#ভালবাসার এক রাত❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ রোজ
#পর্ব- ১৩
শুভ্র কিউট ফেস করে কানে হাত দিয়ে ঠোট উল্টে দাড়িয়ে আছে। শুভ্রকে দেখতে একটা কিউট বাচ্চার মতো লাগছে। রোজের ইচ্ছে করছে শুভ্রর গাল দুটো টেনে বলতে। যে আপনি এত কিউট কেন? রোজ মুচকি হেসে লাবটার পাশ কাটিয়ে শুভ্রর কাছে গেলো। দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। রোজের আরো একটা ইচ্ছে করছে এই মুহূর্তে। রোজের ইচ্ছে করছে শুভ্রর চোখের গভীরে হারিয়ে যেতে। নিজের ভাবনায় লজ্জা পেয়ে রোজ হুট করে শুভ্রকে জড়িয়ে ধরলো। শুভ্রও শক্ত করে রোজকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো। দুজন চুপ করে দুজনের হার্টবিট শুনছে। চাঁদ, তারাও যেন মুগ্ধ হয়ে ওদের দেখছে। দুজনেই অনেকক্ষণ চুপ করে থাকার পর রোজ বললো।”
—-” শুভ্র ভাই,
শুভ্র রোজের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো।”
—-” কি ভাই?”
রোজও ভ্রু কুঁচকে বললো,
—-” শুভ্র ভাই।”
শুভ্র অসহায় ফেস করে বললো,
—-” এখনো ভাই বলবে?”
রোজ দুষ্টু হাসি দিয়ে বললো।”
—-” সারাজীবন ধরে ভাই বলবো,
শুভ্র ছোট করে শ্বাস ছেড়ে বললো।”
—-” ৫বছর ধরে ভাবছি। কবে তুমি আমাকে শুধু আমার নাম ধরে বলবে। পরে আবার নিজেই ভাবতাম তুমি তো আর জানো না আমি তোমাকে ভালবাসি। এখন যখন জানলে তখনও ভাই বলবে? হাউ রুড রেড রোজ,
রোজ অবাক হয়ে বললো।”
—-” আপনি আমাকে ৫বছর ধরে ভালবাসেন?”
শুভ্র হালকা হেসে বললো,
—-” সে সব বাদ দাও। চলো জ্যোৎস্না বিলাস করি।”
বলে রোজের হাত ধরে হাটা ধরলো। রোজ এখনো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। ও ভাবতেও পারেনি শুভ্র ওকে এতগুলো বছর ধরে ভালবাসে। রোজ নিজের দু হাত দিয়ে শুভ্রর হাত জড়িয়ে ধরলো। শুভ্র রোজের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। আকাশে বিশাল বড় থালার মতো চাঁদ উঠেছে। তার পাশ দিয়ে তাকে পাহারা দিতে ব্যস্ত অসংখ্য তারা। চাঁদের আলোয় প্রকৃতি আলোকিত হয়ে ঝলমল করছে। রোজ অবাক চোখে ঘুরে, ঘুরে সব দেখছে। আর শুভ্র দেখছে তার রেড রোজকে। রোজ চাঁদটার দিকে তাকিয়ে আছে আর শুভ্র রোজের দিকে। রোজ সেটা খেয়াল করে বললো,
—-” কি হলো চাঁদ দেখবেন না?”
