#ভালবাসার এক রাত❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ রোজ
#পর্ব- ১১
রোজ মনে, মনে ঠিক করে নিলো। যে ও আর শুভ্রর সামনে যাবে না। কারণ ও চায় না ওর বেস্ট ফ্রেন্ডের ভালবাসা কেড়ে নিতে। তবে রোজের আজকে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। না চাইতেও বারবার চোখগুলো ভরে আসছে। রোজ বারবারই চোখগুলো মুচছে। কাঁদতে, কাঁদতে রোজ ফ্লোরে বসে পড়লো। এক হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে আছে। যাতে ওর কান্না কেউ না শুনতে পায়।”
এদিকে শুভ্র আর চৈতি ছাদ থেকে নেমে এলো। চৈতি নিজের ক্লাসে গেলো। আর শুভ্র এলো ওর গ্যাংয়ের কাছে। গ্যাংয়ের একটা ছেলে নাম শাদ বললো,
—-” ভাই ভাবী কোথায়?”
শুভ্র মুচকি হেসে বললো।”
—-” তোর ভাবী ক্লাসে,
নিরব ভ্রু কুঁচকে বললো।”
—-” তুই দেখেছিস ও কোথায়?”
শুভ্র কপাল কুঁচকে বললো,
—-” আমি তো ওকে ছাদ থেকে নিচে দেখলাম। ক্লাসে গিয়েছে মেবি আর কোথায় হবে?”
সামির পাশ থেকে বললো।”
—-” কিন্তুু আমি আর নিরব তো দেখলাম রোজ দৌড়ে বেরিয়ে গেলো,
শুভ্র চমকে বললো।”
—-” হোয়াট?”
শুভ্র আর এক মিনিট না দাড়িয়ে রোজের ক্লাসে চলে গেলো। ক্লাস অলরেডি শুরু হয়ে গিয়েছে। শুভ্র গিয়ে সোজা ক্লাসরুমে ঢুকলো। এদিক, ওদিক তাকিয়ে রোজকে খুজছে। শুভ্র কোনদিন এমন করে না তাই স্যার খানিকটা অবাক হয়ে বললো,
—-” কি হয়েছে শুভ্র?”
শুভ্র স্যারের দিকে তাকিয়ে বললো।”
—-” স্যার আমার কাজিন রোজ আসেনি?”
স্যার কপালে ভাজ ফেলে বললো,
—-” না রোজ তো আজ আসেনি।”
শুভ্র ওহ বলে ক্লাস থেকে বেরিয়ে এলো। আবার ওদের কাছে আসতেই গ্যাংয়ের আরেকটা ছেলে রাকিব বললো,
—-” ভাই ভাবী আছে ক্লাসে?”
শুভ্র মাথা নাড়িয়ে না বললো। নিরব নখ কামড়াতে, কামড়াতে বললো।”
—-” রোজ ওভাবে চলে কেন?”
শুভ্র নিরবের দিকে তাকিয়ে বললো,
—-” কিভাবে?”
_____________
সামির হালকা কেশে বললো।”
—-” আই থিংক রোজ কাঁদছিলো,
শুভ্রর মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। শুভ্র গেস করতে পারছে রোজ কেন কেঁদেছে? শুভ্র হতভম্ব হয়ে বললো।”
—-” রোজ কি ছাদে গিয়েছিলো?”
নিরব শুকনো ঢোক গিলে বললো,
—-” হ্যা একচুয়ালি গোলাপ এসে আমাকে বললো শুভ্র ভাই কোথায়? পরে আমি বললাম যে তোকে ছাদে যেতে দেখেছি। ওকে দেখলাম ছাদের দিকে যেতে তার কিছুক্ষণ পরই দৌড়ে বেরিয়ে গেলো।”
শুভ্র মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। রাকিব এগিয়ে এসে বললো,
—-” কি হয়েছে ভাই?”
শুভ্রকে চুপ থাকতে দেখে সামির বললো।”
—-” কি হয়েছে শুভ্র? এনিথিং রং?”
শুভ্র মাথা চেপে ধরে বললো,
—-” অনেক বড় মিসআন্ডার্সটানিং হয়ে গিয়েছে।”
সামির শুভ্রকে উঠিয়ে বললো,
—-” কি হয়েছে রে?”
