#ভালবাসার এক রাত❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ রোজ
#পর্ব- ১৫
রোজের ভাবনার মাঝে শুভ্র নিজেকে সামলে বললো।”
—-” সামির এসব কি বলছিস তুই?”
সামির রোজের হাত আরো শক্ত করে ধরে বললো,
—-” আমি ঠিকই বলছি শুভ্র। প্লিজ তুই রোজকে ছেড়ে দে প্লিজ। আমি ওকে ভালবাসি।”
শুভ্র হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। শুভ্রকে কিছু বলতে না দেখে রোজ নিজেই বললো,
—-” সামির ভাইয়া তুমি এসব কি বলছো? তুমি জানো তো আমি শুভ্রকে ভালবাসি আর শুভ্র আমাকে। তাহলে তুমি এসব কেন বলছো?”
সামির রোজের দিকে তাকিয়ে বললো।”
—-” কেন ভালবাসো না আমাকে? আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি রোজ। ইনফ্যাক্ট শুভ্রর থেকে বেশীই ভালবাসি। প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিও না। ছোট থেকে শুভ্র আমার সব কেড়ে নিয়েছে। ওর জন্য আমি সবসময় পিছিয়ে থেকেছি। খেলাধুলা, ক্লাস, সব জায়গায় পিছিয়ে থেকেছি। ও আমার সব প্রিয় জিনিষ কেড়ে নিয়েছে। আর এখন তোমাকেও কেড়ে নিতে চাইছে,
—-” সাট আপ সামির। রোজ কোন জিনিষ না ওকে? রোজ আমার ভালবাসা। আর আমি কিছুতেই রোজকে ছাড়বো না। হ্যা আমি তোর আর নিরবের জন্য সবকিছু করতে পারি। কিন্তুু নিজের ভালবাসা আমি ছাড়তে পারবো না। রোজ শুধু আমার ভালবাসা না আমার বেঁচে থাকার অবলম্বন। তাই আমি খুব সরি যে আমি ওকে ছাড়বো না।”
শুভ্রর কথায় রোজ খুশি হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললো,
—-” আমি জানতাম শুভ্র আপনি এটাই বলবেন। আপনি আমাকে ছাড়বেন না। সামির ভাইয়াকে প্লিজ বোঝান।”
সামির রেগে রোজের হাত চেপে ধরলো। সাথে, সাথে রোজের হাতের চুড়ি ভেঙে ওর হাতে ঢুকে গেলো। রোজ ব্যথায় আহ করে শব্দ করে উঠলো। সামির এসব তোয়াক্কা না করে রোজের হাত টেনে নিয়ে যেতে ধরলো। শুভ্র এগিয়ে পিছন থেকে রোজের হাত ধরে হ্যাচকা টানে নিজের কাছে নিয়ে এলো। রোজ শুভ্রর শার্ট খামচে ধরে আছে ভয়তে। সামির শুভ্রর দিকে রেগে তাকিয়ে আছে। শুভ্র খুব শান্ত ভয়েসে বললো,
—-” এখান থেকে চলে যা সামির।”
—-” আমি রোজকে নিয়েই যাবো,
সামিরের কথায় শুভ্রর চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। তবুও নিজেকে কন্ট্রোল করে বললো।”
—-” আমি তোকে রিকোয়েস্ট করছি চলে যা। আমার রোজকে আঘাত করেছিস তুই। ওর হাত থেকে রক্ত পড়ছে। এর আগে আমি নিজের রাগের উপর কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলি তুই চলে যা,
সামির এগিয়ে এসেই শুভ্রকে ঘুষি মেরে বললো।”
—-” কি করবি তুই? কি করবি?”
