18.8 C
New York
Sunday, October 5, 2025

Buy now

spot_img







ভালবাসার এক রাত পর্ব-২৩+২৪

#ভালবাসার এক রাত❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ রোজ
#পর্ব- ২৩

সকালবেলা রোজ, শুভ্র আর রোদ বসে ব্রেকফাস্ট করছে। শুভ্র রিল্যাক্সে বসে খাচ্ছে আর হাসছে। রোজ এই কদিন এভাবে শুভ্রকে হাসতে দেখেনি। শুভ্রকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে ভীষণ খুশী। রোজ কতক্ষণ পর ভ্রু কুঁচকে বললো।”

—-” শুভ্র আপনি হাসছেন কেন?”

শুভ্র ব্রেড মুখে দিয়ে বললো,

—-” কিছুক্ষণ পর নিজেই দেখতে পাবে।”

রোজ চুপচাপ খেতে শুরু করলো। কিন্তুু রোদ শুধু বসেই আছে খাচ্ছে না। মুখটা কালো করে বসে আছে। রোজ বুঝলো ও কথা বলে না বলে রোদের মন খারাপ। রোজ কাশি দিয়ে বলে উঠলো,

—-” শুভ্র এখন ব্রেকফাস্ট টাইম রাইট?”

শুভ্র মাথা নেড়ে হ্যা বললো। রোজ আবার বলতে শুরু করলো।”

—-” তাহলে এখন সবার ব্রেকফাস্ট করতে হবে। কেউ এভাবে চুপচাপ বসে থাকতে পারবে না। আমার কথার নড়চড় হলে আমি কিন্তুু সিডর বইয়ে দেবো হু,

শুভ্র মিটিমিটি হাসছে। রোদ চোখ বড়, বড় করে খেতে শুরু করলো। রোজও মুচকি হেসে আবার খাওয়ায় মন দিলো। খাওয়া শেষে সবাই সোফায় বসলো। এরমাঝে খুব ঘাবড়ে বাড়িতে ঢুকলো আসলাম খাঁন। আসলাম খাঁন এসেই রোজের পা জড়িয়ে ধরলো। হঠাৎ এমন হওয়ায় রোজ আর রোদ চমকে গেলো। আর শুভ্র বাঁকা হেসে সব দেখছে। আসলাম খাঁন রোজের পা ধরে রেখেই বললো।”

—-” মা রে আমাকে ক্ষমা করে দে মা,

রোজ অবাক হয়ে বললো।”

—-” আরে কি করছেন আপনি?”

আসলাম খাঁন পা ধরে রেখে আবার বললো,

—-” তুই বল তুই আমাকে ক্ষমা করেছিস। নাহলে আমি তোর পা ছাড়বো না।”

রোজ নিজের পা ছাড়িয়ে দাড়িয়ে বললো,

—-” আপনার মতো জানোয়ারকে আমি কখনো ক্ষমা করবো না। বেরিয়ে যান এখান থেকে।”

আসলাম খাঁন শুভ্রর কাছে গিয়ে বললো,

—-” আমি তো ক্ষমা চেয়েছি। এবার তুমি তোমার কথা রাখো শুভ্র।”

রোজ কপাল কুঁচকে বললো,

—-” কি কথা রাখবে? কি কথা দিয়েছে শুভ্র?”

আসলাম খাঁন মিনমিন করে বললো।”

—-” সেটা তোর জানতে হবে না,

শুভ্র আসলাম খাঁনের দিকে তাকিয়ে রাগী দৃষ্টিতে বললো।”

—-” উহুম এভাবে না। দেখ আমি চাইলে এখনি সব বলে দিতে পারি। কিন্তুু তুই যখন চাইছিস বলবো না। কথা যখন দিয়েছি তখন রাখবো বাট এখন না। এখন তুই বেরিয়ে যা এখান থেকে,

আসলাম খাঁন অসহায় মুখ করে বললো।”

—-” কিন্তুু শুভ্র তুমি তো,

শুভ্র শান্ত স্বরে বললো।”

—-” শুনলি না? আমার রেড রোজ চায় তুই বেরিয়ে যাস। সো তুই বের হয়ে যা,

আসলাম খাঁন এবার রেগে বললো।”

—-” শুভ্র ভুলে যাবি না সামিরের মা এখনো আমার কাছে। আর আমি জানি তুই তোর চাচীকে কত ভালবাসিস। আর তোর জিগারের বেস্ট ফ্রেন্ডকে। তুই নিশ্চয় চাইবি না তোর চাচী মারা যাক। আর তোর জিগারের বেস্ট ফ্রেন্ড একা হয়ে যাক,

আসলাম খাঁনের কথায় রোজ, শুভ্র আর রোদ জোড়ে হেসে দিলো। আসলাম খাঁন রেগে বললো।”

—-” পাগল হয়েছিস তোরা?”