শুভ্র মুচকি হেসে বললো।”
—-” দেখছি তো,
রোজ কপাল কুঁচকে বললো।”
—-” আপনি তো আমাকে দেখছেন,
শুভ্র নেশাভরা দৃষ্টিতে বললো।”
—-” তুমিই তো আমার চাঁদ,
রোজ লজ্জা পেয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলো। শুভ্র রোজের কাছে এসে রোজের বাম হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো।”
—-” তোমার এই চাঁদ দেখতে পছন্দ। আর আমার চাঁদ দেখা অবস্থায় তোমাকে। আমার কাছে সবথেকে বেশী যেই দৃশ্য দেখতে পছন্দ সেটা তুমি। আমার তোমাকে দেখতেই ভাল লাগে,
রোজ লজ্জা পেয়ে মিনমিন করে বললো।”
—-” চলুন আমরা বাড়ি যাই। অনেকক্ষণ হলো এসেছি। সবাই হয়তো খুজতে শুরু করেছে,
শুভ্র বুঝলো রোজ লজ্জা পাচ্ছে। ও চায় না রোজ লজ্জা পেয়ে একেবারে ওর সামনেই না আসুক। তাই রোজের হাত ধরে ফিরে এলো। গেইটের কাছে এসো দুজন আগে পরে গেলো। আগে রোজ ভিতরে গেলো পরে শুভ্র। ওদের ফ্রেন্ডরা গল্প করতে ব্যস্ত। নিরব রোজের কাজিন তিথির সাথে কথা বলছে। চৈতি রিকের সাথে কথা বলছে। শাদ আর রাকিবও মেয়েদের সাথে গল্প করছে। রোদ ফোনে গেম খেলছে। আর সামির গাল ফুলিয়ে একপাশে বসে আছে। শুভ্র আর রোজ এসে ওদের কাছে বসলো। শুভ্র গিয়ে সামিরকে বললো।”
—-” কি রে কি হয়েছে?”
সামির শুভ্রকে দেখে বললো,
—-” আমার এখানে ভাল লাগছে না।”
টুপ করে রোজ বললো,
—-” আমারও তো এখানে ভাল লাগে না। বিয়ে না থাকলে আমি আসতামই না।”
____________
সামির হাত উঁচু করে বললো,
—-” হাই ফাইভ?”
রোজও সামিরের সাথে হাই ফাইভ করলো। এরমাঝে একটা মেয়ে এসে শুভ্রকে বললো।”
—-” হেই হ্যান্ডসাম প্রেম করো?”
রোজ রাগী লুক নিয়ে তাকালো। আর শুভ্র ভ্রু কুঁচকে বললো,
—-” কেন?”
মেয়েটি লাজ লজ্জা ফেলে বললো।”
—-” আমার সাথে আসতে পারো। আই মিন চান্স নিতে পারো। সত্যি বলতে তোমাকে দেখেই আমি ফিদা হয়ে গিয়েছি। বিশেষ করে তোমার চোখ জাস্ট খুন হয়ে গিয়েছি ওই চোখে,
রোজ বিরবির করে বললো।”
—-” শুভ্র ভাই শুধু আমার। ওনার দিকে যে নজর দেবে তার চোখ তুলে নেবো। শুভ্র ভাই আমার বয়ফ্রেন্ড,
চৈতি রোজকে বিরবির করতে দেখে বললো।”
—-” কি এত বিরবির করছিস?”
রোজ রেগে বললো,
—-” কিছু না।”
বলে হনহন করে চলে গেলো। শুভ্র মেয়েটাকে ভাগিয়ে নিজেও গেলো। দুই তলার শিরিতে এসে রোজের হাত ধরে বললো,
—-” আরে রাগ করছো কেন? আমি কি করলাম?”
রোজ রেগে বললো।”
—-” আপনাকে এত কিউট হতে বলেছে কে? আর আপনি আপনার চোখ বের করে রাখবেন না,
শুভ্র ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললো।”
—-” তাহলে কি করবো?”
রোজ ভেংচি কেটে বললো,
—-” এমনি সময় তো সাইন গ্লাস পড়ে থাকেন। এখন আপনার সাইন গ্লাস কোথায়?”
শুভ্র চোখ ছোট, ছোট করে বললো।”
—-” এই রাতে আমি সাইন গ্লাস পড়ে থাকবো?”
