ভাঙা বাড়ি পর্বঃ ০১
– আবির খান
~রুমেল, রেডি হয় আজ রাতে গ্রামের বাড়ি ঘুরতে যাবো। (মা)
“কি বলো হঠাৎ করে??” আমি বললাম। মা বলল, “আরে তোর দাদির শরীরটা নাকি বেশি ভালো না। তোর বাবা মাত্র ফোন দিয়ে বলল।” আমি বললাম,”আচ্ছা বুঝলাম। কিন্তু কয়দিনের জন্য??” মা বলল,”এক সপ্তাহতো বটেই।” আমি অবাক হয়ে বললাম,” এক সপ্তাহ!!! আমার ভার্সিটি??” মা রাগী গলায় বলল,”তোর দাদির চেয়ে তোর ভার্সিটি বড় রে??” আমি আমতা আমতা করে বললাম,”আরে না না। আচ্ছা চলো গ্রাম থেকে ঘুরে আসি৷ অনেক বছরইতো হলো আমি যাইনা। সেই কবে গিয়েছিলাম মনেও নেই।” মা বলল,”হুম, এবার তাড়াতাড়ি সব গুছা আমি রান্নাঘরে যাই।” আমি বললাম,”আচ্ছা।”
আমি রুমেল। অনার্স ২য় বর্ষে পড়ি। পরীক্ষা শেষ। তাই তেমন একটা টেনশন নাই। আমি আমার বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে। বাবার কাছে শুনেছি দাদিটা বেশ কদিন ধরে অসুস্থ। বাবাও অনেক চিন্তিত ছিলো। তার মা যে অসুস্থ। তাই এই হঠাৎ করে যাওয়ার প্ল্যান। সুমিকে চট করে ফোন দিলাম। ও আমার মনের মানুষ। মানে ভালোবাসা। ওকে সবকিছু বলেই করতে হয় না হলে আমার খবর করে দেয়। না জানি এখন আমার ঢাকার বাইরে যাওয়ার কথা শুনে কি বলে৷
— হ্যালো বাবু। (রুমেল)
— হ্যাঁ বলো। (সুমি)
— বাবু, আমি আজ বরিশালে যাবো। আস্তে করে।
— কিহহ!!!মানে কি!! কি বলো?? কেন?? অস্থির হয়ে।
— আরে দাদি নাকি একটু অসুস্থ তাই।
— ওহহ আচ্ছা। তাহলে যাও৷
— তোমাকে অনেক মিস করবো।
— হুম আমিও। ওখানে আবার কোনো শাকচুন্নির পাল্লায় পরো না যেন। মজা করে।
— আরে কি যে বলো। তুমি ছাড়া আমার আর কাউকে চাইনা।
— হুম মনে থাকে যেন। সাবধানে যেও আর সবার খেয়াল রেখো।
— আচ্ছা। তুমিও।
— ওকে। পৌঁছে আমাকে জানিও৷
— ওকে৷ রাখি তাহলে এখন। (অামি)
— আচ্ছা। (সুমি)
ফোন রেখে তাড়াতাড়ি ব্যাগ গুছিয়ে ফেললাম। এশার নামাজটা পরে সবাই রাত ৮ টার দিকে লঞ্চে গিয়ে উঠলাম। দুইটা কেবিন নিয়েছে বাবা। একটায় আমি আরেকটায় বাবা-মা। লঞ্চে অনেকক্ষন হাঁটাহাঁটি করে একদম সামনে গিয়ে দাড়ালাম। নিচে তাকিয়ে বহু অচেনা মানুষদের দেখছি৷ সবাই খুব ব্যস্ত। সবাই সবার পছন্দের লঞ্চে উঠছে। আজ প্রায় ৪/৫ বছর পর গ্রামে যাচ্ছি। পরীক্ষা পড়াশোনার জন্য যাওয়া হয়নি এতো বছর। বাবা-মা অবশ্য এর মাঝে অনেকবার গিয়েছে শুধু যাওয়া হয়নি আমার৷ হঠাৎ আমাদের লঞ্চ থেকে হর্ন দেওয়া হলো। মানে কিছুক্ষণ পরই লঞ্চ ছেড়ে দিবে৷ একের পর এক হর্ন দিয়ে যাচ্ছে। আমি উচ্চ শব্দে কানে হাত দিয়ে আছি। কিছুক্ষণ পর কান থেকে হাত নামাতেই একটা ১৫-১৬ বছরের ছেলে আমার পাশে এসে দাঁড়ায়। সাদা পাঞ্জাবি পরা। খুব সুন্দর দেখতে। আমি আড় চোখে ছেলেটাকে দেখছি। ও সোজা সামনে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ ও বলে উঠলো,
— যেও না। ক্ষতি হবে।(ছেলে)
ওর কথা যেন আমার কানে তীরের মতো এসে লাগলো। আমি দ্রুত মাথা ঘুরিয়ে ওর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকাই।
— আমাকে বলছো তুমি?? (আমি)
— হ্যাঁ। এখনো সময় আছে চলে যাও। গ্রামে যেওনা। (ছেলে)
আমি অবাকের সাত না চোদ্দ আসমানে উঠে গিয়েছি।
— তুমি কে?? আর আমি গ্রামে গেলে আমার ক্ষতি হবে তুমি কিভাবে জানো??? অনেক আশ্চর্য হয়ে।
— যেও না। চলে যাও বাসায়।
— আরে আজবতো। এই…
—- রুমেল….(বাবা)
বাবার ডাক শুনে পিছনে তাকিয়ে আসছি বলে পাশে তাকিয়ে আমি যেন একটা বিশাল সক খাই। আমি দেখি ছেলেটা নাই। এ অসম্ভব। একমুহূর্তে চলে যাওয়া যায় না। তাহলে আমি এতোক্ষণ কার সাথে কথা বলছিলাম?? কার কথা শুনছিলাম?? আর ছেলেটা কে ছিলো?? আদও কি ছিলো?? নাকি আমি ভুল কিছু দেখলাম। মাথায় কিছু ঢুকছে না। একটু আগে কি হলো এটা?? কি ক্ষতি হবে আমার?? ছেলেটা কি আমার সাথে মজা করলো?? কিন্তু কেন?? এতোগুলো প্রশ্ন একসাথে মনে হানা দিয়েছে। কেমন জানি ভয় ভয় করছে। আচ্ছা মা বাবাকে বলবো নাকি বিষয়টা?? নাহ থাক। এমনিই ওনারা চিন্তায় আছে৷ নাহ বাবার কাছে যাই। আমাকে ডাক দিয়েছিলো তো। আমি যাচ্ছি হঠাৎ কানে একটা অস্ফুট স্বরে কথা বাতাসের মতো ভেসে আসলো।
— ফিরে যায়ায়ায়া…..