রোদ হাসি থামিয়ে বললো,

—-” পাগল তুই হয়েছিস আমরা না।”

আসলাম খাঁনের খটকা লাগলো তাই বললো,

—-” মানে?”

শুভ্র হাসি থামিয়ে বললো।”

—-” ওয়েট, চাচী নিচে এসো,

____________

তখনি শিরি দিয়ে সামির আর ওর মা নেমে এলো। আসলাম খাঁন শকড হয়ে তাকিয়ে আছে। সেই সাথে রীতিমত ঘামছে। ওনার বোঝা হয়ে গিয়েছে খেলা ওনার হাতের বাইরে চলে গিয়েছে। এই একটা তাস ওনার কাছে ছিলো সবাইকে ব্ল্যাকমেইল করার জন্য। সেটাও এখন ওনার হাতের বাইরে। সামিরের মা আর সামির নিচে আসতেই শুভ্র বললো।”

—-” কি ভয় পেয়ে গেলি? এখন ভাবছিস তো? আমি চাচীকে কি করে পেলাম? টাকা আসলাম খাঁন টাকা। তুই টাকা দিয়ে তোর লোকেদের খারাপ কাজ করিয়েছিস। আর আমি টাকা দিয়ে তোর লোকেদের কাছ থেকে চাচীকে নিয়ে এসেছি। আসলাম খাঁন তোর খেলা শেষ। খেলার গুটি পাল্টে গিয়েছে আর পাশা আমার হাতে। তৈরি হয়ে যা নিজের ধ্বংস নিজের চোখে দেখতে,

সামিরের মা আসলাম খাঁনকে ঠাটিয়ে এক চর মেরে দিলো। আসলাম খাঁন রেগে তাকিয়ে আছে। সামিরের মা সে সব তোয়াক্কা না করে বললো।”

—-” এত নিচ কি করে হতে পারো তুমি? ২বছর নিজের ছেলেকে নিজের হাতের পুতুল বানিয়ে রেখেছো। নিজে তো জানোয়ার আমার ছেলেকেও নিজের মতো করতে চেয়েছো। এই বাচ্চা মেয়েটাকে দিনেরপর দিন আঘাত করেছো। লজ্জা করলো না এসব করতে? আজ যদি ওর জায়গায় তোমার মেয়ে থাকতো?”

মেয়ে থাকতো শুনে আসলাম খাঁন ঘাবড়ে শুভ্রর দিকে তাকালো। শুভ্র ঠিকই বুঝছে আসলাম খাঁন কেন ঘাবড়ে আছে। শুভ্র সামিরের মায়ের কাছে এসে বললো,

—-” চাচী এই লোকটাকে এসব বলে লাভ নেই। ও আস্ত জানোয়ারে রুপ নিয়েছে।”

সামিরের মা কেঁদে দিয়ে বললো,

—-” ওর জন্য আমি আমার ছেলেকে খারাপ ভেবেছি। ওর সাথে কথাও বলিনি আমি। যেখানে কি না আমার ছেলে বাধ্য ছিলো। আমাকে রোজ আর রোদকে বাঁচাতে এসব করতে বাধ্য ছিলো। সেখানে মা হয়ে আমি আমার ছেলেকে খারাপ চোখে দেখেছি। এই লোকটার কোনদিন ভাল হবে না। ও ওর পাপের শাস্তি ঠিকই পাবে। আমি অভিশাপ দিলাম তুমি তোমার পাপের শাস্তি এই দুনিয়াতেই পাবে। এতগুলো লোককে কাঁদিয়েছো তুমি। আল্লাহ তার শাস্তি তোমাকে দেবে।”

সামির ওর মায়ের চোখের পানি মুছে বললো,

—-” তুমি কেঁদো না মা। আর তুমি ঠিকই বলেছো এই লোকটার সময় ঘনিয়ে এসেছে। আর ওনার করা পাপের শাস্তি উনি পাবে।”

আসলাম খাঁন শুভ্রর দিকে তাকিয়ে বললো,

—-” শুভ্র তুই ওকে কখন দিবি?”

