ভালবাসার এক রাত পর্ব-২৫+২৬

0
1466

#ভালবাসার এক রাত❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ রোজ
#পর্ব- ২৫

শুভ্র গাড়িতে বসে আছে ড্রাইভার ড্রাইভ করছে। শুভ্র ড্রাইভারের পাশের সিটে বসা। পিছনের সিটে রোদ, রিক, নিরব আর সামির। নিরবতা ভেদ করে নিরব বলে উঠলো।”

—-” শুভ্র তুই তো আজকে মেয়েদের মন ভেঙে দিলি,

শুভ্র ভ্রু কুঁচকে বললো।”

—-” কেন আমি কি করলাম?”

এবার রিক বললো,

—-” তুই তোর ভালবাসার প্রকাশ যেভাবে করলি। আমি সিওর সবাই স্তব্ধ হয়েছে। আর তোর মেয়ে ফ্যানসরা কেঁদেছে কি বলিস নিরব?”

নিরব দাত কেলিয়ে বললো।”

—-” একদম ঠিক,

—-” সত্যি কেউ কাউকে এত ভালবাসতে পারে সেটা আমি শুভ্রকে না দেখলে বুঝতাম না। আর ওর ভালবাসা প্রকাশ করাটাও অন্যরকম। সবার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। আমাদের রোজ কিন্তুু ভীষণ লাকি।”

সামিরের কথা শেষ হতেই শুভ্র বললো,

—-” লাকি তো আমি রোজকে পেয়ে। রোজ আমাকে কতটা ভালবাসে সেটা তোরাও জানিস। আমার জন্য কি করেনি ও? আঘাত পর্যন্ত সহ্য করেছে। তবুও আমাকে ভুলে যায়নি কখনো। ও যা জানতো ওর জায়গায় আর কেউ থাকলে আমাকে ঘৃণা করতো। কিন্তুু ও আমাকে ভালবেসেছে বলে ঘৃণা করেনি। আর বলেছে যাকে ভালবাসি তাকে ঘৃণা করতে পারবো না। হা রেগে হয়তো বলেছে আমাকে ভালবাসে না। কখনো কিন্তুু বলেনি যে আমাকে ঘৃনা করে। দ্যাটস হোয়াই আই এম লাকি যে আমি এমন একজনকে পেয়েছি।”

রিক হেসে বললো,

—-” তোরা দুজনি দুজনকে পাগলের মতো ভালবাসিস। আর তোদের মতো কেউ কাউকে ভালবাসতে পারবে বলে আমার মনে হয় না। দুজন দুজনের জন্য সব করতে পারিস। দুজনের ভালবাসা প্রকাশের ওয়েটা ভিন্ন। আর আজকে তোর কথা শুনে তো আমিই স্তব্ধ হয়ে গিয়েছি। সবাইকে কিভাবে বুঝিয়ে দিলি তুই রোজকে কতটা ভালবাসিস। হ্যাটস অফ ইউ শুভ্র।”

শুভ্র মুচকি হেসে চুপ করে রইলো। সামির রোদকে গাট্টা মেরে বললো,

—-” তুই কিছু বলছিস না কেন?”

রোদ ভ্রু কুঁচকে বললো।”

—-” আমি আর কি বলবো? রোজ আমার বোন আর আমি ভাই হয়ে এখন এসব নিয়ে কি বলবো?”

রিক রোদের চুল টেনে বললো,

—-” রোজ তোর বোন আর আমার কি?”

রোদ মিনমিন করে বললো।”

—-” না মানে আমি বলতে চাইছি,

এরমাঝে নিরব রোদের নাক টেনে বললো।”

—-” হ্যা বল কি বলবি? গোলাপ তোর বোন আর আমাদের কি?”

সামির রোদের গাল টেনে বললো,

—-” কি হলো বাবু? তুমি কিছু বলতে পারছো না?”

রোদ দাত কিড়মিড় করে বললো।”

—-” চুপ কর ফাজিলের দল। শুভ্র ব্ল্যাক রোজকে আর ব্ল্যাক রোজ শুভ্রকে অনেক ভালবাসে শান্তি?”

সবাই একসাথে বলে উঠলো,

—-” অনেক শান্তি।”

এরমাঝে শুভ্রর ফোনে কল এলো। শুভ্র কল রিসিভ করতেই কেউ বললো,

—-” স্যার ওনাদের কি নিয়ে আসবো?”

শুভ্র একটু চুপ থেকে বললো।”

—-” হ্যা আগামীকাল নিয়ে এসো,

বলে ফোন রেখে দিলো। সামির কপাল কুঁচকে বললো।”

—-” কি নিয়ে আসবে?”