শুভ্র মাথা নিচু করে বললো,
—-” চলে যা সামির ফ্রেন্ডশিপ নষ্ট করিস না।”
সামির শুভ্রকে আরেকটা ঘুষি মেরে বললো,
—-” ফ্রেন্ডশিপ মাই ফুট।”
শুভ্র এবারও মাথা নিচু করে বললো,
—-” সামির এমন করিস না।”
সামির শুভ্রকে আরেকটা ঘুষি মারলো। এভাবে ঘুষি মেরে যাচ্ছে অনবরত। রোজ সামিরকে আটকাতে গেলে সামির ধাক্কা মারলো। রোজ গিয়ে দেয়ালে বারি খেয়ে চেঁচিয়ে উঠলো। শুভ্র আতংকিত হয়ে তাকিয়ে দেখলো রোজের গাল বেয়ে রক্ত পড়ছে। শুভ্র যেন এবার হিংস্র হয়ে উঠলো। সামিরকে এক ধাক্কা মেরে বললো,
—-” হাউ ডেয়ার ইউ সামির খাঁন?”
_____________
চিৎকার করে বলেই সামিরকে মারতে শুরু করলো। কেউ চেয়েও আটকাতে পারছে না। অবাক করা বিষয় সামির নিজেও আটকানোর চেষ্টা করছে না। রোজ কপালে হাত দিয়ে আস্তে করে বললো।”
—-” শুভ্র,
শুভ্র সামিরকে ছেড়ে দৌড়ে রোজকে ধরে পাগলের মতো করে বললো।”
—-” রে্ রেড রোজ কিছু হবে না তোমার। সামির এটা কি করলি তুই? রোজের কিছু হলে আমি তোকে ছাড়বো না। আমি ভুলে যাবো কোন কালে তুই আমার ফ্রেন্ড ছিলি। এন্ড ইটস মাই প্রমিস,
বলে রোজকে কোলে তুলে নিলো। রোজ এক হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে রেখেছে। শুভ্র রোজকে নিয়ে হসপিটালে এলো। আঘাতটা ততটা গুরুতর না। ডক্টর ব্যান্ডেজ করে মেডিসিন দিয়ে দিলো। শুভ্র রোজকে বাড়ি পৌছে চুপচাপ বাড়ি চলে এলো। নিজের রুমে এসে ধপ করে শুভ্র বসে পড়লো। এক হাত দিয়ে মুখ চেপে বাচ্চাদের মতো কেঁদে দিলো শুভ্র।”
—-” কেন এমন করলি সামির? এটা কি করে করতে পারলি তুই? তুই কি আদৌ আমার সেই বেস্ট ফ্রেন্ড সামির? আমি যে রোজকে তোকে দিতে পারবো না। তুই আমার জীবন চাইতি দিয়ে দিতাম। কিন্তুু আমার জীবন থাকতে আমি রোজকে কাউকে দেবো না। রোজ আমার শুধু আমার ভালবাসা। কিন্তুু আমাদের এতদিনের ফ্রেন্ডশিপ শেষ হয়ে গেলো? এটা আমি কি করে মেনে নেবো সামির? আমি কি করে মানবো এটা? এটা কেন করলি সামির?”
শুভ্র এবার শব্দ করে কেঁদে দিলো। শুভ্রর কান্না শুনে ওর মা চলে এলো। শুভ্রকে কাঁদতে দেখে ওর মা অস্থির হয়ে বললো,
—-” শুভ্র কি হয়েছে তোর বাবা? কাঁদছিস কেন তুই?”
শুভ্র ওর মা কে ধরে বললো।”
—-” আম্মু সামির এটা কেন করলো আম্মু?”
শুভ্রর মা অবাক হয়ে বললো,
—-” সামির তোকে কাঁদিয়েছে? কি করেছে সামির?”
শুভ্র সব বললো ওর মা কে। শুভ্রর বাবা দরজায় দাড়িয়ে সব শুনলো। সব শুনে উনি ওখান থেকে চলে গেলো। সব শুনে শুভ্রর মা বললো।”
—-” সামির এটা করেছে?”
শুভ্র মাথা নাড়লো। শুভ্রর মা ওকে কোনরকম বুঝিয়ে চলে গেলো। শুভ্র ওভাবেই বসে রইলো। এদিকে রোজের মনটা কেমন আনচান করছে। শুভ্রকে ফোন দেবে কি না ভাবছে এরমাঝে শুভ্রই ফোন দিলো। রোজ ফোন রিসিভ করে আস্তে বললো,
—-” হ্যালো।”
—-” মেডিসিন নিয়েছো?”