শুভ্র ওদের সব খুলে বললো। সব শুনে ওরা হা করে তাকিয়ে আছে। শুভ্র অসহায় ফেস করে বললো।”
—-” রোজকে সব বুঝিয়ে বলতে হবে,
শাদ কপালে হাত দিয়ে বললো।”
—-” ভাবী কি বুঝবে?”
সামির কপাল কুঁচকে বললো,
—-” বুঝবে না কেন? আমরা সবাই ওকে বোঝাবো।”
নিরব মাথা নাড়িয়ে বললো,
—-” হ্যা একদম তাই আমরা ওকে বোঝাবো।”
শুভ্র চুল টানতে, টানতে বললো,
—-” তোরা কেউ কিছু বলবি না।”
সবাই একসাথে বললো,
—-” হোয়াই?”
শুভ্র হালকা হেসে বললো।”
—-” যা বলার আমি বলবো। আমার বিশ্বাস রোজ আমাকে বুঝবে,
____________
সবাই মুচকি হাসলো। সবাইকে বলে শুভ্র বেরিয়ে এলো। গাড়িতে বসে কতক্ষণ ভাবলো এখন রোজের বাড়ি যাবে কি না? পরে আবার ভাবলো রোজ ভার্সিটি এলে ওকে বুঝিয়ে বলবে। শুভ্র গাড়ি স্টার্ট দিয়ে নিজের বাড়ি চলে এলো। প্রতিদিন হাসি, খুশি এলেও আজ মুখ কালো করে এলো। সেটা দেখে শুভ্রর আম্মু এগিয়ে এসে বললো।”
—-” শুভ্র কি হয়েছে তোর?”
শুভ্র সোফায় ধপ করে বসে বললো,
—-” কিছু না আম্মু।”
শুভ্রর আম্মু ভ্রু কুঁচকে বললো,
—-” তাহলে মুখ কালো করে আছিস কেন?”
শুভ্র হালকা হেসে বললো।”
—-” আরে আম্মু কিছু হয়নি,
শুভ্র ওর আম্মুকে সাতপাঁচ বুঝিয়ে উপরে চলে গেলো। রুমে এসে ভাবলো সেদিন রাতের কথা। সেদিন রাতে শুভ্রই রোজের কাছে গিয়েছিলো। রোজকে নিচে এনেছিলো ভয় দেখাতে। কিন্তুু রোজের চেঁচানোর জন্য রোজের ঠোটে ঠোট ছুঁইয়ে দেয় শুভ্র। তাছাড়াও রাহি রোজকে শুভ্রর বোন বলেছিলো যেটা শুভ্রর ভাল লাগেনি। প্রচন্ড রাগ লাগছিলো শুভ্রর। রোজকে ভার্সিটি
থেকে যাওয়ার সময় ফলোও শুভ্র করেছিলো। শুভ্র হালকা শব্দ করে হেসে বললো।”
—-” আর আমার ঠোট ছোঁয়ানোর জন্য তুই সারা রাত কেঁদেছিলি। যেটা তোর চোখমুখ দেখেই আমি বুঝে গিয়েছিলাম। তাই ইচ্ছে করেই ডাবল ব্যাটারি বলে রাগিয়ে দিয়েছিলাম রে রেড রোজ,
পরেরদিন শুভ্র বসে আছে ভার্সিটিতে কখন রোজ আসবে সেই অপেক্ষা করছে। অবশেষে অপেক্ষার সপাপ্তি ঘটিয়ে রোজ এলো। রোজকে দেখেই শুভ্র দৌড়ে গেলো। শুভ্রকে দেখে রোজের ঠোটের কোনে হাসি ফুটলো। কিন্তুু গতকালের কথা মনে পড়তেই চোখমুখ শক্ত করে বললো।”
—-” আমার পথ ছাড়ুন শুভ্র ভাই,
শুভ্র রোজের হাত ধরলো। রোজ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। শুভ্র রোজকে নিয়ে কমনরুমে চলে এলো। দ্যান রোজের হাত ছেড়ে বললো।”
—-” রোজ আমার কথা শোন,