রোজ আরেকদিকে মুখ ফিরিয়ে বললো,
—-” হ্যা থাকবেন।”
শুভ্র মুচকি হেসে বললো,
—-” আচ্ছা থাকবো এখন চলো।”
শুভ্র রোজকে নিয়ে আবার নিচে এলো। বিশাল বড়, বড় চারটে সাউন্ড বক্স বাজছে। সবাই খুব মজা করছে। ওরা রাত চারটায় ঘুৃমাতে গেলো। সকালে আবার ৭টার দিকে উঠলো সবাই। তবে রোজ বা শুভ্র এখনো ওঠেনি। ওদের ফ্রেন্ডরাও ওঠেনি আর রোদ ও না। ৮টা বাজতেই সবাইকে ব্রেকফাস্ট করতে ডাকছে। রোজের আম্মু আর শুভ্রর আম্মু বললো,
—-” ওরা এখনি উঠবে না।”
ওদের মামীরা বললো,
—-” শহরের বাবু আর বিবিদের নাস্তা রেডি করে রাখো।”
সবাই আবার কাজে বিজি হয়ে গেলো। আজকে ঈশানের গায়ে হলুদ। আর ছেলের বাড়ি থেকে মেয়ের বাড়ি যাবে মেয়ের গায়ে হলুদ ছোঁয়াতে। তাই সবাই তক্ত সাজাচ্ছে। তক্ত সাজানো হলো ১০টায়। আর ওরাও ঘুম থেকে উঠলো ১০টায়। রাতে অনেক জেগে এখন বেলা করে উঠলো। ফ্রেশ হয়ে সবাই একসাথেই নিচে এলো। রোজ, শুভ্র একসাথে বললো,
—-” গুড মর্নিং অল।”
সবাই ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। রোজ আর শুভ্র কিছুই বুঝতে পারছে না। রোজ মুখটা এদিক, ওদিক করে চলে গেলো। সবাই এবার শুভ্রর দিকে তাকিয়ে আছে। শুভ্র বিরক্তি নিয়ে বললো,
—-” হোয়াট? এম আই লুকিং লাইক এ এলিয়েন?”
সবাই মাথা নাড়িয়ে না বললো। শুভ্রর আম্মু হাসতে, হাসতে এসে বললো।”
—-” তোরা এত লেট করে ঘুম থেকে উঠেছিস তো। তাই সবাই এভাবে তাকিয়ে ছিলো। এখন যা গিয়ে ব্রেকফাস্ট করে নে,
শুভ্র গেলো ব্রেকফাস্ট করতে। ব্রেকফাস্ট শেষে সবাই একটু ঘুরতে বের হলো। গ্রামটা কতক্ষণ ঘুরে দেখে বাড়ি এলো সবাই। দুপুরবেলা সবাই শাওয়ার নিয়ে নিলো। দেখতে, দেখতে সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। সবাই হলুদের জন্য রেডি হচ্ছে। রোজ হলুদের মাঝে লাল পাড়ের কাতান শাড়ি পড়েছে। ঠোটে গাড় খয়েরী লিপস্টিক। চোখে মোটা করে কাজল দিয়েছে। চুলগুলো ছাড়া ব্যাস রোজ রেডি। চৈতিও সেম সাজ দিয়েছে। সব মেয়েরা এক সাজ সেজেছে। আর ছেলেরা হলুদ পাঞ্জাবী লাল পায়জামা পড়েছে। শুভ্র একা পাঞ্জাবীর সাথে কালো জিন্স প্যান্ট করেছে। হাতে কালো ব্রান্ডের ঘড়ি। চোখে কালো ফ্রেমের সাইন গ্লাস। চুলগুলো স্পাইক করেছে। এখানকার মেয়েরা চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে। রোজ রাগে ফোস, ফোস করছে। সবাই রেডি হয়ে বেরিয়ে এসে গাড়িতে বসলো। আগে মেয়েকে হলুদ লাগিয়ে এসে ঈশানকে হলুদ লাগাবে।”
#চলবে…
#ভালবাসার এক রাত❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ রোজ
#পর্ব- ১৪
সবাই গাড়িতে বসে রওনা হলো মেয়ের বাড়ির উদ্দেশ্যে। রোজ আর শুভ্র পাশাপাশি বসেছে। তবে সামনের সিটের মেয়েরা শুভ্রকে এটা, ওটা জিগ্যেস করছে। শুভ্রর বিরক্ত লাগলেও উত্তর দিচ্ছে। কারণ পরিবেশ বলে একটা কথা আছে। রোজ ভ্রু কুঁচকে দেখে যাচ্ছে শুধু। শুভ্র বেশ বুঝতে পারছে রোজ রাগে ফুসছে। শুভ্র একটা বাহানা দিয়ে কানে হোডফোন গুজে নিলো। রোজ সেটা দেখে মুচকি হাসি দিয়ে বসে রইলো। প্রায় ৩ঘন্টা পর ওরা এসে প্রিয়াদের বাড়ি পৌছালো। প্রিয়া হচ্ছে ঈশানের হবু বউয়ের নাম। ওরা গাড়ি থেকে তক্ত নিয়ে বের হতেই প্রিয়ার বাড়ির লোক এসে ওদের ভেতরে নিয়ে গেলো। শুভ্র, সামির, নিরব সেই একটা ভাব নিয়ে হাটছে। মেয়েদের নজর ওদের দিকে। রিক আর চৈতি কথা বলতে, বলতে আসছে। শুভ্র পাঞ্জাবীর বুকের কাছে দুটো বোতাম খুলে দিয়েছে। ওদের নিয়ে স্টেজের সামনে বসিয়েছে। শুভ্র দিন, দুনিয়া ভুলে ফোনে গেম খেলছে। এরমাঝে কয়েকটা মেয়ে এসে ওদের কাছে বসলো। শুভ্র তবুও কারো দিকে তাকালো না। কতক্ষণ পর, পর সে রোজকে দেখছে। মেয়েগুলোর মধ্যে একজন বললো।”
—-” এখানে কি আমাদের বেয়াইরা আছে?”