_____________
শুভ্রর গলা শুনেই রোজ বুঝে গেলো শুভ্র কেঁদেছে। তবে শুভ্রকে কিছু বললো না। রোজের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দিলো। এভাবেই আরো কিছুদিন কেটে গিয়েছে। ওই ঘটনার পর সামির আর ভার্সিটিতে আসেনি। রোজ আর শুভ্রর মনটাও খারাপ। কত সুন্দর চলছিলো সব হঠাৎ কি হয়ে গেলো। ক্লাস শেষ করে শুভ্র রোজকে বাড়ি দিয়ে নিজে বাড়ি এলো। বাড়ি আসতেই শুভ্রর বাবা বললো,
—-” দাড়াও শুভ্র।”
শুভ্র দাড়িয়ে বললো,
—-” কিছু বলবে বাবাই?”
শুভ্রর বাবা শুভ্রর হাত ধরে বললো।”
—-” কোনদিন তোমার কাছে কিছু চাইনি আজ যদি কিছু চাই তো দেবে আমাকে?”
শুভ্র মুচকি হেসে বললো,
—-” কেন দেবো না বাবাই? ছোট থেকে তুমি আমাকে সব দিয়েছো। যখন যা চেয়েছি সেটাই দিয়েছো। তাহলে আজ যখন তুমি কিছু চাইছো তাহলে আমি কেন দেবো না? চেয়েই দেখো অবশ্যই দেবো।”
—-” ভেবে বলছো তো?”
শুভ্র খানিকটা অবাক হলেও বললো,
—-” হ্যা ভেবে বলছি।”
শুভ্রর বাবা শুভ্রর হাতে কিছু দিলো। শুভ্র হাসি মুখে সেটা নিয়ে বললো,
—-” এটা কি বাবাই?”
শুভ্রর বাবা গম্ভীর মুখে বললো।”
—-” নিজেই খুলে দেখো,
শুভ্র প্যাকেটটা খুলে অবাক হয়ে বললো।”
—-” বাবাই এটা?”
শুভ্রর বাবা শুভ্রর হাত ছেড়ে বললো।”
—-” হ্যা এটা লন্ডন যাওয়ার টিকিট। পাসপোর্ট, ভিসা সব তোমার আছে। আমি চাই তুমি আজই লন্ডন চলে যাও। আর তোমার ফ্লাইট দুইটার দিকে,
শুভ্র প্যাকেট ফেলে বললো।”
—-” ইম্পসিবল বাবাই আমি লন্ডন যাবো না,
—-” তুমি আমাকে কথা দিয়েছো শুভ্র আমি যা চাই তুমি দেবে। আর আমি এটাই চাই তুমি দেবে না আমাকে?”
শুভ্র হঠাৎই ওর বাবার পা ধরে বসে পড়লো। শুভ্রর বাবা অবাক হয়ে ছেলেকে দেখছে। শুভ্র হু হু করে কেঁদে দিয়ে বললো।”
—-” প্লিজ বাবাই এটা চেয়ো না আমি দিতে পারবো না। বাবাই আমি রোজকে ভালবাসি আম্মুকে বলেছিলাম। আমি ওকে ছেড়ে যেতে পারবো না। তুমি আমার জীবন চাও আমি হাসতে, হাসতে দিয়ে দেবো। কিন্তুু আমাকে লন্ডন পাঠিয়ে দিয়ো না প্লিজ। বাবাই ও বাবাই তুমি কিছু বলছো না কেন? বাবাই রোজ আমার অক্সিজেন আমি ওর থেকে দুরে যেতে পারবো না। তোমার পায়ে পড়ি বাবাই এটা চেয়ো না,
—-” হয় তুমি লন্ডন যাবে না হয় আমার মরা মুখ দেখবে।”
বলে শুভ্রর বাবা চলে গেলো। শুভ্র থম মেরে সেখানেই বসে আছে। নড়ছেও না যেন কোন পাথর বসে আছে। শুভ্রর মা শুভ্রর কাঁধে হাত রেখে বললো,
—-” তুই লন্ডন চলে যা।”
শুভ্র একবার ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
—-” আমি বাবাইর মরা মুখ দেখবো না আম্মু। আমি যাবো লন্ডন তোমরা যা বলবে আমি করবো। কিন্তুু আমি রোজকে জানিয়ে যাবো।”
—-” না তুমি কাউকে জানাবে না,
শুভ্র পিছনে তাকিয়ে বললো।”
—-” এমন কেন করছো বাবাই?”