শুভ্র ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো।”

—-” যা পেয়ে যাবি যখন আমি চাইবো,

আসলাম খাঁন রেগে বেরিয়ে গেলো। রোজ ভ্রু কুঁচকে বললো।”

—-” কি পেয়ে যাবে উনি? আর আপনি এর জন্যই হাসছিলেন তাই না?”

শুভ্র মুচকি হেসে বললো,

—-” তোমাদের সব পরে বলবো।”

কেউ আর কিছু বললো না। কিছু একটা ভেবে একটুপর রোজ চোখ ছোট, ছোট করে বললো,

—-” আসলাম খাঁনকে আপনি বলেছিলেন আমার কাছে ক্ষমা চাইতে? আর আপনি জানতেন উনি আসবে তাই আপনি হাসছিলেন ঠিক না?”

শুভ্র মুচকি হেসে বললো।”

—-” বাহ আমার সাথে থেকে তোমার বুদ্ধি বেড়ে গিয়েছে,

—-” আমার আগে থেকেই অনেক বুদ্ধি।”

ভেংচি কেটে বললো রোজ সবাই হেসে দিলো। রোজ গাল ফুলিয়ে উপরে চলে গেলো। রোজের পিছনে শুভ্রও গেলো। রোজ বিছানায় বসে পড়লো। শুভ্র রোজের গাল টেনে বললো,

—-” আমার বউ বুঝি রাগ করেছে?”

রোজ মুখ বাঁকিয়ে বললো।”

—-” এত ঢং আসে কোথা থেকে?”

—-” তোমাকে দেখলে অটোমেটিক কাঁধে ঢং ভড় করে,

দাত কেলিয়ে বললো শুভ্র। আর রোজ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো।”

______________

চৈতি রাগী লুকে তাকিয়ে আছে। আর রিক ২মিনিট ধরে ঢোক গিলছে। এবার রিক না পেরে মুখ খুললো,

—-” চৈতি বেবি আর কতক্ষণ রাগ দেখাবে? তোমার রাগ দেখে ঢোক গিলতে, গিলতে আমার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।”

চৈতি রিকের চুল টেনে ধরে বললো,

—-” অন্য মেয়েদের খুব ভাল লাগে না?”

রিক চুল ছাড়িয়ে চৈতির কোমর টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে বললো।”

—-” যারা ভাল তাদের ভাল লাগে। আর তোমাকে ভালবাসি তুমি জানো না? আমার জীবনে শুধু তুমিই আছো,

চৈতি মুচকি হেসে রিকের বুকে মুখ লুকালো।”

রোদ তনয়ার সাথে কথা বলে নিচে আসতেই দেখলো সামির বের হচ্ছে। রোদ ফোন পকেটে রেখে সামিরের কাছে গিয়ে বললো,

—-” কোথাও যাচ্ছিস?”

সামির পিছনে তাকিয়ে বললো।”

—-” হ্যা একটু কাজ আছে,

সামির গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলো। মাঝ রাস্তায় গিয়ে ব্রেক মারলো। কারণ সামনে রাইসা দাড়িয়ে আছে। সামির গাড়ি থেকে নেমে রাইসাকে সরিয়ে বললো।”

—-” এই মেয়ে মরার শখ হয়েছে?”

—-” মরার না মারার শখ হয়েছে,

সামির কপাল কুঁচকে বললো।”

—-” মানে?”

রাইসা হুট করেই সামিরের গালে চুমু বসিয়ে দিলো। সামির গালে হাত দিয়ে হা করে আছে। রাইসা মুচকি হেসে বললো,

—-” আমি শিওর এই চুমু আপনাকে আমার কাছে নিয়ে আসবে।”

বলে রাইসা চলে গেলো। সামির এখনো হা করে আছে। এখান দিয়ে নিরব আর তিথি যাচ্ছিলো। সামিরকে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে নিরব গাড়ি থামিয়ে নেমে এলো। নিরব আর তিথি সামিরের সামনে এসে বললো,

—-” সামির এভাবে দাড়িয়ে আছিস কেন?”

সামির নিজের কথা বাদ দিয়ে নিরবকে ভ্রু কুঁচকে বললো।”

—-” রোজের কাজিন এখানে কি করছে?”

নিরব মাথা চুলকে বললো,

—-” আমি ওকে ভালবাসি। কিন্তুু তোর কি হয়েছে?”