রিক দাত কেলিয়ে বললো,
—-” হ্যা আছে তো।”
আরেকটা মেয়ে হেসে শুভ্রকে দেখিয়ে বললো,
—-” উনি কি হয়?”
রিক শুভ্রর দিকে তাকিয়ে বললো।”
—-” উনি বেয়াই হয়,
বলতে না বলতে মেয়েটা শুভ্রর হাত ধরে বললো।”
—-” হাই বেয়াই,
শুভ্র চোখ বড়, বড় করে একবার হাতের দিকে তাকাচ্ছে। তো আরেকবার রোজের দিকে তো আরেকবার মেয়েটার দিকে। শুভ্র হাতটা সরিয়ে মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো।”
—-” এটা আমাদের প্রথম দেখা রাইট? আর প্রথম দেখায় এভাবে কারো হাত ধরাটা ঠিক কোন ম্যানার্স?”
মেয়েটা মাথা নিচু করে বললো,
—-” আই এম সরি।”
শুভ্র আবারও হাসি দিয়ে বললো,
—-” ইটস ওকে, আই হোপ ইন ফিউচার এরকম করবেন না।”
রোজ মুচকি হাসি দিয়ে চৈতির সাথে কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো। সবাই গিয়ে প্রিয়াকে হলুদ লাগিয়ে এসেছে। এরপর ওদের খেতে দিলো। সবাই কোনরকম খেয়ে আবার রওনা হলো। খেতে গেলে অনেক লেট হতো। তাই ওরা একটু খেয়েই রওনা দিয়েছে। এখানে আবার আসতে, আসতে অনেক রাত হয়ে গিয়েছে। ঈশানকে হলুদ লাগিয়ে নাচ, গান করে রাত ৪টায় সবাই ঘুমাতে গেলো,
____________
আজকে বিয়ে সবাই কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। যেহেতু এটা গ্রাম সো এখানে বিয়ের দিন আবির খেলা হয়। সব বাচ্চারা আবির নিয়ে খেলছে। রোজ রুমের মধ্যে ঘাপটি মেরে বসে আছে। কজ সে আবির খেলতে চায় না। আর শুধু আবির না বাচ্চারা রংও খেলছে। আর এই রং সহজে উঠতে চায় না। শুভ্র ছাদে ছিলো রোজকে নিচে দেখতে না পেয়ে নেমে এলো। রিক আর নিরব কি নিয়ে যেন কথা বলছে। রোদ গেম খেলছে চৈতি পাশে বসে দেখছে। শুভ্র কপাল কুঁচকে এদিক, ওদিক তাকাচ্ছে। শুভ্রর এমন উকিঝুকি মারা দেখে তিথি এসে বললো।”
—-” শুভ্র ভাইয়া কাউকে খুজছো?”
শুভ্র মাথা নেড়ে না বললো। তিথি মিটিমিটি হেসে বললো,
—-” রোজকে খুজছো?”
শুভ্র চোখগুলো রসগোল্লার মতো করে বললো।”
—-” তুই কি করে জানলি?”
