ভবঘুরে পর্বঃ০৪
লেখকঃ আরিফুর রহমান মিনহাজ
নিরু পুনরায় মুখ হাঁ করে জিজ্ঞেস করল,
– ‘আলুবাজ আবার কী রে?’
– ‘জানি না’ খুব দ্রুত মুখ বাঁকিয়ে বলল উরবি।
– ‘বল না!’
– ‘পারব না, গুগল কর।’ কথাটার রেশ উড়ে না যেতেই উরবি নিরুর ডান হাতের পেশিতে মৃদুমৃদু দুইটা চাপড় দিয়ে জানালার দিকে তাকিয়ে বলল,
-‘ দ্যাখ দ্যাখ, জংলিটা আসতেছে। শালার হায়াত লম্বা আছে দেখি। দ্যাখনা কেমন করে হাঁটে। মনে হয় যেন তার নিজের বাপের বাড়িতে ঢুকতেছে। খচ্চর!
নিরু শিরদাঁড়া সোজা করে অনিমেখে জানালার দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। খানিক বাদে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে বসে বলল,
– ‘যা বলিস উরবি, লোকটা কিন্তু কেজিএফের নায়কের মতো দেখতে। বরং চেহারাটা মায়াবি আরো।
– হুহ্! পৃথিবীতে অনেক লম্বা চুলদাড়িওয়ালা আছে। তাই বলে সবাই কেজিএফের নায়ক হয়ে যাবে না বুঝলি? ওয়েট ওয়েট। তুই আবার ক্রাশ-ট্রায় খাসনাই তো?
নিরু একিসাথে লজ্জিত এবং কপট তাচ্ছিল্যে নিয়ে হাত ছুঁড়ে বলল,
-‘আরে ধ্যুর, পাগল নাকি?
উরবি ছদ্ম-গাম্ভীর্য নিয়ে বলল,
– খবরদার নিরু। ঐ ব্যাটার সাথে যদি তোর বাড়তি মাখামাখি দেখি তাহলে খবর আছে!
নিরু মুখে কিছু না বলে বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নাড়ল কেবল।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
খালপাড়ের জারুল গাছটার ছায়াতলে বসে আছে জিসান আর উরবি। দিনভর বিরতিহীন সূর্যের উষ্ণ হলকায় বিকেলটা ভ্যাপসা। কখনো বা বইছে দেহ-মন জুড়ানো শিরশিরে হাওয়া। ক্লান্ত দিবাকর অদূর খালের বাঁকে মাথা নোয়াচ্ছে দিগন্তে। মাথার ওপর জারুল গাছের ওপর থোকায় থোকায় ফুটে আছে বেগুনি-রঙা জারুল ফুল। ছায়াতরুর মাটিতে ইতিউতি ছড়িয়ে আছে পাখিদের দৌরাত্ম্যে ঝরে পড়া কিছুসংখ্যক জারুলফুল। সমুখেই খাল পেরিয়ে দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ করা বিস্তৃত মাঠের পর মাঠ। গ্রীষ্মের উত্তাপে তাপক্লিষ্ট হয়ে মাঠগুলো ফেটে খণ্ডে খণ্ডে বিভক্ত হয়েছে। হাঁটতে গেলেই পা গলে গর্তে। উরবি তাকিয়ে তার দৃষ্টির শেষ সীমান্তবর্তী এক গ্রামে। জিসানের হাতে ধরা জলন্ত সিগারেট। খানিক পরপর দুই ঠোঁটের মাঝখানে বসিয়ে সিগারেট টানছে সে। সুখটান বোধহয় একেই বলে। একেবারে বুকের গভীরে ফুসফুসের কাছে ধোঁয়া পৌঁছিয়ে পুনরুদ্গিরণ করে নাকেমুখে। গুমোট আবহাওয়ায় সেই ধোঁয়া বেশ কিছুসময় ধরে আশেপাশে ঘুরঘুর করে একসময় বায়ুমণ্ডলে মিশে যায়। ক্রমে বিষাক্ত হতে থাকে মহাশূন্য। উরবি আর তার মাঝখানে দূরত্ব প্রায় একহাত। একটু আগেই পাশ ঘেঁষে বসতে চাওয়ায় জিসানকে মুখ কড়কে দূর করেছে উরবি। মেয়েটাকে সে বুঝে উঠতে পারে না ঠিকঠাক। বহু কষ্টে দুজনার প্রেম হবার পরও মেয়েটার মতিগতি সে ধরতে পারে না৷ কোনো আগ্রহ,উদ্দীপনা দেখা যায় না তার মধ্যে। অহোরাত্র এই ব্যাপারে সে নিশ্চল,নির্ভার হয়ে থাকে। মতলবটা কি মেয়েটার! দুশ্চিন্তায় কপালের ভাঁজ গাঢ় হতে গাঢ়তর হয় জিসানের। দুশ্চিন্তাগ্রস্ত কপালের নিচের অবাধ্য চোখদুটো তেরছা তাকায় উরবির দিকে। হঠাৎ উরবি খ্যাঁকিয়ে ওঠে,
-‘ কী? এভাবে তাকিয়ে আছ ক্যান?’