সামির অসহায় ফেস করে বললো।”

—-” নিরব এক মেয়ে আমাকে কিস করেছে,

নিরব আর তিথি হু হা করে হেসে দিলো। সামির গাল ফুলিয়ে ওদের দেখছে।”

হালকা অন্ধকার রুমে দাড়িয়ে আছে আসলাম খাঁন আর শুভ্র। শুভ্রর এক হাতে ফোনে একটা ভিডিও চলছে। আরেকহাতে একটা চাবুক। আসলাম খাঁন ভয়ে ঢোক গিলছে। শুভ্র বাঁকা হেসে বললো,

—-” কি শেষ করে দেই ওকে?”

আসলাম খাঁন দু হাত জোড় করে বললো।”

—-” হাত জোড় করছি ওকে ছেড়ে দে। তুই যা বলবি আমি করবো কিন্তুু ওকে মারিস না,

—-” বাহ নিজের দ্বিতীয় ঘড়ের মেয়ের জন্য এত ভালবাসা? দ্বিতীয় বউয়ের মেয়ে রাইট? যাদেরকে এত বছর লন্ডন রেখেছিলি। ভাবতে পারিসনি এরকম কিছু হবে তাই না?”

আসলাম খাঁন অবাক হয়ে বললো।”

—-” তুই কি করে এতকিছু জানিস?”

শুভ্র হেসে দিয়ে বললো,

—-” ভুলে যাচ্ছিস নাকি? আমাকে লন্ডন পাঠিয়েছিলি? রোদকে আমেরিকা থাকা অবস্থায় মারার ভয় দেখিয়ে রোজকে টর্চার করেছিলি তাই না? এবার তুই নিজে এই চাবুক দিয়ে নিজেকে আঘাত করবি। একটু নড়চড় হলে তোর বউ, মেয়ে খতম।”

আসলাম খাঁন চেঁচিয়ে বললো,

—-” না তুই ওদের কিছু করবি না। আমি আঘাত করবো নিজেকে।”

শুভ্র আসলাম খাঁনের হাতে চাবুক দিয়ে বললো,

—-” তুই কাউকে ভালও বাসতে পারিস? ওয়েল আঘাত শুরু কর রাইট নাউ।”

আসলাম খাঁন নিজেই নিজেকে আঘাত করতে শুরু করলো। চাবুকের কয়েকটা বারি নিজের গায়ে পড়তেই হাত থেমে গেলো। এখন বুঝতে পারছে রোজ আর সামিরের কতটা কষ্ট হতো। চাবুক থামতেই শুভ্র চোখমুখ হিংস্র করে চিৎকার করে বললো,

—-” আরো আঘাত কর নিজেকে জানোয়ার। তোকে আমি তিলে, তিলে মারবো। বলেছিলাম না তোকে? আমার রোজকে দেয়া এক, একটা আঘাত আমি তোকে ফিরিয়ে দেবো। আর তুই নিজেই নিজেকে আঘাত করবি। আঘাত কর নিজেকে আরো আঘাত কর। যতক্ষণ না ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছিত ততক্ষণ আঘাত করবি। নাহলে তোর মেয়ে তো শেষ। এতদিন ঘুড়ি হয়ে খুব উড়েছিস তুই। এবার তুই উড়বি ঠিকই কিন্তুু আমার ইশারায়। কারণ তোর ঘুড়ির লাটাই এবার আমার হাতে। আঘাত কর নরপশু,

শুভ্রর হুংকারে আসলাম খাঁনের শরীর কেঁপে উঠলো। ভয় পেয়ে আবার নিজেই নিজেকে আঘাত করতে শুরু করলো। আঘাত করতে, করতে একটা সময় লুটিয়ে পড়লো। শুভ্র পাগলের মতো হাসতে, হাসতে বললো।”

—-” এখনো অনেককিছু বাকী। এখনি লুটিয়ে পড়লে চলবে চাচ্চু?”

