ভাঙা বাড়ি পর্বঃ ০৩
– আবির খান
আমি ওদের কথায় রাজি হয়ে ওদের পিছনে পিছনে যাচ্ছি। হঠাৎ করে শুভ বলে উঠলো,
— আরে রুমেল ওটা পড়ে আছিস কেন খুলে ফেল। এসব পরলে কিচ্ছু হয়না।
পাশ থেকে নাঈমও বলে উঠলো,
— হ্যাঁ হ্যাঁ খুলে ফেল। এসব পরা ঠিক না।
— আরে না না। দাদি এটা খুলতে একেবারেই না করছে। থাকনা সমস্যা কি। (আমি)
শুভ কিছুটা জোর গলায় বলল,
— আরে দাদির মাথা ঠিক আছে নাকি। এটা সাথে থাকলে তুই ভাঙা বাড়িতে ঢুকবি কিভাবে?? খুলে ফেল।
পাশ থেকে নাঈমও হিংস্রভাবে বলে উঠলো,
— খুলে ফেল রুমেল। খুলে ফেল।
আমার কেমন জানি লাগছে দুজনকে। একটা অদ্ভুত বিষয় খেয়াল করলাম, এই দুজন আমার থেকে একটা মিনিমাম দূরত্ব বজায় রেখে কথা বলছে আমাকে স্পর্শ করছে না। আমার কেমন জানি লাগছে এখন। কিছু বুঝতে পারছি না।
— থাক ভাই আজকে ওদিকে আর না যাই। ভালো লাগছে না। (আমি)
শুভ রীতিমতো রাগীভাবে চিৎকার দিয়ে বলল,
— না তোকে আজ ভাঙা বাড়িতে যেতেই হবে চল।
— তোরা এমন করছিস কেন???(আমি)
— রুমেল চল। আচ্ছা তোর ওটা খুলা লাগবে না আগে ওখানে চল। (শুভ)
— আচ্ছা। (আমি)
আমি যেইনা পা বাড়িয়ে হাঁটা শুরু করি ওমনি পিছন থেকে আমাকে কে যেন ডাক দেয়।
— রুমেল???
আমি মাথা ঘুরিয়ে তাকিয়ে যাদের দেখি আমি কল্পনা তো দূরের কথা স্বপ্নেও ভাবি নি এদের দেখবো। আমি দেখি শুভ আর নাঈম দাঁড়িয়ে আছে একসাথে। আমি অবাক হয়ে যাই। তাড়াতাড়ি আমার পাশে তাকিয়ে দেখি কেউ নাই। ওরাতো আমার পাশে ছিলো তাহলে আমার পিছনে গেলো কিভাবে একমুহূর্তে!! ওরা দ্রুত আমার কাছে এগিয়ে আসে।
— কিরে তুই একা একা না বলে বাসা থেকে এতো দূরে চলে এলি কেন??(শুভ)
আমি যেন ৫১২ ভোল্টেজের সক খেলাম শুভ এর কথা শুনে। পাশ থেকে নাঈমও বলে উঠলো,
— হ্যাঁ, তোকেতো আমরা খুঁজছি সেই কবে থেকে। তুই এখানে একা একা কি করছিস??
আমি ভীতু আর কাঁপা গলায় বললাম,
— আমিতো এতোক্ষণ তোদের সাথেই ছিলাম। তোরাই তো আমাকে গ্রাম দেখাতে নিয়ে এলি উঠান থেকে।
— কি বলিস। আমাদেরতো দাদি পাঠিয়েছে তোর খোঁজে৷ আমরাতো বাসায়ই ছিলাম। (শুভ)
— হ্যাঁ, শুভ ঠিকই বলছে। (নাঈম)
— তাহলে এতোক্ষণ আমার সাথে কে ছিলো???(আমি)
আমার হাত পা ভয়ে সমানে কাঁপছে। কিচ্ছু ভাবতে পারছি না। কে ছিলো তাহলে ওরা?? কেনো আমাকে ভাঙা বাড়িতে নিয়ে যেতে চাইলো ওরা??
— চল চল বাসায় চল। তোরতো বাসা থেকে বের হওয়াই নিষেধ। আমরা তোকে কোন দুঃখে বাসা থেকে বের করবো। চল। (শুভ)
আমি আর কিছু না ভেবে ওদের সাথে বাসার দিকে হাঁটা ধরি আর সাথে সাথেই অামার কানে ভেসে আসে,
— বেঁচে গেলি…..