-‘ ওমা চাইলেও দোষ?’
-‘হ্যাঁ দোষ’ মুখ ফিরিয়ে আবার বিস্তীর্ণ শুকনো খড়খড়ে তেপান্তরের দিকে তাকায় উরবি।
-‘ আচ্ছা দোষ হইলে দোষ। ফোন ধর না কেন হেইডা কও?’
উরবি নীরস গলায় বলে,
-‘ধরব না। ফোনে কথা বলতে ভাল্লাগেনা আমার।’
জিসান একটু চুপ থেকে মেনে নেওয়া গলায় বলল,
-‘ সমস্যা নাই। কিন্তু এহানেও তো আইসা চুপ মেরে বইয়া থাকো। কথা কও না।
অভিযোগটা নিতান্তই অমূলক লাগল উরবির কাছে। হাতের পাঁচ আঙুল উল্টে নিরীহ গলায় বলল,
-‘ কী কথা বলব? খুঁজে পাই না তো!’
জিসান হিশহিশ করে হেসে বলল,
– ‘কথা কথাই থাহে কওয়ার। আইচ্ছা তুমি এতো রষকষহীন ক্যা?’
-‘ মানে?’ বুঝতে পেরেও হাসি হাসি মুখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে উরবি।
– মানে হইলো। প্রেমিক প্রেমিকা কতকিছু কয়, কত মজা করে। কিন্তু তুমি তো চুপ কইরা বইয়া থাহো আর কিছু কইলেই ছ্যাঁত কইরা উঠো।
উরবি ম্লানমুখে নজর ফিরিয়ে নেয়। চোখজোড়া ভূপতিত করে চুপ করে রইল সে। কেন জানি তার সমস্তকিছু বিষাদময় ঠেকছে। এই জলশূন্য খাল, তৃষ্ণার্ত বিল, নৈঃশব্দ্যে বোবা পাখিদের নীড়ে ফেরা, শেষ বিকেলের পশ্চিমাকাশে মেঘেদের আবির মাখামাখি, সমস্তকিছু যেন এক অদ্ভুত মনখারাপের প্রস্রবণ। মনে হচ্ছে নিরুর কথাই ঠিক ছিল৷ একটু ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিলে হয়তো এই দ্বিধায় ভুগতে হতো না। হ্যাঁ, বারংবার বিরক্ত করায় উরবি সেদিন ক্রোধবশত ‘হ্যাঁ’ বলে দিয়েছিল জিসানকে। কিন্তু পাগলাটে জিসান উরবির ভেতরে সুপ্ত রাগটা পড়তে পারেনি। যার ফলে উরবির আজকের এই দিন দেখতে হল। জিসানকে চাইলেই সে মনের ঘরে পর্ণকুটির গড়ে দিতে পারছে না। জোরপূর্বক গড়ার সমীহা করলেও ভেতরের আত্মাটা বিষম মুখ ভার করে। ভুমিকম্পে সেই ঘর গুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি-ধামকি কপচায়। মনের ধূধূ খালি জমিনটা সে যাকেতাকে দিয়ে কলুষিত করতে চায় না! কিছু মেয়েদের মন অদ্ভুত প্রকৃতির। এঁরা যাকেতাকে হৃদয়ের মালিকানা অর্পণ করে না। কিন্তু যাকে করে নিতান্ত গভীরভাবেই করে। হঠাৎ উরবির যুগ্ম চোখ আটকে যায় পশ্চিমের অসম কাঁচারাস্তায়। সুঠাম, সুষম কেউ একজন ঈষৎ সামনে ঝুঁকে ডুবুডুবু সূর্যের ছবি তুলছে নিবিষ্ট হয়ে। হেলে পড়া সূর্যের ঝিমানো আলোতে দূর থেকে লোকটাকে ছায়া অবয়বের মতো মনে হচ্ছে। চোখমুখ সুব্যক্ত না হলেও উরবি বুঝতে পারল এটা সেই খচ্চর জংলী লোকটা। জিসান তখনো অনবরত কি সব বকে যাচ্ছে উরবিকে উদ্দেশ্য করে। কিন্তু সব কথার তরঙ্গ যেন উরবির কানের পাশে এসে অলৌকিকভাবে বাঁক নিচ্ছে। সে চট করে উঠে দাঁড়াল। বলল,