শেষের কথাটা দাতে, দাত চেপে বললো,

#চলবে…

#ভালবাসার এক রাত❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ রোজ
#পর্ব- ২৪

আসলাম খাঁন নিজেকে আঘাত করতে, করতে লুটিয়ে পড়লো। সেটা দেখে শুভ্র পাগলের মতো হেসে বললো।”

—-” এখনি লুটিয়ে পড়লে হবে? এখনো তো অনেককিছু বাকী চাচ্চু,

শেষের কথাটা দাতে, দাত চেপে বললো শুভ্র। রাগে চোখ টকটকে লাল হয়ে গিয়েছে। কপাল আর ঘাড়ের রগগুলোও ফুলে উঠেছে। শুভ্র টেনে আসলাম খাঁনকে উঠিয়ে বললো।”

—-” কি রে হাওয়া শেষ? অন্যদের আঘাত করার সময়ে খুব ভাল লাগে তাই না? একবারও তখন এই শয়তানি মাথায় আসেনি যে ওদেরও কষ্ট হয়? তোর মতো শয়তান দুটো দেখিনি আমি। এটা ট্রেইলার ছিলো পিকচার আভি বহাত কুছ বাকী হে। জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ। আর কিছুদিন পর তুই নিজেই নিজের মৃত্যু কামনা করবি। যেভাবে তোর অত্যাচারে আমার রোজ মৃত্যু কামনা করতো। তোকেও আমি সম্পূর্ণ একা করে দেবো। চারপাশে তুই আর কাউকে পাবিনা। একাকীত্ব সহ্য করতে না পেরে নিজেই মরতে চাইবি,

শুভ্র ওনাকে ফেলে রেখে চলে গেলো। আসলাম খাঁন চাবুকটা ছুড়ে ফেলে বললো।”

—-” তোদের কাউকে আমি ছাড়বো না। আর শুভ্র তোর এই তেজ আমি কালই কমিয়ে দেবো,

আসলাম খাঁনও ওখান থেকে বেরিয়ে চলে এলো। শুভ্র বাড়ি এসে দেখলো রোদ, রোজ আর সামির সোফায় বসে আছে। শুভ্র ভেতরে এসে ভ্রু কুঁচকে বললো।”

—-” তোমরা ঘুমাওনি কেন?”

রোজ শুভ্রকে দেখেই রেগে বললো,

—-” কোথায় ছিলেন আপনি?”

—-” আমার একটু কাজ ছিলো বাইরে ছিলাম।”

রোজ সোফা থেকে দাড়িয়ে কোমরে হাত দিয়ে বললো,

—-” তা কি কাজ ছিলো আপনার?”

শুভ্র বিরবির করে বললো।”

—-” নাও বাবা শুভ্র তোমার আরামের দিন শেষ। এখন তোমার বউয়ের বাংলাদেশ। ওপস সরি বউকে সব কাজের কৈফিয়ত দেয়ার দিন শুরু,

রোজ এগিয়ে এসে ভ্রু নাচিয়ে বললো।”

—-” কি বিরবির করছেন আপনি?”

শুভ্র হালকা হেসে বললো,

—-” আসলে আসলাম খাঁনকে একটু টাইট দিয়ে এলাম।”

রোদ উঠে এসে হেসে বললো,

—-” কি করেছিস? আচ্ছা একটা কথা বল আমাকে। মানে তোরা কি শুধু উনি রোজকে আটকে রেখেছিলো। এবং তোদের আলাদা করেছিলো বলেই তুই ওনাকে শাস্তি দিচ্ছিস? নাকি আরো কোন রিজন আছে যেটা আমি জানিনা। আর চাচী কেন বলছিলো রোজকে আঘাত করতো নাকি আসলাম খাঁন? আসল কাহিনী কি শুভ্র?”

রোজ ঘাবড়ে গেলো। কারণ ও চায় না রোদ জানুক সত্যিটা। তাহলে রোদ কুরুক্ষেত্র বাধিয়ে ফেলবে। রোজ মেকি হাসি দিয়ে বললো।”

—-” না শুধু ওই কারণই ভাইয়া। আর আঘাত বলতে মানসিক আঘাতের কথা বলেছে,

—-” না শারীরিক আঘাত।”

সামিরের কথায় রোদ চমকে গেলো। রোজ ওকে থামতে বলছে। সামির না থেমে শুরু থেকে সবটা বললো। সব শুনে রোদ মারাত্মক রেগে গেলো। রাগে রীতিমত থরথর করে কাঁপছে। রোদ চিৎকার করে বললো,

—-” হাউ ডেয়ার হি? ওই লোকটার এত বড় সাহস হলো কি করে? আমার বোনকে মেরেছে ওকে আমি ছাড়বো না। ওকে আমি জ্যান্ত পুতে ফেলবো জানোয়ার।”

রোদ হনহন করে বের হতে গেলেই শুভ্র বললো,

—-” কোথায় যাচ্ছিস?”