রোজের মাথা গরম হয়ে গিয়েছে। গতকালের কথা মনে পড়তেই রাগ লাগছে খুব। শুভ্র এতদিন ওর সাথে থেকে ওর মনে অনুভূতির সৃষ্টি করে শেষে ওকে ঠকিয়েছে। শুভ্র এতদিন যা করেছে যেভাবে কথা বলেছে কেয়ার করেছে। ওর কাছে এসেছে ওকে স্পর্শ করেছে। তাতে শুধু রোজ না যে কেউই উইক হতো। তাহলে এভাবে উইক করে কেন ঠকালো? যদি মনে, মনে এসব ছিলো আগে কেন বললো না রোজ কে? এসব ভেবেই রোজের মাথা ফেটে যাচ্ছে। রোজ ধাক্কা দিয়ে শুভ্রকে দুরে সরিয়ে বললো।”
—-” কি শুনবো আপনার কথা? কি শুনবো হ্যা? এটাই যে আপনি চৈতিকে ভালবাসেন? আরে যদি চৈতিকেই ভালবাসেন। তাহলে আমার কাছে কেন এসেছিলেন? কেন আমার মনে অনুভূতির সৃষ্টি করেছিলেন? আমার কেয়ার কেন করেছিলেন? আমাকে স্পর্শ কেন করেছিলেন? ইউ চিট,
শুভ্র রোজের কাছে এসে রোজের হাত ধরে বললো।”
—-” রোজ আমি চৈতিকে ভালবাসি না। আই লাভ ইউ ড্যাম ইট। প্লিজ আমাকে এক্সপ্লেইন করতে দাও,
রোজের কানে শুভ্রর কোন কথাই যাচ্ছে না। শুভ্র যে ওকে আই লাভ ইউ বলেছে এটা ওর মিথ্যে মনে হচ্ছে। শুভ্র ওর হাত ধরায় ও আরো রেগে গেলো। একটানে নিজের হাত ছাড়িয়ে শুভ্রকে ঠাটিয়ে চর মেরে দিলো। শুভ্র গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে। রোজ শুভ্রর শার্টের কলার ধরে বললো,
—-” আপনার যে এতগুলো রুপ আছে জানা ছিলো না তো। আগে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড আর এখন আমি। বাহ আপনার চরিত্রর তারিফ না করে পারছি না। ঠকবাজ লোক একটা।”
বলে রোজ বেরিয়ে চলে গেলো। আর শুভ্র একই জায়গায় দাড়িয়ে আছে। চোখগুলো লাল হয়ে আছে। চোখে পানি টলটল করছে। রোজ ওকে থাপ্পর মেরেছে সেটাতে ওর কষ্ট হচ্ছে না। কষ্ট হচ্ছে রোজ ওর চরিত্র নিয়ে কথা বলায়। শুভ্র ভাবতে লাগলো সত্যি কি ও ঠকবাজ?”
#চলবে…
#ভালবাসার এক রাত❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ রোজ
#পর্ব- ১২
রোজ হনহন করে বেরিয়ে চলে গেলো। শুভ্র গালে হাত দিয়ে একই জায়গায় ঠায় দাড়িয়ে আছে। চোখগুলো লাল হয়ে গিয়েছে। চোখে পানি টলটল করছে। রোজ শুভ্রকে চর মেরেছে তার জন্য ওর কষ্ট হচ্ছে না। ওর কষ্ট হচ্ছে রোজ ওর চরিত্র নিয়ে কথা বলায় ওকে ঠকবাজ বলায়। শুভ্র নিজেই ভাবছে সত্যিই কি ও ঠকবাজ? শুভ্র একটা বেঞ্চে ধপ করে বসে ভাবছে গতকালের কথা।”
শুভ্র অনেক আগে থেকেই রোজকে ভালবাসে। কিন্তুু কোনদিন রোজকে জানতে দেয়নি। তবে এবার শুভ্র ঠিক করে ও রোজকে ডিরেক্ট প্রপোজ করবে। আবার ভয়ও পাচ্ছে রোজ যদি রাজি না হয়? তবে রোজের পা মচকানোর পর রোজের সাথে কিছুদিন থেকে শুভ্রও বুঝতে পেরেছে। যে রোজ হয়তো ওকে নিয়ে কিছু ফিল করে। শুভ্র ভাবে আগে ও চৈতিকে সব বলবে। তাই ভার্সিটিতে এসে চৈতিকে সব বলে। সব শুনে চৈতি হা করে বলে উঠলো,
—-” ও মাই গড ভাইয়া। আপনি এত বছর ধরে রোজকে ভালবাসেন?”