শুভ্র একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,

—-” সামির আমি জানি তুই অনেক স্ট্রং। তোর বাবা যা করেছে তার শাস্তি এবার উনি পাবে। ওনার জন্য শাস্তি যতটুকু দিয়েছি সেটা খুবই কম। এবার ওনার উপযুক্ত শাস্তি উনি পাবে। তোর সাথে করা অন্যায়ের শাস্তি। চাচীর সাথে করা অন্যায়ের শাস্তি। আর আমার রেড রোজের সাথে করা অন্যায়ের শাস্তি। চরম শাস্তি পেতে চলেছে ওই লোকটা। কাল যা হবে তার জন্য তৈরি থাক তুই। কালকে ভয়ংকর কিছু হতে চলেছে। অনেক রহস্য ফাঁস হতে চলেছে। অনেক সত্য বের হতে চলেছে। সো বি রেডি মাই বেস্ট ফ্রেন্ড ওকে?”

সামির মাথা নেড়ে হ্যা বললো। গাড়ি চলছে আপন গতিতে। ওরা ১১টায় বাড়ি এসে পৌছালো। ওরা সবাই একসাথে বাড়িতে ঢুকলো। রোজ শুভ্রকে দেখার সাথে এক দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো। সবাই হা করে তাকিয়ে আছে। শুভ্র নিজেও অবাক হয়ে গিয়েছে হঠাৎ এমন হওয়ায়। তবুও মুচকি হেসে রোজকে জড়িয়ে ধরে বললো।”

—-” আরে বাহ আজ এত ভালবাসা?”

রোজ ফুঁপিয়ে কেঁদে বললো,

—-” আই এম সরি শুভ্র আমি আপনাকে ভুল বুঝেছিলাম। আমি সত্যিই বুঝতে পারিনি আপনি আমাকে এত ভালবাসেন। আজ মনে হচ্ছে আমি আপনার ভালবাসার যোগ্য তো?”

শুভ্র রোজকে বুক থেকে তুলে বললো।”

—-” এসব কি বলছো তুমি? আমার ভালবাসা শুধু তোমার জন্য। আর এসব কি? কাঁদছো কেন তুমি? তুমি জানো না তোমার কান্না আমার সহ্য হয় না? ঠিক এখানে লাগে,

বুকের বাম পাশ দেখিয়ে বললো শুভ্র। রোজ মুচকি হেসে তাকাতেই নিরব আর রিককে দেখলো। রোজ অবাক হয়ে বললো।”

—-” রিক ভাইয়া, নিরব ভাইয়া তোমরা?”

দুজনেই মুখটা কাঁচুমাচু করে বললো,

—-” বরকে এভাবে জড়িয়ে ধরলে আমাদের কি করে দেখবে?”

রোজ লজ্জা পেয়ে গেলো। সামির দাত কেলিয়ে বললো।”

—-” ওরে লজ্জাবতী,

রোজ গাল ফুলিয়ে বললো।”

—-” সামির ভাইয়া চুপ করো,

____________

সামিরের মা এগিয়ে এসে বললো।”

—-” এই তুই ওকে রাগাচ্ছিস কেন?”

রোজ ভেংচি কেটে বললো,

—-” ওদেরকে বলো তো আন্টি।”

সামির মিনমিন করে বললো,

—-” আমি কখন রাগালাম?”

কথার ঝুড়ি খুলে বসেছে সবাই। শুভ্র কপালে ভাজ ফেলে বললো।”

—-” ওকে রাত অনেক হয়েছে সবাই ডিনার করে ঘুমাও,

সবাই গিয়ে ডিনার করে নিলো। এরপর ঘুমাতে গেলো। রাতে নিরব আর রিক এখানেই থাকলো। পরেরদিন সকালে সবাই ব্রেকফাস্ট করছে এরমাঝে শুভ্রকে আসলাম খাঁন ফোন করলো। শুভ্র ফোন রিসিভ করতেই শুনলো।”

—-” তোকে কি বলবো? এস আর নাকি এ সি এস কোনটা? কারণ অনেকে তো জানেই না তোর এ সি এস এর মানে? তবে সে যাইহোক তুই এস আর হোস বা এ সি এস। তোর খেলা তো এবার আমিই শেষ করবো। শুভ্র, শুভ্র তোর খেলা তো শেষ। আমি তোর বাড়িতে যাচ্ছি। তোর বাবা, মা কে শেষ করতে। আর তুই কিছু করতে পারবি না,

শুভ্র হেসে বললো।”

—-” যা আমিও আসছি। তোর সব খেলা আজকেই আমি শেষ করবো। আর আরো একটা প্রমিস তোকে আমি করছি,

আসলাম খাঁন কপাল কুচকে বললো।”

—-” কি প্রমিস?”

—-” তুই আজকে সন্ধ্যার মধ্যে জেলে থাকবি,

বলে শুভ্র ফোন রেখে দিলো। সবাই খাওয়া বন্ধ করে বললো।”

—-” আসলাম খাঁন নাকি?”

শুভ্র খেতে, খেতে বললো,

—-” হ্যা বলছিলো আমাকে কি বলবে এস আর নাকি এ সি এস? বুঝলাম না এই লোক এ সি এস কোথা থেকে জানলো? এটা তো শুধু আমার রিলেটিভরা জানে।”

নিরব কপাল কুঁচকে বললো,

—-” এই এ সি এস মানে কি? হ্যা বুঝলাম সি তে চৌধুরী এস এ শুভ্র কিন্তুু এ তে কি?”