—-” ওই নরপশুকে খুন করতে।”

রোজ গিয়ে রোদকে টেনে এনে বললো,

—-” কি বলছিস ভাইয়া? ওনাকে খুন করে কি তুই জেলে যাবি নাকি? তখন আমার কি হবে? বাবাই, আম্মু নেই তোকেও হারাবো নাকি আমি?”

বলতে, বলতে রোজ কেঁদে দিলো। রোদ নরম হয়ে গেলো রোজের কান্না দেখে। রোজকে জড়িয়ে ধরে বললো।”

—-” কাঁদে না সোনা বোন। আমি যাচ্ছি না দেখ,

_____________

রোজকে রোদ অনেক কষ্টে থামাতে পারলো। রোদ রোজকে জড়িয়ে ধরে রেখেই মনে, মনে বললো।”

—-” আসলাম খাঁন তোকে আমি ছাড়বো না। পুরো সত্যি আমি এখন জানি। আর এই জানাটা তোর উপর অনেক ভারী হয়ে পড়বে। আমার বোন আমার জীবন আর সেই জীবনে হাত দিয়েছিস তুই। ছোট্ট একটা ভুলে ২বছর দুরে ছিলাম আমি। এবার আমি এসে গিয়েছি,

রোদ রোজের চোখ মুছে দিয়ে বললো।”

—-” রাত অনেক হয়েছে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়,

সবাই ঘুমাতে চলে গেলো। রোজ শুভ্রর রুমে ঘুমালেও এখনো ওরা আলাদাই ঘুমায়। শুভ্রই বলেছে যতদিন না ধুমধাম করে ওদের বিয়ে হচ্ছে ততদিন ওরা আগের মতোই থাকবে। শুভ্র সোফায় শুয়েছে আর রোজ বিছানায়। সোফাটা চওড়া বেশী হওয়ায় প্রবলেম হচ্ছে না। কতক্ষণ পর রোজ বলে উঠলো।”

—-” শুভ্র,

শুভ্র চট করে চোখ খুলে বললো।”

—-” কিছু বলবে?”

রোজ আমতা, আমতা করে বললো,

—-” আপনি বিছানায় আসবেন?”

শুভ্র উঠে বসে ভ্রু কুঁচকে বললো।”

—-” কেন?”

—-” আপনার সোফায় শুতে কষ্ট হচ্ছে না?”

শুভ্র মুচকি হেসে বললো,

—-” না কষ্ট হচ্ছে না তুমি ঘুমিয়ে পড়ো।”

—-” আজকে আমি সোফায় ঘুমাই?”

শুভ্র এবার মুখে রাগ ফুটিয়ে বললো,

—-” তোমার এত পাকামো করতে হবে না। রাত অনেক হয়েছে চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ো।”

—-” এর জন্য কারো ভাল করতে নেই হু,

বলে রোজ ভেংচি কেটে শুইয়ে পড়লো। শুভ্রও মুচকি হেসে শুইয়ে পড়লো। রাত বাড়তে লাগলো আর সবাই ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেলো।”

সকালে আগে শুভ্রর ঘুম ভাঙলো। শুভ্র উঠে জানালার পর্দা টেনে সরাতেই সূর্যের আলো রোজের মুখে পড়তে লাগলো। রোজ ঘুমের মধ্যেই চোখ, মুখ কুঁচকাতে লাগলো। শুভ্র মুচকি হেসে রোজের পাশে বসে ওর কপালে চুমু দিয়ে বললো,

—-” গুড মর্নিং রেড রোজ।”

রোজ কপাল কুঁচকে বললো,

—-” শুভ্র আমি আরেকটু ঘুমাবো এখন।”

শুভ্র হেসে ওয়াসরুমে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে এসে নিচে রোদের সাথে কতক্ষণ কথা বলে আবার রুমে এলো। রোজ এখনো ঘুমাচ্ছে। শুভ্র এবার রোজকে কোলে তুলে ওয়াসরুমে এনে একটু পানি দিতেই রোজ উঠে গেলো। শীতের মাঝে পানি দেয়ায় রোজ রেগে বললো,

—-” এটা কি করলেন?”

শুভ্র দাত কেলিয়ে বললো।”

—-” তুমি উঠছিলে না তাই,

রোজ ভ্রু কুঁচকে বললো।”

—-” আমাকে নামান,

—-” আমার কোলে থেকেই ফ্রেশ হও।”

দুষ্টু হাসি দিয়ে বললো শুভ্র। রোজ মুখ বাঁকিয়ে বললো,

—-” আপনার কোলেই ইয়ে করি কেমন?”