– ‘আমি যাচ্ছি’
জিসান তড়িৎ দাঁড়িয়ে মরিয়া হয়ে বলে,
– ‘ওমা এতো সকালে? এই না আইলা? আরেকটু বহো!’
– ‘নাহ,সন্ধে হয়ে যাচ্ছে।’ কথাটা শেষ করেই
আচমকা উরবি জিসানের চোখের দিকে তাকাল গভীরভাবে। সন্দেহজড়িত গলায় জিজ্ঞেস করল,
– তোমার চোখ লাল কেন? ঘুমাওনা রাতে?
জিসান অপ্রতিভ হয়ে ইতস্তত করল খানিক সময়। এরপর কি ভেবে পাণ্ডুর বোকামার্কা হেসে বলল,
-‘হ ঘুম অয়নাই’
-‘ অহ…আচ্ছা যাই’ শেষের কথাটা একটু সময় নিয়ে বলল উরবি।
বলে আর দাঁড়াল না সে। দ্রুত হেঁটে কিছুদূর বিল পার করে পশ্চিমের মাটির রাস্তায় উঠে গেল। একটু জানান দিয়ে, পায়ে শব্দ করে হাঁটল সে। মনে হচ্ছে লোকটাকে একটু না জ্বালালে তার হজক্রিয়ায় বিরাট সমস্যা হয়ে যাবে। আজ উত্যক্ত করার মনমানসিকতা যদিও তার নেই তথাপি তার একটু মনোযোগ খণ্ডাতে পারলেই-বা কম কি? কাছাকাছি গিয়ে চপলা পায়ে এগোল উরবি। বেগার্ত হয়ে পাশ কাটাল। লোকটা তখনো একাগ্রচিত্তে ছবি তুলে চলেছে। হঠাৎ ডাক পড়ল পেছন থেকে।
-‘ একা এসেছেন নাকি?
উরবি মনে একটা বিরক্তির উদ্রেক ঘটল নিমেষে। ধীরে ধীরে সেই বিরক্তির কালিমা সমস্ত অন্তঃকরণে ছড়িয়ে পড়ল বিষক্রিয়ার মতোন। লোকটাকে ধ্যানচ্যুত করার ইচ্ছে তার ছিল কিন্তু পেছন থেকে ডাকার মতো বিরক্তিকর কাজ করে বসবে সেটা আশাতীত ছিল। লোকটা কি জানে না এই জিনিসটা উরবির পছন্দ নয়? অবশ্য জানারো তো কোনো মাধ্যম ছিল না। মনকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে বিরক্তিটা চাপা দিল সে। এরপর ঘুরে দাঁড়িয়ে যথাসম্ভব স্বাভাবিক হয়ে বলল,
-‘ হ্যাঁ একাই এসেছি’
আবিদ তনিষ্ট চোখে উরবিকে একটু পরখ করে বলল,
-‘ ঠিক আছে, আপনি যেতে পারেন। বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত ‘
বলে আবিদ দ্রুত চোখ রাখল লেন্সে। উরবি থতমত খেয়ে গেল। লোকটা কি অন্তর্যামী? সে তো যথেষ্টই স্বাভাবিক ছিল। চোখেমুখে বিরক্তি ছাপ তো মুছে নিয়েছিল আগেই! তাহলে?