শুভ্র মুচকি হেসে বললো।”
—-” হ্যা চৈতি। বাট আমি বুঝতে পারছি না ওকে কি করে বলবো?”
চৈতিও মুচকি হেসে বললো,
—-” আমিতো সেদিন ক্যান্টিনের ঘটনার পরই বুঝেছিলাম। যে আপনি রোজকে ভালবাসেন। ইনফ্যাক্ট এটা আমি রোজকে বলেছিলাম ও।”
এটা শুনে শুভ্র এক্সাইটেড হয়ে বললো,
—-” রোজ কি বলেছিলো?”
চৈতি মিনমিন করে বললো।”
—-” রোজ বিশ্বাস করেনি,
শুভ্র চোখ ছোট, ছোট করে বললো।”
—-” কেন বিশ্বাস করেনি?”
চৈতি মুখ ছোট করে বললো,
—-” আমি জানিনা ভাইয়া।”
শুভ্র নখ কামড়াতে, কামড়াতে বললো,
—-” রোজকে কি করে প্রপোজ করবো?”
চৈতি হালকা হেসে বললো।”
—-” ভিপি শুভ্র চৌধুরী ভয় পাচ্ছে? মানে সিরিয়াসলি? রাজনৈতিক কাজে যে জড়িত সে ভয় পাচ্ছে?”
শুভ্র কপাল কুঁচকে বললো,
—-” তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড যেই চিজ। এনিওয়ে তুমি আমাকে হেল্প করবে।”
চৈতি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললো,
—-” আমি কি করে?”
শুভ্র সাইন গ্লাসটা চোখে দিয়ে বললো।”
—-” ভাবো,
বলে হেলেদুলে চলে গেলো। এরপর থেকে রোজকে নিয়েই শুভ্র চৈতির সাথে কথা বলতো। রোজের বাচ্চামীর কথা বলে হাসতো দুজন। চৈতি একটা আইডিয়া পেয়েও যায়। আর শুভ্রকে নিয়ে ছাদে এসে বলে।”
—-” ভাইয়া আইডিয়া পেয়েছি,
শুভ্র খুশিতে গদগদ হয়ে বললো।”
—-” তাড়াতাড়ি বলো,
চৈতি আমতা, আমতা করে বললো।”
—-” কিছু মনে করবেন না তো?”
শুভ্র ভ্রু কুঁচকে বললো,
—-” কিছু মনে করবো কেন?”
চৈতি শুকনো ঢোক গিলে বললো।”
—-” একচুয়ালি আপনি আমাকে দিয়ে ট্রাই করতে পারেন,
শুভ্র একটু অবাক হয়ে বললো।”
—-” কি বলতে চাইছো?”
_____________
চৈতি আমতা, আমতা করে বললো।”
—-” প্রপোজ করার ট্রাই। লাইক আমি রোজ তো কি করে আপনি প্রপোজ করবেন রোজকে। সেটা আমাকে দিয়ে প্রাকটিস করতে পারেন। যদি আপনার প্রবলেম না হয় তো। এতে আপনার ভয় কিছুটা কমবে। আর রোজ এলেই ওকে প্রপোজ করে ফেলবেন,
শুভ্র কিছুক্ষণ ভেবে বললো।”
—-” আইডিয়া খারাপ না,
চৈতি হালকা হেসে বললো।”
—-” তাহলে আপনি সব রেডি করে রাখুন। গিয়ে রোজের ফেবারিট রেড রোজ কিনে আনুন,
শুভ্র নিচে গিয়ে রেড রোজ কিনে আনলো। শুভ্র হেসে চৈতির সামনে বসে বললো।”
—-” আই লাভ ইউ রোজ,
রোজটা আস্তে বলে শুভ্র। চৈতি আগে থেকেই হেসে ছিলো। হেসেই চৈতি ফুলগুলো ধরে। আর সেটাই রোজ দেখে দৌড়ে চলে যায়। কিন্তুু শুভ্র এসবের কিছুই তখন জানেনা। শুভ্র বসা থেকে উঠে বললো।”
—-” হচ্ছে না চৈতি হচ্ছে না। এভাবে হবে না আমি রোজকেই বলবো। আসলে এই আই লাভ ইউ নামক ছয় অক্ষরের শব্দগুলো রোজ ভেবে কাউকেই বলতে পারবো না আমি। আমি আমার রেড রোজকেই গিয়ে বলবো সরাসরি,
চৈতি অবাক হয়ে বললো।”
—-” এত ভালবাসেন?”