শুভ্র কম কিসে? শুভ্রও দাত কেলিয়ে বললো।”

—-” করতে পারলে করো,

রোজ শুভ্রর খোঁচা, খোঁচা দাড়িতে হাত বুলিয়ে আদুরে গলায় বললো।”

—-” নামান না শুভ্র,

শুভ্র মুচকি হেসে রোজকে নামিয়ে দিলো। রোজ দরজা আটকে ফ্রেশ হয়ে বাইরে এলো। শুভ্র সোফায় পা ছড়িয়ে বসে গেম খেলছে। রোজকে বের হতে দেখে বললো।”

—-” রোজ আজকে আমার একটা শো আছে,

রোজ তোয়ালে বিছানায় রেখে বললো।”

—-” কোথায়?”

—-” সোনারগাঁও হোটেলে,

____________

আসলাম খাঁন চেষ্টা করেও কিছু করতে পারছে না। কারণ ওনার সব লোকেদের শুভ্র কিনে নিয়েছে। আসলাম খাঁন রেগে এটা, ওটা ভাঙছে। এরমাঝে শুভ্র ফোন দিলো। আসলাম খাঁন ফোন রিসিভ করতেই শুভ্র বলে উঠলো।”

—-” সো স্যাড চাচ্চু তাই না? তুই চাইলেও কিছু করতে পারছিস না রাইট? বিশ্বাস কর তোর এই করুন পরিণতি দেখে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। ওই হিন্দীতে একটা কথা আছে না? মেরা দিল টুট গায়া। তোর অবস্থা দেখে আমার দিল টুট গায়া হা হা। শোন তোকে একটা ফ্রিতে এডভাইজ দেই। তুই তোর সব পাপের কথা স্বীকার করে নে। তাহলে তোকে আর আমি এভাবে জ্বালাবো না। আদারওয়াইজ তোকে আমি ছাড়বো না। তবে বেশী কিছুও করবো না আফটার অল তোকে চাচ্চু বলতাম যে। ওই একটু তড়পাবো দ্যান খতম করে দেবো। কেমন লাগলো আমার আইডিয়া?”

—-” শুভ্র তুই খুব বেশী করছিস। কোথাও এমন না হয় যে আমাকে খতম করার আগে তুই খতম হলি,

আসলাম খাঁনের কথায় শুভ্র বাঁকা হেসে বললো।”

—-” সেটা তো টাইম বলবে,

শুভ্র ফোন কেটে দিলো। তখন সামির আর রোদ এসে বললো।”

—-” শুভ্র তুই বের হবি কখন?”

শুভ্র ঘড়িতে টাইম দেখে বললো,

—-” আরেকটু পরই বের হবো। এক কাজ কর তোরা গিয়ে রেডি হয়ে নে। আর নিরবকে ফোন দিয়ে জেনে নে ও কোথায় আছে। আমি গিয়ে রেডি হয়ে আসছি।”

শুভ্র রুমে এসে রেডি হয়ে নিলো। হোয়াইট টি শার্টের উপর ব্লু জ্যাকেট। ব্লু জিন্স প্যান্ট, পায়ে হোয়াইট সুজ। ফর্সা শরীরে দারুন মানিয়েছে। তিলটা জ্বল, জ্বল করছে। খোঁচা, খোঁচা দাড়ি রোজ হা করে তাকিয়ে আছে। শুভ্র কপালে সেই কাপড়ের টুকরোটা বেধে তাকাতেই দেখলো রোজ তাকিয়ে আছে। শুভ্র মুচকি হেসে বললো,

—-” কি দেখছো?”

—-” আপনার গভীর চোখ। আপনার নাক, ডার্ক রেড ঠোট। ঠোটের নিচে থুতনির তিল। আপনার গালের টোল। আপনার মাথার সিল্কি চুল।”

শুভ্র রোজকে টেনে কাছে এনে বললো,

—-” এত গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করছো আমাকে?”

রোজের এবার মাথায় এলো ও কি বলেছে। নিজেকে সামলে মেকি হাসি দিয়ে বললো।”

—-” না তেমন কিছু না। আপনার কপালের এই টুকরোটা কিসের?”

কথা পাল্টাতে বললো। শুভ্র কাপড়টায় হাত বুলিয়ে বললো,

—-” কি মনে হয়?”