সামির ভাবুক ভাবে বললো।”

—-” ওহহহ এস আর মানে শুভ্র, রোজ রাইট?”

শুভ্র মুচকি হেসে বললো,

—-” হ্যা।”

নিরব মুখ কাঁচুমাচু করে বললো,

—-” সেটা বুঝলাম তাহলে এ সি এস মানে কি?”

নিরব আর সামিরের জোড়াজুড়ির জন্য শুভ্র বলতে বাধ্য হলো। ওরা দুজন চোখ বড়, বড় করে বললো।”

—-” তোর আরো একটা নাম আছে? আর আমরা জানিই না কি অদ্ভুত,

শুভ্র একটা লম্বা শ্বাস ছেড়ে বললো।”

—-” এই নামটা বড় আম্মু রেখেছিলো। সবাই শুভ্র বললেও বড় আম্মু নাকি এটাই বলতো। বড় আম্মু মারা যাওয়ার পর আর কেউ বলেনি। তাই এই নাম নিয়ে কথাও হয়নি কখনো। তবে হ্যা আমি মনে রেখেছি যে আমার এই নামটাও আছে,

সামির একটু চুপ থেকে বললো।”

—-” ওই লোক কি শুধু এটাই বলেছে?”

শুভ্র ডিম মুখে নিয়ে বললো,

—-” না উনি আমার বাবাই, আম্মুকে মারতে যাচ্ছে।”

সবাই চমকে গিয়ে বললো,

—-” তাহলে তুই এত রিল্যাক্স আছিস কি করে?”

—-” কজ উনি কিছুই করতে পারবে না। ওনাকে চাইলে রাস্তায় আটকে ফেলতে পারি। কিন্তুু আমি এমন কিছুই করবো না। উনি আমাদের বাড়ি যেতে পারছে কারণ আমি যেতে দিচ্ছি। ওখানেই আমি ওনার পোল খুলবো বুঝলি? আর আমি যদি খুব ভুল না হই তাহলে আঙ্কেল আর মামনির এক্সিডেন্ট উনিই করিয়েছে।”

রোদ শকড হয়ে বললো,

—-” কি বলছিস শুভ্র?”

শুভ্র একটু ভেবে বললো।”

—-” আমার মনে হচ্ছে,

রোদ রেগে চেঁচিয়ে বললো।”

—-” খোদার কসম যদি এমন হয় তাহলে আমি ওকে খুন করে ফেলবো,

শুভ্র রোদের কাঁধে হাত রেখে বললো।”

—-” রিল্যাক্স রোদ উত্তেজিত হবি না ওকে? আমাদের এখন আমাদের বাড়ি যেতে হবে। তোরা সবাই চল চাচী তোমাকেও যেতে হবে। কারণ এমন অনেক সত্যি আছে যা তুমি জানো না,

সামিরের মা খানিকটা অবাক হয়ে বললো।”

—-” কি সত্যি?”

—-” তুমি চলো চাচী তাহলেই জানতে পারবে,

সামিরের মায়ের মনটা খচখচ করছে।”

—-” ঠিক আছে চলো,

____________

ওরা সবাই বেরিয়ে গেলো গাড়ি নিয়ে। এদিকে আসলাম খাঁনও এসে শুভ্রদের বাড়ি পৌছালো। আসলাম খাঁনকে দেখেই শুভ্রর বাবা বললো।”

—-” তুই এখানে?”

আসলাম খাঁন গিয়েই সোফায় বসে বললো,

—-” হ্যা চলে এলাম তোদের দেখতে। তা ভাবী কোথায়? ভাবীকে ডাক এতদিন পর এলাম নাস্তা, পানি দে। কি রে সাহেল ডাক ভাবীকে।”

শুভ্রর বাবা রেগে বললো,

—-” বেরিয়ে যা এখান থেকে।”

আসলাম খাঁন মুখ কালো করে বললো,

—-” আমি না তোর বেস্ট ফ্রেন্ড? বেস্ট ফ্রেন্ডের সাথে কেউ এমন করে?”

শুভ্রর বাবা তাচ্ছিল্য হেসে বললো।”

—-” কে কার বেস্ট ফ্রেন্ড? তোর তো মানুষ হওয়ার যোগ্যতা নেই। তুই সেদিনও খারাপ ছিলি আজও খারাপ আছিস

আসলাম খাঁন এবার চিৎকার করে বললো।”

—-” হ্যা, হ্যা আমি খারাপ। আর আজ এই খারাপ মানুষটা তোদের মেরে ফেলবে সাহেল। তোর ছেলের জন্য এটাই হবে শাস্তি। আমার সাথে টক্কর দিয়েছে ও। আমার কোলে কত থেকেছে আর আজ ও আমার সাথে গেম খেলছে। আমাকে রাস্তায় নামানোর পরিকল্পনা করছে। তাই তোদেরকে মারতে আমি এখানে এসেছি। তবে হাজার হোক তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলি তো। আর বেস্ট ফ্রেন্ডকে তো আর নিজের হাতে মারতে পারবো না তাই না? তাই এই দলবল নিয়ে এসেছি। ওরাই তোদের মারবে,

—-” তারআগে আমি তোকে মারবো।”

শুভ্রর ভয়েস শুনে দুজনেই তাকালো। শুভ্রর মা শিরিতে ছিলো। শুভ্রকে দেখে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বললো,

—-” কেমন আছিস তুই বাবা?”