শুভ্র মুচকি হেসে বললো,
—-” কত ভালবাসি জানিনা। তবে আমার বেঁচে থাকার অক্সিজেন রোজ। আমার এই দু চোখ যাকে সবসময় খোজে যাকে দেখতে চায় সে রোজ। আমার শরীরের রক্ত চলাচলও রোজের নামেই করে। আমার শরীরের ভেতর যেই হার্টটা আছে সেটাও রোজের নামেই বিট করে। চোখ বন্ধ করেও আমি যার উপস্থিতি টের পাই সে রোজ।”
চৈতির কি বলা উচিত বুঝতে পারছে না। আসলে ওর জানা ছিলো না কেউ কাউকে এতটা ভালবাসে। বা শুভ্র রোজকে এতটা ভালবাসে। চৈতি মুখে হাত দিয়ে বললো,
—-” রোজ সত্যিই অনেক লাকি। যে আপনার মতো কাউকে ও পেতে চলেছে। সত্যি আপনাকে কারো পক্ষে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার ভাইয়া।”
শুভ্র হেসে বললো,
—-” ওকে এখন চলো নিচে যাই।”
এরপর ওরা নিচে চলে আসে। আর এসেই শুভ্র সবটা শোনে। এতক্ষণ শুভ্র সবটা ভাবছিলো এতদিনের কথা। এবং গতকালের কথা গতকাল কি হয়েছিলো? শুভ্র বেঞ্চ থেকে উঠে শক্ত হয়ে বললো,
—-” তোমার সব শুনতে হবে রোজ। তোমার বুঝতে হবে আমি তোমাকে ভালবাসি।”
শুভ্র বের হয়ে চলে আসে। এসে দেখে চৈতি একা ক্লাসে যাচ্ছে। শুভ্র ভ্রু কুঁচকে চৈতিকে গিয়ে বললো,
—-” চৈতি রোজ কোথায়?”
চৈতি গোমরা মুখ করে বললো।”
—-” রোজ চলে গিয়েছে ভাইয়া,
শুভ্র মনে, মনে রেগে বললো।”
—-” এই মেয়েটা আমার কোন কথাই শুনছে না। আমি চৈতিকেও এটা বলতে পারবো না। তাহলে ও কি না কি ভাবে। মেবি কষ্টও পেতে পারে। যে আমাকে হেল্প করতে এসে এসব হলো। আমি রোজকে ঠান্ডা মাথায় সব বোঝাবো। বোঝাতে আমাকে হবেই,
শুভ্র বের হয়ে গাড়িতে বসলো। রোজকে অনেকবার ফোন করেছে রোজ রিসিভ করেনি। শুভ্র রেগে ফোনটা পাশে রেখে ফুল স্পিডে গাড়ি ড্রাইভ করে বাড়ি এলো। বাড়ি আসতেই শুভ্রর আম্মু বললো।”
—-” শুভ্র রুমে গিয়ে ব্যাগ প্যাক করো,
শুভ্র কপাল কুঁচকে বললো।”
—-” কেন?”
শুভ্রর আম্মু সোফার কুশন ঠিক করে বললো,
—-” আমরা তোমার মামা বাড়ি যাচ্ছি। ঈশানের বিয়ে ঠিক হয়েছে।”
শুভ্র হালকা হেসে বললো,
—-” আমরা মানে? রোদরাও যাবে?”