তিথি মুচকি হেসে বললো,
—-” সেটা বড় কথা না। কথা হলো গিয়ে তোমার রেড রোজ তার রুমে।”
শুভ্র তিথির গাল টেনে উপরে গেলো। রোজ জানালার গ্রিল ধরে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। শুভ্র পা টিপে, টিপে রোজের পেছনে গিয়ে বললো,
—-” ভাউউউ।”
রোজ ভয় পেয়ে পেছনে তাকালো। শুভ্র দাত কেলিয়ে দাড়িয়ে আছে। রোজ রাগী লুক নিয়ে বললো,
—-” এটা কি হলো?”
শুভ্র ভ্রু কুঁচকে বললো।”
—-” সবাই নিচে মজা করছে। তুমি একা এখানে কি করছো?”
—-” আমি নিচে যাবো না,
কথাটা গাল ফুলিয়ে বললো রোজ। শুভ্র ছোট, ছোট চোখ করে বললো।”
—-” কেন? নিচে যাবে না কেন?”
—-” সবাই রং খেলছে। আর আমি চাই না আমাকে কেউ রং লাগাক। আমার একটুও ভাল লাগে না,
রোজের কথায় শুভ্র রুম কাঁপিয়ে হেসে দিলো। রোজ বোকার মতো তাকিয়ে বললো।”
—-” হাসির কি বললাম আমি শুভ্র ভাই?”
শুভ্র হাসি থামিয়ে বললো,
—-” সিরিয়াসলি রেড রোজ? এর জন্য তুমি রুমে বসে আছো?”
রোজ মাথা নাড়ালো মানে হ্যা। শুভ্র শার্টের হাতা গুটিয়ে বললো।”
—-” আরে সবাইকে আবির লাগাচ্ছে না। নিচে তো সামির, রোদ, নিরব আর চৈতিও আছে। আমিও ছিলাম এতক্ষণ দেখোনি? এখন চুপচাপ চলো আমার সাথে,
রোজ চোখ বড়, বড় করে বললো।”
—-” না আমি যাবো না,
—-” তোমাকে যেতেই হবে।”
বলে শুভ্র রোজকে টেনে নিচে নিয়ে এলো। নিচে আসতেই রোজের উপর আবির পড়লো। শুভ্র শুকনো ঢোক গিলছে। রোজ রেগে দুম করে শুভ্রকে ধাক্কা মেরে রং পানির মধ্যে ফেলে দিলো। সাথে, সাথে শুভ্র রংয়ের ভুতে পরিণত হলো। শুভ্র রোজকে রং পানি দিতে গিয়ে রোদকে দিয়ে দিয়েছে। ব্যাস শুরু হয়ে গেলো এদের রং খেলা। সবাই রং খেলা শেষে গোসল করতে গেলো পুকুরে। পুকুরে এক দফা চুবাচুবি করে বাড়ি ফিরে সবাই রেডি হলো,
____________
শুভ্র আজ ব্ল্যাক কালার পাঞ্জাবী পড়েছে। ব্ল্যাক পাঞ্জাবীর উপর হোয়াইট কালার কটি। ব্ল্যাক জিন্স প্যান্ট, ব্ল্যাক সুজ। হাতে ব্রান্ডের ব্ল্যাক কালার ঘড়ি। চোখে ব্ল্যাক সাইন গ্লাস। পুরোই ঘায়েল করা লুক। রিক, সামির, নিরব ঘুরে, ঘুরে শুভ্রকে দেখছে। ওদের এসব দেখে শুভ্র ভ্রু কুঁচকে বললো।”
—-” হোয়াট ইজ দিস গাইস? আমাকে এভাবে দেখছিস কেন তোরা?”