শুভ্র হালকা হেসে বললো।”

—-” আমি ভাল আছি মা। আর চিন্তা করো না তোমাদের কিছু হবে না,

আসলাম খাঁন শয়তানি হেসে বললো।”

—-” বাহ তোরাও চলে এসেছিস? ভালোই হলো এবার সবাইকে একসাথে মারবো। তবে সবার আগে মারবো এই রকস্টারকে। আগামীকাল ব্রেকিং নিউজ হবে। খবরের কাগজের প্রথম পাতায় লেখা থাকবে। রকস্টার শুভ্র এবং তার পরিবার নৃশংস ভাবে খুন হলো। ইস কি দুঃখ যে লাগছে,

সামির চেঁচিয়ে বললো।”

—-” তুমি এত খারাপ কি করে হতে পারো?”

—-” তুই চিন্তা করিস না তোকে জানে মারবো না। শত হলেও তুই আমার ছেলে। যাইহোক এখন আগে শুভ্রকে মেরে নেই। বয়েজ দাড়িয়ে না থেকে যাও। রকস্টারকে জামাই আদর দিয়ে বিদায় করে দাও পৃথিবী থেকে,

গার্ডরা দাড়িয়ে আছে দেখে আসলাম খাঁন বললো।”

—-” কি হলো যাও ওকে শেষ করো,

গার্ডরা তবুও দাড়িয়ে আছে। আসলাম খাঁন এবার রেগে বললো।”

—-” আপনারা এভাবে দাড়িয়ে থাকবেন? আপনাদের টাকা কেন দিয়েছি আমি? যান গিয়ে রকস্টারের খাতির, দারী করুন,

গার্ডরা এখনো দাড়িয়ে আছে। শুভ্র জোড়ে হেসে বললো।”

—-” কি হলো তোর কথা শুনছে না? শুনবেও না কজ তুই আর ওদের কত টাকা দিয়েছিস? তার থেকে তিন গুন বেশী টাকা দিয়ে ওদের আমি কিনেছি। তুই যত বড় বিজনেসম্যান হোস না কেন? রকস্টার শুভ্র চৌধুরীর ধারের কাছেও আসতে পারবি না। তুই ওদের কেনার পর পরই তোর ডাবল টাকা দিয়ে আমি ওদের কিনেছি। শুভ্র চৌধুরীর পাওয়ার আর সোর্সের ব্যাপারে তোর কোন ধারনা নেই। এবার ওরা সেটাই করবে যেটা আমি বলবো। বিশ্বাস হচ্ছে না? ওকে দ্যান চেক মি। বয়েজ এই আবর্জনাকে ছুড়ে ফেলে দাও,

শুভ্র বলতেই গার্ডরা আসলাম খাঁনের দিকে এগিয়ে গেলো। শুভ্র ওদের থামিয়ে নিজেই এগিয়ে গেলো। আসলাম খাঁনের দিকে হিংস্র দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো।”

—-” আজকের পর তুই একা হয়ে যাবি। তবে তার আগে আমি তোকে মারবো। চাবুকের বারি খেয়েছিস বেল্টের বারিও খা,

বলতে, বলতে শুভ্র নিজের প্যান্ট থেকে বেল্ট খুললো। আসলাম খাঁন ভয়ে পিছনে যাচ্ছে আর শুভ্র এগোচ্ছে। শুভ্র বেল্ট দিয়ে আসলাম খাঁনকে একটা বারি মেরে বললো।”

—-” এটা আমার থেকে রোজকে আলাদা করার জন্য,

আরেক বারি দিয়ে বললো।”

—-” এটা ওকে দিনেরপর দিন আঘাত করার জন্য,

আরেকটা বারি মেরে বললো,

—-” এটা ওকে কাঁদানোর জন্য।”

এবার বারি মারতেই আসলাম খাঁন পড়ে গেলো,

—-” এটা সামিরকে ব্যবহার করার জন্য। চাচীকে ঠকানোর জন্য জানোয়ার।”

শুভ্র একেরপর এক আঘাত করছে। আসলাম খাঁন ছটফট করছে। শুভ্র মারা বন্ধ করে বললো,

—-” এবার তোর সত্যিটা সবাই জানবে। ড্যানি ওনাদের ভেতরে নিয়ে আয়।”

সবার চোখ দরজায়। আসলাম খাঁন রীতিমত ঘামছে। কাঁপা, কাঁপা গলায় বললো,

—-” ওরা এখানে?”