—-” হয় আমরা নয় রোজ। তুমি কারো সাথে যোগাযোগ রাখবে না। আমাদের সাথেও না এর নড়চড় হলে আমাকে আর তোমার আম্মুকে হারাবে। এবার বলো তুমি কি চাও?”
শুভ্র রোবটের মতো বললো,
—-” আমি কি কোনদিন বাংলাদেশে আসবো না?”
শুভ্রর বাবা হালকা হেসে বললো।”
—-” ২বছর পরই আসতে পারবে,
শুভ্রর বাবা শুভ্রর রুমে এসে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে এলো। শুভ্রর বাবা ওর মোবাইল নিয়ে বললো।”
—-” চলো তোমাকে এয়ারপোর্ট দিয়ে আসি,
বলে এক প্রকার হাত টেনে নিয়ে গাড়িতে বসালো। এয়ারপোর্ট এসে শুভ্রকে টেনে নিয়ে সব ফরমালিটি শেষ করে ওকে প্লেনে বসিয়ে চলে এলো। শুভ্রর চোখ দুটো রক্তের মতো লাল হয়ে আছে। শুভ্র পকেট থেকে সেই লাল ওড়নার টুকরোটা বের করে বললো।”
—-” আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো রোজ। তবে আমি ফিরবো তোমার জন্য ফিরবো। আর আমি তোমাকে কল করে সব জানাবো,
একটুপরই প্লেন ছাড়লো শুভ্র ওড়নার টুকরোটা কপালে বেধে নিলো। শুভ্র একদিকে লন্ডন পৌছালো। অন্যদিকে রোজের বাবা, মা ও এক্সিডেন্টে বিদায় নিলো। কিছুদিন আগেই রোদ রাগ করে আমেরিকা চলে গিয়েছে। সবমিলিয়ে রোজ পুরোপুরি ভেঙে পড়ে ডিপ্রেশনে চলে যায়। আর তারপর ঘটে আসল ঘটনা।”
#চলবে….
#ভালবাসার এক রাত❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ রোজ
#পর্ব- ১৬
[দুঃখিত গত পর্বে একটু মিস্টেক করে ফেলেছি। অতীত রোজ বলছে সামিরের মায়ের কাছে। সেই ক্ষেত্রে রোজের জানার কথা না শুভ্র কেন লন্ডন গিয়েছিলো। এটা পরে শুভ্র রোজকে বলবে। কিন্তুু এখানে আমি আগেই ভুলে জানিয়ে দিয়েছি। আসলে নানান ধরনের টেনশনে আছি তাই ভুলটা হয়ে গিয়েছি সরি। এটা রোজ জানেনা পরে জানবে। আশা করি সবাই বুঝবেন।]
এরপরই রোজ জানতে পারে শুভ্র মারা গিয়েছে। শুভ্রর মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর রোজ ডিপ্রেশনে চলে যায়। নাওয়া, খাওয়া বাদ দিয়ে পুরোপুরি ভেঙে পড়ে। একদিকে নিজের বাবা, মা কে হারিয়েছে। অন্যদিকে শুভ্রকে সব মিলিয়ে মৃত্যুর মুখে চলে গিয়েছে বললেই চলে। তখন রোজের নানুমনি এসে ওকে সামলানোর চেষ্টা করে। এখনো রোজ ঠিক হয়নি। কথা বলে না সবসময় জানালার পাশে বসে থাকে। এভাবে ১মাস কেটে যায়। রোজ ড্রয়িংরুমে সোফায় বসে আছে। রোজের নানুমনি এখন এখানে নেই। রোজের মামা অসুস্থ হওয়ায় চলে গিয়েছে। রোজ বসে আছে এরমাঝে সামির হাজির হলো। রোজ সামিরের দিকে একবার তাকিয়ে আগের মতো বসে রইলো। সামির রোজের সামনের সোফায় বসে বললো।”
—-” কেমন আছো রোজ?”