-‘ এটা জিজ্ঞেস করার জন্য ডেকেছিলেন?’ অপেক্ষাকৃত নরম গলায় জিজ্ঞেস করল উরবি।
আবিদ লেন্স থেকে চোখ সরিয়ে বলল,
-‘ হ্যাঁ, কিন্তু আপনাকে দেখে মনে হলো আপনি ভালো নেই। মনে হল, আপনার একা থাকা প্রয়োজন। এজন্য চলে যেতে বললাম।’
উরবি উদাস কণ্ঠে বলল,
-‘ আসলেই আমি ভালো নেই। কিন্তু আপনি কী করে বুঝলেন?’
– ‘মানুষ যখন ভালো থাকে না তখন নিজস্বতা হারায়। আপনিও হারিয়েছেন।’
-‘ কীভাবে?’ অবুঝ গলায় ছোটকরে বলল উরবি।
আবিদ ক্যামেরাটা চাপাচাপি করতে করতে বলল,
-‘আপনি যখন ভালো থাকেন তখন আপনার চেহেরায় সবসময় একটা চঞ্চল ভাব থাকে। কিন্তু এখন তা নেই। একদম নিভু নিভু এখন। যাইহোক, আপনাদের একটা ছবি তুলেছি। এই দেখুন।
ক্যামরা স্ক্রিনে ভেসে ওঠল জিসান আর উরবির খালপাড়ে বসে থাকা একটি ছবি। তাদের মুখ দেখা যাচ্ছে না। পিঠ দেখা যাচ্ছে। সুমুখে উড়ে যাচ্ছে একঝাঁক পাখি। মুখ বাড়িয়ে ছবিটি দেখে উরবি যেন দিয়াশলাইয়ের আগুনের মতো ভস করে জ্বলে ওঠল। আচম্বিতে সে চেঁচিয়ে উঠে জিজ্ঞেস করল,
– ‘অনুমতি ছাড়া ছবি তুলেছেন কেন?’
আবিদ ভড়কে গেল সহসা এমন চিৎকারে। মিনিট এক মূকের পর চুপ করে থেকে মিনমিনে গলায় বলল,
-‘ আমিতো জানতাম না যে ওটা আপনি ছিলেন।’
উরবি একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলল। শান্ত কণ্ঠে বলল,
-‘ এখন তো জানলেন। ডিলিট করে দিন। ওর সাথে আমার কিছু নেই।কাউকে কিছু বলবেন না আবার!।
আবিদ আড়চোখে সশঙ্কচিত্তে উরবির দিকে তাকাতে তাকাতে ছবিটি সরিয়ে নিল। বলল,
-‘হয়ে গেছে,আপনি যেতে পারেন।’
-‘ আপনিও চলুন।’
আবারো ক্যামেরা নিয়ে ব্যতিব্যস্ত হয়ে গেল আবিদ। বলল,
-‘আমি পরে যাব।’
– ‘এখনি চলুন।’ সামান্য হুকুমের স্বরে বলল উরবি।
আবিদ বিরক্তিসূচক শব্দ করে বলল,
– আমি আপনার কথা শুনতে বাধ্য নই। আপনি যান।
কে যেন অপমানের কালি লেপ্টে দিল উরবির মুখে। মুখটা তার এতটুকু হয়ে গেল। সে আর এক মুহূর্ত সেখানে না দাঁড়িয়ে জুতোজোড়া হাতে নিয়ে সদর্পে পা ফেলে চলে গেল। পেছন থেকে দৃশ্যটি ডান হাতে আঙুলের চাপে ধারণ করে নিল আবিদ। বেশ উঠেছে! তবে আলোটা কম। ঝিঁঝি পোকার অবিরত আর্তনাদ বলে দিচ্ছে, ‘সন্ধ্যা নেমে গেছে’।
নিজের ঘরে শুয়ে আছে আবিদ। দেখছিল আজকের দিনে তোলা ছবিগুলো। পাশ থেকে ফোনটা বেজে উঠল তারস্বরে। রাতের বেলা ছাড়া সে মোবাইলফোন চালু রাখে না। রাতেই যত রকমের গুরত্বপূর্ণ-অগুরুত্বপূর্ণ ফোনগুলো আসে তার। ক্যামেরাটা একপাশে সরিয়ে ফোনটা হাতে নিল সে। রিসিভ করে সালাম দিল সে,
– আসসালামু আলাইকুম
– ওয়ালাইকুমুস্সালাম। কাজ কতদূর?