—- এই কে কে?? (অামি)
— কিরে কি হলো??এমন করছিস কেন??(নাঈম)
— ভাই আমার এখানে ভালো লাগছে না সব অদ্ভুত অদ্ভুত জিনিস হচ্ছে আমার সাথে। (আমি)
— আরে কিচ্ছু হবে না চল বাসায় যাই। (শুভ)
এরপর আমি দ্রুত বাসায় চলে আসি। এসেই দাদির কাছে যাই। দাদি আমাকে দেখে যেমন খুশি হন তেমনি অনেক চিন্তিতও। আমি দাদিকে সব খুলে বললাম। দাদি আমাকে যা বলল তা শুনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না৷ দাদি আমাকে বলল,
— দাদা ভাই, তুমি ভয় পেয়েও না। আসলে ওগুলো মানুষ ছিলো না। (দাদি)
— মানুষ ছিলো না!!!! তাহলে কে???(আমি)
— ওরা দুষ্ট জ্বিন। তোমার ক্ষতি করতে চায়। কিন্তু কেনো?? তাই বুঝতে পারছি না। আসলে কিছু জ্বিন আছে আমাদের মানুষের মতোই ওরাও আমাদের মতো ভালো খারাপ হয়ে থাকে। মনে হচ্ছে কোনো খারাপ শক্তিশালী জ্বিনের নজরে তুমি পরেছো। ভুলেও বাসা থেকে আর একা বের হবে না।
— কিন্তু দাদি, এই ভূত প্রেত বা জ্বিনও কি হয়??অবাক হয়ে।
— দাদা ভাই, তুমিতো ভুল বলছো। শোনো তাহলে,
ভূত বা প্রেত বলতে এই দুনিয়াতে কিচ্ছু নাই। আছে শুধু জ্বিন। আমাদের মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের মানুষের প্রয়োজনে এই জ্বিন সম্প্রদায়কে সৃষ্টি করেছেন। এরা আমাদের মতোই। তবে অদৃশ্য এবং অনেক শক্তিশালী। এরাও আমাদের মহান আল্লাহ তায়ালার ইবাদতে মশগুল থাকে৷ তবে মজার বিষয় কি জানো এরা আমাদেরকে খুব ভয় পায়। কারণ আল্লাহ তায়ালা ওদের থেকে আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ ঘোষণা করেছেন। কিন্তু ঠিক শয়তানের মতো এদের মধ্যেও কিছু জ্বিন আল্লাহ তায়ালাকে না মেনে খারাপ পথে চলে যায়। এরা আবার খারাপ মানুষ অর্থ্যাৎ শয়তানের পূজারীদের সাথে মিলে আমাদের ক্ষতি করে। ফলে তারা আমাদের আর ভয় পায় না। তবে আমার আল্লাহর সামনে এরা কিচ্ছু না। ওদেরকে ধ্বংস করার উপায়ও আমার আল্লাহ আমাদের পবিত্র কুরআন শরীফে সব বলে দিয়েছেন। তোমাকে যে তাবিজটি দিয়েছি সেখানে তোমাকে যাতে ওই দুষ্ট জ্বিনগুলো তোমার কাছে না আসতে পারে তার দোয়া তাতে লিখা আছে। আমরা সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকি না। তাই ওটা তোমাকে দেওয়া হয়েছে যাতে তুমি অপরিষ্কার অবস্থায়ও সুরক্ষিত থাকো। তবে হ্যাঁ অযথা ১০১ টা তাবিজ গলায় হাতে বা কোমরে কখনোই পরা যাবে না। বিশেষ করে তাবিজ কোমরে পরা সম্পূর্ণ নিষেধ। হাতে কিংবা গলায় শুধু তাবিজ পরা উচিৎ। তাবিজ তখনই পরা উচিৎ যখন এটা না পরলে তোমার অনেক বড় ক্ষতি হবে। এছাড়া এই তাবিজ তার কাজ করবে, যে মহান আল্লাহ তায়ালাকে এবং তার সকল কিছুকে মনে প্রাণে বিশ্বাস করবে। তুমি আল্লাহকে ভালোবাসো এবং সব মানো বলেই আজ ওরা তোমার কোনো ক্ষতি করতে পারেনি। এটা শুধু একটি মাধ্যম ওই দুষ্ট জ্বিনদের ভয় দেখানোর। বুঝলে দাদা ভাই??
