শুভ্রর ঘুম ভাঙলো। নিচে গিয়ে দুজনেরই চোখ চরকগাছ। কারণ ওদের ফ্রেন্ডরা চেঁচামেচি করছে। এদিক থেকে ওদিক দৌড়াদৌড়ি করছে। শারাফ আর জারা ঝগড়া করছে। শুভ্র নিচে এসে বললো।”
—-” তোরা এত সকালে এখানে?”
শুভ্রর মা এসে বললো,
—-” আমি ওদের আসতে বলেছি।”
শুভ্র ভ্রু কুঁচকে বললো,
—-” কেন?”
শুভ্রর মা রোজের কাছে গিয়ে বললো।”
—-” তোর আর রোজের বিয়ের ডেট ফিক্সড হয়ে গিয়েছে। ১সপ্তাহ পরই তোদের বিয়ে। তাই আজই আমরা কমিউনিটি সেন্টারে যাবো। আর ৭দিন ধরেই তোরা আনন্দ করবি। রং খেলা থেকে শুরু করে সব হবে। তাই ওদের আসতে বলেছি,
রোজ মুখ ছোট করে বললো।”
—-” কিন্তুু আমি যে ভেবেছিলাম। আমাদের সবার বিয়ে একসাথে হবে,
সামিরের মা রোজের কাছে এসে বললো।”
—-” রোদ আর শুভ্র ছাড়া কেউই এখনো কিছু করে না। সকলেই বাবার হোটেলে খাচ্ছে। রোদের বিয়ে এখন দেয়া যেতো কিন্তুু তনয়ার বাবা দেশের বাহিরে,
হুট করে জারা বললো।”
—-” কিন্তুু মা শারাফ তো পুলিশে আছে। তো ওর সাথে তো এখন তোমরা আমার বিয়ে দিতে পারো,
সবাই হা করে তাকিয়ে আছে। শারাফ গোল, গোল চোখ করে বললো।”
—-” এই মেয়ে আমি কি বলেছি আমি তোমাকে বিয়ে করবো?”
—-” আপনার বলতে হবে না আমি বুঝি তো নাকি?”
দাত কেলিয়ে বললো জারা। জারার মা এক ধমক দেয়ায় জারা চুপ হয়ে গেলো। রোজ আর শুভ্র গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এলো। এরপর ওরা সবাই বেরিয়ে পড়লো কমিউনিটি সেন্টারের উদ্দেশ্যে। শুভ্রর মা সবাইকে বলে দিয়েছে আজই চলে আসতে। ওরা গিয়ে পৌছানোর পরই সবাই আসতে শুরু করলো। সবাই গিয়ে আগে রুম ঠিক করলো কে কোনটায় থাকবে। এরপর সবাই রেস্ট করে নিলো। সব বড়, বড় বিজনেসম্যান, অভিনেতা, অভিনেত্রী, শিল্পীদের ইনভাইট করেছে শুভ্র,
রাত ১১টা বাজতে চললো। শুভ্র সারাদিনেও রোজের সাথে কথা বলেনি। রোজ শুভ্রর রুমে চলে এলো। শুভ্র ভ্রু কুঁচকে বললো।”
—-” কি চাই?”
রোজ হঠাৎ ফুঁপিয়ে কেঁদে দিলো। ব্যাস আর কি লাগে? শুভ্র গিয়ে রোজকে জড়িয়ে ধরে বললো,
—-” হেই রেড রোজ ডোন্ট ক্রাই। দেখো আমি বারণ করেছি না কাঁদতে?”
—-” তাহলে আপনি কথা বলেন না কেন?”
কেঁদে বললো রোজ। শুভ্র রোজের চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো।”
—-” ওকে আই এম সরি আর হবে না এমন। এবার হাসো একটু হাসো না,
রোজ ফিক করে হেসে দিলো। শুভ্র রোজকে ব্যালকনিতে নিয়ে এলো। আকাশে থালার মতো একটা চাঁদ উঠেছে। শুভ্র রোজের গালে হাত রেখে বললো।”
তুমি হাসলে আমার ঠোটে হাসি,
তুমি আসলে জোনাকি রাশি, রাশি।”
রাখি আগলে তোমায় অনুরাগে,
বলো কিভাবে বোঝাই বড্ড ভালবাসি?
রোজ শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে বললো,
—-” বোঝাতে হবে না আমি জানি।”
দুজনে ব্যালকনির দোলনায় বসলো। রোজের মাথা শুভ্রর কাঁধে। দুজনে একটা চাদরের নিচে হাত ধরে বসে আছে। চাঁদ, তারাও যেন আজ ওদের থেকে হিংসা করছে,
#চলবে…