কথাটা শুনে গা’টা কেমন জানি শিহরণ দিয়ে উঠলো। পশমগুলো সব দাঁড়িয়ে গিয়েছে। কিছুই বুঝতে পারছিনা কি হচ্ছে আমার সাথে। আমি দ্রুত বাবা মায়ের কেবিনে চলে গেলাম। চুপচাপ বসে আছি। কেমন জানি একটা ফিল হচ্ছে। হঠাৎ মা বলে উঠলো,
— কিরে তোর কি হয়েছে?? এভাবে চুপচাপ বসে আছিস কেনো?? আর মুখ এমন ফ্যাকাসে হয়ে আছে কেনো??
মায়ের কথা শুনে বাবাও আমার দিকে ভালো করে তাকালো। বাবাও বলল,
— কিরে কি হয়েছে??
আমি বললাম,
— বাবা, আমার না যেতে ইচ্ছা করছে না। কেমন জানি লাগছে।
— তোর দাদি অসুস্থ শুনেও তোর যেতে ইচ্ছা করছে না?? (বাবা)
— না মানে….
— আসলে বুঝছো, ও অনেক দিন গ্রামে যায়না তো তাই এই অবস্থা। ওখানে গেলেই ঠিক হয়ে যাবে। (মা)
— তোমাদের কিভাবে যে বলি, আমাকে যে যেতে না করছে বার বার৷ (আমি মনে মনে বললাম)
— বোকা ছেলে। লঞ্চ ছাড়লেই সব ঠিক হয়ে যাবে। যা বাইরে গিয়ে বস৷ এখন লঞ্চ ছাড়বে। তোর ভালো লাগবে।(বাবা)
— জ্বি।
আমি বাইরে চলে এলাম। আমার কেবিনের সামনের চেয়ারে গিয়ে বসলাম। লঞ্চের সব লাইট এখন বন্ধ। আমাদের দুই পাশে দুইটা লঞ্চ। আমাদেরটা আস্তে আস্তে করে পিছনে দিকে বের হচ্ছে। ঠিক যখন পুরো বের হয়ে গেলো আমি অবাক হয়ে দেখলাম পাশের একটা লঞ্চের একদম পিছনে রেলিং এর পাশে সেই ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে। তবে তার মুখে অনেক রাগ। চোখগুলো লাল হয়ে আছে। আমি দ্রুত চোখ ডলে আবার তাকালাম৷ সে এখনো দাঁড়িয়ে আছে। লঞ্চ ঘুরতেই ছেলেটাকে আর দেখা গেলো না। এখন রাত প্রায় ৯.৩০ বাজে। বাবা কল দিয়ে খেতে ডাক দিলেন। আমি উঠে খেতে চলে গেলাম। খেয়ে নিজের কেবিনে এসে শুয়ে পরি। সুমিকে ফোন দিয়ে একটু কথা বলি। ওকেও কিছু বলিনি। বললে অনেক টেনশন করবে। পাগলের মতো আমাকে ভালোবাসে। এরপর আল্লাহ আল্লাহ করে ঘুমিয়ে পরি। ঘুমের মধ্যে হঠাৎ স্বপ্ন দেখি, আমি একটা বাড়ির ভিতরে বসে আছি। কোথাও কেউ নাই। অনেক পুরনো বাড়ি৷ ময়লা আর মাকড়সার জালে ভরা। উপরের দিকে তাকিয়ে দেখি ছাদটা ভাঙা। চাঁদের আলো আসছে তা থেকে। মানে এখন রাত। কিন্তু আমি এখানে কেনো??? হঠাৎ কানে একটা শব্দ ভেসে এলো।
— বলে ছিলাম আসিস না। এখন তোকে কে বাঁচাবে!!
হঠাৎ আমার কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে আমি পিছনে তাকিয়ে এমন কিছু দেখি যা দেখার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। আমি দেখি দুটো চোখ। কোনো দেহ নেই। কিন্তু সেই চোখ থেকে রক্ত ঝরছে। আমি…
চলবে…….