—-” আমার সেই ওড়নার?”

শুভ্র মাথা নেড়ে হ্যা বললো। রোজ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। এরমাঝে রোদ শুভ্রকে ডাক দিলো। শুভ্র রোজের কপালে গভীর চুমু একে বেরিয়ে গেলো। রোজ ড্রয়িংরুমে এসে টিভির সামনে বসলো। এই শো টিভিতে দেখানো হবে। সামিরের মা আর রোজ টিভি দেখছে।”

শো শেষ করে বের হতেই জার্নালিস্টরা শুভ্রকে ঘিরে ধরলো। সেই সাথে ফ্যানসরা তো আছেই। কেউ সেলফি তুলছে কেউ অটোগ্রাফ নিচ্ছে। একজন জার্নালিস্ট প্রশ্ন করলো,

—-” স্যার আজ কি এই কাপড়ের টুকরোর রহস্য আমরা জানতে পারবো?”

শুভ্র হালকা হেসে বললো।”

—-” না আজও সময় আসেনি। অন্য কোন প্রশ্ন থাকলে করতে পারেন,

একজন মেয়ে জার্নালিস্ট বললো।”

—-” ওকে তো রকস্টার শুভ্র ওরফে এসআরের কিছু পছন্দের কথা কি আমরা জানতে পারি?”

শুভ্র এবার মুচকি হেসে বললো,

—-” অবশ্যই।”

—-” তো বলুন আমাদের। সবাই শোনার অপেক্ষা করছে,

—-” আমার সকল পছন্দ জুড়েই সে। তার বৃষ্টি পছন্দ, আর আমার বৃষ্টি ভেজা তাকে। তার হাসতে ভাল লাগে আর আমার তার হাসি দেখতে। তার হাসি আমাকে পৃথিবীর সব সুখ মুহূর্তেই এনে দিতে পারে। তার অনেক কথা বলতে ভাল লাগে আর আমার কথা বলা অবস্থায় তাকে। যখন সে তার কোমল হাতগুলো নাড়িয়ে কথা বলে। তখন তার প্রেমে পড়ি হাজার বার বারেবার। তার সব পছন্দ কিন্তুু আমার শুধুই তাকে। আর সে হচ্ছে রোজ আমার ভালবাসার রেড রোজ।”

বলে শুভ্র একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো। সবাই স্তব্ধ হয়ে শুভ্রর কথা শুনেছে। শুভ্রর কথায় প্রকাশ পাচ্ছে সে তার রেড রোজকে কতটা ভালবাসে। এই ভালবাসার গভীরতা কেউ মাপতে পারবে না। তাই কেউ ব্যর্থ চেষ্টা করছে না,

—-” আপনারা দেখছেন রকস্টার শুভ্র চৌধুরীর শো। তার কথা শুনে এতটুকু বোঝা গেলো সে খুব গভীরভাবে কাউকে ভালবাসে। আজকে আমরা শুধু তার নাম জানতে পারলাম। সেই লাকি গার্লের নাম হচ্ছে রোজ মানে গোলাপ। আমরা জানিনা কে এই রোজ? তবে দোয়া করি গোলাপের মতোই সুন্দর হোক তার জীবন। যার কাছে শুভ্র স্যারের মতো কেউ আছে তার জীবন এমনিতেও সুন্দরই হবে। মেয়ে ফ্যানসদের কাঁদিয়ে এই নিউজ আজ শুভ্র চৌধুরী নিজেই দিলো। হয়তো খুব তাড়াতাড়ি তার বিয়ের কথাও আমরা জানবো। তো ততক্ষণ আমাদের সাথেই থাকুন। জার্নাললিস্ট রিয়ানা একাত্তর টিভি।”

সব মেয়েদের মন আজকে ভেঙে দিলো শুভ্র। আর রোজ টিভির সামনে বসে চোখের পানি ফেলছে। তবে এটা আনন্দের কান্না। আজ সে নিজেকে সবথেকে বেশী লাকি মনে করছে। আর সত্যিই তো রোজ লাকি। যার কাছে শুভ্রর মতো একজন ভালবাসার মানুষ আছে সে আসলেই লাকি,

#চলবে…

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......

Related Articles

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

Stay Connected

20,625ভক্তমত
3,633অনুগামিবৃন্দঅনুসরণ করা
0গ্রাহকদেরসাবস্ক্রাইব
- Advertisement -spot_img

Latest Articles