শুভ্রর আম্মু কুশন ঠিক করে বললো।”
—-” হ্যা, হ্যা আজ বিকেলেই আমরা যাচ্ছি। এখন তুমি যাও গিয়ে যা নেবে গোছাও,
শুভ্র রুমে এসে সব গুছিয়ে নিলো। আর ঠিক করলো ওখানে গিয়েই রোজকে সব বোঝাবে। শুভ্র ওর আম্মুকে বললো ও ওর ফ্রেন্ডদের নিয়ে যাবে। ওর আম্মু বললো নিতে চাইলে নেবে। শুভ্র ফোন করে সবাইকে আসতে বললো। ওরাও সবাই ব্যাগ নিয়ে হাজির হলো।”
______________
এদিকে রোজও ভাবছে ও চৈতিকে নিয়ে যাবে। রোজ প্রথমে শুভ্র যাবে বলে রাজী হয়নি। পরে ওর আম্মু ওকে রাগ করাতে রাজী হয়েছে। আর বলেছে ও চৈতিকে নিয়ে যাবে। রোজের আম্মু চৈতির আম্মুর সাথে কথা বলেছে। উনি চৈতিকে যাওয়ার পারমিশন দিয়েছে। ২টার দিকে চৈতি চলে এলো। চৈতি দৌড়ে এসে রোজকে জড়িয়ে ধরে বললো,
—-” দোস্ত থ্যাংক ইউ রে। আমার তোকে ছাড়া একটুও ভাল লাগতো না।”
রোজের আম্মু রোজকে রেডি হতে বললো। রেডি হয়ে আগে শুভ্রদের বাড়ি যাবে। রোজ রুমে এসে একটা থ্রি পিচ পড়লো। থ্রি পিচটা ব্লাক কালার তার মাঝে গোল্ডেন স্টোন বসানো। সবাই রেডি হয়ে গাড়ি নিয়ে শুভ্রদের বাড়ি এলো। রোদ ড্রাইভ করেছে আসার সময়। কারণ এই গাড়ি নিয়েই যাবে ওরা। সবাই রেডি হয়ে দাড়িয়ে আছে। শুভ্রর বাবাই, আম্মু, রোজের বাবাই আম্মু, নিরব, সামির আর রোদ এক গাড়িতে। শাদ, রাকিব চৈতি আর রোজ এক গাড়িতে। শুভ্র টুপ করে রোজ যে গাড়িতে সে গাড়িতে বসে গেলো। শাদ ড্রাইভ করছে আর হাসছে। রোজ ভাবলো চৈতির জন্য শুভ্র এসেছে এই গাড়িতে। গাড়ি চলছে আপনমনে। শুভ্র চৈতির সাথে বেশী কথা বলছে না। কারণ ও নিজেই ভাবছে রোজ যদি উল্টাপাল্টা ভাবে। সন্ধ্যার দিকে ওরা এসে পৌছালো। সবাই গাড়ি থেকে নেমে মুক্ত বাতাস নিচ্ছে। এখান থেকে একটু হাটতে হবে এরপরই ওদের মামা বাড়ি। গাড়ি লক করে রেখে ওরা হাটা শুরু করলো। রোজ আর চৈতি একসাথে হাটছে। শুভ্র ইচ্ছে করেই দুরে, দুরে আছে এখন। ১০মিনিট পর ওরা এসে পৌছালো। ৩তলা একটা বিল্ডিং বাড়িতে। সামনের দিকে পুরো টাইলস বসানো। নিরব শুভ্রকে ধাক্কা দিয়ে বললো,
—-” তোর মামারাও দেখি বড়লোক।”
শুভ্র নিরবের কান টেনে বললো,
—-” শালা ভেতরে চল।”
গেইট খুলে ওরা ভেতরে গেলো। বাড়িতে বিয়ে, বিয়ে আমেজ লেগেছে। বাড়ি ভর্তি মেহমান গিজগিজ করছে। ওদের দেখে সবাই এগিয়ে এলো। রোজ, শুভ্রর মামীরা এগিয়ে এসে বললো,
—-” তাহলে শহরের লোকদের পা পড়লো গ্রামে?”
শুভ্র ভ্রু কুঁচকে বললো।”
—-” আমাদের পা তো পড়লো। তা তোমাদের পা পড়েতো আমাদের শহরে?”
ওনারা এখন মিনমিন করছে। সেটা দেখে শুভ্র হেসে বললো,
—-” ওকে কিছু বলতে হবে না। ওরা হচ্ছে আমার ফ্রেন্ড। আর ও হচ্ছে রোজের ফ্রেন্ড।”
সবার সাথে কথা বলে ওরা উপরে গেলো। ৩তলাতেই ওদের জন্য রুম রেখেছে। রোজ পরে যেতে গিয়ে শুনলো কয়েকটা মেয়ে বলাবলি করছে,
—-” ওই ছেলেটাকে দেখেছিস? যেটা কথা বললো কেবল। কত্ত কিউট রে ছেলেটা। চোখগুলো পুরোই ঘায়েল করার ক্ষমতা রাখে।”
রোজ হনহন করে উপরে চলে এলো। এসে চৈতিকে নিয়ে রুমে ঢুকে বললো,
—-” তোর জিনিষ সামলে রাখিস। সেটা যেন আবার হাত ছাড়া না হয়।”
চৈতি বুঝতে না পেরে বললো,
—-” মানে?”