– খুব বেশি এগোয়নি। একটু ঘুরে দেখতে হবে।
– একটু তাড়াতাড়ি, সীমান্তবর্তী এলাকায় আছ তুমি। তথ্যমতে প্রতিদিন ওরা পাচারে লিপ্ত থাকে।
– হুম শুনেছি, তবে আমার সময় দরকার। হুটহাট গিয়ে সবকিছু দেখে আসা সম্ভব নয়।
– ওকে। টেক ইউর টাইম।
– বাই।
– বাই।
ফোনটা রেখে কিছুক্ষণ ঝিম মেরে বসে রইল আবিদ। পাশ থেকে নিজের ব্যাগটা কোলের ওপর টেনে নিল সে। অচিরাৎ খচরখচর করে কি যেন অমূল্য রতন তালাশ করল মিনিট দুই৷ এরপর তার হাতে উঠে এলো একটি চারকোণা ছবি। অনেক সাধনায় পাওয়া বস্তুর মতোন অনুভূত হল তার। ছবিটির গায়ে ধীরগতিতে আঙুল বোলাতে বোলাতে কতক্ষণ অনিমেষ দৃষ্টিতে চেয়ে ছিল কেজানে। একটা সময় তার চোখের কোল বেয়ে গড়িয়ে পড়ল দুফোঁটা অশ্রুবারি। রহস্যজনক অশ্রুবিন্দুগুলো মুক্তোর মতো ঝিলিক দিয়ে ঝরঝর করে ঝরে পড়ল কোলের ওপর।
ভোরে ঘুম ভাঙতেই একটা আর্ত চিৎকার কানে এলো কানে এলো আবিদের। কয়েক সেকেন্ড পর চোখ রগড়ে, আড়মোড়া ভেঙে আত্মস্থ হয়ে আবিদ চিনতে পারল গলার স্বরটি। সেই ঝগড়াটে মেয়েটার গলা! এতো সকালে কার সঙ্গে ঝগড়া করছে মেয়েটা? ভাবতেই বিরক্তিবাহক কুচকুচে কালো পাখিটা আবিদের মনের অলিন্দে উড়ে এসে বসল। সকালটাই শুরু হল একরাশ বিরক্তি নিয়ে। আরো একটু ধাতস্থ হতেই সে অনুভব করতে পারল চিৎকারের প্রসূত স্থল। আমবাগান হতেই আসছে শব্দটি। নাহ্! কারো সঙ্গে বচসা করছে বলে তো মনে হচ্ছে না। হাই তুলতে তুলতে জানালার দ্বারে এগিয়ে গেল সে। থাই গ্লাসের জানালা টানতেই দৃশ্যমান হল, ঝগড়াটে মেয়েটা বাদুড়ের মতোন ঝুলছে আমগাছের একটা লিকলিকে ডালে। হাত ফসকে মাটিতে পড়লেই পঙ্গুত্ব সুনিশ্চিত। প্রাণে বাঁচতে যন্ত্রের মতো অবিরত চেঁচিয়ে চলেছে মেয়েটা।
চলবে…
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share