রোজ চুপচাপ বসে আছে। রোজকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে সামির নিজেই আবার বললো,
—-” জানি তুমি ভাল নেই। এই ১মাস যা ঝড় বয়ে গেলো তোমার উপর দিয়ে। সত্যি আমি বুঝতে পারছি না তোমাকে কি বলে শান্তনা দেবো। তবে আমি তো তোমাকে ভালবাসি তাই ভাবছি তোমাকে আমার সাথে নিয়ে যাবো। তোমাকে এত বড় বাড়িতে একা রাখতে পারিনা। তুমি চলো আমার সাথে।”
বলে সামির উঠলো রোজ এখনো বসে আছে। সামির ভ্রু কুঁচকে বললো,
—-” কি হলো চলো।”
বলে সামির রোজের হাত ধরলো। রোজ এবার নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে বললো,
—-” কি করছো তুমি?”
সামির মুচকি হেসে বললো।”
—-” আমার সাথে তোমাকে নিয়ে যাচ্ছি,
রোজ শান্তভাবে বললো।”
—-” আমি তোমার সাথে যাবো না,
সামির বাঁকা হেসে বললো।”
—-” তুমি চাইলে জোড় করতে পারি,
—-” আমাকে একা ছেড়ে দাও সামির ভাইয়া। প্লিজ চলে যাও তুমি। আমি একটু একা থাকতে চাই।”
সামির হালকা হেসে বললো,
—-” ও জান হাসবেন্ডকে কেউ ভাইয়া বলে না।”
_____________
রোজ এবার রেগে বললো,
—-” কে কার হাসবেন্ড? এসব কি বলছো তুমি? মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে তোমার? পাগল হয়ে গিয়েছো তুমি?”
—-” হ্যা পাগল হয়ে গিয়েছি আমি তোমার জন্য। শোনো রোজ আমি কোন ঝামেলা চাইনা। তাই চুপচাপ আমার সাথে চলো। আমি চাইনা এই অবস্থায় তুমি আবার কোন শক পাও সো চলো।”
রোজ ঠাটিয়ে সামিরকে এক চর মেরে বললো,
—-” বেইমান তুমি খুব বেইমান। আরে আমি তোমার বেস্ট ফ্রেন্ডের ভালবাসা সামির খাঁন। আর তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড মারা গিয়েছে। ছোট থেকে যার সাথে বড় হলে তার জন্য কষ্ট হচ্ছে না তোমার? আমি শুভ্রকে ভালবাসি আর ভালবাসবো। তাই তোমার সাথে আমি যাবো না বুঝেছো? তুমি এখান থেকে যাবে? নাকি আমি দারোয়ান ডেকে ঘাড় ধাক্কা মেরে করবো?”
সামিরও রোজকে এক চর মেরে দিলো। রোজ ব্যালেন্স রাখতে না পেরে ফ্লোরে পড়লো। সামির হাটু গেড়ে ফ্লোরে বসে রোজের সামনে একটা ভিডিও চালু করলো। ভিডিও দেখে রোজ থম মেরে বসে আছে। সামির শয়তানি হেসে বললো।”
—-” কি বলো জান? একে শেষ করে দেই?”
রোজ হাউ মাউ করে কেঁদে বললো,
—-” এমন করো না সামির ভাইয়া। আমি একদম একা হয়ে যাবো। ওকে মেরো না প্লিজ ভাইয়া। আমি যাবো তোমার সাথে তুমি যা বলবে তাই করবো। তবুও ওকে মেরো না আল্লাহর দোহাই তোমার।”
সামির রোজের পানি মুছে বললো,
—-” তাহলে চলো আমার সাথে।”
রোজ রোবটের মতো সামিরের সাথে গেলো। সামিরের বাড়িতে রোজকে এনে রুমে এসেই ধাক্কা মেরে বিছানায় ফেলে দিলো। রোজ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। সামির মুচকি হেসে বললো,
—-” যাও কফি করে নিয়ে এসো স্বামীর সেবা করো।”
রোজ বিছানা থেকে নেমে বললো,
—-” স্বামী মানে?”