— জ্বি দাদি। কিন্তু আমি এভাবে কি করবো?? আজইতো আসলাম। বাবা-মাও কিচ্ছু বুঝতে চাচ্ছে না৷ যেন তারা কিছু জানেই না। আমার খুব অসস্থি লাগছে এখানে। মনে হচ্ছে আমার আশেপাশে অনেক জন।
— দাদা ভাই, ভয় পেয়েও না আল্লাহ আছেন। তোমাকে সব বিপদ থেকে রক্ষা করবেন। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না ওরা তোমার ক্ষতি করতে কেনো চাচ্ছে। এর গভীরে আমাকে যেতেই হবে। তুমি এখন যেয়ে একটু রেস্ট নেও। আমি দেখছি।
— আচ্ছা।
আমি এরপর আমার রুমে গিয়ে শুয়ে পরি। শুয়ে সুমিকে ফোন দিয়ে কিছুক্ষণ কথা বলি৷ তারপর একসময় ঘুমিয়ে পরি। ঘুম থেকে দুপুরে উঠে মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে এসে সবার সাথে খাওয়া দাওয়া করি। বিকেলে শুভ আর নাঈম এর সাথে বসে কথা বলছি,
— আচ্ছা ওই ভাঙা বাড়িটা??(অামি)
— আরে তোর মনে নাই?? আমরা যে ছোট বেলায় ওখানে পলাপলি খেলতাম। তুইতো বেশ মজা করতি এখানে। (শুভ)
— আরে বাড়িটা ওভাবে পরে আছে কেনো?? ওটাকে ভেঙে অন্যকিছু বানায় না কেনো??(অামি)
পাশ থেকে নাঈম বলে উঠে,
— পাগল নাকি। শুনেছি ওখানে নাকি কিছু খারাপ জ্বিন থাকে এখন। রাতের বেলা ওখানে যেই গেছে সে আর ফিরে আসে নি।
— মানে কি বলিস?? আশ্চর্য হয়ে। (অামি)
— হ্যাঁ ভাই, দেখ তোকেও আজ ওখানে নিয়ে যাচ্ছিলো। ভাগ্যে ভালো আমরা ঠিক সময় এসে পরেছিলাম বলে। (শুভ)
— এতো করে বাবাকে বললাম আমি গ্রামের বাড়ি যাবো না। তাও জোর করে আমাকে নিয়ে আসছে। আল্লাহ জানে কি আছে আমার কপালে। (আমি)
— আরে ভয় পাস না কিচ্ছু হবে না। আল্লাহ ভরসা আমরা আছি না। (নাঈম)
— আচ্ছা চল চাচি নাকি পিঠা বানাচ্ছে খাবি চল। (শুভ)
এরপর পিঠা খেতে চলে গেলাম। বেশ জমিয়েই অনেক ধরনের পিঠা খেলাম। সবার সাথে আড্ডা দিলাম। মনটা এখন অনেকটাই ভালো।
রাত ১০ টা,
রাতের খাবার খেয়ে আমি, শুভ আর নাঈম বসে গল্প করছি। ওরাও ওদের গল্প বলছে। আমাদের গল্প শেষ হলো ১১ টার দিকে। আমার হঠাৎ খুব ঘুম আসছে। তাই রুমে গিয়ে শুয়ে পরি। দাদির কথা মতো দরজা জানালা সব লাগিয়ে ঘুম দেই। শোয়ার সাথে সাথেই ঘুমিয়ে পরি। কিন্তু আচমকা আমার ঘুমটা ভেঙে যায়। চোখ মেলে তাকায় আমি। আমার ফিল হচ্ছে আমি যেন হিম শীতল কোনো রুমে শুয়ে আছি। প্রচন্ড ঠান্ডা হয়ে আছে আমার রুমটা। ঠান্ডায় আমি রীতিমতো কাঁপছি থরথর করে। মুহূর্তেই আমার জানালায় কে যেন ৩/৪ টা টোকা দিয়ে গেলো। আমি সাথে সাথেই উঠে বসি। একটু পরই টিনের চালের উপর কেমন জানি নক দিয়ে আঁচড় দিলে যেমন শব্দ হয় ঠিক তেমন শব্দ হচ্ছে। বাইরে মনে হচ্ছে প্রচন্ড ঝড় ছেড়েছে। আমার ভয়ে অবস্থা খুব খারাপ। আমি কাঁথা দিয়ে ভয়ে আমার শরীর ঢেকে রেখেছি। এই ঠান্ডার ভিতরেও আমি সমানে ঘামছি। বাইরে অনেক ধরনের শব্দ হচ্ছে। মনে হচ্ছে আমার রুমের আশেপাশে শতশত পশু পাখি। কিসব অদ্ভুত আওয়াজ আসছে বাইরে থেকে। আমার কান শেষ হয়ে যাচ্ছে। আমি ভয়েচোখ বন্ধ করে কান চেয়ে আছি৷ হঠাৎই আমার রুম ঠান্ডা থেকে গরম হয়ে যায়। আর এবার খুব জোরে জোরেই জানালায় টোকা পরতে থাকে। টোকা বললে ভুল হবে, মনে হচ্ছে অনেক জন মিলে হাত দিয়ে জানালায় বাড়ি দিচ্ছে। ভেঙেই যাবে মনে হয়। আমার ভয়ে হাত পাতো কাঁপছেই আর ঘেমে আমি আধমরা হয়ে যাচ্ছি। হঠাৎই নিমিষেই সব বন্ধ হয়ে যায়। আমি কান থেকে হাত সরিয়ে ফেলি। চুপচাপ বসে আছি। কোথাও কোনো শব্দ নেই। কিন্তু কিছুক্ষন পর যা হলো তার জন্য আমি আর ঠিক থাকতে পারলাম না। ভয়ে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। এবার….
চলবে….
কি হলো রুমেলের সাথে?? রুমেল কি পারবে আজ নিজেকে বাঁচাতে?? ভাবতে থাকুন। আর চাইলে আপনার মূল্যবান ভাবনাগুলো শেয়ার করতে পারেন। গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি। ধন্যবাদ।
– কোনো ভুল হলে জানাবেন।