রোজ ব্যাগ বিছানায় রেখে বললো।”
—-” কিছু না,
চৈতি মুচকি হেসে বললো।”
—-” বিয়ে বাড়ি এসেছিস রোজ। তোর জিনিষ কিন্তুু সামলে রাখিস। তোর ওনার উপরে মেয়েরা এমনিতেই ফিদা,
রোজ ভ্রু কুঁচকে বললো।”
—-” কি বলছিস তুই?”
চৈতি তোয়ালে নিয়ে ওয়াসরুমে ঢোকার আগে বললো,
—-” তোর শুভ্র ভাই।”
বলে চৈতি দরজা আটকে দিলো। আর রোজ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। ওর ছোট্ট মাথায় কিছুই ঢুকছে না,
—-” চৈতি এসব কি বললো? আমার জিনিষ মানে? শুভ্র ভাই কি করে আমার হবে? উনি তো চৈতিকে ভালবাসে। আর চৈতিও তো শুভ্র ভাইকে ভালবাসে। তাহলে চৈতি এটা কেন বললো? এক মিনিট তাহলে কি শুভ্র ভাই আজ সত্যি বলছিলো?”
রোজ এসব নিজেই বললো। এরপর ভাবতে শুরু করলো। চৈতি বেরিয়ে আসায় রোজ ভাবনা বাদ দিয়ে ফ্রেশ হতে গেলো। ফ্রেশ হয়ে ওরা বের হয়ে এলো। পুরো বাড়ি ঝাড়বাতি দিয়ে সাজানো। রোজ নিচে নেমে আসতেই শাদ বললো।”
—-” ভাবী ভাই আপনাকে ডাকে,
রোজ ভাবলো চৈতিকে বলেছে তাই বললো।”
—-” চৈতি যা,
শাদ কপাল কুঁচকে বললো।”
—-” চৈতি না আপনাকে ডাকে,
রোজ ভ্রু কুঁচকে বললো।”
—-” কোন ভাই?”
শাদ দাত কেলিয়ে বললো,
—-” শুভ্র ভাই।”
রোজ এবার চরম অবাক হলো। চৈতি মুচকি হেসে বললো,
—-” যা অল দ্যা বেস্ট।”
বলে চৈতি একাই নিচে গেলো। রোজ বুঝতে পারছে এখন কোথাও ওর বোঝার ভুল হয়েছে। রোজ শাদের থেকে জানলো শুভ্র ছাদে। রোজ এক দৌড়ে ছাদে চলে এলো। রোজ ছাদে এসে দাড়াতেই শুভ্র বললো,
—-” আমি শুধু তোমাকে ভালবাসি রেড রোজ।”
_____________
রোজ অবাকের উপর অবাক হচ্ছে। ও কোন সাউন্ড না করেই ছাদে এসেছে। আর শুভ্র ছাদের রেলিং ধরে প্রকৃতি দেখছে আরেকদিকে ঘুরে। তাহলে ও কি করে বুঝলো রোজ এসেছে? রোজ এটা ভাবতে, ভাবতেই শুভ্র ওর দিকে তাকিয়ে বললো,
—-” কারণ আমি তোমার উপস্থিতি চোখ বন্ধ করেই বুঝতে পারি।”
রোজ শুভ্রর কাছে এসে বললো,
—-” আমাকে কেন ডেকেছেন?”
শুভ্র মলিন হেসে বললো।”
—-” আমার কথাগুলো শুনবে প্লিজ?”