—-” তুই এবার একা হয়ে যাবি। নিজের মৃত্যু নিজে কামনা করবি ছটফট করবি।”

বাঁকা হেসে বললো শুভ্র,

#চলবে…

#ভালবাসার এক রাত❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ রোজ
#পর্ব- ২৬

আসলাম খাঁন দরজার দিকে তাকিয়ে চমকে গেলো। ভয় পেয়ে রীতিমত ঘামছে। কাঁপা, কাঁপা গলায় বলে উঠলো।”

—-” তোমরা এখানে?”

শুভ্র দু হাত ভাজ করে দাড়িয়ে বললো,

—-” হ্যা ওনারা এখানে আমি এনেছি ওনাদের। তোর সব জারি, জুরি ফাঁস হবে আজ। যাইহোক আপনারা ভেতরে আসুন।”

একজন মহিলা আর একটা মেয়ে ভেতরে এলো। মেয়েটা অনেক বেশীই স্মার্ট। মেয়েটা আসলাম খাঁনকে দেখে দৌড়ে কাছে গিয়ে বললো,

—-” ড্যাড হোয়াট হ্যাপেন্ড? তোমার এরকম অবস্থা কেন?”

সবাই যেন আকাশ থেকে পড়লো। সামির ভ্রু কুঁচকে বললো।”

—-” ড্যাড মানে?”

মেয়েটা সামিরের দিকে তাকিয়ে বললো,

—-” ড্যাড মানে ড্যাড। উনি আমার ড্যাড। বাট ড্যাডের এই অবস্থা কেন? তোমরা কি করেছো ওনার সাথে?”

সামিরের মা শুভ্রর দিকে তাকিয়ে বললো।”

—-” শুভ্র কি বলছে এই মেয়েটা? ওরা কারা?”

শুভ্র একটা বড় শ্বাস ছেড়ে বললো,

—-” চাচী এই সেই সত্যি যা তোমরা জানো না। এই লোকটার দ্বিতীয় বউ এবং তার মেয়ে এরা। মেয়েটার নাম জারা খাঁন।”

সামির আর ওর মা থমকে তাকিয়ে আছে। যতই হোক স্বামী এবং বাবা। হঠাৎ করে যদি এমন একটা খবর পায় তাহলে তো থমকে যাবেই। সামিরের মায়ের চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো। উনি কোনরকম নিজেকে সামলে বললো,

—-” তুমি ওদের কোথাথেকে পেলে?”

—-” চাচী তোমরা তো জানোই এই লোকটা প্লান করে আমাকে লন্ডন পাঠিয়েছিলো। আর এটাই হচ্ছে এই লোকের ভুল। উনি কোনদিন এই মহিলা আর এই মেয়েকে কারো সামনে আনতে চায়নি। বিজনেসের কাজ আছে বলে যে উনি লন্ডন যেতো। সেটা আসলে ওনাদের সাথে দেখা করতে যেতো এটাই ভুল। আমি লন্ডন থাকাকালীনও গিয়েছিলো দেখা করতে। আর তখন আমি স্টুডিও থেকে বের হই। ওনার সাথে আমি এদের দেখতে পাই। কেমন একটা খটকা লাগে আমার। মেয়েটা ওনাকে জড়িয়ে ধরছে সবাই সেলফি তুলছে। আমি নিজেকে কাভার করে ওনাদের সামনে যাই। আর শুনতে পাই মেয়েটা ওনাকে ড্যাড বলছে। তখনই বুঝে যাই উনি আবার বিয়ে করেছে তোমাদের না বলে। তবুও শিওর হতে ওখানকার লোকেদের কাছে জানতে চাই ওনারাই সব বলে। আমি ওনাদের ফলো করে ওনাদের বাড়ি পর্যন্ত চলে যাই। আসলাম খাঁন যেদিন বাংলাদেশে চলে এলো। সেদিন আমি জারাদের বাড়ি যাই। এবং ওনাদের কাছে জানতে চাই যে আসলাম খাঁন ওনাদের কি হয়? তখন ওনারা সব সত্যি বলে দেয়। আর আমি যতদুর বুঝেছি এই লোকটার আসল রুপ সম্পর্কে ওনারাও জানেনা।”

শুভ্রর কথা শুনে সামিরের মা ধপ করে সোফায় বসে পড়লো। আর জারার মা চমকে বললো,

—-” হোয়াট আর ইউ সেয়িং? আসল রুপ মানে?”

শুভ্র সামির আর ওর মা কে দেখিয়ে বললো।”

—-” এই যে ওনাদের দেখতে পারছেন? এই মহিলা হচ্ছে এই আসলাম খাঁনের ওয়াইফ। আপনাকে বিয়ে করার আগে ওনাকে বিয়ে করেছে। আর এই ছেলেটা হচ্ছে আসলাম খাঁন এবং চাচীর ছেলে,

___________

জারার মা আর জারা স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। জারা মুহূর্তেই আসলাম খাঁনের কাছ থেকে সরে বললো।”

—-” ড্যাড এসব কি শুনছি? তুমি আমার মম কে ঠকিয়েছো? এর জন্য তুমি এতগুলো বছর আমাদের বাংলাদেশে আনোনি তাই না? আমি কখনো ঘুরতে আসতে চাইলেও আনোনি,

জারার মা ধীর পায়ে আসলাম খাঁনের কাছে এসে বললো।”

—-” এটা কি করে করতে পারো তুমি? তুমি তো শুধু আমাকে ঠকাওনি। সাথে তোমার আরেক বউ আর তোমার ছেলে-মেয়েকেও ঠকিয়েছো। জবাব দাও আসলাম কেন ঠকিয়েছো সবাইকে?”