নিরব দাত কেলিয়ে বললো,
—-” ইউআর লুকিং সো হট শুভ্র। আমি মেয়ে হলে তোকে লাইফ পার্টনার করতাম।”
শুভ্র নিরবের পিঠে গাট্টা মেরে বললো,
—-” শালা চুপ কর।”
পাশ থেকে সামির বললো,
—-” দেখিস শুভ্র তুই যেন পরে নিরবের শালা না হয়ে যাস।”
নিরব সামিরকে চিমটি কেটে বললো,
—-” চুপ কর।”
এরমাঝে সেখানে সবাই এলো। রোজ খয়েরী কালার লেহেঙ্গা পড়েছে। সাথে সব খয়েরী কালার জুয়েলারি। শুভ্র হা করে রোজকে দেখছে। আর সব মেয়েরা শুভ্রকে দেখছে। রোজ শুভ্রর পাশে এসে ফিসফিস করে বললো,
—-” শুনুন একদম মেয়েদের থেকে দুরে থাকবেন।”
শুভ্র মুচকি হেসে বললো,
—-” বাট তোমার থেকে না।”
এরপর সবাই গাড়িতে উঠলো। রোজের কথামত শুভ্র কোন মেয়ের সাথে কথা বলেনি। যদিও রোজ না বললেও শুভ্র কথা বলতো না। শুভ্র রোজের সাথে, সাথে থেকেছে। ভালমতই ওদের বিয়ে সম্পূর্ণ হলো। বউ নিয়ে বাড়ি আসতে, আসতে রাত ১০টা বেজেছে। সব নিয়ম পালন করতে, করতে অনেক রাত হওয়ায় সবাই গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। এখানে আরো ২দিন থেকে রোজ, শুভ্ররা ফিরে এলো। দিন চলতে লাগলো নিজের মতো। রিক আর চৈতির রিলেশন হয়ে গিয়েছে এরমাঝে। তিথি আর নিরবও জমিয়ে প্রেম করছে। রোজ, শুভ্রর সম্পর্কও চলছে ঠিকমত। দেখতে, দেখতে অনেকদিন কেটে গিয়েছে। তবে ইদানিং সামিরের মাঝে সবাই পরিবর্তন দেখছে। আগের মতো কারো সাথে কথা বলে না। শুভ্র আর নিরব ভাবছে হয়তো স্টাডি নিয়ে ঝামেলায় আছে। রোজ আর চৈতি বসে কথা বলছে। হঠাৎ সামির এসে রোজের হাত ধরলো। হঠাৎ এমন হওয়ায় ওরা দুজনেই ভড়কে গেলো। সামির রোজের হাত টেনে নিয়ে যেতে লাগলো। রোজ অবাক হয়ে বললো,
—-” সামির ভাইয়া কি হয়েছে?”
সামির কোন প্রশ্নেরই উত্তর দিচ্ছে না। ভার্সিটিতে এসেই শুভ্র এটা দেখে অবাক হলো। শুভ্র দৌড়ে সামিরের সামনে এসে বললো।”
—-” সামির কি হয়েছে? তুই ওকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস?”
সামির রোজের হাত ধরেই বললো,
—-” সামনে থেকে সর শুভ্র।”
—-” সামির হোয়াটস রং উইথ ইউ?”
কথাটা শুভ্র বলতেই সামির চিৎকার করে বললো,
—-” সিরিয়াসলি শুভ্র? তুই আমাকে বলছিস? হোয়াটস রং উইথ মি? এই প্রশ্নটা তো আমার তোকে করা উচিত। হোয়াটস রং উইথ ইউ শুভ্র? কি করছিসটা কি তুই? কেন আমার প্রিয় জিনিষগুলো কেড়ে নিস তুই?”
শুভ্র চমকে বললো।”
—-” প্রিয় জিনিষ মানে?”
—-” হ্যা প্রিয় রোজ আমার প্রিয় জিনিষ। কজ আই লাভ রোজ। আমি রোজকে ভালবাসি। তুই ওকে আমাকে দিয়ে দে শুভ্র। প্লিজ ওকে ছেড়ে দে,
সামিরের কথা শুনে শুভ্র দু পা পিছিয়ে গেলো। রোজ শকড হয়ে সামিরের দিকে তাকিয়ে আছে। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। শুভ্রর চোখগুলো ছলছল করছে। রোজ শুভ্রর দিকে তাকিয়ে মনে, মনে বললো।”
—-” সামির ভাইয়া আর নিরব ভাইয়া শুভ্রর বেস্ট ফ্রেন্ড। শুভ্র ওদের অনেক ভালবাসে। শুভ্র তো এটাও বলেছিলো একদিন যে ওদের জন্য সব করতে পারে। শুভ্র কিছু বলছে না কেন? তাহলে কি শুভ্র আমাকে ছেড়ে দেবে সামির ভাইয়ার জন্য? না, না এসব কি উল্টো, পাল্টা ভাবছি আমি? এমন কিছু হবে না,
#চলবে…