—-” ইয়েস স্বামী মানে হাসবেন্ড। আজ থেকে সবাই জানবে তুমি আমার বউ। এতক্ষণে সবাই জেনেও গিয়েছে। আর তুমিও সেভাবে চলবে যেভাবে আমি চাইবো। এখন যাও কফি করে নিয়ে আসো।”
রোজ রেগে চেঁচিয়ে বললো,
—-” না এটা মিথ্যে কথা। আমি কিছুতেই সবাইকে বলবো না তুমি আমার স্বামী। আমি সবাইকে সত্যিটা জানিয়ে দেবো। আমি তোমার কোন কথা শুনবো না। এখানে আসতে বলেছো এসেছি। এরথেকে বেশী কিছু আমার থেকে আশা করো না।”
সামির জোড়ে হেসে বললো,
—-” আশা কেন করবো? আমি জানি তো তুমি করবে। ভুলে গেলে ভিডিওর কথা?”
রোজ ভয় পেয়ে বললো।”
—-” দে্ দেখো সা্ সামির ভাইয়া,
ওমনি সামির রোজের গাল চেপে রেগে বললো।”
—-” সামির ভাইয়া না সামির। আর মাথায় রাখো আমি তোমার হবু স্বামী। তবে এটা শুধু এই চার দেয়ালের মাঝে। দুনিয়ার সামনে আমি তোমার বিয়ে করা স্বামী,
বলে রোজকে ধাক্কা মেরে সামির চলে গেলো। রোজ চিৎকার করে কাঁদতে থাকলো। কিন্তুু আজ কেউ নেই এই চোখের পানি মুছে দেয়ার জন্য। এরপর থেকে মার খাওয়া রোজের প্রতিদিনকার রুটিন হয়ে গেলো। সামিরের কথার একটু নড়চড় হলেই সামির রোজকে মারে। সেই সাথে আরো কেউ একজন মারে। যার চেহারা রোজ কখনো দেখেনি। রোজের শরীরে আজও সেই দাগগুলো আছে। সারা শরীরে মারের দাগ।”
_____________
“বর্তমান”
সামিরের মায়ের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। রোজ জানালার কাছে দাড়িয়ে আছে। রোজের চোখের পানিতে রোজের গলা ভিজে জামাও ভিজে গিয়েছে। সামিরের মা বসা থেকে উঠে রোজকে ঘুরিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
—-” মা রে আমাকে ক্ষমা করে দে মা। আমি পারিনি নিজের ছেলেকে মানুষ করতে। আমার ছেলেটা যে এমন অমানুষ হয়ে গিয়েছে বুঝিনি।”
রোজ সামিরের মা কে ছেড়ে স্লান হেসে বললো,
—-” না আন্টি এতে আপনার দোষ নেই। দোষ আমার ভাগ্যের। না হলে যেই শুভ্রকে ভালবেসে এতকিছু সেও আমাকে কেন ঠকালো?”
সামিরের মা অবাক হয়ে বললো।”
—-” শুভ্র কি করে ঠকালো? ও তো,
—-” মরেনি।”
সামিরের মা অবাকের শেষ পর্যায় গিয়ে বললো,
—-” এসব কি বলছিস?”
—–” নিজের ক্যারিয়ার গড়তে উনি সেদিন আমাকে না জানিয়ে লন্ডন গিয়েছিলো। আর সাহেল আঙ্কেলকে দিয়ে আমাকে মিথ্যে বলেছিলো। আমি কোনদিন ভাবিনি উনি এমন করবে। আমার ভাগ্যটাই খারাপ তাই তো সবাই আমাকে ছেড়ে চলে গেলো। যাকে ভালবাসলাম সে ঠকালো।”
রোজ কাঁদতে, কাঁদতে ফ্লোরে বসে পড়লো,
—-” আন্টি আমি খুব ক্লান্ত আন্টি। এই ২বছরে এমন দিন নেই যেদিন আমি কাঁদিনি। আর কত কাঁদবো আমি বলতে পারেন? আমি মরে কেন যাইনা আন্টি? আল্লাহ আমাকে কেন নিয়ে যায় না? আমি এই ধোকাবাজ পৃথিবীতে বাঁচতে চাই না। এই পৃথিবীটা বড্ড স্বার্থপর। এই স্বার্থপর মানুষদের ভীড়ে নিজের অস্তিত্ব আজকাল খুজে পাইনা আমি। সবাই বেইমান সবাই ধোকাবাজ। প্রতিদিন এত মানুষ মরছে আমি কেন মরি না? আমি নিজের মৃত্যু চাই আন্টি।”
সামিরের মা বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছে রোজের কান্না দেখে। উনি ভাবতে পারছে না ওইটুকু একটা মেয়ে বুকের মাঝে এতটা কষ্ট নিয়ে বেঁচে আছে। আসলে জিন্দা লাশ হয়ে বেঁচে আছে। সামিরের মা রোজকে বুকে জড়িয়ে নিলো। রোজ চুপচাপ ওনার বুকে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে। এরমাঝে রোজ কারো ভয়েস শুনলো। রোজের বুঝতে দেরী হলো না এটা শুভ্র। রোজ চোখ মুছে নিচে গেলো। সামিরও নিচে এসে শুভ্রকে দেখে হাসলো। শুভ্রর দিকে তাকিয়ে আছে সামির। রোজ শুভ্রকে দেখে এগিয়ে গিয়ে বললো,
—-” আপনি এখানে কি করছেন?”