আসলাম খাঁন চেঁচিয়ে বললো,

—-” হ্যা ঠকিয়েছি বেশ করেছি। শোনো রিমা আমি তোমাদের ঠকাইনি। আমি আমার ছেলে-মেয়েকেও ঠকাইনি। আমার বাংলাদেশের কাজ শেষ হলে সামিরকে নিয়ে লন্ডন চলে যেতাম। তারপর তোমাদের সব সত্যি আমি জানিয়ে দিতাম।”

—-” আর আমার মা?”

শান্ত গলায় বললো সামির। আসলাম খাঁন চোখ, মুখ শক্ত করে বললো,

—-” তোর মা এখানেই থাকতো। তোর মা কে আর আমি ভালবাসি না বুঝেছিস? ব্যাগডেটেড হয়ে গিয়েছে তোর মা। তোদের নিয়ে আমি লন্ডন চলে যাবো।”

—-” আসলাম খাঁন,

চিৎকার করে বললো সামির। রাগে শরীর কাঁপছে সামিরের। রেগে এসেই ঘুষি মেরে দিলো নাক বরাবর। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আসলাম খাঁন নিজেও অবাক হয়ে বললো।”

—-” তুই আমাকে মারলি?”

—-” হ্যা মারলাম তোর মতো জানোয়ারকে অনেক আগেই মারা উচিত ছিলো আমার। তোর সাহস হয় কিভাবে? আমার মা কে ব্যাগডেটেড বলিস তুই? তোর মতো জানোয়ার না আমার মা। তুই এত পাপ করেছিস যে তোর জাহান্নামেও জায়গা হবে না,

আসলাম খাঁন সামিরের কলার ধরে বললো।”

—-” তোর জায়গা হবে? তুই যে তোর বাবার গায়ে হাত তুললি। তোর জায়গা হবে তো?”

সামির কলার ছাড়িয়ে বললো,

—-” আজ আমি আমার বাবার গায়ে না একজন ঘোর পাপীর গায়ে হাত দিয়েছি। এন্ড ট্রাস্ট মি আমার ইচ্ছে করছে তোকে জানে মেরে ফেলতে।”

জারা কেঁদে দিয়ে বললো,

—-” তুমি এটা ঠিক করোনি ড্যাড। তুমি আমাদের সবাইকে ঠকিয়েছো। মম কে ঠকিয়েছো কেন বলো? আমি জানিনা আমার মেয়ে হয়ে কি বলা উচিত।”

শুভ্র রাগী লুকে বললো,

—-” এই লোকটার সব কথা তো আপনারা জানেনই না। ওনার মতো নিকৃষ্ট মানুষ আমার মনে হয় না আর হয়।”

জারার মা শুভ্রর দিকে তাকিয়ে বললো,

—-” সব কথা মানে?”

শুভ্র ওনাদের সব বললো। সব শুনে জারা আর ওর মা দুজনেই রেগে বললো।”

—-” এসব সত্যি? তুমি এত নিচ মানুষ? ছিঃ আমরা ভাবতেও পারছি না। তোমার এই চেহারা এতদিন লুকিয়ে ভাল মানুষ সেজে ছিলে?”

জারার মা একটু থেমে বললো,

—-” তোমাকে ডিভোর্স দিয়ে আমি আমার মেয়েকে নিয়ে আবার লন্ডন চলে যাবো। আর তোমার ছায়াও আমি আমাদের উপর পড়তে দেবো না।”

—-” পড়বেও না কজ এই লোকটা আজকের পর জেলে থাকবে। উনি যা করেছে তারপর ওনার অধিকার নেই এভাবে ঘুরে বেরানোর,

____________

আসলাম খাঁন পাগলের মতো হেসে বললো।”

—-” হ্যা আমি খারাপ খুব খারাপ। আর এতে আমার কোন আফসোস নেই। আমি ২বছর যা করেছি বেশ করেছি। আর শুভ্র, রোদ তোদের বাবারা কি করেছিলো আমার সাথে জানিস? আমাকে জেলে ঢুকিয়েছিলো। আর সামির তোর মা ও সেদিন ওদের সাপোর্ট করেছিলো। সামির তখন তোর বয়স ছিলো ২মাস। তোকে নিয়ে খেলছিলাম আমি। এরমাঝে বাড়িতে পুলিশ এলো। আমি গিয়ে জানতে চাইলাম কেন এসেছে? ওরা বললো আমাকে এ্যারেস্ট করতে আমি চমকে বললাম,

—-” কেন? কি করেছি আমি?”