রোজ স্পষ্ট শুভ্রর চোখেমুখে অসহায়ত্ব দেখতে পারছে। রোজ নিজেও সব শুনতে চায় তাই বললো,
—-” হ্যা শুনবো।”
শুভ্র খুশি হয়ে বললো,
—-” থ্যাংক ইউ রোজ থ্যাংক ইউ সো মাচ।”
এরপর শুভ্র রোজকে সব বললো। সব শুনে রোজ স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। ওর নিজের প্রতি নিজের রাগ লাগছে। না জেনে বুঝে কতগুলো কথা শুনিয়ে দিলো শুভ্রকে। রোজ ছলছল চোখে বললো,
—-” আই এম সরি শুভ্র ভাই।”
শুভ্র হালকা হেসে বললো,
—-” আমি কিছু মনে করিনি। তুমি তো আমাকে ভালবাসো বলেই রিয়্যাক্ট করেছো।”
রোজ লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে। শুভ্র শুকনো ঢোক গিলে বললো,
—-” ইয়ে রেড রোজ আরেকটা কথা।”
রোজ মাথা তুলে বললো,
—-” কি?”
শুভ্র মাথা চুলকে বললো।”
—-” সেদিন রাতে তো্ তোমার ঠোটে। ইয়ে মানে ওই রাতেই আমিই তোমাকে কি্ কিস,
এতটুকু শুনতেই রোজ চোখ বড়, বড় করে বললো।”
—-” কিহহহহহ?”
শুভ্র ঠোট কামড়াচ্ছে। রোজের ইচ্ছে করছে লজ্জায় মরে যেতে। রোজ রাগী লুক নিয়ে বললো,
—-” ইউ অসভ্য লোক।”
রোজ দৌড়ে নিচে চলে গেলো। বেচারীর খুব লজ্জা লাগছে। সবাই বিয়ের ঝামেলা নিয়ে ব্যস্ত। শুভ্র বাইরে চলে গেলো। রোজ চৈতির পাশে বসে আছে। আজকে ওর শান্তি লাগছে এটা ভেবে যে শুভ্র শুধুই ওকে ভালবাসে। ১ঘন্টা পর নিরব এসে রোজের কানে, কানে বললো,
—-” গোলাপ শুভ্র তোমাকে বাড়ির বাইরে যেতে বলে।”
রোজ মুখ বাঁকিয়ে বললো,
—-” আমি যেতে পারবো না।”
নিরব মুখ কালো করে বললো,
—-” শুভ্র হাতে চোট পেয়েছে।”
রোজ ভয় পেয়ে চুপিচুপি বেরিয়ে গেলো। রাস্তায় আশপাশে শুভ্র নেই কোথাও। রোজ চিন্তিত হয়ে আরেকটু সামনে গেলো। সামনে গিয়েই রোজ হা হয়ে গেলো। ইয়া বড় একটা লাব বানানো গোলাপের পাপড়ি দিয়ে। লাবের মাঝে অনেকগুলো প্রদীপ জ্বালানো। প্রদীপের পাশ দিয়ে গোলাপের পাপড়ি। গোলাপের পাপড়ি দিয়েই সরি লেখা ইংরেজিতে। আর লাবের ওপাশেই শুভ্র কানে হাত দিয়ে দাড়ানো। কিউট ফেস করে দাড়িয়ে আছে ঠোট উল্টে। পুরোই কিউট বাচ্চা লাগছে শুভ্রকে। বাতাসে শুভ্রর সিল্কি চুলগুলো উড়ছে। রোজ মনে, মনে হাসছে শুভ্রকে এভাবে দেখে,
—-” শুভ্র ভাই ভেবেছে সেই রাতের জন্য আমি রেগে আছি। ওকে আমিও একটু মজা নেই। এতদিন কেন বলেনি যে আমাকে ভালবাসে?”
এসব মনে, মনে বলে এরপর শুভ্রকে বললো।”
—-” এসব কি?”
শুভ্র কিউট ভয়েস করে বললো,
—-” সরি রেড রোজ।”
রোজের ইচ্ছে করছে দৌড়ে গিয়ে শুভ্রর গাল টেনে বলতে। যে আপনি এত কিউট কেন? রোজ ধীর পায়ে শুভ্রর কাছে এলো। শুভ্র এখনো কান ধরে দাড়িয়ে আছে। রোজ শুভ্রর কান নিজের হাতে ছাড়ালো। এরপর কতক্ষণ শুভ্রর দিকে তাকিয়ে রইলো। শুভ্রও রোজের দিকে তাকিয়ে আছে। রোজ হুট করে শুভ্রকে জড়িয়ে ধরলো। শুভ্রও শক্ত করে রোজকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো। দুজন চুপ করে দুজনের হার্টবিট শুনছে। চাঁদ, তারাও যেন মুগ্ধ হয়ে ওদের দেখছে,
#চলবে…