শুভ্র গা ছাড়া ভাব নিয়ে বললো।”
—-” আমার সাথে চলো,
রোজ তাচ্ছিল্য হেসে বললো।”
—-” লজ্জা করছে না এটা বলতে? অবশ্য আপনার ভেতরে লজ্জা বলে কিছু থাকলে তো। আমি কোথাও যাচ্ছি না, ইউ ক্যান গো নাউ,
সামির একটা ছোট নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো।”
—-” দেখ শুভ্র তুই বেঁচে আছিস দেখে ভাল লাগছে। এবার আমার বউকে ছেড়ে চলে যা,
সামিরের পরের কথায় শুভ্র অবাক না হলেও আগের কথায় অবাক হলো। শুভ্র অবাক চোখে বললো।”
—-” আমি বেঁচে আছি দেখে ভাল লাগলো মানে? কেন আমার কি মরে যাওয়ার কথা ছিলো নাকি?”
রোজ রেগে বললো,
—-” নাটক বন্ধ করে চলে যান।”
—-” রেড রোজ আমি আজও তোমাকে ভালবাসি। আর এটাও জানি তুমি সামিরের ওয়াইফ হলেও আমাকে ভালবাসো। ও মেবি তোমাকে জোড় করে বিয়ে করেছিলো। তুমি প্লিজ চলো আমার সাথে,
বলে শুভ্র রোজের হাত ধরতে গেলেই রোজ চেঁচিয়ে বললো।”
—-” না সামির আমাকে জোড় করেনি। সামির আমার স্বামী শুনতে পাননি? চলে যান এখান থেকে,
শুভ্রর চোখে পানি টলটল করছে। সামিরের দিকে তাকিয়ে চোখ মুছে বললো।”
—-” সত্যিই অনেক ভাগ্যবান তুই সামির। ওকে কত ভালবাসলাম আমি, মোনাজাতে আল্লাহর কাছে কত চাইলাম, কত কান্না করলাম শুধু ওকে পেতে। তুই সেভাবে না চাইতেও পেয়ে গেলি। ওর খেয়াল রাখবি প্লিজ,
বলে দরজার দিকে পা বাড়ালো শুভ্র আবার দাড়িয়ে পিছন ফিরে বললো।”
—-” ওহহহ হ্যা ও রাগটা একটু বেশী করে মানিয়ে নিবি,
শুভ্র আর এক মুহূর্ত না দাড়িয়ে চলে গেলো। শুভ্র যেতেই রোজ ধপ করে বসে পড়লো। মুখ চেপে ধরে কান্না করে যাচ্ছে। এদিকে শুভ্র গাড়িতে বসে ওড়নার টুকরোটা বুকে জড়িয়ে রেখেছে। সামির হাত মুঠো করে রেখেছে। হঠাৎ করেই সামির দেয়ালে নিজের হাত ঘুষি মারলো। সাথে, সাথে সামিরের হাত থেকে রক্ত পড়তে শুরু করলো। রক্তে ফ্লোর লাল হয়ে গিয়েছে।”
#চলবে…