একজন পুলিশ বললো।”

—-” আপনার নামে মিস্টার আহাদ এবং সাহেল কেস করেছে। তাদের দাবী আপনি অফিসের স্টাফদের ড্রাগস দেন। আর আমরা সিসি টিভি ফুটেজে প্রমাণও পেয়েছি তাই আপনার যেতে হবে,

সামিরের মা এসে বললো।”

—-” অফিসার আপনার কোথাও হয়তো ভুল হচ্ছে,

অফিসার ভিডিওটা সামিরের মা কে দেখালো। যেখানে স্পষ্ট দেখাচ্ছে আসলাম খাঁন কয়েকজনকে ড্রাগস দিচ্ছে। ভিডিওটা দেখে সামিরের মা নিজেকে শক্ত রেখে বললো।”

—-” অফিসার ওনাকে নিয়ে যান। আমি চাই উনি ভাল পথে ফিরে আসুক,

আসলাম খাঁন সবটা বলে চুপ করে রইলো। জারা চেঁচিয়েই বললো।”

—-” ঠিকই তো করেছিলো। তুমি ড্রাগস দিতে কেন সবাইকে?”

—-” আমার আরো টাকার দরকার ছিলো। সবাই চায় তার অনেক টাকা হোক আমিও চেয়েছি। কি এমন ভুল করেছিলাম আমি? ওদের জন্য আমি ২বছর জেলে ছিলাম। আমার ছেলে জানতো আমি বিদেশ ছিলাম। জেল থেকে বের হয়ে প্রমিস করি এর বদলা আমি নেবো। এই মহিলাও সেদিন অফিসারকে বললো আমাকে নিয়ে যেতে। তাই ওর প্রতিও ঘৃণা চলে এলো চরম ঘৃণা। এরপর আমি লন্ডন গিয়ে রিমাকে বিয়ে করি। আর অপেক্ষা করি কবে বদলা নিতে পারবো। অপেক্ষা শেষ হলো ২০বছর পর। বদলা নিতেই আমি এসব করেছি। আহাদ আর ওর ভাবীকে আমি দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিয়েছি। শুভ্রকে লন্ডন পাঠিয়ে দিলাম। কিন্তুু কে জানতো? ও সব জেনে যাবে,

রোজ চমকে বললো।”

—-” আমার বাবাই, আম্মুকে আপনি মেরেছেন?”

—-” হ্যা আমি মেরেছি আমি ওদের এক্সিডেন্ট করিয়েছি,

রোদ দৌড়ে এসে আসলাম খাঁনকে লাথি মারলো। আসলাম খাঁন মুখ থুবড়ে ফ্লোরে গিয়ে পড়লো। রোদ রাগে ফুপাচ্ছে রীতিমত। চোখ থেকে যেন আগুন বের হচ্ছে। আসলাম খাঁনকে মারতে, মারতে বললো।”

—-” জানোয়ার তোকে আমি মেরেই ফেলবো। আমার বাবাই, আম্মুকে কেন খুন করলি তুই? তুই যা করেছিস তার শাস্তি তোকে দিয়েছিলো। আজ তোকে আমার হাত থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না। আমার বোন আর আমাকে এতিম করেছিস তুই। আমার বাবাই, আম্মুকে কেড়ে নিয়েছিস তোকে মেরে ফেলবো আমি। আমার ফুলের মতো বোন যার গায়ে আমরা কেউ ফুলের টোকা দেইনি। সেই বোনকে আঘাত করেছিস। আজ তো তুই শেষ তোকে মেরে যদি জেলে যেতে হয় সেটাও মেনে নেবো আমি,

রোদ কথা বলছে আর মারছে। মারতে, মারতে আধমরা করে ফেলেছে। সবাই ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তুু পারছে না। শুভ্র অনেক কষ্টে রোদকে সরিয়ে ঠাটিয়ে এক চর মেরে বললো।”

—-” এই জানোয়ারকে মেরে জেলে যাবি তুই?”

—-” হ্যা যাবো কিন্তুু ওকে মেরে ফেলবো,

—-” পাগল হয়ে গিয়েছিস তুই রোদ। নিজেকে সামলা তুই ছাড়া রোজের পরিবারে কে আছে? তুই না বললি তোরা এতিম হয়ে গিয়েছিস। এখন তুই জেলে গেলে রোজকে কে সামলাবে? আমি জানি আমি ওকে সামলে নিতে পারবো। কিন্তুু ওর মনে দাগ থেকে যাবে যে ওর মা, বাবাও নেই। আর ওর ভাইয়া থেকেও নেই। রোদ একবার রোজকে দেখ ওর দিকে তাকা।”

শুভ্রর কথায় রোদ রোজের দিকে তাকালো। তাকিয়ে কলিজা কেঁপে উঠলো রোদের। রোজের ঠোটগুলো ভীষণ কাঁপছে। কিন্তুু মেয়েটা আজকে যেন চাইলেও কিছু বলতে পারছে না। রোদ গিয়ে রোজকে বুকের সাথে মিশিয়ে বললো,

—-” ব্ল্যাক রোজ কি বলবি তুই? দেখ বোন আমি ওনাকে মারছি না এভাবে কাঁদে না।”

শুভ্র এগিয়ে এসে বললো,

—-” ও এটাই বলতে চাইছে। যে তুই এই লোকটাকে খুন করে জেলে যাস না। কজ তুই জেলে গেলে ওর কি হবে? তোর বাবাই, আম্মু তো নেই তুইও না থাকলে ও শেষ হয়ে যাবে রাইট রোজ? তুমি এটাই বলতে চাও তো রোদকে?”

রোজ দ্রুত মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললো। রোদ রোজের চোখের পানি মুছে বললো।”

—-” এভাবে কাঁদে না বোন আমি ওনাকে মারবো না। এই জানোয়ারকে মেরে তোকে কষ্ট দেবো না। তবে এমন ব্যবস্থা করবো সারাজীবন ও জেলে থাকবে। শুভ্র তুই কি করে বুঝলি রোজ এটা বলবে?”

_____________

শুভ্র মুচকি হেসে বললো,

—-” যাকে ভালবাসি তার মনের কথা বুঝবো না? আমি ওকে দেখেই বুঝতে পারি ওর মনে কি চলছে।”

এরমাঝে সেখানে পুলিশ এলো। পুলিশ অফিসার একটা ছেলে। এতকিছুর মাঝেও জারার চোখ ছেলেটার উপর আটকে গিয়েছে। শুভ্র ছেলেটার দিকে এগিয়ে এসে বললো,

—-” শারাফ আমি তো তোকে সব বলেছি। এখন এই লোকটাকে নিয়ে যা।”

সামির আর নিরব অবাক হয়ে বললো,

—-” শারাফ তুই?”

শারাফ সামান্য হেসে বললো।”

—-” হ্যা ১সপ্তাহ আগেই এসে এখানে জয়েন হয়েছি। শুভ্র আমি ওনাকে নিয়ে যাচ্ছি। তুই আর রোদ এসে রিপোর্ট লেখে যাবি। এ যাতে সারাজীবন জেলে থাকে সেই ব্যবস্থা হয়ে যাবে,

শারাফ আসলাম খাঁনকে নিয়ে যেতে গেলে জারার দিকে চোখ পড়লো। শারাফ ভ্রু কুঁচকে বললো।”

—-” এটা কে?”

শুভ্র তাচ্ছিল্য হেসে বললো,

—-” ওনার দ্বিতীয় ঘরের মেয়ে।”

শারাফ বেরিয়ে চলে গেলো। জারা দিন দুনিয়া ভুলে ভাবছে,

—-” ওহ মাই গড? বাংলাদেশের ছেলেরাও এত সুন্দর হয়? এখানকার সবাই তো সুন্দর। একেবারে ক্রাশ খেয়ে যাওয়ার মতো চেহারা। রকস্টারকে তো লন্ডন দেখেই ক্রাশ খেয়েছিলাম। কিন্তুু এখন যা মনে হলো রোজ বলে মেয়েটাকে উনি ভালবাসে। আর সামির তো আমার বড় ভাইয়া। তবে এই শারাফকে আমার চাই।”

শুভ্র ওর বাবা, মায়ের কাছে গেলো। শুভ্রর বাবা মুখ ছোট করে বললো,

—-” এখনো রেগে থাকবি?”

শুভ্র ওর বাবাকে জড়িয়ে ধরলো। কতক্ষণ পর শুভ্র বললো।”

—-” বাবাই, আম্মু আমি রোজকে বিয়ে করেছি,

ওনারা অবাক হয়ে বললো।”

—-” কিহহহ কবে?”

শুভ্র ওনাদের সব বললো। সব শুনে শুভ্রর মা রোজকে বুকে জড়িয়ে বললো,

—-” এবার আমি তোদের বিয়ে ধুমধাম করে দেবো। পুরো শহর জানবে তোদের বিয়ের কথা। কি রে নিরব, সামির, রিক তোরা সবাই বিয়ের আয়োজন কর।”

সামির জারার মায়ের কাছে গিয়ে বললো,

—-” আমার মা যেমন কিছু জানতো না। ঠিক তেমন আপনিও কিছু জানতেন না। এখানে দোষ আপনার বা আমার মায়ের না। সব দোষ ওই লোকটার। তাই আপনারা চাইলে এখানে আমাদের বাড়িতে থাকতে পারেন। কারণ ওই বাড়ির উপর আমার আর মায়ের যেমন অধিকার আছে। তেমন আপনার আর জারারও আছে। আর সত্যি এটাই জারা আমার বোন। তাই আমি চাই না আপনারা বঞ্চিত হন।”

জারা সামিরকে ভাইয়া বলে ডাক দিলো। সামির মুচকি হেসে তাকালো। জারার মা সামিরের ব্যবহারে খুব অবাক হলো খুশীও হলো। জারা হেসে বললো,

—-” আমরা এখানেই থাকবো।”

ওদের সব ঝামেলা মিটে গেলো। সবার বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। আর এই শ্বাসের সাথেই সবাই খারাপ অতীত কবর দিয়ে দিলো। এখন ওদের জীবনে শুধুই খুশী থাকবে,

১৫দিন পর।”

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে